#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-২০
®মেহরুমা নূর
★আজ বিহান হিয়ার বিয়ে। কমিউনিটি পার্টি সেন্টারে স্বল্প পরিসরে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যদিও বিহান ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা করতে চেয়েছিল শুধুমাত্র নিজের লোকজন সাথে নিয়ে। এমনিতেও আদিত্যরা ছাড়া তার আর আছেই বা কে! তবে আদিত্য মানেনি। সে বলে দিয়েছে তার বন্ধু কম ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। এত সিম্পলভাবে হতে দিবেনা। তাইতো সব আয়োজন আদিত্য নিজেই করেছে।কমিউনিটি সেন্টারেই বিউটি পার্লারের লোক আনা হয়েছে বঁধুকে সাজানোর জন্য। হিয়াকে সাজাচ্ছে তারা। তা দেখে নূরেরও শখ হয়েছে তাদের কাছে সাজবে। তাই নূরও সাজতে বসেছে তাদের কাছে। সাজা শেষে নূর আয়নার সামনে ঘুরেফিরে নিজেকে দেখলো। লেহেঙ্গা ধরে আয়নার সামনে খুশিমনে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। হিয়া পাশ থেকে বলল,
“অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে ভাবি।”
নূর প্রফুল্লচিত্তে হেঁসে বলল,
“তাই! আমি হিরোকে দেখিয়ে আসি হ্যাঁ! ”
“আচ্ছা যান।”
নূর উচ্ছ্বসিত মনে সাজানোর রুম থেকে বাইরে এসে আদিত্যকে খুঁজতে লাগল। আদিত্য স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। তাকে দেখতে পেয়ে খুশিমনে এগিয়ে গেল সে। আদিত্যর সামনে দাঁড়াতেই স্থগিত হয়ে গেল আদিত্যর সকল ইন্দ্রিয় ক্রিয়া। নজরের জমিনে হলো অপরিসীম মুগ্ধতার বর্ষণ। ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তি হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে তার খেয়াল নেই আদিত্যর। নূর তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে লেহেঙ্গা ধরে এদিক ওদিক নাচিয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
“আমাকে কেমন লাগছে হিরো?”
আদিত্যর অপলক দৃষ্টি। ঠোঁটে মুগ্ধময় হাসির রেখা।কানে ধরে রাখা ফোনটা কেটে দিয়ে নূরের প্রতি সকল মননিবেশ করল সে। নূরের আরও কাছে এগিয়ে এসে গালে এক হাত রাখল৷ মাথা ঝুঁকিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে মুগ্ধমনে বলল,
“তুমিতো আমার পরি। আমার এঞ্জেল। তাইতো পরির মতোই লাগছে আমার নূর সোনাকে। একদম পুতুলের মতো।”
আদিত্যর প্রশংসায় খুশি হয়ে আহ্লাদী হাসি হাসল নূর।
বিহানও রেডি হচ্ছে শেরওয়ানি পড়ে। পাশেই আবির ওকে হেল্প করছে। যদিও হেল্প কম করছে আর দুষ্টুমি বেশি করছে। এই যেমন বিহানের উদ্দেশ্যে বলছে,
“শোন, এখনো সময় আছে। পেছনের গেট দিয়া ভাইগা যা। নারী জাতির হাতে কুরবান হওয়া থেকে বাঁচার এখনো সুযোগ আছে কিন্তু। পরে আর কোনো রাস্তা পাবি না।”
বিহান রেডি হতে হতে বলল,
“তোর গরু মার্কা সাজেশন তোর কাছেই রাখ হালা। ভাগুম ক্যালা! আমিতো বহুত খুছি।”
“তোর ইচ্ছে। আমিতো তোকে বাঁচাতেই চেয়েছিলাম। ভালোরতো কালই নেই। যা মর গিয়ে। পরে আমার সামনে কানতে আসলে তখন দিবো একটা লাথি মেরে দিবো।”
বলেই মিছে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেল। একটু পরে বিয়ের আসল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। আমন্ত্রিত মেহমানও এসে পড়েছে। বিহান আর হিয়ার বিয়ে পড়ানো শেষে তাদের স্টেজে বসানো হয়েছে। হিয়া খেয়াল করল বিহান কেমন লাজুক হাসছে। তা দেখে সে মুখ টিপে হেঁসে বলল,
“এমন ভাব করছ যেন আমি না,তুমিই বউ। এত লজ্জাতো নতুন বউও পায়না।”
বিহান লজ্জা পেয়ে বলল,
“ও আছলে প্রথমবার বিয়া করতাছিতো তাই একটু আরকি! মাগার চিন্তা কইরো না। পরের বার আর ছরম করবো না। অভ্যাছ হইয়া যাইবো গা।”
হিয়া চোখ গরম করে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“কি বললে তুমি! আরও কয়বার বিয়ে করতে চাও তুমি?”
“আরে মজা করতাছি তো।”
“মজাতেও এমন কথা বলবে না। নাহলে এমন হাল করবো যে আর জীবনেও মজার নামও মুখে আনবে না।”
বিহান বিড়বিড় করে বলল,
“আবির্যা হাঁচাই কইছিল। মাইয়া মানুছ বহুত খাতারনাক দেখতাছি!”
আবির আছে তার ধান্ধায়। হিয়ার কয়েকটা কাজিন বোনেরা এসেছে। তাদের মাঝে একটা মেয়েকে তাক করল সে। মেয়েটা সিফন জর্জেটের শাড়ি পড়েছে। স্লিম ফিগারে হটনেস ছড়াচ্ছে সে। আবির বাঁকা হেঁসে এগিয়ে গেল মেয়েটির কাছে। মেয়েটির পাশের চেয়ারে বসে বলল,
“আচ্ছা আপনার বাবার কি কয়লার ফ্যাক্টরি আছে?”
মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“নাতো। কেন?”
“তাহলে এমন হট প্রোডাক্ট উৎপাদন করল কেমনে! আপনাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়োগ করলে বিদ্যুৎ ওভারলোড হয়ে যাবে দেশে।”
মেয়েটি আবেদনীয় হেসে বলল,
“নট ব্যাড! ইউনিক ফ্লাটেশন!”
