মম হৃদয় বিহারিনী পর্ব-১৪

0
1

#মম_হৃদয়_বিহারিনী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
১৪.
“কে আপনি?এই ঘরে এলেন কি করে?”

লোকটা উত্তর না দিয়ে কুৎসিত ভাবে হেসে উঠলো।আমি ভয়ে পিছাচ্ছিলাম একটু একটু করে।পালোয়ানের ন্যায় গড়নের লোকটা আচমকা আমার দিকে এগোতে লাগলো।হঠাৎ দরজায় অনেকগুলো থাবা পরলো।চমকে সেদিক পানে দৃষ্টি দিলাম আমি।বাইরে থেকে তখন অনেকজনের স্বর ভেসে আসছে।প্রয়াস চলছে দরজা ভাঙার!

আমি তড়িঘড়ি স্নানঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম।হাতের প্রায় পু্ড়ে যাওয়া শাড়িটা পরে নিলাম কোনরকমে।শ্বাস প্রশ্বাসের মাত্রা এত পরিমানে বেড়েছে যে হাঁপিয়ে উঠছিলাম আমি।আচমকা বিকট শব্দ হলো বাইরে।শ্বাস আটকে দাড়িয়ে রইলাম আমি।ওরা নিশ্চয়ই দরজা ভেঙে ফেলেছে!

পরপরই কক্ষে কয়েকজোড়া পদযুগল প্রবেশের শব্দ।মুহুর্তেই আমার প্রচন্ড কান্না পেল।আমি জানি এই মুহুর্তে ঘরে ওই অচেনা লোকটাকে দেখে আমার চরিত্রের উপর লোকেদের ভয়ংকর থাবা পরবে।শব্দ,বাক্য বহুভাবে কলঙ্কিনী বলা হবে আমাকে।চোখে জমা অশ্রু বাধ ভেঙে গড়িয়ে পরতে লাগলো।বাইরে থেকে শব্দ ভেসে আসলো,

“এই কে তুমি?এ ঘরে কি করছো?”

গর্জে উঠে কথাটা বলে উঠেন সুবোধ দেবনাথ।অচেনা লোকটার কথা আমার কানে পৌঁছালো না।

“বউ মা কোথায়?বউ মা?”

ধ্রুবর মা হঠাৎ ডেকে উঠলেন আমায়।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।তারপরই স্নানঘরের দরজায় থাবা পরলো।চোখ বুঁজে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলাম আমি।বাইরে থেকে আওয়াজ এলো,

“বউ মা?তুমি ভেতরে আছো?কি হচ্ছে টা কি এসব?”

“সরো তো দিদি।এমনে ডাকলে হইবো না!”

কথাখানা বলে শাশুড়ী মাকে সরিয়ে এবার মেজো কাকি মনি স্নানঘরের দরজায় ধাক্কাতে লাগলেন।

“এই মাইয়া বাইর হ ভেতর থাইকা।কি করছিস এগুলা হ্যা?ছিঃ ছিঃ!”

কথাটা আমার কানে বিষাক্ত ঠেকলো।যা আমি করিনিই তার আমাকে বাজে কথা শুনতে হচ্ছে!

“কি কথা কানে যায় না?হায় ভগবান!দিনে দিনে কত কি দেখা লাগলো?”

দরজা ধাক্কানোর মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত হতেই বেরিয়ে এলাম আমি।নত মস্তকে!
সাথে সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন ছোড়া হলো আমার দিকে।

“এসব কি বউ মা?তোমার ঘরে এই লোকটা কে?”

আমি আড়চোখে লোকটার দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম।লোকটা তার পরনের শার্টখানা খুলে ফেলেছে কোনক্ষণে!

“সব তো বোঝাই যাইতাছে দিদি।এ ঘরে কি হইতাছিলো!”

