#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(০৪)
__________________
রুমের দরজা খোলা দেখার পরেও নক করলো ধূসর। তাকে দেখতেই লুকিয়ে ফেললো মোবাইল।
“কী করছিস?”
“কিছু না।”
“মোবাইলে কী করিস?”
“কিছু করিনি।”
“মোবাইল দে।”
ভীত চোখে তাকালো দ্যুতি।
“কেন?”
“দে বলছি!”
ধমকে উঠলো। ভীতসন্ত্রস্ত হলো নিশুও। ধূসর মেজাজী মানুষ। অনিকের মেসেজগুলো দেখে না জানি কী করে! মোবাইল কেঁড়ে নিলো ধূসর।
“পড়ালেখা কিছু নেই সারাদিন শুধু মোবাইল!”
রুম থেকে বেরুতেই টোন বেজে উঠতেই স্ক্রীনে তাকাল। মাথায় রক্ত উঠলো ধূসরের।
“আমাকে ভালোবাসো জরিনার মা?”
“না।”
“ভালো যদি না বাসো তাহলে সেদিন সিগারেট খাইতে নিষেধ করছিলা ক্যান?”
“তোর জম খাওয়াব আজ দাঁড়া!”
“এটা কেমন কথা জরিনার মা?”
“ওয়েট!”
চোয়াল শক্ত করলো ধূসর।
“দ্যুতি! এদিকে আয়।”
দৌঁড়ে মায়ের রুমে চলে গেল দ্যুতি। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রইলো নিশু। এই বখাটে অনিক আর দ্যুতির জন্য ধূসর না জানি তাকে আবার কী করে বসে। ইনবক্স চেক করলো। দ্যুতির অস্তিত্ব টের না পেয়ে এদিকে এলো।
“দ্যুতি কই?”
“বেরিয়ে গেছে।”
“এইসব কতদিন থেকে?”
আমতা আমতা করলো নিশু।
“কোন সব?”
“বখাটে অনিক।”
এই দ্যুতির কারণে এখন তাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
“আমরা কিছু করিনি। ওই অনিক ফেইক আইডি খুলে বিরক্ত করে।”
“আচ্ছা! তো আমাকে বলিসনি কেন?”
আমতা আমতা করলো নিশু। সে কী বলবে? অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরুতেই মুখোমুখি হলো ধ্রুবর। রুমের ভিতরে দৃষ্টি পড়তেই দেখল বিছানায় মাথা নুয়ে বসে রয়েছে নিশু তবে মুখটা দেখা গেল না। তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমের দিকে পা বাড়ালো ধ্রুব। তলে তলে অনেক কিছু চলছে তাহলে! তাতে তার কী? কিছু না! নিশু তার কিছু হয় না! দ্যাট’স ওকে! ইট’স ফাইনাল! বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ধূসর। উঁকি দিয়ে দেখল দ্যুতি। লক্ষ্য করলো তার মা শাড়ি পরে রেডি হচ্ছেন।
“কোথায় যাবে আম্মু?”
“তোর ফুপির বাসায়।”
“কেন?”
“তোর দাদী অসুস্থ।”
“আমাকে বলোনি কেন?”
“বললে কী হবে?”
“আমিও যাব।”
“নিশুর সাথে থাক। তোর কী কাজ!”