আবির গর্বিত ভঙ্গিতে বলল,
“সেতো আমি জন্ম থেকেই। ইউনিকনেস আমার ভেতর ঠেসে ঠেসে ভরা। আমিতো পয়দা হওয়ার সময়ও ইউনিক ছিলাম। মানুষ জন্মানোর পর কাঁদে আর আমি জন্মানোর পর নার্সকে চোখ মারছিলাম। বাইদাওয়ে এই গ্রীন শাড়িতে কিন্তু আপনাকে পুরাই সবজির ভ্যান লাগছে। আসেন আমরা একটু নিরামিষ প্রেম করি। আপনি সবুজ সবুজ সবজি আর আমি আপনার মশলা। মিলেমিশে একেবারে নিরামিষ তরকারি হয়ে যাই।”
“কিন্তু আমারতো ননভেজ পছন্দ।”
আবির লাজুক ভঙ্গিতে নেকামো করে বলল,
“যাহ দুষ্টু! এভাবে কেউ বলে! আমার শরম করে না! আমার আবার লজ্জা অনেক বেশি। আমিতো এতটাই লাজুক যে আয়নায় নিজেকেই খালি গায়ে দেখলে লজ্জা পেয়ে যাই।”
হঠাৎ পাশ থেকে অন্য একটা মেয়ে এসে বলল,
“আর মেয়েদের দেখে? ”
আবির দেখলো হিয়ার সব কাজিনরা ওকে ঘিরে ধরেছে। আবির বাঁকা হেঁসে বলল,
“মেয়েদের দেখে কি হয় সেটাতো দেখালে না বুঝতে পারবো। আপনি চাইলে আমাকে এই অভিজ্ঞতা দিতে পারেন। আই ওন্ট মাইন্ড! আমার আবার বিশাল উদার মন। তাই একটুখানি প্রেম আপনার সাথেও করতে পারি।”
“একটুখানি মানে আবার কি? এক চামচ প্রেম করবেন?”
“আপনি চাইলে দুই চামচও করতে পারি। আসলে আমার হিমোগ্লোবিনে প্রেমের অনেক ঘাটতি থাকে। তাই ডাক্তার বলেছে নিয়ম করে প্রতি চার ঘন্টা পরপর প্রেমের ট্যাবলেট নিতে।নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি।”
আবিরের কথায় হেঁসে দিলো সবাই।
আদিত্যর অবস্থা বেহাল। নূরকে খাওয়াতে গিয়ে তার নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। কখন থেকে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু নূর খাবেনা বলে আদিত্যর হাত থেকে বাঁচতে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। পুরো হল রুম জুড়ে বাচ্চাদের মতো ছোটাছুটি করছে সে। বেচারা আদিত্য খাবার নিয়ে নিয়ে তার পিছে পিছে ছুটছে আর অসহায় সুরে বলছে,
“এঞ্জেল সোনা! এমন করেনা না! একটু খেয়ে নে না। তারপর যত খুশি দৌড়াদৌড়ি কোরো।”
কিন্তু কে শোনে কার কথা! নূরতো হি হি করে হাসছে আর ছুটে চলেছে। আদিত্য অনেক কষ্টে নূরকে ধড়-পাকড় করে কোনরকমে দুই এক লোকমা খাইয়ে দিতে সক্ষম হলো। যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করল সে। নূর তখন আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“আর খাবোনা। হয়ে গেছে খাওয়া। এখন খেলতে যাই?”
আদিত্য টিস্যু দিয়ে নূরের মুখ মুছে দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
“ঠিক আছে যাও। কিন্তু আশেপাশেই থেকো । অন্য কোথাও যেও না যেন এঞ্জেল।”
“আচ্ছা।”
বলেই নূর আবার প্রফুল্ল মনে ছোটাছুটি শুরু করল বাচ্চাদের মতো। আদিত্য মাথা নেড়ে হাসল তার চঞ্চল পাখিটার দুরন্তপনা দেখে। তারপর হাত পরিস্কার করতে বেসিনের দিকে গেল। নূর তার মতো হলের মাঝে এদিক ওদিক ছুটেই যাচ্ছে নিজের মতো। মজা লাগছে তার অনেক। ছোটাছুটির মাঝেই হঠাৎ এক মহিলার সাথে ধাক্কা লাগল নূরের। মহিলাটি হিয়ার পক্ষের মেহমান। ধাক্কা লাগায় তার হাতে থাকা জুসের গ্লাস থেকে জুস পড়ে মহিলাটির শাড়ি ভিজে যায়। আচমকা এমন হওয়ায় নূর ভীষণ ঘাবড়ে যায়। শঙ্কিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। মহিলাটি চরম রেগে যায়। রাগে উচ্চ ক্ষিপ্ত স্বরে বলে উঠল,
“এই পাগল মেয়ে! চোখ নাই সাথে! কি করলি এসব! পুরো শাড়ি নষ্ট করে দিলি! কোথাথেকে যে এইসব পাগলছাগল আসে! বিয়ে বাড়িতেও এইসব পাগলের জন্য আর শান্তি নেই। যত্তসব পাগলছাগল এসে মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।”
ঝাঁঝাল কন্ঠে এসব বলতে বলতে নিজের শাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে অন্য দিকে চলে গেল মহিলাটি। নূরের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। এতক্ষণের প্রফুল্ল মুখটায় কালো আঁধারে ছেয়ে গেল। চোখে জমলো নোনাজল। আর থাকতে মন চাইলো তার এখানে। ঠোঁট উল্টিয়ে হাতের উল্টো পিঠে কান্না মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে গেল সে ।
আদিত্য হাত ধুয়ে এসে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নূরকে নজরে পেল না। সামনে এগুতে নিবে তখনই পার্টি অ্যারেঞ্জমেন্টের কর্মকর্তা কিছু কথা বলার জন্য আদিত্যর কাছে এলো। আদিত্য তার সাথে কতক্ষণ কথা বলল। কথা শেষ হওয়ার পর সে আবারও এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে তার পরিটাকে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু আশেপাশে কোথাও দেখা গেলনা তাকে। আদিত্যর ভ্রু কুঁচকে এলো। নূরকেতো আশেপাশেই থাকতে বলেছিল সে৷ মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায়না। দুষ্টুটা খেলতে খেলতে কোনদিকে গেছে কে জানে! কবে একটু বুঝবে এই মেয়েটা যে, নূর চোখের আড়াল হলেই এই আদিত্যর জান বের হয়ে যায়। আদিত্য এদিক ওদিক ঘুরে-ঘুরে নূরকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু নূরকে কোথাও না পেয়ে আদিত্যর কপালে এবার চিন্তার ছাপ পড়ল। ঘাবড়ে গেল মন। কোথায় গেল তার এঞ্জেল টা! আদিত্য উদ্বিগ্ন মুখে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল নূরকে। খুঁজে না পেয়ে সময়ের সাথে বাড়ছে আদিত্যর উদ্বেগ। যা ধীরে ধীরে আতঙ্ক আর ভীতিতে পরিণত হচ্ছে। কোথায় গেল ওর এঞ্জেল টা? আবার কি হারিয়ে গেল কোথাও! না না,এঞ্জেল কে হারাতে পারবেনা সে। কিছুতেই না। সবখানে খুঁজেও নূরকে না পেয়ে এবার যেন পাগল হয়ে গেল আদিত্য। কোথায় গেল আমার এঞ্জেল! এইমাত্রইতে ওর সামনে কত খুশিমনে খেলছিল।