মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-২৬+২৭

0
44

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_26(ধামাকাদার পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা তার মা ও দাদিকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে তারা দুজনেই ভীষণ রেগে গেলেন এবং দুঃখবোধ করলেন। সুনীতি বলল,”এসব কিছু নিশ্চয়ই সারজিসের মায়ের চক্রান্ত। উনিই সারজিস আর তোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরির জন্য এসব করেছেন।”

রাহেলা খাতুন বলেন,”আর সারজিসই বা কেমন? আগুপিছু কিছু না ভেবে এভাবে কেন ও অভীক্ষাকে ভুল বুঝল? ওর তো নিজের মায়ের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন ছিল৷ এর আগেও তো ওর মা অভীক্ষার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল।”

অভীক্ষা বলে,”এসব নিয়ে আর ভাবার দরকার নেই৷ যা হবার হয়ে গেছে। যদি ওনার আমার উপর বিশ্বাস না থাকে তো আমার কিছু করার নেই। এই সম্পর্কর ইতি টানা দরকার।”

রাহেলা খাতুন থমকে উঠে বলেন,”তাই বলে বিয়ের মতো এমন একটা পবিত্র সম্পর্ক এভাবে ইতি টানা কি ঠিক হবে?”

সুনীতি বলে,”তুমি একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেও অভীক্ষা। সারজিস হয়তো একটা ভুল করেছে কিন্তু..”

“কোন কিন্তু নয় মা। আমি ডিশিসন নিয়ে ফেলেছি।”

সুনীতি আর রাহেলা খাতুন বুঝতে পারেন এই মুহুর্তে অভীক্ষা রেগে আছে তাই কোন কিছু বুঝিয়েও লাভ নেই৷ তারা তারা আর এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেন না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমায়রা একটা কফিশপে বসে কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছিল অনেক সময় ধরে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি এলো। সে আর কেউ নয়,”মুকিত”

মুকিতকে দেখে আময়রা বলে,”আপনিই মুকিত?”

“হুম।”

“আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

“হ্যাঁ, বলুন।”

“অভীক্ষার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”

“এসব ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

“মোটেই ব্যক্তিগত নয়। অভীক্ষার সংসারটা ভাঙার পথে আপনার জন্য।”

“মানে?”

“আপনি নিশ্চয়ই আমার চাচির সাথে হাত মিলিয়ে এসব করেছেন।”

“কিসব বলছেন?! আমি কেন অভীক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবো। ওকে ভালোবাসি আমি।”

“যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে সাহায্য করুন। অভীক্ষা যে নিরপরাধ সে যে কোন অন্যায় করেনি সেটা প্রমাণ করতে সাহায্য করুন।”

“এজন্য আমায় কি করতে হবে?”

আমায়রা একটা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে,”সেদিন আপনি কেন ওখানে গেছিলেন সেটা আগে বলুন।”

“সেদিন তো একজন আমায় ফোন করে বলেছিল অভীক্ষা আমার সাথে বনানীর গ্যান্ড হোটেলে দেখা করতে চায়।”

“কে ফোন করেছিল?”

“সেটা তো জানি না, তবে যতদূর মনে আছে উনি বলেছিলেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। ওনার ফোন নম্বরটা আছে আমার কাছে।”

“গলার স্বরটা কি কোন মহিলার ছিল?”

“হুম।”

