মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব-২২+২৩

0
206

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-২২
®মেহরুমা নূর

★দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে আদিত্য গিয়েছিল একটু খামার বাড়ির সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা তদারকি করতে। বাকিরা তখন একটু রেস্ট করছিল তাই সে একাই গিয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসে বাসার ভেতর প্রবেশ করতেই থতমত খেয়ে গেল সে। বাইরে যখন গিয়েছিল তখনতো সবাই যার যার মতো রেস্ট করছিল কিন্তু এখনতো প্রেক্ষাপটই ভিন্ন মনে হচ্ছে। লিভিং রুমে সবাই মিলে কি যেন করছে। লিভিং রুমের মাঝামাঝি চৌকোনা আকারের বিশাল একটা ফ্রেমের মতো করে তার ভেতর সামনে টেবিল রেখে তার পাশেই বসে আছে নূর আর আবির।দুজনের চোখেই মোটা ফ্রেমের চশমা। দেখে মনে হচ্ছে টিভিতে সংবাদ প্রচার করা সাংবাদিকদ দুজন।বিহান খানিকটা দূরে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আর হিয়া সোফায় বসে। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। নূরের কাছে যাওয়ার জন্য ফ্রেমের কাছাকাছি যেতেই আবির হকচকিয়ে উঠে বলল,
“আরে আরে ভাই কোথায় ঢুকে পড়ছেন? দেখছেন না খবর চলছে!এখন কি টিভির ভেতর ঢুকে পড়বেন!”
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
“হোয়াট! কিসের টিভি! কিসের খবর!”
নূর তখন আদিত্যর উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“আরে হিরো আমরা এখন খবর খবর খেলছি। তুমিও দেখ হ্যাঁ! ”
আদিত্য বুঝল এরা আবার নতুন ড্রামা শুরু করেছে। সবগুলো পাগল একসাথে হলে যা হয় আরকি।এই আবিরতো আরেক মহা পাগল। নূরের সাথে যেন এরাও সব বাচ্চা হয়ে গেছে। আদিত্য মাথা নেড়ে হেসে গিয়ে সামনের সোফায় বসল। হিয়া বলল,
“তাহলে শুরু করা যাক।”
বলেই হাতের রিমোট টা নূরদের দিকে ধরে টিপ দিলো। সাথে সাথেই নূর সাংবাদিকদের মতো ভঙ্গি করে বলে উঠল,
“আসসালামু আলাইকুম গাধী কর্কশ(সুধী দর্শক)। আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ দুপুর সাড়ে দেড়টার খবরে। আপনাদের সাথে আছি আমি চুন্নি সাহা।”
নূরের পরপরই আবিরও একই ভঙ্গিতে বলল,
“আর আমি দ্য গ্রেট, লাখো মেয়ের কোলবালিশ হট এন্ড হ্যাপেনিং আবির। আমাদের নিউজ স্পনসর করেছেন ফাটা কেষ্ট লুঙ্গি, হারপিক জুস, বিএফেল প্লাস্টিকের বদনা, পুটুর পুটুর উকুননাশক শ্যাম্পু, চটর চটর স্যান্ডেল, ধপর ধপর ডিটারজেন্ট পাউডার,খচর খচর চুলকানি পাউডার, আর কাইল্লানী স্নো।”
এবার নূর বলল,
“তো প্রথমেই শুনিয়ে দেই আজকের শিরোনাম গুলো। শিরোনাম ১.অনন্ত জলিলের ছবি দেখিয়ে করা হলো দুর্ধর্ষ, মর্মান্তিক হত্যাকান্ড।
২.জায়েদ খানের রুপের টানে এবার মঙ্গলগ্রহ, নেপচুন, প্লুটোসহ সকল গ্রহের ফিমেল এলিয়েনরা দিলো হানা।
৩.নারী সমিতির সম্মেলনে এসে কাদের কাক্কু বলল,” খেলা হবে!”।”
৪.উরফি জাভেদের লেটেস্ট পোশাক দেখে জাতির অ্যাটাকের হার্ট…থুক্কু, হার্টের অ্যাটাক।”
৫.সাকিব খান হাজার খানেক সন্তানের বাপ হয়ে নিজেকে জাতির পিতা ঘোষণার জোর দাবি জানাল।
এবার বিস্তারিত। পাগলাপুর শহরে এক ব্যাক্তিকে অনন্ত জলিলের মুভি দেখিয়ে খুবই ভয়ংকর, নির্মমভাবে খু,ন করা হয়েছে।হ,ত্যাকারীর নাম খবিশ।জানা গেছে মৃ,ত ব্যাক্তি খবিশের প্রেমিকা ছকিনাকে বিয়ে করেছিল।তার প্রতিশোধ নিতেই খবিশ তাকে এমন মর্মান্তিক মৃ,ত্যু দিয়েছে। এত নির্মমভাবে খু,ন করা হয়েছে যা আগে কখনো কোনো ইতিহাসে ঘটেনি। একটা বদ্ধ ঘরে আঁটকে রেখে একটানা চব্বিশ ঘণ্টা অনন্ত জলিলের মুভি দেখিয়ে দেখিয়ে নির্দয়ের মতো টর্চার করা হয়েছে তাকে।এত নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ প্রাণ হারান সে। এই মুহুর্তে সেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন আমাদের রিপোর্টার
আমরা এখন সরাসরি চলে যাচ্ছি তার কাছে। হ্যাঁ তো রিপোর্টার শুনতে পাচ্ছেন আপনি? খবর বলুন।এখন কি দেখতে পাচ্ছেন আপনি?”
নূরের বলার পরপরই ওদের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়ান বিহান রিপোর্টার হয়ে হাতে ধরে রাখা গ্লাসটা মুখের সামনে মাইকের মতো ধরে বলল,
“জি চুন্নি সাহা শুনতে পাচ্ছি আমি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি ঘটনাস্থলে। আমি দেখতে পাচ্ছি এখানে লা,শ ভদ্রলোকটি জিব বের করে পড়ে আছে। বেচারার সাথে ভয়ানক মর্মান্তিক টর্চার করা হয়েছে। আমরা এখন তার অনুভূতি জানবো।”
বিহান টেবিলের উপর লাশ সেজে শুয়ে থাকা আবিরের উদ্দেশ্যে বলল,
“এইযে মিঃ লা,শ, এভাবে মর্মান্তিক মৃ,ত্যু পাওয়ায় আপনার অনুভূতি কেমন? কেমন অনুভব করছেন আপনি? আপনার মনোভাব বলুন।”
লা,শ সেজে থাকা আবির কিছু বলছে না। এবার বিহান হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে লা,শের চোখের পাতা টেনে ধরে বলল,
“এইযে লা,শ সাহেব শুনতে পাচ্ছেন? আপনার কেমন লাগছে এখন?”
এই পর্যায়ে লা,শ উঠে বসে বলল,
“জি আমার গরম লাগছে। এসিটা চালু করে দেন না প্লিজ! পায়ের কাছে কেমন চুলকানির অনুভূতি হচ্ছে আর পেটে গুরগরের অনুভূতিও হচ্ছে। কাল রাতের খাবার হজম হয়নি বুঝি।”
লা,শের কথা শোনার পর বিহান আবারও গ্লাস মাইকটা মুখের সামনে ধরে বলল,
“তো যেমনটা শুনতে পাচ্ছিলেন আপনারা,লা,শের গরম লাগছে,পায়ে চুলকানি আর পেটে গুরগুর হচ্ছে। তো এই ছিলো এখনকার মতো এখানকার খবর,চুন্নি সাহা।”

