#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(২১)
___________________
হঠাৎ মাংসের ঘ্রাণ পেতেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো ধূসর। সে শিওর নিশু রান্না করছে। কেবল নিশু রান্না করলে এ ঘ্রাণটা সে পায়। কিচেনে উঁকি দিতেই দেখলো সত্যি নিশু। কফি বানিয়ে রিনা খালা ধ্রুবকে দিতে গেল। ধ্রুব এদিকে না তাকালেও কান সজাগ রাখলো।
“ধুতরাফুল কী করিস?”
আস্তে বললেও ধ্রুবর কানে পৌঁছাতেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। চমকে উঠে হকচকায় নিশু।
“রান্না করছি!”
আচমকা দ্যুতি এসে দাঁড়াতেই ভড়কায় দু’জন।
“ধুতরাফুল তাই না! তোমার ধুতরাফুল! গুনে গুনে একসঙ্গে দশটা ধুতরাফুলের জুস করে তোমাকে খাওয়াব নিশুর দিকে নজর দিলে। মনে রেখো নিশু শুধু ইনস্পেক্টর আবিরের।”
শুনিয়ে শুনিয়েই বললো দ্যুতি। চোয়াল শক্ত করলো দু’ভাই! ইন্সপেক্টর আবির ভাবতে লাগলো ধ্রুব! চোয়াল শক্ত করে কফিতে চুমুক দিলো। অপ্রস্তুত হয়ে গাট্টা মা’রলো মাথায়।
“গাধী!”
“তুমি গাধা!”
“তুই গাধী!”
“ধুতরাফুল কী করিস?তোমার জন্য জুস বানাই! খেয়ে পটল তোলো! দেবদাস হওয়ায় চেয়ে রোমিও-জুলিয়েটের মতো পটল তোলো! সেই ঢের!”
বিদ্রুপ করে বলতে লাগলো দ্যুতি। অপ্রস্তুত হয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ধূসর। কান গরম হয়ে গেল ধ্রুবর। তদ্রূপ কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে লাগলো নিশুর। বেণী দুলাতে দুলাতে লাল লা লা লালা করতে লাগলো দ্যুতি। বেশ অনেকক্ষণ সোফায় বসে রইলো ধ্রুব কিন্তু কিচেন থেকে এক কদমও বের হলো না নিশু। নিরাশ হয়ে অগত্যা কফি শেষ করে রুমে ফিরে গেল।
__
লাঞ্চ করতে বসলো সবাই। হাসি মুখে দিলরুবা খাতুন সার্ভ করছেন। গম্ভীর হয়ে বসলো ধ্রুব।
“ছাপড়ি ভাইয়া শুনবে?”
শক্ত মুখে তাকায় ধ্রুব।
“শোনো না! আজকে তোমার এক্স ওয়াইফ খিচুড়ি এবং মাংসের পাশাপাশি কেকা আন্টির একটা নিউ রেসিপি ট্রাই করেছে।”
“কী বললি?”
“তবে সেটা শুধু তোমার জন্য। জানো,রেসিপিটা হলো আপন মানুষের দেওয়া কষ্টে ভেতরটা কীভাবে জর্জরিত হয়ে কুকড হয়!”
কিংকর্তব্যবিমুঢ় নেত্রে তাকায় তিন ভাই। মুচকি হাসলেন দিলরুবা খাতুন।
“খিচুড়ি আর মাংস খেলে সেই কুকডের স্বাদটা পাবে।”
“চুপ কর!”
“বাই দ্যা ওয়ে,সবাইকে ভাব দেখালেও তোমার এক্স ওয়াইফ কিন্তু তোমার জন্য এখনও ব্লু ফেইরি লায়লা! সো চান্স নিতে পারো! জানোই তো লায়লা কখনোই মামুনকে ইগনোর করতে পারে না বুকে টেনে নেয়।”
শক্ত মুখে তাকালো ধ্রুব। খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আগ্রহী হয়ে পুত্রের দিকে তাকান দিলরুবা খাতুন।
“কেমন হয়েছে?”
“বাজে! জঘন্য!”
