মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-২৪+২৫

0
70

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_24
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সকাল বেলায়, সুন্দর সাদা গাড়িতে উঠে বসল সারজিস। সারজিস গাড়ি চালানো শুরু করল। তার চোখে চাপা উদ্বেগ। সারাটা সময় তার মায়ের বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তার মনে শান্তি আসেনি। অভীক্ষার সাথে তার সম্পর্কের ওপর আঘাত হানতে পারে এমন কিছু যদি সে দেখে—এমন ভাবনায় তার মন স্ফীত হয়ে উঠেছিল। আজ সে বুঝতে পারছে, সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাসের পুঁজির মূল্য কতটা।

গাড়ির স্টিয়ারিং ধরার আগে সারজিস নিজেকে বলেছিল,”অভীক্ষা, আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ যেন মাটিতে মিশে না যায়।”
সে কিছুক্ষণ গাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন শেষবারের মতো তার ভালবাসার প্রতি আস্থা রাখতে চাইছে। গাড়ি চালাতে শুরু করে সে মনে মনে আবারও আশ্বাস দেয়—”আমি বিশ্বাস করব, আমি বিশ্বাস করব…”

এদিকে, অভীক্ষা হোটেলের পাশের একটি ক্যাফেতে বসে ছিল। তার মুখে হাসি ছিল, কারণ আজ তার বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং একদম সফল হয়েছে। তারা তার ডিজাইন সম্পর্কে প্রশংসা করেছে। এতোদিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল হাতে পাওয়ার মুহূর্ত তার জন্য বিশেষ। সে স্মৃতিতে ফিরে গেল—কীভাবে সে এই স্বপ্নের পথে পা রেখেছিল।

মিটিং শেষে, ফোন বের করে সে সারজিসকে কল দিতে চায়। কিন্তু ফোনে চার্জ নেই দেখে তার মন ভেঙে যায়,”আচ্ছা, এখন কি করব?”
সে নিজের কাছে প্রশ্ন করল। অভীক্ষার দৃষ্টিতে হতাশা স্পষ্ট—বাড়ির চার দেয়ালে এই যান্ত্রিক জীবনের মধ্যে সে একটু উন্মুক্ত হতে চাইছিল। “একটু বিশ্রাম তো প্রয়োজন,” বলে সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল।

হোটেলে ফিরে সে নিজের রুমে বিশ্রাম নিতে গিয়ে আবারও ভাবতে লাগল সারজিসের কথা, “আমাদের মাঝে কি কিছু বদলাতে যাচ্ছে?” নিজেকে প্রশ্ন করল সে।

অল্প কিছুক্ষণ পর, মুন্নি, অভীক্ষার সেক্রেটারি, তার রুমে এসে বলল, “ম্যাম, কিছু জরুরি কাজ আছে। আমি বাসায় যেতে হবে।”

অভীক্ষা একটু চিন্তিত হয়ে বলল, “ঠিক আছে, তোমার কাজ থাকলে চলে যাও।”

মুন্নি প্রসন্ন হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিদায় নেয়।

মুন্নি চলে যাবার কিছু সময় পরেই মুকিত হাফাতে হাফাতে গ্রান্ড হোটেলে চলে আসে। এসেই হোটেলের রিশেপসনিস্টের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা, বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অভীক্ষা কি এই হোটেলেই উঠেছেন?”

রিশেপসনিস্ট উত্তর দেন,”জ্বি, কিন্তু কেন বলুন তো?”

“উনি আমার ফ্রেন্ড হন। উনি কত নম্বর রুমে আছে একটু বলুন তো।”

“কাইন্ডলি একটু ওয়েট করুন, আমি চেক করে বলছি।”

“আচ্ছা।”

“৪২৭ নাম্বার রুম।”

‘ধন্যবাদ আপনাকে।’

বলেই মুকিত ৪২৭ নাম্বার রুমের দিকে রওনা দেয়। অভীক্ষা তখন সেখানেই শুয়ে ছিল। এমন সময় মুকিত এসে তার দরজায় নক করে। অভীক্ষা উঠে গিয়ে দরজা খুলে মুকিতকে দেখতে পেয়ে অবাক স্বরে বলে,”তুমি?!”

মুকিত দ্রুত অভীক্ষার রুমে ঢুকে পড়ে বলে,”এত অবাক হচ্ছ কেন? তুমিই তো আমায় এখানে ডেকে পাঠিয়েছ!”

“এসব কি বলছ তুমি মুকিত? আমি তোমায় ডেকে পাঠিয়েছি মানে?”

