মায়াকুমারী পর্ব-২২

0
1141

#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(২২)
___________________

হাই স্পিডে বাইক চালাচ্ছে অনিক।

“কী শুরু করলেন নামিয়ে দিন আমাকে!”

“এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো!”

“ফাজলামো কম করেন।”

“নিতা কী খবর তোমার?”

“ভালো না খুব খারাপ! নামিয়ে দিন আমাকে।”

“ওহ নিতা চুপচাপ থাকো না।”

“খুব বাড়াবাড়ি করছেন।”

ব্রেক কষলো একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে। হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো।

“কী করছেন?”

“চেঁচিও না চাইনিজ খাবো।”

“খান আমাকে কেন নিয়ে এলেন?”

“কারণ তো আছেই।”

“দ্যুতি রাগ করবে।”

“আই ডোন্ট কেয়ার।”

“ভাইয়া বকাবকি করবে।”

“ওই গাধাকে একটু না জ্বালালে আমার আবার চাইনিজ হজম হবে না।”

চাইনিজ অর্ডার করলো অনিক। ওর গ্যাংরা এসে বসলো চারপাশে। ভড়কায় নিশু।

“দেখুন..”

“আচ্ছা দেখতেছি!”

গালে একহাত রেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো অনিক। অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করলো নিশু। মিনমিন করে বলল,”আমাকে নয়।”

“তো কাকে?”

“বলছিলাম,আমার চাইনিজ খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

“তোমাকে খেতে বলেছে কে?”

আমতা আমতা করলো নিশু।

“ইয়ে মানে আপনি খান আমি যাচ্ছি।”

“আমি খাব তুমি বসে বসে দেখবে।”

“আশ্চর্য! ফাজলামো করছেন কেন! আপনাকে দ্যুতি দেখবে আমি না।”

“ধূৎ! ওটা তো একটা ব্যাঙ!”

মুখ গোঁজ করলো নিশু। ওয়েটার চাইনিজ নিয়ে আসতেই বলল,”সার্ভ করো নিতা।”

মলিন মুখে সার্ভ করলো নিশু।

“খাও।”

“ইচ্ছে নেই।”

“শোনো,রাতে ঠিকমতো ডিনার করিনি; ব্রেকফাস্ট ও না। এখন শান্তিতে লাঞ্চ করতে দাও।”

“দ্যুতিকেও নিয়ে আসতেন। নিশ্চয়ই ওর মনখারাপ হচ্ছে।”

“হোক! বাপ-ভাইয়ের মতো নাকউঁচু!”

দোনোমোনো করলো নিশু।

“খাইলে খান,না খাইলে না খান; আযান দিয়ালামু! ছরি! মানে বলতাছি তাড়াতাড়ি খাও! রাগ কইরো না! বললাম না আমি হাংরি!”

চামচ কেটে একটু একটু করে মুখে তুলতে লাগলো নিশু। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলো দ্যুতি। বাঁকা হাসলো অনিক।

“কে কল দিয়েছে?”

“ফিতা।”

“ফিতা মানে?”

“ধুতি!”

“পিক করুন।”

“বাজুক!”

বারকয়েক রিং হলো। শেষমেশ পিক করলো।

“হ্যালো কে?”

“নিশু কই?”

“হোয়াট?”

“নিশু কোথায়?”

ভিডিও কল দিলো। পিক করতেই ভেসে উঠলো দ্যুতির মুখ। এগিয়ে গিয়ে নিশুর সামনে ফোন ধরলো।

“সুইটহার্টের সঙ্গে লাঞ্চ করতেছি!”

“যত্তসব পাগল! এখন লাঞ্চ করার টাইম?”

“তাতে কী!”

“নিশুকে দিয়ে যান।”

“পারলে নিয়ে যাও।”

“বলছি দিয়ে যেতে।”

“পারব না।”

“খুব বাড়াবাড়ি করছেন?”