“যাব বলছি যাব।”
রেডি হতে গেল দ্যুতি। কপালে আজ শনি আছে এরচেয়ে বরং ফুপির বাসায় চলে যাওয়াটাই বেটার। আম-ছালা দুটোই বাঁচবে। রেডি হয়ে মায়ের সাথে চলে গেল দ্যুতি; সঙ্গে ধীরাজও গেল। নিশুকে ননদের বাসায় কখনো নেন না তিনি। পছন্দ করে না তারা। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনতেই আসাদ সাহেব বাসায় না ফিরে দোকান থেকে বোনের বাসায় গেলেন। সুফিয়া বেগম মাঝেমধ্যে সপ্তাহখানেক মেয়ের বাসায় গিয়ে থাকেন। তারপর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও ফিরে আসেন। আসাদ সাহেব বুঝতে পারেন মায়ের অনাদর হয় বোনের কাছে তবুও তিনি যায় বলে মনঃক্ষুণ্ন হয়। ভাই-ভাবীকে চা-নাস্তা দিলেন সাদিকা খাতুন। শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে কথাবার্তা বললেন। আজ রাত উনাদেরকে থেকে যেতে বললেন। দাদীর অসুস্থতার খবর শুনতেই তৈরী হয়ে ধ্রুবও গেল ফুপির বাসায়। ধ্রুবকে দেখতেই ভীষণ খুশি হলেন দাদী-ফুপি দু’জন। ভীষণ খুশি হলো ফুপাতো বোন পিয়াসা আর পিপাসাও। দাদীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে গম্ভীর হয়ে সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করতে লাগলো। হঠাৎ দু-বোন এসে ধ্রুবর দু-পাশে বসলো। ইতস্ততবোধ করলো ধ্রুব। গায়ে পড়া স্বভাব দু’জনের। সেদিক থেকে নিশু তাকে দেখলে জ্ঞান হারায়। কত পার্থক্য মানুষে মানুষে। নিশু তার পাঁচ বছরের ছোট হলেও পিয়াসা তার দুই বছরের ছোট এবং পিপাসা চার বছরের ছোট। নিশুর সিনিয়র। ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে। ওরা এটা-সেটা জিজ্ঞেস করছে ফোন স্ক্রোল বাদ দিয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখে ধ্রুবও প্রতিত্তোর করছে! মায়ের ফোন এনে ভিডিও করলো দ্যুতি। নিশুকে দেখাতে হবে তার পেয়ারি স্বামী মেয়েদের সঙ্গে আড্ডাবাজি করছে! লক্ষ্য করলো ধ্রুব। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
“কী করছিস?”
“কিছু না।”
গরম চোখে তাকালো। কেয়ার করলো না দ্যুতি। ঠিকই তো অন্য মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে বউয়ের সাথে দুনিয়ার যত মুড! যত্তসব! কিছুক্ষণ পর ধূসরও এলো। সোফার আরেক পাশে বসে গম্ভীর হয়ে ফোন স্ক্রোল করতে লাগলো। কারো দিকে কেউ তাকালো না। পাশের রুমে পিয়াসের সঙ্গে গেম খেলছে ধীরাজ। প্রায় রাত নয়টা বাজতে চললো। দিলরুবা খাতুন দেখলেন ধ্রুব এখনও বসে রয়েছে সাথে ধূসরও।
“বাসায় ফিরিসনি ধ্রুব?”
“না।”
“তাড়াতাড়ি যা।”
“কেন?”
“আরে আল্লাহ! বাসায় নিশু একা।”
“আমি কী করব?”
“পাগল নাকি! যা তাড়াতাড়ি।”
“পারব না!”
“আমি যাচ্ছি চিন্তা করার কিছু নেই।”
গম্ভীর হয়ে বেরিয়ে গেল ধূসর। সেদিকে তাকাল ধ্রুব।
“ধীরাজ! ধীরাজ কইরে?”
“কী আম্মু?”
“বাসায় যা তোর ভাইয়ার সাথে।”
“কী হয়েছে?”
“নিশু একা। ধূসর গেছে।”
“সমস্যা নেই তাহলে।”
“আরেহ! তাড়াতাড়ি যা। ছেলেমেয়ে এখন বড় হয়েছে। কোন সময় কোন অঘটন ঘটে।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।”
গম্ভীর রইলো ধ্রুব।
___
বাসায় ফিরল ধূসর। একা বাসায় থাকতে ভীষণ ভয় পায় নিশু। মনে হয় যে ভূত আসছে এদিক-ওদিক থেকে। জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো। কিছু একটার শব্দ শুনলেও মনে হচ্ছে ভূত আসছে। পর্দা ওড়ার ছায়া দেখলেও ভূতের মত লাগে। কলিংবেল বাজতেই আঁতকে উঠলো পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে পীপহোল দিয়ে চেক করে দেখল ধূসর। ভীতসন্ত্রস্ত এবং আড়ষ্ট হয়ে ডোর খুললো।
“ধুতরাফুল কী করিস?”
