#মায়াকুমারী ❤
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(০৮)
___________________
সন্ধ্যার আযান হতেই নামাজ-কালাম আদায় করল আসাদ সাহেব। শুনতে পেলেন ভাগ্নিরা এসেছে রাতে থাকবে। লক্ষ্য করেছিলেন ধ্রুবকে নিয়ে ভাগ্নিরা একটু বেশিই যেন আগ্রহী। কালও তাদের বাসায় দেখেছিল পারে তো কোলে উঠে বসে। ব্যপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেন না আসাদ সাহেব। প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে ওরা। অঘটন ঘটতে কতক্ষণ! লক্ষ্য করলেন চারদিকে একপলক তাকিয়ে দ্রুত ধ্রুবর রুমে ঢুকলেন সুফিয়া বেগম। নীরবে আসাদ সাহেবও যান মায়ের পিছু। দরজা ভিড়িয়ে বিছানায় বসলেন। ধ্রুবর পাশে ওর ফুপাতো বোনরা বসে গল্প করছে। সুফিয়া বেগম বলল,”নাতী তোমারে একটা কথা জিগাইতে চাই?”
“কী দাদী?”
“তুমি কি সত্যিই ওই মাইয়ার লগে সংসার করবা?”
“না।”
ভীষণ খুশি হলো তিনজন।
“তাইলে বিদ্যাশ যাওনের আগে ওই মাইয়ারে তালাক দিয়া দাও। যেই মাইয়ার বাপ-মায়ের পরিচয় নাই,চাল-চুলা কিছু নাই ওমন মাইয়ার লগে কীসের সংসার!”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“পিয়াসা,আমরা নাতনিডা কত সুন্দরী! ওই মাইয়ারে তালাক দিয়া তুমি বরং পিয়াসারে বিয়া কইরা নাও। তোমার ফুপিও চায় তুমি যেন পিয়াসারে বিয়া করো।”
লজ্জায় আড়ষ্ট হলো পিয়াসা। নীরব রইলো ধ্রুব। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ফেললেন আসাদ সাহেব।
“আম্মা আপনি এখানে কী করছেন?”
হকচকালেন সুফিয়া বেগম। আমতা আমতা করলেন।
“একটু বসলাম বাবা। আমার আর কী কাজ,নাতিপুতিদের লগে গল্পগুজব করতাছি!”
“লিভিং স্পেসে আসুন।”
“আচ্ছা।”
“ধূসর কইরে?”
বেরিয়ে এলো ধূসর।
“জ্বী আব্বু!”
বেশকিছু কথা বললেন ধূসরকে। তা শুনতেই সায় দিলো ও।
“ঠিক আছে দুই ঘন্টার ভিতরে সব ম্যানেজ করছি। আপনি বাড়ির দিকটা দেখুন।”
“আচ্ছা।”
দ্যুতি আর ধীরাজকে নিয়ে শপিংমলে গেল ধূসর। তিন ভাইবোন মিলে বেশ কিনা-কাটা করলো। শপিং থেকে আসতেই ওরা দেখল লিভিং স্পেসে বসে আছে সবাই ধ্রুব বাদে। শপিংব্যাগগুলো নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল দ্যুতি। একটু হাঁফ ছেড়ে সোফায় বসল ধূসর।
“শপিং করেছ?”
“জ্বী আব্বু।”
“দিলরুবা তোমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে আসো আর ধূসর..”
“বলেছি আসছে।”
গম্ভীর রইলেন আসাদ সাহেব। এদের বাবা-ছেলের মতলব বুঝতে পারলো না কেউ। ধ্রুবকে ডেকে আনলেন দিলরুবা খাতুন। গম্ভীর হয়ে ধ্রুব এলো বাবার দিকে তাকাল না। একপাশে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর একজন কাজী ঢুকল বাসায়। গম্ভীর মুখে তাকায় ধ্রুব।
“দিলরুবা,নিশুকে নিয়ে আসো।”
লাল টুকটুকে বউ সাজে নিশুকে নিয়ে এলেন দিলরুবা খাতুন এবং দ্যুতি। চমকায় ধ্রুব। ব্যপারটা ঠিক বোধগম্য হলো না। ইশারা দিলেন ধ্রুবর পাশে বসাতে। শ্বাস আঁটকে রইলো নিশু। কাঁপতে লাগলো অনবরত।
“এইসব কী হচ্ছে আম্মা?”
