মায়াকুমারী পর্ব-২০

0
331

#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(২০)
___________________

নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ধ্রুব। জ্যাককে নিয়ে বেণী দুলাতে দুলাতে ভাইয়ের পিছন পিছন গেল দ্যুতি।

“রেড লাগেজটা এদিকে আন।”

“ওফ! খালি অর্ডার আর অর্ডার!”

রেড লাগেজটা টেনে আনলো।

“চাবি দাও খুলি।”

চাবি নিয়ে লাগেজ খুললো দ্যুতি। একটা ল্যাপটপ,আইফোন,অ্যাপেল হ্যান্ডওয়াচ,ওয়ালেট,পারফিউম বক্স,অনেকগুলো টি-শার্ট,জিন্স প্যান্ট,টাউজার,সুজ,শেইভ জেল সহ একটা বক্স ইত্যাদি এগুলো বের করে ধ্রুব নিজেই ধূসরের রুমের দিকে গেল। ডোর নক করতেই ধূসর খুলতেই দেখলো ধ্রুব। হকচকায়।

“ভাইয়া তুমি!”

“তোর গিফট!”

ধূসর তাকায়।

“নে।”

কিছু না বলে হাতে নিলো।

“এতো কিছু!”

কিছু বললো না। চলে এলো।

“তুমি কি আমার জন্য কিছুই আনোনি?”

“না।”

“সবার জন্য এনেছো অথচ আমার জন্য আনোনি। অহেতুক তোমাকে ছাপড়ি ভাইয়া ডাকি বলো!”

দুইটা আইফোন বের করে বিছানায় রাখলো,দুটি পার্টি লেহেঙ্গা,দুটি গাউন,ফুল সামগ্রী সহ মেক-আপ সেট,কসমেটিক,শ্যাম্পু,কন্ডিশনার,লোশন,ফেইস ওয়াশ,পারফিউম,দুইটা ঘড়ি,পার্টি ব্যাগ,সাইড ব্যাগ,পার্স,শাল ইত্যাদি বের করলো।

“ওমা এতোকিছু! সব দেখি দুটি করে। কার জন্য ভাইয়া?”

“তোর জন্য!”

আরেকটি লাগেজ খুলে লাল,কমলা,হলুদ সহ মোট তিনটি শাড়ি রাখলো।

“ওমা কি সুন্দর শাড়ি কার জন্য এগুলো?”

নীরব রইলো ধ্রুব। একটা বক্স খুলে হাত টেনে ব্রেসলেট পরিয়ে দিতেই ভীষণ খুশি হয়ে গেল দ্যুতি। জড়িয়ে ধরে বলল,”আই লাভ ইউ ছাপড়ি ভাইয়া!”

নীরব রইলো ধ্রুব। একটা লকেট পরিয়ে দিলো।

“এটা আমার জন্য?”

“হুম।”

“এতো টাকা কোথায় পেলে?”

“স্টাডির পাশাপাশি জব করেছি।”

ভাইয়ের মুখের দিকে তাকায় দ্যুতি। দেখতে ভালো লাগছে!

“শাড়িগুলো কার জন্য ভাইয়া আমার জন্য?”

“না।”

“কার জন্য?”

নীরব রইলো ধ্রুব। দ্যুতি লক্ষ্য করলো তার ভাই নিশুর কথা কিছু বলছে না। সেও আগ বাড়িয়ে বলে ইজি করবে না যতক্ষণ না নিজ থেকে বলে।

“নিশ্চয়ই শাড়িগুলো আমার জন্য। ভাইয়া বলছো না কেন?”

গলা পরিষ্কার করে নিলো ধ্রুব। নিশুর কথা জিজ্ঞেস করতে অস্বস্তি হচ্ছে।

“ভাইয়া দুইটা গাউন কেন?”