নূর বলল,
“ধন্যবাদ আপনাকে।”
এবার আবির পরের নিউজ বলল,
“পৃথিবীর সেরা রুপসী, রুপের সাগর, মহাসাগর,মহাকাশ, সৌন্দর্যের রসে ডুবানো জায়েদ খানের রুপের আকর্ষণ এবার পৃথিবী ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল সকল গ্রহে। এবার তার রুপের টানে মঙ্গলগ্রহ থেকে চলে এলো তার ভক্তেরা। ফিমেল এলিয়েনদের ভীড়ে এবার পৃথিবী তোলপাড়। তাদের শুধু একটাই দাবি। তাদের এই রুপে চুইয়ে পড়া জায়েদ খানকে চাই। তাকে নিতে এবার এলিয়েনদের মাঝে দ্বন্দ্ব। তাদের দ্বন্দ্বে পৃথিবীতে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। নাজানি আমাদের এবার কি হবে! ভাই জায়েদ খান, তোরে কে কইছিলো এত্তো সুন্দর হইতে। একটু কম হইলেও তো পারতি!
এবার আসি পরবর্তী খবরে,
“কাদের কাক্কু এবার খেলল আসল খেলা। হ্যাঁ, এবার সে নারী সমিতির সম্মেলনে গিয়ে হয়ে গেল ভায়োলেন্ট। ললনাদের ভীড়ে দিশেহারা হয়ে ডিপজলের মতো চোখ বড় বড় করে বলল,” খেলা হবে”! এরপর নারী সমিতি তাকে খেলা দেখালো। রাউন্ড রাউন্ড খেলা শেষে কাদের কাক্কু সোজা আইসিইউতে। সেখানে সে বলছে,”খেলা হয়ে গেছে!
এবার নূর বলল,
“খবরের এই পর্যায়ে নিবো একটা ছোট্ট বিরতি। আপনারা সাথেই থাকুন।”

