#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(১৪)
___________________
সৎমা! সৎমা কথাটা ঠিক অনেকবার উচ্চারণ করেছে ধূসর। আচমকা প্লেটটা পড়ে গেল হাত থেকে। চমকায় ধূসর। দেখল কেমন করে তাকিয়ে রয়েছে নিশু। ঘাবড়ালো ধূসর।
“নিশু আর ইউ ওকে?”
দেখল কেমন নিভু নিভু চোখে তাকাচ্ছে নিশু। মাথাটা ঘুরছে। কিছু স্মৃতি ঝাপসা হয়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে সার্কেল হয়ে ঘুরছে। চুলার আঁচ কমিয়ে নিশুর কাঁধে হাত রাখল ধূসর।
“নিশু ঠিক আছিস?”
চোখ বুজল নিশু। ভড়কায় ধূসর। বুঝতে পারছে না কিছু। কয়েকটা শব্দকে নিশু ভয় পায়। পরকীয়া,ডিভোর্স,সৎমা,বিয়ে,মৃত্যু আর সু’ইসাইড। কেবিনেটের উপর থেকে নামতেই নিষেধ করলো ধূসর।
“নামিস না পায়ে কাঁচ ঢুকবে।”
বসে রইলো নিশু। চুলা অফ করে কাঁচের বড় টুকরোগুলো বিনে ফেলে একটা ন্যাকড়া ভিজিয়ে গুঁড়িগুঁড়ি কাচগুলো টেনে ন্যাকড়া সহ ফেলে দিলো বিনে। আরেকটা ন্যাকড়া দিয়েও সেইম কাজ করলো। কিচেনে ঠুনঠুন আর হঠাৎ কাঁচ ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল দিলরুবা খাতুনের। ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালেন সিঁড়ির সামনে। দেখলেন ধূসর-নিশু কিচেনে। নিশু বসে রয়েছে আর ধূসর ন্যাকড়া দিয়ে ফ্লোর মুছচ্ছে।
“ওয়েট কর নিশু নামিস না। পায়ে কাঁচ ঢুকবে।”
একজোড়া জুতো এনে রাখল।
“জুতা পরে নাম।”
নেমে লিভিং স্পেসে গিয়ে শুয়ে রইলো নিশু। মাথাটা কেমন ঘুরছে। ফের কাজে মন দিলো ধূসর। নুডলস রান্না করে নামানোর আগে কাঁচামরিচ আর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিলো। ধনেপাতার ফ্লেভারটা ধূসরের ভীষণ ভালো লাগে। এরপর শসা কেটে ডিমের খোসা ছাড়িয়ে নিলো। তারপর একটি হাফ প্লেটে নুডলস তুলে লিভিং স্পেসে গেল।
“নিশু আয় খেয়ে নে।”
নিশু উঠলো। নুডলসের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি সুন্দর কালার এসেছে। কেন জানি জ্বীভে জল চলে এলো। কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে লাগলো নিশু। সেদিকে তাকিয়ে রইলেন দিলরুবা খাতুন। দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক তবুও একসঙ্গে দেখলে কেমন একটা ভয় লাগে। যদিও অন্ধবিশ্বাস করা ঠিক না তবুও উনার কেন জানি একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছেলের উপর,নিশুর সাথে আজেবাজে কিছু করবে না। তবুও মন তো উচাটন থাকে। হতেও বা কতক্ষণ! নিশুর প্রতি ধূসরের এত পসেসিভনেসটাও ইদানীং কেন জানি উনার সন্দেহের উদ্রেক। নিশু বোনসমতুল্য বলে কি নাকি এতিম বলে এই পসেসিভনেস বুঝতে পারেন না; নাকি এর আড়ালেও অন্যকিছু! ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেল ধূসর।
“কোথায় ঘুমাতাম রেস্ট করতাম,তা না করে এই মাঝরাতে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে ছাড়লি নিশু। একটা থ্যাংকিউ বলিসনি। ধূৎ তুই তোর বাপের মতো অকৃতজ্ঞ!”