আমায়রা বলে,”আমার যা বোঝার বুঝে নিয়েছি। এখন আপনি আমার সাথে আমার বাসায় চলুন। বাকিটা ওখানে গিয়ে বোঝাপড়া হবে।”

~~~~~~
পুরো বাড়ির সবাইকে জড়ো করেছে আমায়রা। সারজিস গম্ভীর মুখে বসে আছে। ইভা গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করছে সবকিছু। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সারজিস বলে ওঠে,”কেন আমাদের এখানে এভাবে ডেকে পাঠিয়েছ আমায়রা কিছু তো বলো?”

আমায়রা বলে,”হুম। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার। আজ একজনের মুখোশ খুলে দেবার পালা।”

বলেই আমায়রা সোহেলকে বলে,”সোহেল তুই এগিয়ে এসে যা বলার বল।”

সোহেল ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসে। ইভা কাপতে থাকে। আমায়রা বলে,”কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই সোহেল। চাচি তোকে কি বলেছিল সেসব খুলে বল।”

সোহেল বলে,”চাচি আমায় বলেছিল অভীক্ষা ও সারজিসকে আলাদা করার জন্য তার আমার সাহায্য প্রয়োজন। এজন্য আমি যেন এই বাড়ির সব তথ্যও সংগ্রহ করি। আর আমি এতদিন ধরে সেসব কাজই করে গেছি। ওনাকে অভীক্ষা ও সারজিস ভাইয়ের ব্যাপারে সব তথ্য দিয়েছি। অভীক্ষা যে সেদিন গ্যান্ড হোটেলে অবস্থান করবে সেই খবরও আমি দিয়েছিলাম আর উনি হেসে বলেছিলেন এবার উনি ওদের আলাদা করবেন।”

ইভা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে,”এ সব কিছু মিথ্যা বলছে। এরা ভাইবোন মিলে আমার পিছনে লেগে গেছে। সারজিস তুমি এদের বিশ্বাস করো না।”

সাজিদ বলে ওঠে,”এত কিছুর পরেও তুমি কোন মুখে এই কথা বলো?”

অহনা বলে,”ওনার লজ্জা বলে কিছু আছে নাকি? থাকলে এভাবে নিজের ছেলের সংসার ভাঙতে উঠে পড়ে লাগত না।”

সারজিস চুপই ছিল। আমায়রা বলে,”এবার আপনি ভেতরে আসুন।”

আমায়রার ডাক শুনে মুকিত ভেতরে আসে। মুকিতকে দেখে সারজিস রেগে গিয়ে বলে,”এই ছেলেটা কেন এসেছে এখানে?”

আমায়রা বলে,”সব সত্যটা প্রকাশ করার জন্যই ওনার এখানে আসা। মিস্টার মুকিত এবার আপনি বলুন তো আপনার সাথে কি হয়েছিল?”

“আমাকে একজন মহিলা ফোন করে বলেছিল অভীক্ষা গ্যান্ড হোটেলে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আর সেজন্যই আমি ওখানে যাই। সেই কল রেকর্ডও আছে আমার কাছে।”

বলেই সে কল রেকর্ডটা চালু করে। যেখানে গলার স্বর শুনেই বোঝা যায় এটা ইভার গলা৷ ইভা তবুও অস্বীকার করে বলে,”এসব মিথ্যা। সব আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র!”

এবার আমায়রা বলে,”মুকিত! যেই নাম্বার থেকে আপনাকে কল করা হয়েছিল সেখানে ডায়াল করুন তো।”

মুকিত আমায়রার কথামতো ডায়াল করতেই ইভার ফোন বেজে ওঠে। সারজিসের কাছে এবার সবটা পরিস্কার হয়। ইভা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিদ এগিয়ে এসে তাকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলে,”বাত্তামিজ মহিলা! আমার সংসারটা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছিস তুই?! এতগুলো বছর তোকে সহ্য করেছি কিন্তু এবার তুই সব সীমা অতিক্রম করেছিস। আজ আমি তোকে এক্ষুনি তালাক দিচ্ছি..এক তালাক..দুই তালাক..তিন তালাক।”

ইভা কাঁদতে শুরু করে। সারজিসের কাছে গিয়ে বলে,”আমাকে ভুল বুঝো না সান। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই..”

সারজিস বলে,”আজ থেকে তুমি আমার কাছে মৃত মম। আমি জাস্ট ঘৃণা করি তোমায়। আর কখনো তোমার এই চেহারা আমায় দেখাবে না। তোমার জন্য আমার আর অভীক্ষার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।”

অহনা বলে,”দেখেছ ভাবি। এটাই হলো কর্মফল। আজ তোমার অপরাধের জন্য কেউ তোমার পাশে নেই।”

ইভা বলে,”এটা হতে পারে না। সবাই এভাবে আমার থেকে মুখ ফেরাতে পারে না।”

সাজিদ অহনাকে বলে,”এই মহিলাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও অহনা। একে স্পর্শ করতেও আমার ঘৃণা লাগবে।”

সাজিদের কথা শুনে অহনার চোখে জল চলে আসে। আমায়রা বলে ওঠে,”এই শুভ কাজটা নাহয় আমিই করি।”

