#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(১৬)
___________________
মলিন মুখে লিভিং স্পেসে বসে রইলো নিশু-দ্যুতি। নিশু স্যান্ডউইচ খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। সেদিকে মন নেই দ্যুতির। চট করে পাশে এসে বসলো ধূসর।
“কীরে মুখকে পেঁচার মতো করে রাখলি কেন?”
নীরব রইলো দ্যুতি।
“বখাটেটাকে ভাবছিস?”
“ফাজলামি বাদ দাও। কিছু হলেই ওর কথা! তোমারটা জানি না ভাবছো!”
চমকায় ধূসর।
“কী জানিস?”
“তুমি যা জানো আমিও তা।”
“তোর মাথা!”
মুখ সরিয়ে নিলো দ্যুতি।
“এক কাপ চা দে।”
“নিয়ে খাও।”
“দিবি!”
উঠে গেল দ্যুতি। কিছুক্ষণ পর চা বানিয়ে আনলো।
“পড়াশোনার কী খবর?”
কিছু বললো না দ্যুতি। নিশুর দিকে তাকালো। তার খবর নেই এদিকে। যাক নিশুই ভালো আছে। দুনিয়াবী কোনো টেনশন নেই তার। খায়-দায় আর ঘুমায় আর মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কাজ করে তার বকা খায়। ভেবেছিল হায়দ্রাবাদ নিয়ে যাবে। ওখানের হসপিটালে সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। এই তো নেক্সট রবিবার পাসপোর্ট করতে যাবে নিশুর। এখন নিশু যদি সত্যিই সুস্থ হয় এবং মোমোরি রিকোভার করে তাহলে দিন-রাত আবারও মানসিক ট্রমায় ভুগবে। কেন জানি নিশুর ট্রিটমেন্ট করতে ইচ্ছে করছে না। তার মনে হয় যে সব ভুলে নিশু এখন যথেষ্ট ভালো আছে। সুস্থ হলে সেই আবারও শুরু হবে আগের মতো। ট্রিটমেন্ট করবে কি-না সেই দ্বিধাদ্বন্দে পড়লো। ডিভোর্স লেটার না দেখলেও ধূসর এইটুকু শিওর ডিভোর্স কর্নফাম দু’জনের। যতটুকু মায়ের থেকে জানতে পারলো নিশু নাকি ছিঁড়ে ফেলেছে পেপার। আদেও দু’জন সাইন করেছে কি-না সেইটুকু তার মায়ের থেকে জিজ্ঞেস করেও জানতে পারেনি। এই বিষয়ে তিনি মুখ ফুটে কিছু বলেননি। চায়ে চুমুক দিলো।
“দ্যুতি!”
“বলো!”
“এই বয়সে এমন হয়।”
ভাইয়ের দিকে তাকায়।
“ভালো লাগে,ক্রাশ খাওয়া হয়,ভালো-মন্দ সবাইকেই ভালো লাগে। কারণ এই বয়সে মানসিক পরিবর্তন হয়,আবেগ,অনুভূতি বাড়ে। তাই এইসব পাত্তা না দিয়ে নিজের লাইফ নিয়ে সিরিয়াস হো,পড়াশোনা কর,পারলে টুকটাক মা এবং রিনা খালার সাথে বাসার কাজ কর,যেমনটা নিশুও করতো। নিজেকে এক্টিভ কর,রেগুলার নামাজ পড়,কাজের লোকের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের কাজগুলো করার চেষ্টা কর,ফিউচারের কথা ভাব,ক্যারিয়ারে কীভাবে ফোকাস করবি সেটা ভাব,ফিনান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট কীভাবে হওয়া যায় সেটা ভাব,দু’জন মিলে প্ল্যান কর কীভাবে তোরা তোদের লাইফ ব্রাইট করবি,স্টাবলিশ হবি ইত্যাদি। অনিকের বাবা একজন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী কিন্তু অনিক করে বখাটেপনা। বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে মা’রপিট করে ও পৈশাচিক আনন্দ পায়। আমি যতটুকু জানি মেয়েরা গোছানো ছেলেদের থেকে বেশি