“তোমার বাবা জানে?”
“কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।”
“কার বিয়ে?”
পুত্রের কথায় প্রতিত্তোর করলেন না আসাদ সাহেব। বিয়ে পড়াতে লাগলেন কাজী সাহেব।
“এইসব কী হচ্ছে?”
চেঁচিয়ে উঠলো ধ্রুব।
“তাজ্যপুত্র হতে না চাইলে চুপচাপ থাকো।”
“ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে?”
“না তোমাদের বিয়ে দিচ্ছি।”
বিয়েটা হয়ে গেল ফের ধর্মীয় এবং আইনগতভাবে। গম্ভীর হয়ে লিভিং স্পেসে বসে রইলো ধ্রুব। চোখের পানি ছাড়ল পিয়াসা। সুফিয়া বেগমের ভালো লাগল না কিছু। দোনোমোনো করতে লাগলেন সমানে। গুরুত্ব দিলো না কেউ। কাঁচা ফুল দিয়ে বাসর সাজালো তিন ভাই-বোন মিলে। নিশুকে পাঠিয়ে দিলো বাসরঘরে।
“নিশুর সঙ্গে এক সপ্তাহ সংসার করার পর আমি ভেবে দেখব তোমাকে বিদেশ পাঠানো যায় কি-না! যাও দাম্পত্য জীবন শুরু করো।”
রুমের দিকে পা বাড়ালেন আসাদ সাহেব। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব।
বাসর ঘরে নিয়ে গেল নিশুকে। তাজা ফুলের সুগন্ধে বুক ভরে গেল। আঁকড়ে ধরলো ফুপির হাত।
“বিছানায় গিয়ে বস।”
“আমার খুব ভয় করছে ফুপি।”
“ভয় কীসের! একদিন না একদিন তো মুখোমুখি হওয়া লাগতোই। এখন বিছানায় বস।”
তবুও দাঁড়িয়ে রইলো নিশু। কানে কানে বললেন,”ধ্রুব তোর স্বামী। সে যা চায় তাই করিস বাঁধা দিস না। পুরুষ মানুষ তো সময় মতো বউকে না পেলে অন্য নারীর প্রতি ঝুঁকবে। আজ-কাল নারী-পুরুষ কারো বিশ্বাস নেই। সে যাইহোক,ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা আশা করতে হয়; আদায় করতে হয়। তুই তোর যৌবনের সবকিছু ঢেলে দিস তাহলেই হয়তো বা ওর মনে দাগ কাটবে ইনশাআল্লাহ। বিদেশ গিয়ে বেশিদিন থাকতে পারবে না চলে আসবে দেখিস। এখন উপরে উঠে বস। ওর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নে।”
ধরে বিছানায় উঠিয়ে দিলেন নিশুকে। তাকে ঠিক করে দিলো দ্যুতি। লক্ষ্য করলো নিশু ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে।
“নার্ভাস ফিল করছিস?”
মাথা নাড়ায় নিশু। দু-কদম এগিয়ে গেল ধূসর।
“নার্ভাস হচ্ছিস কেন?”
“উনি যদি কিছু করে?”
“কিছু করবে না। তুই তোর মতো কনভিন্স করে নিস। একজন নারী চাইলে সব পারে।”
মলিন চোখে তাকায় নিশু।
“জীবনটা তোর,তোরটাও তোর,খারাপ সময়টাও তোর,লড়াইটাও তোর,হেরে যাওয়াটাও তোর,প্রত্যাবর্তনটাও তোর,ভালো সময়টাও তোর। যাইহোক,সবখানে তুই নিজেই থাকবি তোর নিজের। তাই মনোবল রাখ। আগে কিংবা পরে হোক একদিন তাকে তোর ফেইস করতেই হতো!”