বিরতি শুরু হতেই খবরের পরিবর্তে এবার স্পনসরকৃত প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন শুরু হলো সামনে। যেখানে আবির গান গাইতে গাইতে বলল,
“তৈ তৈ তৈ তৈ….আমার বদনা খানা খই?.. তৈ তৈ তৈ তৈ…আমার বদনা খানা খই?… হাগু আইছে আমারতো… বদনা পামু খই?….”
এই পর্যায়ে বিহান মাথায় ওড়না পেচিয়ে মেয়েলি ভঙ্গিতে এগিয়ে আসলো। হাতে একটা ভাঙা প্লাস্টিকের বদনা নিয়ে এগিয়ে এসে আবিরের দিকে বদনাটা এগিয়ে দিয়ে ঢঙ্গি ভঙ্গিতে বলল,
“ওগো এইযে তোমার ফিরিও(প্রিয়) বিএফেল বদনা। তোমার দাদার দাদা,তার দাদা,তার দাদার আমলের ঐতিহ্যবাহী বিএফেল বদনা। যে একবার এটা দিয়ে হাগু পরিস্কার করে তার জীবনেও ডায়রিয়া হয়না। তাই ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পেতে আজই কিনুন বিএফেল প্লাস্টিকের বদনা।”

এরপর একটু পর অন্য ভাবে এলো ওরা। আবির,বিহান লুঙ্গি পড়ে এগিয়ে এলো। লুঙ্গি পুরোটাই একটু পরপর লম্বালম্বি ছেড়া। দুজনের চোখে কালো চশমা। যার এক চোখের কাচ ভাঙা। তারা দুজন সামনে এসে দুজন মিলে লুঙ্গি ডান্স শুরু করলো। ডান্স শেষে দুই হাত মাথা উপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে রেখে আবাল মার্কা এটিটিউড দেখিয়ে বলল,
“সাত পুরুষের লুঙ্গি, ফাটা কেষ্ট লুঙ্গি।”

এরপর আবার অন্যভাবে এলো। আবির মুখে কালি মাখিয়ে নিয়ে এলো। ফ্যাশন শো এর মতো র‍্যাম্প ওয়াক করে কোমড়ে হাত রেখে সামনে এগিয়ে এলো। তাকে দেখে বিহান নায়কদের মতো বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
“সুন্দরীতমা! একি রুপ দেখালে তুমি! আমিতো দিওয়ানা হয়ে গেলাম! তোমার রুপের রহস্য কি!”
আবির তখন হাতে একটা প্যাকেট দেখিয়ে বলল,
“আমার এই অপরুপ রুপের রহস্য হলো এই কাইল্লানি স্নো। আপনারাও যদি এমন রুপ পেতে চান ব্যবহার করুন কাইল্লানি স্নো।”

এবার আবার খবরে ফিরল তারা। নূর বলল,
“বিরতির পর আপনাদের আবারও স্বাগতম খবরে। এবার পরবর্তী খবর।”
আবির বলল,
“উরফি জাভেদের নতুন পোশাক দেখে জাতির হার্ট অ্যাটাক। জি হ্যাঁ, আজ উরফি জাভেদ এমন পোশাকে সামনে এলো যা দেখে সাংবাদিকদের ক্যামেরার স্কিনই ফটাস করে ফেটে। এতটাই শক ছিলো তার নতুন লুক। কারণ এই প্রথম সে পড়েছে ফুল পোশাক। পুরো শরীর ঢাকা পোশাকে দেখা গেছে তাকে। আর এই দুর্ধর্ষ আবতার দেখে জাতি সইতে না পেরে।ক্যামেরার সাথে মাথা ঠুকে জান দিয়ে দিয়েছে। কিছু লোকতো তাকে চিনতে না পেরে বাসায় কাজের বুয়া রাখারও অফার দিয়েছে। এই শক সইতে না পেরে রাস্তার কু,কু,র গুলোও কারেন্টের খাম্বা ভিজিয়ে দিয়েছে। পাগল গুলো হঠাৎ করে মানুষ কামড়ানো শুরু করে দিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার পুলিশ বাহিনী,সেনা বাহিনী,নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী,বাস বাহিনী,রিকশা বাহিনী, ছাগল বাহিনী,গরু বাহীনি সব নিয়োগ করে দিয়েছে। তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এজন্য বাহিরের দেশ গুলোর কাছে সহযোগিতা চাচ্ছে সরকার।
এবার পরবর্তী সংবাদ। শাকিব খান হলেন হাজার সন্তানের বাবা। দেশ ছাড়িয়ে তার এই সফলতা ছড়িয়ে আছে সব দেশেই। সব দেশে তার একাউন্ট খোলা হয়ে গেছে। তার এই কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সকল কোনায় কোনায়। শোনা গেছে আফ্রিকার জঙ্গলের বনমানুষ জনগোষ্ঠীতেও তার সন্তান আছে। এবার সে পৃথিবীর যাত্রা শেষ করে অন্যান্য গ্রহেও নিজের বংশধর দিতে চায়। তাই সে মহাকাশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই সফলতায় এবার সে নিজেকে জাতির পিতা ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন। এতগুলো সন্তানের বাপ হওয়াতে এটা তার প্রাপ্য বলে তিনি দাবি করেছেন।”

