#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সারজিস মনে করলো অভীক্ষার বলা শেষ কথাগুলো। অভীক্ষা আর সাথে এই সম্পর্কে টেনে নিয়ে যেতে চায়নি। জীবনে দ্বিতীয় বার তার মুখটা পর্যন্ত দেখতে চায়নি। সারজিস কোন আশায় ঐ মেয়ের ভরসায় থাকবে? তার থেকে নিজের পরিবারের কথাতেই সম্মতি দেয়া ভালো। এমন ভাবনা থেকেই সারজিস বলল,”তোমরা সবাই মিলে যদি ঠিক করে থাক যে আমায়রার সাথেই আমার বিয়ে দেবে তাহলে আমারো এই বিয়েতে আর কোন আপত্তি নেই।”
ইভা খুশি হয়ে বলে,”তাহলে তো হয়েই গেল। আমি খুব শীঘ্রই বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলি তাহলে।”
সারজিস মনের অবস্থা বেহাল। মুখে সম্মতি জানালেও সে মন থেকে এই সিদ্ধান্তে রাজি হতে পাচ্ছে না। একেই তো আমায়রাকে তার খুব একটা পছন্দ না তার উপর আমায়রার ব্যাপারটাও তাকে ভাবাচ্ছে। সারজিস চোখ বন্ধ করে নিজেই নিজেকে শুধায়,”আমি কোন ভুল করছি না তো? এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া কি ঠিক হলো? নাকি সবটা আমার মস্ত বড় ভুল!”
সারজিস এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পেল না বিধায় পুনরায় চোখ খুলে নিয়ে বলল,”হয়তো আমার ভাগ্যে এটাই লেখা ছিল। আর ভাগ্যকে তো কোনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব না!”
~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতি সবেমাত্র রান্না করে এসে সোফায় বসেছে। এমন সময় তার বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠল৷ সুনীতি গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিতেই অবাক হয়ে গেল। বলল,”অহনা তুই!”
“সারপ্রাইজ!”
দুই বান্ধবী আবেগপ্রবণ হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। অহনা বলে,”কতদিন পর তোকে সামনাসামনি দেখলাম!”
সুনীতি বলল,”শেষবার দেখা হয়েছিল মনে হয় ৩ মাস আগে। আর তুই বলছিস কতদিন।”
“আগে তো আমরা ৩ মিনিটও একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতাম না আর এখন সাংসারিক কাজে এত ব্যস্ত যে ৩ মাসও কম মনে হচ্ছে। তা আমাদের অভীক্ষা কোথায়?”
সুনীতি বলল,”ও হয়তো নিজের রুমে আছে। আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি। তুই বস।”
“আমার এখন বসার সময় নেই নীতি। এখন আমার অনেক কাজ।”
“কি কাজ?”
“আরে তোকে তো বলাই হয়নি। যে কাজে এসেছি। তুই,অভীক্ষা আর আন্টি ঝটপট তৈরি হয়ে নে। তোদেরকে আমাদের বাসায় যেতে হবে।”
“কেন?”
“আমায়রার বিয়ে।”
“কি? আমায়রার! বাহ, এটা তো খুশির খবর। তা পাত্র কে?”
“আমার বড় ভাসুরের ছেলে সারজিসের সাথে। তুই তো বোধহয় ওকে তেমন দেখিস না। পড়াশোনা করেছে আমেরিকায়। তারপর দেশে ফিরে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।”
“ওহ। তাই বল। তা বিয়েটা কবে?”
“এই সপ্তাহেই। আসলে সাগর তো তেমন ছুটিই পায়না আর সারজিসও। এবার দুজনে একসাথে ছুটি পেয়েছে। তাই আমরা সবাই চাইছি বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেড়ে ফেলতে।”
“হুম। তো আমাদের কি আজই যেতে হবে?”
“অবশ্যই। আজ তো এনগেজমেন্ট হবে। কাল সংগীত, মেহেন্দী আর পরশু গায়ে হলুদ আর বিয়ে। এই ৩ দিন তোদেরকে আমাদের বাড়িতেই থাকতে হবে।”
“একবারে বিয়ের দিন গেলেই হয়না?”
“আমি জানতাম তুই এটাই বলবি। তাই তো চলে এসেছি তোকে বেঁধে নিয়ে যেতে। রাহেলা আন্টি আর অভীক্ষাকে ডাক জলদি। তোদের সবাইকে বেঁধে দেব।”
এরমধ্যে অভীক্ষা চলে আসে। অভীক্ষা এসে অহনাকে দেখে খুব খুশি হয়ে বলে,”অহনা আন্টি তুমি এতদিন পর!”
‘তোদের সবাইকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছি।’
“কেন? কোন স্পেশাল প্রোগ্রাম আছে?”
“আছে তো। আমায়রার বিয়ে!”
