মন রাঙানোর পালা পর্ব-২৫+২৬

0
181

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আনিসার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভিক এবং সুনীতি। আনিসা সব কথা বলে মলিন হেসে বললো,”দোষটা আমারই ছিল…আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবন বিপদে ঠেলে দিয়েছি।”

অভিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”তুই একদম চিন্তা করিস না আনিসা। শিহাব এবং তার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমি তাদের কৃতকর্মের জন্য উচিৎ শিক্ষা দিব। তোর এবং তোর বাবার প্রতি করা অন্যায়ের জবাব তাদের দিতেই হবে। তুই শুধু আমাকে সেই স্থানে নিয়ে চল যেখানে তোকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সেখানে গেলে আমরা কোন ক্লু পেতে পারি।”

আনিসা বলে,”সেখানে যাওয়া বিপদজনক হতে পারে। তাছাড়া আমার মনে হয় না, আমি পালিয়ে যাবার পর শিহাবরা ওখানে কোন প্রমাণ আস্ত রেখেছে।”

“তুই আমাকে ঠিকানাটা শুধু দে। আমি আরো কিছু আর্মি নিয়ে সেখানে যাব। শিহাব এখানকার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী। ওকে আমাদের যে করেই হোক ধরতে হবে। ও দেশে ভয়ংকর মাদকদ্রব্য এবং অস্ত্রের চোরাচালান করে যা আমাদের দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাছাড়া তোর সাথে ও যা অন্যায় করেছে সেটারও কোন ক্ষমা নেই। তাই তুই শুধু আমাকে ঐ স্থান অব্দি নিয়ে চল। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”

আনিসা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”আচ্ছা। চল তাহলে।”

অভিক সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুমি এখানেই থাকো। আমি আনিসার সাথে যাচ্ছি। সাবধানে থাকো।”

সুনীতি কিছুটা ভীত স্বরে বলে,”ওখানে একা যাওয়াটা বিপদজনক হতে পারে।”

“আমি তো বললাম আরো কয়েকজনকে নিজের সাথে নিব। তুমি চিন্তা করো না।”

“ঠিক আছে, আপনিও সাবধানে যাবেন।”

