#মায়াকুমারী ❤️
#ইয়ালিনী_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(২৩)
___________________
দ্যুতিকে নিয়ে কিচেনে ঢুকলো নিশু। হঠাৎ ধ্রুবর কেন জানি মনে হলো কিচেনে কেউ ঢুকেছে। চোখ তুলে বারকয়েক তাকালো। বাইরে যাচ্ছিল ধূসর। কিচেন থেকে নিশু ডাকলো,”ভাইয়া শুনো!”
“কী?”
“এদিকে আসো।”
“বল।”
বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিলো।
“এখন আমি বাজার করবো?”
“তো কী হয়েছে! শোনো একদম ফ্রেশ,টাটকা সবজি আনবে। বাসি সবজি আনলে তোমাকে আবার ফেরত পাঠাবো!”
“যা আদেশ মহারানি ভিক্টোরিয়া সরি ম্যাডাম ফুলি।”
লিস্ট পকেটে ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেল ধূসর। সেদিকে একবার তাকালো ধ্রুব। রান্নার আয়োজন শুরু করলো নিশু। ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস,চিকেন নামিয়ে ভিজিয়ে রাখলো দ্যুতি। চিংড়িগুলো ভিজালো না। এরপর চিনিগুড়া চাল নামিয়ে আস্তে আস্তে রান্নার আয়োজন শুরু করলো। ততক্ষণে বাজার নিয়ে এলো ধূসর। ফ্রেশ সবজিগুলো কেটে নিলো দু’জন। আজকে ফ্রাইড রাইস,চিলি চিকেন,চিকেন ফ্রাই,চিংড়ি ফ্রাই,ব্রকলি,ভেজিটেবল,ক্যাপসিকাম উইথ প্রণ,ক্যাশুনাট সালাদ,ক্যাপসিকাম সালাদ এবং সেই সাথে আস্ত একটি চিকেন গ্রিল করবে ওরা। রিনা খালা,হ্যাল্পিং হ্যান্ড জোছনা সাহায্য করতে লাগলো। হঠাৎ উঠে এলো ধ্রুব। রান্নার ঘ্রাণে বসে থাকাটা দায় হয়ে পড়েছে। রান্নার ঘ্রাণে তার খুব খিদে পেয়েছে।
“আজ কী রান্না হচ্ছে?”
“নুডলস দিয়ে আইফোনের চপ।”
হতভম্ব হয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই। নিশু তাকালো না। ওদিকে ফিরে রান্না করতেই আছে। হঠাৎ নিশুর মনে হলো কণ্ঠটা অন্যরকম। চমকে উঠে আড়চোখে তাকাতেই দেখলো ধ্রুব দাঁড়িয়ে রয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। এভাবে বলে ফেলবে কখনো ভাবেনি।
“সেটা কীভাবে রান্না করে দ্যুতি?”
“তোমার এক্স ওয়াইফকে জিজ্ঞেস করো।”
লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো নিশুর ফর্সা মুখে। দাঁতে দাঁত চেপে দু-চোখ বুজলো। শিট! সে কীভাবে এইরকম ছ্যাঁছড়ামি করলো! অপ্রস্তুত হয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো ধ্রুব। সেদিকে একপলক তাকিয়ে দ্যুতির পিঠে থাপ্পড় মা’রলো নিশু।
“অসভ্য! আগে বলবি না?”
“আমার কী দোষ! তোরা এক্স ওয়াই-জেড আমার সাথে কী শুরু করলি!”
“তুই বলিসনি কেন এখানে এসেছে?”
“আমি দেখেছি নাকি!”
বকতে বকতে রান্না করতে লাগলো নিশু।
“এখানে এসেছে কী রান্না হচ্ছে জিজ্ঞেস করতে!”
রান্না সেরে এক এক করে সব আইটেম বাটিতে ঢেলে নিলো নিশু। দ্যুতি আর জোছনা মিলে টেবিল সাজিয়ে ফেললো!
___
দু-দিন পরের কথা! গোসল সেরে কাপড়চোপড়ের বালতিটা নিয়ে ছাঁদে উঠতেই মুগ্ধ হয়ে গেল নিশু। অজস্র বাগানবিলাস ঝরে পড়ে আছে নিচে। মুগ্ধ হয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,”ছাঁদে উঠে এতো সুন্দর করে আল্পনা দিলো কে? কই আমরা তো সকাল থেকে কেউ ছাঁদে উঠিনি। ইশ কি সুন্দর!”
বালতিটা রেখে মৃদু হেসে এক থোকা বাগানবিলাস ছিঁড়ে কানে গুঁজতেই হঠাৎ শুনতে পেলো,”এক্সকিউজ মি! এটা কি আপনার?”