“বিয়ে” শব্দটা থমকে যায় অভীক্ষা। তার মনে পড়ে ৩ মাস ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। একটু পর রাহেলা খাতুনও চলে আসেন। অহনার জোরাজুরিতে সবাই মিলে যেতে রাজি হয়।
~~~~~~~~~~~~
খন্দকার বাড়িতে এসে সুনীতির সাথে সাগর, সারজিস সবার দেখা হয়৷ সবাই বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে৷ কিন্তু ইভা সুনীতিকে দেখে খুব একটা খুশি হয়না৷ তার মনে পড়ে যায় এই মেয়েটার সাথে একসময় তার স্বামীর বিয়ে হবার কথা ছিল। তবুও ভদ্রতা রক্ষায় সে সুনীতির সাথে কথা বলে। এদিকে অভীক্ষা এখানে আসছে থেকে স্বাভাবিক বোধ করছে না। তার মনে কিরকম যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। যেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে আজ।
এরইমধ্যে অহনা এসে সুনীতি, অভীক্ষা ও রাহেলা খাতুনকে নিয়ে আমায়রার রুমে চলে যান। আমায়রা এনগেজমেন্ট এর জন্য খুব সুন্দরভাবে তৈরি হচ্ছে। তার পরনে একটা পিংক কালারের খুব সুন্দর একটা গাউন। এই গাউনটায় তার সৌন্দর্য যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সুনীতি তো আমায়রাকে দেখেই বলে,”কি সুন্দর লাগছে আমায়রাকে।”
আমায়রাকে সুনীতিকে দেখে খুশি হয়ে বলে,”সুনীতি আন্টি তুমি এসেছ!”
“হুম।”
অহনা বলে,”সুনীতি চল আমরা বাইরে যাই। ওরা ইয়াং জেনারেশন এখানে নিজেদের মতো একটু কথাবার্তা বলুক।”
বলেই তারা চলে যায়। রাহেলা খাতুনও চলে যান। অভীক্ষা আমায়রাকে বলে,”তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।”
“ধন্যবাদ অভীক্ষা। জানো, আমি ভীষণ খুশি। কারণ আমি যেই মানুষটাকে ভালোবেসেছি, যাকে সবসময় স্বামী হিসাবে চেয়েছি তাকেই পেতে চলেছি।”
“বাহ, এটা তো খুব খুশির কারণ। আসলেই তুমি একজন ভাগ্যবতী। নাহলে কতজনের সাথে এমন হয়।”
আমায়রা হেসে ফেলে। তার খুশির আজ যেন কোন মাত্রা নেই। সে অভীক্ষার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আজ যখন আমার ভালবাসার মানুষটা আমার হাতে তার নামে লেখা আংটি পড়াবে তখন যে কি সুন্দর অনুভূতি হবে সেটা ভাবতেই অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে।”
আমায়রার এত উৎসাহ দেখে ভীষণ ভালো লাগে অভীক্ষার। সে বলে,”দোয়া করি, তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে অনেক সুখী হও।”
“তাই যেন হয়। আমাদের জীবনে যেন কালো ছায়া না আসে।”
এমন সময় ইভা এসে বলে,”আমায়রা! তুমি তৈরি হয়েছ তো? তাহলে তাড়াতাড়ি বাইরে চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।”
আমায়রা বলে,”জ্বি, চাচি। এখনই যাচ্ছি।”
আমায়রা নিজেকে আয়নায় আরেকবার দেখে নিয়ে বলে,”আমাকে আজ যা সুন্দর লাগছে সারজিস ভাইয়া তো আমার থেকে চোখই ফেরাতে পারবে না!”
ইভা সামনে এগিয়ে এসে বলে,”কারো নজর না লাগুক।”
অতঃপর ইভা, আমায়রা ও অভীক্ষা সবাই একসাথে বাইরে বেরিয়ে আসে। এনগেজমেন্টের স্থানে যেতেই ইভা আমায়রাকে মঞ্চে উঠিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,”এই হলো আমায়রা, আমার হবু বৌমা। দ্যা মোস্ট প্রিটিয়েস্ট গার্ল।”
আলো এসে পড়ে আমায়রার গায়ে। তার হাসি দেখে সবার চোখ জুড়িয়ে যায়৷ তার উপর আজ আসলেই আমায়রাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিল। একটু থেমে ইভা আবারো বলে,”এবার আমার ছেলের সাথে পরিচয় হয়ে নিন। ঐ যে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে আমার একমাত্র ছেলে সারজিস খন্দকার। যে একজন আর্মি অফিসারও বটে। তো পরিচয় হয়ে নিন আমার মোস্ট হ্যান্ডসাম, ব্রেভ বয়,সারজিসের সাথে।”
সকলের দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে ফিরে তাকাতেই হতবাক হয়ে যায় অভীক্ষা। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে সারজিসের দিকে। সারজিস অভীক্ষার একদম পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। অভীক্ষা পেছন ফিরে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আরো কাকতালীয় ভাবে দুজনের ড্রেসও মিলে যায়। সারজিসের পরণে একটা হলুদ পাঞ্জাবি অপরদিকে অভীক্ষার পরণে একটা হলুদ লেহেঙ্গা।
সারজিসকে দেখে অভীক্ষা অবাক হয়ে বলে ওঠে,”আপনি!”
সারজিসও তখনো অব্দি অভীক্ষার পানেই চেয়ে আছে।
To be continue……