#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_40
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরাফাত উদ্ভ্রান্তের মতো চারিদিকে খুঁজে চলেছিল অহনাকে। কোথাও তাকে দেখতে না পেয়ে পুনরায় বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়। আরাফাতের মা আনোয়ারা বেগম বলে ওঠেন,”এটা কি হয়ে গেলো? অহনার তো এই বিয়েতে কোন অসুবিধা ছিল না। তাহলে ও এভাবে পালিয়ে গেল কেন?”
আরাফাত বলে,”আমার মনে হয় না, অহনা পালিয়ে গেছে বলে। আমার মনে হয়, ও কোন বিপদে পড়েছে।”
অভিক আরাফাতের কাঁধে হাত রেখে বলে,”তুই একদম কোন চিন্তা করিস না। আমি সবটা খতিয়ে দেখছি। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই সবটা টের পাওয়া যাবে।”
অভিকের কথামতো সবাই সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে যায়। অনেক ফুটেজ চেক করার পর একটা ফুটেজে সবার চোখ আটকে যায়। যেটা মূলত কমিউনিটি সেন্টারের পেছনের গেইটের ফুটেজ। সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন ছেলে একটা বস্তাবন্দি কিছু নিয়ে গাড়িতে তুলছে। এই ফুটেজটা দেখে সবার শরীর শিউরে ওঠে। অহনার মা তো তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সুনীতি বলে ওঠে,”এসবের মানে কি? অহনাকে এভাবে কে তুলে নিয়ে গেল? আমার তো ভীষণ ভয় হচ্ছে।”
অভিক সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমরা সবাই অহনাকে একা রেখে কোথায় ছিলে? তোমাদের উদাসীনতার জন্য এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল!”
সুনীতি অসহায় কন্ঠে বলে,”আমি এসবের কিছু জানি না। আমি তো ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে।”
আরাফাতের বাবা শফিক ইসলাম বলেন,”এখন এসব নিয়ে তর্ক করে কোন লাভ নেই। আমাদের এখনই বিষয়টা নিয়ে পুলিশের কাছে মামলা করা উচিত। নাহলে অহনার সাথে বড় কোন বিপদ ঘটে যেতে পারে।”
অহনার মামাও শফিক ইসলামের সাথে একমত হন। আরাফাত এসবের মধ্যে একদম চুপচাপ হয়ে গেছিল। অভিক আরাফাতের কাঁধে হাত রাখে। আরাফাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”অহনা ঠিক থাকবে তো? ঐ জানোয়ারেরা ওর কোন ক্ষতি করে দেবে না তো?”
অভিক আরাফাতকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”তুই একদম কোন চিন্তা করিস না। ওরা অহনার কোন ক্ষতি করার আগেই আমরা অহনার অব্দি পৌঁছে যাব।”
আরাফাত যেন একটু ভরসা পায়। এদিকে সুনীতি অহনার মাকে সামলাতে ব্যস্ত। কাঁদতে কাঁদতে তার প্রায় বেহুশ হবার দশা।
~~~~~~~~~~
সাগর মলিন মুখে রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে৷ তার আজকে কিছুই ভালো লাগছে না৷ হাঁটতে হাঁটতেই সাগরের নজর যায় আকাশের উজ্জ্বল চাঁদের দিকে। আজ পূর্ণিমা, আকাশের চাঁদ আজ কি সুন্দর জ্যোতি ছড়াচ্ছে। কিন্তু চাঁদের সেই জ্যোতি ছুঁয়ে যেতে পারছে না সাগরের মলিনতাকে। সাগর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
এমন সময় হঠাৎ সাগরের ফোন বেজে ওঠে। সাগর ফোনটা হাতে নিয়েই দেখতে পায় আবিরের ফোনকল। সাগর ফোনটা রিসিভ করে। ফোনটা রিসিভ করতেই আবির বলে ওঠে,”সাগর, দোস্ত। কোথায় তুই?”
“আমি একটু বাইপাসের ধারে আছি। কেন বল তো?”
আবির হাসি মুখে বলে,”জলদি আমাদের ক্লাবঘরের সামনে চলে আয়। তোর জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ রয়েছে।”
“সারপ্রাইজ?! কিসের সারপ্রাইজ?”
