মায়াকুমারী পর্ব-০৩

0
1092

#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(০৩)
___________________

ছাঁদ থেকে শার্ট-প্যান্ট এনে আয়রন করে রুমে রেখে বেরিয়ে যেতেই মুখোমুখি হলো ধূসরের। হকচকায় নিশু। তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেললো ধূসর।

“আয়রন করেছিস?”

“হুম।”

“আমার পারফিউমটা কইরে?”

“তুমি কোথায় রেখেছ?”

“খুঁজে দে তো।”

“আচ্ছা।”

ধূসর ইচ্ছে করে তাকে ব্যস্ত রাখতে চায় নিশু বুঝে। এখন মানুষটার কথা এড়িয়ে যেতে পারে না সে। ধ্রুবর পরে সে-ই এই ঘরের দেখভাল করে। ধ্রুবর মতোই মেজাজী। মেজাজ খারাপ হলে কাউকে মানে না। নিশু ভীষণ ভয় পায় ধূসরের মেজাজকে।

“নাও।”

“ভেজা টাওয়ালটা ব্যালকনিতে মেলে দে তো।”

ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালো নিশু। পিছন থেকে তাকিয়ে রইলো ধূসর। নিশু ধূসরের এইসব পছন্দ করে না। টাওয়াল মেলে দিতে লাগলো। পাশের ব্যালকনি থেকে এদিকে তাকায় ধ্রুব। মাথায় বড়সড় ঘোমটা টেনে ধূসরের টাওয়াল মেলছে নিশু। মুখ দেখলো না। দ্রুত রুমে ঢুকে গেল নিশু। এদিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। শাড়ি পরা মেয়েটা যদি নিশু হয় তাহলে তার বউ হয়ে ধূসরের রুমে কী করছে?একবার শার্ট-প্যান্ট ধুয়ে ছাঁদে দিলো,আয়রন করলো,এখন টাওয়াল মেলে দিলো। এটা কি সিম্পল কিছু? নাকি তার অনুপস্থিতিতে,সবার অন্তরালে ওদের মধ্যে কিছু চলছে?

“নিশু আমার ঘড়িটা খুঁজে দে তো।”

শুনতে পেলো ধ্রুব। চোয়াল শক্ত হলো।

“দিচ্ছি!”

ঘড়ি খুঁজে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলো।

“নিশু শুন।”

“বলো।”

“তোর ব্লাউজ-পেটিকোটের কাপড়গুলো দিয়ে যা।”

“আচ্ছা।”

রেডি হয়ে নিলো ধূসর। কিছুক্ষণ পর তিনটি শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকল।

“নাও।”

“এক গ্লাস পানি দে তো!”

“দিচ্ছি।”

