#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(১৭)
___________________
নিশুকে খুঁজতে খুঁজতে তোলপাড় করে ফেললো ধূসর কিন্তু খোঁজ পাওয়া সম্ভব হলো না। দ্যুতিকেও বকাবকি করে আর কিছু রাখেনি। অনিক-বুশরাকে ফোন করেও পেলো না। হঠাৎ দু’ভাই-বোনের একসঙ্গে ফোন অফ থাকায় সন্দিহান হলো ধূসর। বাইক নিয়ে অনিকদের বাসার সামনে দিয়ে কয়েকবার ঢুঁ মা’রলেও বিশেষ লাভ হলো না। ভিতরের খবর তো সে আর জানবে না আবার বাসায় ঢুকতেও আত্মসম্মানে লাগছে! সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলেও কিছু বললো না। হতাশ হয় ধূসর। উপর থেকে সবই দেখলো অনিক। বাঁকা হেসে ঘুমাতে চলে গেল। নিশুর জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করলো ধূসর। সবটা সময় নিশু নীরব ছিল। যা বলেছে রোবটের মতো তা-ই করেছে। একসঙ্গে ডিনারও করেছিল। অনিকের মায়ের মন ভালো। তাই খুব সহজে নিশুর সঙ্গে মিশে গেলেন। নিশুর সাথেও টুকটাক কথা বললেও বিশেষ কিছু জানতে পারলেন না। সবকিছুতেই নিশুর না বোধক প্রতিত্তোর ছিল। ডিমেনশিয়ার পেশেন্টরা বেশিরভাগ এমনই। সবকিছুতেই তাদের না। ডিনার শেষে বুশরার সঙ্গে নিশুকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলেন কিন্তু রাতে ঘুম এলো না নিশুর। শোয়া থেকে উঠে কাঁদতে লাগলো সমানে। ভড়কায় বুশরা। জিজ্ঞেস করলেও কিছু বললো না। পড়লো মহাবিপাকে। নিশুর কান্না থামানো গেল না। বাধ্য হয়ে অনিককে ডেকে আনলো বুশরা। নিশুকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কান্না করছো কেন নিতা?”
কিছুই বললো না নিশু।
“কী হলো বলো?”
“আমি বাসায় যাবো আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসুন। এখানে আমার ঘুম আসছে না।”
“সকালে যেও এখন তো অনেক রাত।”
“না এখুনি যাবো।”
“ভাইয়া দিয়ে আসো জোর করো না।”
“ভাবলাম ওই গাধা শ্লা-টাকে একটা শিক্ষা দিবো। কিন্তু নিতা আম্বানি তো সব পণ্ড করে দিচ্ছে।”
“শিক্ষা হয়েছে আর লাগবে না। এখন দিয়ে আসো। ওর রাতের মেডিসিন খাওয়া হয়নি। মেডিসিন মিস গেলে প্রবলেম আর উলটাপালটা কিছু করে বসলে সমস্যা হবে।”
নিরাশ চোখে তাকায় অনিক।
“যাও পৌঁছে দিয়ে আসো।”
“রেডি হয়ে নিতাকে নিয়ে নিচে যা।”
“নিশু চল বাসায় ফিরবি।”
চোখের জল মুছে নিশু। উঠে রেডি হয়ে নিচে নামলো দু’জন। নিশুকে মাঝখানে দিয়ে পিছনে বসলো বুশরা। বাইক স্টার্ট দিলো অনিক।
“এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো! বলো নিতা কেমন হতো!”
মিটমিট করে হাসতে লাগলো বুশরা। প্রায় মিনিট বিশেকের মধ্যেই বাসার সামনে ব্রেক কষলো অনিক। উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো লাইট জ্বলছে বুঝতে পারলো কেউ ঘুমায়নি হয়তো। লক্ষ্য করলো গম্ভীর হয়ে আসাদ সাহেব তাকিয়ে রয়েছেন নিচের দিকে।
“শ্বশুর মশাই,শ্লার বউকে পৌঁছে দিলাম। টাটা বাই বাই! উম্মাহ!”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো উনার। উপরে উঠে এলো নিশু। ডোর খুললেন আসাদ সাহেব। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো সবাই বসে রয়েছে। নিশুকে দেখতেই একপ্রকার ছুটে এলেন দিলরুবা খাতুন।
“নিশু! নিশু তুই কোথায় ছিলি?”