“সেটা এলেই দেখতে পারবি। আগে আয় তো। তাড়াতাড়ি আসবি। আমাদের হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।”
আবির এটা বলেই ফোনটা রেখে দেয়। সাগর আবিরের বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে।
“আবিরের মাথায় ঠিক কি চলছে? আমার খুব শীঘ্রই ক্লাবঘরে যাওয়া উচিত।”
এমন ভাবনা থেকে সাগর একটা সিএনজি দাঁড় করায়। অতঃপর সেই সিএনজিতে করে রওনা দেয় ক্লাবঘরের দিকে।
এদিকে আবির ঘুমন্ত অহনার চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আমার বন্ধুকে কিছুতেই কষ্ট পেতে দেব না। আমার বন্ধুকে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলিয়ে দেবোই।”
কিছু সময়ের মধ্যে সাগর ক্লাবঘরে পৌঁছে যায়। ক্লাবঘরে পৌঁছাতেই সে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কারণ তার নজরে আসে চেতনাহীন ঘুমন্ত অহনা। সাগরকে আসতে দেখেই আবির বলে ওঠে,”দেখ দোস্ত, তোর সারপ্রাইজ। বলেছিলাম না তোকে, আমি কিছু একটা করবোই। আমি আমার পরিচিত কিছু বড় ভাইকে সাথে নিয়ে তোর অহনাকে তোর কাছে তুলে নিয়ে এসেছি। কাজিকেও অলরেডি ডেকে পাঠানো হয়েছে। তুই চটজলদি এই পাঞ্জাবিটা পড়ে তৈরি হয়ে নে। কাজি আসলেই তোদের বিয়েটা পড়িয়ে দেব।”
সাগর আবিরের কথা শুনে হতবাক হয় সাথে ভীষণ রেগে যায়। পাঞ্জাবিটা দূরে ছুড়ে ফেলে ঠাস করে থা’প্পড় মারে আবিরকে। আবির গালে হাত দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,”সাগর! তুই আমায় মারলি!”
“হ্যাঁ, মারলাম। বেশ করেছি মেরে। তুই এত বড় একটা ব্ল্যান্ডার কিভাবে করতে পারলি? তোকে কি আমি বলেছিলাম এমন কিছু করতে?”
“আমি তো তোর কথা ভেবেই,,,”
“কে বলেছিল তোকে আমার কথা ভাবতে? আমি বলেছিলাম কি? না, বলিনি৷ তাহলে তোকে কে এত বাড়াবাড়ি করতে বলেছিল?”
আবির চুপ থাকে। সাগর বলতে থাকে,”হ্যাঁ, আমি ভালোবাসি অহনাকে। ওকে নিজের করে পেতেও চেয়েছি। কিন্তু জোর করে নয়। জোর করে আর যাইহোক, কারো ভালোবাসা পাওয়া যায়না। আর ভালোবাসার মানে তো সবসময় পূর্ণতা নয়। মাঝেমাঝে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সুখ দেখেও ভালো থাকা যায়। আমিও অহনার সুখ দেখে ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই এটা কি করলি? তোর কি মনে হয়, আমি জোর করে অহনাকে বিয়ে করলেই ও আমায় ভালোবাসবে? কখনোই নয়। বরং, ঘৃণা করবে চরম ঘৃণা। আর আমি ওর ভালোবাসা না পাই কিন্তু ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব না।”
আবির নতজানু কন্ঠে বলে ওঠে,”আমায় ক্ষমা করে দে দোস্ত, আমি তোর ভালোর কথা ভেবেই এমনটা করেছিলাম। এত কিছু ভাবিনি।”
“ক্ষমা? তুই যা করেছিস তা কত নিকৃষ্ট অন্যা জানিস? একটা মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করেছিস তুই। এর কোন ক্ষমা হয়না। আমি তোকে কখনো ক্ষমা করব না। আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ।”
“দয়া করে এমন কথা বলিস না, দোস্ত৷ তুই কি চাস বল, আমি তাই করব। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা শেষ করে দিস না।”
“যদি কিছু করতে চাস,তো অহনাকে যেখান থেকে নিয়ে এসেছিস আবারো সসম্মানে সেখানে ফিরিয়ে দিয়ে আসবি।”
“এটা তুই কি বলছিস? আমরা এত কষ্ট করে ওকে তোর জন্য তুলে নিয়ে এলাম আর তুই,,,”
“হ্যাঁ, আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে বলছি আর তোকে ওকে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
“বেশ, তোর যদি এমন ইচ্ছা হয় তো তাই হবে। কিন্তু দেখবি এর জন্য তুই একসময় আফসোস করবি। এটা ভুলে যাস না যে, Everything is fear in Love and war..”