নীরব রইলো ধ্রুব।

“ভাইয়া শ্যাম্পু দুইটা কেন?একটাই তো প্রায় ২-৩ বছর চলে যাবে আমি তো মানুষ একজন। আম্মুকে তো তারটা দিলে। তুমিও কি এই ব্র্যান্ডের ইউজ করো?”

“না।”

“সবকিছু দুইটা করে কেন?”

নীরব রইলো ধ্রুব।

“তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

“না।”

“তো?”

“বউ!”

চমকিত নয়নে তাকায় দ্যুতি।

“বউ! মানে কীসের বউ! কার বউ! কবে বিয়ে করলে? মানে কী বলো প্লিজ! বলো না ছাপড়ি ভাইয়া!”

এসির মধ্যেও কুল কুল করে ঘামাতে লাগলো ধ্রুব। আমতা আমতা করলো।

“বলো তোমার বউ কে?এতোকিছু কেন আনলে?”

“নিয়ে যা।”

দ্যুতি বেছে বেছে তারগুলো নিলো।

“তোমার বউয়েরগুলো রেখে আমার গুলো নিয়ে গেলাম।”

“শোন!”

“কী?”

ইতস্তত করলো ধ্রুব।

“এগুলো ওর জন্য। নিয়ে যা।”

“কার জন্য?”

আগ্রহী হয় দ্যুতি। গরম চোখে তাকালো ধ্রুব। ইনোসেন্ট ফেইস করলো। মনে মনে বলল,”চান্দু আজ তোমার মুখে বলিয়েই ছাড়বো! নয়তো আমিও দ্যুতিধারা নই!”

“কী হলো ভাইয়া? রাগ দেখাচ্ছ কেন?”

বেণী দুলাতে লাগলো।

“ওগুলো নিশুর জন্য।”

চমকে তাকায় দ্যুতি।

“একটু আগে না বললে বউ?”

নীরব রইলো ধ্রুব।

“তোমাদের ডিভোর্স হয়নি?”

“যাবি এখান থেকে?”

“তোমার বউকে তুমি ডেকে দাও আমি কেন দিবো!”

গাট্টা মারলো মাথায়।

“দিন দিন বেয়াদব হয়ে গিয়েছিস।”

“সত্য কথা বলেছি!”

“এইসব নিয়ে ভাগ!”

সব লাগেজে ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেল দ্যুতি। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশের ব্যালকনিতে কেউ নেই। বেশ কতগুলো রেইন লিলি ফুটে রয়েছে টবে। একটা হাসনাহেনা গ্রিলের বাইরে দিয়ে নিচের দিকে নেতিয়ে রয়েছে। অসংখ্য ফুল ফুটে আছে। ঘ্রাণ পাচ্ছে ধ্রুব। আরেকটা বুনো গোলাপের ঝাড়ও নেতিয়ে রয়েছে। গুণে দেখলো একুশটি গোলাপ ফুটেছে। একটা সিগারেট ধরালো। রুমে ঢুকে লাগেজ থেকে সব বের করলো দ্যুতি।

“নিশু!এই নিশু! নিশু উঠ!”

কম্ফর্টার মুড়িয়ে শুয়ে রয়েছে মেয়েটা।

“কী?”

টান দিয়ে উঠালো।

“দেখ তোর এক্স হাজবেন্ড গিফট পাঠিয়েছে!”

“মানে?”

“ছাপড়ি ভাইয়া!”

হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো নিশু। সব বিছানার উপর রাখলো।

“দেখ আমার আর তোর জন্য আইফোন দিয়েছে! ইয়াহু! আমরা তো অনেক বড়লোক হয়ে গেলাম রে নিশু!”

নীরব রইলো নিশু।

“সুন্দর না?”

“হুম।”

“নে এটা তোর!”

নীরব রইলো নিশু।

“নিশু দেখ ভাইয়া তোর জন্য তিনটি শাড়ি দিয়েছে! শাড়ি পরে ভাইয়াকে থ্যাংক ইউ বলে আয় যা।”

একে একে সব বের করলো।

“নিশু দেখ,আমাকে সোনার ব্রেসলেট আর ডায়মন্ড লকেট দিয়েছে!”