অভিক মাথা নাড়িয়ে আনিসাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে৷ সুনীতি তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

~~~~~~~~~~~~~
গায়ে গোলাপী রঙের সালোয়ার সাথে মেচিং পাজামা পরিহিত একটা মেয়ে সেনাক্যাম্পের চারিদিকে ঘোরাফেরা করছে। ব্যাপারটা আরাফাতের নজর এড়ায় না। তাই তো সে ক্যাম্পের বাইরে এসে গলা খাকারি দিয়ে বলে,”হেই মিস, কে আপনি? কাকে চাই?”

গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ কানে বেজে উঠতেই পেছনে ফিরে তাকায় অহনা। পেছনে তাকাতেই কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে থাকে তার সামনে দাঁড়ানো আর্মির পোশাক পরিহিত উজ্জ্বল শ্যামলা সুদর্শন পুরুষটিকে। আরাফাত মেয়েটিকে এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিব্রতবোধ করে। সামান্য কেশে বলে,”আপনি নিশ্চয়ই এখানে আমাকে দেখার জন্য আসেন নি৷ যেই কাজে এসেছেন সেটা বলুন।”

আরাফাতের কথায় অহনার ধ্যানভঙ্গ হয়। অচেনা পুরুষটির প্রতি খানিক ভালো লাগা তৈরি হলেও এমন ত্যাড়া কথায় মুহুর্তেই অনুভূতি বদলে যায়। সেও বেশ তেজ নিয়ে বলে,”আমার কি খেয়েদেয়ে আর কোন কাজ নেই যে আপনাকে দেখার জন্য ঢাকা থেকে এতদূর সিলেটে চলে আসব!”

আরাফাত হালকা হেসে বলে,”সেটাই তো জানতে চাইছি যে আপনি এখানে ঠিক কি করতে এসেছেন।”

অহনা এবার খানিক নরম গলায় বলে,”আমি আমার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসেছি।”

“আপনার বান্ধবী?”

“আমার বান্ধবী সুনীতি। এই ক্যাম্পেই থাকে ” মেজর অভিক” ওনাকে চেনেন নিশ্চয়ই? মেজর অভিকের স্ত্রী সুনীতির বান্ধবী আমি৷ আমার নাম অহনা।”

আরাফাত বলে ওঠে,”ওহ,আপনিই তাহলে সেদিনের সেই ঝগড়ুটে মহিলাটা!”

অহনার কাছে আরাফাতের কন্ঠস্বরটা অল্প অল্প পরিচিত ঠেকছিল। এই কথার পরে সে সম্পূর্ণ বিষয়টা বুঝতে পারে। তেতে উঠে বলে,”ও আপনিই তাহলে সেই অসভ্য লোকটা যে আমায় স্টুপিড বলে অপমান করেছিলেন।”

“মুখ সামলে কথা বলুন। আমি একজন ডিউটিরত আর্মি অফিসার৷ আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারেন না।”

“আরে রাখুন আপনার ডিউটি। আমার বান্ধবীর সাথে শুধু আমার দেখাটা হতে দিন। তারপর আমি আমার দুলাভাইকে বলে আপনার শাস্তির ব্যবস্থা করছি।”

অহনার কথায় আরাফাত গগণবিদারী হাসিতে মগ্ন হয়। হাসতে হাসতেই বলে,”আপনি আমার শাস্তির ব্যবস্থা করছেন? রিয়্যালি? ওকে করুন দেখি। আগে নিজের বান্ধবীকে তো খুঁজে বের করুন।”

“ওয়েট, আমি আমার বান্ধবীকে এক্ষুনি কল করছি।”

বলেই সে সুনীতিকে ফোন লাগায়। কিছুক্ষণ ফোন রিং হবার পর সুনীতি ফোনটা রিসিভ করতেই অহনা বলে,”ঐ সুনীতি? কোথায় তুই?”

“আমি তো কোয়ার্টারে। কেন?”

“ভেবেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু সেটা আর হলো না৷ যাইহোক, আমি তোর এখানে এসেছি। বর্তমানে আর্মি ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু তোর কোয়ার্টার খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে একজন অসভ্য লোক আমায় দাঁড় করিয়ে রেখে অপমান করছে। তুই এর একটা বিহিত কর।”

সুনীতি বলে,”ওহ, তুই আসবি আমায় আগে বলবি না? যাইহোক, যে তোকে বিরক্ত করছে তাকে ফোনটা দে তো।”

অহনা বিশ্বজয়ের হাসি হেসে আরাফাতের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নেন। আমার বান্ধবী আপনার সাথে কথা বলবে। আমাকে অপমান করার ফল এবার আপনি বুঝবেন।”

আরাফাত হাসিমুখে ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,”হ্যালো, ভাবি। আসসালামু আলাইকুম। কিছু বলবেন?”

“আরাফাত ভাইয়া আপনি! অহনার কথায় কিছু মনে করবেন না। ও আসলে একটু বেশিই পাকনামি করে সব জায়গায়। আপনি কাইন্ডলি ওকে একটু কোয়ার্টার পর্যন্ত নিয়ে আসুন। আমি রান্না বসিয়েছি তো। এই অবস্থায় যেতে পারব না।”

“ঠিক আছে, ভাবি। নিন, আপনার বান্ধবীর সাথে কথা বলুন।”

বলেই ফোনটা অহনার দিকে বাড়িয়ে দিল। অহনা ফোনটা হাতে নিতেই সুনীতি কড়া গলায় বলল,”তুই চুপচাপ ওনার সাথে কোয়ার্টার অব্দি চলে আয়। আর ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য ক্ষমা চাইবি। উনি তোর দুলাভাইয়ের বন্ধু হয়। তোর দুলাভাই যদি জানতে পারে তুই ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস তো খারাপ ভাববে।”

‘কিন্তু…’

“আমি কোন কথা শুনতে চাই না অহনা। যা বলছি তাই কর।”

