মন সে কথা শোনেনা পর্ব-০৪

0
1

#মন_সে_কথা_শোনেনা
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:৪

মায়া তার শশুড়ের আবদারে সকালের নাস্তা পরোটা আর তরকারি বানিয়েছে স্কুলে থাকতে একবার মায়া বাসা থেকে পরোটা আর আর আলুর দম রান্না করে নিয়ে খাইয়েছিলো উনার সেই খাবারের স্বাদ নাকি এখনো জিভে লেগে আছে মনে হয় তাই বানালো ছোট থেকে ওর মা রান্না বান্না সব শিখিয়েছিলো গরিব ঘরে জন্ম ছিলো মা যখন কাজ করতে যেত মাঝে মধ্যে নিজেই টুকটাক রান্না করতো এভাবে প্রায় সব রান্না শিখেছে। মায়া খাবার গুলো টেবিলে এনে রাখে।

রফিক সাহেব সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন আর রত্না ভাইয়ের পাশে বসে আছে।

বাবা পরোটা বানানো শেষ এখন খাবেন চলুন।
রফিক সাহেব সম্মতি দেয় বলে যাচ্ছি একটু পর।
মায়া পাশে বসে থাকা ফুফি শাশুড়ীর দিকে তাকায় বলে ফুফি আপনি আসেন?

রত্না মুখে কিছু বলেনা কিন্তু মুখ গম্ভীর করে অন্য পানে চায় যার অর্থ শুনেও না শোনার ভান।

মায়া মা তুমি তাসফিরকে ডেকে আনো এক সাথে খাবো আর সুরাইয়াকে ডাক দিও ও যদিও আরো দেরিতে ওঠে তবুও বলিও। এই মেয়েটা এতো ঘুমোয় পড়ায় তো ফাঁকিবাজি।

একথা শুনে রত্নার গাঁ জ্বলে উঠে। ভাই তুমি এসব কি বলছো সুরাইয়া এখনো ছোট তাই একটু দেরিতে ওঠে হ্যাঁ একটু পড়ালেখায় খারাপ তাই বলে বাহিরের কারো সামনে এভাবে বলবে?

বাহিরের মানুষ কে রত্না?
মায়া তাসফিরের বউ হয় ও এ বাড়ির একজন বুঝেছো আর হ্যাঁ সুরাইয়াকে একটু মায়ার মতো হতে শেখাও ছোট মানুষ বুঝলাম তাই বলে প্রতিদিন বারোটায় ঘুম থেকে ওঠবে? যখন বিয়ে দিবে তখন এমন অভ্যাস কেউ মেনে নিবে না।

মায়ার মতো হতে বলায় মনে মনে ক্ষোভে ফেটে যায় কিন্তু রফিক সাহেবের সামনে তা প্রকাশ করে না চুপ করে রয়।

মায়া তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও তাসফিরকে ডেকে আনো।
-জ্বি বাবা যাচ্ছি।

“মায়া রুমে গিয়ে দেখে তাসফির বেডে নেই ওয়াশ রুম থেকে পানির শব্দ আসছে তার মানে ফ্রেশ হতে গেছে।

বেডসিট, কাঁথা এলোমেলো হয়ে আছে সেগুলো গোছালো নজর যায় রুমের এক কোনে পড়ে আছে একটা চিরকুট মায়া সেটা কুড়িয়ে হাতে নেয় মোড়ানো চিরকুটা খুলে দেখে সেখানে লেখা ছিলো,

মানিয়ে নেওয়া যদি জীবন হয় তবে,
সংসারে সুখের চেয়ে দুঃখের ছাঁয়া থাকে কেন?

লেখাটা হয়তো কারো জীবনের গল্প তবে তার সাথেও কিছুটা মিলে যায় এই যে সংসারে এসেছি অপর মানুষটা মেনে নেয়নি আমাকে মানিয়ে নিতে হবে যদি মানিয়ে নিয়ে সফল হতে না পারি তবে এ সংসারে ও সুখের চেয়ে দুঃখের ছোঁয়া বেশি থাকবে। তবে খুব করে চাই মানিয়ে নিয়ে উনার মনে জায়গা করে নিতে এসব ভাবনার মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মায়া। তাসফির ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে হাতে ছিলো অর্ধভেজা টাওয়াল মায়া নিতে চাইলে দেয়না নিজে গিয়ে বেলকুনিতে মেলে দিয়ে আসে।

মানিয়ে নেওয়া সংসার জীবন বড়ই কঠিন এ তো সবে শুরু আল্লাহ ধৈর্য দিও।

তাসফির টাওয়াল মেলে দিয়ে এসে মায়ার পাশে দাঁড়ায়।
মন খারাপ করার কিছু নেই আমি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি তাই দিলাম না আর একটা কথা আমি তোমাকে এখনো মেনে নিতে পারিনি তুমি জানো আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে বাবা জোর করছেন বলে করেছি।
এখন তুমি বলতে পারো জোর করেছে এতে তোমার কি দোষ তুমি কেন শাস্তি পাবে?
তবে শোনো আমি তোমায় মেনে নিতে না পারলে তোমার সব দায়িত্ব নিবো আর কি দরকার লাগবে সেটা বলবে।

একটা মেয়ে তার স্বামীর কাছে কি চায় জানেন?
প্রতিটা মেয়ে চায় তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক, যত্ন করুক আগলে রাখুক নিজের না বলা কথা গুলো বুঝুক হাসির মাঝে দুঃখের কারণ গুলো খুঁজুক।
আপনি শুধু ভাত, কাপড় কিংবা আর যাবতীয় জিনিসের দায়িত্ব নিতে চাইলেন কিন্তু আমার পুরো দায়িত্ব তো না। স্বামী হিসাবে পুরো দায়িত্ব তখনি পালন করা হবে যখন কেউ ভাত,কাপড়ের জিনিসের দায়িত্ব বাদেও যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ -বেদনা এবং মন খারাপে মন ভালোর দায়িত্ব নিবে সেই তো হবে আদর্শ স্বামী।

তাসফির অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এতটুকু মেয়ে আবার এতো কিছু জানে, বুঝে?