মাথা নোয়ায় নিশু।
“আমরা যাচ্ছি।”
বেরিয়ে গেল ওরা।
“কীরে গাধী,তুই ঘুরাঘুরি করছিস কেন?”
“কই ঘুরাঘুরি করলাম?”
“একজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানে তোরও হয়ে যাবে এটা ভাবিস না। তোকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না।”
“কী বললে?”
“ছাপড়ি মার্কা মেয়ের মতো লাগে তোকে।”
“তোমাকে ছাপড়ি মার্কা ছেলের মতো লাগে,তোমার ভবিষ্যৎ বউকে ছাপড়ি মার্কা মেয়ের মতো লাগে।”
“পড়তে বস ছাপড়ি কোথাকার।”
“তুমি ছাপড়ি! তোমার চৌদ্দ গুষ্টি ছাপড়ি।”
“তুই ও আমার চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে একজন। পড়তে বস যা।”
“আমার পড়াশোনায় কেউ মনে হয় নজর দিয়েছে।”
“কী বললি?”
“নজর দিয়েছে কেউ নজর! এইজন্য আমাদের মধ্যে এত্ত দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে! বইয়ের কাছেও যেতে ইচ্ছে করে না! মন উঠে গেছে! কেউ না কেউ নজর দিসে! আ’ম শিওর! হতে পারে তোমার ছাপড়ি মার্কা ভবিষ্যৎ বউ।”
গাট্টা মা’রলো মাথায়।
“মাতব্বরি কম কর ছাপড়ি কোথাকার!”
বেণী দুলাতে দুলাতে লিভিং স্পেসের দিকে গেল দ্যুতি।
“ওই ছাপড়ির গুষ্টি বসে রয়েছ কেন বাসর ঘরে যাও। তোমার বধূ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!”
চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব।
“মা’রবা নাকি?”
অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ধ্রুব।
“লাভ নেই। ভয় পাই না। কজ,তোমার তো আবার নিজের বউ থাকতে ওইসব ছাপড়িই পছন্দ। রুচিতে সমস্যা যে তাই।”
পিয়াসা বলল,”ছাপড়ি কাকে বলছিস?”
“তোমাকে না।”
“তাহলে কাকে?”
“তোমার মন খারাপ কেন?”
“কই না তো!”
“শোনো,মনখারাপ করো না ছাপড়ি মার্কা মেয়ে। হুট করে আমাদের ছাপড়ি ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে পরে বড় করে অনুষ্ঠান করবো। তোমাদের দাওয়াত রইলো,ছাপড়ির মতো সেজেগুজে গিফট নিয়ে আসিও কেমন!”
দাঁত-মুখ পিষে দ্যুতির দিকে তাকালো দু-বোন।
“লা লা লা!”
বেণী দুলাতে দুলাতে চলে গেল দ্যুতি।
___
চেঁচামেচি করতে লাগলো আকরাম সাহেব। টেলিভিশন দেখতে বসেছেন কিন্তু রিমোট দিচ্ছে না ছেলে; মানে হয় এইসবের?
“এই ছেলে দ্বারা কোনো উন্নতি নেই। শুধু আমার টাকাপয়সা ধ্বংস করছে!”
গুরুত্ব দিলো না অনিক। টেলিভিশন দেখায় মনোযোগ দিলো।
“দিনকে দিন বেয়াদব তৈরী হয়েছে। বখাটেপনা ছাড়া কোনো কাজ নেই।”
“কী সমস্যা আব্বা। চেঁচান ক্যান? কাউরে সাইজ করা লাগবো?তো টাকার ব্যান্ডেল ছাড়েন সাইজ কইরা দিয়া আসি।”
“অসভ্য পোলাপান!”
“কী সমস্যা আব্বা?”
“পড়াশোনা না করে বখাটেপনা যে করো এটা কি ঠিক?”
“কী বলতে চান?”
“পড়াশোনা করো না কেন?”
“পড়াশোনা হলো নেশার মতো। আর আমি হলাম ভদ্র ঘরের সন্তান তাই নেশা করি না।”
“কী বললে?”
