মন সে কথা শোনেনা পর্ব-০১

0
4

#মন_সে_কথা_শোনেনা
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:১

মায়ার বয়স যখন ৫ বছর তখন ওর বাবা মারা যায়। মায়ার জন্ম ছিলো অতন্ত্য গরীব পরিবারে। মায়ার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে। মায়ার মা অনেক কষ্টে অন্যের বাসায় কাজ করে মায়াকে খাইয়েছে।

মায়ার বাবা বেঁচে থাকা কালিন এতো কষ্ট ছিলো না
বাবা-মা আর মায়া ৩ জনের খাবার যোগারের জন্য মায়ার বাবা আশাদ মিয়া রিকশা চালাতো।

এভাবে তাদের জীবন বেশ ভালোই চলতেছিলো, কিন্তু কে জানতো মায়াদের জীবনে এতো বড় সর্বনাশ নেমে আসবে।

দিনটা ছিলো ১১ বছর আগের কোন এক শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে ওঠে! রোজকার মতোই মায়ার বাবা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যায়। ওটাই ছিলো মায়ার বাবার জীবিত অবস্থায়ই শেষ বাড়ি ফেরা।

সকালে মায়া ঘুম থেকে ওঠে আঙ্গিনায় খেলতেছিলো আর মায়ার মা রান্না করতেছিলো। এমন সময় পাশের বাড়ির কাকি এসে মায়ার মা কে বললো যে ওগো মায়ার মা তোমার সর্বনাস হয়ে গেল মায়ার বাবা তো বড় রাস্তার মোড়ে এক্সিডেন্ট করে পড়ে ছিলো কিছু মানুষ তাকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছে।গ্রামের রহিম ভাই বললো মায়ার বাবার অবস্থা নাকি খুব একটা ভালো না বাঁচতে পারে আবার নাও বাঁচতে পারে তোমরা তাড়াতাড়ি চলো।

এই কথা শুনে মায়ার মা কাঁদতে কাঁদতে রান্না ঘর থেকে বাহিরে এলো। মায়া তার মা কে কাঁদতে দেখে বললো কি হয়েছে মা কাঁদছো কেন?

মায়ার মা এইটুকুনি বাচ্চাকে কি বলবে?
কিছু বলার আগেই মায়ার মা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মা কে পড়ে যেতে দেখে মায়া দৌড়ে এসে মা কে জড়িয়ে ধরে। পাশের বাসার কাকি ওঠোনে বিছানা পেতে মা কে শুইয়ে দিয়ে মা এর মাথাই পানি ঢালতে লাগলো।

খবর এলো বাবা আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই।
কিছুখন পর এম্বুলেন্স এর শব্দ এলো ছোট শিশু কণ্যা মায়া সেই শব্দ শুনে দৌড়ে বাহিরে এলো।এসে দেখে গ্রামের কয়েকজন মানুষ মিলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো
কিছু একটা নিয়ে আসছে।সেখানে ভিড় করলো গ্রামের সব মানুষজন। মায়ার মায়ের জ্ঞান ফিরতেই দৌড়ে এসে মৃত স্বামী কে কাঁদতে লাগলো। মায়া কিছুই বুঝতে পারতেছিলো না সে শুধু তাকিয়ে দেখতেছিলো।অবুঝ শিশু কি বা বুঝবে!

এই মায়া কই হারিয়ে গেছিলি?
সুহীর কথার মায়া হকচকিয়ে যায় হুস ফিরে আসে বলে কিছু না।

তুই আংকেলের কথা মনে পড়ে গেছিলো তাইনা? আমি বুঝি তো।

“বাবা মারা যাওয়ার সময় তখন ছোট ছিলাম বুঝতাম কিছুই বাবা হারানোর কষ্ট কি তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে মা কে এতো কষ্ট করতে হতো না আর না করতে হতো আমাকে বিয়ে দেওয়ার এতো তাড়াহুড়ো।

তুই কি বিয়ে করতে চাস না?