হকচকায় নিশু। ধূসর এই নাম শুধু তাকে সবার আড়ালে ডাকে। তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ জানে না এটা।
“শুনে ফেলেছি!”
ভড়কায় নিশু। দাঁত বের করে হাসলো ধীরাজ।
“কী শুনেছিস?”
“ধুতরাফুল!”
লাথি মা’রলো কোমরে।
“পড়তে বস যা।”
পড়তে বসলো ধীরাজ।
“নিশু,তোর না সামনে এডমিশন টেষ্ট!”
“জ্বী ভাইয়া।”
“তো পড়তে বসিস না কেন?”
“এই তো বসবো।”
“তাড়াতাড়ি লিভিং রুমে বস দুটো।”
ওরা দু’জন লিভিং রুমে বসে পড়াশোনা করতে লাগলো। ফ্রেশ হয়ে এসে পড়া দেখিয়ে দিতে লাগলো ধূসর। নিশুকে খুব সুন্দর করে পড়াগুলো বুঝিয়ে দিতে লাগলো। ঠিক সেই সময় বাসায় ঢুকল ধ্রুব। ডোর চাপানো ছিল বিধায় নক করার প্রয়োজন হয়নি। লাথি খেয়ে ডোর অফ করতে ভুলে গিয়েছিল ধীরাজ। ওরা দু’জনও লক্ষ্য করেনি। ধ্রুবকে লক্ষ্য করলো না কেউ। দৃষ্টি পড়লো দু’জনের দিকে। ধূসর পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে আর মাথা নেড়ে নিশুও বুঝে নিচ্ছে। পিঠ এদিকে হওয়ায় দেখতে পেলো না নিশুর মুখটা। দেখার ইচ্ছেও নেই! জাহান্নামে যাক! নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দেখল ওরা তিনজন।
“নিশু এক মগ স্ট্রং ব্ল্যাক কফি দে তো!”
একটু জোরেই বললো ধূসর। শুনতে পায় ধ্রুব।
“দিচ্ছি ভাইয়া।”
“আগে এক গ্লাস পানি দে তো।”
“দিচ্ছি।”
ধূসরের দিকে তাকালো ধীরাজ। এতক্ষণ তো পড়ালো হঠাৎ কাজের অর্ডার দিলো কেন?এমন নয়তো তার বড় ভাইকে জেলাশ করানোর জন্য করছে! নয়তো আগে তো কখনো এত কাজ করতে বলতো না। টুকটাক বলতো! আর পড়াশোনার সময় তো একদমই না।
“অণুবীক্ষণযন্ত্রের কী হলো?”
“কিছু না।”
“কী দেখিস?”
“তোমার ব্যপারটা বুঝতে পারছি না!”
ভ্রু কুঁচকায় ধূসর।
“কী হয়েছে?”
“নিশু আপুর পড়ায় ব্রেক দিলে যে?”
মাথায় গাট্টা মা’রলো।
“নিজের পড়ায় মনোযোগ দে। অণুবীক্ষণযন্ত্রের মতো এতকিছু দেখার দরকার নেই।”
বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠাগুলো উল্টাতে লাগল। বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার মলাটের নিচে কালার পেন্সিল দিয়ে একসঙ্গে বিশ-ত্রিশটি টিউলিপ আঁকা। একেকটা একেক কালারের। ফুলগুলোর ঠিক নিচে হঠাৎ একটা লেখায় চোখ আঁটকে গেল ধূসরের। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে নয়নতারার মতো খুব সুন্দর করে লেখা-“আপনার কথা ভেবে মনখারাপ হলে দুনিয়ার কোনোকিছুই আমাকে হাসাতে পারে না প্রিয়!”