মেজো কাকি মার ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্যে চোখ খিঁচে বুঝে নিলাম আমি।পরপরই চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

“ভুল ভাবছেন আপনারা।এমন কিছুই হয়নি যা আপনারা ভাবছেন!এই লোকটাকে আমি চিনি না পর্যন্ত!কখন কোন সময় এ ঘরে এসে পৌঁছেছে তা অবধি জানা নেই আমার।”

আমার কথা যে কেউ বিশ্বাস করেনি তা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো!আমি করুন চোখে সকলের পানে তাকালাম।কতবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমি কিছু করিনি।কিন্তু না!

অচেনা লোকটাকে ধরে নিয়ে বাড়ির উঠোনে বেঁধে রেখে পিটানো হলো।তবে রাতের আঁধারেও যেন এই খবর এ বাড়ির বাইরে না যায় তার রইল কড়া পর্যবেক্ষণ।
আমায় টেনে নিয়ে আসা হলো বসার ঘরে।উন্মুক্ত কেশ,পরনে ঝলসে যাওয়া শাড়ি আর বিধ্বস্ত আমাকে এবার উঠোনে এনে ফেলা হলো।ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পরে গেলাম আমি।আওয়াজ তুলে একজোড়া পা ছুটে এলো আমার পানে।বাহু আঁকড়ে দাঁড় করালো আমাকে।অশ্রুপূর্ণ ঘোলা দৃষ্টি নিয়ে আমি তাকালাম।মেয়েটি আর কেউ নয়।রাই!

“আমার মনে হচ্ছে নির্বানীর কোন দোষ নেই।একবার আমাদের ওর কথা শোনা উচিত!এমনও তো হতে পারে ও যা বলছে তাই সত্যি!আমরা শুধু শুধু ওকে ভুল বুঝছি।”

” বদ্ধ ঘরে পরপুরুষের কি কাজ এইডা তুই আমগরে শিখাইবি?

মেজো কাকি মনি গজগজ করতে করতে বলে উঠেন।চোখে মুখে ঘৃণা উপচে পরছে ওনার।আমি দৃষ্টি ঘুরিয়ে শাশুড়ী মার পানে তাকালাম।অশ্রুকণারা গাল বেয়ে পরে দৃষ্টি খানিক পরিষ্কার করে তুললো।দৃশ্যমান হলো ওনার মুখশ্রী।থমথমে মুখশ্রীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।
রাই এবার আমার থেকে সরে গিয়ে বলে উঠলো,

“আমি আপনাদের কিছু শিখাচ্ছি না।শুধু এটাই বলতে চাচ্ছি চোখের দেখা কখনো কখনো ভুল হয়।আপনারা ওদেরকে একে অপরের সাথে বাজে অবস্থায় দেখেছেন?দেখেননি তো?তাহলে নির্বানীর কথা কেন বিশ্বাস করছেন না?”

আমার হয়ে রাইয়ের প্রতিবাদ কারোরই ভালো লাগলো না।একে তো তার ব্যপারে সকলের মনে মিথ্যে এক কলঙ্ক আঁকা!তার ওপর আমার সাধ দেওয়ায় সকলে ওর ওপর ভারি পরতে লাগলো।ছোট কাকি মা এবার বলে উঠল,

“তুই তো ওর পাশে থাকবিই।রতনে রতন চিনে বলে একটা কথা আছে না!”

আমার বিস্ময়ের মাত্রা এবার সাড়িয়ে গেল।যারা নিজের বাড়ির মেয়েদেরকেই বিশ্বাস করতে পারে না।তারা আমার কথা,আমাকেই বা কি বিশ্বাস করবে?

আমি অদূরেই উঠোনের গাছের সাথে বেঁধে রাখা লোকটার দিকে তাকালাম।তার মতো পালোয়ান গড়নের দেখতে আরো দুটো লোক চাবুক মারছে লোকটার গায়ে।চিৎকার যেন বাইরে না যায় তার জন্য মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়েছে।চারিদিকে তখন অন্ধকার।মশালের আলোয় জায়গায় জায়গায় আলোকিত হয়ে আছে।লোকটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে থাকাতাম আমি।সুবোধ দেবনাথ একটা চেয়ারে বসে আছেন।পায়ের উপর পা তুলে রাখা।চোখেমুখে গম্ভীর ছাপ।পাশেই শুভ দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত গুঁজে।আবছা আলোয় তার চশমার আড়ালে থাকা চোখের অভিব্যাক্তি ঠাউর করতে পারলাম না আমি।
আচমকা নিরবতা কাটিয়ে দিলো রাইয়ের তাচ্ছিল্যভরা গলার স্বর।

