#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(১৮)
___________________
ডিনার করার জন্য রেস্তোরাঁয় গেল ধ্রুব। বাসায় রান্না করতে ভালো লাগে না তার। অর্ডার করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেতেই চোখ তুলে তাকালো। দেখলো অ্যানি বাঙালি সাজে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক সকালে নীলি যেমন সেজেছে তেমনই। আশ্চর্য হলো এই ভেবে ওরা দু’জনই নিশুর মতো হতে চাইছে! নিশুর সম্পর্কে না জেনেও একটি চার লাইনের কবিতা পড়ে নীলি কপি করেছে। নীলিকে দেখে অ্যানি তাকে কপি করেছে। লাইক সিরিয়াসলি এইসব কী হচ্ছে? কপি আর কপি! গোল্ড ইজ অলওয়েজ গোল্ড! নিশুর মতো হতে চায় দু’জন; চাইলেই কি পসিবল?নো নেভার! নিশু নিশুই! দ্যাটস ফাইনাল! খয়েরি রঙের একটি জর্জেটের কারুকার্য খচিত শাড়ি অ্যানির গায়ে। লাইটের আলোয় চিকচিক করছে স্টোন এবং কারচুপিগুলো। সোনালী চুলগুলোয় গোলাপ এবং আধফোটা বেলির মালা। লাল টুকটুকে লিপস্টিক। অর্থাৎ সবকিছু ম্যাচিং। অ্যানি মারাত্মক সুন্দরী চোখ সরানো দায়। কিন্তু ধ্রুবর কাছে হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে ব্যপারটা। জাস্ট অ্যানি আর নীলিকে জোকার বলে মনে হচ্ছে। অ্যানির আগুন রূপ,সাজ মুগ্ধ করতে পারলো না ধ্রুবকে। চোখ নামিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মুখটা মলিন হয়ে গেল অ্যানির।
“হাই ধ্রুব!”
ধ্রুব তাকালো না।
“ধ্রুব!”
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
“আমাকে কেমন লাগছে?”
“ড্রেন কর্মীদের মতো।”
“কী?”
“যারা ড্রেন ক্লিন করে তাদের মতো।”
আগুন চোখে তাকালো অ্যানি। ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখা গেল ধ্রুবকে।
“সত্যি করে বলো কেমন লাগছে?”
“জোকারের মতো!”
“ধ্রুব!”
“যেতে পারো। দেখতে পাচ্ছ না ডিনার করছি! বিরক্ত করো না।”
“আমি তোমার জন্য এত কষ্ট করে সাজলাম আর তুমি..”
“আই ডোন্ট লাইক দিস ওকে। ইউ ক্যান গো নাও।”
“ধ্রুব তুমি আমাকে বুঝতে চাও না।”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“বাঙালি খাবার খাচ্ছ! আমিও খেতে চাই!”
“অর্ডার দিয়ে খাও।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল অ্যানির।
“তুমি তো দেখি আস্ত একটা হাড়কিপটে!”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“আমাকে খাওয়াও!”
হাঁ করলো অ্যানি। নিজের মতো খেয়ে উঠে বিল পে করে বেরিয়ে গেল ধ্রুব। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো অ্যানি। এত্ত অপমান! গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলো। আজ এই তো কাল সেই। আজ মুখে তুলে খাওয়াতে বলবে তো কাল বলবে চুমু খাও। তাই অল্পতেই ইগনোর করা ভালো। সে কারো সাথেই ইনভলভ হতে চায় না। পনেরো বছর বয়সে তার সব শখ-আশা,আকাঙ্ক্ষা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেও তো চেয়েছিল তার মনের মতো কাউকে ভালোবাসতে,প্রেম করতে এরপর বন্ধনে জড়াতে। সেইসব কিছুই হলো না। আলাদা ফ্ল্যাটে ছিল ঠিক তবে সবসময়ই ছিল বাবার দৃষ্টি সীমানার মধ্যে। কখন কোথায় কী করছে না করছে সবকিছুই তার বাবার নখদর্পনে। খুব কঠোরতার মধ্যে বড় হয়েছে সে। আলাদা ছিল বলে সে-যে খুব সুখে ছিল এটা হচ্ছে ভুল ধারণা। পরিবার থাকার পরেও পরিবারের কাছে আসতে না পারার যন্ত্রণা তার মতো আর কে বুঝবে? মানুষ তার উপরের খোলসটাই দেখেছে অথচ ভেতরটা দেখলো না। তার ভেতরটা দেখলে হয়তো আঁতকে উঠতো! দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে যাইহোক,ছাতক পাখির মতো কেউ একজন তার জন্য বছরের পর বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে! তার আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছে! সে একজনকে কথা দিয়ে এসেছে। তার দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। তার এখন একমাত্র লক্ষ্য ক্যারিয়ারে ফোকাস করা,স্টাবলিশ হওয়া,ফিনান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট হওয়া। এইসব দু-দিনের সস্তা,বাজে মেয়ের জন্য সময় নষ্ট করার মানে নেই! এগুলো হচ্ছে আবেগি মার্কা মেয়ে। সো নো চান্স!