নিঃসন্দেহে এটা নিশুর হাতের লেখা। পানি দিয়ে গেল নিশু। সসপ্যানে পানি ফুটাতে দিয়ে তাকিয়ে রইলো। পানি পান করে বইয়ের পৃষ্টাগুলো উল্টাতে লাগলো। কফি এনে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে পড়তে বসলো নিশু। মগ নিতে গিয়ে চোখ পড়লো নিশুর দিকে। জাম কালারের জামদানি শাড়ি পরনে। গাঢ় কাজল চোখের নিচে লেপ্টে রয়েছে,এলোমেলো চুলগুলো ঘর্মাক্ত মুখের দিকে এসে পড়েছে কিছু। পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দিচ্ছে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে। দেখতে মায়াময় লাগছে! কফিতে চুমুক দিয়ে ধূসর তাকায়। দৃষ্টি পড়লো ধীরাজের। আহাম্মক বনে তাকিয়ে রইলো।
“ধুতরাফুল!”
চমকে তাকায় নিশু। ধীরাজের দিকে গরম চোখে তাকালো ধূসর।
“নিশু ভাবী ধূসর ভাইয়ার ধুতরাফুল!”
বিব্রতবোধ করলো ধূসর। লজ্জায় আড়ষ্ট হলো নিশু।
“ধীরাজ!”
“সবাইকে বলবো এটা!”
চোয়াল শক্ত করলো।
“লাভ হবে না আমি সবাইকে বলবো,নিশু ভাবী ধূসর ভাইয়ার ধুতরাফুল!”
ফ্রেশ হয়ে পানি পান করতে টেবিলের দিকে আসছিল ধ্রুব। কথাটা শুনতেই থমকে গেল।
“নিশু ভাবী ধূসর ভাইয়ার ধুতরাফুল! ধুতরাফুল!”
গাট্টা মা’রলো মাথায়।
“অসভ্য! পড়ায় মন দে।”
“ধুতরাফুল!”
তিনজনের দিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। তাকালো না ধূসর। মাথায় ঘোমটা টেনে নিশু পড়ায় ব্যস্ত।
“বখাটে অনিককে নাকি মে’রেছিস?”
ধ্রুবর স্বর শুনতেই চমকে উঠে থেমে গেল নিশু। ধূসরের দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো ধ্রুব।
“হ্যাঁ।”
“কেন?”
“নিশুর ঝালমুড়ি খেয়েছিল।”
শ্বাস আঁটকে রইলো নিশু। ভয়ংকর মানুষটা তার পিছনে। থরথর করে কাঁপতে লাগলো। হার্টবিট ফার্স্ট চলছে! ঘেমে-নেয়ে একাকার। দাঁত-মুখ খিঁচে মাথা নুয়ে রইলো। আনমনে চোখ পড়ল মাথা নুয়ে বসে থাকা নিশুর দিকে। মুখ দেখা না গেলেও শাড়ির ফাঁক দিয়ে চোখের প্রলম্বিত পাপড়িগুলো দেখতে পেলো। বার দুয়েক ঝাপটালো। দৃষ্টি সরিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল নিশু। দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেলো। পড়ায় মনোযোগ দিলো। হঠাৎ ভাইব্রেট করে উঠলো ধূসরের ফোন।
“হ্যালো আম্মু!”
“বাবা,তোর ফুপি আসতে দিচ্ছে না। আজ আমাদেরকে থাকতে হচ্ছে।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই।”
“খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস তোরা।”
“আচ্ছা।”
“রাখি।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন।
“নিশু ভাত খাব।”
“আচ্ছা।”
নিশু উঠে গিয়ে জোছনাকে নিয়ে টেবিল গুছিয়ে খেতে ডাকলো।
“ধীরাজ আয়।”
বেড়ে দিলো দুই ভাইকে।
“বড় ভাইয়াকে ডেকে আয় যা।”
উঠে গিয়ে ধীরাজ ভাত খেতে ডাকল ধ্রুবকে।
“নিশু দাঁড়িয়ে রইলি কেন খেতে বস।”
“আমি পরে খেয়ে নিব।”
“বস।”
নিশুও খেতে বসল। খাওয়া-দাওয়ার মাঝামাঝি সময় হঠাৎ ধ্রুব এলো। একপলক তাকাতেই দেখল ধূসরের অপর পাশে বসে নিশুও খাচ্ছে। মাথায় ঘোমটা টানা। চোখ সরিয়ে নিলো ধ্রুব। তার উপস্থিতি টের পেতেই আতঙ্কিত হলো নিশু। এই মানুষটার সঙ্গে সে একসাথে বসে খাবে! শ্বাস আঁটকে রইলো,কাঁপতে লাগলো সমস্ত শরীর। নির্লিপ্তে চেয়ার টেনে বসল ধ্রুব। একবারও তাকালো না; ইচ্ছেও নেই। ঘৃণা করে মেয়েটাকে। আরেকটু মাথা নুয়ে বসল নিশু। ঠোঁটগুলো দেখা গেলেও মুখটা দেখা গেল না। নিশুকে পানি ঢেলে দিলো,পাতে এটা-সেটা তুলে দিলো।
“শরীরের প্রতি যত্ন নে নিশু। একটু বেশি বেশি খাবি।”
নীরব রইলো ধ্রুব। আঁড়চোখে ধূসরের তামাশা দেখতে লাগলো ধীরাজ। নির্ঘাত এইসব তার বড় ভাইকে জেলাশফিল করাচ্ছে। আবারও ভাইব্রেট করে উঠলো ফোন।
“হ্যাঁ আম্মু!”