চমকে তাকায় নিশু। দেখলো একটি লোক নুপুর ঝুলিয়ে ধরে রেখেছে। দ্রুত মাথায় ঘোমটা টানলো। দ্রুত পা চেক করতেই দেখলো তার এক পায়ে নুপুর নেই। আমতা আমতা করলো।
“জ্বী।”
ছেলেটি এগিয়ে গিয়ে নিশুর সামনে দাঁড়ালো। নুপুরটি তুলে ধরা পূর্বের মতোই! আড়ষ্ট হয়ে মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে ভীত চোখে নুপুরের দিকে তাকালো। সদ্য গোসল করা নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো লোকটি। হুট করে মনে এলো,নীল নীল নীলাঞ্জনা চোখ দুটো টানা টানা। কপালের টিপ যেন জোনাকির দিক। অবশ্য কপালে তো টিপ নেই তবে কানে আছে এক থোকা মেজেন্টা কালারের বাগানবিলাস। নিশুর পরনে নীল রঙের মণিপুরী শাড়ি। এই নীল রঙের আবেদন যেন প্রকৃতির প্রশান্তি আর আকাশের অনন্ততা নিয়ে এসেছে একসাথে। নিশুর সফেদ শরীরে নীল রঙের ছোঁয়ায় আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি আর সৌন্দর্যের এক চিরন্তন আভা যা মনকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করে তুললো। চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে এক অন্যরকম আকর্ষণ যেন হৃদয়জুড়ে বেজে উঠেছে ভালোলাগার মেলোডি। এমন রূপের সামনে প্রেমে না পড়ে থাকা অসম্ভব! নিশুর এই টানা টানা চোখ,ওমন ভিতু চাহনি যেন এক একটি গল্প বলছে লোকটিকে। স্নিগ্ধ এবং ভেজা শরীর থেকে ল্যাভেন্ডার ফুলের সুবাস ভেসে আসছে! নড়েচড়ে উঠলো লোকটির পুরুষালী সত্ত্বা! অমন করে চেয়ে থাকায় ভীষণ অস্বস্তি হয় নিশুর। আড়ষ্ট হয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো। মৃদু মৃদু কাঁপতে লাগলো। রাতে পরেছিল সোনার নুপুরজোড়া। ঠিক করে বোধহয় হুক আঁটকায়নি তাই পড়ে গিয়েছে! ছটফট করলো নিশু। নিশুকে আদুরে কবুতর ছানার মতো লাগলো লোকটির কাছে। পরক্ষণেই নীল অপরাজিতার মতো লাগলো। অস্বস্তিতে আমতা আমতা করলো নিশু।
“এটা আপনার?”
মাথা নাড়ালো নিশু। সদ্য গোসল করায় স্নিগ্ধ লাগছে নিশুকে। আর নীল শাড়িতে কী বলবে!
“নিন।”
কম্পিত হাত বাড়ালো নুপুরটি নিতে।
“আপনি কাঁপছেন কেন?”
নীরব রইলো নিশু।
“নিশু কী করিস?”
আঁতকে উঠলো নিশু। সামনের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো শক্ত চোখে তাকিয়ে রয়েছে ধূসর। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আমতা আমতা করলো।
“নুপুর!”
নুপুরটি হাতে নিয়ে কম্পিত পায়ে নেমে গেল নিশু। এগিয়ে এলো ধূসর। তাহমিদের সামনে দাঁড়ালো।
“মেয়েটি কে?”
“কাজিন।”
“সুইট!”
তাহমিদের চোখের দিকে তাকায়,মুগ্ধতা দেখতে পায়। রাগ হয় ধূসরের।
“সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় নুপুরটা পেলাম!”
“ধন্যবাদ।”
নিচে নেমে গেল ধূসর। ছাঁদের কার্নিশ ধরে দাঁড়ালো তাহমিদ। সপ্তাহখানিক হবে এই বাসায় ভাড়া উঠেছে তারা। তাদের বাড়িতে কাজ চলছে। পাঁচ মাস এখানে থাকার পর তারা তাদের বাড়িতে উঠতে পারবে।
“নিশু কইরে!”
অযু করে টাওয়ালে মুখ মুছতেই শুনতেই কম্পিত পায়ে এগিয়ে এলো। ধূসরকে দেখতেই ভড়কায়।
“কী ভাইয়া?”
“ওই লোকটি তোকে কী বলেছে?”
“জিজ্ঞেস করেছিল নুপুর কার এটাই আর কিছু বলেনি।”
ধূসরের চোখ-মুখ শক্ত।
“ছাঁদে একা যাবি না! যাবি না মানে যাবি না! লাস্ট ওয়ার্নিং! ঘরের মানুষ ছাড়া তোকে যেন অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে না দেখি! গট ইট!”