উসকোখুসকো,অগোছালো,বাউণ্ডুলে,বখাটে,মদ-গাঞ্জা-ইয়াবাখোর,জুয়ারি ছেলেদের প্রেমে পড়ে বেশি। তার কারণ মেয়েরা মনে করে ওত গোছানো ওকে আর কী গুছাবো! আর বাউণ্ডুলে ছেলের বেলায় বলে,ওকে আমার সর্বস্ব এবং ভালোবাসা দিয়ে গুছিয়ে নিব। তোর ব্যপারটাও তেমন। হয়তো মনে মনে চাস,তুই ওকে ভালেবেসে গুছিয়ে নিবি। শোন,ওদের শিরায় শিরায় রাজনীতি। আর ওই ছেলের শিরায় শিরায় ত্যাঁড়ামি। এছাড়াও আমি এবং আমাদের পরিবার রাজনীতি প্রচন্ড ঘৃণা করে। আমার মতে রাজনীতি করা মানে অন্যের গোলামি করা। নিজের কর্ম নিজে করে খাব এটাই ঢের। তাই তাদের সাথে আমাদের যাবে না। অনিকের বাবার নাকউঁচু! আমরা হয়তো তাদের থেকে ক্ষমতা কিংবা অর্থে-বিত্তে কম হতে পারি তবে ফেলে দেওয়ার মতোও না। আমাদেরও যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। আমাদের কোনো দূর্নাম নেই কারণ আমরা ওইরকম পরিবারের বিলং করি। আমরা সবসময়ই আমাদের পরিবারের সুনাম নিয়ে পসেসিভ তাই যেকোনো কিছু করার পূর্বে একশোবার ভেবেচিন্তে করি। পরিবারের দূর্নাম ছড়াক এমন কিছু কখনো করতে একশোবার ভাবি। আশা করি বুঝতে পেরেছিস। অনিক তোর জন্য না যতদিন না ও নিজ থেকে শুধরাচ্ছে!”
মাথা নুয়ে নীরব রইলো দ্যুতি।
__
একনাগাড়ে সবগুলো ক্লাস সেরে বেরুতেই আবারও মুখোমুখি হলো অ্যানির। বিরক্তির মাত্রা এবার চরম পর্যায়ে উঠলো।
“হায় হ্যান্ডসাম তুমি আমাকে ইগনোর করছো কেন?”
“কাল ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পরেও দেখছি তোমার লজ্জা হয়নি!”
অপ্রস্তুতবোধ করলো অ্যানি।
“ধ্রুব আই লাভ ইউ!”
কষিয়ে একটা থাপ্পড় মা’রলো অ্যানির গালে। হতভম্ব হয়ে গেল সে। বেশ কিছু স্টুডেন্ট তাকিয়ে রইলো। ইনসাল্ট ফিল করলো অ্যানি।
“শেইমলেস!”
“কাজটা ঠিক করোনি!”
“ডোন্ট কেয়ার।”
গটগট আওয়াজ তুলে হাঁটতে লাগলো ধ্রুব।
“তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছো ধ্রুব।”
“আমি না তুমি।”
“তোমাকে ভালোবাসা কি অপরাধ?”
“হ্যাঁ। তাই লিমিটেশন বজায় রাখো! এরপরও বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে পুলিশে দিব। আর না হয় কম্প্লিং করলো ভার্সিটিতে। বাকিটা তোমার ইচ্ছে। হয়তো আমি পড়বো নয়তো তুমি পড়বে! এরপরেও বাড়াবাড়ি করলে আমি আমার দেশে কিংবা অন্য কোনো দেশে শিফট হবো।”
পা বাড়ালো ধ্রুব। আগুন চোখে তাকিয়ে রইলো অ্যানি। অনেক অহংকার ছেলেটার। থ্রেট দিয়েছে তাকে।
“হেই ইউ হ্যালো!”
তাকালো না ধ্রুব।
“এই এই দাঁড়াও!”
বাঙালি কথা শুনতেই চমকে দাঁড়ালো ধ্রুব। হাঁফাতে হাঁফাতে সামনে এসে দাঁড়ালো নীলি।
“হায় আমি নীলি!”
হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো কিন্তু গম্ভীর রইলো ধ্রুব। হাত বাড়ালো না সে। বিব্রতবোধ করলো নীলি।
“আমি বাংলাদেশী তুমিও নিশ্চয়ই!”
“হুম তো?”
“তোমাকে দেখে খুশি হলাম।”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি?”