দেখলো সত্যিই সুন্দর!

“সুন্দর না?”

“হুম অনেক!”

“তোর জন্য নিশ্চয়ই অন্য কিছু এনেছে। হয়তো পরে দিবে।”

“এইসব কি উনি দিয়ে গিয়েছেন নাকি তুই এনেছিস?”

“ভাইয়াই তো আনলো।”

“এখানে কে এনেছে?”

“আমি।”

“এখন তুই বলছিস আমি শাড়ি পরে তোর ভাইকে থ্যাংক ইউ বলতে যেতাম?”

“হ্যাঁ যাবি! সমস্যা কী তোর এক্স স্বামীই তো!”

দাঁতে দাঁত চাপলো নিশু।

“তোর ভাই আমাকে গিফট পাঠিয়েছে,আর আমিও নির্লজ্জ,ছ্যাঁছড়া মেয়েদের মতো তাদ দিনা দিন দিন তা করে এইসব পরবো! তারপর তোর ভাইয়ের শাড়ি,গাউন,লেহেঙ্গা পরে নাচতে নাচতে সিঁড়ি দিয়ে নামবো,আর তোর ভাইকে দেখতেই ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের নায়িকার মতো উষ্টা খেয়ে আ.আ.আ করে বুকে গিয়ে পড়বো! তারপর নায়কের মতো তিনি আমাকে ধরে ফেলবেন। এরপর চোখে চোখ রাখবো দু’জন। তারপর আই লাভ ইউ বলবো! তারপর তিনি আমাকে থাপ্পড় দিবেন। সেই থাপ্পড় খেয়েও বলবো,আমি ভালোবাসি আপনাকে ধ্রুব ভাইয়া! তারপর তিনি আবারও থাপ্পড় দিবেন। এরপরেও বলবো,থাপ্পড় খাওয়ার পরেও ভালোবাসি আপনাকে! তারপর ধ্রুব ভাই..য়া! ভাই..য়া! ভাই..য়া.য়া.য়া! করতে করতে মুখের ফ্যানা তুলে সারা দিন-রাত ন্যাকামি করতে করতে তার পিছন পিছন কুকুরের মতো ঘুরবো তাই তো! তারপর পাত্তা না পেয়ে বুকের তলায় বালিশ চাপা দিয়ে নিব্বিদের মতো অকারণেও কান্নাকাটি করবো! কান্নার কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকলেও কান্না করবো! তা না হলে গাড়ির তলে ঝাঁপ দিয়ে সু’ইসাইড করবো তাই তো!”

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো দ্যুতি।

“এতোটাও সস্তা নয় আমি যে তার গিফট পেতেই দীর্ঘ সাড়ে এগারো বছরের অপমান ভুলে যাব। হ্যাঁ আমি তাকে ভালোবাসতাম কারণ তিনি একসময় আমার স্বামী ছিলেন। এখন তো নেই তাহলে কোন মুখে তার জিনিস নিবো? আর সেটা বাদেও আমার কি আত্মসম্মান নেই? ভুলে যাস না আমি সেই সাড়ে তিন বছর আগের নিশু নই! বেগ পেতে হবে এবার! মোম থেকে গলে গলে আমি পাথর হয়েছি এমনি এমনি না। স্যরি টু সে,তোর ভাইয়ের গিফট আমি গ্রহণ করতে পারবো না। তাকে তার গিফটগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আয়। দেখুক ইনসাল্ট করলে কেমন ফিল হয়!”

“গিফট কী করেছে?”

“আমাকে মানুষ বলে মনে হয়নি তার? বউয়ের পরিচয় বাদ! সে তো কাজিন হিসেবে আমাকে ডেকে কিংবা নিজে এসে দিতে পারতো! সে কেন আমার গিফট আরেকজনের হাতে পাঠাবে! সে কি আমাকে আরো একবার ছোট করেনি?”