কিছু বললো না নিশু।
“কাউকে কিছু না বলে কোথায় গিয়েছিলি?”
ভীতসন্ত্রস্ত হয় নিশু। আসাদ সাহেব বললেন,”পরে জিজ্ঞেস করা যাবে। আপাতত কিছু খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে দাও।”
নিশুকে নিয়ে গেলেন দিলরুবা খাতুন। মেডিসিন খাইয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলেন। ধূসরকে ফোন করে বলে দিলেন নিশু এসেছে। স্বস্তির শ্বাস ফেলে ফিরে এলো সে।
__
সকালে নিশুকে একগাদা বকাবকি করেছিল ধূসর। এরপর রেডি হয়ে পাসপোর্ট করতে নিয়ে গেলে নিশু-দ্যুতি দু’জনকে। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করায় প্রায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পেয়ে গেল। ইন্ডিয়ার ভিসা পেতে আরো দু-দিন লাগলো। অতপর কেয়ার হসপিটাল থেকে এপয়েন্টমেন্ট নিলো কাঙ্ক্ষিত ডক্টরের। তারপর হোটেল বুকড করে টিকেট কেটে নিলো। রাতের ফ্লাইটেই ইন্ডিয়া হায়দ্রাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে ওরা। সন্ধ্যার আযানের কিছুক্ষণ পরে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে রওনা দিলো ওরা। ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন দিলরুবা খাতুন। যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে রইলেন ওদের যাওয়ার পানে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে পা বাড়াতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিতেই দেখলেন ধ্রুব কল দিয়েছে। খুশি হলেন দিলরুবা খাতুন। দূরে যাওয়ায় এখন মায়ের প্রতি টান হয়েছে ছেলের। কাছে থাকতে গুরুত্ব দেয়নি। ঘনঘন ফোন দিচ্ছে। দেশে থাকাকালীন তো জীবনেও ফোন করেনি। উনার নাম্বার তার ফোনে ছিল কি-না সেটাও সন্দেহ! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিক করলেন।
“হ্যালো বাবা!”
“আম্মা কেমন আছো?”
“ভালো।”
“কী করছো?”
“কিছু করছি না।”
“কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম কোথায় ছিলে?”
“ব্যালকনিতে ছিলাম।”
“কেন?”
“ধূসর-নিশু ওরা ইন্ডিয়া গিয়েছে!”
ধক করে উঠলো বুকের ভিতর। তবুও জিজ্ঞেস করলো না কেন গিয়েছে।
“ও আচ্ছা। তো ঠিক আছে ভালো থাকো রাখছি।”
“আচ্ছা।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো ধ্রুব। ধূসর-নিশু ইন্ডিয়া গেল কেন নিশ্চয়ই ঘুরতে! আর কিছু ভাবতে পারলো না। রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল। ধ্রুবর পাশাপাশি অপর সিটে বসলো নীলি। ধ্রুব ফোনে কিছু একটা করছে। হঠাৎ একটি ছেলে পিছনের দিকে যেতেই একটা বই পড়ে গেল ধ্রুবর। সেদিকে তাকায় নীলি। দেখলো পিছনের পৃষ্ঠার ভিতরে বাংলায় নয়নতারার মতো করে লেখা-
“কমলাভ শাড়ি পরনে,
কোমড় ছাপানো এলোমেলো খোলা চুলে;
আলতা রাঙা নুপুর পায়ে
রিনিঝিনি সুর তুলে
হেঁটে যায় এক মায়াকুমারী!”
