মন রাঙানোর পালা পর্ব-০৮

0
4

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_8
#ইয়াসমিন_খন্দকার

চারিদিকে বিয়ের ধুম লেগেছে যেন। সাজসজ্জায় উজ্জ্বল পুরো চৌধুরী বাড়ি। কেননা, আগামীকালই সাজিদ ও সুনীতির বিয়ে। সাজিদকে ২ দিনের মধ্যেই আমেরিকা ফিরে যেতে হবে। ঠিক সেই কারণেই তাড়াহুড়ো করে বিয়ের দিন তারিখ এগিয়ে আনা হয়েছে। এরমধ্যে যতটা পারা যায় ঠিক ততোটা আয়োজন করা হচ্ছে।

সাগর মলিন চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে। চোখের পলকেই অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাগর বুঝতে পারছে না এত তাড়াহুড়ো কেন করা হচ্ছে। সেদিন সুনীতিদের বাড়ি থেকে ফেরার পর সালমা খন্দকার তড়িঘড়ি শুরু করেন বিয়ের। আর এখন তারই প্রস্তুতি চলছে। সাগর এই কয়দিন তার নজর রেখেছে নিজের বড় ভাইয়ের উপর। তার মধ্যে সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পায়নি। সাজিদের ফোনটাও তার কাছে দেখছে না। এই ব্যাপার গুলো সাগরকে অবাক করে দিয়েছে।

এদিকে সালমা খন্দকার সাজিদের ফোন নিজের জিম্মায় নিয়ে রেখেছেন। কারণ তিনি এখন পুরোপুরি কাউকেই ভরসা করতে পারছেন না। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বিয়ের আগে সাজিদ তার ফোন ফিরে পাবে না। সাজিদ প্রথমে আপত্তি জানালেও একসময় মেনে নেয়। মেনে নিতে বাধ্য ছিল সে। কেননা, সালমা খন্দকার আবারো তাকে ব্ল্যাকমেইল করে।

এদিকে সকাল থেকে সাজিদের ফোনে ইভার কল আসছে৷ যা দেখে সালমা খন্দকার তিতিবিরক্ত। শেষে বাধ্য হয়ে ফোনটা বন্ধ করতে যাবেন এমন সময় একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠলেন। আশেপাশে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা চেক করে ম্যাসেজটা ডিলিট করে ফোন বন্ধ করে রাখলেন। এখন বেশ দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেল তার। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট অনুভব হচ্ছে। সবকিছু কি তাহলে তার নাগালের বাইরে চলে যাবে? এমনটা তিনি হতে দেবেন না। এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে নিয়ে তিনি বললেন,”সাজিদকে এখন কিছুতেই জানানো যাবে না এই কথাটা। এই কথাটা জানলে হয়তো সাজিদ বেকে বসবে। আমাকেই এদিকটা সামলাতে হবে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতির পরনে কালো রঙের একটি লেহেঙা। তার মা এটা তাকে এনে দিয়েছে। আগামীকাল যেহেতু বিয়ে তাই আজ থেকেই খন্দকার বাড়িতে আনন্দ উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সুনীতিও এসব কারণে অনেক খুশি। খুশিতে সুনীতির মুখে হাসির রেখা প্রশস্ত হচ্ছে। যদিও সাজিদের ব্যবহারটা এখনো সে ভুলতে পারে নি কিন্তু তবুও নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে পারায় সে বেশ খুশি।

সুনীতি তার বাসার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় লক্ষ্য করে কেউ তার দিকে কিছু একটা ঢিলের মতো ছুড়েছে যা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে। সুনীতি নিচে তাকিয়ে দেখল একটা কাগজ। সে সেই কাগজটা হাতে তুলে নিলো। অতঃপর দেখল সেখানে লেখা আছে,”তোমাকে আমি এত সহজে অন্য কারো বউ হতে দেব না। আর‍ যদি বিয়েটা অন্য কারো সাথে হয়েও যায় বাসরটা কিন্তু আমার সাথেই হবে।~~মন্টু”

এই চিঠি দেখে সুনীতি ভয়ে আতকে উঠল। কিন্তু সে এবিষয়ে কাউকে জানিয়ে এই খুশির পরিবেশ নষ্ট করতে চায়নি৷ তাই চিঠিটা ছিড়ে ফেলে দিলো। আর হাত জোড় করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলল,”আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করো আল্লাহ। ঐ মন্টু যেন আমার জীবনে নতুন আর কোন বিপদ আনতে না পারে।”

সুনীতি এসবই ভাবছিল এমন সময় তার মা নয়না খন্দকার এসে বলে,”মামনী! তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ? নিচে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

সুনীতি আচমকা নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে। নিজের মেয়ের আচমকা এমন আলিঙ্গনে থমকে গেলেন নয়না খন্দকার। সুনীতির চোখে জল৷

“কিছু কি হয়েছে মামনী? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?”