মুখটা চুপসে গেল উনার।
“হবেই তো! তোমার দেওয়া কষ্টগুলো দিয়েই তো কুকড করেছে আমাদের এক্স নিশু ভাবী। এবার বুঝো কত জঘন্য কষ্ট দিয়েছো তুমি তোমার এক্স ওয়াইফ নিশুকে। এখন নিজের দেওয়া কষ্ট নিজেই গিলে হজম করতে পারছো না সো স্যাড!”
হঠাৎ ধীরাজ বলে উঠলো,”এমন দেশে জন্ম গ্রহণ করেছি একটুও মন খারাপ করে থাকতে পারি না!”
__
বিকেল চারটা। মেহমান এলো বাসায়। আবির তার বাবা-মাকে নিয়ে এলো। ভীষণ বিরক্ত হলেন দিলরুবা খাতুন। নিষেধ করলেও শুনছে না ছেলেটা। গম্ভীর মুখে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। হাসি মুখে উনাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। একপর্যায়ে আফিয়া খানম বললেন,”মেয়েটাকে একটু নিয়ে আসুন!”
“আমরা তো অনেকবার বলেছি নিশুর বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না।”
“আমাদের ছেলে কি দেখতে খারাপ?”
“না তা নয়।”
নিশুর বিয়ে,ডিভোর্স এই ব্যপারটা উনারা প্রকাশ করেননি এখনও তাই এরা না জেনেশুনেই এমনটা করছে!
“নিয়ে আসুন মেয়েটাকে দেখি।”
একটি ডার্ক বোটল গ্রীন কালারের জামদানি শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজিয়ে নিশুকে নিয়ে এলেন। দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। আর ধ্রুব কেমন রিয়েক্ট করে সেটাও একবার দেখতে চান। ধ্রুব কিছুই খোলাসা করছে না। আদেও সে সাইন করেছে কি-না কিংবা লইয়্যারে সাথে কথা বলে ডিভোর্স স্থগিত রেখেছে কি-না সেইসব কিছুই খোলাসা করেনি। উনারাও এই ব্যপারে জিজ্ঞেস করতে ইতস্ততবোধ করছেন। লিভিং স্পেসে নিয়ে আবিরের মুখোমুখি বসালো নিশুকে। সঙ্গে দ্যুতিও গেল। দ্যুতির জন্য বললে দিয়ে দিতেন কিন্তু আবির খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছে নিশুর জন্য। এমন নয় যে দ্যুতি দেখতে খারাপ! দ্যুতি তার নামের মতোই সুন্দর ঝলমলে আলো ছড়ায়! আর হাসলে তার পুরো চেহারা,চোখ এবং দাঁতগুলো ঝিলিক দিয়ে উঠে। নামের সাথে সার্থকতা রয়েছে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“দ্যুতি তোর বড় ভাইয়াকে আসতে বল।”
“কেন?”
“মেহমান এসেছে কথাবার্তা বলার দরকার তো!”
“আচ্ছা।”
ধ্রুবর রুমে গিয়ে বলল,”ভাইয়া গেস্ট এসেছে আম্মু ডাকে।”
“আসছি।”
একটি নতুন টি-শার্ট পরে আয়না নিজেকে একবার চেক করে লিভিং স্পেসের দিকে এগিয়ে যেতেই নিশুকে দেখতেই চমকালো। উল্টো মুখ করে ডার্ক বোটল গ্রীন কালারের জামদানি শাড়ি পরে বসে রয়েছে। পাঁচ রকমের জরি সুতোর কারুকার্য আর গুঁড়ি গুঁড়ি ফুল ভরা জমিনে। হৃদয়টা আবারও কেমন দুলে উঠলো। কদম বাড়িয়ে আবিরের সামনে যেতেই সে উঠে হ্যান্ডশেক করে পাশে বসলো। কেঁপে উঠলো নিশু। ঘোমটা টেনে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে রইলো। নিশুর মুখোমুখি বসলো ধ্রুব। সোজাসুজি নিশুর দিকে তাকালো কিন্তু মুখ দেখলো না। মাথা নুয়ে রয়েছে। হাত দুটো শাড়ির ভিতর,পা দুটো কুচির নিচে। হতাশ হলো আরো একবার। কাঁপতে লাগলো নিশু। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। শক্ত হয়ে বসে রয়েছে নিশু। নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। উনারা কী বলছেন সেদিকে লক্ষ্য করলো না। অস্বস্তিতে ঘেমে-নেয়ে কাঁপতে লাগলো নিশু,তবুও দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। ভীষণ জিদ হলো আবিরের উপর। কোন দুঃখে যে লোকটার জন্য শোক প্রকাশ করে পাগল হয়ে ডিমেনশিয়ার রোগী হয়ে গিয়েছিল,আর ওই বদ ইন্সপেক্টরটার সঙ্গেও যে কোন কুক্ষণে সাক্ষাৎ হয়েছিল এখন নিজেকে নিজের প্রচুর বকাঝকা করতে ইচ্ছে করছে! শ্বাস আঁটকে রইলো নিশু। তার পাশে বসে রইলো দ্যুতি। কফি নিয়ে আনমনা হয়ে তাতে চুমুক বসালো ধ্রুব। খানিক মুখটুকু উঁচু করতেই হঠাৎ ধ্রুবর দৃষ্টিতে আঁটকে গেল একজোড়া গোলাপি রঙা ঠোঁট! তিরতির করে কাঁপছে! তদ্রূপ নিচের ঠোঁটের বামদিকে ছোট্ট একটা তিল তিরতির করে কাঁপছে! শরীরটা হঠাৎই কেমন দুলে উঠে উষ্ণ হয়ে উঠলো। ধ্রুবর কেন জানি মনে হলো হাজারটা সবুজ পাতার ভিতর একটা গোলাপের দুটি পাপড়ি দেখতে পেয়েছে সে।
“আপা,মেয়ে তো আমাদের পছন্দ হয়েছে! আপনারা কেন অমত করছেন বলুন তো?”
চমকায় ধ্রুব,মুচকি হাসলেন দিলরুবা খাতুন।
“আপা মেয়েটার জন্য আপনাদের হাত চাচ্ছি! না করবেন না প্লিজ!”
বাবা-মায়ের দিকে তাকায় ধ্রুব।
“আসলেই আমরা এখন বিয়ে-শাদি নিয়ে ভাবছি না। আরেকটু বয়স হোক!”
“এটাই বিয়ের জন্য পারফেক্ট বয়স আপা।”
“তবুও মায়ের মন তো মানে না। মেয়েটা আরো পড়াশোনা করুক।”
“বিয়ের পর আমরা করাবো কথা দিচ্ছি।”
দোনোমোনো করলেন দিলরুবা খাতুন। নীরব হয়ে বসে রইলেন আসাদ সাহেব। আজ তিনি কোনো কথা বলবেন না। সব স্ত্রীর উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
“আপা রাজি হয়ে যান। এঙ্গেজমেন্ট সেরে ফেলি!”
নীরব রইলেন তিনি।
“আমাদের ছেলে কি আপনাদের পছন্দ হয়নি?”
“আবির পছন্দ করার মতোই! না হওয়ার কী আছে!”
“তাহলে দোনোমোনো করছেন কেন?”
এতোক্ষণে বুঝতে পারলো কাহিনী ঠিক কী! কফিতে চুমুক দিয়ে কথা শুনতে লাগলো তবে দৃষ্টি নিশুর দিকে স্থির। ব্যপারটা ভালো লাগলো না দিলরুবা খাতুনের। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠতেই উঠে গিয়ে ডোর খুললো দ্যুতি। দেখলো নীলি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“কে তুমি?”
“আমি নীলি! ধ্রুবর ফ্রেন্ড। ও আছে?”
কথাটা শুনতেই চমকায় ধ্রুব সহ সবাই।
“হ্যাঁ আছে। ভিতরে আসো।”
ভিতরে ঢুকতেই ধ্রুবকে দেখে চমকালো নীলি। আমতা আমতা করে সালাম দিলো সবার উদ্দ্যেশে। গম্ভীরমুখে পুত্রের দিকে তাকালেন আসাদ সাহেব। হকচকায় ধ্রুব। তার বাবা যা ভাবছে তা সঠিক নয়। আর নীলি মেয়েটার কি সত্যিই কোনো আত্মসম্মান নেই! চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। নীলির দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই। অপ্রস্তুত হয় এবংবুঝতে পারলো ভুল সময়ে এসেছে সে। আমতা আমতা করলো।
“আন্টি আমি নীলি! ধ্রুবর ইয়ারমেট। আমরা ইউএসএতে একসঙ্গে স্টাডি কমপ্লিট করেছি।”
“বসো।”
উনার পাশে বসলো নীলি।
“আমাদের বাসার ঠিকানা কীভাবে পেলে?”