___
নিশুরা বাংলাদেশ ফিরলো প্রায় বিশ-একুশ দিন হলো। আসার পরের দিন জানতে পারলো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়েছে অনিক। কিন্তু যাওয়ার সময় তাদেরকে কিছু বলে গেল না কিংবা একটা টেক্সও করলো না। ভীষণ মনখারাপ হয় দ্যুতির। সামান্য পড়াশোনা করে শুয়ে পড়লো। মনের সাথে তার শরীরটাও কেমন খারাপ করেছে! পড়তে ইচ্ছে করছে না! নিশুকে কাউন্সিলিং,রেগুলার দু’বেলা থেরাপি এবং তিনবেলা মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে। বসে বসে নিশু পড়ছে! একপলক তাকায় দ্যুতির দিকে। বই বন্ধ করে উঠে ব্যালকনিতে গেল। দেখলো কেমন ঝড়ো হাওয়া বইছে! বৃষ্টি হবে নাকি! বৃষ্টি ভীষণ পছন্দের তার আবার আতঙ্কের নামও। মনে পড়লো তার সুয়াচন্দন,সুন্দরী,গিরিবাজ আর ডিগবাজির কথা। পায়রাগুলোর খোঁপ ঠিকমতো দিয়েছে কি-না চিন্তা হলো। নুপুরজোড়া পরে আস্তে আস্তে পা ফেলে ছাঁদের দিকে এগিয়ে গেল। পড়তে বসেছিল ধূসর। ঝুনঝুন শব্দ শুনলো তবে গুরুত্ব দিলো না। এটা নিশুর কাজ সে শিওর। রাত হলেই নিশু এমনটা করে। নুপুর পরে অন্ধকারে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এটা তার ছোট থেকেই অভ্যাস। ছাঁদে উঠেতই দেখলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খোঁপগুলো দেখলো ঠিক আছে সব। অবশ্য ধূসর-ধীরাজ খেয়াল রাখে। ছাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দু-হাত প্রসারিত করে ভিজতে লাগলো। বৃষ্টির শীতল ফোঁটা মুখে পড়তেই কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি হলো। ভীষণ ভালো লাগছে নিশুর। হঠাৎই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দু-হাত প্রসারিত করে ঘুরে ঘুরে ভিজতে লাগলো নিশু। প্রায় অনেকক্ষণ ভিজলো। ঝড় বইলো সমানে। দাঁড়িয়ে রইলো নিশু। হঠাৎ বিজলি চমকালো। ভড়কায় নিশু। বেশ কয়েকবার বিজলি চমকে আচমকা কাছে কিনারে কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়তেই চিৎকার দিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারালো নিশু। পরপর বজ্রপাত হচ্ছে দেখে চিন্তিত হলো ধূসর। রিডিং টেবিল থেকে উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবলো নিশুরা আদেও পড়াশোনা করছে কি-না! ধীরাজকে চেক করলো দেখলো সে পড়ছে! নিশুদের রুমের সামনে এসে ভিতরে উঁকি দিতেই দেখলো দ্যুতি শুয়ে আছে নিশু নেই আবার দরজাও খোলা। বজ্রপাত হচ্ছে সমানে নিশু কই গেল? ভিতরে ঢুকে দ্যুতিকে ঝাঁকিয়ে বলল,”নিশু কই?”