“আমি এ কথায় বিশ্বাসী নই, আমি বিশ্বাস করি, ভালোবেসে সুখী হওয়া নয় বরং ভালোবাসার মানুষের সুখেই প্রকৃত সুখ।”
আবির আর কিছু বলে না। তখনো অব্দি অহনার জ্ঞান ফেরেনি। আবির আর কিছু ছেলেদের নিয়ে অহনাকে তুলে নিয়ে পুনরায় রওনা দেয়। সাগরও এবার যায় তাদের সাথে। আবির কমিউনিটি সেন্টারের কিছুটা দূরে গাড়ি থামিয়ে বাইরে এসে মুখে মাস্ক পড়ে অহনাকে তুলে এনে একটা নিরাপদ যায়গায় রেখে কেউ দেখে নেয়ার আগেই পালিয়ে আসে। অতঃপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
এর কয়েক মুহুর্ত পরেই সুনীতি ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় অহনাকে দেখতে পায় এবং চিৎকার করে ওঠে। সুনীতি অহনার কাছে গিয়ে তার নাম ধরে ডাকতে থাকে। কিন্তু অহনা কোন রেসপন্স করে না। অহনার চিৎকারে আরাফাত, অভিক সহ অনেকেই ছুটে আসে। প্রত্যেকেই অহনাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে৷ তবে সবার মনে অজানা আশংকাও জট পাকাতে থাকে। এত কিছুকে পাত্তা না দিয়ে আরাফাত অহনাকে নিজের কোলে নিয়ে নেয়। সুনীতি অহনার মুখে পানি ছিটায়। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসতেই সে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,”আমি কোথায়?”
আরাফাত সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বলে,”তুমি আমার কাছে আছ,এখন তুমি একদম নিরাপদ। কোন চিন্তা করিও না।”
আরাফাতের মুখ নিঃসৃত এমন বানী শুনে অহনা নিশ্চিত হয়।
To be continue…….
#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_41
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অহনা একটু স্বাভাবিক হতেই সবাই তার দিকে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়তে থাকে। শফিক ইসলাম বলেন,”আমরা তো সবাই সিসিটিভিতে দেখলাম, তোমাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। তুমি কি জানো কারা তারা?”
অহনা একটু ভেবে বলে,”আমার তেমন কিছু মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে, আমি ঘরে বসে বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। সেসময় রুমে আমি ছাড়া কেউ ছিল না। এমন সময় আমি একটা আওয়াজ শুনতে পাই,আমার রুমের জানালা থেকে। ওদিকে তাকাতেই দেখি জানালা বেয়ে কে বা কারা নেমে আসছে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার মুখে কিছু একটা স্প্রে করে। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।”
“তুমি কি তাদের মুখ দেখতে পাওনি?”
“না, তাদের সকলের মুখে মাস্ক ছিল। তাই তাদের চিনতে পারিনি।”
অভিক বলে ওঠে,”ড্যাম ইট। এরা সব পরিকল্পনা করেই এসেছিল। যেই গাড়িটা সাথে নিয়ে এসেছিল তার নাম্বারপ্লেটও ঢেকে রাখা ছিল৷ তাই ক্যামেরায় সেটা ধরা পড়েনি।”
সুনীতি সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এসব নিয়ে এখন আর ভেবে কি হবে? সবথেকে বড় কথা হলো যে, অহনার কিছু হয়নি। ও একদম সেইফ আছে। আমাদের কাছে এটাই তো জরুরি, তাইনা?”