“আর ইউ জেলাশ?”

“আপনার চৌদ্দ গুষ্টি জেলাশ!”

“ও নিতা দেখছো ফিতা আম্বানি কী করতাছে!

“নিশু এই পাগলের সঙ্গে কী করছিস তুই,তোর তো মাথা শেষ করে ফেলবে!”

সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো। বাইক নিয়ে নিশুকে খুঁজতে লাগলো ধূসর। দেশে ফিরতে না ফিরতেই মেজাজ খারাপ করে দিলো এই পাগল ছেলেটা। বিল পে করে নিশুকে নিয়ে ধূসরের সামনে দিয়ে হাই স্পিডে বাসায় চলে গেল অনিক। ওদের দেখতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ধূসরের। বড্ড বাড় বেড়েছে ফাজিলটা। সোজা বাসায় ঢুকে গেল নিশুকে নিয়ে।

“আবার বাসায় কেন? কী করতে চাইছেন আপনি?”

নীরব রইলো অনিক। সে একাই ভাই-বোন তিনটাকে জেলাশ করাচ্ছে! বাঁকা হাসলো অনিক। বাসায় ঢুকতেই দেখলো অনিকের বাবা কয়েকজন দলীয় লোকের সঙ্গে কথা বলছেন। উনাদেরকে দেখতেই শাড়ির আঁচল টেনে মাথা নুইয়ে মিনমিন করে সালাম দিলো নিশু। কথা বলা বন্ধ করে নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই। নিশুকে চিনতে পেরেছেন তিনি। সাড়ে তিন বছর আগে দেখেছিলেন। তখন এতোটাও ভালো না লাগলেও এখন মনে হচ্ছে আগের থেকেও সুন্দরী হয়েছে,স্বাস্থ্যও। উনি ধারণা করলেন অনিক নিশুর জন্যই পড়াশোনা কন্টিনিউ করেছে,বিদেশ গিয়েছে। সালাম নিলেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।

“মা! মা! দেখো কে এসেছে!”

কিচেন থেকে বেরিয়ে এলেন আদনীন ফেরদৌস।

“কে এসেছে অনিক?”

“তোমার ছেলের বউ!”

চমকান তিনি। লজ্জায় চোখ রাঙালো নিশু।

“উল্টাপাল্টা কী বলছেন?”

“চুপ করো নিতা।”

দ্রুত বেরিয়ে এলেন তিনি।

“বউ এসেছে মানে! কই?”

“এই যে তোমার বউ!”

গালভরে হাসলেন তিনি। লাজুক হাসলো নিশু।

“ভাত খাবি না?”

“লাঞ্চ করেছি। কফি দাও।”

“আচ্ছা।”

নিশুকে নিয়ে গেলেন নিজের রুমে। বিছানায় বসালেন।

“তুমি নিশু তাই না?”

“জ্বী।”

“বুশরা সবসময়ই তোমার কথা বলে।”

“ও।”

“যোগাযোগ হয়?”

“জ্বী মাঝেমধ্যে।”

নিশুর দিকে তাকালেন। ডার্ক গ্রীণ কালারের জামদানি শাড়ি পরনে। দেখতে সত্যিই বউ বউ লাগছে! অবশ্য দ্যুতির কথা তিনি জানেন না। তবে এটা জানেন বুশরার ফ্রেন্ড। তিনি ভাবলেন অনিক নিশুকে পছন্দ করে তাই বারবার বাসায় নিয়ে আসছে। তবে উনার কোনো আপত্তি নেই। গোলগাল মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে,কথাবার্তায় দারুন স্মার্ট,কোনো জড়তা নেই। পোশাক-আশাক,মুখের ছাপ কিংবা আচরণই বলে দিচ্ছে আভিজাত্য পরিবারের মেয়ে। মৃদু হাসলেন। অনিক পড়াশোনা শেষ করেছে। হয়তো বিয়ের জন্য বলবে। অনিকের বাপ রাজি হবে কি-না বুঝতে পারলেন না। তবে অনিকের জেদের কাছে হেরে যাবেন। আর যাইহোক,অনিকের জেদের কাছে উনার সব তুচ্ছ! হয়তো একটা ছেলে বলেই! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছেলেটা অভদ্র। কাউকে মানে না। মুখের বেড়া নেই বললেই সারে।

“বসো কফি করছি!”