ছেলেটি স্যরি বলে বইটি তুলে দিলো। নীলি ভাবতে লাগলো,কার জন্য এমন আর এত ছোট্ট একটি কবিতা লিখলো ধ্রুব?ছোট্ট হতে পারে কিন্তু এর অর্থ আর গভীরতা তো বিশাল! কারো সঙ্গে ধ্রুবর কি অ্যাফেয়ার রয়েছে?একপলক তাকায় গম্ভীর হয়ে বসে থাকা ধ্রুবর দিকে। অনেক অ্যাটিটিউড ছেলেটার! কেন জানি দেখতে ভালো লাগছে নীলির। চোখ সরাতে পারলো না। নীলির মনে হচ্ছে সে ধ্রুবর প্রেমে পড়েছে। পরক্ষণে আবার ভাবলো,ধ্রুব যে কঠিন মানুষ তার থাকবে অ্যাফেয়ার অসম্ভব! নিশ্চয়ই এমনি এমনি লিখেছে। আচ্ছা সে-কি একটু চান্স নিবে? ভাবনার মাঝেই হঠাৎ ক্লাসে ঢুকলেন স্যার। একে একে সবগুলো ক্লাস সেরে বাসায় পৌঁছালো ধ্রুব। নিজের জন্য লবস্টার দিয়ে স্পেগেটি রান্না করে ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়লো।
__
ইন্ডিয়ায় পৌঁছালো ওরা এবং বাসায় ফোন করে জানালো কোনো প্রবলেম হয়নি। পরের দিন সকালে ডক্টর দেখালো নিশুকে। ডিমেনশিয়ার ধরণ এবং লক্ষ্মণ বুঝে থেরাপি এবং বেশকিছু মেডিসিন সাজেস্ট করলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে ওরা ইন্ডিয়ার নানান রকমের মুখরোচক খাবার সহ স্ট্রিট ফুড ট্রাই করলো। সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি শেষে শপিং করতে গেল। শপিং শেষে বেরুতেই চক্ষুচড়কগাছ! অনিক-বুশরা শপিংয়ে ঢুকছে! তাদেরকে ফলো করে ইন্ডিয়া আসার মানে ঠিক কী হতে পারে বুঝতে পারলো না ধূসর। চমকে তাকিয়ে রইলো ওরা।
“এই তুই গাউছিয়ার স্যান্ডেল ব্যাপারি না তা এখানে কী? আমাদেরকে ফলো করে চলে এসেছিস তাই না?”
“হ্লা তুই গুলিস্তানের আম্বানি না? তুই জিগানের কোন হ্লা রে?”
দাঁতে দাঁত চাপলো ধূসর। বাঁকা হাসলো অনিক।
“কুকুর খুশি হলে লেজ নাড়ে। আর গুলিস্তানের কিছু হকার খুশিতে পায়ের উপর পা বসায়।”
“হকার কারে কস হ্লা?”
“তোদের মতো কিছু রাজনীতিখোরকে বলেছি!”
“মুখে লাগাম টান গুলিস্তানের আম্বানি।”
“আমাদেরকে ফলো করে কেন এলি?”
“ইন্ডিয়া কি তোর আব্বা অর্থাৎ আমার শ্বশুর আব্বাজানের নাকি?”
তেড়েফুঁড়ে যেতেই টেনে ধরলো দ্যুতি।
“কী শুরু করলে তোমরা! এটা কি নিজের দেশ পেয়েছে নাকি!”
“শালা ছ্যাঁছড়া!”
“তোর বোনের হবু জামাই।”
টেনে নিয়ে গেল ধূসরকে।
___
“নিশু আমার শার্টটা একটু ধুয়ে দে তো!”
চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব।
“নিশু আমার পারফিউমটা খুঁজে পাচ্ছি না!”
“এই তো খুঁজে দিচ্ছি!”
“নিশু আমার টাওয়ালটা রোদে মেলে দে তো!”
“দিচ্ছি!”
“তোর কাজ তুই করতে পারিস না?”
ভ্রু কুঁচকায় ধূসর।
“তাতে তোমার কি সমস্যা?”
“ওর হাতে কাজ করাস কেন?”