অহনা বেরস মুখে ফোনটা রেখে দেয়। আরাফাত বলে,”চলুন তাহলে আপনাকে কোয়ার্টার অব্দি পৌঁছে দেই।”

অহনা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”তার কোন প্রয়োজন হবে না। আপনি আমাকে রাস্তাটা দেখিয়ে দিন আমি একাই চলে যাব।”

“আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। ভাবি আমাকে বলেছে আপনাকে কোয়ার্টার অব্দি পৌঁছে দিতে। আমাকে তার কথাই শুনতে হবে। তাই আমার পেছন পেছন আসুন।”

বলেই আরাফাত হাঁটতে শুরু করে। অহনা আর কোন উপায় না পেয়ে তার পিছন পিছন যেতে থাকে।

অহনাকে কোয়ার্টারে পৌঁছে দিয়েই আরাফাত বিদায় নেয়। সুনীতি অহনাকে জিজ্ঞেস করে,”তুই ওনার কাছে ক্ষমা চেয়েছিস তো?”

“তোর আমাকে কি মনে হয়? আমি কখনো কারো কাছে মাথানত করার মেয়ে?”

সুনীতি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এত ইগো ভালো নয় অহনা। একদিন তোর এই ইগোই দেখবি তোকে কোন বিপদে ফেলবে। যাইহোক, হঠাৎ এভাবে চলে এলি?”

অহনা বলে,”হঠাৎ মানে? তোর জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানিস। কাল যখন তুই আমায় ঐ আনিসা না কি জানি মেয়ের ব্যাপারে বললি তখন তো আরো চিন্তা হচ্ছিল।”

“আনিসা আপুকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। উনি একজন অসহায় নারী৷ ওনার থেকে কোন বিপদ নেই।”

“কাউকে এতটা অন্ধবিশ্বাস করা ঠিক নয়।”

“বাদ দে, এসব। তুই একটু বিশ্রাম কর, আমি খাবার নিয়ে আসছি৷ তুই যদি আগে জানাতি আমি ভালোমন্দ কিছু করতে পারতাম।”

“শোন, আমার সাথে এত ফর্মালিটি করতে হবে না। তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে তুই বসে বসে শোন।”

“বল, শুনছি।”

অহনা নিজের ফোন বের করে সুনীতিকে দেখায়। একটা ছেলে তাকে ম্যাসেজ করে রোজ বিরক্ত করে। সুনীতি জিজ্ঞেস করে,”ছেলেটা কে জানিস?”

“সেটা তো জানিনা। কিন্তু ছেলেটা নাকি আমার থেকে জুনিয়র হবে। ও নিজেই বলেছে ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। এবার এইচএসসি দিবে।”

“এই ছেলে তোকে ম্যাসেজ দেয় কেন?”

“ছেলেটা নাকি আমায় ভালোবাসে। অন্তত মুখে সেটাই বলে।”

“ছেলেটার ব্যাপারে কিছু জানিস না?”

“আরে না। দেখিস না, আইডিটা তো ফেক। আসল নাম দেয়া নেই। আইডির নাম ” নীলাভ আকাশ” আমি কিভাবে বুঝব এটা কে?”

“জিজ্ঞেস করিস নি?”

“করেছিলাম উত্তর দেয়নি। প্রতিদিন আমায় কবিতা লিখে পাঠায়। খোঁজ-খবর নেয়। অনেক কেয়ারিং। কিন্তু আমার তো জুনিয়র পছন্দ না।”

“ট্রাই করে দেখতে পারিস।”

“দরকার নেই। আমি এসবে নেই। মা যাকে আমার জন্য পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে করব।”

To be continue…….

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_26
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভিক আনিসাকে সাথে নিয়ে এবং কয়েক জন আর্মিকে নিয়ে একটা নির্জন স্থানে এসেছে। আনিসার ভাষ্যমতে এই স্থানেই তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই স্থানে কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো একটা পরিত্যক্ত বাড়ি।

অভিক আনিসাকে জিজ্ঞেস করে,”তোর কি সঠিক মনে আছে যে তুই এখানেই বন্দি ছিলিস?”

আনিসা মাথা নাড়িয়ে বলে,”হ্যাঁ, আমার যতদূর মনে আছে আমি তো এখানেই ছিলাম। তোকে তো আগেই বলেছিলাম এখানে কিছু না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।”

“তাহলে ফিরে যাওয়া যায়, কি বলিস?”

“হ্যাঁ, চল।”

অভিক বাকি আর্মি সদস্যদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমরা সবাই তৈরি হয়ে নাও। আমাদের এখন এখান থেকে যেতে হবে।”

আনিসা হঠাৎ করে বলে,”আমার কেন জানি মনে হচ্ছে,,আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যাওয়া উচিৎ। হয়তো এখানে আমাদের জন্য কোন ভয়াবহ বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে।”

অভিক বিস্ময় নিয়ে বলে,”কি বিপদ হতে পারে বলে তোর মনে হয়?”

আনিসা কিছু বলে ওঠার আগেই পুরো স্থানটা ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অভিক এবং তার সহিত আসা অন্যান্য আর্মিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের বন্দি করে নেয়। অভিকরাও ধোঁয়ার কারণে ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অভিকের যতদূর মনে পড়ে সর্বশেষ আনিসা তার দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে ছিল। যেন ঐ চোখের ভাষায় অনেক দুঃখ এবং অনুশোচনা লুকিয়ে ছিল।