নিশু কিছু বললো না।
“খেয়েদেয়ে সুন্দর করে ঘুমাবি বুঝলি!”
মাথা নাড়ালো নিশু। দিলরুবা খাতুন সরে গেলেন।
“এই শুন মাঝরাতে আর কখনো কিচেনে ঢুকবি না।”
“কেন?”
“কিছু খেতে ইচ্ছে করলে রিনা খালা অথবা আম্মাকে বলবি পাকনামি করিস না।”
নিশু তাকায়। নিশুর চোখগুলো কেমন জানি গর্তে ঢুকে গেছে। ডার্ক সার্কেলও পড়েছে। জীবন্ত চোখগুলো আজ কেন জানি ম’রা দেখাচ্ছে। কাঁদে নাকি মেয়েটা? ভীষণ দুঃখ হয়! দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিশুর চোখের মণিগুলো গাঢ় কালো। ধূসর আফসোস করে যদি ধূসর রঙের হতো তাহলে কী হতো? তখন একদম বলাকৃতির সূর্যের মতো মণিটাকে দেখাতো! শুকতারা নিভে যাওয়ার পর সূর্য যেভাবে টকটকে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে উঠে ঠিক চোখের মণিগুলোকে তেমনই জ্বলজ্বলে লাগতো!
“রাতের বেলায় গ্যাসের লাইন অটো লিক হয়ে যায়। তুই যদি আসিস তাহলে আগুন ধরবে।”
ভড়কানো চোখে তাকায় নিশু।
“সত্যি!”
“হ্যাঁ। তাই রাতের বেলা কিচেনে আসা ঠিক না।”
ধূসরের বানোয়াট কথাটি বিশ্বাস করে নিলো নিশু।
“মেডিসিন খেয়েছিস ঠিকঠাক মতো?”
“হুম।”
“মেডিসিন নষ্ট করিস না সব খাবি।”
খেয়ে ঘুমাতে চলে গেল নিশু। শিওর হয়ে কিচেনে প্লেটগুলো রেখে বাকি নুডলসগুলো একটি সিরামিকের ঢাকনাওয়ালা বক্সে তুলে ফ্রিজে রেখে দিয়ে সেও ঘুমাতে গেল। নিশু তার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে আজ। হামি তুললো ধূসর।
__
“কই গেলে দিলরুবা?”
চমকলেন তিনি।
“ঘুমাননি?”
“কিছু ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।”
“কিচেনে ধূসর আর নিশু ছিল।”
“ও।”
স্বামীর পাশে শুয়ে পড়লেন।
“আমার মাঝেমধ্যে কী মনে হয় জানেন?”
“কী?”
“আপনার মেজ ছেলে নিশুকে পছন্দ করে।”
“আজেবাজে কথা বলিও না দিলরুবা। ধূসরের মন ফ্রেশ। ও নিশু-দ্যুতি দু’জনকেই এক চোখে দেখে। যেমন আদর করে তেমনি শাসনও করে। আর এটা সবকিছুতেই। বাবা হয়ে আমি যেই সময় দিতে পারছি না সেটা ও সবদিক দিয়ে সামলে নেয়। আমার এই ছেলেটা খুবই গুণী আর কর্মঠ।”
“বলছিলাম,আপনার বড় ছেলে তো ডিভোর্স দিয়ে চলে গেল। নিশুতো ঘরের মেয়ে। ধূসর যদি নিশুর দায়িত্ব নেয় কেমন হয়?”
“ধূসর বোনের চোখে দেখে নিশুকে ওইচোখে না। আর জোরজবরদস্তি করে একবার শিক্ষা হয়েছে আমার। ডিমেনশিয়ায় ভুগছে মেয়েটা। এখন আবার এই ছেলেটাকে যদি ঠিক এমন করি কেমন হবে পরিস্থিতি হবে একবার ভাবো!”
“তাও ঠিক। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় আপনার মেজ ছেলে নিশুকে পছন্দ করে”
“নিশু তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী। যখন তিনজন মুখোমুখি হবে কী রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে একবার ভাবো! এক ভাইয়ের বউ আরেক ভাইয়ের সঙ্গে সংসার করবে এটা কেমন না দিলরুবা?”