“এটা মজার সময় নয় অভীক্ষা। আমি জানি তুমি এখনো আমাকেই ভালোবাসো। আমি আমার মায়ের থেকে সবটা শুনেছি কেন তুমি আমাকে ২ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছিলে৷ সবটা তুমি আমার ভালোর কথা ভেবেই করেছিলে অথচ আমি তোমায় কতই না ভুল ভেবেছিলাম। আমার তো সেসব ভেবে নিজের উপরই রাগ ও ঘৃণা হচ্ছে। কতই না খারাপ ব্যবহার করেছি তোমার সাথে। এখন হয়তো সেসব কিছুর জন্যই শাস্তি পাচ্ছি।”

“এসব কথা এখন বলার মানে কি? আর তুমিই বা এখানে কি করে এলে?”

“তুমিই তো কারো মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে বললে।”

“তোমার মাথা কি খারাপ হলো নাকি?! আমি এমন কিছুই বলিনি।”

হঠাৎ করেই মুকিত আবেগপ্রবণ হয়ে অভীক্ষাকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর বলে,”আমি জানি, তুমি আমার উপর অভিমান করেই এসব বলছ। তুমি তো ঐ সারজিসকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করোনি, করেছ বাধ্য হয়ে। তুমি তো এখনো আমাকেই ভালোবাসো। তোমাকে আর এই মিথ্যা সম্পর্কটা বয়ে নিয়ে বেরাতে হবে না অভীক্ষা। তুমি ঐ সারজিসকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। তারপর আমরা আবার বিয়ে করে নেব। আমাদের একটা ছোট্ট, সুখের সংসার হবে যার স্বপ্ন আমরা সবসময় দেখেছি। প্রয়োজনে আমি নিজের বাবার বিজনেসও ছেড়ে দেব। আমার শুধু তোমাকেই চাই।এসব বিত্ত, প্রতিপত্তি কিছুই চাই না।”

এমন সময় সারজিস সেখানে চলে আসে এবং অভীক্ষা ও মুকিতকে এভাবে দেখে সে ভীষণ রেগে যায়। তার কপালের শিরা ফুলে যায়, হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়। বিশ্বাসঘাতকতা বোধ হয়। সারজিস হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,”অভীক্ষা!”

অভীক্ষা সাথে সাথেই মুকিতকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়৷ সারজিসকে দেখতে পেয়েই তার দিকে ছুটে গিয়ে বলে,”আপনি এসেছেন সারজিস? আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমি কিছুই করি নি৷ মিস্টার মুকিত চৌধুরীই..”

মুকিত বলে ওঠে,”আর তোমায় এই সারজিসকে ভয় পেয়ে চলতে হবে না অভীক্ষা। আমি সব জানি এই লোকটা কিভাবে এই ক’দিন তোমায় নজরে রেখেছে। তোমার আর আমার কোন এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে সব বলেছে। কিন্তু এখন তো আমি আছি। এই লোকটা তোমার আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”

অভীক্ষা মুকিতের সামনে হাতজোড় করে বলে,”এসব আজেবাজে কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ।”

অতঃপর সে সারজিসের দিকে তাকায় অনেক আশা নিয়ে। সারজিসকে বলে,”বিশ্বাস করুন, আমায়। এসব কিছু..”

সারজিস আচমকা পাগলের মতো হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে,”বিশ্বাস আর তোমার মতো দুশ্চরিত্রা মেয়েকে! কখনোই না।”

“সারজিস?!”

রেগে বলে অভীক্ষা।

মুকিত বলে,”একদম আমার অভীক্ষার নামে কোন খারাপ শব্দ উচ্চারণ করবেন না।”

সারজিস দ্বিগুণ রেগে বলে,”একশোবার বলব। তোমরা দুজন মিলে এত নীচ কাজ করেছ সোজা বাংলায় যাকে বলে পরকীয়া তাও কোন মুখে এত বড় কথা বলছ?”

অভীক্ষা বলে,”এবার কিন্তু আপনি সীমা ছাড়াচ্ছেন সারজিস! সবটা না জেনে, না বুঝে কেন এত বাজে কথা বলছেন?”

“নিজের চোখে এত কিছু দেখার পরেও আমার বোঝার বাকি আছে কিছু? আরে তোমাকে তো আমি নিজের মায়ের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম আর তার কি প্রতিদান পেলাম! তুমি একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে। আমাকে তো নিজের কাছে ঘেষতে দিতে না, খুব সতী সাবিত্রী দেখাতে। এইজন্যই বুঝি? কারণ তুমি ইতিমধ্যেই অন্য কারো সাথে বিছানা গরম করে ফেলেছ। আর আমার সাথে সঙ্গম করলে তো আমি বুঝে যাব তুমি পবিত্র আর ভার্জিন নও বরং..”