“শুনতে পাননি?”
“জুতাটা কই আমার!”
জুতা খুঁজতে লাগলেন আকরাম সাহেব। সোফা ছেড়ে উঠে গেল অনিক। নির্ঘাত এখন জুতার চাবকানো খাওয়া লাগবে।
“কুত্তার সাথে বাস করা ছেলেগুলোও আজ কবি আর তুই হলি বখাটে। বেরিয়ে যা বাসা থেকে।”
“আমার তো টিকটক নাই নয়তো বাসায় খারাপ লাগলে চলে যেতাম।”
“জুতাটা কই!”
রুমে ঢুকে টেক্সট করলো দ্যুতিকে।
“জরিনার মা কী করো?”
রুমে ঢুকতেই টোন বেজে উঠলো। চেক করতেই দেখল নিউ নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েছে অনিক।
“আপনার এখনও শিক্ষা হয় নাই?”
“কীসের জন্য?”
“আমার ভাইয়ার হাতে মা’র খেলেন সেদিন।”
“ধূৎ! শালাবাবু একটু আদর দিয়েছে এটা কোনো ব্যপার না। তোমার জন্য ম’রতে পারি ও সুন্দরী তুমি গলার মালা!”
“ছাপড়ি কোথাকার।”
“কী কইলা জরিনার মা?”
“একদম এইসব ফাউল নামে ডাকবেন না।”
“আমার সখিনার মা কোথায়?”
“যেখানে ইচ্ছে সেখানে।”
“খবর পাইলাম সখিনার মায়ের নাকি আবারও বিয়ে হয়েছে?”
“তাতে আপনার কী?”
“প্রথম ক্রাশ খাইছিলাম সখিনার মায়ের উপর। পরে যখন শুনলাম সে-তো আমার শালাবৌ তখন ইন্টারেস্ট শেষ হয়ে গেছে।”
“ফাউল।”
“তোমারে একটা মনের কথা কই?”
“কীসের?”
“আমি শিওর কোনো মেয়ে আমাকে তাবিজ করেছে।
তা না হলে তো আমার এতদিন সিঙ্গেল থাকার কথা না। তাবিজটা মনে হয় তুমিই করছো তাই না জরিনার মা?”
“ফাউল।”
“যে যাকে ভালোবাসে
সে তাকে ভালোবাসে না।
সে তাকে ভালোবাসে
সে তাকে ভালোবাসে না।”
“কী বললেন?”
“আমি না তো?”
“তো কে?”
“কবি কাফিন্দ্রনাথ বলেছেন এটা।”
“কাফিন্দ্রনাথ মানে?”
“আরে ফেইসবুকে পেলাম একটু আগে।”
“ছাপড়ি মার্কা কথাবার্তা।”
“জান শোনো।”
“আবারও ফাউল কথা।”
“তোমারে না কইলে কারে কমু?”
“যারে ইচ্ছা তারে।”
“বুঝছো জরিনার মা,মুরগীর বাচ্চার মতো কিউট একটা প্রেমিকা ছিল আমার কিন্তু কুত্তায় নিয়া গেছে তাই তো তোমারে একটু ডিস্টার্ব করি রাগ করো ক্যান!”
“ছাপড়ি মার্কা প্রেমিক যাবেই তো!”
“ছাপড়ি ছাপড়ি কইরো না আইজক্যা কী হয়েছিল জানো?”
“কী?”
“তোমার জন্য চকলেট কিনেছিলাম অনেকগুলো। পরে লোভ সামলাতে পারিনি তাই নিজেই খেয়ে ফেলেছি! ঠিক করছি না বলো?”
“পাগল।”
___
ধ্রুব এখনও বসেই রইলো। এগিয়ে এলেন দিলরুবা খাতুন।
“ধ্রুব বসে রইলি যে ঘুমাবি না?”
নীরব রইলো ধ্রুব। পাশে বসলেন।
“কী সমস্যা তোমার বলো?”
“কিছু না।”
“তো রুমে যাচ্ছ না কেন?”
“কী শুরু করলেন আপনারা?”
“বাবা-মা কি সন্তানের খারাপ চায়?”