ঘুমু ঘুমু চোখে তাকায় দ্যুতি।
“দেখো না পড়ছে!”
“কোথায় পড়ছে?”
উঠে বসলো দ্যুতি। দেখলো নিশু নেই। ব্যালকনি চেক করলো দেখলো নেই। ঘাবড়ায় দু’জন।
“ওতো রুমে নেই। কোথায় গেল?”
“জানি না!”
বেরিয়ে গেল ধূসর। সারা বাড়ি খুঁজে পেলো না। ভাবলো ছাঁদে দেখবে। মাথামুণ্ডু কিছু ঠিক নেই মেয়েটার যা ইচ্ছে তাই করছে! ধৈর্যচ্যূত হলো ধূসর। কতক্ষণ মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখা যায়?একটু আড়াল হলেই একটা না একটা অকাজ ঘটিয়েই ফেলবে মেয়েটা! ভীষণ বিরক্ত হয়। ছাঁদের দিকে পা বাড়াতেই দেখলো দরজা খোলা। চমকায় ধূসর। দ্রুত ভিতরে পা ফেলতেই দেখলো ছাঁদের মাঝখানে পড়ে আছে নিশু। আঁতকে উঠে ছুটে গেল। ভারী বর্ষণ আর সজোরে বজ্রপাত হচ্ছে। হাঁটু গেঁড়ে বসে মাথা তুলে নিলো কোলে।
“নিশু! এই নিশু! নিশু কী হয়েছে তোর?এই নিশু এখানে কীভাবে এলি? কখন এলি?”
সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
“নিশু উঠ! কথা বল! নিশু!”
অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর নিভু নিভু চোখে তাকালো নিশু।
“নিশু কী হয়েছে তোর?এখানে কখন এলি? কী হয়েছে বল?”
চোখ বুজলো নিশু। আকস্মিক চোখের সামনে ভেসে উঠলো আজ থেকে আট বছরের আগের ঘটনা। তার বাবার অত্যাচার,এরপর হঠাৎ বিয়ে করে বউ নিয়ে আসা,তাদের মা-মেয়েকে মাত্রাতিরিক্ত প্রহার করে তার মাকে তালাক দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে তাঁড়িয়ে দেওয়া,এরপর মামার বাড়িতে ঠাঁই হওয়া,মামা-মামী এবং মামাতো ভাই-বোনদের অত্যাচার,হঠাৎ মায়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া,বিয়ের পর যোগাযোগ না করা,হঠাৎই তার মায়ের নিখোঁজ,নিরুদ্দেশ হওয়া,এরপর সৎমায়ের সংসারে আবারও ঠাঁই হওয়া,নিত্যদিন সৎমায়ের অত্যাচার,শেষ একদিন তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হ’ত্যা চেষ্টা করা এবং তখনি অতিরিক্ত ভয়ে মাইল্ড স্ট্রোক করা,তারপর হঠাৎ বিয়ে,এরপর ঠাঁই হয় ফুপির বাড়ি,সেখানে সুফিয়া বেগমের মানসিক টর্চার,ধ্রুবর মা’রধর! আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো।
“কী হয়েছে নিশু বল?”
“আমার মাকে আমি একবার দেখতে চাই!”
চমকে তাকায় ধূসর।
“আমার মায়ের খোঁজ এনে দাও!”
মলিন মুখে তাকায় ধূসর।
“মৃত্যুর পরেও আমার আক্ষেপ থেকে যাবে আমার মাকে একপলক দেখার। শুধু একবার দেখতে চাই! জানতে চাই আমার মা কেমন আছে! আমার মাকে কেউ বিক্রি করে দেয়নি তো! আমার মাকে কেউ ষড়যন্ত্র করে মে’রে ফেলেনি তো!”
ধূসর বুঝতে পারলো নিশুর মোমোরি রিকভার করেছে।
“নিশু থাম!”