“মন্দ বলেননি।”
“নিশু এখন ডিভোর্সি। ধূসর কি মানবে?”
স্বামীর চোখের দিকে তাকালেন।
“তোমার বড় ছেলে মুখটা পর্যন্ত দেখতে আগ্রহী নয় সেখানে নিশু এখন ডিভোর্সি এটা ধূসর কীভাবে নিবে! ট্রলের মুখে না জানি আবার পড়ে যায়। এই তো যেই যুগ বের হয়েছে তিলকে বানায় তাল। পরে বলবে,দেবরের সঙ্গে পরকীয়া করে বিয়ে করেছে। কিন্তু সত্যিটা তো আমরা জানি।”
“আপনার মতো এত ভাবিনি। আসলেই খুব চিন্তা করি নিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে।”
“চিন্তার কী আছে,পড়াশোনা করুক বয়স হোক।”
“মেয়েদের যত অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া যা ততই মঙ্গল। ততই ভালো পাত্র পাওয়া যায়। আজকাল ১৮ বছর হলেই মানুষ মনে করে মেয়েরা বুড়ি হয়ে গেছে। বয়স্ক বলে বিয়ে করাতে চায় না। ছোট্ট ছোট্ট পিচ্চি মেয়ে খুঁজে বয়স্ক ছেলের জন্য। কারণ তাদের উপর ছড়ি ঘুরাতে পারবে আর কন্ট্রোলেও রাখতে পারবে তাই।”
“বাদ দাও। আজেবাজে পাত্রের কাছে বিয়ে দিবো না।”
“দিলারা চায় নিশুকে পুত্রবধূ করে নিতে। বললো,মুখে মুখেই তো বিয়ে হয়েছে সংসার তো হয়নি।”
“আপাতত এই বিষয়ে বাদ।”
দিলরুবা খাতুন মৃদু হাসলেন। বুঝতে পারলেন স্বামী রেগে গিয়েছে। তিনি চান ঘরের মেয়ে ঘরে থাকুক। আযান হতেই অযু করে মসজিদে চলে গেলেন আসাদ সাহেব। দিলরুবা খাতুন নামাজ আদায় করে তাসবিহ পাঠ করতে লাগলেন। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। ভড়কালেন তিনি। এত ভোরে কেউ কখনো কল করে না উনাকে। ফোন হাতে নিতেই মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।
“হ্যালো বাবা!”
সালাম দিলো ধ্রুব।
“আম্মা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“কী করো বাবা?”
“ভার্সিটি থেকে এলাম সবে।”
“ও। খাওয়া-দাওয়া করেছ?”
“হুম।”
“কী করো?”
“কিছু না।”
“নিজের খেয়াল রেখো। মন দিয়ে পড়াশোনা করো।”
“আচ্ছা রাখি।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো ধ্রুব। এই নিয়ে মাত্র দু-দিন ফোন করলো ধ্রুব। এইটুক বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। উনি আশায় থাকেন এই বুঝি বাবা,ভাই কিংবা বোন অথবা নিশুর কথা জিজ্ঞেস করবেন কিন্তু কিছুই করে না। যতটা আশা নিয়ে থাকেন ততটাই নিরাশ করে ছেলেটা। মনটা কেন জানি মলিন হয়ে গেল। হঠাৎ রিনা খালার চিৎকারে ভড়কে গেলেন। ঘুম ভাঙ্গলো ধূসরের। একপ্রকার ছুটে এলো।
“কী হয়েছে খালা চিৎকার করছো কেন?”
“হায় আল্লাহ! রাতে জ্বীন এসে কিচেনে রান্ধাবাড়া কইরা গেছে।”
“কী?”
“হাঁচা কইতাছি! জ্বীন চিংড়ি দিয়া নুডলস রানছে। এরপর পুরা কিচেনে একগাদা জিনিস ময়লা কইরা চইলা গেছে। হাফ পেলেট ভাইঙ্গা ফালাইছে!”
