মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-১৫

0
47

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_15(মহাবিবাহ পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অহনা আমায়রার হাত ধরে বলে,”চল এখান থেকে। তোকে আর সারজিসকে বিয়ে করতে হবে না।”

ইভা বলে ওঠে,”তুমি ভুল করছ অহনা। কেন বুঝতে পারছ না আমার সারজিসকে এখানে ফাঁসানো হচ্ছে। সবকিছুর পেছনে রয়েছে এই মেয়েটা।”

এমন সময় সারজিস বলে ওঠে,”ব্যস, মম ব্যস। তুমি অনেকক্ষণ থেকে শুধু শুধুই অভীক্ষাকে দোষ দিচ্ছ। যেখানে ওর কোন দোষই নেই।”

“সারজিস!”

সারজিস অভীক্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে জল। এই দৃশ্য সারজিসকে ব্যথিত করে। তাই সারজিস বলে,”অভীক্ষার যদি ইচ্ছা থাকতো আমাকে ফাঁসানোর তাহলে সেটা ও অনেক আগেই করতে পারত। কিন্তু ও সেটা করেনি। বরং ও চেয়েছে আমি আমায়রাকে বিয়ে করি। কিন্তু সত্যি বলতে আমার আমায়রার প্রতি কোন অনুভূতিই নেই। আমি সবসময় ওকে নিজের বোনের চোখে দেখছি। শুধুমাত্র তোমাদের চাপে রাজি হয়ে আমি বিয়েটা করেছি। নাহলে তো…”

সারজিস এবার ধীরে ধীরে অভীক্ষার দিকে এগিয়ে যায়। অভীক্ষার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”যেভাবেই হোক না কেন আমার সাথে অভীক্ষারই বিয়ে হয়েছে। আর আমি এই বিয়েটা মন থেকেই মেনে নিয়েছি। আমার অভীক্ষার প্রতি অনুভূতি রয়েছে এবং আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।”

সারজিসের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যায়। অভীক্ষা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”এসব কি বলছেন আপনি সারজিস? আপনার মাথা ঠিক আছে তো?”

“চুপ৷ আপনি আর আমাকে বাঁধা দেবেন না অভীক্ষা। আমাদের বিয়ে হয়েছে এটাই সত্য। আপনি চাইলেই এই সত্যটাকে অস্বীকার করতে পারবেন না।”

অভীক্ষা হতবাক হয়ে যায় সারজিসের দিকে তাকিয়ে। ইভা বলে ওঠে,”বিয়ে যখন হয়েছে তখন ডিভোর্সও করানো যাবে। কিন্তু এই মেয়েকে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বউ হিসেবে মানব না।”

সারজিস বলে ওঠে,”তোমার মানা না মানায় কিছু যায় আসে না, মম৷ আমি মেনে নিয়েছি এটাই যথেষ্ট। ভাগ্য যখন আমাদের এক করেছে তখন দুনিয়ার আর কোন শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমি তো ভেবেছিলাম আজ চিরতরে অভীক্ষাকে হারিয়ে ফেলব কিন্তু এমন সময় সব সত্য প্রকাশ্যে আসল। এটাই হয়তো মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছিল।”

আমায়রা চোখের জল মুছে বলে,”আর আমার কি হবে? তোমরা সবাই মিলে আমার সাথে যে প্রতারণা করলে তার কি হবে?”

বলেই আমায়রা এগিয়ে আসে। অভীক্ষার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার জন্য সাজানো বিয়ের আসরে এখন তুমি বসে পড়বে,আমার জন্য সাজানো বাসরে তুমি বসবে আর আমার যায়গাটা কোথায় হবে? সেই ছোটবেলা থেকে আমি সারজিস ভাইকে নিয়ে যেই স্বপ্ন দেখেছি তার কি হবে?”

অভীক্ষা আমায়রাকে বোঝানোর জন্য বলে,”আমার কথাটা শোনো আমায়রা..”

“তোমার আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। এটাই তো চেয়েছিলে তুমি তাই না, যে সারজিসকে নিজের করে পাবে। তো নাও এবার খুশি হও। আমার সারজিস ভাইকে আমার থেকে কেড়ে নিলে তুমি।”

“তুমি ভুল ভাবছ আমায়রা।”

“আমি কিচ্ছু ভুল ভাবছি না। তবে একটা কথা মনে রেখো, তুমি কখনো সুখী হতে পারবে না, কখনো না। আমি তোমায় সুখী হতে দেব না।”

সারজিস এগিয়ে এসে বলল,”আমি মানছি তোমার সাথে অনেক খারাপ হয়েছে আমায়রা। কিন্তু তাই বলে তুমি অভীক্ষাকে এভাবে বলতে পারো না।”

“বাহ, গায়ে লেগে গেল! লাগুক। সত্য কথা বললে সবারই গায়ে লাগে। আমি একশোবার বলব, হাজারবার বলব। তোমরা আমায় ঠকিয়েছ।”

বলেই আমায়রা নিজের গায়ের সকল গহনা খুলতে লাগল। ইভা বলে উঠল,”কি করছ এসব?”