“যারা প্রকৃত সত্য না জেনে বাড়ির মেয়েকেই খারাপ ভাবতে পারে, তারা অন্যের ঘর থেকে আসা বাড়ির বউকেই বা কতটুকু বিশ্বাস করবে?আপনাদের কাছে অনুরোধ করাটা আসলে আমারই ভুল।”

কথাটা যে উপস্থিত কারোরই পছন্দ হলো না সেটা বোঝা গেল।এতক্ষণ চুপ করে থাকা সুবোধ দেবনাথ আচমকা গর্জে উঠলেন এবার।রাইয়ের মা অর্থাৎ নিজের বোনের উদ্দেশ্য বলে উঠেন,

“মেয়ের এমন বেয়াদবী চুপচাপ দেখে যাচ্ছো, চাঁপা?বাহ!”

সাথে সাথে রাইয়ের মা এসে রাইয়ের কব্জি চেপে ধরলেন।তাকালেন রক্তচক্ষে।যেন মেয়ের এমন কান্ডে এবার মাথা কাটা গেল ওনার।আসলে তো তাই!মেয়েরা পুরুষদের সামনে এমন তর্কাতর্কি করলে তো মায়েদের মাথা কাটাই যাই।তখন তার মেয়ে সত্য কথা বলুক না কেন?

রাইয়ের মা তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।উদ্দেশ্য ঘরে আটকে রাখবেন কিছুক্ষণের জন্য।রাই আমার দিকে করুন,অসহায় চোখে তাকালো।আমি অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলাম।আমাদের সমাজ এমন যে স্বয়ং দেবী সীতার ন্যায় পবিত্র সত্তার প্রতিও দুশ্চরিত্রার আরোপ লাগাতে পারে।তখন আমি তো কোন ছাড়!এই মুহূর্তে অবলা অসহায় এক নারী!

“দিদি তুমিই সিদ্ধান্ত নাও এইবার।তোমার বউমারে কি শাস্তি দেওয়া যায়!”
শাশুড়ী মার উদ্দেশ্যে কথাখানা বলে উঠেন মেজো কাকি মনি।

“আমি কোন শাস্তি ভোগ করার পক্ষে নেই।কেননা আমি কোন পাপ করিনি।”

আমার কথায় ফুটন্ত তেলে জল পরার মতো ছ্যাট করে উঠলেন মেজো কাকি মনি।আমার প্রতি ওনার এত রাগ স্বাভাবিক।ওনার বোনের মেয়ের হতে চলা সংসার যে আমি এসে ধ্বংস করেছি!

“এ্যাহ!কোন পাপ নাকি করে নাই!দেও দিকিনি পবিত্রতার প্রমাণ।”

শূন্য দৃষ্টি ওনার দিকে তাকালাম আমি।মুখে মলিন একটা হাসি ফুটে উঠলো।মুহুর্তেই নিভে গেল তা।আবছা আলোয় কারোর চোখেই পড়লো না সেটা।আমি শক্ত যান্ত্রিক স্বরে বলে উঠলাম,

“আমার পবিত্রতার কি প্রমাণ চাই আপনার?”

মুহুর্তেই বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো মেজো কাকি মনির ওষ্ঠকোণে।শশী ওনার বড় আদরের!আমি ধ্রুবর বউ হয়ে আসায় কত কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।ওনার ধারণা আমি শশী আর এই বাড়ির কাল হয়ে এসেছি।উনি বাঁকা হাসতে হাসতে এবার বললেন,

“দেবী সীতা যেমন আগুনের ওপর দিয়া হাইট্টা ওনার পবিত্রতার প্রমাণ দিয়াছেন।তুমি না হয় জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাইট্টাই এবার তোমার কথা প্রমাণ করো।যে তুমি পবিত্র!”