তাহলে কই চলে গেল! আদিত্যর সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পাগলের মতো খুঁজতে লাগল নূরকে। হলের কোথাও না পেয়ে এবার হলের বাইরে আসল নূরকে খুঁজতে। তখনই দেখল করিডোরের এক কোণায় নূর ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। পেছন থেকে তাকে দেখতে পেয়ে দেহে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আদিত্য। তবে আজ অনেক রাগ হলো নূরের উপর তার৷ সে মানা করা সত্বেও এভাবে বাইরে আসল কেন! এদিকে তাকে না দেখে আমার কি অবস্থা হয়ে যায় তার কোনো আইডিয়া আছে তার! এই এতটুকু সময়ে আদিত্যর প্রাণ বেড়িয়ে গেছিল প্রায়। আজতো মেয়েটাকে আচ্ছামতো বকা দিবে সে যাতে আর কখনো একা একা কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তাও না করে। এই মনোভাব নিয়েই নূরের দিকে এগিয়ে গেল আদিত্য। তবে নূরের সামনে আসতেই তার সে মনোভাবের সহসাই পরিবর্তন ঘটল।যখন সে দেখল নূর বসে বসে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে চোখমুখ ডলে লাল করে ফেলেছে। আৎকে উঠল আদিত্য। ঝট করে নিচে বসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বিচলিত স্বরে বলল,
“কি হয়েছে এঞ্জেল সোনা কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে? আমাকে বলো কি হয়েছে? আর এখানে কেন এসেছ তুমি? চলো ভেতরে যাই।”
নূর কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“না যাবোনা আমি। ভেতরে ভালো না। সব পঁচা।”
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
“পঁচা! কে পঁচা? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?”
“হ্যাঁ, ওরা শুধু পাগল বলে আমাকে। আমার একটুও ভালো লাগে না। আমিতো ইচ্ছে করে তাকে ধাক্কা দেইনি। তাও পাগল বলল। সবাই পাগল বলে। নূরের একদম ভালো লাগে না। অনেক পঁচা লাগে।”
বলতে বলতে নূরের চোখের জল আরও বৃদ্ধি পেল। মুষড়ে উঠল আদিত্যর বুকের মাঝে। সে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“কে বলেছে তোমাকে এসব! আমাকে বলো এঞ্জেল, কে তোমাকে পাগল বলেছে। আমি এক্ষুনি তাকে উচিত শিক্ষা দিচ্ছি। শুধু একবার বলো আমাকে। চলো দেখিয়ে দাও আমাকে।”
আদিত্য নূরকে উঠাতে চাইলে উঠলনা নূর৷ নাকচ করে বলল,
“না, যাবোনা আমি আর ওখানে। একটুও যাবোনা।”
আদিত্য বুঝতে পারল নূরের মনোভাব। তাই আর জোর দিলোনা। এমনিতেও বিহানের আজকের খুশির দিনটাকে নষ্ট করতে চায়না আদিত্য। তাই আপাতত রাগটাকে দমিয়ে ফেলল সে। তারপর নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে, ভেতরে যাবোনা আমরা। বেড়াতে যাবে আমার সাথে? একটা যাদুর জায়গায় নিয়ে যাবো, যাবে?”
নূর এই পর্যায়ে কান্না থামিয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“যাদুর!”
“হ্যাঁ যাদুর। অনেক মজার জায়গা। যাবে?”
নূরের উৎসুকতা জাগল। সে ঘাড় কাত করে বলল,
“আচ্ছা।”
আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরকে দুই হাতে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে এগুলো। নূরও অভ্যাস অনুযায়ী আদিত্যর গলা জড়িয়ে ধরে মাথা মিলিয়ে রাখল তার বুকে। আদিত্য নূরকে নিয়ে এসে গাড়িতে এসে বসল। নূরকে কোলের মাঝে নিয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো আদিত্য। নূর মিনি বিড়ালের মতো চুপটি করে পড়ে রইল আদিত্যর বুকের মাঝে।
প্রায় একঘন্টা ড্রাইভ করার পর গাড়ি থামাল আদিত্য। দরজা খুলে নূরকে কোলে নিয়ে আবারও বের হলো সে। নূর আগের মতোই চুপটি করে পড়ে আছে। তবে বাইরে এসে ধীরে ধীরে যখন সামনে এগুলো তখন নূরের চোখে বিস্ময় দেখা গেল। সামনেই দেখতে পেল সে সুন্দর নদীর কিনার। চাঁদের আলোয় কিনারার কাশফুলের বন বাতাসে দোল খাচ্ছে। এসব দেখে নূরের মুখের বিষন্নতা সরে গিয়ে ঝলমলে কিরণে যেন ছেয়ে গেল। নূর বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,
“আরেহ! এটাতো আমাদের গ্রামের মতোই সুন্দর। নূর ঝট করে আদিত্যর কোল থেকে নেমে সামনে ছুটে গেল। নদীর কিনারের শীতল বাতাসে দুই হাত ছড়িয়ে মন ভরে নিঃশ্বাস নিলো সে।”
আদিত্য নূরের কাছে গিয়ে বলল,
“ভালো লাগছে এঞ্জেল?”