বলেই ইভাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অতঃপর তার মুখের সামনে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে,”বাড়ি থেকে কালো ছায়া দূর হলো।”

অহনা বলে,”ঠিক বলেছিস তুই! এই মহিলা যতদিন বাড়িতে থাকবে ততদিন শুধু আমাদের সংসারে অশান্তিই থাকবে।”

মুকিত এগিয়ে এসে বলে,”আমি অভীক্ষাকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পেরে অনেকটা হালকা অনুভব করছি। ও তো আমাকে ভুল বুঝেছে বোধহয়। আমি যদি জানতাম এই মহিলা ওর বিরুদ্ধে এত নোংরা চক্রান্ত করছে তাহলে কখনো সেইদিন ঐ হোটেলে যেতাম না। আমি ভালোবাসি অভীক্ষাকে, তার মানে এই নয় এত নিচ উপায়ে ওকে পাওয়ার চেষ্টা করব। এখন শুধু অভীক্ষার কাছে ক্ষমা চাইলেই আমি স্বস্তি বোধ করতে পারব। অভীক্ষাকে ছাড়া তো আমি আজীবন কাটিয়ে দিতে পারব কিন্তু ওর ঘৃণা নিয়ে নয়।”

সারজিস বলে ওঠে,”ক্ষমা তো আমাকেও চাইতে হবে অভীক্ষার কাছে। আমি ওকে ভুল বুঝে কতটা জঘন্য কথা বলেছি। আমি এই সব ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে নেব। আবার ওকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনব।”

আমায়রা বলে,”আমি অভীক্ষাকে যতটা চিনি ও অনেক আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটা মেয়ে। তুমি ওকে যতটা অপমান করেছ মনে হয়না ও এত সহজে রাজি হবে। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো।”

সারজিস বলে,”আমি যে করেই হোক ওকে মানাবো।”

সাজিদ বলে,”হুম যা আর দেরি করিস না। এমনিই অনেক দেরি করে ফেলেছিস। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম নিজের মায়ের কথায় নাচিস না। এবার বুঝলি তো।”

সারজিস আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়ে অভীক্ষার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।
To be continue……

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_27
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সারজিস এসে উপস্থিত হয়েছে অভীক্ষার বাড়ির সামনে৷ দরজা খুলেই তাকে দেখে অভীক্ষা নির্জীব ভাবে বলে, “আপনি কেন এসেছেন এখানে? কি চাই আপনার? আমাকে এত অপমান করেও কি আপনার মন ভরে নি?”

সারজিস বুঝতে পারে অভীক্ষা তার উপর কতোটা রেগে আছে৷ এখানে দোষ সম্পূর্ণ রূপেই অভিকের সেটা সে মেনে নিয়েছে৷ আর সেজন্য সে মাথা নিচু করে বলে, “আমি তোমার সাথে যা যা অন্যায় করেছি তার জন্য আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি৷ সমস্ত সত্যটা এখন আমি জানতে পেরেছি যে আদতে তোমার কোন দোষ ছিল না৷ আসল দোষী ছিল আমার মা..যে চক্রান্ত করছে তোমার বিরুদ্ধে। আমি ভাবতেও পারিনি মা এত নিচে নামতে পারে।”

অভীক্ষা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”তো এখন যখন সব জানতেই পেরেছেন তো ভালো। এতে আমার কিছু যায় আসে না৷ আমি তো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যেও আপনার কাছে যাইনি। তাহলে আপনি কেন এসেছেন এখানে?”

সারজিস বলে, “আমি তোমায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি অভীক্ষা৷ দয়া করে আমার সাথে ফিরে চলো!”

সারজিসের কথা শুনে ভীষণ রেগে যায় অভীক্ষা৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এমন কথা বলার? আপনি ভুলে গেছেন আমার সাথে কতটা খারাপ ব্যবহার করেছিলেন সেদিন? আপনি ভুলে গেলেও আমি সেটা ভুলব না। চলে যান এখান থেকে। আপনার সাথে কোনরকম সম্পর্ক আমি পুনঃস্থাপন করতে চাই না।”

সারজিস অনুনয়ের সুরে বলে,”এরকম করো না অভীক্ষা। মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়৷ আমার যায়গায় একবার তুমি নিজেকে বসিয়ে দেখ..তুমি আমার স্থলে থাকলে কি এই একই ভুল করতে না?”

“আপনি কি ভেবেছেন আমায়? এসব কথা বললেই সব কিছু থেকে ছাড় পেয়ে যাবেন? তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি এত সহজে গলার মেয়ে নই। নিজের প্রতি হওয়া কোন অন্যায় অবিচার আমি ভুলিনি আর ভুলবো না। সেদিন আপনি কোন কিছু বাচ-বিচার না করে নিজের মায়ের কথায় নেচে আমায় জঘন্য ভাবে অপমান করেছেন। এই অপমান আমি এত সহজে ভুলবো না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, যেই সম্পর্কে বিশ্বাস নেই..সেই সম্পর্ক আর টিকিয়ে রাখবো না। আমি ডিভোর্স চাই আপনার থেকে।”