এবার নূর বলল,
“খেলার খবর। ছকিনাগঞ্জে হয়ে গেল এক আন্তর্জাতিক কুতকুত বিশ্বকাপ। পৃথিবীর সাতটি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল এই কুতকুত বিশ্বকাপে। তিনমাস ব্যাপী এই বিশ্বকাপ শেষে ফাইনাল শিরোপা তুলে নিলেন আমাদের দেশের নারীরা। অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিততে গিয়ে তাদের মেহনত করতে হয়েছে। কুতকুত ম্যাচ খেলা এত সহজ না। অনেক কষ্ট করে দেশের জন্য তারা এই শিরোপা জয় করে এনেছেন। তাদের এই বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ দেশের এই মহামূল্যবান খ্যাতিতে তিনি গর্ব প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও আবাহনী আর মোহামেডান দলের মাঝে হয়ে গেল এক ঐতিহাসিক লুডু খেলার ম্যাচ। এতে মোহামেডানকে এক ছক্কা আর পুটে হারিয়ে দিলো আবাহনী। আর এসব খেলা দেখে কাদের কাক্কু বললেন “হোয়াট আ খেলা!”
তো এই ছিলো আজকের মতো।আপনাদের বিদায় নিচ্ছি আমি চুন্নি সাহা।”
আবির বলল,
“পরবর্তী খবর জানতে চোখ রাখুন মফিসটিভিতে। আমাদের খবর ফেসবুক, ইউটিউবেও দেখতে পাবেন। দেখার পর অবশ্যই লাইক করবেন, কমেন্ট করবেন, শেয়ার করবেন। এখন আসি। উম্মাহওমে ইয়াদ রাখনা।”

অতঃপর তারা তাদের খবর বার্তা শেষ করল।

চলবে….