নিশুর মন সব সময়ই ভালো। যে-ই তাকে যা করতে বলে সে তা করে দেয়। ধূসর তাদের দু’জনকে স্কুল-কলেজে দিয়ে আসে আবার ঠিক ঘড়ি ধরে বাসায় নিয়ে আসতো। এটা প্রায় নিশুর বিয়ের পর এখানে এসে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই। তারা দু’জন যেখানেই যাক ধূসর নিজ দায়িত্ব নিয়ে যাবে-আনবে। হতে পারে সেটা ফ্রেন্ডদের বার্থডে,পিকনিক,ট্যুর ইত্যাদি। তারপর দু’জনকে একসঙ্গে পড়াবে। তারা শপিংয়ে গেলে ধূসরই নিয়ে যাবে। জামা-কাপড় সেলাই করতে দিয়ে এলে ধূসরই সেইসব আনবে-নিবে ইত্যাদি। তারপর সপ্তাহে একদিন তাদের রেস্তোরাঁয় খাওয়াতে নিবে। তাদের সব শখ-আহ্লাদ ধূসরই পূরণ করে। অর্থাৎ তাদের দু’জনের প্রতি ধূসর পসেসিভ। বলা যায়,নিশু-দ্যুতির জীবনে ধূসরেরই অবদান বেশি। সবসময় চোখে চোখে রাখে। কেউ বিরক্ত করছে কি-না সেটাও খেয়াল রাখে। তাদের স্কুল-কলেজের বেতন থেকে সবকিছু ধূসরই ক্লিয়ার করে। পরীক্ষার সময়টায়ও ধূসর ওদের আনা-নেওয়া ইত্যাদি সব রকমের খেয়াল রেখেছিল। অসুস্থ হয়ে পড়লেও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত। ঔষধ আনতো বলা যায় সবই। বাসার বাজার সে আর ধীরাজ মিলে করে আনে। বাসার সকল বিল ধূসরই ক্লিয়ার করে। বলা যায় বাবা-মায়ের ডান হাত। সবার প্রতি সে কেয়ারফুল। আর তাই ধূসরের প্রতি মন থেকে কৃতজ্ঞতা আসে। এজন্যই যখন যা করতে বলে সে করে দেয়। ধূসরের থেকে খারাপ কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ পায়নি। বরং কঠোরভাবে শাসন করেছে পড়াশোনার জন্য। ধূসরের সামনেই বড় হয়েছে নিশু। তাই নিশু সম্পর্কিত সকল তথ্য জানা ধূসরের। আরেকটা কথা হচ্ছে,নিশুর বাবা-মা এবং ধ্রুবর অবহেলা থেকেই তার প্রতি ধূসরের সিম্প্যাথি কাজ করে; মায়া হয় আবার দুঃখও হয়। ধ্রুব যেহেতু বউ হিসেবে মানে না তাই ধূসর চায়ও না নিশু তার বউ হোক! নিশুর পিছনে তার শ্রম রয়েছে সে জোর গলায় বলতে পারবে। আর ধ্রুব করেছে অবহেলা। তাদের মধ্যে পার্থক্যটা শুধু এখানেই। নিশু তার চোখের সামনে হাতের উপর বড় হয়েছে বলা যায়। কিন্তু নিশু ধূসরকে কখনো অন্যচোখে দেখে না। বরং ধ্রুবর পরে বড় ভাই হিসেবে ভয় পায় এবং মান্য করে। নিশুর মনপ্রাণ জুড়ে ধ্রুবই রয়েছে। ধ্রুব বউ হিসেবে না মানলেও মন থেকে নিশু তাকে স্বামী হিসেবে মানে। কারণ ছোট থেকেই তো তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ধ্রুব তার স্বামী। তাই মানুষটার প্রতি তার গাঢ় অনুভূতি রয়েছে। বাঙালি নারীর জীবনে বিয়ে তো একবারই। তাই নিশু মনেপ্রাণে এই বিয়েটাকে মানে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা দুটোই করে।

“পানি নাও।”

নিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে গ্লাস নিলো।

“সুন্দর করে রুমটা গুছিয়ে রাখিস।”

“আচ্ছা।”

বেরিয়ে গেল নিশু। সেদিকে তাকিয়ে রইলো ধূসর। চুলের দিকে নজর পড়তেই চমকায়।

“এই শোন!”

“কী?”

“চুল কেটেছিস?”

মাথা নোয়ায় নিশু।

“কীরে!”

“স্টেইট করেছিলাম তো তাই সামান্য একটু কেটে সমান করেছি।”

“তোকে চুল কাটতে বলেছে কে?”

একটু চেঁচিয়ে উঠলো ধূসর। ভয়ার্ত চোখে তাকায় নিশু। ব্যালকনি থেকে শুনতে পায় ধ্রুব। মনে হচ্ছে নিশুর উপর ধূসরের আধিপত্য বেশি! ব্যপার কী? আমতা আমতা করলো নিশু। আশ্চর্য! সে চুল কাটলে ধূসরের সমস্যা কী?

“দুটোর সাহস বেড়েছে! দাঁড়া তোদের ব্যবস্থা নিচ্ছি!”

কম্পিত পায়ে রুম ত্যাগ করলো নিশু। সেদিকে তাকিয়ে রইলো ধূসর। তার সামনে এলেই পালাই পালাই করে মেয়েটা। রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল।
___

রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসায় ফিরল ধূসর। দেখল মায়ের সাথে কিচেনে কাজ করছে নিশু।

“নিশু ধরতো!”

