#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অভীক্ষা আজ মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে ফেরে। বাড়িতে এসেই নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। রাহেলা খাতুন ব্যাপারটা খেয়াল করে অভীক্ষার রুমের বাইরে এসে দরজায় নক করতে থাকেন। অভীক্ষা দরজাটা খুলে দিতেই তিনি শুধান,”কি রে?! তোকে এমন লাগছে কেন সখী? কি হয়েছে বল তো।”
অভীক্ষা নিজের দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে। রাহেলা খাতুন আরো বেশি উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। বলেন,”আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। বল না কি হয়েছে তোর।”
“আজ মুকিতের সাথে দেখা হয়েছিল।”
“মুকিত!”
অভীক্ষা সব ঘটনা রাহেলা খাতুনকে খুলে বলেন। রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে বলেন,”তুই আর একদম কাঁদবি না। তুই তো আমার স্ট্রং সখী৷ তুই কেন কাঁদবি বল? আর মুকিত যে এত জঘন্য কথা বলতে পারে আমি সেটা ভাবতেও পারিনি। তুই তো ওর ভালোর কথা ভেবেই ওকে ছেড়ে দিয়েছিলি। আর ও…”
অভীক্ষা চোখ বন্ধ করে। তার মনে পড়ে যায় ৩ বছর আগের কথা। যেদিন মুকিতের মা মুসকান চৌধুরী তার সাথে দেখা করতে এসেছিল।
অতীত~~~~
অভীক্ষার সামনে একটি চেয়ারে বসে আছেন মুসকান চৌধুরী। অভীক্ষা চেনেন ওনাকে। মুকিত তাদের সম্পর্কের শুরুতেই নিজের মায়ের সাথে তার দেখা করিয়েছিল। তাই অভীক্ষা বিনয়ী সুরে বলেন,”আসসালামু আলাইকুম আন্টি, আপনি হঠাৎ আমাকে এখানে ডেকে পাঠালেন। কোন জরুরি দরকার?”
মুসকান চৌধুরী হালকা হেসে বলেন,”ইয়েস মাই চাইল্ড। তোমার সাথে আমার জরুরি দরকার।”
“জ্বি, বলুন।”
“আমি আজ এখানে একজন মা হিসেবে তোমার কাছে ভিক্ষা চাইতে এসেছি। তুমি কথা দাও, আমাকে ফেরাবে না।”
“ছি ছি আন্টি! এভাবে কেন বলছেন?”
“আজ যে আমি বড় অসহায় অভীক্ষা। তুমি তো জানোই, মুকিতের বাবার আমি ছাড়াও আরো একজন স্ত্রী আছে, সেই ঘরে ওনার আরো একটা ছেলে আছে। মুকিতের বাবা এখন চাইছে নিজের সব সম্পত্তি ঐ ছেলের নামে করে দিতে। মুকিতকে নিজের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন।”
“কি বলছেন কি আপনি আন্টি? এমন কেন করবেন উনি?”
“যদি বলি কারণটা তুমি!”
“আমি?!”
“হুম, তুমি। মুকিতের বাবার তোমাকে একেবারেই পছন্দ নয়। তাই তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা নিয়ে ওদের বাবা-ছেলের মাঝে অনেক তর্ক হয়েছে। মুকিতের বাবা চায়না ও তোমার মতো মিডেল ক্লাস মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখুক। ও চায়, হাই সোসাইটির কারো সাথে মুকিতের সম্পর্ক হোক। আর এটা নিয়েই মূল দ্বন্দ। এছাড়াও তিনি মনে করেন, তোমার সাথে প্রেম করার জন্য মুকিত বিজনেসে টাইম দিতে পারছে না। অন্যদিকে তার অন্যপক্ষের ছেলে বিজনেসে ফুললি ডেডিকেশিন দিয়ে কাজ করে চৌধুরী গ্রুপ এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
“তো এখন আপনি আমাকে কি করতে বলছেন?”
মুসকান চৌধুরী অভীক্ষার সামনে হাতজোড় করে বলেন,”তুমি মুকিতের সাথে ব্রেকাপ করে নাও। এটাই এখন একমাত্র উপায়।”
“এসব আপনি কি বলছেন? আমি আর মুকিত একে অপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”
মুসকান চৌধুরী এইপর্যায়ে অভীক্ষার পায়ের কাছে বসে পড়েন।
“আন্টি ছাড়ুন! কি করছেন এসব!”