দিলরুবা খাতুন এসে দাঁড়ালেন।
“আজেবাজে কথা কম বলো খালা। রাতে আমি নুডলস রান্না করেছি।”
“ও আইচ্ছা তো আগে কইবেন তো!”
“এটার জন্য এভাবে চিৎকার করা লাগে আজব!”
রুমের দিকে পা বাড়ালো ধূসর। ঘুমটাই নষ্ট করে দিয়েছে এই খালা। সব পাগলের কারখানা এই বাসায়। আরেকটা রাতে লবণ,মরিচ,হলুদ,চিনি চোখের সামনে যা পেয়েছে সব দিয়ে ডিম পোঁচ করেছে।
__
ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে ধ্রুব। আকস্মিক নক পড়লো ডোরে। চমকে উঠে ডোর খুলতেই দেখল অ্যানি দাঁড়িয়ে রয়েছে। চমকায় ধ্রুব।
“তুমি!”
“হায় হ্যান্ডসাম!”
“কী চাই?”
“এভাবে কথা বলছো কেন! আমি কি আসতে পারি না?”
“না।”
“ভিতরে আসতে বলবে না?”
“আমি বিরক্তবোধ করছি!”
“প্লিজ ধ্রুব ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!”
“ফিরে যাও।”
ধ্রুবর বুকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল অ্যানি। ওর পিছনে আরো চার-পাঁচটা মেয়ে। হতভম্ব হলো ধ্রুব।
“আসো ড্রিংক করবো! অনেক ড্রিংক নিয়ে এসেছি।”
“বেরিয়ে যাও বলছি!”
“সিনক্রিয়েট করো না ধ্রুব! তোমাকে চাই মানে চাই! আমার পছন্দ হয়েছে তোমাকে! ইগনোর এবং রিজেক্ট করছো কেন?”
একটা গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে ধ্রুবর মুখের সামনে ধরে বাঁকা হাসলো। অ্যানির মতলব যে ভীষণ বাজে টের পাচ্ছে ধ্রুব। কী করতে চাইছে অ্যানি?
__
মেসেজের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল অনিকের। ঘুম থেকে উঠতেই চমকে গেল।
“ওই আমার গলায় মালা পড়ালো কে রে!”
ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো অনিক। নিজের দিকে তাকাতেই দেখল তার গলায় লুঙ্গি ঝুলানো!
“ধূৎ! দিলো বিয়ে বিয়ে ফিলিংসটা নষ্ট কইরা!”
ফোন চেক করতেই দেখল টেক্স দিয়েছে দ্যুতি। অপেন করতেই সেখানে লেখা-“আমার আব্বু বলেছে উনার সাথে দেখা করতে।”
“কেন?”
কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই এলো-“আব্বু আমাদেরকে কালও দেখে ফেলেছে!”
“তুমি টেনশন করো না জান। আমি হ্যান্ডেল করে নিবো। এখন আইলাভিউ বলো।”
অফলাইন হয়ে গেল দ্যুতি। মায়ের ডাক শুনতেই নিশুকে নিয়ে নাস্তা করতে নিচে। নাস্তা করতে বসে ধূসর বলল,”আব্বা আমাদের জন্য একটা গাড়ি কেনা লাগবে।”
“কোনটা?”
“একটা প্রাইভেট কার দরকার। বাইকে নিশু স্রেফ না। রাস্তায় থেকে যায় ও।”
“একবার কিনে দিলাম বললে লাগবে না তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে বিক্রি করে দিলাম।”
“তখন লাগেনি বাইকেই আমাদের ভালো লাগতো। ইদানীং নিশু রাস্তায় থেকে যায়।”
“আচ্ছা কাল সময় করে গাড়ি দেখতে যাবো। কী কালারের গাড়ি তোমাদের পছন্দ?”