~~~~~~~~~~~~~~~
সময় তখন রাত ৯ টা। সুনীতি দুশ্চিন্তায় পুরো ঘরময় পায়চারি করে চলেছে। অহনা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সুনীতিকে। অভিক আনিসার সাথে সেই সকালে বেরিয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের ফেরার কোন নাম নেই। সুনীতি শুরুর দিকে ব্যাপারটা স্বাভাবিক নিলেও যত সময় বাড়তে থাকে ততই তার হৃদয়ে ভয় জমা হয়। মন কু ডাকতে থাকে এই ভেবে যে অভিকের কোন বিপদ হলো না তো! সুনীতি প্রথম দিকে এসব ভাবনাকে একদমই পাত্তা দেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে এসব নিয়ে ভাবতে হয়। কারণ তাদের ফিরতে এত দেরি হওয়ার কথা না। এরপরই সে চিন্তিত হয়ে আরাফাতকে সব জানায়। এসব শুনে আরাফাতও ভয় পেয়ে যায় তবে সে সুনীতিকে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করে এবং তাকে জানায় যে, সে কিছু করবে।

সুনীতি এখন সেই ভরসাতেই বসে আছে। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আরাফাতও হয়তো কিছু করতে পারবে না। কারণ সে প্রায় বিকেল ৪ টা থেকে অভিককে খুঁজে চলেছে। কিন্তু এখনো কোন খোঁজ দিতে পারেনি।

অহনা সুনীতিকে এমন দুশ্চিন্তার মধ্যে দেখে মিনমিনে স্বরে বলে,”তুই তো সকাল থেকে কিছু না খেয়ে আছিস। এবার অন্তত কিছু খা৷ এভাবে না খেয়ে থাকলে তো পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে যাবি।”

সুনীতি বলে,”আমি কিচ্ছু খাবো না। খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না। না জানি অভিক কেমন অবস্থায় আছে। তুই দয়া করে এই বিষয়টা নিয়ে আমাকে জোরজবরদস্তি করিস না।”

অহনা আর না পেরে কিছু বলে না। এরইমধ্যে আরাফাত হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে আসে। তাকে আসতে দেখেই সুনীতি ছুটে গিয়ে বলে,”অভিকের কোন খোঁজ পেলেন ভাইয়া?”

আরাফাত নতমুখে বলে,”দুঃখিত ভাবি। আমি অভিকের এখন অব্দি কোন খোঁজ পাইনি। ওর ফোনের লাস্ট লোকেশন যেখানে ছিল সেখানেও গিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।”

সুনীতি ভারাক্রান্ত মনে দু কদম পিছিয়ে পড়ে যেতে নেয়। অহনা সুনীতিকে ধরে নিয়ে আরাফাতের উপর চিল্লিয়ে বলে,”কেমন আর্মি হয়েছে আপনি, হ্যাঁ? আপনাদের নাকি অনেক ক্ষমতা। তাহলে নিজেদের একজন সহকর্মী হুট করে এভাবে উধাও হয়ে গেল আর তার কোন খোঁজ দিতে পারছেন না কেন?”

আরাফাতের মেজাজ এমনিতেই ভালো ছিল না৷ তার উপর অহনার এমন কথায় তেতে উঠে বললো,”দেখুন মিস, আমি নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমি তো আর সর্বশক্তিমান নই যে সবকিছু করতে পারব। আমারও সীমাবদ্ধতা আছে। অভিক আমার বেস্টফ্রেন্ড তাই ওকে নিয়ে আমার চিন্তা নিশ্চয়ই আপনার থেকে ঢেড় বেশি৷ তাই এরপর থেকে কিছু বলার আগে ভেবেচিন্তে কথা বলবেন।”

সুনীতিও অহনাকে বকুনি দিয়ে বলে,”তুই শুধু শুধু ওনাকে এভাবে কেমন বলছিস অহনা? এমনি আমার মন মেজাজ কিছু ভালো নেই তার উপর…”

অহনা নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলে,”দুঃখিত..আসলে সুনীতির এমন অবস্থা দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না তাই মুখ ফসকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি।”

আরাফাত বলে উঠল,”নিজের মুখকে এরপর থেকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন মিস। সব পরিস্থিতিতে সব কথা মানায় না।”

আরাফাতের এমন কথায় ভীষণ রেগে গেলেও অহনা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

আরাফাত সুনীতির কাধে ভরসার হাত রেখে বলে,”আপনি একদম চিন্তা করবেন না, ভাবি। আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব অভিককে খুঁজে বের করার। প্রয়োজনে নিজের জান বাজি রাখব। কিন্তু নিজের বন্ধুর কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না, এটা আমার ওয়াদা।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~
চোখে পানির ছিটা পেতেই আধো আধো ভাবে চোখ মেলে তাকায় অভিক। সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি অন্ধকার বদ্ধ কুঠুরিতে। তার হাত-পা সম্পূর্ণ চেয়ারের সাথে বাঁধা। এদিক ওদিক তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এ আমি কোথায় এলাম?”