নূর প্রফুল্ল মনে বলল,
“হ্যাঁ অনেক।”
“আসো তোমাকে এবার যাদুটা দেখাই।”
আদিত্য নূরের হাত ধরে ওকে কাশফুলের বনের কাছে নিয়ে গেল। সেখানে একঝাঁক জোনাকির দল টিমটিম জরে জ্বলছি। তা দেখেতো নূর বিস্ময়ে আত্মহারা হয়ে গেল। চোখের পাতায় তারা চিকচিক করে উঠল। উচ্ছ্বসিত হয়ে জোনাকিগুলো ধরতে লাগল। দুরন্ত হয়ে আবারও খুশিমনে হাসতে লাগল সে। তা দেখে জুড়াল আদিত্যর হৃদয় মন৷ নূরের এই খুশিটাইতো সে চায়। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সে নূরের মুখে শুধু হাসি চায়। কোনোরকম কষ্ট যেন তার পরিকে ছুঁতেও না পারে এটাই তার প্রয়াস। নূর আমোদিত কন্ঠে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“এটা অনেক সুন্দর জায়গা৷ আমার এত্তগুলা ভালো লাগছে।”
আদিত্য নূরের গালে হাত বুলিয়ে বলল,
“তুমি খুশি হয়েছ?”
“অনেক।”
আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“ব্যাস,শুধু এভাবেই খুশি থাক। আমার কাছে থাক। কখনো ছেড়ে যাসনা পাখি। তোকে ছাড়া এই আদিত্য অস্তিত্বহীন।”
__
রাত বারোটার পর বাড়ি ফিরল আদিত্য নূর। ততক্ষণে বিহানও বউ নিয়ে চলে এসেছে। নূর বাসায় নতুন বউ দেখতে ছুটে গেল তাদের রুমে।রুমে হিয়াকে খাটে বসানো হয়েছে। আবির বিহানের সাথে দাঁড়িয়ে নানানরকম মজা করছে। নূর রুমে ঢুকে দেখল বিহানের খাটে ফুল দিয়ে সাজানো। তা দেখে নূর কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“দেবরের খাটে এত ফুল কেন?”
আবির তখন মনে মনে বিহানকে জ্বালানোর আরেকটা কুবুদ্ধি আটলো। নূরকে বলল,
“ভাবি এখানে বিড়াল মারা হবে বুঝেছ! আর বিড়াল মারার জন্যই এমন ফুলসজ্জা সাজিয়েছে।”
নূর আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলল,
“কিহ! বিড়াল মারবে! কেন? বিড়ালকে কেন মারবে? বিড়াল কি দোষ করেছে? ”
“সেটাইতো, দেখোনা ভাবি কত নির্দয় এরা! অসহায় প্রাণী হত্যা করতে যাচ্ছে। আমারতো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।”
“এই এই তোমরা আবার আমার বিড়াল ছানাকে মারবে নাতো! দেখ এটা কিন্তু করবে না একদম! নাহলে নূর অনেক কাঁদবে।”
বিহান বেচারা থতমত খেয়ে বলল,
“না না ভাবি এমন কিছুই না। আবির্যাতো পাগল। অর কথা হুইনেন না।”
বিহান আবিরের পিঠে কিল মেরে বলল,
“ওই হালা! কি কছ ভাবিরে!”
আবির হেঁসে দিয়ে নূরকে আরও চেতিয়ে দিয়ে বলল,
“ভাবি এদের কোনো ভরসা নেই। এরা তোমার বিড়ালকে মেরেও ফেলতে পারে। তাই বলি কি তুমি এখানে বসে বসে ওদের পাহাড়া দাও যাতে বিড়াল মারতে না পারে।”
নূর আবিরের কথায় সহমত প্রকাশ করে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ দেবর৷ আমি আজ রাত এখানেই বসে থাকবো। কাউকে বিড়াল মারতে দিবোনা।”
বলেই নূর বিছানার মাঝখানে উঠে দুম করে বসপ পড়ল৷ বেচারা বিহান আৎকে উঠল। তাহলে কি ওর বাসর হবে না আজ! কটমটে চোখে তাকালো আবিরের দিকে। যেন চোখের মাঝ থেকে গ্রে,নে,ট বোমা বের হয়ে এসে ঝাঁঝরা করে দিবে আবিরকে। আবির তা দেখে সয়তানি হাসল। তখনই আদিত্য রুমে ঢুকল। নূরকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বলল,
“এঞ্জেল! ওখানে কেন বসে আছ? চলো রুমে যাই। ঘুমোতে হবে তো!”
নূর কড়া গলায় বলল,
“না আমি যাবোনা। ওরা আমার বিড়াল মেরে ফেলবে। আমি আজ এখানেই থেকে পাহাড়া দিবো।”
আদিত্যও এবার ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আবিরের মিচকে হাসি দেখে বুঝতে পারল আবিরই কিছু রটিয়েছে। আদিত্য বলল,
“আরে এমন কিছুই করবেনা ওরা। আবির মজা করেছে। তুমি আসো আমার সাথে। ওদের ঘুমুতে দাও।”
আদিত্য নূরের হাত ধরে নামাতে চাইলে নূর হাত ছাড়িয়ে জেদি স্বরে বলল,
“না না না, আমি যাবোনা৷ আমি আজ এখানেই থাকবো।”
বলতে বলতে হিয়ার সাথে যেতে গেল নূর। হিয়া তখন বলল,
“থাক ভাইয়া, সমস্যা নেই। ভাবি এখানেই থাকুক।”
বিহানের মনে হলো তার উপর ঠাস করে ঠাটা পড়ল এইমাত্র। কি বলে তার বউ! এ কেমন অবিচার হচ্ছে তার সাথে! আদিত্য বলল,
“না না তা কি করে। নূর এখানে কিভাবে থাকবে! আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।”
আদিত্য আবারও চেষ্টা করলে নূর আবারও জেদ ধরে বসে রইল। হিয়া আবারও বলল,
“থাক না ভাইয়া, কোনো সমস্যা হবে না।”
হিয়া বিহানকেও চোখের ইশারায় বুঝাল তার কথায় সায় দিয়ে আদিত্যকে একই কথা বলতে।বেচারা বিহান মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে হাসিমুখ করার চেষ্টা করে ফিচেল কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ আদি, হিয়া ঠিকই কইছে। ভাবি এইহানেই থাক। আমি নাহয় বাইরে সোফায় গিয়া ঘুমাবো।”
এদের দুজনের মধ্যে আবিরের দম ফাটানো হাসি পাচ্ছে। যা সে অনেক কষ্টে আঁটকে রেখেছে। যেকোনো সময় ফেটে পড়বে অবস্থা। আদিত্য বিহানের কানের কাছে আস্তে করে বলল,
“তোর হয়তে সমস্যা নেই তবে আমার আছে৷ তুই তোর বউকে ছাড়া থাকতে পারবি তবে আমি না। আমারতো চাই আমার বউ। বউকে ছাড়া আমার ঘুম হয়না।”
আদিত্য কিছু একটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা এঞ্জেল, আমরা একটা কাজ করি। ওদেরকে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে যাই৷ তাহলে আর বিড়াল মারতে পারবে না তাইনা।”
নূর চমকিত কন্ঠে বলল,
“আরে হ্যাঁ এটা ভালো বুদ্ধি। চলো তাই করি।”
আদিত্য হাফ ছেড়ে বাঁচল। বিহান আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাই,তোর উপকারতো আমার উপ্রে অনেক৷ তয় আইজকার ঋণটা ছবচেয়ে বড় উপকার করলি। মাগার তোর এই উপকারের প্রতিদান জলদিই দিমু। বছরের মাথায়ই তোরে চাচা হওনের খুছি দিয়া।”
হাসল আদিত্য, তারপর নূরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আবির যেতে যেতে বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“শোন,ওয়ার্ল্ড কাপ জেতা চাই৷ সকালে খাট ভাঙা পাইলে ওয়ার্ল্ড কাপ তোর।”
বলেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল আবির।
চলবে…….