“ধ্রুবকে…”
চট করে উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালো নিশু। আফিয়া খানম বিরক্তবোধ করলেন। মেয়েটা আসার আর সময় পেলো না! রুমে ঢুকে বুকের তলায় বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লো নিশু। আশ্চর্য! তার কেন খারাপ লাগছে?এমনটা তো হওয়ার কথাই ছিল! ধ্রুব কি কখনো বলেছে তাকে নিয়ে সংসার করবে? না বলেনি তো নীলির আগমনে তার খারাপ লাগছে কেন? ব্যপারটা বুঝতে পেরে দ্যুতি বলল,”উনারা কথাবার্তা বলুক তুমি বরং আমার সঙ্গে আসো।”
মৃদু হেসে দ্যুতির সঙ্গে উপরের দিকে পা বাড়ালো নীলি। ভীষণ সুন্দর বাড়ি! চতুর্দিকে দেখতে লাগলো।
“তা আমার ভাইয়ার সাথে পরিচয় কীভাবে হলো তোমার?”
“ইউএসএতে স্টাডি করতে গিয়ে।”
“তোমাদের রিলেশনের গভীরতা কতটুকু?”
মৃদু হাসলো নীলি।
“তা বলা যাবে না।”
“কেন?”
“এমনিই!”
নীলির দিকে তাকায় দ্যুতি। নীলির চোখে-মুখে কেমন আনন্দ,খুশি চিকচিক করছে! এতো খুশি কীসের জন্য? তার মানে তার ভাই নিশুকে ডিভোর্স দিয়ে নীলির সঙ্গে জড়িয়েছে? ব্যপারটা খুবই অস্বাভাবিক লাগলো। অবশ্য নীলি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী রিলেশনে যেতেও পারে!
“তখন যে দেখলাম সে কে?”
“কোনটা?”
“মাথায় ঘোমটা টেনে রয়েছিল।”
“জানতে পারবে কোনো একদিন।”
“এখন বললে কী হয়?”
“সেটা সারপ্রাইজ! বলা যাবে না।”
নিজেদের রুমে ঢুকলো।
“এখানে কে থাকে?”
“আমরা।”
দেখলো নিশু শুয়ে আছে।
“নিশু দেখ কে এসেছে!”
চমকে পিছু ফিরতেই দেখলো নীলি দাঁড়িয়ে রয়েছে। উঠে বসলো নিশু। নিশুকে দেখতেই চমকায় নীলি। ধ্রুবর ড্রয়িং করা সেই মেয়েটার মতো! সন্দিহান হলো নীলি।
“কে ও?”
“নিশু।”
উঠে দাঁড়ালো নিশু। একটা থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। নীলিকে অসহ্য লাগছে তার। পিছনের দিকে তাকিয়ে রইলো নীলি। ধ্রুবর ড্রয়িং করা সেই মেয়েটির সঙ্গে সব মিলে যাচ্ছে! আচ্ছা ধ্রুব কি একেই ভালোবাসে? তার মানে ধ্রুব মিথ্যা বলেনি। তাহলে লিভিং স্পেসে লোকগুলো কী করছে? ঘামতে লাগলো নীলি।
“তুমি ঠিক আছো?”
“আচ্ছা তোমার ভাই নাকি ম্যারিড?”
“কে বলেছে?”
“শুনেছি।”
“কার থেকে?”
“আচ্ছা তিনটি বেবিও নাকি আছে?”
“তাতো বলতে পারব না।”
“এটা কি সত্যি?”
“জানি না।”
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো নিশু।
“নিশু তোর মনখারাপ?”