“তাতে তোমার কী? তুমি বলার কে?এই নিশু এক মগ কফি দে তো!”
“দিচ্ছি!”
“চিনি দিস না দু চা-চামচ মধু দিস।”
“আচ্ছা।”
দাঁত কিড়মিড় করলো ধ্রুব।
“আমি বলার কে মানে! চাকর পেয়েছিস ওকে?”
“সুযোগটা তুমি দিয়েছো ওকে। এখন ভাগো!”
“কী বললি?”
“নিশুর হাতে যা ইচ্ছে তাই করাবো তুমি বলার কে হ্যাঁ? যাও নিজের রাস্তা নিজে মাপো! যত্তসব! ডিজগাস্টিং!”
আচমকা কলার চেপে ধরলো ধূসরের।
“আমি বলার কে মানে! আমি বলার কে! তুই জানিস না আমি কে?”
“কে তুমি? কী হও নিশুর?”
“নিশু আমার বউ! ওর হাতে কোন সাহসে কাজ করাস তুই?”
“বউ!”
তাচ্ছিল্য করলো ধূসর!
“বউ হিসেবে মানো নাকি? আর স্বীকৃতি দিয়েছো তাকে?”
“তোকে বলবো কেন!”
একটা ঘুসি দিলো ধূসরকে।
“একশো বার বলবে! কারণ তুমি ওকে ডিজার্ভ করো না! নিশু আমার মতো লাভিং কেয়ারিং লাইফ পার্টনার ডিজার্ভ করে। ওকে আমি সুখে রাখতে পারবো তুমি না ওকে। যাও ভাগো!”
“কী বললি তুই?”
“ঠিক বলেছি। এখন এত অধিকারবোধ দেখাচ্ছ কেন ডিভোর্স দেওয়ার সময় মনে ছিল না?”
একটা লা’থি মা’রলো ধূসরকে। দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত পেতেই চিৎকার করে উঠলো ধূসর। লাফ দিয়ে উঠলো ধ্রুব। হাঁফাতে লাগলো সমানে। নিভু নিভু চোখে তাকালো। ও তার মানে স্বপ্ন ছিল! এই নিশুর বাচ্চা তার জীবনটা তেজপাতা করে ছাড়লো! আর নেওয়া যাচ্ছে না!
___
সানডে। ভার্সিটি অফ। সাইক্রিয়াটিস্ট-এর কাছে গেল ধ্রুব। বিগত কিছুদিন থেকে তার সঙ্গে হওয়া ঘটনাগুলো শেয়ার করলো। সব শুনে ডক্টর বেশ কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করলেন। চেম্বার থেকে বেরিয়ে মেডিসিন কিনে এরপর শপিংয়ে গিয়ে একটি ক্যানভাস সহ ড্রয়িং করার সকল পণ্য-সামগ্রী কিনে নিয়ে এলো বাসায়। অবশ্য সে ড্রয়িং পারে না কিন্তু কেন জানি ভীষণ ইচ্ছে করছে! বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিলো। তারপর ক্যানভাস,পেইন্টিং কালার এবং ব্রাশ নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে একটি টুলের উপর বসলো। সেদিন রাতে যে পেইন্টিংটা সে স্বপ্নে দেখেছিল সেটা ড্রয়িং করার চেষ্টা করলো। জানে পারবে না তবুও ইম্যাজিন করে চেষ্টা করতে লাগলো। তার বিশ্বাস প্র্যাকটিস করতে করতে একদিন নিশ্চয়ই সে পারবে। এলোমেলো আঁকার চেষ্টা করলো। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে পীপহোল দিয়ে দেখতেই চমকায়। দেখলো নীলি দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেজাজ খারাপ হলো ধ্রুবর। মানে কি এই মেয়েটার সঙ্গে সে কথাই বলে না তবুও তার বাসায় উঠে এলো কেন? খুবই বিরক্তবোধ করছে ধ্রুব। ফের চার-পাঁচবার বেজে উঠলো। একপ্রকার বাধ্য হয়ে চোয়াল শক্ত করে ডোর খুললো। মৃদু হাসলো নীলি। লক্ষ্য করলো তার পরনে কমলাভ কালারের শাড়ি,পিঠ ভর্তি গোছানো খোলা চুল,আলতা রাঙা পায়ে নুপুর,হাত ভর্তি ম্যাচিং করা রেশমি চুড়ি,ম্যাচিং টিপ। চমকায় ধ্রুব। নিশু সাজতে চায় নাকি! উহুম! কখনো নিশুর মতো হতে পারবে না! নিশুর পেছনের ওই রূপ তার হৃদয়ভূমি যেভাবে আলোড়িত করেছে এক কোটি নারী এলেও কখনো পারবে না! কেউ যখন কাউকে স্বইচ্ছায় কপি করে তখন খুবই বিশ্রী আর জঘন্য লাগে! ইন্সপায়ার্ড হওয়া ভালো তবে ওতটাও বেশি নয় বরং কপি করার প্রতিচ্ছবি ঠিকই ফুটে উঠে। সবাইকে সবকিছু মানায় না। কাঁটা গাছে ঝাড়ু ঝুলিয়ে রাখলে যেমন ঠিক তেমনই লাগে! সে যাইহোক,আর নীলি মেয়েটা কীভাবে জানে নিশু এইভাবে থাকে? ওই কবিতাটি দেখে ফেললো না তো!
“হাই!”
চোয়াল শক্ত ধ্রুবর।
“কী চাই?”
“একচুয়ালি আমরা তো ক্লাসমেট!”
“তো?”
বিব্রতবোধ করলো নীলি। আমতা আমতা করতে লাগলো।
“না মানে এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই আরকি ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু দেখা করি।”
ধ্রুব জানে নীলি স্পষ্ট মিথ্যে বলছে! নীলির চোখের মণিটা কেমন ঘুরছে অস্থির।
“কী বলবে বলো?”
“আচ্ছা,তুমি সুন্দরভাবে কথা বলতে পারো না?”
“না।”
“তুমি খুব হান্ডলি কথা বলো।”
“জানো তো বলো কেন?”
“ভিতরে আসতে বলবে না?”
“আমি একা থাকি ফ্ল্যাট শেয়ার করি না।”
“প্রবলেম নেই একটু দেখি।”
ভিতরে ঢুকতে নিতেই সরে দাঁড়ায় ধ্রুব। চতুর্দিকে তাকালো নীলি।
“খুব সুন্দর! আমি হলে উঠেছি! তুমি চাইলে আমরা দু’জন ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকতে পারি। টাকাপয়সা নিয়ে ভেবো না।”
“নো থাংকস।”
“কী করছো?”
“কাজ করছি!”
ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো ধ্রুব। পিছু পিছু গেল নীলি।
“তুমি ড্রয়িং পারো?”
“না।”
“তাহলে করছো যে?”
“মন চেয়েছে।”
“কার পিকচার ড্রয়িং করছো?”
“বউয়ের!”
চমকে তাকায় নীলি।
“বউ!”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“তোমার বউ আছে?”
“হুম।”
ধক করে উঠলো বুকের ভিতর। কেমন করে কাঁপতে লাগলো নীলি।
“কবে বিয়ে করেছো?”
নীলির গলা কেমন কাঁপছে!
“হবে আট-নয় বছর।”
চমকে তাকায়। আঙ্গুলের কর গুনলো।
“পনেরো বছর বয়সে?”
“হুম।”
শুকনো ঢোক গিললো নীলি। মনটা কেমন জানি করছে! ব্যথা হচ্ছে হৃদয়ে।
“অ্যারেঞ্জ নাকি লাভ ম্যারিজ?”
“লাভ।”
চমকায় নীলি।
এই জাঁদরেল,কাঠখোট্টা,গুরুগম্ভীর,অহংকারী,মুডি মানুষটা নাকি লাভ ম্যারিজ করেছে! সিরিয়াসলি! আদোও বিশ্বাসযোগ্য এটা?