“খাবার খেয়েছিস তোরা?”
“খাচ্ছি!”
“নিশু?”
“খাচ্ছে।”
“তোর ভাইয়া?”
“খেতে বসেছে।”
ভীষণ খুশি হলেন দিলরুবা খাতুন। এপাশে হলেও বুঝতে পারলো ধূসর।
“বাবা শোন,আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”
“কী?”
“নিশুকে ঔষধগুলো খাইয়ে দিস মনে করে। আর ওর একটা ঔষধ শেষ ওটা এনে দিস।”
“আচ্ছা। টেনশন করো না আম্মু।”
“তবুও টেনশন হয় বাবা।”
“আচ্ছা খেয়েদেয়ে ঘুমাও। কাল সকালে এসে পড়িও।”
“আচ্ছা।”
“গাধীটা কই?”
“আছে।”
“আচ্ছা রাখি।”
নিশুকে ঔষধ খাইয়ে দিতে,ঔষধ লাগবে সেটাও ধূসরকে বলতে হবে ফোন করে! লাউডস্পিকার না দিলেও শুনতে পেয়েছে ধ্রুব। ও আচ্ছা,সে যত ইগনোর করছে তার মা-ভাই ততই প্রায়োরিটি দিচ্ছে মেয়েটাকে! বুঝতে দিচ্ছে না তার অবহেলাটা। খাবার অসমাপ্ত করে উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে রুমের দিকে পা বাড়াল।
“খাবে না?”
“ইচ্ছে নেই।”
“নিশু সব খাবার শেষ কর ফাস্ট! তোর মেডিসিন নিতে হবে।”
শব্দ করে ডোর অফ করলো। ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে তাকালো ধীরাজ। এদের তিন জনের মধ্যে চলছেটা কী?
“তোর কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“ঘাড় ভেঙে ফেলব তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমাতে যা।”
“যাচ্ছি।”
ধীরে-সুস্থে খাবার শেষ করে টেবিল গুছিয়ে বাকি খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে রুমে চলে গেল নিশু। আজ একা ঘুমাতে হবে। একা ঘুমাতে পারে না নিশু ফোবিয়া আছে তার। দ্যুতির সঙ্গে একসাথে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। একজনকে একজন জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে ঘুম হয় না। এখন কেমন জানি খালি খালি আর ভয় লাগছে। বিছানা গুছিয়ে নিলো। নক পড়লো দরজায়। ডোর খুলতেই দেখল ধূসর।
“কী ভাইয়া?”
“মেডিসিন খেয়েছিস?”
“ভুলে গিয়েছিলাম।”
“তোর একটা মেডিসিন শেষ ওটার খালি পাতাটা দে।”
“লাগবে না থাক।”
“দে।”
কেঁপে উঠে মেডিসিন বক্সটা খুলে খালি পাতাটা খুঁজে দিলো।
“এখন কি পাবে?”