ওদের তিনজনের উদ্দেশ্যে বললো।
দ্যুতি বলল,”আব্বু আমার অ্যাশ কালার পছন্দ।”
ধূসর বলল,”হোয়াইট কালারই ভদ্র।”
নিশু বলল,”টুকটুকে লাল একটা গাড়ি কিনো আব্বু।”
দ্যুতি বলল,”লাল রঙ ক্ষ্যাত কালার নিশু।”
আসাদ সাহেব বললেন,”আচ্ছা লাল রঙের কিনি না হয়। নিশু যেহেতু বলেছে।”
“আব্বু তুমি নিশুর পছন্দে গাড়ি কিনবে আমি তোমার কেউ না?”
“আচ্ছা যা দুইটা কিনে দিবো। একদিন একটা ইউজ করবি সমস্যা কী!”
“থাক লাগবে না আব্বু।”
___
রেডি হয়ে আসাদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চলে গেল অনিক। যেভাবেই হোক আজ শ্বশুর মশাইয়ের কথা শুনতে হবে। উনি ক্যাশ কাউন্টারের বসে টাকার হিসেব কষছেন। উনার এক কর্মচারী জানালো,”স্যার অনিক নামের একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।”
“আসতে বলো।”
অনুমতি পেয়ে ভিতরে ঢুকল অনিক। সালাম দিলো। গম্ভীর হয়ে সালাম নিলেন তিনি।
“বসো।”
অনিক বসলো। বুক ধুকপুক করছে তার কেন জানি! চশমা ঠিক করলেন। কফি আর স্ন্যাকস অর্ডার করতে বললেন কর্মচারীকে।
“নাম কী?”
“অনিক।”
“তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল রাইট?”
“জ্বী!”
“পড়াশোনা কতটুকু?”
“অনার্স কমপ্লিট করলাম এবার।”
“ওহ! আমার মেয়েকে কীভাবে চিনো তুমি?”
“আমার বোনের ফ্রেন্ড।”
“আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক?”
“কোনো সম্পর্ক এখনও হয়নি আংকেল আপনার আর আপনার ঘাড়ত্যাড়া ছেলে দুই নাম্বারটার জন্য।”
এভাবে বলায় একটু চমকান। অনিকের মুখের যে বেড়া নেই তা ঢের জানেন।
“আমার মেয়েকে ভুলে যাও।”
“অসম্ভব!”
“তার বিনিময়ে যা চাও তাই পাবে।”
“ঠিক আছে। তাহলে আপনার ছেলের বউ নিতা আম্বানি অর্থাৎ নিশুরে আমার সঙ্গে বিয়া দিয়া দেন তাইলে আমি ফিতা আম্বানি ধুতিরে ভুইল্যা যামু।”
আগুন চোখে তাকালেন আসাদ সাহেব। অনিকের মেজাজ খারাপ! কোথায় বিয়ে করার অফার দিবে তা না উল্টো বলছে ভুলে যেতে! মানে হয়! এত্ত সোজা! শ্লার জীবনটা বাপ্পারাজের মতো দুঃখে দুঃখে গেল। স্যরি ছ্যাঁকা খাইতে খাইতে গেল এখন আবার বলছে ভুলে যেতে! ইম্পসিবল! জাস্ট ইম্পসিবল!
“এই ছেলে মাথা ঠিক আছে তোমার?”
“না। হুটহাট আমার মাথার তার ছিঁড়ে যায়।”
আগুন চোখে তাকালেন আসাদ সাহেব। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো আশিক। মাথার চুলগুলো ঠেলে পিছনে নিয়ে কলার ঠিক করে বুক টানটান করলো।
“কী আর বলবো শ্বশুর মশাই,এই যে হুটহাট আমার মাথার তার ছিঁড়ে যায় এই ব্যপারটা আমার নিজেরই পছন্দ না। কিন্তু কী আর করার! নিজের মাথাই তো কেটে তো আর ফেলে দিতে পারি না!”
“আশা করি তোমাকে কী বলেছি বুঝতে পেরেছো!”
“আশা করি আমি আপনাকে কী বলেছি বুঝতে পেরেছেন!”
বিরক্তিকর চোখে তাকালেন আসাদ সাহেব।
“রাগ করছেন কেন শ্বশুর মশাই! মানে কী আর বলবো হবু শ্বশুর মশাই,আসলেই আমার চোখ দিয়ে যাকে দেখি তাকেই ভালো লাগে। এবার সেটা যেই হোক! নিতা-ফিতা দু’জনকেই আমার ভীষণ পছন্দ!”