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায় নিশু।
“একজীবনে আমার আক্ষেপ মাকে একবার দেখা আর কিচ্ছু না!”
“অবশ্যই চেষ্টা করবো। বাসায় চল ঠাণ্ডা লাগবে!”
অনেকক্ষণ ঠাণ্ডায় পড়ে থাকায় হাত-পা ছেড়ে দিলো নিশু। দাঁতে দাঁত লেগে ঠকঠক করে শরীরটা কেমন কাঁপছে! ভড়কায় ধূসর। উঠিয়ে বসাতেই পড়ে যেতে নিতেই ধরে ফেললো। বিকট শব্দে আচমকা পরপর দু’বার বজ্রপাত হতেই ভড়কায় দু’জন। চট করে পাঁজাকোলে তুলে নিচে নামতে লাগলো। টুপটুপ করে নুপুর থেকে বৃষ্টির পানি পড়তে লাগলো।
___
বারবার রিং হচ্ছে ফোনটা সেদিকে তাকিয়ে রইলো নিশু।
“এবার তো পিক কর!”
“করবো না।”
হতাশ হয় নিশু। রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আরো কয়েকবার রিং হতেই এবার পিক করলো।
“কী সমস্যা? কী হয়েছে? কল দিচ্ছেন কেন?”
“রাগার কী আছে?”
“বিরক্ত করছেন কেন?”
“জরিনার মা তোমার সাথে তো আমার রাগারাগির কোনো সম্পর্ক নেই।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো দ্যুতি।
“অসভ্য,বদলোক তাহলে কল দেস ক্যান!”
রুমে ঢুকলো নিশু।
“কল কাটলি কেন?”
“ও ফোন দেয় কেন?”
“দিলেও সমস্যা না দিলেও সমস্যা তো কী করবে?”
“এতদিন পরে কেন দিলো!”
নিশু বুঝতে পারলো অভিমান হয়েছে দ্যুতির।
“ঠিক করে নে। অভিমান করে কার কষ্ট হচ্ছে তোর না তার?”
কিছু বললো না দ্যুতি। ঠিক আজ এক মাস পর কল দিয়েছে অনিক। এই একমাসে একটা মেসেজও দেয়নি। সেও রাগে-অভিমানে দেয়নি!
___
ঢাবিতে চান্স পেয়েছে নিশু-দ্যুতি। অনিকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে বুশরা। রেগুলার ক্লাস করছে দু’জন। নিশু আগের থেকেও অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলে না তদ্রূপ দ্যুতিও। সারাক্ষণই বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকে দু’জন। যদিও মেয়ে মানুষকে এত শক্তরূপে মানায় না। মেয়েরা তো কোমলমতি! ধ্রুবর কথা নিশু আর ভাবে না। কেন ভাববে মানুষটা তো তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে! তাই তার কথা ভাবাও পাপ! ছাঁদের কার্নিশের উপর সুয়াচন্দনকে আদর করার সময় মনে পড়লো ধ্রুবর কথা। ভুলতে চাইলেই কি ভুলা যায়? বুঝজ্ঞান হওয়ার পর থেকে সে জানে মানুষটা তার স্বামী। তাকে বুঝানো হয়েছে মানুষটা তার স্বামী। সেই মানুষটাকে স্বামী হিসেবে সে না চাইতেও কখন কীভাবে যেন মেনেছে। মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে! জানে মানুষটা তাকে টর্চার করেছিল তবুও সেইসব যেন ওই ভালোবাসার কাছে ফিকে! হয়তো এটাও একটা রহমত। এতগুলো বছর স্বামী ভেবে আসা মানুষটাকে চাইলেই কি হুট করে ভুলা সম্ভব? না একদম না! মানুষটা যে তার হৃদয়ভূমির সবটুকু জায়গা দখল করে বসে আছে। কীভাবে সেখান থেকে সরিয়ে দিবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছে নিলো। আকাশের দিকে দু-হাতে উড়িয়ে দিলো সুয়াচন্দনকে। সুয়াচন্দন আর সুন্দরীর জন্য একজোড়া রূপার নুপুর কিনে দিয়েছে ধূসর। দু’জনের পায়ে দুটি। খাবার খেতে নিচে আসলে হাঁটার সময় ঝুনঝুন করে। মুগ্ধ নয়নে তাকায় নিশু। দ্যুতি বসে আছে ট্যাঙ্কির পাশে। সবসময়ই কেমন জানি দেখায়। মাঝেমধ্যে নিশুর হাসি পায়। সব থাকার পরেও দ্যুতি কেমন আপসেট হয়ে গেছে। আর তার তো কিছুই নেই! স্বামীটাও না। কয়দিন পর সেই স্বামীটা তার সামনে অন্য নারীকে নিয়ে সংসার করবে। ভাবতেই বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস আঁটকে আসছে। ছাঁদের অপরদিকে এগিয়ে গেল। বাগান বিলাস ঝরে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে ফুলের শহর। হঠাৎ রিনা খালা উঠে এলেন।
“তোমগো রে ডাকতাছে!”