“আমার ছেলের জন্য আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাইছি। আমায় ফিরিও না। তুমি আমার ছেলের জীবনে থাকলে ওর ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। ওর বাবার সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর ওর আর কিছুই থাকবে না। হয়তো এরপর ওর বাবা আমাকেও ডিভোর্স দিবে। তারপর আমরা দুই মা-ছেলে কোথায় যাব? দয়া করে আমার অনুরোধটা রাখো।”
মুসকান চৌধুরীর এমন অনুরোধ আর ফেরাতে পারে না অভীক্ষা। তাই তো বুকে পাথর রেখে, নিজের ভালোবাসাকে বলিদান দিয়ে বলে,”ঠিক আছে, আন্টি। আপনি যা চান তাই হবে। আমি মুকিতের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে নেব। যদি এতে মুকিতের ভালো হয় তো তাই হোক।”
মুসকান চৌধুরী অভীক্ষাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দেন। এদিকে অভীক্ষা ঠায় বসে থেকে কাঁদতে থাকে।
এই ঘটনার পরই অভীক্ষা মুকিতের সাথে ব্রেকাপ করে নেয়। যদিও মুকিত অনেক কান্না করেছিল, অভীক্ষার পায়ে পর্যন্ত পড়েছিল সম্পর্কটা বাঁচাতে, মুশুলধারে বৃষ্টির মধ্যেও অভীক্ষার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু তবুও অভীক্ষা মুকিতকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। যাতে তার জীবনটা সুন্দর হয়।
~~~~~
অতীতের এসব ঘটনা মনে করে অভীক্ষা রাহেলা খাতুনকে বলে,”আমি মুকিতকে অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম। তাই হয়তো ও এতটা বদলে গেছে।”
রাহেলা খাতুন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। প্রসঙ্গ বদলাতে বলেন,”যাই ঘটে থাকুক, মুকিত এখন তোর অতীত। তুই ওর ভালোর জন্যই ওর হাত ছেড়েছিলি আর আজ ও প্রতিষ্ঠিত। এখন তোদের রাস্তা আলাদা হওয়াই শ্রেয়। তুই মুকিতের কথা বাদ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস কর। কাল না তোর সিলেটে যাওয়ার কথা।”
“হুম, পরশু শো আছে। তাই আমাকে কালকেই সিলেটে ল্যান্ড করতে হবে।”
“ঠিক আছে, এখন আর কান্নাকাটি না করে ঘুমিয়ে পড়। কাল সিলেটে যাস, অনেক সুন্দর শহর। তোর বাবা তো প্রায়শই আমাকে সিলেটের সৌন্দর্যের কথা বলত। পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্ণা আর চা বাগানে ঘেরা শহর। আমায় বলেছিল, সময় পেলে ঘুরতে নিয়ে যাবে কিন্তু তার আগেই…”
রাহেলা খাতুনের চোখে জল চলে এলো। অভীক্ষা সেই জল মুছে দিয়ে বলল,”তুমি কেঁদোনা দাদি, বাবার দেয়া কথা আমি রাখবো। আমি তোমাকে সিলেটে নিয়ে যাব। তাছাড়া আমি ভেবেছি, এবার যখন সিলেটে যাচ্ছি তখন আরো একটা কাজ করব।”
“কি কাজ?”
“বাবার খোঁজ।”
রাহেলা খাতুনের বুকটা ধক করে ওঠে। তিনি বলে ওঠেন,”এসব কি ভেবেছিস তুই? তোর মা জানলে তো কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে।”
“মাকে এসব জানানো যাবে না। আমি সবটা ম্যানেজ করে নেব। আমাকে একটা চেষ্টা করতে দাও।”
“কিন্তু তুই কোথায় খুঁজবি তোর বাবাকে? এতগুলো বছর তো তার কত খোঁজ চলল কিন্তু ফলাফল শূন্য।”
“আমি নিজ থেকে একটা চেষ্টা করে দেখতে চাই। সীমান্তবর্তী এলাকায় যেখানে বাবা নিখোঁজ হয়েছিল সেখানে।”
“এটা তো বিপদজনক হতে পারে।”
“আমার কিছুই হবে না। আমাকে বাবাকে খুঁজে বের করতেই হবে৷ তোমার কোলে তোমার ছেলেকে ফিরিয়ে না দিয়ে আর মায়ের কাছে তার প্রিয়তম স্বামীকে ফিরিয়ে না দিয়ে যে আমি শান্তি পাবো না। তোমাদের চোখের জল যে আমায় ভীষণ কষ্ট দেয়।”
রাহেলা খাতুন অভীক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”একদম বাবার মতোই সাহসী হয়েছিস। আল্লাহ তোর সহায় হোক। আমি তো অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছি৷ তবুও আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব। যদি সত্যি আমার ছেলেটা এখনো অব্দি বেঁচে থাকে তাহলে আমি তার সন্ধান পেতে চাই। মৃত্যুর আগে একবার তাকে দুচোখ ভড়ে দেখতে চাই। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না রে!”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সারজিস সিলেটে সেনা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। বর্তমানে সে সেনাবাহিনীর একজন মেজর। তাই তাকে একটা নতুন মিশনের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। সারজিস তার অধীনে থাকা সকল লেফট্যানান্ট এবং সেনা সদস্যদের বলে,”আগামীকাল আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটা মিশন পরিচালনা করতে হবে। আমার কাছে খবর আছে, কাল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আমদানি করার পরিকল্পনা আছে স্মাগলারদের। এটা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য একটা বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের যে করেই হোক, ঐ স্মাগলারদের ধরতেই হবে।”
“ইয়েস, মেজর। আমরা সবাই প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দেব। তবুও ঐ স্মাগলারদের সফল হতে দেব না।”
“দ্যাটস দা স্পিরিট!”
সারজিসের গর্ব হয় তার অধীনে থাকা এসব সাহসী বীর সৈনিকদের জন্য। যারা দেশের জন্য নিজের জীবন দিতেও দুবার ভাবে না।
To be continue……