কেঁপে কেঁপে উঠলো নিশু। রুম থেকে বেরুতেই শুনতে পায় ধ্রুব। চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমের দিকে পা বাড়ালো ধূসর।
__
সপ্তাহখানিক পরের কথা। ইন্টারভিউ দিতে গেল অনিক। নৌ বাহিনীতে এপ্লাই করেছে সে। ইন্টারভিউ রুমে ডাক পড়তেই রয়েসয়ে ঢুকলো। তার পেপারগুলো দেখে নাম,পরিচয় ইত্যাদি জিজ্ঞেস করার পর হঠাৎ অফিসার বললেন,”সাঁতার জানেন?”
“কেন?”
“নৌ বাহিনীতে এপ্লাই করেছেন এটা তো জানার কথা।”
“আমি সাঁতার জানি না।”
“নৌ বাহিনী হতে হলে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।”
“বিমানবাহিনীরা যে বিমান চালায় তারা কি আকাশে উড়তে পারে?”
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো অফিসার। বেরিয়ে এলো অনিক। ওকে বেরিয়ে আসতে দেখে সিফাত বলল,”দোস্ত টিকছোস?”
“শ্লার কোনো চাকরি-বাকরি করুম না।”
“কেন?”
“আকাশে উড়া শিখা লাগবো!”
বাইকে স্টার্ট দিলো। থামলো একটি চায়ের দোকানের সামনে।
“এই মিয়া চা দাও।”
চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলো কাপ। বিতৃষ্ণ মন নিয়ে চায়ে চুমুক দিলো।
“চায়ের দোকানের কাপগুলো এতই ছোট হয়ে গেল যে মনে হচ্ছে চা নয় পোলিওর ড্রপ খাচ্ছি। হ্লার আখেরি যুগ আইসা পড়ছে মনে হয়।”
বিল মিটিয়ে ফোন দিলো দ্যুতিকে। কিন্তু পিক করলো না। শেষে পিক করলো,”জানু আমি আসলেই বুঝি না তুমি বেশি ব্যস্ত নাকি আমি বেশি ফ্রি!”
“ফোন দিলেন কেন?”
“আমার জানুর সঙ্গে কথা বলতে হলে তিন-চার দিন পূর্বে এপয়েনমেন্ট নিতে হবে। খুব ব্যস্ত থাকে জানটা!”
“ফাজলামো করার জন্য ফোন দিয়েছেন তাই না?”
“বেলা শুনছো চাকরিটা আমি এখনও পাইনি।”
“তো আমি কী করবো?”
“চাকরি ছাড়া তোমারে ঘরে তুলবো কীভাবে?”
নীরব হয়ে গেল দ্যুতি।
“জানো ধুতি,আমি পানি খাইতে গেলে গ্লাসের মধ্যে তোমারে দেখি,ঘুমাইতে গেলে দেখি,ওয়াশরুমে গেলি দেখি,গোসল করতে দেখি,মানে সবখানে তোমারে দেখি! এখন আমি কী করবো বলো?”
প্রতিত্তোর করলো না।
“এখন তুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসো। তারপর আমরা বিয়ে করে নিবো। এরপর ফ্যামিলি জিজ্ঞেস করলে বলবো,প্রেম হারাম তাই বিয়ে করে হালাল করে ফেলেছি।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো দ্যুতি।
__
প্রায় রাত বারোটা। শুয়ে পড়লো ওরা দু’জন। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টির শব্দ শুনতেই চমকে উঠলো নিশু। বৃষ্টি তার ভীষণ প্রিয় আবার আতঙ্কের নামও। ডক্টরের নিষেধ বৃষ্টিতে না ভেজা। হয়তো আবারও ডিমেনশিয়ায় এট্যাক হতে পারে। তবুও নিশুর লোভী মন মানতে নারাজ। চুপটি করে শুয়ে রইলো।
“নিশু বৃষ্টি হচ্ছে ছাঁদে যাবি?”
“এখন?”