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-২৩
®মেহরুমা নূর

★নূর সুইমিং পুলে নামার বায়না ধরেছে। তখন আদিত্য, আবির আর বিহানকে পুলে নামতে দেখে তারও উৎসুকতা জাগল। এখন সেও নামবে বলে জেদ ধরেছে। তাই আদিত্যও তার বায়না রাখতে তাকে নিয়ে এলো পুলের কাছে। আর আদিত্য নূরকে প্রাইভেসি দিতে বাকিরা সবাই চলে গেল তখন ভেতরে। নূর একটা টাইস আর টিশার্ট পড়েছে। আর আদিত্য খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়া। নূরকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে নামল সে পানিতে। আদিত্য কোমড় সমান পানিতে নামতেই পানির শীতলতা অনুভব হতেই নূর ভীত মুখে আদিত্যর গলা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এটে গেল তার সাথে। তা দেখে আদিত্য হেঁসে দিয়ে বলল,
“কি হলো এঞ্জেল! খুবতো পানিতে নামার জন্য লাফাচ্ছিলে। এখুনি ভয় পেয়ে গেলে!”
নূর জোরপূর্বক সাহস দেখানোর চেষ্টা করে বলল,
“না না, ভয় কেথায় পেলাম! আমারতো অনেক সাহস।”
“আচ্ছা তাই! ঠিক আছে তাহলে পানিতে ফেলে দেই কেমন!”
বলেই নূরকে পানিতে ফেলে দিতে নিলেই নূর হকচকিয়ে আদিত্যের গলা আরও শক্ত করে জাপ্টে ধরে গুটিশুটি হয়ে বলল,
“না না হিরো, ফেলোনা আমাকে। পানিতে কুমির থাকে। আমাকে খেয়ে ফেলবে তো!”
শরীর কাঁপিয়ে হাসল আদিত্য। সুইমিং পুলের পানিতে নাকি কুমির! তার দুষ্টু পরিটা নাজানি কত কি ইমাজিন করে। আদিত্য নূরকে নিয়ে ধীরে ধীরে বুক সমান পানিতে নামল। নূরও তখন পানির শীতলতা পেয়ে শিরশিরানিপূর্ণ হাসল। উৎসুক মনে কোলে থেকেই হাত দিয়ে পুলের পানিতে হাত নাড়াতে লাগল। মজা পাচ্ছে সে। আদিত্য এবার নূরকে আস্তে করে পানিতে দাঁড় করিয়ে দিলো। তবে পুরোপুরি ছাড়লনা। দুই হাতে কোমড় ধরে রাখল তার। আর নূর খেলতে লাগল পানিতে। পানি হাত নিয়ে উপর দিকে ছিটিয়ে দিচ্ছে আর প্রফুল্লচিত্তে হাসছে।আদিত্য শুধু দেখছে তার এঞ্জেলের খুশিময় মুখটা। যা তাকে হাজার ধরে জনম নূরকে ভালোবাসার ইন্ধন দেয়। নূর এবার পানি হাতে নিয়ে আদিত্যর দিকে ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেঁসে উঠল। বিপরীতে আদিত্যও দুষ্টুমিতে মেতে উঠল নূরের সাথে। দুজন পানি ছিটিয়ে খেলতে লাগল একজন আরেকজনের সাথে।আর হাসির রিনিঝিনি সুর উঠল নূরের কন্ঠে একসময় নূর আদিত্যর থেকে একটু সরে গিয়ে পানির মাঝে দু হাত দুই দিকে ছড়িয়ে খেলতে লাগল। খেলতে খেলতে খানিক পর পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে আদিত্যকে ডাকতে নিলে দেখল আদিত্য নেই। নূর খেলা বন্ধ করে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে ডাকল,
“হিরো!..হিরো….”
কিন্তু আদিত্যকে দেখা গেলনা। আর না তার সারাশব্দ শোনা গেল। নূর কিছুটা ঘাবড়ে গেল। সে পানির মাঝে এদিক ওদিক হেঁটে ডাকতে লাগল আদিত্যকে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না সে।এবার নূর ভীষণ ঘাবড়ে গেল। ভয় হানা দিলো অবুঝ নূরের মনে। সে ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে ডাকল,
“হিরো…এই হিরো, কোথায় তুমি? আসোনা! নূর ভয় পাচ্ছে তো!”
তাও আদিত্যর খোঁজ নেই। নূরের এবার কান্না চলে এলো। সে কাঁদো কাঁদো গলায় এদিক ওদিক আদিত্যকে খুঁজতে খুঁজতে বলতে লাগল,
“হিরো…আসোনা! হিরো…”
ডাকতে ডাকতে ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদতে লাগল নূর। ঠিক তখনই পানির নিচ থেকে ঝপ করে বেড়িয়ে এসে নূরের মুখের সামনে “ভমম” করে উঠল আদিত্য। পানির মাঝে লুকিয়ে ছিলো সে৷ ভেবেছিল নূরের সাথে একটু মজা করবে ভেবে।কিন্তু নূরকে কাঁদতে দেখে নিজেই বোকা হয়ে গেল আদিত্য। সে দ্রুত দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“হেই এঞ্জেল! কাঁদছ কেন সোনা?”
নূর অশ্রু চোখে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“তুমি কোথায় গিয়েছিলে হিরো! নূর কত ভয় পেয়ে গিয়েছিল!”
আদিত্য অপরাধী সুরে বলল,
“আমিতো মজা করছিলাম এঞ্জেল। তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি করছিলাম। আম সো সরি। এই দেখ এঞ্জেল আমি এখানেই আছি।”
নূরের ভীষণ রাগ আর অভিমান হলো আদিত্যর উপর। নূর আদিত্যর বুকে দুই হাতে এলোপাতাড়ি চাপড় মারতে মারতে ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
“পঁচা তুমি, পঁচা হিরো। জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি! তুমি ভালো না। অনেক খারাপ।নূর কাট্টি তোমার সাথে।কথা বলব না আর।”
বলা শেষ করে নূর উল্টো ঘুরে চলে যেতে চাইল। আদিত্য দ্রুত তাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে আদুরে গলায় বলল,
“সরি সরি সরি, সরি সোনা। এমন করো না প্লিজ। আর এমন ভুল হবে না আর। এই দেখ কান ধরছি। তোমার হিরোর সাথে কাট্টি হইওনা প্লিজ। ”
নূর শুনল না সেসব। সে নাক টেনে ফোঁপাতে ফোপাঁতে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলল,
“ছাড়ো আমাকে। পঁচা তুমি। নূর কাট্টি তোমার সাথে। এখন নূরও তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে। অনেক দূরে। তখন বুঝো মজা!”
হঠাৎ যেন বুকটার মাঝে তীব্র আতঙ্কে আৎকে উঠল আদিত্যর। সে ঝট করে নূরকে ঘুরিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে জাপ্টে ধরল নিজের বক্ষস্থলে। এত জোরে জড়িয়ে ধরল যে হৃদপিণ্ডের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার প্রয়াস যেন। তারপর বলল,
“এমন কথা ভুলেও মুখে আনিস না পাখি। তোকে হারালে এই আদিত্যর অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে।আম সরিতো সোনা! আই প্রমিজ আর কখনো আমার এঞ্জেলের সাথে এমন মজা করবো না। তাও আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা কখনো বলিস না। এই দেহে তুইতো একমাত্র প্রাণের সঞ্চালক। তুই ছাড়া এই আদিত্য প্রানহীন মৃ,ত লা,শ।”
নূরের মুখটা সামনে ধরে কপালে চুমু দিলো পরম আদরে। তারপর নূরকে পাঁজা কোলে নিয়ে পানির উপর ভাসিয়ে ধরে গোলগোল ঘুরতে লাগল। রাগ, অভিমান ভুলে নূর আবারও আনন্দে মেতে উঠল তার হিরোর সাথে। আদিত্য নূরকে পিঠে নিয়ে পুলের মাঝে সাতার কাটল। আরও অনেক আনন্দে মাতল তারা দুজন।
___