“নো।”
হাঁটতে লাগলো ধ্রুব। অপ্রস্তুতবোধ করলো নীলি। এত্ত অ্যাটিটিউড কেন ছেলেটার?একটু আগে অ্যানিকে থাপ্পড় দিয়েছে। ভার্সিটি থেকে বেরুতেই চোখ পড়লো একটি গাছের নিচে পাতানো বেঞ্চে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে থাকা একজোড়া ছেলে-মেয়ের দিকে। মেয়েটার সোনালি চুলে নাক গুঁজেছে ছেলেটা। হয়তো ঘ্রাণ নিচ্ছে। আরেক জোড়া ছেলে-মেয়ের দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখল ভীষণ বাজে অবস্থায় তারা। চুমু খাচ্ছে দু’জন। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। গাড়িতে উঠে বাসার দিকে রওনা দিলো। অবশ্য এদেশে এইসব কিছুই না। রাস্তায় বসেও ওরা সব নোংরামি করতে পারে। তবে হঠাৎ কেন জানি বারবার প্রথম দৃশ্যটি মনে পড়ছে! নিশুর চুলগুলোও তো অনেক ঘন,লম্বা,কালো। আচ্ছা নিশুর আবার কারো সাথে বিয়ে হলে তার স্বামীও তার চুলে এইভাবে মুখ গুঁজবে নিশ্চয়ই! প্রতিদিন সকালে ওই লম্বা লম্বা ভেজা চুলের তাজা ঘ্রাণ নিবে প্রাণভরে। চট করে মনে পড়লো নিশুকে,সে-তো তাকে পছন্দ করে না ধূসরের সাথেই যত ঘনিষ্ঠতা। ধূসরের সাথে বিয়ে হলে নিশ্চয়ই প্রতিদিন সকালে নিশুর ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিবে! কারণ নিশুর জন্য ধূসরের চোখে স্পষ্ট ভালোবাসা দেখেছে সে। আর তাদের ঘনিষ্ঠতাও চোখে পড়ার মতো। অন্য মনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো ধ্রুব। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কেন জানি দৃশ্যটি ইম্যাজিন করতেই আকস্মিক এক্সিডেন্ট করে বসলো। মুহূর্তেই কপাল ফেটে রক্তে ভেসে গেল শরীর। তবুও ঝাপসা মস্তিষ্কে চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিশুর ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে ধূসর।
___
বিকেলবেলা। লাঞ্চ সেরে দ্যুতি ঘুমাচ্ছে। নিশুর ঘুম এলো না। শোয়া থেকে উঠে জ্যাক-জেমি দু’জনকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। ব্যালকনি থেকে দেখল নিচে গ্যারেজে দু’জন ধূসরের বাইকের উপর বসে আছে। ঘাবড়ায় নিশু। ধূসর দেখলেই নির্ঘাত আঁছাড় দিবে আজ। আস্তে করে ডোর খুলে বেরিয়ে নিচে চলে গেল। হাত বাড়াতেই জ্যাক কোলে এলো। উপরের দিকে উঠতে নিতেই হঠাৎ ডাক পড়লো,”হায় প্রিটি গার্ল!”
চমকে তাকায় নিশু। দেখল বাইকে বসা ইন্সপেক্টর আবির। লোকটা এখানে কেন এলো!
“প্রিটি গার্ল এদিকে আসো।”
পিছু ফিরে এগিয়ে এলো নিশু।
“আপনি এখানে কেন এলেন?”
“তোমাকে দেখতে!”
“আমাকে দেখার কী আছে?”
“সেটা তুমি বুঝবে না প্রিটি গার্ল।”
জ্যাককে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো নিশু।
“পেট লাভার?”
“হুম।”
“চলো ঘুরে আসি।”
“কোথায়?”
“আশেপাশে।”
“না।”
“আরেহ কিছু হবে না আসো।”
আচমকা নিশুর হাত ধরে টান দিয়ে বাইকের পিছনে উঠালো।
“কী করছেন?”
“চলো একটু ঘুরি। আবার নিয়ে আসবো।”
নামতে নিতেই স্টার্ট দিয়ে স্পিড বাড়ালো আবির। সব মাথার উপর দিয়ে গেল।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
কিছু বললো না আবির। একটা পার্কের সামনে ব্রেক কষলো। নিশুর হাত ধরে নামিয়ে সেদিকে পা বাড়ালো। আশেপাশে তাকালো নিশু। অনেক মানুষ আছে তবুও ভয় লাগছে!
“এখানে কেন নিয়ে এলেন?”
“তোমার সাথে একটু সময় কাটাবো!”