#মরুর_বুকে_বৃষ্টি(S-2)
পর্ব-২১
®মেহরুমা নূর
★আজ সবাই মিলে আদিত্যদের খামার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যান করেছে। বিহান আর হিয়ার বিয়ের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। ওরা কোথাও বেড়াতে যায়নি। তাই এই উছিলায় সবাই বাইরে কোথাও যাওয়ার প্রোগ্রাম করেছে। গাজীপুরে আদিত্যদের খামার বাড়িতেই যাবে তাই। নূরতো বেড়াতে যাওয়ার কথা শোনা থেকেই চরম এক্সাইটেড। এতটাই এক্সাইডেট যে গত রাতভর ঘুমই আসেনি তার চোখে। রাতভর চোখ পিটপিট তাকিয়ে ছিলো আর একটু পরপর সময় দেখছিল। তবে তার সময় দেখার চক্করে বেচারা আদিত্যর ঘুৃমেরও সাড়ে তেরোটা বাজিয়ে দিয়েছে নূর। রাতে পাঁচ মিনিট পরপরই আদিত্যকে ঠেলে ঠেলে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে যাওয়ার সময় হলো কিনা। আদিত্য প্রথম প্রথমতো নূরের ডাকে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে চোখ খোলে। ভাবে নূরের কিছু হয়েছে নাকি। কিন্তু নূর যখন জিজ্ঞেস করে,
“হিরো কয়টা বাজে? আমরা কখন যাবো?”
আদিত্য বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। অসহায় সুরে বলে,
“মাত্র রাত একটা বাজে, এঞ্জেল। যাবোতো সেই সকাল বেলা।এখনো অনেক সময় আছে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”
আদিত্য নূরকে বুকের উপর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তাকে ঘুম পাড়ানোর উদ্দেশ্যে।এভাবে একসময় আদিত্য আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় কিন্তু নূরের চোখে ঘুমতো দূরের কথা, ঘুমের বাড়ির কাজের বুয়াও আসে না চোখে। সে আদিত্যর বুকে মাথা রেখে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে। মিনিট পাঁচেক পর আবারও আদিত্যকে ডাকল নূর। আদিত্য ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে অনেক কষ্টে আবারও তাকালো। নূর আবারও জিজ্ঞেস করল, “কয়টা বাজে? কখন যাবো?” আদিত্যর করুন অবস্থা। এভাবেই নূর একটু পরপর জিজ্ঞেস করছে আর আদিত্য ঘুমের ঘোরেই হু হা জবাব দিচ্ছে। ভোর রাতের দিকে আদিত্য আর নূরের ডাকে সাড়া দেওয়ারও শক্তি পেলনা। আদিত্যর সাড়া না পেয়ে নূর এবার আদিত্যর মুখের উপর ঝুঁকে হাতের আঙুল দিয়ে আদিত্যর চোখের বন্ধ পাতা দুই দিকে টেনে খুলে ধরল। তারপর বলল,
“এই হিরো! আর কতক্ষণ লাগবে সকাল হতে?”
এভাবেই বেচারা আদিত্যর সারাটা রাত নূরের অত্যাচারে বর্বাদ। ভোরের আলো ঘরে পৌঁছাতেই নূর লাফিয়ে ওঠে বিছানা থেকে। দুই হাতে আদিত্যকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে উৎসুক কন্ঠে বলে,
“এই হিরো হিরো ওঠো ওঠো। সকাল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ওঠো। মামার বাড়ি(খামার বাড়ি) যাবো না!”
বেচারা আদিত্য উঠবে কি! সারারাত ঘুমোতে না পেরে এখন চোখ খোলারও ক্ষমতা পাচ্ছে না সে। যেন আঠার মতো লেগে গেছে চোখের পাতা। নূরতো সজোরে ঠেলেই যাচ্ছে আর বলছে,
“এই হিরো, ওঠো না কেন? আর কত ঘুমাবে! এত ঘুমায় মানুষ! ওরা সবাই আমাদের রেখে চলে যাবে মামার বাড়ি। আরে ওঠোনা।”
নূরের এমন এলোপাতাড়ি ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে ঠেলার চোটে বেচারা আদিত্য একসময় বিছানা থেকে গড়ে পড়েই গেল। পড়ে গিয়ে ধড়ফড়িয়ে চোখ খুলে এলোমেলো তাকাতে লাগল সে। বুঝে উঠতে পারলনা তার সাথে ঘটলো টা কি! বুঝতে পারল যখন নূর সামনে এসে তাড়া দিয়ে বলল,
“আরে এখন আবার বসে রইলে কেন? তুমি না অনেক আলসে হয়ে গেছ হিরো। এত কেউ ঘুমায়! আমার মতো একটু কম ঘুমানো শেখ।”
আদিত্য অসহায় হেঁসে বলল,
“তোমার মতো কি আর আমার হওয়ার ক্ষমতা আছে এঞ্জেল! তুমিতো একটাই পিচ দুনিয়াতে।”
“আরে এসব ছাড়। তুমি ওঠোনা জলদি। আমরা মামার বাড়ি যাবোনা! তাড়াতাড়ি রেডি হও।”
বলতে বলতে নূর আদিত্যর হাত ধরে টেনে তুলতে চাইল তাকে৷ আদিত্য নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মামার বাড়ি! কোন মামার বাড়ি?”
