মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-০৩

0
50

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা ভীষণ সুন্দর একটি লাল গাউন পড়ে তৈরি হয়ে নিয়েছে ফ্যাশন শোতে যাওয়ার জন্য। সে বের হতে যাবে এমন সময় সুনীতি চলে এলো অভীক্ষার রুমে। অভীক্ষা নিজের মাকে দেখে বলল,”মা,তুমি? কোন দরকার আছে?”

“হুম, মার কাছে শুনলাম তুমি নাকি পরশু সিলেট যাচ্ছ। এটা কি সত্যি?”

গম্ভীর স্বরে প্রশ্নটা করল সুনীতি। অভীক্ষা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”খুব জরুরি একটা কাজ পড়ে গেছে। আমাকে না জানিয়েই মিজানুর স্যার ওখানে একটা শো হোস্ট করে ফেলেছেন৷ এখন সেটা বাতিল করারও কোন সুযোগ নেই।”

সুনীতি শান্ত স্বরে বলে,”সাবধানে যেও। আর সিলেটে গিয়ে আবার একা একা পাহাড়ে-জঙ্গলে নিজের বাবাকে খুঁজতে চলে যেও না। এই ভয়েই আমি তোমাকে সিলেটে পাঠাতে চাই না। সেনাবাহিনীর কত টিম তো সব যায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজল কতগুলো বছর। তবুও তো তোমার বাবার দেখা পেল না। যাইহোক,এখন যে কাজে যাচ্ছ সাবধানে যাও। আর সিলেটে তোমাকে আমি কোনমতেই একা যেতে দেব না। মুন্নিকেও সাথে নিয়ে যাবে।”

“ঐ বোকা মেয়েটাকে কেন সাথে নিব? ওকে সাথে নিলে তো ২৪/৭ আমায় জ্বালিয়ে মারবে।”

“তুমি চুপ করো। মুন্নি বোকা হলেও আমার বিশ্বস্ত। মেয়েটা কখনো মিথ্যা বলে না। তুমি কোন তেড়িবেড়ি করলেই ও আমায় বলে দেবে।”

“তুমি আমার থেকে বেশি ঐ মেয়েটাকে বিশ্বাস করো?”

“হ্যাঁ,করি। এখন যে কাজে যাচ্ছ যাও। আমার কথার কোন নড়চড় হবে না।”

অভীক্ষা মুখ ফুলিয়ে রুম থেকে বের হলো। তার মুখ ছিল উদাস। অভীক্ষা বেরিয়ে যেতেই সুনীতি বলল,”আমি যা করি তোমার কথা ভেবেই করি মামনী। এজন্য হয়তো মাঝেমধ্যে আমায় একটু কঠোর হতে হয় কিন্তু কি করব বলো? তোমার বাবাকে যে কথা দিয়েছিলাম তোমায় সব বিপদ থেকে আগলে রাখব। সেই কথা যে আমায় রাখতেই হবে!”

অভীক্ষা বনানীতে একটি ফ্যাশন শোতে গেস্ট হিসেবে চলে এসেছে। এসেছে তাদের ব্রান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের প্রদর্শনী চলছে। যার বেশিরভাগই অভীক্ষার ডিজাইন করা। একটু পরই মুন্নি হাতে একটা ফর্দ নিয়ে অভীক্ষার দিকে এগিয়ে গেলো। অভীক্ষার ভীষণ রাগ হলো মুন্নিকে দেখে। মুন্নি অভীক্ষার সামনে এসে একগাল হেসে বলল,”ম্যাডাম,একজন নামকরা বিজনেসম্যান আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন। উনি এই ফ্যাশন শোতেই উপস্থিত আছেন। বলছেন আপনার সাথে কি যেন চুক্তি করতে চান। আপনি কি ওনার সাথে দেখা করবেন?”

“ঠিক আছে, আসতে বলো ওনাকে।”

বলেই অভীক্ষা ফ্যাশন শোতে মনযোগ দেয়। কিছুক্ষণ পরেই একটা গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে,
“হ্যালো মিস অভীক্ষা। কি সৌভাগ্য আমার! দেশসেরা ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথে দেখা করতে পারলাম! আশা করি, আপনি ভালো আছেন।”

চেনা পরিচিত স্বরটা কানে আসতেই অভীক্ষা হতবাক চোখে তাকায়। কতগুলো দিন পর সেই চেনা পুরুষটির দেখা। যে একসময় তার হৃদয়জুড়ে বাস করত। অভীক্ষার মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে আসে,”মুকিত!”

“লংগ টাইম নো সি,আমাকে ভুলে যাওনি তাহলে? যাইহোক, আমার এখন নতুন পরিচয় হয়েছে। সেটা আগে দেই। মাইসেল্ফ, মুকিত চৌধুরী, সিইও অফ চৌধুরী গ্রুপ এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি।”

অভীক্ষা নির্মিশেষ চোখে তাকিয়ে ছিল মুকিতের দিকে। তার চোখের এককোণে অশ্রু এসে জমা হচ্ছিল। মুকিত অভীক্ষার সামনেই বিয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে বলল,”কি যেন বলেছিলে তুমি? আ’ম গুড ফর নাথিং, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমি লাইফে কিছু এচিভ করতে পারব না, রাইট? আজ দেখ আমায়, কোথায় আমি আর কোথায় তুমি! আজ তোমায় চেয়েও হাজার সুন্দরী মেয়ে প্রতি রাতে আমার বিছানায় শোভা পায়। একরাতের জন্য আমি তাদের কিনে নেই।”