“কেন?”
নীরব রইলো আবির। হাত ধরে একটি বেঞ্চে বসলো। নিশুর দিকে তাকালো। নীল কামিজ আর চুড়িদার পরনে। ছোট্ট ছোট্ট চুলগুলো ছাড়া। জ্যাককে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে রেখেছে। ভীতসন্ত্রস্ত দেখালো নিশুকে। অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো আবির। নিশুকে তার ভীষণ ভালো লাগে। ভাবলো বিয়ের অফার পাঠাবে। তার আগে একটু ফ্রী হয়ে নেওয়া যাক। ডিমেনশিয়া আছে তা জানে সঠিক ট্রিটমেন্ট করলে সুস্থ হতে পারে তাই ওটা ম্যাটার করলো না তার কাছে। ভীত নজরে আশেপাশে তাকাচ্ছে নিশু।
“আমাকে দিয়ে আসুন।”
“যাবো তো একটু থাকি কথা বলি।”
গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে এসেছিল সিফাত। ইন্সপেক্টর আবিরের সঙ্গে নিশুকে দেখতেই চমকালো। ইন্সপেক্টর আবিরের সঙ্গে নিশু এখানে কী করছে? নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে। ফোন করলো অনিককে।
“দোস্ত কই তুই?”
“রেস্ট নিতাছি।”
“হ্লা রেস্ট পরে নিস। ইন্সপেক্টর আবিরের সঙ্গে নিতাকে দেখলাম।”
“কী!”
“সত্যি বলছি!”
লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠলো।
“ওই শ্লা কোথায়?”
“পার্কে।”
“তুই থাক আমি আসতেছি।”
চোয়াল শক্ত করলো অনিক। নিশু পার্কে তাও আবার ইন্সপেক্টর আবিরের সঙ্গে মানে কী? ঘাপলা আছে। আর ওই শ্লা গাধাটা কোথায়? ওর উঁচু নাকের সামনে দিয়ে যে মেয়েটাকে নিয়ে গেল আরেক শ্লা সে কি দেখল না? পুলিশ মানুষ এদের বিশ্বাস নেই! রোজা ভাঙ্গিয়ে আরেকজনের স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে মানে এদের দ্বারা সবই সম্ভব! ফুল স্পিডে পার্কে এসে পৌঁছালো অনিক। লম্বা লম্বা কদম ফেলে এগিয়ে গেল।
“কী ভাই প্রেম-পিরিতি কেমন চলতেছে?”
চমকায় আবির। অনিককে আশা করেনি।
“হোয়াট!”
“নিতা আম্বানি এখানে কেন?”
“তুমি এখানে কী করছো?”
“আমার কথা উত্তর দাও!”
বয়সে ছোট গেন্দাবাচ্চা ছেলে সম্মান না দিয়ে তুমি করে বলায় ইগোয় লাগলো আবিরের।
“সময় কাটাচ্ছি।”
“ও তোমার কী হয় বউ না প্রেমিকা?”
“হবে কিছু একটা।”
“ইন্সপেক্টর আবির চোখ পকেটে তুলে রাখো। সে ম্যারিড ওকে। ওর দিকে হাত বাড়িও না।”
চমকায় আবির।
“যদি বাড়াই?”
কলার খাঁড়া করলো অনিক।
“আমার বাবার ক্ষমতা কতটুকু ঢের জানো। একদম গায়েব করে ফেলবো!”
নিশুর হাত ধরে দাঁড় করায়।
“নিতা আম্বানি চলো।”
আগুন চোখে তাকিয়ে রইলো আবির।
“এই জেলা থেকেই তোমার ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করতেছি দাঁড়াও। সাপের লেজে পা দিয়েছো তুমি!”
নিশুকে নিয়ে বেরিয়ে গেল অনিক। বাইকের সামনে এসে দাঁড়ালো।
“ওর সাথে কেন এলে?”
ধমকে উঠলো অনিক। ভীত হয় নিশু কিন্তু কিছু বললো না।
“তোমাকে বাসা থেকে বের হতে কে বলেছে?”
অনিকের গলায় স্পষ্ট ক্ষোভ। ভড়কায় নিশু।
“এই পুলিশ যদি তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু করে বসতো তাহলে!”
মাথা নুয়ে রাখলো নিশু।
“পুলিশ,র্যাব এদের কারো বিশ্বাস আছে নাকি! রোজা ভাঙ্গিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আরেকজনের বউকে। আপাতত রুচিতে বাঁধছে বলতে! উঠো!”