সুনীতির ইচ্ছা করছিল তার মাকে সব খুলে বলতে। কিন্তু সে তাদের আর কোন দুশ্চিন্তা দিতে চায়না৷ তাই বলে ওঠে,”তোমাদেরকে আমি কিভাবে থাকব? আমার যে ভীষণ কষ্ট হবে।”

নয়না খন্দকার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”পাগলী মেয়ে! আমরা তো সবসময় তোমার পাশেই থাকব। যখন ইচ্ছা আমাদের কাছে ছুটে আসিও। আমরাও যাব তোমার কাছে।”

মায়ের কথায় কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেল সুনীতি। মাকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,”তুমি পৃথিবীর সেরা মা।”

“তুমিও আমার কাছে পৃথিবীর সেরা মেয়ে। আমি এখনো সেই দিনগুলো ভুলিনি। বিয়ের পর ৫ বছর আমি মা হতে পারিনি। এজন্য পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন কত কথা শুনিয়েছে। অবশেষে আল্লাহর কাছে অনেক প্রার্থনা অনেক কান্নাকাটি করার পর তুমি এলে আমার কাছে। তখনো লোকের কত কথা মেয়ে হয়েছে বলে। কিন্তু আমি আর তোমার বাবা একটু মাত্র নাখোশ হইনি। বরঞ্চ খুশি হয়েছিলাম কারণ আল্লাহ আমাদের ঘরে শেহজাদি পাঠিয়েছে। আমরা তোমাকে নিয়ে সুখে ছিলাম। আমাদের শুধু এটুকুই চাওয়া বাকিটা জীবনও তোমার একইরকম সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে কাটুক যেমনটা এখন কাটছে।”

নিজের মায়ের কথায় সুনীতি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অভিকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন রাহেলা খাতুন। গতকাল তিনি অভিককে সাথে নিয়ে মেয়ে দেখে এসেছেন। মেয়েটাকে তার ভারী পছন্দ হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঐ মেয়েকেই নিজের বাড়ির বউ করে ঘরে তুলবেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে অভিক যেন বেকে বসল। তার বাড়া ভাতে ছাঁই দিয়ে বলল,”আমি আগেও বলেছি আবারো বলছি আমার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব নয়।”

“আমি তোমার মা। আমার কথা তোমায় শুনতেই হবে।”

আহসান চৌধুরী এসে অভিককে বলে,”কেন জেদ করছ? মায়ের কথা মেনে নাও না। মেয়েটাকে আমারো ভালো লেগেছে। যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি ভালো ব্যবহার। আপত্তি করার তো কোন কারণ দেখছি না।”

“বাবা তুমিও.?”

রাহেলা খাতুন বলেন,”বাবার দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকাও। আমি যখন বলেছি ঐ মেয়েকেই আমার বাড়িতে বউ করে আনব তখন ঐ মেয়েকেই বাড়ির বউ করে আনব। এদিকে শুনছি খন্দকার ভাইয়ের মেয়ে মানে সুনীতিরও নাকি কাল বিয়ে। ছেলে নাকি আমেরিকান প্রবাসী। এজন্যই বোধহয় সেদিন আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিল।”

আহসান চৌধুরী বিরক্তির সহিত মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলল,”আহ! রাহেলা তুমি শুধু শুধু সহজ বিষয়গুলোকে জটিল করছ। খন্দকার সাহেব এমন মানুষ নয়। তিনি বারবার আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ঐ ঘটনার জন্য। আর সুনীতিরও অভিককে পছন্দ ছিল না তাই না করেছে। এটা নিয়ে এত জলঘোলা করার কি আছে!”

“থাক, তোমায় আর ওদের হয়ে ওকালতি করতে হবে। আমাদেরও তো বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে আমিও কাল গিয়ে দেখব কেমন ছেলেকে পছন্দ করেছে ঐ মেয়ে। সে আমার ছেলের থেকে কোন দিক দিয়ে এগিয়ে।”

অভিক এসব কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছিল তাই সে জলদি স্থান ত্যাগ করলো। তার চোখের সামনে হঠাৎ করে সুনীতির চেহারা ভেসে উঠল। অভিক বুঝল না এর কারণ কি। মেয়েটার সেদিনের প্রত্যাখ্যান সে আজো মেনে নিতে পারে নি এটাই হয়তোবা। কারণ এর আগেও এভাবে একজন তাকে প্রত্যাখ্যান করে বাজে ভাবে ত্যাগ করেছিল। যেই ঘটনার পর অভিক প্রতিজ্ঞা করেছিল সে আর কখনো বিয়ে করবে না। এসব ভেবেই অভিক একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~
দেখতে দেখতে আরো একটা দিন খুব সুন্দর ভাবে কে/টে গেলো। আজ সুনীতির গায়ে হলুদ। বাড়িতে সেসব কিছুরই আয়োজন চলছে। সুনীতির পরনে আজ হলুদ রঙের একটি সুন্দর লেহেঙা। যা তার সৌন্দর্য যেন বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

সুনীতির গায়ে হলুদ মাখানোর আয়োজন করা হচ্ছে। সুনীতির খুব ভালো লাগছে।

অন্যদিকে,
অভিক তার বন্ধু আরাফাতের সাথে মিলে আজো ঘুরতে বেরিয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে তারা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিল। ২ দিন পরই তাদের আবার নিজ নিজ কার্যালয়ে ফিরে যেতে হবে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ তারা একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে চলে আসে। সেখানে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ করে কয়েকজন তরুণ-তরুণী একে অপরকে হলুদ মাখানোর জন্য একে অপরের পিছে পড়ে যায়। একজন তরুণ বাঁচার জন্য অভিকের পেছনে এসে আশ্রয় নেয় ঠিক এমন সময় ভুলবশত অভিকের গায়ে হলুদ লেগে যায়। যা দেখে অভিক রেগে বলে,”হোয়াট দা হেল..ড্যাম ইট..”

“সরি ভাই আসলে..”

অভিক চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ছেলেটি চুপ হয়ে যায়। এদিকে আরাফাত ঠাট্টা করে বলে,”কি ব্যাপার বন্ধু তোর গাল তো দেখি হলুদে হলুদাভ হয়ে গেছে। তোর বিয়ের ফুলও কি তাহলে ফুটতে চলেছে।”

অভিক এবার রাগে আরাফাতের একটা গাট্টা মারে। অতঃপর বলে,”এসব আমার জন্য না।”

“সেটা তো সময়ই বলবে।”

To be continue…….