“অভীক্ষা…”

এমন সময় সুনীতি এসে বলে,”কে এসেছে অভীক্ষা?”

সে সামনে এসে সারজিসকে থেমে থমকে যায়। শক্ত মুখ করে থাকে৷ সারজিস এবার সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আন্টি,আপনি প্লিজ অভীক্ষাকে একটু বোঝান না। আমি নিজের সব ভুল স্বীকার করছি এবং কথা দিচ্ছি অভীক্ষাকে দ্বিতীয় বার আর কখনো কষ্ট দেব না। দয়া করে ওকে আমার কাছে ফিরতে বলুন।”

সুনীতি বলে,”এ ব্যাপারে আমার কোন মতামত নেই সারজিস। আমি সেই টাইপের মা নই যে নিজের মেয়ের উপর কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়া পছন্দ করি। আমার মেয়ে এখন বড় হয়েছে তাই ওর জীবনের সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ওর আছে। তবে আমি তোমাদের দুজনকেই একটা পরামর্শ দেব ধৈর্য ধরে একটু তোমাদের সম্পর্কটা নিয়ে ভাবতে। বিচ্ছেদ কিন্তু কোন কিছুর সমাধান নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক অনেক সময় জীবনসঙ্গীর প্রতি আমাদের মন উঠে যায় তবে তার মানে এই নয় সেই ভাঙা মন আর জোড়া লাগানো যাবে না৷ একে অপরের মধ্যে ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং গড়ে তোলা যাবে না। এজন্যই আমি তোমাদের সময় নিতে বলছি..সময় নিয়ে দেখো জীবনে ভালো কিছু করতে পারবে। যা তোমাদের দুজনের জন্যই ভালো হবে।”

অভীক্ষা এবার একটু নরম হয়ে বলে,”তুমি যদি বলো তবে আমি সময় নেব। তবে সেটা হবে আমাদের আসাম থেকে ঘুরে আসার পর।”

সারজিস অবাক হয়ে জানতে চায়,’মানে?’

সুনীতি একটু ইতস্তত করে বলে
“আসলে আমার শরীর কিছুদিন থেকে ভালো যাচ্ছিল না এজন্য ডাক্তারের কাছে গেছিলাম৷ তখন ডাক্তার হাওয়া বদল করতে বলেছে। এজন্য অভীক্ষা ঠিক করেছে ও আমাকে নিয়ে আসামে যাবে।”

সারজিস অল্প করে বলে, “ও..”

অভীক্ষা বলে,”আমি আপনার সাথে আপাতত আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে চাইনা। আমার আর মায়ের পাসপোর্ট, ভিসার সব কাজ প্রায় শেষ..এই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আসামের করিমগঞ্জে যাচ্ছি। সেখান থেকে ফিরে আসার পর জানাচ্ছি, আমার এবং আপনার সম্পর্ক নিয়ে আমার অভিমতের বিষয়ে। তার আগে আমি চাইনা এই নিয়ে আর কোন কথা হোক..আশা করি আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।”

সারজিস মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমাকেও খুব শীঘ্রই সেনা ক্যাম্পে ফিরে যেতে হবে..আশা করি তোমরা যখন ফিরে আসবে তখন আমিও আবার ঢাকায় ফিরতে পারব। তারপর নাহয় ভেবেচিন্তে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। তুমি সাবধানে থেকো, নিজের আর তোমার মায়ের যত্ন নিও। আমি তাহলে আজ আসি।”

বলেই সারজিস চলে যেতে নিলে সুনীতি বাঁধা দিয়ে বলে,”আরে আরে তুমি কোথায় যাচ্ছ বাবা? যাওয়ার আগে কিছু খেয়ে তো যাও..”

সারজিস হালকা হেসে বলে,”আজ আর কিছু খাবো না আন্টি..আরেকদিন নাহয়..”

“এসব বললে তো শুনছি না৷ তুমি এসে খেয়ে যাও।”

এমন সময় রাহেলা খাতুনও চলে আসেন এবং বলেন,”বৌমা, তুমি ভালো মন্দ কিছু রান্নার ব্যবস্থা করো..বিয়ের পর এই প্রথম দিন জামাই বাড়িতে এলো তার তো ভালো করে খাতির যত্ন করতে হয়।”

সারজিস বলে,”আরে না..আপনাদের এতটা ব্যতিব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই।”

কিন্তু কেউ তার কোন কথা শুনল না। তাকে জোর করে খেতে বসালো। হরেক রকম পদের খাবার খাওয়ানো হলো। অভীক্ষা দূর থেকে দেখল সবকিছু। তার মনে জমে থাকা রাগ এখনো কমে নি। তবে লোকটাকে এত তৃপ্তি করে খেতে দেখে অনেক ভালো লাগল। অভীক্ষা মনে মনে বলল,”আমাদের মধ্যে এত তিক্ত একটা বিষয় না এলে হয়তো আজ আমরা এক থাকতে পারতাম। কিন্তু এখন যে আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে আমায় অনেক ভাবতে হবে..”

খাওয়া শেষ করে সারজিস অভীক্ষার কাছে এসে বলে,”আমার সব ভুলগুলো ফুল হয়ে যাক…তবুও তুমি আমার হও…”

অভীক্ষা কোন অভিব্যক্তি দেখায় না।