“আরে তুমিইতো কাল বললে আমরা মামার বাড়ি যাবো। মাথা নেড়ে হাসল আদিত্য। তার নূরপাখিটা আবারও শব্দ গুলিয়ে ফেলেছে। খামার বাড়িকে মামার বাড়ি বলছে। কিউটের ডিব্বা তার নূরপাখিটা।
নূরের তোড়জোড়ে আদিত্যসহ সকলেই সকাল সকালই রেডি হয়ে বের হলো বাসার বাইরে। নূর অতি উচ্ছ্বসিত হয়ে সবার আগে নাচতে নাচতে বেরিয়ে এলো। পিছে পিছে আদিত্য, বিহান আর হিয়াও এলো। বাইরে এসে দেখল আবির গাড়ির উপর বসে তবলা বাজানোর মতো করে দুই হাত গাড়ির সাথে বাজাচ্ছে। নূর হাসিমুখে তার সামনে গিয়ে বলল,
“আরে দেবর তুমি ওখানে কি করছ!”
বিহান এগিয়ে এসে বলল,
“আরে ভাবি ও ওর নতুন বিজনেসের প্রাক্টিস করতাছে।”
“কিসের বিজনেস?”
গান গাইয়া গাইয়া ভিক্ষা চাওনের বিজনেস। বিহানের হেঁসে দিল সবাই। আবির ঋষি মনিদের মতো ভঙ্গি করে বলল,
“এই দুনিয়াতে সবাই আমরা ভিক্ষুকরে পাগলা। একেকজন একেক রকম জিনিস দানের ভিক্ষা চায়। মাইয়ারা আবিরকে পাওয়ার ভিক্ষা চায়। মাইয়ার বাপেরা আবিরকে সরানোর ভিক্ষা চায়।আমার এত জনপ্রিয়তা দেখে পাবলিক আমার মতো হওয়ার ভিক্ষা চায়। আর বিহাইন্না তার বউয়ের হাত থেকে বাঁচার ভিক্ষা চায়।দুনিয়াটা এক ভিক্ষার কারখানা বুঝলি।”
বিহান চোখ কুঁচকে বলল,
“ওই হালা কছ! আমি বউয়ের কাছ থাইকা বাচুম ক্যালা! আমিতো হ্যার জালে আরও ফাছবার চাই।”
বলেই হিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারল বিহান।বিপরীতে হিয়ার গরম চোখের চাহুনি পেল।নূর আবারও তাগাদা দিয়ে বলল,
“আরে চলো এখন, মামার বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
আবির ঝট করে এক লাফে নিচে নেমে দাঁড়িয়ে চকিত কন্ঠে বলল,
“মামার বাড়ি! আমরা মামার বাড়ি যাচ্ছি?”
নূর বলল,
“হ্যাঁ মামার বাড়িইতো যাচ্ছি।”
আবির শোকাহত ভঙ্গিতে মেলোড্রামা করে বলল,
“ধোঁকা! ধোঁকা হয়েছে আমার সাথে! এই মাছুম নাদান বাচ্চা ছেলেটার সাথে এভাবে ধোঁকা করতে পারলি তোরা! খামার বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে এখন মামার বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিস! এটাতো সেরকম হয়ে গেল যে,টম ক্রুজ-এর মুভির লোভ দেখিয়ে শেষে অনন্ত জলিলের ছবি দেখাইয়া হার্ট অ্যাটাক দিয়ে দিলি! এত্তবড় ধোঁকা দেওয়ার আগে তোদের কিডনিতে বাঁধল না! কেউ একটু চুরি এনে দে। হাত আছড়ে চুরি ভাঙতে পারলে এই শোক প্রকাশ হতো। আআ…. মাম্মি….. ”
ন্যাকা কান্নার নাটক করতে লাগল আবির। পরপরই বলল,
” বাইদাওয়ে ভাবি,তোমার মামার বাড়ি সুন্দরী বোনের দলবল আছে নাকি! না মানে তাহলে নিজেকে শান্তনা দিতে পারতাম তাই আরকি!”
আদিত্য বিরক্তিকর সুরে বলল,
“আরে নূর খামার বাড়ির কথাই বলছে ইডিয়ট। চল এখন।”
“ও আচ্ছা আগে বলবি তো। হ্যাঁ হ্যাঁ চলো ভাবি মামার বাড়ি যাই।
আয় ছেলেরা আয় ভাবিরা,
মামার বাড়ি যাই।”
সবাই হেঁসে দিয়ে গাড়িতে উঠল। আদিত্য ড্রাইভিং সিটে আর আবির তার পাশের সিটে বসল। নূর, বিহান আর হিয়া পেছনের সিটে বসল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওয়ানা হলো। সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় আর মজা করতে লাগল। আদিত্য একটা চিপসের প্যাকেট বের করে নূরকে দিলো খেতে।বেড়াতে যাওয়ার আনন্দে সকালে খায়ইনি তার এঞ্জেলটা। নূর প্যাকেট খুলে চিপস খাওয়া শুরু করল। বাকিদেরকেউ তার চিপস অফার করল। আবির নিলো কয়েকটা। বিহান না করল, বলল সে খাবে না। তা শুনে আবির দুষ্টুমি করে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ তা খাবি কেন! এখনতো লিপস্টিকই তোর একমাত্র খাবার। ওটা ছাড়া আর কিছু কি মুখে ধরবে!”
আদিত্য পাশ থেকে চোখ গরম করে বলল,
“শাট আপ ইডিয়ট! নূর আছে এখানে তা মাথায় আছে তোর!”
বিহানও বলল,
“থাকবো কেমতে! হালার মাথায়তো খালি অছলিলতায় ভরা। পইচা গেছে গা পুরা।”
হিয়া বেচারি এদিকে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। আবিরটা আসলেই খুব পাঁজি। কিন্তু নূর বুঝতে না পেরে বলল,
“লিপিস্টিক আবার খাওয়া যায় নাকি!”