সারজিস নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই অভীক্ষা ঠাস করে তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে বলে,”তোমার চিন্তা-ভাবনা এত নীচ আমি ভাবতেও পারিনি। আমি সব সহ্য করতে পারবো কিন্তু নিজের সম্পর্কে এত বাজে কথা শোনার পর আপনার সাথে এক ছাদের তলায় থাকতে পারব না। যেই সম্পর্কে কোন বিশ্বাসই নেই তা টিকিয়ে রেখে কি লাভ? আজ এখনই, এই মুহুর্তে আমি আপনাকে ত্যাগ করলাম। আর জীবনেও আপনার মুখ দেখতে চাই না।”

বলেই অভীক্ষা ত্রস্ত পায়ে হেটে বের হয়ে যেতে নেয়। সারজিস বলে ওঠে,”তো কার মুখ দেখতে চাও এই মুকিতের? শুধু মুখই দেখবে নাকি আরো অনেক কিছু? এই মুকিত কি তোমায় এতই সুখ দিয়েছে যা আমি কখনো দিতে পারব না।”

অভীক্ষা ঘৃণাভাজন দৃষ্টিতে মুকিত ও সারজিস দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলে কি বলুন তো, আমি আপনাদের দুজনকেই ঘৃণা করি। কারণ আপনারা খুব সহজেই নারীর চরিত্রের দিকে আঙুল তোলেন। সবসময় তো শুনেছেন, ছেলেরা মেয়েদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, আজ উল্টো পূরাণ দেখে নিন, আমি আপনাদের দুজনের থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিলাম। আমার কাছে সবার আগে নিজের আত্মসম্মান তার আগে কিছু নয়।”

বলেই অভীক্ষা চলে আসে। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার চেষ্টাও করে না। কেন করবে কে? সবসময় কি এই দায় মেয়েদের? মেয়েরা বারবার অপমানিত হবে আর নিজেকে প্রমাণ করবে? এই স্টেরিওটাইপ ভাঙতে চায় অভীক্ষা। সে দেখিয়ে দেবে মেয়েদের সবসময় সব দায় নয়। তারাও পারে সব অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে বুক উঁচু করে চলতে।

To be continue…….

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরে কলিং বেল বাজানোর কিছু সময় পরই তার দাদি রাহেলা খাতুন এসে দরজা খুলে দেন৷ রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে দেখে অবাক হয়ে বলে, “সখী, তুই?!”

অভীক্ষা বলে, “হুম, আমি।”

সুনীতি এগিয়ে আসতে আসতে বলে, “কে এসেছে মা?”

অতঃপর এগিয়ে এসে অভীক্ষাকে দেখে একইসাথে অবাক এবং খুশি হয়ে বলেন, “মামনী! তুমি এসেছ। হঠাৎ এভাবে না বলে চলে এলে। তুমি আসবে আমাকে আগে বলবে না। সারজিসও কি এসেছে?”

অভীক্ষা কঠিন গলায় বলে, “আর কেউ আসে নি। আমি একাই এসেছি। এখন আমাকে ভেতরে যেতে দাও প্লিজ। আমার মন মেজাজ বেশি ভালো নেই।”

সুনীতির মনে হঠাৎ চিন্তা জাগে৷ তাই সে বলে ওঠে, “কেন মামনী? কি হয়েছে তোমার?”

“ভিতরে গিয়ে বসে সব বলছি।”

বলেই অভীক্ষা বাড়ির ভিতরে ঢুকে আর বলে, “তোমরা সোফায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাদের সব বিস্তারিত বলছি।”

অভীক্ষার কথা শুনে সুনীতি ও রাহেলা খাতুন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে তারা এটা বুঝতে পারেন যে নিশ্চয়ই বড় কিছু হয়েছে। অভীক্ষার মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। তবে কি হয়েছে এবার সেটাই হলো মেইন ব্যাপার। রাহেলা খাতুন বলেন,”আচ্ছা, তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি আর তোর মা এখানেই আছি।”