অভিক বলে,”তবুও তো আমাদের জানা উচিৎ যে কে বা কারা অহনাকে তুলে নিয়ে গেছিল।”
আরাফাত বলে,”সুনীতি ভাবি ঠিক বলছেন। অহনা যে ঠিক আছে এটাই আমাদের কাছে অনেক। ওকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছিল সেটা নাহয় পরে তদন্ত করে বের করা যাবে। যাইহোক, এখন যেহেতু অহনা ঠিক আছে তাই আমাদের এখন উচিৎ বিয়েতে ফোকাস করা। অভিক তুই কাজিকে ডেকে পাঠা।”
আরাফাতের এহেন কথা শুনে তার মা আনোয়ারা বেগম বলে ওঠেন,”তুই কি পাগল হয়ে গেলি আরাফাত? এই মেয়েকে তুই বিয়ে করবি?”
নিজের মায়ের এমন কথা শুনে আরাফাত হতবাক স্বরে বলে,”মা,,তুমি এমন কথা বলছ?”
“হ্যাঁ, বলছি। আর আমি একদম ঠিক বলছি। যেই মেয়েকে এভাবে তার বিয়ের দিন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার চারিত্রিক শুদ্ধতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
“মা!”
শফিক ইসলাম নিজের স্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুমি চুপ করো আনোয়ারা। যা বলছ ভেবে বলছ তো?”
“আমি সবকিছু ভেবেই কথা বলছি। আমি বোকা নই যে, এটা বিশ্বাস করব ওকে কয়েকটা ছেলে তুলে নিয়ে গিয়ে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছে, কিছু করেনি। ঐ মেয়ের চরিত্রে কলংক লেগে গেছে। এমন মেয়েকে আমি কিছুতেই নিজের ঘরের বউ করে তুলতে পারি না।”
এসব কথা শুনে অহনার চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। সুনীতি অহনার কাঁধে হাত রাখে। অহনার মা কান্না করতে করতে বলেন,”আপনারা বিশ্বাস করুন, আমার মেয়ের চরিত্র খারাপ নয়। গোটা এলাকায় ওর মতো ভালো মেয়ে আর একটাও নেই। ও কখনো একটা প্রেম অব্দি করেনি, ছেলে বন্ধু পর্যন্ত নেই ওর। দয়া করে ওর নামে এমন কলংক ছেটাবেন না।”
এবার আনোয়ারা বেগমের সুরে সুর মিলিয়ে আনোয়ারা বেগমের ভাইয়ের বউও বলে ওঠেন,”আপু তো ঠিকই বলছে। আপনাদের মেয়ের চরিত্র যদি এতই ভালো হয় তাহলে তাকে কেন বিয়ের দিন এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো?”
সুনীতি এগিয়ে এসে বলে,”অহনা আমার বান্ধবী। আমি ওকে বিশ্বাস করি। আমি জানি, ও কেমন মেয়ে। আপনারা সবাই ভুল ভাবছেন ওকে নিয়ে।”
আনোয়ারা বেগম বলেন,”আমরা কোন ভুল ভাবছি না। যা ঠিক তাই ভাবছি।”
আরাফাতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে এগিয়ে এসে নিজের মাকে বলে,”আল্লাহর দোহাই লাগে মা, তুমি চুপ করো। অহনার নামে আর একটা বাজে কথা আমি সহ্য করবো না।”
আনোয়ারা বেগম বলেন,”আরাফাত! তুই এই মেয়েটার জন্য আমাকে এভাবে বলছিস?”
আরাফাত বলে,”হ্যাঁ, বলছি। কারণ এখানে ভুলটা সম্পূর্ণ তোমার। তুমি কোন কারণ ছাড়াই শুধু শুধু অহনাকে দোষারোপ করছ।”
“এত কিছুর পরেও তোর এটা মনে হয়?”
“হ্যাঁ।”
আরাফাতের মামি আনোয়ারা বেগমের কান ভাঙানোর জন্য বলেন,”আপু,নিশ্চয়ই এই মেয়ে তোমার ছেলের উপর কোন যাদুটোনা করেছে। নাহলে কি কোন ছেলে তার মাকে এভাবে বলে?”