দ্যুতি তাকায়।
“কে?”
“আপনার আম্মা।”
চলে গেল রিনা খালা।
“নিশু চল।”
বাসায় ঢুকতে নিতেই দেখলো বেশ কয়েকজন লোক বসে রয়েছেন। চমকে উঠে দু’জন দু’জনের দিকে তাকালো।
“এরা কে নিশু?”
“জানি না।”
“রিনা ওরা এসেছে?”
“কইছি আইতাছে।”
কথাবার্তা শুনে যতটুকু বুঝতে পারলো তাহলো দ্যুতিকে দেখতে এসেছে। কেঁপে উঠলো দ্যুতি। এতো তাড়াতাড়ি সে বিয়ে করবে না। আচমকা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে চলে গেল দ্যুতি। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিশু। এগিয়ে এলেন দিলরুবা খাতুন।
“দ্যুতি কই নিশু?”
“বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।”
“মানে?”
“হ্যাঁ এখন।”
“কোথায় গেছে?”
“জানি না।”
___
শপিংয়ে ঢুকতেই নীলির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ধ্রুবর। সোজা হেঁটে চলে গেল যেন নীলিকে সে দেখেইনি। মুখটা মলিন হয়ে গেল নীলির। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শত চেষ্টা করেও ধ্রুবর মনের শক্ত খোলস সে ভাঙতে পারেনি। মানুষটা একটা পাথর! পাথরও একসময় ভাঙে,ক্ষয় হয় কিন্তু এই মানুষটা যেন পাথরকেও হার মানিয়ে দিলো। চলে গেল হলে। শপিং করতে লাগলো ধ্রুব। বাবা-মা,ভাইবোন সবার জন্য শপিং করলো। শপিং করতে করতে বেশ বেলা হলো। টায়ার্ড হয়ে বেরিয়ে সব গাড়িতে রেখে রেস্তোরাঁয় ঢুকে লাঞ্চ পার্সেল করার জন্য অর্ডার করতেই হঠাৎ চোখ পড়লো একটি টেবিলে। অ্যানি তার বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খাচ্ছে। চোখ সরিয়ে নিলো ধ্রুব। জানতো মেয়েগুলো এমনই। ধ্রুবকে দেখতেই চমকায় অ্যানি। আমতা আমতা করলো। উঠে এগিয়ে এলো।
“হাই ধ্রুব! আসো লাঞ্চ করি।”
বিল পে করে পার্সেল নিয়ে বেরিয়ে এলো।
“ধ্রুব শোনো!”
স্টার্ট দিয়ে বাসায় ফিরে গেল। শপিং ব্যাগগুলো বেডের এক কোণে রেখে দ্রুত শাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ করে শুয়ে পড়তেই চোখ লেগে এলো। আসরের সময় কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ধ্রুবর। বিরক্ত হয়ে ডোর খুলতেই দেখলো নীলি। একরাশ বিরক্তি ভর করলো ধ্রুবর। পৃথিবীর যতরকম ইগনোর ছিল সবই করা শেষ তবুও মেয়েটা তার পিছু ছাড়লো না।
“হাই!”
“কী চাই?”