“আপনারা চেয়েছেন।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল দিলরুবা খাতুনের।
“তোমার ভুল ধারণা।”
“আমি তো বলেছি আমি ওর সাথে সংসার করব না তারপরেও বাড়াবাড়ি করার মানে কী?”
“দেখো বাবা,অতীত নিয়ে পড়ে থেকে লাভ নেই। তখন কী হয়েছে না হয়েছে এইসব ভুলে যাও। জীবন তো থেমে থাকবে না আজ না হয় কাল লাইফ পার্টনার বাছাই করতেই হবে। আপাতত নিজেকে একটু সময় দাও,নিজেকে মানিয়ে নাও,নিজেকে বুঝাও। তারপর নিজেকে আস্তে আস্তে গোছাও। আল্লাহ ভরসা। এখন যাও।”
তবুও বসে রইলো ধ্রুব।
“ধ্রুব!”
প্রতিত্তোর করলো না।
“কথা শুনবে না?”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“দেখো বাবা,তেইশ এবং আঠারো বছর বয়স কিন্তু খুব একটা বেশি বয়স না সংসার শুরু করার জন্য। তবে চাইলেই সবই সম্ভব অসম্ভব বলে কিছু নেই। মেয়েটার বুঝজ্ঞান হওয়ার পর থেকে তোমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে। স্বামী হিসেবে জানে এবং মানে। আজ-কাল ক্লাস ফাইভ-সিক্স-এর ছেলেমেয়েদের কী একটা অবস্থা! সেখানে তোমাদের এত ধৈর্য! তোমাদের বিয়ে হয়েছে। দু’জনের বয়সটাও কিন্তু দারুণ! নিশু এখন তোমার স্ত্রী। তার প্রতি তোমার অনেক দায়িত্ব,কর্তব্য,অধিকার এবং হক আছে আর তা পালন করা তোমার জন্য ফরয। তুমি গুনাহগার হচ্ছো আল্লাহর কাছে। চাইলে তুমি নিজে ওর কাছে যাবে,কথাবার্তা বলবে,তাকে ভালোবাসার কথা বলবে,তাকে কিছু কিনে দিতে পারো,সময় দিতে পারো,ঘুরতে পারো। তোমরা বিবাহিত। আর জৈবিক চাহিদার ক্ষেত্রে একে-অপরের হক আদায় করা উচিৎ তোমাদের। জৈবিক চাহিদা জীবনের বড় একটা অংশ। তুমি তার সাথে এই বিষয়ে সামনাসামনি বসে কথা বলতে পারো। তেইশ বছরের একজন ছেলের স্ত্রীর কাছে আসার ব্যাকুলতা থাকবে না এটা অস্বাভাবিক ব্যপার। এখনও যাও ওর সাথে বসে কথাবার্তা বলো,ফ্রী হও। কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে প্ল্যান করো। জীবন তো একটাই একে উপভোগ করা উচিৎ। অভিমানের পর্দা টেনে বসে থেকে কী লাভ!
উঠে রুমে ঢুকল ধ্রুব। একপলক তাকিয়ে চলে গেলেন দিলরুবা খাতুন। শ্বাস আঁটকে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রইলো নিশু। ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেল। কী হবে তার সঙ্গে ভেবেই দিশেহারা! ধ্রুব তাকালো না। সোজা ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। সিগারেট ধরালো। লম্বা লম্বা সুখটান দিতে লাগল। ধোঁয়ার গন্ধে কাশতে লাগল নিশু। ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে বেরিয়ে যেতে। অস্থির অস্থির লাগছে তার।
___
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো ধূসর। হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো। ধূসর জানে কে দিয়েছে মেসেজ। পকেট থেকে ফোন নিয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকালো।
“কী করছেন? ঘুমিয়েছেন?”
রিপ্লাই দিলো না ধূসর।
“হাই! আপনি কি জেগে আছেন?”
“তোমার ভাইয়ের মতো তুমিও এত ছ্যাঁছড়া কেন?”
“কী করেছে আমার ভাই?”
“জানো না?”