“না।”
“দেখ ধ্রুব ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড চলে এসেছে। ভাইয়ার জন্য বউ পেয়ে গিয়েছি। ও নিশু! তুই বরং এইবার রাজি হয়ে যা! আমি যাচ্ছি বাবা,আমি যাচ্ছি! এই গানটা দিয়ে তোর বিদায় দৃশ্য এবার দেখতে চাই! প্লিজ রাজি হয়ে যা।”
__
রাতের ফ্লাইটে দেশে ফিরলো অনিক। সারাদিন ঘুমিয়েছে সে। বিকেলের দিকে গ্যাংদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় হলো। দ্যুতির কথা মনে পড়তেই বলল,”চল নিতা-ফিতাকে দেখে আসি।”
“ওকে বস।”
হেলমেট ছাড়াই হাই স্পিডে বাইক চালাতে লাগলো অনিক। পিছনে ওর গ্যাংরা। ক্রমশই স্পিড বাড়াতে লাগলো। ট্রাফিক মোড় দিয়ে যেতেই চেঁচিয়ে উঠলো পুলিশ।
“ওই দাঁড়া তোর হেলমেট নাই!”
চোয়াল শক্ত করলো অনিক।
“হ্লার পু হ্লা সর সামনে থেকে আমারও ব্রেক নাই! উড়াইয়া দিমু!”
“এই ছেলে কী বললে?”
“মন্ত্রীর ছেলে আমি উলটাপালটা কথা বললে জেলের মধ্যে ঢুকামু।”
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ট্রাফিক পুলিশ। সোজা এসে থামলো দ্যুতিদের বাসার সামনে। হর্ণ বাজাতে লাগলো সমানে। চমকে উঠে ছুটে ব্যালকনিতে গিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই বিস্মিত হলো দ্যুতি! অনিক ফিরেছে! বিরক্ত হয়ে সামনের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ধূসর। দেখলো অনিক অভদ্রতামি করছে! অপ্রসন্ন হলো ধূসর। দাঁতে দাঁত চাপলো। উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো দ্যুতি,নিশু আর নীলি তাকিয়ে রয়েছে গ্রিল ধরে।
“হায় ধুতি!”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ধূসরের।
“হায় ধুতি! আমি ফিরেছি! কেমন আছো জান?”
নির্বিকার রইলো দ্যুতি।
“ধুতি,আমি মাছটাস ওফ ছরি আমি এমবিবেহুঁশ ছরি মানে আমি পিএইচডি করে আসছি! এইবার কি আমি তোমার ফকির আব্বা মানে আমার ভিক্ষুক হবু শ্বশুর আব্বার সঙ্গে ভিক্ষার করার লাইসেন্স পামু?”
“এই তুই গাউছিয়া মার্কেটের খুচরা স্যান্ডেল ব্যপারি না এখানে কী করিস?”
ধূসরের দিকে তাকায় অনিক।
“হ্লা গুলিস্তানের হকার! ইজ্জত দিয়া কথা ক! মুই এখন এমবিবেহুঁশ ছরি পিএইচডি করছি!”
বাইক থেকে নেমে কলার খাঁড়া করলো অনিক।
“তোর আর পিএইচডি! রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার জন্যও তোরে কেউ চাকরি দিবে না।”
“হ্লা কথা কম ক! পটর পটর করলে তোর বোনকে তুইল্যা নিয়া যামু।”
ঠিক সেই সময় বাসা থেকে বেরুলো আবির। তাকে দেখতেই ভ্রু কুঁচকালো অনিক। চমকায় আবির।
“কীরে হ্লা তুই এখানে কী করিস?”
“ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলো!”
“কী করবি হ্লা? হাজতে ঢুকাবি?”
“মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ।”
“বাংলা কুত্তা ইংরেজিতে ঘেউঘেউ করে।”
“অনিক লিমিট ক্রস করো না।”
দেখলো আবিরের বাবা-মা বের হচ্ছে বাসা থেকে। বুঝতে পারলো ব্যপারটা।
“কীরে হ্লা! তোরে না কইলাম নিতা আম্বানি ম্যারিড কথা কানে যায় না শাবল ঢুকান লাগবো কানে? হ্লার লাইগা একটা শাবল যোগাড় কর কেউ! শাবল দিয়া অপারেশন সাকসেসফুল কইরা ফালাই!”
চোয়াল শক্ত করলো। মুষ্টিবদ্ধ করলো হাত।
“হ্লার নজর খারাপ! পুলিশের নজরই খারাপ!”