অনিকের পিছনে বসলো। সোজা শপিংমলে গেল। একটা ওড়না কিনলো।
“এটা শরীরে জড়াও!”
ওড়না পড়লো নিশু। এরপর সেইফটি নাইফ,ফাইটিং নাইফ,পেপার স্প্রে কিনলো। তারপর অনেকগুলো চকলেট কিনে দিলো নিশুকে।
“এগুলো নিয়ে সবসময়ই বাসা থেকে বেরুবে। যখনই দেখবে কেউ তোমার সাথে খারাপ কিছু করতে চাচ্ছে তখুনি তার উপর প্রয়োগ করবে। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাথা নাড়ায় নিশু। লিফটে করে পাঁচ তলায় গেল। সেখানের একটি ক্যাফে ঢুকল। রামেন,চাওমিন,চিকেন,ব্রকলি,কর্ণ আর দুইটা বড়বড় লবস্টার অর্ডার করলো। এত কিছু নিশু খেতে পারলো না। পার্সেল করে নিলো আরো কিছু অর্ডার করে। বেরিয়ে সোজা নিজেদের বাসায় চলে গেল। বাইক থেকে নামলো দু’জন। আশেপাশে তাকালো নিশু। কি সুন্দর বাড়ি। যেন এক রাজপ্রাসাদ। হাত ধরে লিফটে উঠলো।
“এখানে কেন নিয়ে এলেন?”
“তো কোথায় যাবে?”
নীরব রইলো নিশু। সেকেন্ড ফ্লোরে এসে থামলো। বাসার কলিংবেলরে সুইচ চাপতেই একজন মেইড ডোর খুললো। ভিতরে ঢুকলো দু’জন। আকস্মিক শরীর জুড়িয়ে গেল নিশুর। আশেপাশে তাকালো কি সুন্দর বাসার ভিতর। তাদের বাসা এত সুন্দর না।
“এটা আপনাদের বাসা?”
“কী মনে হয় নিতা?”
“এত সুন্দর বাসায় থাকেন আপনি?”
“পছন্দ হয়েছে তোমার?”
নিশু কিছু বললো না। লিভিং স্পেসে টিভি দেখছিলেন অনিকের বাবা। নিশুকে দেখতেই চমকান। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। মিনমিন করে সালাম দিলো নিশু। নীরব রইলেন তিনি।
“কে এই মেয়ে?”
“হবু শালার বউ।”
সোফায় বসতে বললো নিশুকে সে বসলো। একপলক তাকালেন। অনিক কী বলে সে নিজেও জানে না। শালার বউ এখানে কেন আসবে দেখতেই পাচ্ছেন জলজ্যান্ত একটা মেয়ে। উনি ভাবলেন নিশুকেই হয়তো অনিক পছন্দ করে। কারণ সেদিন নিশু হারিয়ে গিয়েছে অনিক তার বাবাকে জানিয়েছিল ব্যপারটা। পুলিশ স্টেশনেও নিশুকে একপলক দেখেছেন। এই মেয়ে যদি সেই না হয় তাহলে অনিক এত সিরিয়াস কেন? নিশু শান্ত হয়ে বসে রইলো।
“আম্মু দেখো কে এসেছে!”
অনিকের মা রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।
“কে এসেছে?”
“নিতা আম্বানি।”
“মানে!”
“লিভিং স্পেসে গেলে দেখতে পাবে।”
সেদিকে পা বাড়ালেন দেখলেন নিশু বসে রয়েছে। নিশুর পাশে বসলেন। কিছুক্ষণ পর বুশরাও বেরিয়ে এলো। নিশুকে দেখতেই চমকায়।
“আরে নিশু তুই!”
“নিশু যে এখানে ওদের বলিস না।”
“কেন?”
“শিক্ষা হোক গাধাটার!”
নিশুকে বাসায় না পেয়ে সেদিকে তোলপাড় হয়ে গেল।
___
“নিশু ভাবী ধূসর ভাইয়ার ধুতরাফুল!”
লাজুক হাসলো নিশু। বার-বার একই কথা রিপিট করতে লাগলো ধীরাজ। আর ততই লাজুক লাজুক হাসছে নিশু। আর উক্তিটি ধ্রুবর কানে গলিত সীসা ঢালার মতো লাগছে! ছটফট করতে লাগলো ধ্রুব।
“নিশু ভাবী ধূসর ভাইয়ার ধুতরাফুল!”
