মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-১১

0
48

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_11
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা দৌড়ে যাচ্ছিল এমন সময় কেউ একজন এসে তার হাত আঁকড়ে ধরে। অভীক্ষা পিছন ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কারণ তার হাত ধরেছিল সারজিস। অভীক্ষা আশেপাশে তাকিয়ে বলে,”আমার হাতটা ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।”

সারজিস হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,”আমার আপনার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”

“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার কাছে বেশি সময় নেই।”

“ঐ মুকিত কি কথা বলছিল আপনার সাথে?”

“সেটা আপনার জানার দরকার নেই। যদি অন্য কিছু বলার থাকে তো বলুন নাহলে আমি যাচ্ছি,,”

“ওয়েট, যাবেন না প্লিজ। আমার আপনার সাথে আসলেই জরুরি কথা আছে।”

“হুম, বলুন।”

“আপনি কি ভাবছেন আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে?”

অভীক্ষা অবাক স্বরে বলেন,”আপনি ঠিক কোন সম্পর্কের কথা বলছেন?”

“কেন আমাদের বিয়ে…”

“চুপ, আর একটা শব্দও উচ্চারণ করবেন না। ঐ বিয়েটাকে আমি মানি না। আপনাকে তো আমি আগেই বলেছি যে এটা আমার কাছে শুধুই একটা দূর্ঘটনা ছিল। তবুও কেন আপনি এমন কথা বলছেন? আল্লাহর দোহাই লাগে, এসব আর বলবেন না।”

সারজিসও এবার বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে,”এভাবে অস্বীকার করলেই শুধু হবেনা। আমরা কবুল বলে একে অপরকে বিয়ে করেছিলাম। আর এখন আমার পরিবার আবারো আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমার কাছে ব্যাপারটা সাধারণ ভাবে মেনে নেয়া সহজ নয়।”

অভীক্ষা বলে,”বেশ, যদি আপনার এটা নিয়ে সমস্যা থাকে তো কোন ব্যাপার না। আপনি বরং একটা কাজ করুন, ডিভোর্স পেপারসের ব্যবস্থা করুন আমি সেখানে সই করে দেব। তাহলে আপনার মনে আর কোন খুতখুতানি থাকবে না। আর হ্যাঁ, আপনার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা রইল। আশা করি, আপনি এবার সব ভুল শুধরে নিয়ে সুখী হতে পারবেন।”

কথাগুলো বলার সময় অভীক্ষার গলা কাপে। সে যেন মন থেকে এসব বলতে চায়নি কিন্তু তাকে বলতে হলো৷ কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দূরে চলে আসে। সারজিস তখনো অসহায় চোখে অভীক্ষার দিকে তাকিয়ে।

“বেশ, আপনি যদি চান তো এমনই হবে। আপনার যদি এই সম্পর্কে আগ্রহ না থাকে তাহলে আমি তো আপনাকে জোর করতে পারব না। আপনার সাথে আমার পথ তাহলে আলাদাই থাকুক। আমিও নতুন কাউকে নিয়ে জীবন শুরু করি আর আপনিও,,,”

কথাটা বলতে গিয়েই মুকিতের কথা সারজিসের মাথায় এলো। কেন জানি মাথায় রাগ চেপে বসলো মুকিত আর অভীক্ষাকে একসাথে ভেবে। রাগে পাশে থাকা একটি বড় ফুলদানি ছুড়ে ফেলল সারজিস। অতঃপর সামনের দিকে এগোতে লাগল।

এদিকে অভীক্ষা অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে গিয়ে হঠাৎ করেই তার দাদি রাহেলা খাতুনের মুখোমুখি হয়ে গেল। অভীক্ষা বেশ ভয় পেয়ে গেল। বলল,”দাদি, তুমি!”

রাহেলা খাতুন গম্ভীর স্বরে বলেন,”আমি তোর আর সারজিসের সব কথা শুনে ফেলেছি, তুই আমাকে সব সত্যটা খুলে বল। তোর সাথে সারজিসের বিয়ে, ডিভোর্স এসবের মানে কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“আস্তে বলো দাদি, কেউ শুনে ফেলবে। তুমি একটু ওদিকে চলো। আমি তোমায় সব খুলে বলছি।”

এই বলে অভীক্ষা তার দাদিকে টেনে একটু দূরে নিয়ে যায়। অতঃপর তাকে ৩ মাস আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে রাহেলা খাতুন বলেন,”এখন তুই কি করবি ভাবছিস? সবাইকে সত্যটা,,”

“না,দাদি এটা করা যাবে না। আমায়রা সারজিসকে ভালোবাসে। আমি ওদের ভালোবাসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনা।”

“কিন্তু সারজিস কি আমায়রাকে পছন্দ করে? তোর সাথে যখন ও কথা বলছিল তখন ওর চোখের দিকে আমি দেখেছিলাম। আমি তো ওর চোখে,,”

“ব্যস, দাদি। এর আগে আর কিছু বলো না। আমার ওনার প্র‍তি কোন আগ্রহ নেই..আমি এই সম্পর্কটাকেও মানি না। তবুও যদি ওনার সেই দূর্ঘটনাবশত ঘটা ঘটনাটা নিয়ে কোন দোনোমোনো থাকে তাহলে আমি বলে দিয়েছি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করতে।”

“এত তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটু ভাবতি।”

“এখানে ভাবার কোন কিছুই নেই দাদি। আমি কারো সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না।”

“আর তোর সুখ, সেটার কি হবে?”