“লাগবে না আন্টি আমি বাসায় ফিরবো।”

“একটু কফিই তো!”

কিচেনে গেলেন তিনি। অনিকদের বাসার সামনে ব্রেক কষলো ধূসর। উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো বাঁকা হেসে তাকিয়ে রয়েছে অনিক। মেজাজ খারাপ হলো।

“ওই শালা নিশু কই?”

“শ্বাশুড়ির সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে।”

“শালা ওরে পাঠা তাড়াতাড়ি।”

“তুই আইসা নিয়া যা।”

“মেজাজ খারাপ করবি না বলছি!”

“ধূৎ হ্লা!”

ভিতরে ঢুকে গেল।

“মা,নিতাকে চকলেট দিও।”

“আচ্ছা!”

প্রায় রাত তখন নয়টা। নিশুকে যেতে দিলেন না। আদনীন ফেরদৌসের খুব দারুণ সময় কাটলো নিশুর সঙ্গে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন আজই স্বামীকে বলবেন বিয়ের কথা। বিদেয় নিয়ে বাসা থেকে বেরুতেই আচমকা ব্রেক কষলো ধূসর। চমকায় নিশু। ভীতসন্ত্রস্ত হলো। ধূসরের চোখগুলো কেমন লাল।

“হ্লা আইসা পড়ছোস ভালা করলি! নিতাকে নিয়ে যা।”

“আর একবার এমন করবি তো তোর খবর আছে। একটা হাড্ডিও আস্ত রাখব না।”

ভ্রু কুঁচকালো অনিক।

“দেখা যাবে।”

“নিশু উঠ!”

ধমকে উঠতেই পিছনে উঠলো। স্টার্ট দিলো ধূসর।

“নিতা টাটা বাই বাই আবার দেখা হবে জান।”

“পাগল!”

“গুলিস্তানের আম্বানি।”

“গাইছিয়ার স্যান্ডেল ব্যপারি।”

চলে গেল ওরা। বাঁকা হেসে বাসার ভিতরে ঢুকে গেল অনিক। সোজা বিছানায় গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। কেমন জানি লাগছে তার। কিছুটা পথ আসতেই ব্রেক কষলো ধূসর।

“নাম! নাম!”

ধমকে উঠতেই নিশু নামলো। বাইক সাইড করে নিজেও নামলো।

“তোর সাহস দিন দিন বেড়েছে তাই না?”

ভীত চোখে তাকায় নিশু। আমতা আমতা করলো।

“খুব সাহস!”

দাঁতে দাঁত চাপলো।

“কী করলাম?”

“নিচে নামতে বলেছে কে?”

“ভেবেছিলাম..”

“ও একটা ভণ্ড! ওকে বিশ্বাস করলি কোন বুঝে?”

“আমি জানি আমার কোনো ক্ষতি করবে না।”

“কী জানোস তুই? কী জানোস?”

“একটু পাগলাটে কিন্তু খারাপ না।”

“ও তোদের দুজনকে নিয়ে গেম খেলছে!”

“মানে?”

“তোর কি মনে হয় ও দ্যুতিকে ভালোবাসে?”

“হ্যাঁ বাসে তো!”

“না মোটেও না।”

“তাহলে?”

“ওর দৃষ্টি তুই বুঝিস না?”

“কী বুঝবো?”

“তোর তো বুঝার কথা!”

আমতা আমতা করলো নিশু।

“তোমার দৃষ্টি আর ওর দৃষ্টি এক।”

হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ধূসর।

“উঠ!”