রাজি না হলেও করতে হবে এসএসসি দিয়েছি রেজাল্ট ভালো এসেছে। অনেক কষ্ট করে মাএই অবধি এনেছে আর পড়ার খচর চালাতে পারবে না একটা মানুষকে আর কতো চাপ দিবো বল তাই ভেবে নিয়েছি নিজের কষ্ট হলেও মায়ের জন্য বিয়েটা করবো।

আজকে মায়াকে পাত্রপেক্ষ দেখতে আসবে তাই সুহী মায়াকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে দিচ্ছেলো। সুহী হলো মায়ার সখী ছোটবেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে লেখাপড়া করেছে এক সাথেই। ওদের দুজনের বন্ধুত্বটা একদম বোনের মতো একে অপরের সাথে লেগে থাকে সব সময়।

কিরে হলো তোদের পাত্রপক্ষ এসে গেছে অপেক্ষা করছে আয় তাড়াতাড়ি। মায়ের কথায় মায়া ওঠে পড়ে চোখে ছিলো পানি কারণ ওর সপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে একদিন ভালো চাকরি করবে এই ভেবে দিন রাত পড়েছে এসএসসিতে গোল্ডেন প্লাস এনেছে কি মূল্য থাকলো যদি বিয়ে করতে হয় কি হলো এতো পড়ে বিয়ের পর নিশ্চয়ই সংসার সামলাতে বলবে পড়াশোনা চাইলেও করতে দিবে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে ওর মা পাত্রপক্ষের সামনে এনে বসিয়ে দেয় মায়া মাথা নিচু করে ছিলো চেহারায় লেগে আছে বিষন্নতা।

আমার তো মেয়ে আগে থেকে পছন্দ এখন শুধু আমার ছেলের পছন্দ হলেই কথা ফাইনাল।

মায়া পরিচিত কারো কথা শুনে মাথা উঁচু করে সামনের মানুষটাকে দেখে চমকে ওঠে।

রফিক স্যার আপনি?

হ্যাঁ রে মা আমি এতোদিন মেয়ের মতো ভালোবাসতাম এবার পারমানেন্ট আমার মেয়ে বানিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি যাবি তো।

রফিক স্যার আমাদের স্কুলের মাষ্টার আমার কাছে বাবার পরে মানুষটা উনি যার কাছে বাবার মতো ভালোবাসা পেয়েছি বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে পড়ালেখায় অনেক সাহায্য করেছেন পরীক্ষার আগে প্রাইভেট পড়িয়েছেন মা টাকা দিতে চাইলেও নেননি মানুষটা ভীষণ ভালো ওনার মতো মানুষ হয়না আমার জন্য এতো কিছু করেছেন তার ঋন কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।

কি রে মা বলবি না তো যাবি আমার মেয়ে হয়ে? আমার ছেলেকে পছন্দ হয় কিনা দেখতো।

স্যারের ইশারা অনুযায়ী পাশে তাকিয়ে দেখি একজন শ্যাম পুরুষ বসে আছেন দেখতে অনেকটা হিরোদের মতো বসে থাকার কারণে হাইট বলতে পারছি না। তিনি গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন ভাব দেখে মনে হচ্ছে উনি ভীষণ বিরক্ত এখানে এসে।
পাশ থেকে সুহী মায়াকে হালকা ধ্বকা দিয়ে বলে দুলাভাই তো সেই হ্যানসাম রে তোর কপাল বেশ ভালো।তোর দেবর থাকবে আমায় দেস দুজনে এক সাথে থাকবো।
মায়া ইশারায় সুহীকে থামতে বলে উনারা শুনতে পেলে কি ভাববে।

তাসফির তোর কি মায়াকে পছন্দ হয়ছে?

কে মায়া?
তাসফিরের প্রশ্নে মায়ার মা উওর দেয় বাবা আমার মেয়ের নাম মায়া তোমার বাবা নাম বলেনি?

তাসফির মুখে বিরক্তপর ছাফ সে নাম মনে রাখবে কি করে ও তো বিয়ে করতে রাজি না তার উপর এখানে এসে দেখে বাচ্চা মেয়ে দেখে আরো রাগ ওঠে যায় কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতে পারছে না।

বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বাহিরে চলো।
না তুমি বাহিরে আসো বলে ওর বাবাকে নিয়ে গেল।

কি বলবি বল?

বাবা তোমার কি আক্কেল জ্ঞান নেই একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে নিয়ে আসছো আমি মাষ্টার্সে পড়ছি।

তাতে কি হয়েছে বয়স হয়তো একটু কম সবে ষোল বছর তুই একটু মানিয়ে নিবি তাহলে হবে।

সরি বাবা আমার দ্বারা ঔ মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তোমার কথায় জোর করে এখানে এসেছিলাম কিন্তু তোমার কথা রাখতে পারছি না।

তাসফির তুই রাজি না হলে মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে আর ভেঙে যাবে ওর স্বপ্ন ওর ইচ্ছে পড়ালেখা করে জীবনে কিছু করবে অন্য কাউকে বিয়ে করলে তারা তো পড়ালেখা করতে দিবে না সংসার করতে হবে।