অভীক্ষা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে মলিন হেসে বলে,”আমাকে কি তোমার দুঃখী মনে হয়?!”

“সত্যি করে বল তো, সারজিসের মনে তোর জন্য কি কোন অনুভূতি নেই?”

অভীক্ষা সহসা কোন জবাব দিতে পারে না। চোখ বন্ধ করতেই সারজিসের চেহারাটা সামনে ভেসে ওঠে। তবুও সে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলে,”না, নেই।”

রাহেলা খাতুন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অভীক্ষা চোখই তার মনের কথা বলে দিচ্ছে। তিনি ভালোই বুঝতে পারছেন, মুখে যাই বলুক অভীক্ষার মনে কিছু তো আছেই সারজিসের জন্য।

এদিকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে কোন এক ছায়ামূর্তি তাদের কথা শুনে নিল। অতঃপর মৃদু হেসে বললো,”তাহলে ঘটনাটা এমন। বেশ ভালো একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। এবার শুধু অপেক্ষা করো, আমায়রা আর সারজিসের বিয়ের দিন কি ড্রামা হয় তার জন্য।”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সারজিস ও আমায়রার বিয়ে আগামীকাল। আজ সেই উপলক্ষে সংগীত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মূল আকর্ষণ কাপল ডান্স। আজ সারজিস একটি কালো পাঞ্জাবি পড়েছে তার সাথে ম্যাচিং করে আমায়রাও একটি কালো লেহেঙা পড়েছে।

অভীক্ষার এই অনুষ্ঠানে আসার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সুনীতি জোরপূর্বক ভাবে তাকে নিয়ে এসেছে৷ ভেবেছে এতে হয়তো অভীক্ষার মন একটু ভালো হবে। কাকতালীয় ভাবে অভীক্ষার পরনে একটা কালো সালোয়ার কামিজ।

ইভা মাইক হাতে নিয়ে স্টেজে উঠে বলে,”আজ আমাদের প্রধান আকর্ষণ হলো কাপল ড্যান্স, যার মধ্যমণি হলো সারজিস ও আমায়রা। এছাড়া আপনারাও নিজেদের পার্টনারের সাথে জয়েন করতে পারেন। ”

অভীক্ষা এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। সারজিস একপলক তার দিকে তাকায়। অভীক্ষা খুব একটা সাজেনি। অথচ এই সামান্য সাজেও তাকে কতটা মায়াবী লাগছে। সারজিস অভীক্ষার থেকে চোখ ফেরাতেই পারে না।

একটু পর ইভা ইশারা করে ডিজের লোকদের গান বাজাতে বলে। তারাও বেশ জনপ্রিয় একটি রোম্যান্টিক গান প্লে করে।

Ve Kamleya Ve Kamleya
Ve Kamleya Mere Nadaan Dil

Ve Kamleya Ve Kamleya
Ve Kamleya Mere Nadaan Dil

Do Nainon Ke Pechida Sau Galiyare
Inmein Kho Kar Tu Milta Hai Kahan
Tujhko Ambar Se Pinjre Zyada Pyare

Udd Ja Kehne Se
Sunta Bhi Tu Hai Kahan
Gall Sunn Le Aa

Ve Kamleya Ve Kamleya
Ve Kamleya Mere Nadaan Dil

সারজিস অভীক্ষাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এই গানের তালে তালে আমায়রার সাথে নাচতে থাকে। আমায়রাকে ভীষণ খুশি লাগছিল। কিন্তু সে যদি একবার লক্ষ্য কর‍ত যে সারজিসের ধ্যান তার দিকে নয় বরং অন্য কারো দিকে তাহলে হয়তো এত খুশি হতে পার‍ত না।

একটু পরেই হঠাৎ করে মুকিত কোথা থেকে যেন এসে উপস্থিত হয়। সে এসেই অভীক্ষার কাছে এসে বলে,”চলো আমরাও ডান্স করি।”

অভীক্ষা, সারজিস ও আমায়রাকে দেখে একটু জেলাস হচ্ছিল। তাই সেও মুকিতের সাথে ডান্স করতে রাজি হয়ে যায়। মুকিত অভীক্ষার হাত ধরে টেনে তাকে স্টেজে নিয়ে যায়।

Tujhpe Khud Se Zyada
Yaar Ki Chalti Hai
Ishq Hai Yeh Tera
Ya Teri Ghalti Hai

Agar Sawaab Hai Toh
Kyun Saza Milti Hai

Dillagi Ik Teri
Aaj Kal Parson Ki
Neend Le Jaati Hai
Loot Ke Barson Ki

Maan Le Kabhi Toh
Baat Khudgarzon Ki

মুকিতের সাথে অভীক্ষাকে একসাথে নাচতে দেখে সারজিস এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে না। সে প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে। নাচের তাল হারিয়ে ফেলে যার করুণ একটা স্টেপ করতে গিয়ে ভুলবশত আমায়রা হোচট খেয়ে পড়ে যায়। যার ফলে তার ভীষণ চোট লাগে। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই দৃশ্য। কিন্তু সারজিসের চোখ তখনো মুকিত আর অভীক্ষার দিকে সীমাবদ্ধ। মুকিত অভীক্ষাকে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে ধরে আছে যা সারজিসের ক্রোধকে বাড়িয়ে তুলছিল।

To be continue…….