মেজো কাকিমনি শুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে কথা বলেন।যা ওনার কথাকে অন্যরুপ দেয়।আমি ওনার মুখনিঃসৃত প্রস্তাব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।পরক্ষণেই সামনে নিলাম নিজেকে।

“যদি এইডা করবার পারো তবে আমরা মাইনা নিমু তুমি যা বলতাছো একদম ঠিক!”

ওনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি এবার ধ্রুবর মায়ের দিকে তাকালাম।ওনার নির্বাক রুপ অবাক করলো আমাকে।এখনো অবধি উনি না আমার পক্ষে কোন কথা বলেছেন, না বিরুদ্ধে!

আমি তাকিয়ে থাকতেই চট করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন উনি।ওনার মনে আমার জন্য কিরুপ ধারণা তৈরি হয়েছে আমার জানা নেই।

“এই হরিশ!জলদি জলন্ত কয়লা আইনা উঠানে বিছাই দে।”

আমার মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে এই আদেশ ছুড়লেন মেজো কাকি মা।আমি নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে রইলাম কোন রকম।মাটির দিকে দৃষ্টি স্থির করে।সকলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুহুর্তটা উপভোগ করছিল।
সময় যেতেই আমার অক্ষিপটে শক্ত মাটির বদলে জলন্ত কয়লার ভেসে উঠলো।তিনহাত পরিমাণ জায়গা নিয়ে বিছানো হয়েছে সেগুলো।আচমকা আমি দুর্বল অনুভব করতে লাগলাম।মাথাটা ঘুরে উঠলো কেমন করে।সুবোধ দেবনাথ ওনার পুরুষালি হুংকার সেড়ে বলে উঠলেন,

“কি হলো দাও এবার তোমার পবিত্রতার প্রমাণ।তবেই স্ব-সম্মানে গৃহে নেওয়া হবে তোমায়।নয়তো ধ্রুব ত্যাগ করবে তোমাকে!”

শেষোক্ত কথাটা কর্ণগোচর হতেই চমকে তাকালাম আমি।চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে লাগলো বারি ধারার মতো।অনুভব করলাম আমার দিনদুনিয়া কেঁপে উঠছে ক্রমশ।এটা বোধহয় জ্ঞান হারানোর লক্ষন?আমার জানা নেই।আমি কখনো জ্ঞান হারাইনি।
তখন আমার চোখে অশ্রুর পাথার,আমার উপর সামনে দাড়ানো মানুষগুলোর তীর্যক দৃষ্টি।হঠাৎ চেনা পুরুষালি কন্ঠ এসে বাড়ি খেলো কর্ণকুহরে।চট করে পিছন ফিরে তাকালাম আমি।অশ্রুতে পূর্ণ দৃষ্টি দেখতে দিলো না ভালো করে।সমস্ত কিছু ঘোলা ঠেকছে।চোখে জমে থাকা অশ্রু কণা গালে পতিত হতেই চেনা সেই মুখশ্রী ভেসে উঠলো।মুখ দিয়ে তার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে টের পেলাম,আমি নিজের ভারসাম্য হারাচ্ছি!একেবারে জ্ঞান হারানোর আগে অনুভব করলাম শক্তপোক্ত একটা হাত আঁকড়ে ধরেছে আমায়।

চোখেমুখে প্রচন্ড বেগে জল ছিটায় আমার জ্ঞান ফিরলো।পিটপিট করে তাকালাম আমি।অক্ষিপটে ভেসে উঠলো অতি কাঙ্ক্ষিত মুখখানা।ধ্রুব আমাকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে আছেন।চোখেমুখে বিশাল কৌতুহল।আমার চোখ আবার ভিজে উঠলো অশ্রুতে।আমি সব হুশ হারিয়ে সকলের সম্মুখেই জড়িয়ে ধরলান ওনাকে।সাথে সাথে বয়স্কদের মুখে হাত!
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরছি খুব জোরে করে।যেন হাতের বাধন একটু ঢিল হলেই হারিয়ে যাবেন উনি।
ধ্রুব আমার পিঠে হাত রেখে সকলের দিকে তাকালেন একবার।তারপর তাকালেন মাটিতে থাকা জ্বলন্ত কয়লার দিকে।রক্তাভ বর্ণ ধারণ করে জ্বলতে থাকা কয়লার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠলো ওনার চোখের গাঢ় কালো মনিতে।