আবির জবাবে বলল,
“হ্যাঁ যায় ভাবি। শুধু ছেলেরা খেতে পারে।”
“তাই! হিরো, তুমিও খাবে লিপস্টিক? ”
কেশে উঠল আদিত্য। আর বাকিরা হেঁসে গড়াগড়ি। আবির আদিত্যের উদ্দেশ্যে বলল,
“বলোনা হিরো জি তুমি কবে লিপস্টিক খাবে? ভাবি ওয়ান্টস টু নো।”
আদিত্য কটমটে চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবির আবারও হেঁসে দিলো। আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“আবির মজা করছে এঞ্জেল। ওর কথায় কান দিও না।”
“আচ্ছা।”
আবির মিউজিক সিস্টেমে গান প্লে করল। বসে বসেই নাচতে লাগল সবাই।
এভাবে আনন্দ উল্লাসের মাঝেই ওরা খামার বাড়ি এসে পৌঁছাল। গাড়ি থেকে একে একে নামল সবাই। নূরতো চারপাশটা বিস্ময় ভরা নজরে দেখছে শুধু। অনেক বড় এরিয়া জুড়ে নিয়ে এই খামার বাড়িটা। চারপাশে গাছগাছালিতে ভরা এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ এখানে। আদিত্য নূরের কাছে এসে এক হাতে নূরের কাঁধ আলতো করে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বলল,
“পছন্দ হয়েছে তোমার এঞ্জেল? ”
নূর প্রফুল্লিত হাসিমুখে বলল,
“অনেক পছন্দ হয়েছে হিরো। অনেক সুন্দর মামার বাড়ি।”
“আচ্ছা চলো আগে ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর ভালো করে ঘুরে দেখবে।”
“না, আমি এখুনি দেখবো। আমাকে দেখাওনা হিরো।”
“জার্নি করে এসেছ একটু রেস্ট করো। তারপর নাহয় দেখো।”
“না না না আমি এখুনি দেখবো। দেখবো মানে দেখবো।”
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে চলো দেখাচ্ছি।”
আদিত্য নূরকে নিয়ে ঘুরেঘুরে খামার বাড়ি দেখাতে লাগল। সাথে আবির, বিহান আর হিয়াও দেখছে। খামার বাড়ির এক সাইডে শুধু নানা ধরনের পশুপাখি রাখা আছে। এদের দেখাশোনার জন্য লোকও আছে। নূরতো সেসব দেখে ভীষণ খুশি। আনন্দিত মনে এদিক ওদিক আত্মহারা হয়ে ছুটতে লাগল সে।আর পশুপাখি গুলোর সাথে খেলতে লাগল। আদিত্য তার এঞ্জেলের খুশি দেখে তৃপ্তির হাসি হাসছে। খামার বাড়িতে ঘোড়ার আস্তাবলও রয়েছে। তার সামনেই ঘোড়া দৌড়ানোর জন্য বিশাল ঘেরাও করা মাঠও আছে। আদিত্য ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণে কর্মরত কর্মীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করল। জানতে চাইল ঘোড়াসহ সব প্রাণীর যত্ন ঠিকমত হচ্ছে কিনা। কর্মী জানাল সব ঠিক চলছে। আদিত্য ওর পছন্দের ঘোড়াটির কাছে গিয়ে দাঁড়াল। গলায় হাত বুলিয়ে দিলো তার। ঘোড়াটিও অনুগত স্বরুপ মাথা নাড়াল। এটা আদিত্যর সবচেয়ে পছন্দের ঘোড়া। ছোট থেকে তার সাথে বন্ধুত্ব। আদিত্য ঘোরাটির নাম দিয়েছে শমশের। আদিত্য শমশেরের গলা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কেমন আছিস শমশের? তুইতো আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছিস দেখছি।”
আবির পাশ থেকে বলল,
“আরে শমশের ঘোড়াদের আবির হতে চায় বুঝলি! সব ঘোড়িগুলোর সাথে রঙ্গলীলা করবে সে।”
হাসল আদিত্য। বিহান বলল,
“আইজকা শমশেরের সওয়ারী করবি না! অনেক দিন হইলো তো শমশের কে নিয়া সওয়ারী করিস না।”
নূর উৎসুক কন্ঠে বলল,
“আরে বাহ! তুমি ঘোড়ায় চড়ে দৌড়াতে পারো হিরো! আমিও উঠব, আমানেও নেও না!”
“উঠবে তুমি? আচ্ছা এসো।”
আদিত্য নূরের কোমড় ধরে উঁচু করে তাকে ঘোড়ার উপর বসালো। তারপর নিজে নূরের পেছনে উঠে বসল। নূরের দুই পাশ দিয়ে দুই হাত সামনে নিয়ে ঘোড়ার লাগামের দড়ি ধরল। আদিত্যর মাথা নূরের কাঁধে। এভাবেই ঘোড়া দৌড়ানো শুরু করল আদিত্য। প্রথমে একটু আস্তে আস্তে চালাল যাতে নূর ভয় না পায়। নূরের ভীষণ মজা লাগছে। নূর আদিত্যকে বলল আরও জোরে চালাতে। আদিত্য ঘোড়া দৌড়ের স্পিড বাড়াল। জোরে দৌড়াচ্ছে ঘোড়া। নূর আনন্দিত মনে খিলখিল করে হাসছে আর দু হাতে তালি বাজাচ্ছে। নিজেকে এখন রুপকথার রাজকুমারি মনে হচ্ছে আর আদিত্য তার রাজকুমার। আর এই ঘোড়াটা হলো পঙ্খিরাজ ঘোড়া। তার রাজকুমার পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। অনেক আনন্দ লাগছে নূরের। আবির নিজের ডিএসএলআর ক্যামেরা বের করে তাদের এই আনন্দঘন মুহুর্তটা ক্যামেরাবন্দী করে নিলো।
ঘোড়সওয়ারী শেষে সবাই এবার একটু বাসার ভেতর এলো ফ্রেশ হয়ে কিছু হালকা নাস্তা করতে। হিয়া ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসতে নিলেই বিহান তাকে আটকে দিলো। হাত ধরে টান দিয়ে ফেলল নিজের বাহুডোরের কারাগারে। হিয়া চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,
“আরে আরে কি করছ! কেউ চলে আসবেতো।”
“আছলে আছুক গা। আমি আমার বউরে ধরছি পাশের বাড়ির জরিনারে না। হুনো, আমার চুম্মা চাই এহুনি। আগে চুম্মা দাও তাইলে যাইতে দিমু। ” কি বলছ! পাগল হয়ে গেছ তুমি! এটা কি আমাদের রুম পেয়েছ! যেকোনো সময় যে কেউ চলে আসতে পারে, প্লিজ ছাড়ো।”