“যাও তুমি।”

হাঁটতে লাগলো নিশু। বাইক স্টার্ট দিলো। একটু একটু এগুতে লাগলো।

“উঠ বলছি!”

“উঠবো না।”

শক্ত চোখে তাকায় ধূসর। হাঁটতে লাগলো নিশু।

“তুই জেদ ধরলি কেন?”

মৌন রইলো নিশু। হাত টেনে বাইকে উঠিয়ে স্পিড দিতেই খামছে ধরলো কাঁধের দিকটায়। দপ করে চোখ বুজে আবারও মেললো। চোয়াল শক্ত করে শপিং মহলের সামনে ব্রেক কষলো।

“নাম।”

“এখানে কেন আনলে?”

চোয়াল শক্ত করে হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো। নাক টানলো নিশু। মাস্ক বের করে হাতে দিলো।

“এটা পরে মাথায় ঘোমটা টান।”

তাই করলো নিশু।

“শপিংয়ে কেন এলে?”

প্রতিত্তোর করলো না।
___

পরপর ফেইসবুকের নোটিফিকেশন বেজে উঠতেই চেক করলো দ্যুতি। দেখলো তার পোস্টে হা হা দিয়েছে অনিক। মেজাজ খারাপ হলো।

“কী সমস্যা?”

“সাপের নেই কান তুমি আমার জান। কোনো সমস্যা নেই জান। বুকে হাহাকার নিয়েও হাহা দিয়ে যাচ্ছি!”

“শুরু হয়েছে ফাজলামি তাই না?”

“হুম। খুব একাকিত্ব ফিল করতেছি।”

“তো আমি কী করবো?”

“একাকিত্ব গুছিয়ে দাও জান।”

“যত্তসব!”

“প্রয়োজন একটা তুমির খালতো কাটাই আছে চলে আসো কুমির।”

“পিএইচডির করার নমুনা এটাই তাই না?”

“অবশ্যই! কথাবার্তায় উন্নতি হয়েছে।”

“মাথায় এক বস্তা গোবর নিয়ে এসেছে।”

“তোমাকে নিয়ে সেই গোবর দিয়ে চাষবাস শুরু করবো ভাবছি জান!”

“ফাউল!”

“আচ্ছা,সবাইকে গুডনাইট! আর তোমারে জীবনেও মাফ করুম না। রাখি বাই বাই টাটা।”
___

লিফটে করে ফোর ফ্লোরে চলে গেল। একটি জুয়েলারি শপে ঢুকলো।

“এখানে কেন?”

নীরব রইলো ধূসর। সেলসম্যান ম্যানকে বলল,”গোল্ডের নুপুর দেখান তো!”

বেশ কয়েক জোড়া গোল্ডের নুপুর বের করলো সেলসম্যান। নীরবে উল্টেপাল্টে বেশকিছু নুপুর দেখলো ধূসর। নীরব হয়ে দেখতে লাগলো নিশু। অবশ্য টাকা হাতে এলেই এমনটা করে ধূসর। নুপুর কিনে। এই পর্যন্ত ধূসরের দেওয়া অনেকগুলো রূপার নুপুর আছে তাদের দু’জনের। ধূসর যা কিনে সবসময়ই দু’জনের জন্য কিনে।

“নিশু দেখতো এটা কেমন?”

“সুন্দর!”

দু-জোড়া কিনে নিলো।

“এতো টাকা কোথায় পেলে?”

“ডাকাতি করেছি।”

চুপসে গেল নিশু। হাত ধরে ফাইভ ফ্লোরে একটি ক্যাফে ঢুকলো। মেনুব্যুক দেখে ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় খাবার কুম্পির অর্থাৎ পুরভরা সেঁকা আলু আর কফি অর্ডার করলো।

“ভাইয়া একটা কথা বলি?”

“কী?”