~~~~~~~~
ময়লা খড়ের আস্তরণে আবৃত একটি ঘর। সেই ঘরে আছে অনেক গুলো ভেড়ার পাল। সেই ঘরের এককোণেই দাঁড়িয়ে আছেন এক মধ্যবয়সী পুরুষ। দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন আকাশের পানে। মধ্যবয়সী পুরুষ হলেও তার দেহ এখনো যথেষ্ট সুঠাম। বয়সটা ছাড়িয়েছে পঞ্চারের গণ্ডি তবে বয়সের ছাপ চেহারায় খুব একটা পড়ে নি৷ দাঁড়িগুলো না পাকলে হয়তো তার বয়স আন্দাজ করা কারো জন্য এতটা সহজ হতো না। হঠাৎ করেই সেই পুরুষের সামনে এসে দাঁড়ায় ৩৫ বছর বয়সী শক্তপোক্ত মোটা, কুচকুচে কালো দেখতে এক ব্যক্তি। তিনি এসেই বলেন, “কি খবর ওস্তাদ? এভাবে জানালা দিয়ে কি দেখছেন?”

“আকাশের দিকে দেখছি রে কালিয়া..”

“কি দেখতে পাচ্ছেন আকাশে?”

“জানিনা..কিন্তু এই আকাশ যেন আজ আমাকে কোন কিছুর ইশারা দিচ্ছে..”

“কি বলেন ওস্তাদ?”

“হুম, কেন জানি মনে হচ্ছে..আমার খুব আপন কেউ আসছে আমার কাছে।”

“আপনার আপনজন?”

“হুম।”

“কি বলেন ওস্তাদ..আমি ১০ বছর থেকে এই সরাইখানায় কাজ করি কিন্তু কখনো তো আপনার কোন আপনজনকে এখানে আসতে দেখিনি। আপনি বা অন্য কেউ এই ব্যাপারে কিছু বলেনও নি। তাহলে এখন হঠাৎ করে আপনার আপনজন কোথা থেকে আসবে?”

পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ আলতো হেসে বলে,”ভাগ্যে থাকলে অনেক কিছুই হয় রে কালিয়া..যেমন তোর বাবা তো একসময় এই এলাকার আদিবাসী দলের নেতা ছিল কিন্তু আজ দেখ ভাগ্যের ফেরে তোর বাবা সহ তোদের পুরো পরিবারকে এই সরাইখানায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। ঠিক তেমনি..ভাগ্য এক নিমেষেই অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলে। হয়তো আপনজনদের কাছ থেকে বিচ্ছেদ ঘটায় আবার কখনো মিলন..”

To be continue……