অবাক হচ্ছেন বুঝি?তবে ক্ষমা করবেন যদি ভুল কিছু বলে থাকি। আপনি নিচে আসেন খাবারের টেবিলে বাবা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বলে মায়া চলে গেল। তাসফির এখনো মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে কিছু আউড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

খাবার টেবিলে এসে বাবার পাশে বসলো তাসফির মায়া খাবার প্লেটে দেয়ার আগে সোফায় বসে থাকা ফুফু শাশুড়ীকে ডাক দেন ইচ্ছে থাকা না সত্ত্বেও এসে বসে এবং সুরাইয়া বলে ডাক ছাড়ে তাড়াতাড়ি আয় খেয়ে যা।
মায়া খাবার বেড়ে দিলো রফিক সাহেব মায়াকে খাওয়ার জন্য বসতে বলে।

না বাবা আপনারা খেয়ে নেন আমি পরে খাবো।

পরে কেন?তুমি এখনি বসো।
রফিক সাহেবের জোরাজোরিতে মায়া তাসফিরের পাশে চেয়ারে বসতে নেওয়ার আগে সুরাইয়া এসে বসে
সরি আমার দেরি হলো খেতে দেও,

সুরাইয়া তুমি তোমার আম্মুর পাশে বসো মায়া ওখানে বসবে।

কেন মামা এখানে বসলে কি সমস্যা আগেও তো তাসফির ভাইয়ার সাথে বসেছি এমনকি তার হাতেও খেয়েছি এই কথাটা মায়ার দিকে তাকিয়ে ওকে শুনিয়ে বলে মায়া চুপ করে দাড়িয়ে আছে।

তাসফির এবার মুখ খোলে আগের সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য বাবা যখন বলছে ওপাশে গিয়ে বস এতো প্রশ্ন কেন?

তাসফিরের রাগি সুরে কথা শুনে ওঠে যায় দাঁতে দাঁত চেপে মায়ার দিকে তাকিয়ে বসে।

খাওয়া শেষে রফিক সাহেব মায়ার রান্নার প্রশংসা করে বলে,
তোর রান্না তো আমি আগেও খেয়েছি আগেও অনেক মজা হতো এখন আরো বেশি মজা হয়েছিলো কি রে রত্না সুন্দর হয়েছিলো না?
ভাইয়ের কথায় কি বলবে মায়াকে পছন্দ না এটা তো মুখে প্রকাশ করা যাবে না তাই মুখে বলে হ্যাঁ হয়েছে আর কি খারাপ না।

তাসফির তুই বললি না বউমার রান্না কেমন লেগেছে?

মায়া তাসফিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলে শোনার জন্য কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিয়ে বলে বাবা আমার আজকে একটু ভার্সিটিতে যেতে হবে কিছু কাজ আছে।

সেকি?আজকে তো তোদের মায়ার বাড়ি যাওয়ার কথা আর এটা নিয়ম বিয়ের পর শশুড় বাড়িতে যেতে হয়।

বাবা আমি যেতে পারবো ন…… মায়ার মুখের দিকে তাকায় কিছু মনে হতে বলে ঠিক আছে যাবো আমি তাড়াতাড়ি বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবো তুমি ওকে রেডি থাকতে বলিও আমি এসে নিয়ে যাবো।

মায়া রান্না ঘরের সব কিছু গুছিয়ে রেখে দেখে তাসফির ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।

আপনার কোন জামা কাপড় নিবো?বলে দিলে সুবিধা হতো তাহলে ব্যাগে গুছিয়ে নিতাম।

আদর্শ স্বামী কিভাবে হয় সেটা যাবো কিন্তু আদর্শ বউ কিভাবে হয় সেটা জানো না?

মায়া চুপ করে রয় কি বলছে কিছু বুঝতে পারছে না।

মায়াকে চুপ থাকতে দেখে বলে আলমারি থেকে তোমার যেটা ভালো লাগে গুছিয়ে নেও আর হ্যাঁ তখন যেমন আদর্শ স্বামীর গুন গুলো বললে তেমন আদর্শ বউয়ের গুন গুলো মনে রাখিও বলে তাসফির বেরিয়ে গেল।
মায়া হা করে তাকিয়ে আছে আদর্শ বউয়ের গুন মনে রাখতে বলছে তার মানে উনি চান আমি আদর্শ বউ হই! এটা ভেবে মায়ার মুখের হাঁসির ঝলক দেখা দেয়। মনে মনে বলে,

একদিন অল্প অল্প করেই গড়ে ওঠবে,
আমাদের এই পবিত্র ভালোবাসার গল্প।

চলবে……………?