“তুই আমাকে পর ভাবলি?”

“দ্যুতি,ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! তার যদি আমাকে দেওয়ার ইচ্ছে থাকতো সে আমাকে ডেকে পাঠাতে পারতো! সে কেন তোর হাতে পাঠাবে? তার সাথে আমার কোনো কথা নেই,বার্তা নেই,যোগাযোগ নেই,কোনো কিছু নেই,বলা যায় সে আমাকে চিনেই না,দেখেইনি দীর্ঘ সাড়ে এগারটি বছর তাহলে আমি কোন যুক্তিতে তার গিফট নিবো? কীসের এতো অহংকার তার?সে যখন গিফট দেয়নি তখন কি আমি শাড়ি,লেহেঙ্গা,গাউন কিংবা কোনো ড্রেস পরিনি? আমি কি তখন উলঙ্গ ছিলাম! আমি কি মাথায় শ্যাম্পু,কন্ডিশনার ইউজ করিনি? নাকি পঁচা সাবান ইউজ করেছি! নাকি তার গিফট দেওয়ার অপেক্ষায় প্রতিক্ষার প্রহর গুনেছি!”

“তুই নিজেও তো আড়ালে রইলি তার সাথে দেখা করিসনি। তোর কি উচিত ছিল না ভাই হিসেবে তার সাথে কুশলাদি বিনিময় করা?”

“সে আমার মুখ দেখতে চায় না। তাহলে আমি কোন বিবেকে তার সামনে যাবো! প্রমিজ করেছিলাম যতদিন না সে নিজ থেকে কদম এগিয়ে আমাকে না দেখতে আসে ততদিন সে আমার মুখ দেখবে না।”

মলিন মুখে তাকিয়ে রইলো দ্যুতি।

“এখন রাগ দেখিয়ে কী লাভ?”

“তাকে ঘৃণা করি!”

“মুখে মুখেই বললি! ঠিকই তো নিজে জ্বলেপুড়ে মরে যাস! এখনও ভালোবাসিস! প্রতি রাতে তোর কান্নার জন্য ঘুমাতে পারি না! পাগল হয়ে গেলি একবার!”

“ফিরিয়ে দিয়ে আয় যা। নয়তো বাসা থেকে বের হয়ে যাব।”

“ওকে আর ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। তোদের দু’জনের মধ্যেই ইগো! এই ইগোর জন্যেই তোদের এই অবস্থা! না সে ইগো কমাতে পারছে আর না তুই! ইগোয়ওয়ালায় ইগোওয়ালায় দারুণ মিলেছে! থাক তোরা এইভাবে বস্তা ভরা ইগো নিয়ে!”

সব লাগেজে ঢুকিয়ে আবারও ধ্রুবর রুমে নিয়ে গেল।

“ভাইয়া!”

সিগারেটটা পায়ের তলায় পিষে ব্যালকনি থেকে এগিয়ে এলো ধ্রুব।

“কী?”

“নিশু তোমার জিনিস রাখতে পারবে না।”

“কী হয়েছে?”

“সে ইনসাল্ট ফিল করেছে!”

বেরিয়ে গেল দ্যুতি। চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব। দাঁতে দাঁত চাপলো। অন্তত নিশুর থেকে এমনটা আশা করেনি সে। সে-তো ভেবেছিল বাসায় ফিরলে সর্বপ্রথম নিশুকে দেখবে। নিশু তাকে কংগ্রাচুলেশন করবে কিন্তু নিরাশ করলো। তার দেওয়া খামটি কি নিশু পায়নি? যদি পেয়ে থাকে তাহলে এইরকম আচরণ খুবই জঘন্য! এটা নিশুর একপাক্ষিক জেদ হবে। নিশুর মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করলেও দমন করলো। রেডি হতে লাগলো বাইরে ফ্রেন্ডদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ফণা তোলা সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে লাগলো নিশু।

“এবার বুঝুক সে কোন জায়গায় ভুল করেছে! সে বুঝুক ইনসাল্ট করলে কেমন ফিল হয়!”