রাতের বেলা বাইরে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হলো। সুইমিংপুলের সাইডে ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিহান আর হিয়া মিলে মাংস কাটাকুটি করছে।বেচারা বিহান এখনো তার ক্ষেপে থাকা বউকে নানা অযুহাতে মানানোর চেষ্টা করছে। মাংস কাটার বাহানায় তার বউয়ের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু বউ তার তাতে পাত্তাই দিচ্ছে না। বিহানের হাল বেহাল। বউয়ের সাথে একটু রোমাঞ্চ করার সুযোগও হচ্ছে না তার। আবির হেলানো চেয়ারে বসে গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলছে। পড়নে তার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর হাতা কাটা টিশার্ট। সামনের জলন্ত আগুনের দিকে একাগ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গিটার বাজাচ্ছে সে। যেন কোনো গভীর ভাবনার অতলে ডুবে আছে সে। এই জলন্ত আগুনের মতো কিছু যেন তার মাঝেও পুড়ছে। যে দহনে জ্বলছে সে নির্মম। একটুখানি শান্তি তার কাম্য। বাহারি দুনিয়ার সামনে নিজেকে লুকাতে লুকাতে ক্লান্ত সে। একটুখানি প্রশান্তি কি সে পেতে পারে না! আগুনের ওই শিখার মাঝেই যেন তার জবাব ভেসে উঠল। যার প্রতিচ্ছবি আহানার স্বরুপ। আবির স্মিথ হেঁসে তাকিয়ে রইল সে পানে। সেভাবে তাকিয়ে থেকেই গাইতে লাগল,
♬ সারা রাত জেগে জেগে
♬ কত কথাই আমি ভাবি
♬ পাপড়ি কেন বোঝে না
♬ তাই ঘুম আসে না

♬ তুমি আমি কেন দূরে দূরে
♬ উড়ে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে
♬ মন কি যে চায়
♬ কাদবে শুধু বেদনায়
♬ পাপড়ি কেন বোঝে না
♬ তাই ঘুম আসে না