পড়ালেখা করা স্বপ্ন তাহলে তুমি ওর পড়ালেখার দায়িত্ব নেও তাহলে হয়।

মায়ার মা ওর বিয়ে দিতে চায় উনার কিছু হলে কে দেখবে তাই ওনার এই সিদ্ধান্ত আমি উনাকে কথা দিয়েছি এখন না করতে পারবো না উনারা আমার উপর অনেক ভরসা করেন।আমার সিদ্ধান্ত আমি মায়ার সাথে তোমার বিয়ে দিবো তুই যদি বিয়ের পর ওর দায়িত্ব নিতে না চাস তাহলে আমি ওকে দেখবো ওর কলেজে ভর্তি করাবো তোকে কিছু করতে হবে না শুধু তুই ওকে বিয়েটা করবি।
তাসফির কিছু বলে না রেগে মেগে একাই চলে যায়।
রফিক সাহেব মায়াদের বাসায় আসেন ওর মাকে জানায় তাসফির বিয়েতে রাজি এখন বিয়ের দিন ঠিক করি।
কথা মতো ৫ দিন পর শুক্রবারে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়।
স্যারের আনা মিষ্টি সবাইকে দিয়ে মিষ্টি মুখ করায়।
পাশের বাসার চাচি বলে জামাই আগেই চলে কেন?বিয়েতে কি তার মত নেই নাকি?

তাসফির একটা জরুরি কাজ এসে পড়লো তাই যেতে হলো ও বিয়েতে রাজি বলে হেঁসে কথাটা পার করলো।
মায়ার কেমন সন্দেহ হলো সত্যি কি উনি রাজি তখন মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো উনি এখানে জোর করে এসেছেন।

মায়া মা তোমাকে কিছু কথা বলার আছে। তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে আাশা করবো কথা গুলো বুঝবে আর এ কথা তোমার মাকে বলবে না।
মায়া মাথা নাড়ায় যার অর্থ বলবে না।

শোন মা তোর বয়স অল্প আর মাষ্টার্স করছে ওর মতে তুই বাচ্চা মেয়ে তাই আমার ছেলে বিয়েতে রাজি ছিলো না আমি জোর করে রাজি করিয়েছি। বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে তুই পড়ালেখা করবি সাথে আমার ছেলেটাকে একটু দেখিস ওর মা নেই মায়ের ভালোবাসা পায়নি তুই নিজেও জানিস মা বাবা দুজনের মধ্যে একজনের ভালোবাসা না পাওয়া কতটা কষ্টের। তুই পাসনি তোর বাবার ভালোবাসা আর ও পায়নি ওর মায়ের ভালোবাসা এই জন্য একটি বেখেয়ালি আচরণ করে তবে তুই পরে ঠিক করে নিস।

স্যার উনি আমায় বিয়ে করতে রাজি না হলে উনাকে জোর করার দরকার নেই আপনি বিয়েটা ভেঙে দেন। কাউকে নিয়ে জোর করে সংসার করা যায় না। আর উনি হয়তো সত্যি বলেছেন আমি ছোট ওনার মতো ওতো বুঝিনা উনার মতের সাথে মিল নাও হতে পারে। যার সাথে বিয়ে হবে তার মতামত ও আগে দরকার।

সব বুঝেছি আর আমি যখন বলেছি বিয়েটা হবে তার মানে হবে এই বাবার উপর বিশ্বাস আছে তো আমি থাকতে খারাপ কিছু হবে না। তুই বিয়ের পর লেখা চালিয়ে যাবি আর সাথে তাসফির মনে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করবি। তাসফির উপরে উপরে অনেকটা কঠিন কিন্তুু মন থেকে একদম নরম ঠিক ওর মায়ের মতো আজ ওর মা বেঁচে থাকলে কত ভালো হতো ও নিজেও এখানে আসতো।
আর শোন একটা কথা আজ হয়তো তাসফির বিয়েতে রাজি না কিন্তু ও একদিন নিজে আমায় ধন্যবাদ জানাবে তোর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
আজ আসি রে মা খুব শিগগিরই একেবারে বউমা করে নিয়ে যাবো বলে স্যার বেরিয়ে গেলেন। উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছি,
জীবনে কি সত্যি সুখের ছোঁয়া আসতে চলছে নাকি অবহেলার সংসারে জীবনে বিষন্নতা নেমে আসবে।

চলবে………………..?