মহারানী পর্ব-০২

0
1

#মহারানী
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

” বেবি ডু ইউ ওয়ান্ট মানি টু শো ইউর বডি?”
বিশালের এহেন কথায় আটশো আশি ভোল্টের ঝটকা খায় জেরিন। কি বিদঘুটে শোনালো বাক্যটা গা গুলিয়ে কেমন বমি আসতে চাইছে। সেই যে বিকেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে জেরিন আর উঠেনি। কান্না করার ফলে ঘুম টা তার ভালোই হয়েছে। এতো গভীর ঘুমে ছিলো যে বিশাল রুমে ঢুকেছে দরজা খুলে তাও বুঝতে পারেনি। বিশাল রুমে ঢুকে দেখে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে। রুমের লাইট এখনও জ্বালানো হয়নি। জানালা দিয়ে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো আসছে। রুমটায় এখন আলো আধারিতে নিমগ্ন।
বিশাল লাইট জ্বালাতে গিয়েও কেন যেনো জ্বালায়নি। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে রুমের থাকা ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়।
ফ্লাশ নিভাতে গিয়ে মেঝেতে নজর যেতেই দেখতে পায় মেঝেতে লালচে হয়ে আছে। এরকম দেখে বিশাল ব্রু কোঁচকায়। কাঁচের টুকরো গুলো এখনও ঐভাবেই পরে আছে।
বিশাল কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর মোবাইলটা নিয়ে জেরিনের পায়ের কাছে ধরতেই যা বুঝার বুঝে যায়। জেরিনের পা দেখে বিশাল চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নেয়।
তারপর এগিয়ে গিয়ে জেরিনের পায়ের কাছে বসে।
পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বিশালের মনে পরে যায় এলেক্সের কথা। বিশাল নিজের বোধ হারিয়ে জেরিনের কাঁটা পায়ে আঙুল দিয়ে চেঁপে ধরে।
জেরিন নিজের পায়ে অসহনীয় ব্যাথা অনুভব করে এক লাফ শোয়া থেকে উঠে বসে। জেরিনের ঘুমের ঘোর কাটেনি নিজেকে একটু সময় নিয়ে ধাতস্ত করার আগেই বিশালের মুখে,, “বেবি ডু ইউ ওয়ান্ট মানি টু সো ইউর বডি?” শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়।

এরকম একটা বিষাক্ত বাক্য বলেছে তাও আবার তার বিশাল এটা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না জেরিনের। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোনো বাজে স্বপ্ন দেখছে সে। ঘুম ভাঙার সাথে সাথে এসব বিষাক্ত তিতকুটে কথা ও মিলিয়ে যাবে। কিন্তু হাহ্ কোনো স্বপ্ন না কাটা পায়ে বিশালের হাতের আঙ্গুলের চাপ পরায় বুঝতে পারলো।

“আহ্ বিশাল লাগছে আমার। খুব লাগছে বিশাল সহ্য হচ্ছে না হাতটা সরাও বিশাল।”

“খুব লাগছে তাই না বেবি?”

কাঁদতে কাঁদতে জেরিনের মুখের বেহাল অবস্থা। চোখের পানি যতোই মুছার চেষ্টা করছে চোখের পানি আরো বেশি করে বের হয়ে আসতে চাইছে।
জেরিন মাথা নাড়িয়ে জানায় খুব ব্যাথা করছে তার।

“ইউ নো বেবি? আমার এর থেকে হাজারগুণ বেশি ব্যাথা লেগেছে। ”

জেরিন ঝাপসা চোখে তাকায় বিশালের দিকে।

জানো কোথায়? এই এই জানো কোথায় ব্যাথা করছে?

জেরিন মাথা নাড়িয়ে জানায় সে জানে না।

জেরিনের মাথা নাড়ানোতে বিশাল হাসে। খুব কষ্টে হাসি ফোঁটায় মুখে হাসতে হাসতে বলে,, এই যে এখানে দেখছো? বুকের মধ্যে আঙ্গুল তাক করে দেখায় বিশাল। এখানে ব্যাথা করছে আমার। যেখানটায় তোমার বাস। যেই স্থানটায় তুমি মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাও। যেইখানে শুধু তোমার আনাগোনা সেইখানে কষ্ট হচ্ছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না জানো?

আমার বুকের ছোট্ট কুটিরে বসবাস করা মহারানীর দিকে এক রাক্ষস নজর দিয়েছে। শুধু নজর দেয়নি সে তার বলতে গিয়ে থেমে যায় বিশাল। আমার মহারানীর পরিবর্তে আমাকে টাকা অফার করেছে।
এএ এই বিশাল খানকে এক বিদেশি কু*ত্তা*রবা*চ্চা
টাকা অফার করেছে হাও ফানি।

আমার রাগ কমবে না। এই হাত দুটো রঙিন না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি মিলবে না। মাই হ্যান্ড ওয়ান্ট ব্লাড। আই উইল কিল দা বা*স্টার্ড ।

এতক্ষনে জেরিন আসল কাহিনী বুঝতে পারলো। তার বিশাল এমনি এমনি খেঁপে যায়নি। এখন এই লোককে তারই শান্ত করতে হবে। শান্ত না করা পর্যন্ত তুফান চালাবে। জেরিন বিশালের হাত দুটি নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শান্ত কন্ঠে ডাকে,,,”বিশাল? ও বিশাল?