রাগে গজগজ করতে লাগলো।

“তার শাড়ি,লেহেঙ্গা,গাউন পরে উষ্টা খেয়ে তার বুকে পড়ে গিয়ে বলবো,আই লাউ ধ্রুব ভাই..য়া! আই লাভ ইউ! ভাই..য়া! ভাই..য়া..য়া! সে-কি আমাকে নিব্বি,ইমম্যাচিওর,ছ্যাঁছড়া মেয়ে ভেবেছে! তাহলে চরম ভুল করেছে! সাড়ে এগারোটি বছর আমাকে কষ্ট আর অবহেলা করার জন্য তাকে আমার কাছে গুণে গুনে এগারো শ বার স্যরি বলতে হবে।”

অবনরত বকতে লাগলো নিশু।

“দিয়ে এসেছি এবার শান্ত হো! দু’জনই মামুন-লায়লা! একজন স্বীকার করে না আরেকজন ফেরাতে পারে না।”

তোয়াক্কা করলো না নিশু। নিজের গিফটগুলো কিছু আলমারিতে,কিছু ড্রেসিং টেবিলের উপর এবং কিছু ওয়াশরুমে রেখে দিলো।
__

শপে যাওয়ার জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি পরে তৈরী হলেন আসাদ সাহেব।

“দিলরুবা শুনছো!”

“জ্বী। কিছু বলবেন?”

“নিশুকে দেখতে আসতে চায়।”

“কে?”

“ইন্সপেক্টর আবির।”

অসন্তুষ্ট হলেন দিলরুবা খাতুন।

“কী পেয়েছে ওই পুলিশ! তার সমস্যা কোথায়! তাকে না বলেছি আমরা আমাদের মেয়ে নিয়ে আপাতত কিছু ভাবছি না। মেয়ে পড়াশোনা করছে করুক! আর দরকার পড়লে ধূসরকে বলবো নিশুকে বিয়ে করে ঘরের মেয়ে ঘরে রাখতে। দরকার হলে নিশু ধূসরের দ্বিতীয় বউ হয়ে থাকবে তবুও বাইরে দিচ্ছি না।”

থমকে দাঁড়ায় ধ্রুব। বাইরেই যাচ্ছিল তবে এমন কিছু শুনবে আশা করেনি।

“আচ্ছা এখন আসতে চায় ফ্যামিলি নিয়ে কী করবো?”

“নিষেধ করুন।”

রাগে গজগজ করে কাজে মনোযোগ দিলেন দিলরুবা খাতুন। আসাদ সাহেব জানেন দিলরুবা খাতুন নিশুকে বাইরে বিয়ে দিতে অনিচ্ছুক এবং তিনিও।

“একটা মেয়ে একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেই মানুষের জন্য রাখা যায় না। একের পর এক প্রস্তাব আসতেই থাকে।”

রাগে গজগজ করতে লাগলেন। দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেল ধ্রুব। তৈরী হয়ে রুম থেকে বেরুলেন আসাদ সাহেব।
__