“অনিকের ব্যপারে দ্যুতিকে কিছু বলো না তুমি প্লিজ। ও শুনলে মনখারাপ করবে।”

নীরব রইলো ধূসর। খাওয়া শেষে বেশ কিছু স্ন্যাকস পার্সেল করে নিলো।
__

“তোমার ছেলেকে ডাকো দিলরুবা।”

বিষন্ন মনে ধ্রুবকে ডেকে আনলেন দিলরুবা খাতুন। ছেলেকে দেখতেই মেজাজের পারদ বাড়লো তরতর করে।

“এইজন্যই কি তুমি বিদেশে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলে?”

“কী বলতে চান?”

“ওই মেয়ে কে?কেন এসেছে তোমার কাছে?”

“তাকে জিজ্ঞেস করতেন?”

“আমি জিজ্ঞেস করবো মানে?”

শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব।

“ছিঃ ছিঃ আমার মানসম্মান সব শেষ করে ফেললো!”

“আহ! কী শুরু করলেন থামুন। আগে ওর থেকে শুনুন।”

“কী শুনবো! কী শোনার বাকি আছে! আমার বাকি চারটা ছেলেমেয়ে কখনো তাদের বন্ধুবান্ধব বাসায় তুলেনি। ওদের এক কথা,বন্ধুবান্ধব বাইরে ঘরে না। ওরা খুব সতর্ক বন্ধুবান্ধব নির্বাচনে। আমার মেজ ছেলের তো দুনিয়ার বন্ধু। আজ পর্যন্ত কখনো বাসায় আনেনি কোনো বন্ধুকে। কারণ এটা আমরা যেমন পছন্দ করি না তেমনি ও। আর আজ ছেলে বন্ধু তো থাক দূরের কথা মেয়ে বন্ধু নিয়ে এসেছে।”

“আপনাকে কে বলেছে ও আমার বন্ধু?”

“বন্ধু না বলো তোমার প্রেমিকা। আর এই প্রেমিকার জন্যই তুমি তোমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে ওই মেয়ের সাথে প্ল্যান করে বিদেশে গিয়েছো তাই না?”

চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব।

“যেমনটা আমি জানি তারচেয়েও আপনি ভালো জানেন ডিভোর্স সম্পর্কে।”

“আমাকে থ্রেট দেখাও?”

“ভেবেছেন আপনার চালাকি আমি বুঝতে পারবো না?”

“তোমার চালাকি ভাবছো আমি বুঝতে পারবো না?”

হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ধ্রুব। ঠিক তখুনি কলিংবেল বেজে উঠলো। দিলরুবা খাতুন নিজেই ডোর খুলতেই দেখলেন ধূসর-নিশু দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেদিকে তাকালো ধ্রুব। ওদের একসঙ্গে দেখতেই শক্ত হয়ে গেল চোয়াল। বাসার ভিতরে পা রাখতেই ধ্রুবকে দেখতেই চমকায় নিশু। মাথায় ঘোমটা টেনে ধুরু ধুরু বুকে সোজা পা বাড়ালো সিঁড়ি দিকে। যতই এগুচ্ছে ততই বুক আর পা কাঁপছে! একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো ধ্রুব।

“তোরা কোথায় ছিলি এতক্ষণ?”

“নিশুকে আনতে গেলাম। আপনি কী করছেন?”

“কিছু না উপরে যাও।”

“বাইরে থেকে আপনার চেঁচামেচি শুনলাম। আপনি কি জানেন না আপনার হার্টের সমস্যা!”

নীরব রইলেন আসাদ সাহেব।

“রুমে যান। কোনো কথা নয়।”

ধ্রুব নিজেই ওর রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকে ডোর অফ করতেই ছুটে এলো দ্যুতি। মাস্ক খুললো নিশু। বাবাহ শ্বাস আঁটকে আসছিল।

“কই ছিলি এতক্ষণ?”