“যা ঠিক তাই করছি চাচি।”

বলেই সব গহনা অভীক্ষার হাতে দিয়ে বলে,”নেও। এসব কিছুর যোগ্য দাবিদার তুমি। সারজিস ভাই তো তোমাকেই পছন্দ করেছে তাইনা।”

“তুমি বিশ্বাস করো আমায়রা আমি এসব কিছুই চাইনি।”

“তুমি চাও বা না চাও এসব কিছুর উপর এখন তোমার অধিকার, যেমন তুমি আমার থেকে সারজিস ভাইকে অধিকার করে নিয়েছে। তেমনি ভাবেই।”

বলেই আমায়রা দৌড়ে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। অহনা, সাগর, ইভা সবাই তার পেছন পেছন যায়। সুনীতি এই পরিস্থিতিতে কিছু করতে পারছিল না। তার মাথায় আসছিল না এখন কি করবে। রাহেলা খাতুন আগে থেকেই জানতেন সব কিন্তু পরিস্থিতি এমন হবে তা টের পান নি। এখন তিনিও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এরইমধ্যে সাজিদ এগিয়ে এসে সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”দেখো যা হবার তো হয়ে গেছে। বাচ্চারা একটা ভুল করে ফেলেছে। এখন আমাদেরই তো এর একটা সমাধান বের করতে হবে।”

“আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন ভাইয়া? আমার মাথা এখন একদম কাজ করছে না।”

“আমি চাইছি, সারজিস ও অভীক্ষার বিয়েটা দিয়ে দিতে। ওদের বিয়ে তো আগেই হয়েছে কিন্তু সেখানে আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না আর না ছিল কোন সামাজিকতা। আর সারজিস তো বললোই ও অভীক্ষাকে বিয়ে করতে চায়। আমার মনে হয় অভীক্ষারও কোন আপত্তি নেই।”

সুনীতি বলে,”আমি এই বিষয়ে কোন মতামত দেব না। আমি সবটা অভীক্ষার উপর ছেড়ে দিলাম। অভীক্ষা যদি রাজি থাকে তো বিয়েটা করতে পারে। এখানে আমার কোন কিছু বলার নেই।”

রাহেলা খাতুন এবার অভীক্ষার কাছে এগিয়ে যান। গিয়ে বলেন,”তুই আর আপত্তি করিস না সখী, বিয়েটা করে নে।”

“এসব তুমি কি বলছ দাদি? আমি কিভাবে বিয়েটা করে নেব? যেখানে সারজিসের সাথে আজ আমায়রার বিয়ের কথা ছিল। একটা মেয়ের স্বপ্ন ভেঙে, এভাবে এতগুলো মানুষের সামনে তাকে অপদস্থ করে আমি কিভাবে….”

“তুই যদি এখন বিয়েটা না করিস তাহলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠবে। সারজিস তো সবার সামনে বলেই দিল,তোকে পছন্দ করে। তাছাড়া মেয়েদের সম্মান অনেক মূল্যবান। আজ সবটা জানাজানি হবার পরও যদি তুই সারজিসকে বিয়ে না করিস তাহলে সারজিসের হয়তো কিছু হবে না কিন্তু তোর চরিত্র নিয়ে সমাজে দূর্নাম ছড়াবে। তোর মা তো এমনিতেই তোর বাবার চিন্তায় গত ২০ বছর ধরে অর্ধমৃত। এখন কি তুই চাস যে তোর মা তোকে নিয়ে আরো চিন্তা করুক? নিশ্চয়ই, না। তাহলে তুই বিয়েটা করে নে। এতেই সবার মঙ্গল।”

“কিন্তু এই বিয়েটা যে কেউ মানবে না দাদি।”

“তোকে এত কিছু ভাবতে হবে না। সারজিস রাজি এটাই যথেষ্ট। তাছাড়া সারজিসের বাবা নিজে তোর মাকে তোদের বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছে। অহনা, সাগর এখন একটু রেগে থাকলেও একসময় ঠিকই মেনে নেবে। সারজিসের মা ইভা একটু ঝামেলা করতে পারে আর আমায়রাও করতে পারে তবে সেটা কোন ব্যাপার না। তাছাড়া সারজিস একজন আর্মি তাই তুই চাইলে তার সাথে কোয়ার্টার এ গিয়ে থাকতে পারিস। এজন্য শ্বশুর বাড়ির মন জুগিয়ে চলতে হবে না। তোর মা-বাবাও তো বেশিরভাগ সময় একসাথে বাইরে কোয়ার্টার এ ছিল। এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি।”

অভীক্ষা সবগুলো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। অবশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সে বিয়েটা করবে। একটু পর সাজিদ অভীক্ষাকে এসে বলে,”অভীক্ষা তুমি কি আমার ছেলে সারজিসকে বিয়ে করতে রাজি আছ?”

“হু।”

বলে মাথা নাড়ায় অভীক্ষা। সাজিদ কাজি সাহেবকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”আপনি আবারো বিয়ে পড়ানো শুরু করুন তবে এবার পাত্রীর নামের যায়গায় অভীক্ষা চৌধুরী লিখুন।”

কাজি সাহেব আবারো নতুন করে বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। সারজিসকে কবুল বলতে বললেই সে কবুল বলে দেয়। অভীক্ষা একটু সময় নিয়ে কবুল বলে। ঠিক সেই সময়ই মুকিত সেখানে উপস্থিত হয়। একটু আগেই মুকিত তার মায়ের কাছ থেকে সব সত্যটা জানতে পেরেছিল যেন কেন অভীক্ষা তার জীবন থেকে দূরে সরে গেছিল। এটা জানার পর মুকিত আজ অনেক আশা নিয়ে এখানে এসেছিল যে তাদের মধ্যকার সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেবে। কিন্তু এখানে এসে সে দেখতে পেল অভীক্ষা সারজিসকে বিয়ে করে নিলো। এই দৃশ্য তার মন পুরোপুরি ভেঙে দিল।

To be continue……