মাথায় কাপড় দিয়ে বেরিয়ে এলো নিশু।

“কী ভাইয়া?”

মুখের দিকে তাকাতেই দেখল চোখের নিচে কাজল লেপ্টে রয়েছে। লাল কমলাভ শাড়িতে,লেপ্টে যাওয়া কাজলে,এলোমেলো খোলা চুলে এবং ঘর্মাক্ত রূপে কেন জানি নিশুকে ভীষণ মোহনীয় লাগল।

“এগুলো তোর আর এটা দ্যুতিকে দিস।”

তিনটি ডেইরি মিল্ক ধরিয়ে দিলো। লিভিং স্পেসে ছিল দ্যুতি। উঠে এলো এদিকে।

“তুমি ওকে দুটি আর আমার জন্য একটা দিলে কেন?”

“তুই আমার কী কাজ করিস?”

“আমি তোমার কাজ করব কেন?”

“এজন্যই একটা। যেটা দিয়েছি শোকর কর।”

“নিবো না আমি। নিশুকে দুইটা দিলে আমাকে তিনটা চকলেট দিতে হবে।”

“বয়েই গেছে! ও আমার সব কাজ করে দেয়।”

“করাও কেন? ও তোমার বউ নাকি! ওকে এত দরকার হলে বড় ভাইয়াকে বলো ডিভোর্স দিতে তারপর তুমি বিয়ে করে নিও। আর না হয় তুমি একটা বিয়ে করে নাও।”

গাট্টা মা’রলো মাথায়।

“তোকে বলতে হবে না।”

“বউ একজনের আধিপত্য দেখায় আরেকজনে। যেন নিজের সাইন করা বউ। আদিখ্যেতা!”

“সামনে থেকে সর।”

“খাব না তোমার চকলেট। নিয়ে যাও। বিয়ে করে তোমার বউকে দিও। হাড়কিপটে!”

“নিশু তিনটাই তোর। ওকে দিস না। ফকিন্নি একটা।”

“লাগবে না কোন ফকিরের চকলেট।”

“নিশু কড়া লিকারের এক কাপ চা দে তো! মাথাটা ধরেছে।”

“আচ্ছা।”

“নিজে একটা বিয়ে করলেই তো হয়ে যায়। অন্যের বউয়ের হাতে চা খাওয়া লাগে না।”

রুমের দিকে পা বাড়াল ধূসর। ওরা দু’জন জোরে জোরে শুনিয়ে শুনিয়েই বলেছিল। যার ফলে নিজের রুম থেকে সব শুনতে পায় ধ্রুব। ধূসরের মতলব ঠিক বুঝলো না। বউ হলো তার কিন্তু ধূসর কেন আধিপত্য দেখায়? নীরব রইলো ধ্রুব। চকলেটগুলো দ্যুতিকে দিলো নিশু। নিশুর চকলেট ওতটাও পছন্দ নয়,ধূসর জানে। প্রতিদিন বাইরে থেকে আসার সময় চকলেট আনবে। নিশু,দ্যুতিকে দিয়ে দেয়। ঝগড়াটা দ্যুতি ইচ্ছে করেই করেছে ধ্রুবকে শুনিয়ে শুনিয়ে। যাতে একটু জেলাশ হয়।

“নিশু তোর ভাইয়ার চা-টা দিয়ে আয় তো।”

“আচ্ছা।”

ধূসরের চায়ের মগ নিয়ে পা বাড়াল নিশু। দরজা খোলাই ছিল। কমলা রঙের শাড়ি পরিহিতা নিশুকে হেঁটে যেতে দেখল ধ্রুব। মাথায় বড়সড় ঘোমটা। চোখ সরিয়ে নিলো। দেখার ইচ্ছে নেই।

“ভাইয়া তোমার চা।”

“রেখে যা।”

পা বাড়াল কিচেনের দিকে।

“নিশু এগুলো ধ্রুবকে দিয়ে আয়।”

আতঙ্কিত চোখে তাকাল নিশু।

“দ্যুতিকে বলো।”

নারাজ হলেন দিলরুবা খাতুন।

“তুই এত বোকা কেন নিশু?”