“তার জন্য আপনি আমার ভাইকে মে’রেছেন। কাজটা ঠিক করেননি আমার ভাই কিন্তু বয়সে আপনার বড়।”
“ভাইয়ের গুনগান গাইছো?”
“না।”
“তোমার ভাইকে বলবে তোমার মতো ছ্যাঁছড়ামি কমাতে। যেমন ছাপড়ি মার্কা ভাই তেমন তার বোন। এই মেয়ে বয়স কত তোমার? নাক টিপলে শিওন পড়বে সেই মেয়ের আবার ছ্যাঁছড়ামি!”
রিপ্লাই এলো না।
“ছাগল মেয়ে! জানো তো ছাগল স্বাধীনতা পেলে প্রথমেই আশেপাশের চারাগাছ খেয়ে ফেলে। কিছু ছাগলের মধ্যে তোমরা দু-ভাই-বোনও তেমন ছাগল।”
অফলাইন হয়ে গেল। রুমে ঢুকল ধ্রুব। দেখল অন্যপাশ ফিরে এলোমেলো হয়ে শুয়ে রয়েছে নিশু। চোখ সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ভীষণ খিদে পেয়েছে দ্যুতির। ফ্রিজ থেকে বক্স বের করে হাফ প্লেটের মধ্যে পরিমাণ মতো পাস্তা বেড়ে ওভেনে গরম করলো। মোবাইল চাপতে চাপতে টেবিলে বসে খেতে লাগলো। ঠিক তখনই রুম থেকে বেরুয় ধূসর। তার উপস্থিতি টের পেতেই চোখ তুলে তাকাতেই ভড়কায় দ্যুতি। কেঁপে উঠে দ্রুত চ্যাটগুলো ডিলেট করে অনিককে ব্লক করে দিলো।
“ভাত না খেয়ে পাস্তা খাচ্ছিস যে?”
“সত্য কথার ভাত নেই তাই পাস্তা খাচ্ছি।”
ভ্রু কুঁচকায় ধূসর।
“তোর আবার কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“মোবাইলে কী করিস?”
“গেম খেলি।”
টান দিয়ে ফোন কেঁড়ে নিয়ে চেক করলো। তেমন কিছু পেলো না।
“অনিকের সাথে চ্যাট করেছিস?”
“করলে দেখতে না?”
শক্ত চোখে তাকায় ধূসর। গ্লাসে পানি ঢেলে এক ঢোক পান করতেই দেখল ছাঁদের দিকে যাচ্ছে ধ্রুব। এক চামচ পাস্তা মুখে পুরলো দ্যুতি।
“এর আবার কী হলো বাসর করবে না!”
নীরব রইলো ধূসর।
“ভাইয়া নিশুর কী অবস্থা?”
“তোর এইসবের জানার দরকার আছে?”
“ফান করছি না সিরিয়াস! নিশু ঠিক আছে কি-না দেখা দরকার!”
“দেখ গিয়ে।”
ধ্রুবর রুমের দিকে পা বাড়াল নিশু। ডোর চাপানোই ছিল। ভিতরে ঢুকতেই দেখল এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে নিশু। চমকায় দ্যুতি। দ্রুত এগিয়ে গেল। কাঁধ ধরে নিজের দিকে ফিরাতেই দেখল শক্ত হয়ে আছে নিশু। রুম থেকে বেরিয়ে ভাইকে ডাকলো।
“ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো।”
“কী হয়েছে?”
“আসো!”
দ্রুত এগিয়ে গেল ধূসর।
“কী হয়েছে?”
“নিশু মনে হচ্ছে ভয়ে সেন্স হারিয়েছে।”
ভিতরে ঢুকল ধূসর। লক্ষ্য করলো তাই,বিরক্ত হয় ধূসর।
“এটা তো একটা রোগী! এরে আবার বাঘের মুখে পাঠানোর কী দরকার ছিল বিরক্তিকর!”
