মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-৩৩

0
16

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_33
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভীক্ষা সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,” অতীতে আমার ও সারজিসের মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। এখানে আমার কোন দোষ না থাকলেও সারজিস আমায় দোষ দিয়েছিল। তবে সারজিসের দিক থেকে দেখতে গেলেও কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হওয়ার মতো উপাদান ছিল। কারণ সারজিস এর মা তার সামনে বিষয়টা এমন ভাবে উপস্থাপন করেছিল যার কারণে সারজিসেরও বুঝতে হয়েছিল৷ আর সবথেকে বড় কথা সারজিস এখন নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত। তাই আমি চাই, সারজিসকে ক্ষমা করে দিতে। ওকে আরেকটা সুযোগ দিতে। আমি নিজের মা ও বাবার জীবন থেকে বুঝতে পেরেছি বিয়ে সম্পর্কটা কত পবিত্র একটা বন্ধন। তাই আমি এই পবিত্র বন্ধনটা এত সহজে ভাঙতে চাইনা।”

অভীক্ষার কথা শুনে সবাই ভীষণ খুশি হয়। বিশেষ করে সারজিস। অবশেষে অভীক্ষা তাকে আরো একটি সুযোগ দিয়েছে। এটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

সারজিস খুশি হয়ে বলে,”ধন্যবাদ, অভীক্ষা। আমাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয়ার জন্য।”

অভীক্ষা বলে,”কিন্তু মনে থাকে যেন। এটাই কিন্তু শেষ সুযোগ। এই সুযোগটা তুমি কোন ভাবে যদি নষ্ট করো তাহলে আর আমি তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেব না।”

সারজিস বলে,”যে ভুল আমি একবার করে পস্তাচ্ছি তার পুনরাবৃত্তি আর কখনো দ্বিতীয় বার করবো না। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, এরপর তোমায় আর কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেব না।”

সারজিস ও অভীক্ষার মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ায় উপস্থিত সবাই ভীষণ খুশি হয়।সাজিদ সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ওদের দুজনের মধ্যে যখন সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে তখন আমি একটা ভালো প্রস্তাব দেই!”

অভিক জিজ্ঞেস করে,”কি প্রস্তাব?”

সাজিদ বলে,”আপনি হয়তো শুনেছেন যে ওদের বিয়েটা কি পরিস্থিতিতে হয়েছে। তাই আমি চাইছি এবার পূর্ণ অনুষ্ঠান আর আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে ওদের বিয়েটা দিতে। তাছাড়া এর আগে যখন ওদের বিয়ে হয়েছিল তখন তো কনের বাবা মানে আপনি উপস্থিত ছিলেন না৷ কিন্তু এবার তো আপনি আছেন। তাই আমি চাই, এবার আপনি উপস্থিত থেকে নিজের মেয়ের বিয়েটা দেখুন।”

সুনীতি হেসে বলে,”এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব।”