এরইমাঝে আদিত্য নূরকে নিয়ে বাইরে এলো ওদের কাছে। নূরকে পিংক কালারের একটা লং ফ্লোর টাচ গাউনে সাজিয়েছে আদিত্য। খুশিমন হেলেদুলে সবার সামনে এলো। সবাইকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের ড্রেস দেখিয়ে বলল,
“দেখ দেখ হিরো আমার জন্য নতুন জামা এনেছে। কেমন লাগছে আমাকে? সুন্দর না!”
হিয়া বলল,
“অনেক সুন্দর লাগছে ভাবি। একদম পুতুলের মতো। ”
বিহানও বলল,
“হ্যাঁ ভাবি অনেক সুন্দর লাগছে আপনাকে।”
আবির বলে উঠল,
“ওয়াহ! ভাবি কি লাগছে তোমাকে। এত সুন্দর তোমাকে দেখলে বেচারা চাঁদটাও জ্বলে পুড়ে সূর্য হয়ে যাবে।”
নূর প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে আহ্লাদী হাসলো। আবির নেকা সুরে বলল,
“দেখছস বিহান। আদি ভাবির জন্য ড্রেস নিয়ে আসলো। অথচ আমাদের জন্য একটা জাইঙ্গা পর্যন্ত আনলোনা। আমগোতো কোনো দামই নাইকারে। উকুনের ডিম সমান মূল্যও নাই। আরে আর কিছু না হোক পাঁচ টাকার একটা করে ললিপপই আনতি। এই দুঃখীয়ারি, অনাহারী প্রাণী তাতেই নাহয় খুশী হয়ে যেত। আজ খালি মাইয়া মানুষ না বইলা এইভাবে অবহেলা করতে পারলি! দুঃখে আমার মগজে এপেন্ডিসাইট হইয়া গেল।”
বিহান বলল,
“দুঃখে তোর কত কিছুই হইয়া যায়। কহন দেখুম দুঃখে পোয়াতি হইয়া গেছস গা।”
আবির বলল,
“তুই হালা ছাগলের ছাগলই রইলি। এক্কেরে রাম পাঠা। ভাবি তোর সাথে আছে কেমনে বুঝিনা! আরে মানুষ কখনো দুঃখে পোয়াতি হয় নাকি! পোয়াতি হয়তো সুখে।”
হাসলো সবাই আবিরের কথায়। কিন্তু বেচারি নূর কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“পোয়াতি! পোয়াতি আবার কি? কোনো খাওয়ার জিনিস বুঝি! আমিও খাবো তাহলে। আমাকে পোয়াতি বানিয়ে দাও।”
আদিত্য বেচারার কাশি উঠে গেল। সবার সামনে বেচারা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। আবির এই সুযোগে দুষ্টুমি করে বলল,
“আরে কেন দিবে না! অবশ্যই বানিয়ে দিবে। তোমাকে একমাত্র আদিই পোয়াতি বানিয়ে দিতে পারবে। তুমি আদিকে ধরো ভাবি। সেই পারবে তোমার চাওয়া পূরণ করতে। আর কেউ না। আজতো আদিকে তোমার দাবি মানতেই হবে।”
আবিরের কথা শুনে অবুঝ নূর সত্যি সত্যিই আদিত্যর কাছে বায়না ধরে বলল,
“হিরো আমাকে পোয়াতি বানিয়ে দাও। আমি পোয়াতি খাবো।”
আদিত্য বেচারার ইজ্জত পানচার। কি বলে এই মেয়ে! আর এই আবিরটাও আরেক স,য়,তা,ন। কিসব শিখিয়ে দিয়েছে। আদিত্য কোনরকমে নূরকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল,
“এঞ্জেল এসব বলতে নেই। চলো তোমাকে বারবিকিউ বানিয়ে খাওয়াচ্ছি। হিরো অনেক মজাদার বারবিকিউ বানাবে দেইখো।”
নূর জেদ ধরে বলল,
“না না না,আমি বারবিকিউ খাবোনা। আমি পোয়াতি খাবো। পোয়াতি বানিয়ে দাও আমাকে এখুনি। এখুনি দাও।”
আদিত্য পড়ে গেল মহা মুশকিলে। বাকিরা মুখ টিপে হাসছে। আবির বলল,
“হ্যাঁরে আদি,ভাবি এত করে যখন বলছে তখন পোয়াতি বানিয়ে দে না! এত কিপ্টামি করস ক্যা! একটাইতো বউ তোর। আমি হলেতো প্রথম দিনই পোয়াতি বানিয়ে দিতাম।তাইনারে বিহান!”
আবির বিহানের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে তার দুষ্টুমিতে সায় দিতে বলল।বিহানও তাই তালে তাল মিলিয়ে বলল,
“হ হাঁচাইতো কইতাচে আবির। এমন করস ক্যালা! আমিতো আমার বউরে পোয়াতি বানানোর কাজ শুরু কইরা দিছি।আর তুই কিপ্টামি করস!”
বিহানের কথায় হিয়া চোখ গরম করে তাকালো তার দিকে। আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে ওদের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমি কিপ্টামি করি তাইনা! দাঁড়া আমি আমার উদারতা দেখাচ্ছি তোদের আয়। অনেক বেশি বার বেড়ে গেছে তোদের।”
বলেই আদিত্য শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে তেড়ে যেতে লাগল ওদের দিকে। তা দেখে আবির আর বিহান নিজেদের বাঁচাতে দৌড়াল। আদিত্য তাদের পিছে ছুটতে ছুটতে বলল,
“কিরে দাঁড়া, আমার উদারতা নিবি না! ”
আবির এলোমেলো দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,
“আরে ভাই তুইতো সিরিয়াস হয়ে গেলি। আমিতো মজা করছিলাম। তোর মতো উদার ব্যাক্তিতো দাদার আমলেও কেউ দেখিনি। আরে এই কিউট ছেলেটাকে মারতে তোর একটুও বাঁধবে না। আমি না থাকলে তোর বাচ্চা কাচ্চা চাচাহীন থাকবে। তাদের কাছ থেকে এতবড় জিনিস তুই কেড়ে নিতে পারবি! যখন বাচ্চা কাচ্চা বলবে, ” বাবা আমার চাচা কই? তুমি আমার প্রাণপ্রিয় চাচার খু,নি। তোমার জন্য চাচা হারা হতে হয়েছে আমাদের। আমরা এই অপরাধে বাপকেই চাচা বলে ডাকবো।” তখন কেমন লাগবে তোর বল! বাপ হয়েও চাচা ডাক শুনতে চাস তুই! তাই বলছি কিছু করিসনা আমাকে। নিজের সন্তানের কাছে চাচা হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা কর।
আদিত্যের উপর আবির এই মহান কথার কোনো প্রভাব পড়লোনা। সে আদিত্যকে ধর কয়েক ঘা উদম কেলানি দিয়ে ছাড়ল। এরপর বিহানকে ধরতে গেলে সে নিজেকে বাঁচাতে এবার বউয়ের পেছনে গিয়ে লুকালো। বউয়ের পেছনে লুকিয়ে বলল,
“দেখ ভাই,এই বউটার মুখের দিকে তাকাইয়া হইলেও ছাইড়া দে। তুই কি এই অকালে ওরে বিধবা করবার চাস! এহোনোতো তোরে চাচা বানানোর খুশি দেওয়া বাদ আছে।”
তবে হিয়া বিহানকে মাঝ দরিয়ায় ফেলার মতো সামনে থেকে সরে গিয়ে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাইয়া আমি এই লোককে আমি চিনিনা৷ আপনি যা খুশি করতে পারেন।”
বিহান ঠাস করে আহত দৃষ্টিতে তাকালো হিয়ার দিকে। ব্যাকরাউন্ডে যেন বেজে উঠল, ♬ ছান সে জো টুটা কই স্বপ্না, জাগ শুনা শুনা লাগে, কই রাহে না জাব আপনা….”
অতঃপর বিহানও কেলানি খেল কয়েকটা। আবির, বিহান আ,উহ করতে করতে কাতরাতে কাতরাতে নিচে বসলো। আদিত্যও বসলো সেখানে। তিনজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। তারপর হু হা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল তিনজন। তিন বন্ধুর প্রাণখোলা হাসি। তাদের হাসি দেখে নূর আর হিয়াও হাসলো। হাসি আনন্দের মাঝেই বারবিকিউ পার্টি শেষ করলো ওরা। পার্টি শেষে আবির সবাইকে গান গেয়ে শোনাল।নূরকে এক হাতে জড়িয়ে বসে ছিলো আদিত্য। গান শুনতে শুনতে নূর একসময় ঘুমিয়ে মাথা হেলে পড়ে আদিত্যর বুকে। তা দেখে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলো তাকে। ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে থাকা নূরের মায়াবী মুখখানা দেখে নিজ মনে হাসলো সে। কত নিস্পাপ, মায়াবী তার পরিটা! মুখের উপর ছড়িয়ে পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে চুমু এঁকে দিলো নূরের ললাটে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে গালে আঙুল বুলিয়ে আদিত্য নিজ মনে বলল,
“সবসময় এভাবেই থাকিস আমার এঞ্জেল। আমার বুকের মাঝে বসত করে। কখনো ছেড়ে যাস না। তোকে ছাড়া যে চলবে না আমার। কিছুতেই না।”
নূরকে বুকের মাঝে মিলিয়ে নিয়ে নিজেও চোখ বুজল সে।
__