আমতা আমতা করলো সে।

“আমার ভয় করে ফুপি। যদি উনি মা’রে!”

“কিচ্ছু করবে না। এখন ধর নিয়ে যা।”

গলা শুকিয়ে গেল নিশুর।

“কী হলো যা!”

“দ্যুতিকেও বলুন।”

“দ্যুতি এদিকে আয়।”

“কী?”

“ওর সাথে যা।”

“ওর স্বামীর কাছে ও যাবে আমি গিয়ে কী করব?”

“বেশি কথা বলে মেয়েটা!”

“পারব না যার স্বামী সে যাক।”

“দ্যুতি প্লিজ চল না।”

“তুই যা নিশু।”

“আচ্ছা যা ওর সাথে।”

“ওহ শিট! দে চল।”

মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে ট্রে হাতে নিলো নিশু। কাঁপতে কাঁপতে পা বাড়ালো ধ্রুবর রুমের দিকে। এই মুখ ধ্রুবকে দেখাতে চায় না সে; যতদিন না ধ্রুব তাকে নিজ দেখে দেখতে চায়! হাসি মুখে কয়েক কদম এগিয়ে এলেন দিলরুবা খাতুন। ছেলে কী করে একটু জানার ইচ্ছে। রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

“কী হলো ঢুক!”

“তুই যা আমি যাব না।”

“নিশু ঢং করিস না রাগ হচ্ছে আমার। তোর স্বামীর কাছে তুই যাবি,সেখানে তুই কেন আমাকে কাবাব মে হাড্ডি বানাস বল?”

ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো নিশু। হার্টবিট ফার্স্ট চলছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার। নিশুর মনে হচ্ছে প্যানিক এ্যাটাক করবে। অতিরিক্ত ভয়ে তার প্যানিক এট্যাক হয়।

“চল।”

শুকনো মুখে তাকালো দ্যুতির দিকে। ডোর নক করলো দ্যুতি।

“কে?”

“ভাইয়া তোমার বউ এসেছে। মানে ভাবী এসেছে। মানে নিশু ভাবী তোমার বউ আরকি!”

চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। নিশুর পিঠের উপর হাত রেখে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল দ্যুতি। ধ্রুব তাকালো না।

“ভাইয়া তোমার পায়েশ আর কফি। নিশু তোর স্বামীর হাতে তুলে দে।”

ঠকঠক করে কাঁপছে নিশু। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি আজ প্যানিক এ্যাটাক করবে। চোখ বুজে ধ্রুবর দিকে বাড়িয়ে ধরলো ট্রে। ধ্রুব তাকালো না নিলো ও না।

“ভাইয়া নাও।”

দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিলেন দিলরুবা খাতুন। রেগে উঠে না জানি আবার মেয়েটাকে মে’রে বসে আতঙ্কিত হয়ে রইলেন।

“কী হলো ভাইয়া নাও! তোমার বউ তোমাকে দিয়েছে।”

“নিয়ে যা।”

“সে কি! মা কত কষ্ট করে পায়েস রান্না করলো আর তুমি খাবে না?”

“বেরিয়ে যা।”

“ও আচ্ছা! তো বলবে তো বউকে একা পেতে চাও! এটার জন্য এত মুড দেখানোর কী আছে আজব!”

শক্ত চোখে তাকালো ধ্রুব। বেণী দুলিয়ে বেরিয়ে গেল দ্যুতি। আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে গেল নিশু। পিছু ফিরতেই নিশুকে ওইভাবে দেখে ছুটে এলো। ধ্রুব তাকায় তবে নিশুর মুখটা দেখা গেল না। চোখ সরিয়ে নিলো।

“নিশু! এই নিশু! কী হয়েছে তোর?”

