#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সুনীতি অস্থির হয়ে পুরো ঘরময় পায়চারি করে চলেছে। রাহেলা খাতুন চিন্তিত ভঙিতে তাকে পরখ করে চলেছেন। সুনীতি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,”দেখেছেন আপনার আদরের নাতনীর কাণ্ড! ও বেরিয়েছে ৭ টার সময় আর এখন বাজে ৯ টা। দুই ঘন্টা হয়ে গেল ও বাড়ির বাইরে অথচ একটা ফোনকল অব্দি করছে না। আবার আমি কল করলে রিসিভও করছে না। বড্ড বাড় বেড়েছে। আজ শুধু একবার ওকে আসতে দিন। তারপর দেখাচ্ছি ওর একদিন কি আমার একদিন।”
“তুমি শান্ত হও বৌমা, হয়তো ও কোন কাজে ব্যস্ত আছে তাই,,”
“আপনি আর ওর হয়ে ওকালতি করবেন না মা। ও কি কাজ করে আমার জানা আছে। শুধু আসুক আজকে। ওর কাজ আমি বের করছি।”
এরইমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে অভীক্ষা। রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে দেখেই চোখ দেয়ে ইশারা করেন চুপিচুপি নিজের ঘরে চলে যেতে। অভীক্ষাও নিজের মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে গুটি গুটি করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু সুনীতির চোখে ফাঁকি দেয়া এত সহজ না। সুনীতি ঠিকই অভীক্ষাকে দেখে নেয় এবং তার কাছে এসে তার কান ধরে বলে,”আমার থেকে পালানো হচ্ছে! ফাজিল মেয়ে, আজ তোমার হচ্ছে!”
“উফ মা! ছাড়ো লাগছে আমার।”
“লাগুক। আমি তো এটাই চাই।”
রাহেলা খাতুন বলেন,”বৌমা, ছাড়ো ওকে। ওর লাগছে তো। মেয়েটার বয়স ২৫ হয়ে গেছে, এত বড় মেয়েকে কি কেউ শাসন করে?”
“আপনার নাতনি শুধু বয়সেই বড় হয়েছে, বুদ্ধিতে আর হয়নি। ও জানেনা, আমি ওর জন্য কত চিন্তা করি। সেসব নিয়ে ওর কোন মাথাব্যথা আছে।”
অভীক্ষা অনুনয়ের স্বরে বলে,”মা জননী আমায় ছেড়ে দিন, আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এখন যদি আপনি আমায় না ছাড়েন আর কোন সাংবাদিক যদি লুকিয়ে এই অবস্থায় আমার ছবি ক্লিক করে নেয়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল হয়ে যাবে, ‘দেখুন দেশসেরা ফ্যাশন ডিজাইনার অভীক্ষা চৌধুরীর মা কিভাবে তার কান ধরে শাসন করছে!'”
সুনীতি আরো জোরে অভীক্ষার কান টেনে ধরে বলে,”খুব পাজি হয়েছ না? মায়ের সাথে মশকরা!”
রাহেলা খাতুন এসে অভীক্ষাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,”তুমি আর শোধরাবে না বৌমা। মেয়েটা তো বড় হয়েছে নাকি।”
“বড় হয়েছে জন্য কি এখন এমন স্বেচ্ছাচারিতা করবে? আর আমি সেটা মেনেও নেব। এতটা স্বাধীনতা আমি দিতে পারব না।”
অভীক্ষা নিজের মায়ের রাগ গলানোর জন্য তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”ভুল হয়ে গেছে না। আসলে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম তাই,,”
“আমাকে এসব বোঝাতে এসো না। আমি ভালোই জানি, তোমার ফোন সাইলেন্ট ছিল না। তুমি ইচ্ছা করেই ফোনটা রিসিভ করো নি যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে না হয়।”
অভীক্ষা জিভ কেটে বলে,”বুঝে গেলে!”
“আমি তোমার মা, আমাকে এতোটা বোকা ভেবোনা। তোমাকে দশমাস পেটে ধরেছি। তাই হারে হারে চিনি তোমায়।”
“ঠিক আছে,সরি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও।”
“ঠিক আছে, এবারের মতো বেশি কিছু বললাম না। কিন্তু এরপর এমন কিছু করলে কিন্তু আমি ছেড়ে কথা বলব না।”
রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে নিজের ঘরে যেতে বলেন এবং সুনীতিকে বলেন,”তুমি ওকে এখন ওর রুমে যেত দাও। মেয়েটা একটু বিশ্রাম নিক। দুপুরে আবার ওকে বনানীতে যেতে হবে।”
“হুম, মামনী তুমি নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আর দুপুরে কি খাবে বলো আমি তৈরি করে দিচ্ছি।”
“দুপুরে আমি খাবো তোমার হাতের স্পেশাল চিকেন কাটলেট।”
“চিকেন কাটলেটের” নাম শুনেই সুনীতি কেপে ওঠে। এটা যে অভীকেরও বড্ড প্রিয় খাবার ছিল। অভীক্ষা শুধু অভিকের মতো সাহস আর চেহারাই পায়নি তার ভালো লাগাগুলোও পেয়েছে। সুনীতি হালকা হেসে বলে,”ঠিক আছে, মামনী। আমি দুপুরে তোমাকে চিকেন কাটলেট তৈরি করে দিব।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজের কক্ষের মধ্যে পুশ-আপ করে চলেছে ২৬ বছর বয়সী এক সুঠামদেহী তাগড়া যুবক। খালি গায়ে পেশিগুলো দৃশ্যমান। শরীর বেয়ে পড়ছে নোনতা ঘাম। সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। গাঢ় নীল চোখও সাক্ষী লাল রংয়ের। হঠাৎ করেই তার কক্ষের দরজায় কেউ নক করল। যুবকটি থেমে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে গায়ে একটু গেঞ্জি পড়ে নিয়ে বলল,”কে?”