“মামি, তুমি আর দয়া করে আগুনে ঘি ঢেলো না। মেহমান হয়ে এসেছ তেমনই থাকো। নাহলে আমি সীমালঙ্ঘন করতে দুবার ভাবব না।”
বলেই সে অভিকের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই কাজিকে ডেকেছিস? কখন আসবেন উনি?”
“ঐ তো উনি এনে গেছেন।”
কাজি এসে উপস্থিত হন। আরাফাত অহনার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”আমি বিশ্বাস করি, অহনা পবিত্র। ওর কোন ভুল নেই। তাই আমি ওকেই বিয়ে করব। এ ব্যাপারে কারো আপত্তি আমি মানবো না।”
আনোয়ারা বেগম বলে ওঠেন,”তাহলে এটাই তোর শেষ কথা?”
“হ্যাঁ।”
“বেশ, তবে আমার শেষ কথাও শুনে নে। এই মেয়েকে আমি মরে গেলেও নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবো না। তুই ওকে বিয়ে করবি ভালো কথা। কিন্তু ওর ছায়াও যেন আমার বাড়িতে না পড়ে।”
শফিক ইসলাম বলেন,”এসব তুমি কি বলছ আনোয়ারা? তুমি কি একদম পাগল হয়ে গেলে নাকি?”
“তোমার ছেলের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা দেখে আমায় পাগল হতে হলো। আমি বলে দিচ্ছি,বিয়ে করো ঠিক আছে এটা আটকানোর সাধ্যি আমার নেই কিন্তু এই মেয়ে যদি আমার বাড়িতে পা রাখে তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব বলে দিলাম।”
আরাফাত বলে,”ঠিক আছে,তোমায় এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব। বাড়িতে নিয়ে যাব না ওকে।”
আনোয়ারা বেগম দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। তার সাথে তার ভাই, ভাবি ও তার বাপের বাড়ির অন্য সদস্যরাও চলে যায়।
আরাফাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনার কাছে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে নম্রস্বরে বলে,”চলো আমার সাথে। আমরা বিয়ে করব।”
অহনা বলে,”আপনি যা করছেন ভেবে করছেন তো? আমার জন্য আপনার মায়ের সাথে আপনার সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। আপনি চাইলে এই বিয়েটা ভেঙেও দিতে পারেন।”
“চুপ,,আর একবার এধরণের শব্দ উচ্চারণ করবে না। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
বলেই সে অহনার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অহনা হতবাক হয়ে দেখতে থাকে। বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়ে সে কাজি সাহেবকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। আজ আর এক্ষুনি বিয়েটা হবে। কেউ এই বিয়ে আটকাতে পারবে না।”
অভিক, সুনীতি, অহনার পরিবারের সবাই আরাফাতের অহনার প্রতি এত ভালোবাসা আর বিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। অহনার চোখেও খুশির জল চলে আসে। কাজি কবুল বলতে বললে অহনা কিছু সময় নিয়ে কবুল বলে, আরাফাত অবশ্য তড়িঘড়ি করেই বলে দেয়। ব্যস, বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
বিয়ে হতেই আরাফাত অহনার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এখন থেকে তোমার স্বামী হিসেবে তোমার সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার। কেউ যদি তোমার দিকে আঙুল তোলে, তার সেই আঙুল আমি বেকিয়ে দেব।”
অহনার চোখে সুখের অশ্রু তখনো শোভা পাচ্ছে। সে নিজেকে প্রচুর ভাগ্যবান মনে করছে এমন একজন জীবনসঙ্গী লাভ করে।
~~~~~~~~~
★রঙে ভড়া জীবন, ঘুণ ধরে শেষ
একপাশে শুরু, একপাশে শেষ!★
এই কথাটা যেন মিলে গেল সাগরের ক্ষেত্রে। একদিকে যখন অহনার জীবনে নতুন প্রভাত শুরু হলো অন্যদিকে সাগর তখন অন্ধকার ঘরে বসে চিৎকার করে কাঁদছিল। নিজের ভালোবাসাকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলার দুঃখ ভোগ করছিল!
To be continue…….