“আমি কোন পাপ করিনি বিশ্বাস করুন।আমি কোন পাপ করিনি।”

কথাটা বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি।যার দরুন কথাগুলো ভেঙে ভেঙে আসতে লাগলো।উনি আমাকে সেভাবেই আগলে সুবোধ দেবনাথের নিকট কি হচ্ছে তা জানতে চাইলেন।উনি পুরো ঘটনা বলতেই আমি আবারও বলে উঠলাম,

“আমাকে বিশ্বাস করুন।”

আমার কান্নার ওনার শার্টের বুকে অংশ ভিজে যাচ্ছিলো ক্রমশ।উনি আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসয়ে বলে উঠলেন,

“হুশ..কাঁদে না।তোমার সত্যতা বর্ণনা করার জন্য যদি তোমার নিকট কোন শব্দও না থাকে! তবে তোমার ওই চোখদুটো পড়ে নেব আমি।আমি বিশ্বাস করছি তোমায়।”

ধ্রুব আমাকে কোলে তুলে নিলেন হঠাৎ করে।তারপর নিজে এসে দাড়ালেন জলন্ত কয়লার সামনে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালেন সকলের দিকে।অতি শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,

“যে কোন ভুল করেনি তাকেই যখন শাস্তি দেওয়ার থাকে,তবে সেই নির্দোষ আমি হবো।”

কথাটা বলে যেই জলন্ত কয়লার উপর পা রাখতে যাবেন ধ্রুব তখনি তাতে জল ঢেলে দিলেন ধ্রুবর মা পার্বতী দেবী।অতি আদরে মানুষ করা ছেলের পায়ে আগুনের ক্ষত লাগবে।এটা উনি একদমই সহ্য করতে পারবেন না।জ্বলন্ত কয়লার উপর জল পরতেই তারা ঈষৎ শব্দ তুলে ভেজা কয়লার পরিনত হলো।যাদের তেজ শূন্য,শুধু গাঢ় কালিমা লেপ্টানো রুপ!
এতক্ষন নির্বাক হয়ে থাকা পার্বতী দেবী হঠাৎ চাকরদের উদ্দেশ্য আদেশ দিয়ে উঠলেন,

“জল দিয়ে কয়লার আগুন বুজাও।আমার ছেলের পায়ে যেম একটুও জখম না হয়।”

ওনার কন্ঠে এমন আদেশ ছিল যা কখনো কেউ শুনেনি।এত অধিকারবোধ নিয়ে কখনো কথায় বলেনি হয়তো উনি।

ধ্রুব সামনে শক্ত দৃষ্টি দিয়ে বাঁকা হাসলো সামান্য!ক্ষনকাল গড়াতেই প্রায় নিভে আসা কয়লার উপর আরেকদফায় জল ফেলা হলো।সেই জলোর ছিটা এসে ভিজে গেল ধ্রুবর শুষ্ক পা।উনি এবার আমার দিকে তাকালেন।আমি অশ্রুভেজা চোখে অবাক হয়ে ওনার পানেই তাকিয়ে।উনি আমার দিকে তাকিয়েই ভেজা কয়লায় পা রাখলেন।ওনার এবং আমার ভরে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল সেগুলো।উনি গম্ভীর শক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,

“তোমার উপর দেওয়া সমস্ত মিথ্যে কলঙ্ককে পিষে পুনঃর্বার গৃহে প্রবেশ করছি।সেই সাথে এই কথাও দিচ্ছি যে তোমাকে কলঙ্কিত করার প্রয়াস যে করেছে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিব আমি,ধ্রুব দেবনাথ।”

চলবে….
ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন কৃপা করে।