গভীর রাত। একটানা সারাদিন রুমের মধ্যে ছিল নিশু। একবারের জন্যও বের হয়নি। খাওয়া-দাওয়া সেরেছে রুমের মধ্যে। আর সম্ভব হচ্ছে না রুমের ভিতর নিজেকে বন্দী করে রাখার। রুদ্ধশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরুলো। পুরো বাড়ির লাইট অফ। শুধু লিভিং স্পেসে ড্রিম লাইট জ্বলছে! ড্রিম লাইটের আলোয় ড্রিমক্যাচারটি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে এবং মৃদু হাওয়ায় দুলছে! রুম থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরুলো নিশু। চুলগুলো বরাবরের মতোই ছাড়া। সাড়ে তিন বছরে বলা যায় চুল অনেকটাই বড় হয়েছে। মেমোরি রিকভার করার পর চুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে যত্ন নিয়েছিল। অবশ্য ধূসর তাকে নাম দিয়েছিল,ম্যাডাম ফুলি। ধীর পায়ে ঝুনঝুন আওয়াজ তুলে লিভিং স্পেসের দিকে এগিয়ে গেল নিশু। ধীরে ধীরে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে নামতে লাগলো। অবশ্য ল্যাপটপে কাজ করছিল ধ্রুব। টাইম এবং কান্ট্রি চেঞ্জ হওয়ায় ঘুমও আসছিল না। হঠাৎ ঝুনঝুন আওয়াজ শুনতেই হাত থেমে গেল। নিশ্চয়ই এটা নিশু! ল্যাপটপ রেখে রুম থেকে বেরুলো। দেখলো সত্যি নিশু। সিঁড়ি বেয়ে লিভিং স্পেসের দিকে যাচ্ছে। এগিয়ে গেল ধ্রুব। উপর থেকে তাকালো। ডাইনিংয়ে গিয়ে পানি পান করে সোফায় বসলো পিঠ এদিক করে। সিঁড়ির সামনে দাঁড়ালো ধ্রুব। সে কি যাবে নিশুর সামনে আর তখন রিয়েক্ট করার কারণটা কি জিজ্ঞেস করবে ভাবতে লাগলো! কেমন যেন অস্বস্তি হলো। মনে পড়লো সকালের কথা। হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। এই মেয়ে তার দেওয়া গিফট ব্যাক করে তাকে ইনসাল্ট করিয়েছে! আর সে কি-না এখন মেয়েটার সঙ্গে দেখা করতে যাবে একদম নয়! হঠাৎ ডোর খোলার শব্দ হতেই দেখলো রুম থেকে বের হয়েছে ধূসর। নিশু কি তার মানে ধূসরের জন্য ওয়েট করছে ওখানে! আর দাঁড়ালো না রুমে ফিরে গেল। লিভিং স্পেসের দিকে এগিয়ে আসতেই নিশুকে দেখলো ধূসর।

“কীরে ম্যাডাম ফুলি কী করিস?”

চমকায় নিশু।

“কিছু না।”

“জেগে আছিস যে?”

“ঘুম আসছে না।”

সবই শুনলো ধ্রুব।
__

শুক্রবার। ভার্সিটি অফ। ঘরবন্দী হয়ে রয়েছে নিশু। দিলরুবা খাতুন এবার সত্যিই ভীষণ বিরক্ত হলেন। এইভাবে থাকলে কেমনে কী! যেমন ছেলের ইগো তেমনি মেয়ের! হতাশ শ্বাস ফেললেন।

“নিশু কী করিস?”

“কিছু না।”

শোয়া থেকে উঠে বসলো।

“আমার শরীরটা খারাপ লাগছে! আজকে তুই রান্নাটা সেরে ফেলতো যা!”

অন্যদিন বললে নিশু টর্নেডোর বেগে ছুটে যেতো। দোনোমোনো করলো।

“কী হলো যা।”

আমতা আমতা করলো নিশু।

“কী রান্না করবো?”

“বেশি কিছু না। খিচুড়ি আর গরুর মাংস করলেই হবে। দ্যুতিও তোকে সাহায্য করবে যা।”

মলিন মুখে উঠে বসলো নিশু।

“কী হলো যা!”

“যাচ্ছি।”

“শোন।”

“জ্বী?”

“একটা শাড়ি পরতো!”

চমকে তাকায়।

“কেন?”

“শাড়ি পরলে তোকে অনেক ভালো লাগে। বউ বউ লাগে! জামাকাপড় পরলে কেমন জানি দেখায় সুন্দর লাগে না!”