মুখ সামলে কথা বলো।”
“আর একবার দেখছি নিতার পিছনে তোমারে তো ঠ্যাং ভাইঙ্গা ফালামু। নিতা শুধু আমার ওকে!”
আবিররা বেরিয়ে যেতেই রুমে এসে ঢুকলো ধ্রুব। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই চোখ পড়লো নিচে। দেখলো আবিরকে সম্ভবত শাসাচ্ছে অনিক। হঠাৎ পাশের ব্যালকনিতে চোখ পড়তেই দেখলো দ্যুতি,নীলি আর ওপাশে নিশু দাঁড়িয়ে রয়েছে। দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির। হঠাৎ ওপাশে তাকাতেই দেখলো ধ্রুব দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধুকপুক করতে লাগলো নীলির বুকের ভেতর। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মুখটা মলিন হয়ে গেল নীলির। আবির যেতেই আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে গেল অনিক। আঁতকে উঠলো দ্যুতি। দেখলো ওর গ্যাংরা ধরছে না উল্টো বাইক নিয়ে চলে গেল। রোডে পড়ে রয়েছে অনিক। উৎকণ্ঠা হলো দ্যুতি
“নিশু দেখ! কী হয়েছে ওর?এখন কী হবে?”
দুশ্চিন্তা ভর করলো দু’জনের মাথায়।
“কী হলো হঠাৎ?”
“বুঝতে পারছি না!”
“নিশু তুই গিয়ে দেখ।”
“না। তুই যা।”
“তুই যা।”
হঠাৎ নিশুর হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল দ্যুতি। অনিকের কাছে যেতেই আচমকা লাফ দিয়ে উঠে টান দিয়ে নিশুকে বাইকে তুলে নিয়ে চলে গেল। হতভম্ব হলো দ্যুতি। উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো তার ভাইয়েরা তাকিয়ে রয়েছে। আঁতকে উঠলো দ্যুতি। ভয়ে ভয়ে পা ফেললো বাসার ভিতর। ধ্রবর রুমে ঢুকলো নীলি। দেখে ফেললেন উনারা স্বামী-স্ত্রী দু’জন।
“দিন-দুপুরে আমার বাড়িতে এইসব কী হচ্ছে দিলরুবা?”
যেই ভয়ে রয়েছেন সেটাই হলো। ধ্রুবকে বিদেশে পাঠাতে চাননি যেটার জন্য এখন সেটা চোখের সামনে। ঘাবড়ে রইলেন।
“শান্ত হোন। বিষয়টি পরে দেখব।”
অপ্রসন্ন চোখে তাকালেন। নিশুকে নিয়ে গেল অনিক দৃশ্যটি দেখতেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ধ্রুব।
“ধ্রুব কেমন আছো?”
“আচ্ছা বলো তো তোমার কি আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছু নেই?”
“এভাবে কেন বলছো?”
“এই বাসায় আসার মানে কী?”
“তোমাকে মিস করেছিলাম।”
“কেন?”
“তুমি জানো না?”
“আমাদের মধ্যে কিছু ছিল?”
“নেই হতে কতক্ষণ!”
“তোমাকে ক্লিয়ার করেছিলাম আমি ম্যারিড।”
“তোমার দ্বিতীয় বউ হতে আপত্তি নেই।”
“এই প্রথম কোনো সস্তা মেয়ে দেখলাম। যার দাম দু পয়সাও না।”
অপমানিতবোধ করলো নীলি।
“ভালোবাসার মানুষের জন্য সব করা যায়। সস্তা হওয়া কোনো ব্যপার না।”
“তোমার মতো সস্তা মেয়েরা ভালোবাসার সংজ্ঞা বুঝে না ওকে। যেতে পারো! নেক্সট টাইম তোমাকে যেন এই বাড়িতে আর না দেখি লাস্ট ওয়ার্নিং। নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।”
“তোমার বউকে দেখতে চাই!”
“দেখা হয়েছে! যেতে পারো এবার।”
মলিন মুখে বেরিয়ে গেল নীলি। ধ্রুব খুব হার্ড। মনেই হয় না নিজের জন্য কোনো জায়গা তৈরি করতে পারবে! তবুও ক্ষীণ আশা জিইয়ে রাখলো। নির্লিপ্তে প্রস্থান করলো।
_________
চলবে~