“আরেক ছাপড়ি মার্কা মুডিবয় মুড দেখিয়ে ছাঁদে চলে গেল। তার বউ এদিকে বেহুঁশ হয়ে আছে খবর নেই।”
নিশুকে ডাকল কয়েকবার হুঁশ নেই।
“এর তো প্যারালাইসিস হয়ে যাবে এভাবে থাকলে।”
“আমার রুমে নিয়ে চলো।”
তাদের রুমে নিশুকে নিয়ে গেল ধূসর।
“আব্বু-আম্মুকে ডাকিস না পরে অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাতে-পায়ে তেল মালিশ কর।”
একটা বাটিতে বেশ কিছু অলিভ অয়েল নিয়ে ওভেনে গরম করে হাতে-পায়ে মালিশ করতে লাগলো দ্যুতি। শেষ রাতের দিকে স্বাভাবিক হয় নিশু।
“ভাইয়া তোকে কিছু করেছে নিশু?”
“না।”
“তো অসুস্থ হয়ে পড়লি কেন?”
“জানি না।”
“তোর দ্বারা বাসর হবে না তার চেয়ে বরং ডিভোর্স দিয়ে মুক্তি দে।”
অন্যপাশ ফিরে শুয়ে রইলো নিশু।
“তোদের এইসব দেখলে মাঝেমাঝে মনে হয় আমরা ব্রিটিশদের হাত থেকে নয় বরং ব্রিটিশরাই আমাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কী যে শুরু করলি তোরা দু’জন!”
টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো বালিশে।
“ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখতে চেয়েছিলাম ভেবেছিলাম তিনি তো আমার প্রিয় মানুষ তাঁর কাছে আবার কীসের ব্যক্তিত্ব! কিন্তু তিনি আমায় সস্তা ভাবলেন।”
“আর সস্তা হওয়ার দরকার নেই স্ট্রং হো। যে নরম পেয়ে তোকে সস্তা ভেবেছে কঠিন হয়ে তাকে নতুন ভাবে ভাবতে শেখা। যে পেয়েও তোকে বুঝেনি একবার হারিয়ে গিয়ে তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা বুঝিয়ে দে। স্বার্থ ছাড়া যাদের কাছে তোর গুরুত্ব নেই কৌশলে তাদের কাছ থেকে দূরত্ব বাড়া। নিজের যত্ন নিতে এবং নিজেকে ভালোবাসতে শিখ।”
নীরব রইলো নিশু।
“নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি ফোকাস কর। শুধু ক্যারিয়ারের প্রতি ফোকাস কর আর কিছু না। অনেকের পরিবর্তন দেখতে পাবি।”
“তাই হবে।”
“শোন নিশু,ভালোবাসারও আত্মসম্মান আছে। কিন্তু যেখানে অবহেলা কাজ করে সেখানে আত্মসম্মান থাকে না। সর্বোপরি যেটা ছ্যাঁচরামো সেটা ভালোবাসা না। আবেগ বাদ দিয়ে বাস্তবে ফিরে আয়। যার কাছে তোর ভালোবাসার মূল্য নেই তার কাছ থেকে সরে আয়। তা না হলে তোকে সারাজীবন কাঁদতে হবে ঠিক এখন যেভাবে কাঁদছিস! নিজের ক্যারিয়ার গড়,নিজেকে সময় দে,ভালো ভালো বই পড়,কবিতা লিখ,ছবি আঁক ইত্যাদি।”
__
আযান হতেই নামাজ আদায় করতে উঠলেন আসাদ সাহেব। অযু করে মসজিদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরুতেই দেখলেন ছাঁদ থেকে নামছে ধ্রুব। অপ্রস্তুত হলেও গম্ভীর হয়ে রুমের দিকে পা বাড়াল ধ্রুব। সেদিকে একপলক তাকিয়ে মসজিদে চলে গেলেন আসাদ সাহেব। রুমে ঢুকতেই বিস্ফোরিত হলো ধ্রুব। পুরো ঘর এলোমেলো আর বাসর ঘরের অবস্থা নাজেহাল। বিছানায় নিশু নেই! চোয়াল শক্ত হলো ধ্রুবর। এটা কে করেছে ওই মেয়েটা! এত্ত সাহস তার!
______
চলবে~