“মশকরা করো না ছেলে!”
“আপনার কি মনে হয় আমি মশকরা করার মতো মানুষ?”
ঠিক কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। এ কীসের পাল্লায় পড়লেন! এমন একটা সিরিয়াস মুহূর্তেও একজন মানুষ কীভাবে পারে এমন কথা বলতে মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিলো উনার।
“সে যাইহোক,শোনো আমাদের ফ্যামিলির সঙ্গে তোমাদের যাবে না। তাই এইসব পাগলামি বন্ধ করে জীবনের প্রতি সিরিয়াস হও। জীবন মজা করার জিনিস নয়। পড়াশোনা করে ফিউচার ব্রাইট করো।”
“বলতে চাচ্ছেন আপনারা ফকির?”
শক্ত চোখে তাকালেন আসাদ সাহেব।
“একদম চিন্তা করবেন না হবু শ্বশুর মশাই! দরকার পড়লে আপনার সাথে ভিক্ষা করবো। এখন বলুন কয়টা টিনের থালা-বাটি অর্ডার করবো একটা না দুইটা? অনলাইনে অর্ডার করবো নাকি অফলাইন থেকে কিনবেন? না-কি আপনার পুরোনো থালাটা হলেই চলবে অর্থাৎ জামাই-শ্বশুর দু’জনে একটা থালা দিয়ে ভিক্ষা করতে পারব তো নাকি দুইটা লাগবে! আর আপনার সেই পুরোনো থালাটায় ছিদ্র থাকলে তো আবার কয়েনগুলো পড়ে যাবে। তাহলে তো আমরা আর বড়লোক হতে পারব না!”
বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন আসাদ সাহেব। ঠিক কী করা উচিত বুঝতে পারছেন না!
“ফাজলামো করছো তুমি আমার সঙ্গে?”
ধমকে উঠলেন তিনি।
“রাগ করছেন কেন শ্বশুর মশাই খারাপ কিছু তো বলিনি! আর ভিক্ষা করা হালাল। সমস্যা কী আমরা জামাই-শ্বশুর না হয় আমার আল্লাহর নবীজির নাম বলে ভিক্ষা করবো! আপনি থালা ধরে রাখবেন আর আমি ব্যাগ।”
“এই ছেলে কী আছে তোমার তুমি নিশুকে বিয়ে করতে বলো?”
“আমি আপনার মতো ফকির মানুষ!”
আগুন চোখে তাকালেন তিনি। আর সহ্য হচ্ছে না ছেলেটাকে।
“এখন আপনি যদি নিতা আম্বানিকে বিয়ে দিতে না চান তাহলে ফিতা আম্বানিকে না হয় বিয়ে করবো।”
“কী আছে তোমার?”
রাগে কাঁপতে লাগলেন তিনি।
“আমার কিছু নেই,কিন্তু আমার আব্বার অনেক টাকা আছে।”
“কোন গুণ আছে তোমার?”
“শিরায় শিরায় ত্যাঁড়ামি ছাড়া আমার আর কোনো গুণ নেই!”
“ও আচ্ছা,তাহলে কী আছে তোমার কী দিয়ে আগলে রাখবে আমার মেয়েকে?”
“একটা বরই খেলে মেয়েরা যেমন ঘন্টার পর ঘন্টা সেটার বিচি মুখে রেখে দেয় আমি সেইভাবে আপনার মেয়ে ধুতি ছরি ফিতা আম্বানিকে আগলে রাখব। আমাকে আগলে রাখতে শিখাবেন না শ্বশুর আব্বা!”
“তুমি আমার চোখের সামনে থেকে বিদেয় হও।”
“কেন মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ হয়নি আমাকে?”
“বিরক্তিকর!”
“কী করলে মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলুন?”
“আমার মেয়ের আশেপাশে যেন তোমাকে আর দেখি।”
“তাহলে কি বাসরঘরে দেখবেন?”
______
চলবে~