জেরিনের কথায় বিশাল লাল হয়ে যাওয়া চক্ষু নিয়ে জেরিনের দিকে তাকায়।
জেরিন বিশালের মুখের দিকে তাকিয়ে থমকায় চোখ মুখের অবস্থা খুবই করুন। জেরিন দুই হাত বাড়িয়ে ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার জন্য যেইভাবে হাত বাড়ায় সেইভাবে নিজের কাছে আসার জন্য বিশাল কে আহ্বান জানায়।
বিশাল মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।

“আসো না বিশাল।”

“না।”

“তোর মহারানী ডাকছে তোমায়।”

বিশাল নিশ্চুপ।

মহারানীর বুকে এসে নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করে নাও মহারাজ।
এমন আবদার কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়? উহু কক্ষনো না সেটা যদি হয় নিজের মানুষটা তাহলে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বিশাল এক লাফে গিয়ে জেরিনের বুকে মুখ লুকায়। জেরিন ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিশালকে নিয়েই বসা থেকে বিছানার মধ্যে পরে যায়।
বিশালকে বুকে জড়িয়ে মুচকি হাসে জেরিন। পুরো পৃথিবীর কাছে কাঠ খোট্টা, রাগী, জেদি, এটিটিউড ওয়ালা ছেলেটা এখন একটা শান্ত নিষ্পাপ বাচ্চার মতো।
জেরিনের ভালোবাসার সংস্পর্শে আসলে কেমন উত্তাল সমুদ্র শান্ত ধারায় প্রবাহিত হয়।

জেরিন আস্তে করে বিশালের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। সবকিছু এখন নিশ্চুপ শুধু দুইজনের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
জেরিন বিশালের পিঠে আলগোছে হাত বুলিয়ে কি যেনো ভাবতে থাকে।

“সিডিউস করো না মহারানী তাহলে কিন্তু তান্ডব হবে। “ঘুমাতুর কন্ঠে বলে বিশাল।

বিশালের এহেন কথায় হাত থেমে যায় জেরিনের।

বিশাল মুখ তুলে তাকিয়ে জেরিনের দিকে তাকায়। ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে ভয় পেয়ে গেছো মনে হচ্ছে।

” ম-মোটেও না।”

“তাই নাকি?”

“হ-হ্যা।”

“তাহলে তোতলাচ্ছো কেনো?”

“ক-কই?”

বিশাল শব্দ করে হাসে।হাসতে হাসতে বলে তারমানে ভয় পাচ্ছো না? গুড গুড আমিও চাই তুমি যেনো ভয় না পাও।কথাটা বলেই চোখ টিপ মেরে জেরিনের পেটে জোরে সোরে এক চিমটি বসায়।

“আহ্ বিশাল কি করছো লাগছে আ জেরিন আর কিছু বলতে পারে না। বিশাল তার মুখ আঁটকে দিয়েছে।

*****
জানালা ভেদ করে সূর্যের কিরণ চোখে মুখে পরতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে জেরিন। কিছু সময় এপাশ ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনো কাজ হয় না। সূর্যের আলো তীর্যক ভাবে এসে চোখে মুখে পরছে। হাত বাড়িয়ে পাশে বিশালকে খুঁজার চেষ্টা করে কিন্তু পায় না।
জেরিন বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে। পুরো রুম আলোকিত হয়ে আছে বাইরে প্রচুর রোদ উঠেছে যার জন্য রুম আরো আলোকিত লাগছে। জেরিন পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বিশালকে খুঁজতে থাকে। রুমে না দেখে ওয়াশরুমেও চেক করে সেখানেও নেই। তারমানে বিশাল অফিস চলে গেলো? জেরিন দেয়াল ঘরিটার দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা দশ বাজে। পরোক্ষনে মাথায় আসে আজতো অফিস বন্ধ দিয়েছে।

এরমধ্যে বারান্দা থেকে বিশালের কন্ঠস্বর শুনতে পায় কার সাথে যেন কথা বলছে। জেরিন কাঁটা পা নিয়ে খুঁড়াতে খুঁড়াতে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়।

বিশাল বারান্দায় পায়চারি করে ফোনে কথা বলছে। ফোনে কথা বলছে বললে ভুল হবে অপর পাশের ব্যাক্তিকে ধমকের উপর রাখছে। এরকম আবহাওয়ায় ও লোকটা ঘেমে একাকার অথচ পরনে শুধু একটা সেন্টু গেন্জি আর থ্রি কোয়াটার টাউজার। কি সুন্দর লাগছে বিশাল কে দেখতে। বিশালের শরীরের ঘামগুলো যেনো জেরিনকে ডেকে বলছে তাদের কাছে গিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে। জেরিন ধীর পায়ে বিশালের দিকে এগিয়ে যায় বিশাল এখন বারান্দার গ্রিল ধরে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত।

জেরিন হাত বাড়িয়ে বিশালের বাহু ছুঁতে গেলেই থমকে যায় বিশালের বাজখাঁই কন্ঠের বুলি শুনে।

“ডোন্ট টাচ মি। ”

জেরিন প্রথমে ভাবে হয়তো ফোনের অপর পাশের লোককে বলছে কিন্তু আবারও যখন ছুঁতে যায়,,
বিশাল এবার জেরিনের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে,,,, তুমি শুনতে পাও নি আমি তোমাকে না করছি আমাকে টাচ করার জন্য? কানে কালা তুমি?

সকাল সকাল কোনো কারণ ছাড়া বিশালের এমন ব্যবহারে চোখ পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠে জেরিনের।
#চলবে?