“বাই দ্যা ওয়ে,বেবি আছে?”
“বউটাই তো এখনও একটা বেবি।”
“কী বললে?”
“তিনটা বেবি আছে।”
চমকে তাকায় নীলি।
“রিয়েলি!”
নীরব রইলো ধ্রুব। রক্তশূণ্য হয়ে গেল নীলির মুখটা। তিন বাচ্চার বাবার প্রেমে পড়েছে সে! লাইক সিরিয়াসলি!
“বিশ্বাস হচ্ছে না!”
“দ্যাট’স আপ টু ইউ।”
নীলির চোখগুলো জলে টইটম্বুর হয়ে গেল বর্ষার ভরা বিলের মতো।
“তুমি সত্যি ম্যারিড?”
“কয়বার বললাম?”
“একচুয়ালি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“তুমি এখন যেতে পারো!”
বিব্রতবোধ করলো নীলি। এত কঠিন কেন মানুষটা?এ নাকি লাভ ম্যারিজ করেছে! এর নাকি বউ-বাচ্চা আছে! এর বউ একে সহ্য করে কীভাবে? হাউ পসিবল? কিছুক্ষণ পর মলিন মুখে বেরিয়ে গেল নীলি। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে তার। ধ্রুব ম্যারিড এবং তার তিনটি বেবি রয়েছে ব্যপারটি সত্যি অবিশ্বাস্য! পনেরো বছর বয়সে কোনো পুরুষ বিয়ে করে সত্যি অবিশ্বাস্য লাগলো ব্যপারটি। নীলির মনে হচ্ছে হয়তো ধ্রুব মিথ্যে বলছে! আর থাকলেও থাকুক দরকার পড়লে সে তিন বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করবে। তবুও হাল ছাড়া যাবে না। অশ্রু মুছতেই শুনতেই পেলো,”ধ্রুবর ফ্ল্যাটে গিয়েছো?”
চমকে তাকায় নীলি।
“হুম।”
“কেন গিয়েছো?”
“তোমাকে বলবো কেন?”
নীলির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো অ্যানি। কমলাভ কালারের শাড়ি,খোলা চুল,চুড়ি,টিপ,নুপুর সব ম্যাচিং ইত্যাদি। অর্থাৎ বাঙালিয়া সাজ! ভ্রু কুঁচকায় অ্যানি।
“ধ্রুবর পছন্দ এমন সাজ?”
“হুম।”
“ইম্প্রেস করতে গিয়েছো বুঝি?”
শক্ত চোখে তাকায় নীলি।
“তোমার সমস্যা কোথায়?”
“ধ্রুবকে আমি পছন্দ করি তুমি জানো রাইট। তাহলে আবার ওকে ইম্প্রেস করতে গিয়েছো কোন সাহসে?”
“তোমাকে বলবো কেন?”
“হাউ ডেয়ার ইউ!”
“তোমাকে গুরুত্ব দিয়েছে?”
“চান্স নিতে চাচ্ছ?”
“যদি বলি হ্যাঁ তো?”
দাঁতে দাঁত চাপলো অ্যানি।
“ভালো হবে না।”
পা বাড়ালো নীলি। হিংস্র চোখে তাকালো অ্যানি। সে-তো এইসব বাঙালি সাজ জানে না। কিন্তু কীভাবে বাঙালি সাজে সাজবে আর ধ্রুবকে ইম্প্রেম করবে?
“আইডিয়া দাও সোফিয়া!”
“টেনশন করছো কেন অ্যানি। এখানে অনেক বাঙালি মেকওভার আর্টিস্ট আছে।”
“তাহলে চলো শপিং করে নিই।”
“চলো।”
শপিং করতে গেল ওরা। নীলি ঠিক কীভাবে সেজেছে সবকিছু ইম্যাজিন করে প্রোডাক্টগুলো কিনতে লাগলো। শপিং শেষে ভীষণ খুশি হলো অ্যানি। ডিনারে দেখা করবে ধ্রুবর সঙ্গে।
______
চলবে~