আচমকা অভীক্ষার মুখভঙ্গি বদলে যায়। তার চোয়াল কঠিন হয়। শক্ত কন্ঠে বলে,”আপনার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে আমি বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্টেড নই। যদি আপনার প্রোফেশনাল কোন কথা থাকে তো বলতে পারেন। আদারওয়াইজ, এক্সকিউজ মি।”

মুকিত হাতের মুঠোয় বিয়ারের বোতলটা শক্ত করে ধরে বলে,”রাইট। আমাদের পার্সোনাল কথা তো ৩ বছর আগেই ফুরিয়ে গেছে রাইট? এখন আমাদের যা কথা হবে সবই প্রফেশনাল। ওকে, দেন আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং সাম্রাজ্ঞী অভীক্ষাকে একটা স্পেশাল অফার দিতে চাই। তাকে কি একরাতের জন্য পাওয়া যাবে? আমি ব্ল্যাংক চেক দিতে রাজি আছি। সেখানে সে ইচ্ছামতো এমাউন্ট বসিয়ে দিতে পারে।”

এপর্যায়ে অভীক্ষা আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মুকিতের গালে। মুকিত অভীক্ষাকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ?”

অভীক্ষা গর্জে উঠে বলে,”এরপর কোন মেয়েকে অসম্মান করার আগে এই থাপ্পড়টার কথা মনে রেখো। আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে, একসময় আমি তোমার মতো একটা নোংরা মানসিকতার,,”

মুকিত এপর্যায়ে অভীক্ষাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”আমি এমন ছিলাম না। তুমি আমায় এমন বানিয়েছ। কেন ছেড়ে গেছিলে আমায়? এই টাকার জন্যই তো!”

অভীক্ষা ধাক্কা দিয়ে মুকিতকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে স্থানত্যাগ করে। যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বলে,”যা করেছিলাম, তোমার ভালোর জন্যই করেছিলাম। কিন্তু তোমার ভালো করতে গিয়ে যে তোমায় এতটা বিগড়ে দেব সেটা ভাবিনি।”

~~~~~~~~~~~~~~~~
সারজিস সিলেটে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় সে খেয়াল করে একটা ছায়ামূর্তি। পিছন ফিরে তাকাতেই সারজিস দেখতে পায় আমায়রাকে। গম্ভীর স্বরে বলে,”তুমি?”

“চাচির কাছে শুনলাম তুমি এখনই সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেবে তাই,,,”

“আমার একটু স্পেস দরকার।”

সারজিসের কথা শুনে আমায়রার মুখে আঁধার নেমে এলো। সে মলিন হেসে সারজিসের রুম থেকে বের হলো। তার চোখের এককোণে অশ্রুকণা জমে গেলো। ভালোবাসা কেন এত পোড়ায়?

ইভার নজরে আসে আমায়রা। সেও সারজিসের কক্ষের দিকে যাচ্ছিল। আমায়রাকে দেখে ইভা এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে মায়রা? সারজিসের সাথে দেখা হলো?”

“হুম।”

বলেই আমায়রা উদাস মুখে চলে যায়। ইভা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। সারজিসের রুমে ঢুকে বলে,”তুমি এমন কেন সারজিস? তুমি কি বুঝতে পারো না মেয়েটা তোমায় কতটা পছন্দ করে? তবুও কেন সবসময় ওকে এভাবে ইগ্নোর কর?”

সারজিস একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”মম, তুমি তো জানোই আমি আমায়রাকে ঐ নজরে দেখিনা। ছোট থেকে আমি ওকে বোন হিসেবেই দেখেছি৷ তাই ওর এই ইমোশনকে আমি প্রশ্রয় দিতে চাইনা। নাহলে ও মিথ্যা আশা করে বসবে!”

“মিথ্যা আশা কেন করবে? প্রয়োজনে আমি আমায়রাকেই তোমার বউ করে আনব।”

“মম!”

“কেন? তোমার কি অন্য কেউ পছন্দ আছে?”

“না, নেই। কিন্তু,,,”

“তাহলে আমি তোমার আর কোন কথা শুনতে চাইনা। এরপর তুমি যবে ঢাকায় ফিরবে তখন আমি এই নিয়ে কথা তুলব। দেখো, তুমি আর্মি হতে চেয়েছ আমি রাজি হয়েছি। তোমার স্বপ্নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি। এবার তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে। তোমার বউ হবে আমার পছন্দের মেয়ে। তোমার অন্য কোন পছন্দ থাকলে নাহয় একটা কথা ছিল কিন্তু তেমনটা তো নয়।”

“ঠিক আছে, মম। তুমি যা চাও তাই হবে৷ এবার তো হ্যাপি হয়ে যাও আর আমায় হাসিমুখে বিদায় দাও।”

ইভা একগাল হেসে বলেন,”সাবধানে যেও। আর হ্যাঁ, যাওয়ার আগে তোমার ড্যাডের সাথে দেখা করে যেও। ওর শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বিজনেসে নাকি কি একটা সমস্যা হয়েছে। যদি তুমি এইসব আর্মিতে জব না করে একটু বাবার ব্যবসার হালটা ধরতে তাহলে তোমার ড্যাড একটু নিশ্চিন্তে থাকত।”

সারজিস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিন্তু এই প্রশ্নের কোন জবাব দেয়না। তার মা প্রায়শই ইনিয়েবিনিয়ে এসব বলে কিন্তু সারজিস এসব কথায় কোন গুরুত্বই দেয়না। কারণ তার কাছে সবার আগে তার স্বপ্নটা। দেশের সেবা করার ব্রত নিয়েই সে আর্মি হয়েছে। তাই নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে।

To be continue……