“ভাইয়ার সাথে শপিংয়ে।”

“অনিক কিছু করেছিল তোকে?”

“না। আজও ওদের বাসায় নিয়ে গেল।”

“ওর মা কেমন?”

“আমার কাছে তো ভীষণ ভালো লেগেছে!”

লাজুক হাসলো দ্যুতি। থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো নিশু। তখন ড্রেস চেঞ্জ করতে নিতেই পানি ভরা বালতিতে পড়ে ভিজে গিয়েছিল ড্রেসটা। তাই চেঞ্জ করতে পারেনি। হঠাৎ নক পড়লো ডোরে। দ্যুতি খুলতেই দেখলো ধূসর।

“নিশু কই?”

“ড্রেস চেঞ্জ করে।”

“ধর এটা তোদের জন্য।”

“কী এটা?”

“খুলে দেখ।”

ধূসরের দিকে একপলক তাকিয়ে রুমে ঢুকে গেল ধ্রুব।

“তোর জন্য পার্সেল এনেছি চেক করিস।”

“আচ্ছা।”
__

সকালে দিলরুবা খাতুনের রুমে ঢুকলো নিশু। তিনি শাড়ি গুছিয়ে আলমারিতে রাখছিলেন। তাকে দেখতেই চমকান।

“নিশু!”

“ফুপি একটা কথা বলার ছিল?”

“বল।”

বিছানায় বসলেন তিনি নিশুও বসলো। হাত ধরে বললো,”কথা দাও আমার কথা রাখবে!”

“আগে তো শুনি।”

শুকনো ঢোক গিললো নিশু।

“ফুপি আমি হোস্টেলে থাকতে চাই।”

“মানে?”

“না করো না ফুপি।”

“পাগল হয়েছিস নিশু! হোস্টেলে থাকবি মানে!”

“আমার মনে হচ্ছে এটাই ভালো হবে।”

“এখানে কী সমস্যা?”

“সমস্যা নেই।”

“তো হোস্টেলে কেন?”

“ফুপি,বললাম তো কারণ জিজ্ঞেস করো না।”

“আচ্ছা ধূসরকে বলি।”

ধূসরকে ডাকতেই এগিয়ে এলো।

“কী হয়েছে আম্মা?”

“নিশু হোস্টেলে থাকতে চায়। ব্যবস্থা করে দে।”

চমকে তাকায় ধূসর।

“হোস্টেলে মানে! এই তুই সত্যি কি হোস্টেলে থাকবি?”

“হুম।”

“বাসায় কী হয়েছে?”

“আচ্ছা ও যখন থাকতে চায় তাহলে ব্যবস্থা করে দে।”

“ঠিক বুঝতে পারলাম না কিছু আম্মা।”

আচমকা রুমে ঢুকলো ধ্রুব। তাকে দেখতেই আরেকটু ঘোমটা টেনে ফুপির কাঁধে মুখ গুঁজে আড়াল হয়ে গেল নিশু। ধ্রুবকে দেখতেই অপ্রস্তুত হলো ধূসর।

“আম্মা আব্বার আইফোনটা কই?”

“আলমারিতে।”

“দাও এ্যাপেল আইডি ঠিক করে দিই।”

উঠতে নিতেই চেপে ধরে রাখলো নিশু। মুচকি হাসেন তিনি।

“আলমারি থেকে নে।”

একপলক তাকিয়ে আলমারি খুলে ফোনটা নিলো ধ্রুব। রুম থেকে বেরিয়ে গেল ধূসর। অন করে আরো একবার তাকালো নিশুর দিকে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আছে। বেরিয়ে গেল ধ্রুব। ধ্রব বুঝতে পারলো নিশু ইচ্ছে করেই নিজেকে আড়ালে রেখেছে। অবশ্য একটা কথা আছে না,কেউ যদি হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। কিন্তু কেউ যদি স্বইচ্ছায় হারিয়ে যায় অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে তাকে খুঁজে বের করা অসম্ভব। এখানে ব্যপারটা তেমনই। নিশু নিজ থেকেই নিজেকে আড়ালে রেখেছে। সামনা-সামনি হয়েছে তারা হাতে গুনে কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবারই নিশু নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।

“এমন লুকিয়ে লুকিয়ে থাকোস কেন?একটু ফ্রী তো হতেই পারিস। সম্পর্কে তোর ফুপাতো ভাই।”

“কিচ্ছু হয় না আমার বুঝচ্ছ!”