সবাই এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। সারজিস অভিমানী অভীক্ষার দিকে তাকায়। যদিও অভীক্ষা এই বিয়েতে রাজি হয়েছে কিন্তু সারজিস যতদূর বুঝেছে অভীক্ষার অভিমান ভাঙানো এত সহজ হবে না। তবে সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এদিকে উপস্থিত সবার মাঝে আমায়রার মনে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। যদিও সারজিস ও অভীক্ষার মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ায় সে খুশি কিন্তু মনে তবুও চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কারণ একটা সময় তো সে সারজিসকে ভালোবাসত, তাকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখত। এরইমধ্যে হঠাৎ আমায়রার ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসায় সে খুশি হয়ে যায়। মুকিত চৌধুরী তাকে ম্যাসেজ দিয়েছে। এই লোকটার সাথে কিছুদিনের পরিচয়ে তার খুব সুন্দর একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে৷ দুজন হৃদয় ভাঙা মানুষ হওয়ায় একে অপরের দুঃখ খুব ভালো ভাবেই অনুধাবন করতে পারে। তাই তো টুকটাক কথা হয় এই নিয়ে তাদের। আর এভাবেই তাদের মধ্যকার বন্ধন দিনে দিনে দৃঢ হচ্ছে। হয়তো এভাবে এক সময় তারা দুজনও একে অপরের মন রাঙিয়ে দেবে। তৈরি করবে এখন নতুন সুন্দর উপাখ্যান। যার শুরু থেকে শেষটা হবে ভীষণ সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। মুকিতের সাথে কথা বলতে বলতেই আমায়রা জানতে পারে মুকিতের বাবা আবির চৌধুরীর সাথে তার বাবা সাগরের বেশ অনেকদিনের পুরাতন বন্ধুত্ব। একসময় নাকি তারা বেস্টফ্রেন্ডও ছিল৷ তবে ইদানীং কালে তাদেরও সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরেছে। যার কারণ আমায়রা ও মুকিত কেউই জানে না।

~~~~~~~~~
একটি বদ্ধ ঘরের সোফায় পায়ে পা তুলে বসে আছে ইভা। একটা শরবতের বোতলে চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো সে। অতঃপর নিজের সামনে বসে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলল,”আপনাকে সাহায্য করে আমার কি লাভ?”

ব্যক্তিটি ঝাঝালো স্বরে বলে,”আমি জানি, আমাদের দুজনের কমন শত্রু এক। তাই আমার কথামতো চললে আমার পাশাপাশি আপনিও নিজের প্রতিশোধ সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এছাড়া কাজটা সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আমি আপনাকে ৫০ লাখ টাকাও দেব। আমি জানি,আপনার কোম্পানির বর্তমান অবস্থায় এই টাকাটার আপনার কতটা প্রয়োজন।”

ইভার চোখ লোভে চকচক করে ওঠে। সে বলে,”বেশ, যদি এটাই ডিল হয় তাহলে আমি রাজি। আশা করি, আপনি আপনার কথা অনুযায়ী কাজ করবেন।”

“বেশ। অগ্রীম ২০ লাখ টাকা আপনার একাউন্টে পাঠিয়ে দেব। বাকি টাকা আপনি পাবেন কাজটা শেষ হবার পর। বুঝলেন?”

ইভা চোখ নাড়ায়। অতঃপর লোকটা ইশারা করতেই ইভা বিদায় নেয়। এবার প্রকাশ্যে আসে অভিকদের সেই এতদিনের পুরাতন শত্রু যে এতদিন ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। সে আর কেউ নয়, আবির চৌধুরী, সাগরের বন্ধু এবং মুকিতের বাবা।

আবির ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিতে দিতে এতদিনে নিজের সব অপকর্মের কথা ভাবতে থাকে।

তার আগে এই আবির চৌধুরীর আসল পরিচয় জানা উচিৎ। আবির হলো শমসের চৌধুরীর ছেলে এবং শিহাব চৌধুরীর ভাই। সেই শিহাব চৌধুরী যে সিলেট সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক পাচারের হোতা ছিল এবং অভিকের বান্ধবী আনিসার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিল। অভিকরা তাকে বন্দি করেছিল এবং পরবর্তীতে তার ফাঁ/সি হয়েছিল। আবিরকে ছোটবেলা থেকে শমসের চৌধুরী লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিল তাই তার সম্পর্কে কেউ জানত না। কিন্তু গোপনে সে নিজেই অনেক অনৈতিক কাজ চালিয়ে গেছে। শিহাবের পর সেই এই পাচারকারী চক্রের মূল হোতা হয়ে ওঠে। মূলত এই কারণেই তার অভীক ও আরাফাতের প্রতি শত্রুতা ছিল যার কারণে সে সাগরকে উসকিয়ে বিয়ের দিন অহনাকে তুলে এনেছিল। তবে তার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় কারণ সাগর সেক্রিফাইজ করেছিল নিজের ভালোবাসা। আর এই ঘটনার পর তাদের বন্ধুত্বও নষ্ট হয়। সাগর আবিরের সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে যা আবিরকে আরো বেশি রাগিয়ে দেয়। তাই আবির এর চরম প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। আবির মনে করে, সেই ছিল সেই ব্যক্তি যার গুলিতে অহনার প্রথম স্বামী তথা আমায়রার আসল বাবা আরাফাত প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়াও অভিককেও সে মে/রে ফেলার চেষ্টা করছিল৷ সেই অভিককে গুলি করে যার ফলে অভিক খাদ থেকে পড়ে যায়। আবির ভেবেছিল অভিকের মৃত্যুর সাথে সাথে তা নিজের সব অপকর্ম লোকচক্ষুর আড়ালে থাকবে কারণ অভিক ছাড়া এসব আর কেউ জানে না। কিন্তু ভাগ্যগুণে অভিক বেঁচে যায় এবং এতগুলো দিন পর ফিরে এসেছে। যা আবিরের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি হঠাৎ অভিকের স্মৃতি ফিরে আসে তাহলে আর এতদিনের রাজত্ব ধ্বংস হবে। তাই আবির চক্রান্ত করেছে অভিককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার আর এজন্য সে সাহায্য নিচ্ছে ইভার।

~~~
অভীক্ষা ও সারজিসের বিয়ে উপলক্ষ্যে শপিং করতে এসেছে সুনীতি, অভিক ও অভীক্ষা। তারা অভীক্ষার ব্রাইডাল মেকআপের জিনিসপত্র কিনে বাসায় ফিরছিল। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই সুনীতি হঠাৎ কিছু একটা লক্ষ্য করে। অভিক তখন অভীক্ষার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুনীতি অভিককে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয় এবং একটি গুলি এসে ভেদ করে যায় সুনীতির পেট। সুনীতির পেট থেকে অঝোরে রক্ত পড়তে থাকে। অভীক্ষা চিৎকার করে বলে ওঠে, “মা!”

সুনীতি কোন সাড়া দেয় না। এদিকে অভিকের মাথা ইটে গিয়ে লাগে এবং সেও জ্ঞান হারায়।

To be continue……