“ভিতরে আসবো?”
নীরব রইলো ধ্রুব। নীলি নিজেই ঢুকলো। হঠাৎ চোখ পড়লো দেয়ালে পেইন্টিংটির দিকে। একটি শ্যামবর্ণের মেয়ে একহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে রয়েছে ঘাসের উপর। তার একটি মায়াবী চোখ দেখা যাচ্ছে। শরীরের যতগুলো অংশ দেখা যাচ্ছে ততটুকুই শ্যামবর্ণ। এই মেয়ের মধ্যে কী পেলো ধ্রুব যে দেয়ালে টানিয়ে রেখেছে আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর। কী এমন পেলো যে তার মতো সুন্দরীকে বার-বার ইগনোর করলো? বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
“কবে ফিরবে দেশে?”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“আমি আজ ফিরে যাচ্ছি!”
কিছু বললো না ধ্রুব।
“তুমি বললে একই ফ্লাইটে যাব।”
মৌন রইলো ধ্রুব।
“তোমার বাসার ঠিকানা দিবে?”
কিছুই বললো না।
“না মানে কখনো মন চাইলে যাব আরকি!”
“তুমি এবার যেতে পারো।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল নীলির। মুখোমুখি দাঁড়ালো।
“ধ্রুব তুমি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছো যেটা একজন মানুষ কুকুরকেও করে না। তুমি কি একটু কোমল হতে পারো না?”
“কথা বলা শেষ হলে যেতে পারো রেস্ট নিবো।”
“ধ্রুব আই লাভ ইউ! প্লিজ একসেপ্ট মাই লাভ!”
চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব।
“ধ্রুব আই লাভ ইউ!”
জড়িয়ে ধরতেই কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ধাক্কা দিতেই পড়ে গেল ফ্লোরে। হতভম্ব হলো নীলি।
“এমনটা করতে পারলে তুমি?”
“তোমাকে পুঁতে ফেলা উচিৎ! প্রথমেই বলেছি আমি ম্যারিড তারপরেও বার-বার ডিস্টার্ব করার মানে কী? ছ্যাঁছড়া মেয়ে! সস্তা মেয়েদের কাজই হচ্ছে বিবাহিত পুরুষদের দিকে নজর দেওয়া! আত্মসম্মানহীন মেয়ে!”
“তুমি মিথ্যে বলছো আমি শিওর!”
বের করে দিলো নীলিকে। রাগে গজগজ করলো ধ্রুব। সে কোনো মেয়েকেই পছন্দ করে না। মেয়েদের দেখলেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। নিশুর কথা মনে পড়লে তো আরো মেজাজ খারাপ হয়।
__
চট্টগ্রাম ট্রান্সফার হয়েছে আবির সেই মাসেই। জিদ চেপেছিল অনিকের উপর। কাজের প্রেসার এবং ছুটির জন্য তেমন একটা ঢাকা আসতে পারে না। এদিকে ধূসরও কেন জানি সারাক্ষণ ওদের চোখে চোখে রাখে। সেভাবে কথা বলার সুযোগও পায় না আবির। তার বাবা-মাকে পাঠিয়েছিল সেদিন কিন্তু আসাদ সাহেব এই ব্যপারে মুখ ফুটে কিছু বলেননি। আদেও ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছে কি-না ধ্রুব সেটা তিনি জানেন না। লইয়্যারের সাথে কথা বলেও এই ব্যপারে কিছু জানতে পারেননি তাই একপ্রকার নীরবই রয়েছেন। ভার্সিটি শেষে গেট দিয়ে বেরুতেই দেখলো আবির দাঁড়িয়ে রয়েছে। থমকায় নিশু।
“হাই প্রিটি গার্ল কেমন আছো?”
“ভালো।”
“চলো কোথাও বসি।”
“না,বাসায় ফিরবো।”
“পাঁচ মিনিট বসি।”
“না।”
গাড়িতে উঠে গেল দু’জন। ব্যপারটা ভালো লাগলো না আবিরের। নিশু তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। নিরাশ চোখে তাকিয়ে রইলো।
______
চলবে~