“২৪ ঘন্টা খোলা থাকে ফার্মেসী।”
বেরিয়ে গেল ধূসর। বেশ কিছুক্ষণ পর ফার্মেসী থেকে মেডিসিন নিয়ে এলো। ডোর আধখোলা দেখে নক করে ভিতরে ঢুকতেই ঠিক সেই সময় রুম থেকে বেরুলো ধ্রুব। নিশুর রুমে ধূসরকে ঢুকতে দেখে চমকাল। দিনকে দিন দু’জনের ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ দেখতে পাচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে রুমে ঢুকে গেল ধ্রুব। রুমে ঢুকতেই দেখল নিশু তার পারসোনাল ডায়েরিতে কী যেন লিখছে। ডায়েরিটা সরিয়ে রাখল একপাশে।
“ধর দ্রুত খেয়ে নে।”
“আচ্ছা।”
মেডিসিন মুখে দিয়ে পানি পান করতে লাগলো। ফ্যানের বাতাসে ডায়েরির পাতাগুলো উড়ছে। হঠাৎ একটা পেইজে চোখ আঁটকালো।
“আপনাকে আমি কীভাবে বুঝাই বলুন তো,
আমার শিরায় শিরায় বয়ে চলা ভালোবাসার ভাষা?
দূরত্ব যতই বাড়ুক,মনের মাঝে আপনি অটুট এক ধ্রুবতারা।
আমার ধ্রুবতারা! শুধু আমার ধ্রুবতারা!
মনে মনে একদিন কথা না বললে,
আমার মন বোবা হয়ে যায় আপনার অভিমানে।
তবুও আমি শুধু অপেক্ষা করি আপনার কণ্ঠের শীতল স্পর্শ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।
কবে পাব সেই শীতল স্পর্শ! কবে?”
~নিশু!
চোখ সরিয়ে নিলো ধূসর।
“খেয়েছিস?”
“হ্যাঁ।”
“ভয় পাবি একা থাকতে?”
মলিন হাসল নিশু।
“আজ রাতই তো!”
“আচ্ছা সাবধানে থাকিস। ভয় পেলে আমাদের কেউ একজনকে ডাকিস। না হয় ভাইয়াকে ডেকে নিস।”
শেষোক্ত কথায় আড়ষ্ট হলো নিশু।
“ভয়ের কিছু নেই। আমরা আমরাই তো! যা চুপচাপ নিশ্চিন্তে ঘুমা।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো নিশু। একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে গেল ধূসর।
“ভাইয়া!”
পিছু ফিরে ধূসর। আমতা আমতা করলো নিশু।
“কী?”
“ইয়ে মানে একটা কথা বলি?”
“বল।”
“কিছু মনে করবে না তো?”
“না।”
“ইয়ে মানে আসলেই..”
কাচুমাচু করলো নিশু।
“বল।”
“মানে তুমি আমাকে ধুতরাফুল বলে কেন ডাকো?”
“দেখতে যতটা না সুন্দর তার চেয়েও বেশি বিষাক্ত ধুতরাফুল।”
চমকে তাকায় নিশু।
“মানে!”
“জানিস তো ধুতরাফুল খেলে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!”
চমকে তাকায় নিশু।
“মানুষ,পশুপাখি অজ্ঞান হয়ে শেষ পর্যন্ত মা’রাও যেতে পারে।”
“কেন?”
“কারণ এতে Tropane alkaloid নামক এক ধরণের বিষ আছে। ইংরেজিতে একে বলা হয় devil’s trumpet এবং এর ফলকে বলে star apple। আর ধুতুরা গাছের সমস্ত অংশই বিষাক্ত। এতে আছে বিপজ্জনক মাত্রার Tropane Alkaloids নামক বিষ। এই গাছের বিষক্রিয়ায় মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ কারণে অনেক দেশেই ধুতরার উৎপাদন,বিপণন ও বহন আইনত নিষিদ্ধ।”
“নিষিদ্ধ আর এমন বিষাক্ত একটা ফুলের নামে আমাকে কেন ডাকো তুমি!”
“ধুতরাফুলের চেয়েও বেশি বিষাক্ত তুই।”
বেরিয়ে গেল ধূসর। থমকে রইলো নিশু। এটা কী ছিল সব মাথার উপর দিয়ে গেল। ধুতরাফুলের চেয়েও সে বেশি বিষাক্ত মানে?
______
চলবে~