দেখল দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রেখেছে।

“নিশুকে ধরো ভাইয়া।”

নীরব হয়ে বসে রইলো ধ্রুব।

“আরে বসে রইলে কেন তোমার বউকে মানে ভাবীকে ধরো।”

ছুটে এলেন দিলরুবা খাতুন।

“কী হয়েছে?”

“ভয়ে সেন্স হারিয়েছে নিশু।”

চেঁচামেচি শুনে রুম থেকে বেরুলো ধূসর।

“কী হয়েছে আম্মু?”

“নিশু জ্ঞান হারিয়েছে।”

“দেখি!”

ধ্রুবর দিকে একপলক তাকালো সে নির্বিকার হয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যেন কিছু শুনতে পায় না।

“বিছানায় তোল।”

নিশুকে পাঁজাকোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ধূসর। তার ভাই প্রায়োরিটি দিচ্ছে না তাহলে সেই বিছানায় রাখার দরকারও নেই! নিশু এই বাড়ির বড় বউ! তার একটা সম্মান আছে,আত্মসম্মান আছে। সে কোনো ফেলনা নয় যে যার যা ইচ্ছে হবে তাই করবে! চোয়াল শক্ত হয় ধ্রুবর। সে নিশুকে যত অবহেলা করছে ধূসর ততই প্রায়োরিটি দিচ্ছে। এর মানে কী বুঝাতে চায় ধূসর?সে নিশুকে পছন্দ করে! করলে করুক সমস্যা নেই! সেও চায় নিশু নামক আবর্জনাকে তার জীবন থেকে উপড়ে ফেলতে! তার জীবনের একটা বিষকাঁটা এই নিশু। সে মুক্ত হতে চায় এই বন্ধন থেকে। সে শীঘ্রই ডিভোর্স দিবে নিশুকে। তারপর ধূসর বিয়ে করলে করুক। তার সমস্যা নেই। আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো নিশুকে। ভয়ার্ত এবং মলিন মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই হঠাৎ চোখ পড়লো রিডিং টেবিলের উপর দিকটার দেয়ালে কালার পেন্সিল দিয়ে আর্ট করা একটি ঝোঁপালো বাগানবিলাসের উপর। ঠিক তার নিচে খুব সুন্দর করে কালার পেন্সিল দিয়ে পেঁচিয়ে লেখা-“কিছু বিষাদ বাগানবিলাসের মতো উজাড় হোক!
~নিশু!”

ঠিক তার পাশে একটি ঝোঁপালো নীল অপরাজিতার লতাপাতা আঁকা এবং খুব সুন্দর করে কালার করা। দেখতে ঠিক মনে হচ্ছে জলজ্যান্ত একটি অপরাজিতার ঝোপ। মনেই হয় না এটি আর্ট করা। সেটির নিচেও একই রকমভাবে লেখা-“বেদনার রং নাকি নীল! আচ্ছা,তাহলে অবহেলার রং কেমন? আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে! খুউব!”

ঠিক তার নিচ দিয়ে একই রকমভাবে লেখা-“আমি অবহেলা সইতে পারি না! অবহেলার ছোঁয়া গায়ে লাগলেই আমার অসুখ আসে; ভীষণ অসুখ! শ্বাসকষ্ট হয়! আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না! দমবন্ধ হয়ে আসে! ঝাপসা দেখি! আমার কেমন লাগে ঠিক আমি জানি না! বিধস্ত লাগে! পাগল পাগল লাগে! ফাঁকা ফাঁকা লাগে! অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ি! আমার ম’রে যেতে ইচ্ছে করে! কিন্তু আমি ম’রতে পারি না কেউ একজনকে ভীষণ ভালোবাসি বলে! আমি ম’রে গেলে আমার মতো করে তাকে যত্ন করে এত ভালোবাসবে কে শুনি?”