পরদিন সকালে ফেরার উদ্দেশ্যে বের হলো সবাই। গাড়ির কাছে সবাই এসে জড়ো হলে আদিত্য বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
বিহান ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কই যাবো মানে! আরে বাছায় ফিরা যাইতাছি আর কই!”
“না, তুই যেতে পারবি না। তুই আর হিয়া সপ্তাখানেক এখানেই থাকবি। আসলে এখানে কিছু জিনিসের কাজ করাতে হবে। তাই তুই পরে আয়।”
বিহান কেমন বিভ্রান্তির চোখে তাকালো। হঠাৎ কি কাজ আসলো সে বুঝতে পারছে না। আদিত্য তখন বিহানের কানের কাছে ঝুঁকে দুষ্টু সুরে বলল,
“আরে আমাকে না চাচা বানানোর ওয়াদা করেছিস! তো চাচা কি সবার সাথে পিকনিক করে হবে নাকি! এমনিতেও আমার অবুঝ বউয়ের জন্য তোর প্রগ্রেস হয়নি। তাই এক সপ্তাহ দিলাম তোকে। আমাকে চাচা বানানোর কাজ শেষ করে ফিরবি।”
বলেই চোখ টিপ মারল আদিত্য। বেচারা বিহান লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকালো। বিহান আর হিয়াকে রেখে ওরা গাড়িতে বসে রওয়ানা হলো। গাড়ি গেট দিয়ে বেড়িয়ে যেতেই দূর থেকে তাদের উপর নজর রাখা অজানা ব্যাক্তি কাউকে ফোন করে বলল,
“বস, আদিত্য এইমাত্র রাস্তায় বের হলো। তাহলে আজই কাম তামাম করে দেই। হালারে অনেক দিন মারার চেষ্টা করে ফেল হইছি। আজ এর দিন শেষ।”

আদিত্য গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর আসার পর হঠাৎ আবির বলল,
“আদি একটু গাড়ি সাইড করতো। একটা কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসি।”
আবিরের কথামতো আদিত্য গাড়ি সাইড করল। আবির নেমে গিয়ে রাস্তার পাশের দোকানে গেল কোল্ড ড্রিংকস কিনতে। নূর তখন রাস্তার পাশে একটা ফুলগাছে ফুল দেখে আদিত্যকে বলল ফুল এনে দিতে। আদিত্য সে আবদার রাখতে গাড়ির দরজা খুলে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এলো। ফুল নিয়ে এসে সিটে বসে ফুলটা নূরের কানে গুঁজে দিয়ে বলল,
“আমার পরি।”
আহ্লাদী হাসলো নূর। আদিত্য মাথা ঝুঁকিয়ে অধর ছোয়াল কপালে। ঠিক তখনই বিশাল একটা ট্রাক এসে সজোরে মেরে দিলো ওদের গাড়িতে। গাড়ি ধাক্কা খেয়ে ছিটকে উড়ে গিয়ে সোজা রাস্তার নিচে খালে পড়ে গেল। গড়তে গড়তে গাড়ি তলদেশে। মুহূর্তের ব্যবধানেই গাড়িটি নিচে পড়ে বিকট শব্দে ব্লাস্ট হয়ে গেল।

চলবে…..
(এখানে গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদ শেষ হলো। এরপর পরবর্তী পরিচ্ছেদ আসবে।)