ফুপির দিকে তাকায় নিশু। আর দিন তো বলে নিশু তোকে সবকিছুতেই সুন্দর লাগে!

“শাড়ি পরে রান্না করতে কষ্ট হবে ফুপি।”

“আগেও তো করতি তখন তো কষ্ট হয়নি। যা একটা পর।”

“আচ্ছা।”

নিশু আজ আবারও একটি একশো কাউন্টের হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি পরলো। পুরো শাড়িতেই তিন জরির কম্বিনেশনে ছোট ছোট ফুলের মতো নকশা করেছে তাঁতি। আঁচলে খুবই সুন্দর এবং নিখুঁত পেটানো কাজের জন্য এতো বেশি গর্জিয়াস লাগছে এই জামদানিটা! আগাগোড়া সমান কাজ! ভীষণ সফ্ট আর ওজনে হালকা! আর ম্যাচিং ব্লাউজ-পেটিকোট পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চতুর্দিকে একপলক তাকিয়ে হাঁটা ধরলো কিচেনে। ঠিক সেই সময় রুম থেকে বের হলো ধ্রুব। হলুদ শাড়ি পরনে নিশুর পিছনের দিকে তাকাতেই বুকটা কেমন দুলে উঠলো ভোরের নির্মল হাওয়ায় ন্যায়। ঝুনঝুন আওয়াজ তুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিচেনে ঢুকে গেল নিশু। নুপুরের ঝুনঝুন শব্দের মতো তোলপাড় শুরু হলো ধ্রুবর বুকের ভিতরও। হলুদ রঙ তার ভীষণ অপছন্দের এটা তাদের পরিবারের সবাই জানে। কিন্তু নিশু বোধহয় ইচ্ছে করেই এই কালারটা গায়ে জড়ায়। উপর থেকে কিচেনে তাকালো। বড়সড় ঘোমটা টেনে নিশু রান্না করতে ব্যস্ত। উশখুশ করলো ধ্রুব। কেমন অস্বস্তি আর অস্থির অস্থির লাগছে! আবারও পুরনো স্মৃতিগুলো মাথার স্নায়ুকোষে সার্কেলের ন্যায় ঘুরপাক করতে লাগলো। এই রূপে নিশুকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু কীভাবে দেখবে বুঝতে পারছে না। দ্রুত ডাইনিংয়ে গিয়ে একটা গ্লাস নিয়ে কিচেনের সামনে দাঁড়াতেই দেখলো ভিতরে রিনা খালাও আছে।

“কিছু লাগবো ভাইজান?”

চমকায় নিশু কিন্তু তাকালো না।

“হ্যাঁ,গ্লাসটা ধুয়ে দাও।”

“নাস্তা খাওনের পর একটু আগে ধুয়ে রাখছি তো!”

“কিন্তু অপরিষ্কার লাগছে আবারও ধুয়ে দাও।”

“আইচ্ছা দিতাছি।”

ঠোঁট চেপে অন্যদিকে ফিরে মাংস কষাতে লাগলো নিশু।

“কী রান্না হচ্ছে আজ?”

“খিচুড়ি আর মাংস।”

ধ্রুব ভেবেছিল নিশু উত্তর দিবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। মনেই হয়নি শুনেছে। এত্ত ইগো এইটুকুন মেয়ের! গ্লাস ধুয়ে হাতে দিলো।

“ধোয়া হয়নি আবারও ধুয়ে দাও।”

“মাত্রই তো ধুইলাম!”

“আবারও ধুয়ে দাও।”

মুখ গোঁজ করে আবারও গ্লাসটি ধুতে লাগলো। ধ্রুব ভাবলো হয়তো নিশু ধুয়ে দিবে কিন্তু তেমন কিছু হলো না।

“এক মগ কফি লাগবে।”

“আইচ্ছা দিতাছি!”
________

চলবে~