“আচ্ছা।”

~~~~~~~~~~
এদিকে ইভাকে নিয়ে পুনরায় বাড়িতে ফিরে আসে সারজিস। সাজিদ বাইরে যাওয়ার করার জন্য বের হচ্ছিল এমন সময় নিজের ছেলেকে এভাবে ইভাকে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে বলে ওঠেন,”তুমি কোন সাহসে এই বাড়িতে ফিরে এলে ইভা?”

ইভা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিস বলে,”আমি মমকে ফিরিয়ে এনেছি, ড্যাড। আর এই বিষয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।”

সাজিদ হুংকার দিয়ে বলেন,”কার অনুমতি নিয়ে তুমি এই মহিলাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনলে? এতদিন এ ছিল না এই বাড়িতে শান্তি ছিল এখন আবার নিয়ে এসেছ একে অশান্তি করার জন্য!”

ইভা বলে,”তুমি শুধু আমাকেই সবসময় ভুল বোঝো সাজিদ। দেখলে সারজিস, এই জন্যই আমি এই বাড়িতে ফিরতে চাইনি। তোমার বাবা সবসময় আমার সাথে এমন করে।”

সাজিদ দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”বিয়ের পর থেকে তোমার এসব নাটক দেখে চলেছি আর না। ভালো চাইলে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও নাহলে আমি তোমায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে…”

ইভা সাজিদের মুখে এই কথা শুনে ভীষণ রেগে যায়। তবে সে কিছু বলার আগেই সারজিস বলে,”মম এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না, ড্যাড। আমরা সবাই মমকে ভুল বুঝেছিলাম৷ সত্যটা জানলে তোমরাও সবটা বুঝতে পারবে।”

এত চেচামেচির আওয়াজ শুনে অহনা এবং আমায়রাও ছুটে আসে৷ অহনা এসে ইভাকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,”আবার এই মহিলা এসে গেছে নতুন কোন ঝামেলা তৈরির জন্য!”

আমায়রাও ইভাকে দেখে অবাক হয়৷ এদিকে সারজিস বলে,”আজ মম ছিল জন্যই আমি অভীক্ষার আসল চেহারাটা দেখতে পেয়েছি। অভীক্ষা আমায় এভাবে ঠকিয়েছে..ছি! ওর যদি অন্য প্রেমিক থাকত তাহলে সেসব আমায় আগেই বলতে পারত। আমি তো ওকে জোর করে বিয়ে করতাম না। কিন্তু ও আমার থেকে সত্যটা লুকিয়ে এভাবে পরকীয়া করছিল। ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”

সারজিসের কথা শুনে অহনা অবাক স্বরে বলে,”এসব তুমি কি বলছ সারজিস? আমি অভীক্ষাকে যতদূর চিনি ও এমন করার মেয়ে নয়।”

ইভা বলে ওঠে,”এত কিছুর পরেও তুমি ঐ মেয়েটাকে সাপোর্ট করছ? ভুলে গেছ ঐ মেয়ের জন্য তোমার মেয়ের কি অবস্থা হয়েছিল?”

আমায়রা বিচক্ষণ চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করে। সাজিদ বলে,”আমারও অভীক্ষার উপর ভরসা আছে৷ নিশ্চয়ই ইভাই কিছু করেছে।”

সারজিস বলে ওঠে,”হ্যাঁ, আজ মম ছিল জন্য আমার চোখ খুলে গেছে। নাহলে তোমাদের মতো আমিও অভীক্ষাকে অন্ধের মতো ভরসা করতাম। দাঁড়াও, আমিই তোমাদের সব খুলে বলছি।”

বলেই সারজিস বাড়ির সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব কিছু শোনার পরও সাজিদ বলে,”আমার মনে হয় কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অভীক্ষা এমন কিছু করবে বলে মনে হচ্ছে না।”

ইভা বলে,”হ্যাঁ, এখন তো আমার থেকেও তোমার ঐ বাইরের মেয়েটার প্রতি বেশি বিশ্বাস৷ ২৮ বছর সংসার করেও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না আর ২ দিনের পরিচিত ঐ মেয়েটাকে এত বিশ্বাস করছ!”

সাজিদ বলে,”তোমার সাথে ২৮ বছর সংসার করেছি জন্যই তোমাকে হারে হারে চিনি৷ তোমার গাটে গাটে যে কতটা শয়তানী সেটাও জানি। আমার শুধু সন্দেহ নয় এখন তো শতভাগ বিশ্বাস যে, তুমি কিছু করেছ। সত্যি করে বল, এসব তোমার ষড়যন্ত্র তাই তো?”

ইভা ন্যাকাকান্না করে বলে,”দেখেছ সারজিস! তোমার বাবা এখনো আমাকেই দোষারোপ করছে।”

সারজিস বলে,আমি আর কিছু শুনতে চাই না এসব ব্যাপার নিয়ে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, অভীক্ষা যখন আমাকে চায় না তখন আমিও ওকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দেব। তারপর ও তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে করুক। তাও এসব নষ্টামি আমি সহ্য করবো না।”

ইভা বলে,”হুম। অভীক্ষা ওর প্রেমিকের সাথে বিয়ে করুক আর তুইও আমায়রার সাথে…”

ইভা নিজের কথা শেষ করার আগেই আমায়রা বলে ওঠে,”খবরদার না! আমাকে আর এসবের মধ্যে টানার দুঃসাহস দেখাবেন না চাচি। এমনিতেও তো আমি এসবের মধ্যে নেই আর তাছাড়া সারজিস ভাইয়ের মতো মেরুদণ্ডহীন পুরুষকে একসময় ভালোবেসেছিলাম ভাবতেও আমার নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। এই মানুষটার জন্য কিনা আমি সুই-সা*ইডও করতে গেছিলাম। যে এত তাড়াতাড়ি নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুল বুঝছে পারে সে তো আমায় প্রতি পদে পদে ভুল বুঝত। আল্লাহ অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে আমায়। এজন্য আজ আমি তাহাজ্জুদ পড়ে শুকরিয়া আদায় করবো।”

বলেই আমায়রা চলে যায়। অহনাও বল,”তোমার যা যা ষড়যন্ত্র করার তুমি করে যাও ভাবি। কিন্তু আমার মেয়েকে এসবের মধ্যে টেনো না৷ আমি এটা জানি যে, আগেও তুমি আমার মেয়েকে ব্যবহার করে কি ষড়যন্ত্র করতে চাইছিলে। ভাগ্যিস, আমার মেয়ে তোমার পাতা ফাদে পা দেয়নি। আর সারজিস তোমাকে একটা কথা বলব, নিজের মাকে এভাবে অন্ধবিশ্বাস করো না নাহলে দেখবে একসময় কেঁদেও কুল পাবে না। এই মহিলা মোটেই সুবিধার না। এর আগে ইনি আমায়রাকে কফিশপে ডেকে নিয়ে গিয়ে তোমার আর অভীক্ষার সংসার ভাঙার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এবারও নিশ্চয়ই তেমনি কিছু করেছেন।”

ইভা বলে,”তুমি এদের কথা শুনো না সারজিস। এরা কেউ তোমার ভালো চায় না। লাগবে না আমায়রাকে। আমি আরো ভালো মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেব। দুনিয়ায় মেয়ের অভাব নেই।”

অহনার আর ইভার এসব বাজে কথা শুনতে ইচ্ছা করছিল না তাই সে বিদায় নেয়। সাজিদও বলে,”তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো। আমি চললাম। তবে সারজিস, চোখকান একটু খোলা রাখো৷ কাউকে অন্ধবিশ্বাস করো না।”