“এটা ঠিক নয় নিশু। তোর উচিত সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা। ধূসর-ধীরাজ ওদের সঙ্গে যেভাবে থাকিস ওর সঙ্গেও সেভাবে থাকা উচিত।”

আঙ্গুলের ডগায় ওড়নার কোণা পেঁচাতে লাগলো। অস্বস্তি হয় নিশুর।

“শরীরটা খারাপ লাগছে! আজকে তুই রান্নাবান্নাটা কর যা।”

“ফুপি তোমার মতলব বুঝি না ভাবছো?”

হেঁসে ফেললেন।

“যা রান্নাটা সার। আমি একটু বিশ্রাম করি। বউ এনেছি এবার তো আমার একটু আরাম-আয়েশের দরকার কী বলিস?”

“হইছে আর বলতে হবে না। এখন বলো কী রান্না করবো?”

অভিমানী হয়ে মুখ গোঁজ করে নিশু। দেখতে ভারি মিষ্টি লাগলো।

“যা মন চায় কর আমি সব খাই।”

“আচ্ছা।”

উঠে গেল নিশু। লক্ষ্য করলো লিভিং স্পেসে বসে রয়েছে ধ্রুব। ফোন চাপছে। নিজেদের রুমে পা বাড়ালো।
__

“সকাল বাজে দশটা ছেলেটা এখনও নবাবের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে! বলি কোনো কাজকর্ম নেই?”

ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো অনিক। দেখলো তার বাবা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডোরের সামনে। আড়মোড়া ভাঙলো অনিক।

“আজ গরীব বলে এতো ঘুমাই বড়লোক হইলে তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতাম!”

“অসভ্য ছেলেমেয়ে।”

ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখলো। দেখলো দ্যুতি তাকে ফেইসবুক থেকে ব্লক দিয়েছে। সোজা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মেসেজ দিলো।

“ফেইসবুকে ব্লক মেরে লাভ কী কিয়ামতের দিন দেখা তো হবেই।”

সিন করলো না দ্যুতি তবে দেখলো।

“গুড মর্নিং উইশ করলা না ক্যান?”

এবারও রিপ্লাই দিলো না। বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে পকেটে দু-হাত ঢুকিয়ে নাস্তার টেবিলে গেল। বাঁকা চোখে তাকালো তার বাবা।

“ঘরের ভিতর এভাবে কেউ হাঁটে?”

“কীভাবে হাঁটলাম?”

“পকেটে হাত দিয়ে কে হাঁটে ঘরে?”

“আজ হাতে হাত দিয়ে হাঁটার মতো কেউ নাই তাই ঘরের ভিতর পকেটে হাত দিয়া হাঁটি।”

“অসভ্য পোলাপান।”

“টাকা দেন।”

“কীসের টাকা?”

“তাড়াতাড়ি দেন লেট সহ্য হয় না।”

পাঁচশ টাকা হাতে দিতেই মেজাজ খারাপ হলো অনিকের।

“ছোটলোকের মতো ধোঁকা না দিয়ে বড়লোকের মতো টাকা দেন। ছোট্ট একটা জীবনে এতো ছ্যাঁছড়ামি করে লাভ কী! ধনসম্পদ তো কম না আপনার!”

“কোটি কোটি টাকা খরচা করে পড়াশোনা করিয়ে দিয়েছি তোমায়। এবার ইনকাম করতে শিখো!”
______

চলবে~