চোখ সরিয়ে নিলো ধূসর।

“আম্মু! তোমরা ওর হাতে-পায়ে তেল ঘষে গরম করতে থাকো,নয়তো শ্বাসকষ্ট উঠবে। আমি ডাক্তার আংকেলকে নিয়ে আসছি।”

লম্বা লম্বা কদম ফেলে বেরিয়ে গেল ধূসর। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নিয়ে এলো। একটি ইনজেকশন পুশ করে চিন্তিত হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন তিনি। ভয়,দুশ্চিন্তা কিংবা খুব বেশি টেনশন করলে নিশুর প্যানিক এ্যাটাক আর শ্বাসকষ্ট হয়। বিশেষ করে ধ্রুবর বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে না নিশু। এজন্যই তারা সবাই নিশুকে এক্টিভ রাখার চেষ্টা করে যাতে টেনশন করে অসুস্থ হয়ে না পড়ে। অকালে এবং অকস্মাৎ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে ট্রমায় আছে সে।
___

বিকেলবেলা। দুপুর খাবার সেরে মলিন মুখে শুয়ে রইলো নিশু। রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। পাশে বেডে হেলান দিয়ে ফেইসবুক স্ক্রোল করছে দ্যুতি। হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো।

“কেমন আছো জরিনার মা?”

ভীষণ রাগ হয় দ্যুতির। পৃথিবীতে আর কি কোনো নাম নেই?এই নামটা কেন ডাকতে হবে? আয়া-বুয়ার নাম! জঘন্য একটা নাম! বকতে লাগলো দ্যুতি। একদম সিন করলো না। ফের মেসেজ এলো-“বিজি নাকি?”

এবারও রিপ্লাই দিলো না।

“ও জরিনার মা রিপ্লাই দাও না ক্যান?”

দাঁতে দাঁত চাপলো দ্যুতি।

“জানো না মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া পারিবারিক শিক্ষা যা তোমার মধ্যে নেই! ছিঃ! জরিনার মা ছিঃ!”

আর চুপ থাকতে পারলো না।

“রিপ্লাই না দিলে পারিবারিক শিক্ষা কমে যায়?”

“হ্যাঁ।”

“আপনার আইকিউ নিয়ে গবেষণা করা উচিত! যত্তসব ফাউল! বখাটে ডিজগাস্টিং! রাসকেল।”

“আরে রাগো ক্যান জরিনার মা? আস্তে আস্তে গালি দাও।”

“আপনি জরিনার বাপ!”

“তুমি মা আমি বাপ ওকে!”

“আপনার মাথা!”

“জরিনার মা শোনো!”

“মেসেজ দিবেন না। যত্তসব!”

বিড়বিড় করে বকতে লাগল দ্যুতি।

“কাকে বকছিস?”

“আর কে বখাটে অনিক।”

“ব্লক দিচ্ছিস না কেন?”

নীরব রইলো দ্যুতি।

“ব্লক দে। ভাইয়া জানতে পারলে দু’জনেই শেষ। আমাকে ঝামেলায় ফেলিস না।”

“দিলে কী লাভ ও নতুন আইডি খুলে সেই জ্বালাতন করবে। আর তো দেখিস পথেঘাটে কী করে!”

“এখন কী বললো?”

“আমার নাকি পারিবারিক শিক্ষা নেই।”

“কী!”

“রিপ্লাই দিইনি কেন তাই!”

“পাগল নাকি! আচ্ছা ওর তো পারিবারিক শিক্ষা আছে তো বখাটেপনা করে কেন জিজ্ঞেস করতি! ছ্যাঁছড়া পোলাপান কোথাকার!”

“বিনোদন!”

মৃদু হাসলো নিশু।

“তার নিজেরই পারিবারিক শিক্ষার অভাব এসেছে আরেকজনকে সেন্স দিতে।”

“এমন এক দেশে বাস করি দুইটা মিনিটও মন খারাপ করে থাকা যায় না। এইসব পাগল-ছাগলের বিনোদনের ঠেলায় এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। ঘুমাতে গেলেও টেনশন হয় এই না বুঝি বিনোদন মিস করে ফেললাম!”

বকতে লাগল দ্যুতি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে খানিক শব্দ করে হেসে উঠলো নিশু।
_________

চলবে~