“না ছাড়ুম না। আগে চুম্মা চাই আমার। নাইলে ছাড়োন নাই।”
“দেখ পাগলামী করোনা প্লিজ! ছেড়ে দাও।”
“উহুম,আগে চুম্মা।”
হিয়া পড়ে গেল মুসিবতে। এদিকে কে কখন এসে পড়ে তার ঠিক নেই।বিহানের কাছ থেকে ছাড়া পেতে হিয়া দুষ্টুমি করে বিহানের পায়ের উপর নিজের পা দিয়ে গুতা মারল। বিহান একটু ব্যাথা পেয়ে হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে নিজের পা ঝাঁকাতে লাগল। সেই সুযোগে হিয়া দৌড়ে পালাতে চাইলো। তা দেখে বিহানও দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে হিয়ার হাত ধরে ফেলল। তাকে দেয়ালের সাথে আঁটকে ধরে বলল,
“এখন পালাও দেখি কিভাবে পারো।চুম্মাতো আমি লইয়াই ছাড়মু।”
বিহান একহাতে হিয়ার দুই হাত পেছনে মুচড়ে চেপে ধরল। আর এক হাত থুতনির নিচে গলায় ধরে তার মুখটা উঁচু করে ধরল। অতঃপর তার কার্য সিদ্ধি করার উদ্দেশ্যে হিয়ার ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগল। ঠিক তখনই নূর এসে পড়ল সেখানে। সে হিয়াকে ডাকতেই এসেছিল। দরজার কাছে এসে তাদের ওই অবস্থান দেখে অবুঝ নূর অন্য কিছুই ভেবে নেয়। সে ভাবে বিহান হিয়ার গলাটিপে ধরে মারতে চাইছে তাকে। আর সেই ভাবনা অনুযায়ী নূর আতঙ্কিত স্বরে চিল্লিয়ে উঠে বলল,
“বাঁচাও….. কে কোথায় আছ বাঁচাও। দেবর মেরে ফেলল জা’কে।”
নূরের চিল্লানিতে বেচারা বিহান থতমত খেয়ে দ্রুত ছেড়ে দিলো হিয়াকে। অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল দুজনেই। নূরের চিল্লানিতে আদিত্য আর আবিরও দৌড়ে এসে হাজির হলো সেখানে। আদিত্য নূরকে ধরে চিন্তিত স্বরে বলল,
“কি হয়েছে এঞ্জেল! চিল্লাচ্ছ কেন?”
নূর জানাল,
“আরে বিহান দেবর জা’কে গলা টিপে মেরে ফেলছে। ওকে বাঁচাও তোমরা।”
এবার আদিত্যও থতমত খেয়ে গেল। বিহানের দিকে তাকাতেই বেচারা বিহান আরও যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। হিয়াতো পারছেনা মাটি ভাগ করে তাতে ঢুকে যেতে। আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে’ও অস্বস্তিতে পড়ে গেল ভীষণ। তবে আবিরের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলল। ঘটনার সত্যতা বুঝতে পেরে তা আরও ঘাঁটিয়ে নাড়িভুড়ি বের করার দুষ্টু বুদ্ধিতে লেগে পড়ল সে। আতঙ্কিত হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“কি বলো ভাবি! গলা টিপে মেরে ফেলছিল! ছি…. ছিছি ছিহ! তুই এমনটা করতে পারলি বিহান! মানলাম বউয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিস। তাই বলে খু,ন করবি! এতটা নিচে নামতে পারলি তুই! আমারতো ভাবতেও অবাক লাগছে যে তোর মতো জল্লাদ আমার বন্ধু। লজ্জায় আমার নাক,চোখ, কান সব কাটা যাচ্ছে। আমার বন্ধু হয়ে তুই এমনটা করলি! দুঃখে কলিজায় ডায়রিয়া হয়ে যাচ্ছে আমার। মানুষ যখন জানবে তখন আমার হাতে ছুরি দিয়ে কেটে লিখে দিবে ” আমি খু,নির বন্ধু।” এই অভিশাপ নিয়ে কিভাবে বাঁচব আমি! মন চাচ্ছে উরফি জাভেদের ছবি দেখে সু,ই,সা,ইড করে ফেলি। এ জীবন রেখে আর কি লাভ!”
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুই কি একটু অফ যাবি! আর নূর চলো এখান থেকে। দেবর মারছে না। ওরা এমনি খেলা করছে।”
আবিরও পাশ থেকে বলল,
“হ্যাঁ ভাবি খেলা হচ্ছে খেলা।”
বলেই দুষ্টু হেঁসে সরে গেল আবির। আর আদিত্যও কোনোরকমে বুঝিয়ে নিয়ে গেল নূরকে। ওরা যেতেই হিয়া কটমটে চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হয়েছে এখন! চুম্মা নেও এখন। অসভ্য লোক!”
বলেই রাগ দেখিয়ে চলে গেল হিয়া। বেচারা বিহান দুকূলই হারাল। চুম্মাতো পেলই না, তারউপর আবার বউ ক্ষেপে গেল। নাজানি এখন ওর কি হাল করবে!”
বাইরে এসে সবাই আনন্দ ফুর্তি করছে। নূর চঞ্চল হয়ে ছুটছে এদিক ওদিক আর আদিত্য তার পিছু ছুটছে এটা দেখতে যে কোথাও চোট না পায়। অনেক বলে কয়ে তাকে কিছু খাওয়ানোর জন্য বসালো শেষমেশ। নিজের হাতে নুডলস মুখে তুলে দিলো নূরের। অন্যপাশে বেচারা বিহান তার রেগে থাকা বউকে মানানোর চেষ্টায় লেগে আছে। আর আবির সুইমিং পুলের চেয়ারে বসে সব কিছু ক্যামেরায় ভিডিও করছে।কিছুক্ষণ পর ওর পাশে এসে বসলো আদিত্য। আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“শুধু কি বন্ধুদের আনন্দই দেখে যাবি! নিজে কি আমাদের মতো এমন খুশি চাস না? দেখ আমি জানি তোর জীবন থেকে অনেক অভিযোগ আছে। তাই হয়তো সম্পর্ক গড়া থেকে সবসময় পালিয়ে বেড়াস। তবে ফেরারি পাখিদেরও একসময় কুলায় ফিরতে হয়। তাদেরও একটা স্থায়িত্ব দরকার হয়। তাই সময় থাকতে নিজের অনুভূতিটা বোঝ। নাহলে ভালোবাসা হারালে অনেক কষ্ট পাবি তুই। ভেবে দেখিস আমার কথা।”
কথাগুলো বলেই উঠে গেল আবার আদিত্য। আবির স্থির হলো কেমন। চোখের পর্দায় ভেসেস উঠল আহানার মুখখানা।
চলবে……