এরপর চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করে তার সহিত ঠিক কি হয়েছিল। তখনই মনে পড়ে যায় আনিসাকে নিয়ে ওকে যেখানে বন্দি করা হয়েছিল সেই স্থানে যাওয়ার পরের ঘটনাসমূহ। আশেপাশে তাকিয়ে অভিক আনিসা সহ নিজের অন্য সহকর্মীদের খুঁজতে থাকে কিন্তু তাদের কারোরই দেখা পায়না।

এমন সময় তার কন্ঠে ভেসে আসে কারো বলা একটা কথা,”কি ব্যাপার মেজর অভিক? কাউকে কি খুঁজছেন নাকি?”

কন্ঠের স্বর অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই অভিক চমকে ওঠে। বহু বছর আগে দেখা সেই চেহারাটা আজ অব্দি সে ভোলে নি। ঘৃণা এবং ক্ষোভ পুষে রেখেছিল এতদিন, আনিসার কথা শোনার পর যা দ্বিগুণ হয়েছে। অভিক মুখ দিয়ে কিছু বিশ্রী গালি উচ্চারণ করে বলে,”কু**র বাচ্চা। তোকে তো আমি..”

শিহাব এগিয়ে এসে শয়তানি হেসে বলে,”কি করবি তুই আমার? আমার একটা চুলও ছিড়তে পারবি না। বরঞ্চ দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি।”

শিহাবের এহেন কথায় রাগ বেড়ে ফুসে উঠলো অভিক। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”যদি কাপুরুষ না হোস, তাহলে আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে কথা বল।”

শিহাব বিশ্রী হেসে বলে,”আমাকে বোকা ভাবিস না মেজর। আমি কাপুরুষ হতেও রাজি কিন্তু বোকা হতে নয়।”

অভিক শিহাবের দিকে থু থু ছুড়ে বলে,”শালা…যে একটা নিরীহ মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে দীর্ঘদিন বন্দি রেখে তার সাথে এত নিচকাজ করতে পারে তার থেকে আর কি আশা করব।”

মুখে থু থু এসে পড়ায় শিহাব ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে এগিয়ে এসে অভিকের গলা চেপে ধরে। এতটা জোরে যে অভিকের শ্বাস প্রায় বন্ধ হবার যোগাড় হয়। এমন সময় হঠাৎ সেই স্থানে এসে উপস্থিত হয় আনিসা৷ শিহাবকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”কি করছ টা কি? ও তো মরে যাবে।”

শিহাব এতে রেগে গিয়ে অভিককে ছেড়ে আনিসার গলা চেপে ধরে বলে,”এই মা**। নিজের পুরান নাগরের প্রতি মায়া উতলে উঠছে না..বেশি বাড় বাড়িস না নাহলে তোর জীবন যে ভিক্ষা দিয়েছি সেটা আর থাকবে না।”

অভিক আনিসার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। শিহাব আনিসাকে ছিটকে দূরে সরিয়ে ফেলে অভিকের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই আমাদের অনেক জ্বালিয়েছিস মেজর,,,,তোর জন্য ধান্দায় অনেক লস হয়েছে৷ এজন্য তোকে ফাঁদে ফেলতে এই সামান্য নাটকটা করতে হলো। একে(আনিসার দিকে ইশারা করে) এতদিন ধরে কেন জানি বাঁচিয়ে রাখছিলাম,,,আজ আমার কাজে লেগে এলো।”

অভিক যেন আজ একের পর এক অবাক হচ্ছে। অভিক যেই না অবাক এবং বিস্ময়ের চোখে আনিসার দিকে তাকিয়েছে। আনিসা অভিকের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলে,”আমাকে ক্ষমা করে দিস রে অভি,,,নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমায় তোকে বিপদে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া আমার যে আর কিছু করার ছিল না।”

আনিসার কথা শুনে অভিকের যা বোঝার বোঝা হয়ে যায়। বুঝতে আর বাকি থাকে না বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার সে!

To be continue…….