~~~~~~
আমায়রা নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল এমন সময় সোহেলকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে বল,”কিরে ভাই! তোকে এমন লাগছে কেন?”

সোহেল বলে,”তুই খুশি হস নি আপু? সারজিস ভাই আর অভীক্ষার যে ডিভোর্স হতে চলেছে।”

“এতে আমি কেন খুশি হবো?”

“তুই তো সারজিস ভাইকে..”

“এখন আমি মুভ অন করে নিয়েছি। তাছাড়া ওনার মতো মেরুদণ্ডহীন মানুষকে আমি ঘৃণা করি। অভীক্ষার সাথে কত বড় অন্যায় করেছে ও।”

“এতকিছুর পরও তুমি অভীক্ষার হয়ে কথা বলছ?”

“হ্যাঁ, কারণ ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে।”

সোহেলের এবার একটু খারাপ লাগে। নিজের কাজের জন্য অনুশোচনা হয়। আমায়রা বলে,”আচ্ছা ভাই, সত্যি করে বল তো এসব কিছুর ব্যাপারে কি তুই কিছু জানিস?”

“না..আমি কি জানবো..”

“আমার কসম ভাই মিথ্যা বলিস না।”

নিজের আপুকে বড্ড ভালোবাসে সোহেল। আর আপুর কসম শুনে আর চুপ থাকতে পারল না। ইভার সব ষড়যন্ত্রের কথা বলে দিল। সব শুনে আমায়রা বলল,”চাচি এত নিচে নামল ছি! এবার আমি সব সত্য সামনে আনবোই। অভীক্ষার নিরাপরাধ হবার প্রমাণ দিবোই।””
To be continue…….