“আমি বলছি সারজিস ভাইয়া। ভিতরে আসব?”
“আমায়রা তুমি? হ্যাঁ, এসো।”
সারজিসের থেকে অনুমতি পেতেই হাসিমুখে তার কক্ষে প্রবেশ করে আমায়রা। সারজিস সরু চোখে আমায়রার দিকে তাকায়। লাল সালোয়ার-কামিজ পরিহিত মেয়েটির পোশাক এমনিতে বেশ শালীন। তবে মুখে মেকআপের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা অবশ্য সারজিসের কাছে নতুন কিছু নয়। যবে থেকে বুঝ হয়েছে সে দেখেছে আমায়রা সবসময় তার সামনে এমন সেজেগুজেই আছে। তাই তো এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে সারজিস আমায়রাকে শুধায়,”বলো কি দরকারে এসেছ।”
“তোমার জন্য কফি নিয়ে এলাম।”
“এই দুপুরবেলা আমি কফি খাব?”
আমায়রা উদাস কন্ঠে বলে,”খাবে না? তাহলে কি আমি এটা ফিরিয়ে নিয়ে যাব?”
“না, থাক। এনেছ যখন রেখে যাও। আমি সময় করে খেয়ে নেব।”
“আচ্ছা।”
বলেই সে কফিটি ডেস্কের উপর রাখে। অতঃপর সেখানেই দাঁড়িয়ে উশখুশ করতে থাকে। সারজিস আমায়রাকে এমন ছটফট করতে দেখে বলে,”আর কিছু বলবে?”
“হু,,না মানে তুমি সিলেট যাচ্ছ কবে?”
“আজ রাতেই আমায় ফিরতে হবে।”
“আজ রাতেই?”
“হ্যাঁ, কারণ খুব শীঘ্রই একটা নতুন মিশনে যেতে হবে।”
আমায়রার মনটা উদাস হয়ে যায়। সে বলে,”তাহলে আমি যাই এখন।”
“হুম, যাও।”
সারজিসের কক্ষ থেকে বেরিয়ে একটু দূরে আসতেই সারজিসের মা ইভার মুখোমুখি হয় আমায়রা। ইভা আমায়রাকে দেখে বলে,”তোমাকে এত উদাস লাগছে কেন মায়রা?”
আমায়রা উদাস কন্ঠে বলে,”সারজিস ভাই আজ রাতেই সিলেট ফিরে যাচ্ছে!”
ইভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”কি করবো বলো। আমার ছেলের মাথায় যে কিভাবে এই আর্মি হওয়ার ভূত চাপল আমি জানি না। আমারও কি ভালো লাগে, নিজের একমাত্র ছেলেকে এতদূর পাঠাতে? নিজের বাবার এখানে এত বিজনেস থাকতে ও এসব করছে।”
বলেই একটু থেমে বলেন,”তবে অসুবিধা নেই। খুব শীঘ্রই আমি ওকে এমন বন্ধনে বেঁধে ফেলব যে ও এই বাড়িতে থাকতে বাধ্য হবে।”
ইভার কথায় লুকিয়ে থাকা রহস্য বুঝতে পেরে আমায়রার গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে দ্রুত স্থানত্যাগ করে। ইভা আমায়রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”মেয়েটা একদম আমার মনের মতোন। শালীন, লাজুক, কিছুটা চঞ্চল তবে বাধ্য মেয়ে। আমার তো অনেক আগে থেকেই সারজিসের জন্য আমায়রাকে পছন্দ। এবার ভাবছি ওদের চার-হাত এক করে দেব।”
আমায়রা লজ্জায় নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই নিজের মা অহনার মুখোমুখি হয়। অহনা আমায়রাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে রুমের দিকে যেতে দেখে বলে,”কি হয়েছে মায়রা? তুই এভাবে ছুটে ছুটে কোথায় যাচ্ছিস?”
“আমার রুমে।”
বলেই সে চলে যায়। অহনা বলে,”এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিনা। সবসময় শুধু ছোটাছুটি। আর ঐদিকে আরেকজন সোহেল। দুই ভাইবোন একদম একরকম হয়েছে। সারাদিন শুধু ব্যাট-বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। সাগরকে এবার শুধু ফিরতে দাও। দুই ভাই-বোনের নামে বিচারসভা বসিয়ে ছাড়ব।”
বলেই অহনা রান্নাঘরের দিকে রওনা দেয়। এখন তার অনেক দায়িত্ব। বাড়ির সকলের জন্য রান্না করতে হবে। ইভাও অবশ্য তাকে সাহায্য করে। তবে তার বাঙালি রান্না বেশি একটা ভালো হয়না। এজন্য অহনার ঘাড়েই মূল দায়িত্ব!
To be continue……