আচমকা গলা চেপে ধরলো ধীরাজের।
“থাম! আর একবার বলবি তো তোর জ্বীভ কেটে ফেলবো!”
দাঁত-মুখ পিষিয়ে গলা চেপে ধরলো ধীরাজের। জ্বীভ বেরিয়ে এলো হঠাৎ। অস্পষ্ট স্বরে গুঙিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
“কী করছেন ছাড়ুন! আরে ছাড়ুন বলছি! ছাড়ুন!”
পিটপিট করে তাকালো ধ্রুব। দেখল ডক্টরের গলা চেপে ধরে রেখেছে সে। চমকিত নয়নে তাকায় ধ্রুব।
“কী করছেন আপনি? আশ্চর্য এইসব কী হচ্ছে!”
ডক্টরের পাশে থাকা নার্সটি চেঁচিয়ে বলছে কথাগুলো। নিজের অবস্থান বোধগম্য হতেই গলা ছেড়ে দিলো। গলা ধরে হাঁফাতে লাগলেন ডক্টর। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হলো ধ্রুব। আসলেই সে স্বপ্ন দেখেছিল। স্বপ্নের মধ্যে যে ডক্টরের গলা চেপে ধরবে কে জানতো!
“স্যরি ডক্টর! আসলেই..”
কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ডক্টর। হতভম্ব হয়ে রইলো ধ্রুব। তীর্যক দৃষ্টি ফেলে বেরিয়ে গেল নার্সও। তপ্তশ্বাস ফেলে দু-চোখ বুজে শুয়ে রইলো ধ্রুব। তার মানে এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে এডমিট সে। আর দুঃস্বপ্ন দেখে ওমন আচরণ করে ফেলেছে! বড্ড পীঁড়া দিচ্ছে নিশু! হসপিটালেও শান্তি নেই। ধুতরাফুল! কেন তার বউকে আরেকজন এমন নামে ডাকবে?একটা বিষাক্ত ফুলের সাথে তার বউকে কম্পেয়ার করার মানে কী? মানে ওই ফুলের মতো বিষাক্ত! কতটা তীব্র প্রেম জন্ম নিলে এমন বিষাক্ত ফুলের নামে কেউ কাউকে সম্বোধন করতে পারে! ছটফট করতে লাগলো ধ্রুব। অস্থির অস্থির লাগছে! বেডসাইড টেবিল থেকে ল্যান্ডফোন নিয়ে কল করলো মাকে। অপরিচিত নাম্বার হওয়ায় প্রথমে পিক করলেন না। বার-বার রিং হতেই এবার করলেন।
“হ্যালো কে?”
“আম্মা আমি!”
চমকান তিনি। ছেলের ঘনঘন ফোন করার মানে বুঝতে পারলেন না দিলরুবা খাতুন।
“বাবা কেমন আছো?”
আমার এখানে ভালো লাগছে না আম্মা বলতে নিয়েও থেমে গেল।
“ভালো।”
“কী করছো?”
“শুয়ে আছি।”
“খেয়েছো?”
“হুম। আচ্ছা রাখি।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো। কীভাবে বলবে তার অশান্তির কথা! এখন ধ্রুব বুঝতে পারলো তার বাবা কেন বিয়ে-বাসর এইসবের জন্য তাড়াহুড়ো করলেন। নিশুর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে নিশ্চয়ই সে বেশিদিন বিদেশে পড়ে থাকতে পারতো না চলে আসতো বউয়ের টানে। সম্পর্ক অস্বাভাবিক তারপরেও তার কাছে দমবন্ধ লাগছে প্রতিটি মুহূর্ত। চোখ বুজে রইলো ধ্রুব। হঠাৎ খুটখুট শব্দ হতেই চমকে তাকায়। দেখল অ্যানি কেবিনে ঢুকে এগিয়ে আসছে। চোয়াল শক্ত করলো।
“হায় সুইটহার্ট! এ কী অবস্থা তোমার!”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“কীভাবে এক্সিডেন্ট করলে?”
“তোমার উপস্থিতি আমার কাছে বিরক্ত লাগছে। যেতে পারো!”
“সুইটহার্ট..”
“যাবে নির্লজ্জ মেয়ে!”
বেরিয়ে গেল অ্যানি।
_____
চলবে~