“হুম।”
“না থাক।”
“বৃষ্টিতে ভিজবো চল।”
শোয়া থেকে উঠে দু’জন লাল পাড়ের সাদা কাতান শাড়ি পরলো। এরপর চুলগুলো ছেড়ে সিঁথি করে টিকলি পরলো। তারপর টানা চাঁদবালি পরে ম্যাচিং রেশমি চুড়ি এবং পায়ে আলতা ও নুপুর পড়লো। চোখ ভরে কাজল এবং ঠোঁটে গাঢ় করে লাল টুকটুকে লিপস্টিক দিলো। চুলে আর্টিফিশিয়াল আধফোটা বেলির গাজরা আঁটকে,কোমরবন্দনী পরলো। একটু সাজুগুজু করলো। এটা আজ-কালকার নিয়ম নয় অনেক বছর থেকেই বৃষ্টি হলে ওরা এমন করে।।আর সাজুগুজু করে তারপর ছাঁদে গিয়ে দু’জন নাচ-গান করতে করতে বৃষ্টিতে ভিজে। নিশু খুব সুন্দর করে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারে। কেউ একবার শুনলেই মুগ্ধ হয়ে যায়। লাইট অফ করে চতুর্দিকে সাবধানী দৃষ্টি বুলিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেললো দু’জন। তবুও নুপুরের ঝুনঝুন শব্দ হতে লাগলো। অবশ্য ধ্রুব এখনও ঘুমায়নি ল্যাপটপে কাজ করছিল। ঝুনঝুন শব্দ হতেই বুঝতে পারলো নিশু বের হয়েছে। ল্যাপটপ রেখে ডোর খুলতেই দেখলো সাবধানী পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে দু’জন। ওদের এমন দৃশ্য দেখে হাসার কথা হলেও গম্ভীর রইলো ধ্রুব। একজন আরেকজনের হাত ধরে এমনভাবে উপরে উঠছে মনে হচ্ছে চুরি করতে যাচ্ছে। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। তিনতলা থেকে চারতলার সিঁড়িতে পা রাখতেই এগিয়ে গেল। ঠিক তখুনি রুম থেকে বেরুলো ধূসর। নিশু-দ্যুতির এ-টু-ডেজ বদঅভ্যাস সব জানা তার। নিশ্চয়ই এখন বৃষ্টিতে ভিজতে যাবে দু’জন। সত্যি বলতে,ওদের দু’জনের সাথেই তো সে বড় হয়েছে। বয়সের ব্যবধান দু-আঁড়াই বছর। ওদের বিষয়ে জানে না এমন কোনো তথ্য ধূসরের অজানা নয়। সবই জানে সে। সম্পর্কে ভাই হলেও বাবা,ভাই এবং বন্ধুর মতো স্নেহের সহিত ওদের আগলে রেখেছিল। তাই সব জানে। বৃষ্টিতে ভিজলে নিশুর সমস্যা হবে নিষেধ করতে হবে ওদের। বাজ-টাজ পড়লে নিশু আবারও মোমোরিলস করে বসবে। সেখান থেকে না জানি আনার ডিমেনশিয়া উপস্থিত হয়। তপ্তশ্বাস ফেলে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। নুপুরের ঝুনঝুন শব্দ শুনেছে সে। সিঁড়িতে পা রাখতেই দেখলো ধ্রুব দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত হলো দু’জন। নির্লিপ্তে রুমের দিকে পা বাড়ালো ধূসর। বুকে বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বুজতেই ভেসে উঠলো একখানি মায়াবী মুখ। হঠাৎ কল এলো। পিক করলো না। ফের কল এলো বার কয়েক। চোয়াল শক্ত করে পিক করতেই ভেসে এলো একটি অপরিচিত কণ্ঠ!
“হ্যালো আপনি কি ধূসর?”
“হুম কেন?”
“আপনি বুশরাকে ব্লক দিয়েছেন কেন?”
“চামচামি করার জন্য ফোন দিয়েছো?”
“সে সু’ইসাইড এটেম্প করেছে। হসপিটালে রয়েছে।”
চমকালেও নীরব রইলো।
“আপনি কি সত্যি মানুষ নাকি জড়পদার্থ? কীভাবে পারেন একটা মেয়েকে এতো কষ্ট দিতে? ওর বাবা-মা,ভাই শুনলে কী হবে একবার ভেবেছেন?”
নীরব রইলো ধূসর।
“ওর সাথে কথা বলুন! দেখুন ওর কী অবস্থা!”
ভিডিও কল দিয়ে ফোন ধরলো বুশরার দিকে। হসপিটালের কেবিনে শুয়ে রয়েছে। কিছু বললো না ধূসর। বুশরার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে!
__
ছাঁদের ভিতর পা রাখতেই বিষ্মায়াহত হলো ধ্রুব। রবীন্দ্র সংগীত গাইছে নিশু,ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে তাল মিলাচ্ছে দ্যুতি। একজন আরেকজনের হাত ধরে স্লো মোশনে ঘুরে ঘুরে নাচছে! নিশুর পিছনের দিকটাই দেখা যাচ্ছে। তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। বৃষ্টির ছন্দে ছন্দে কি সুন্দর করে ওরা হাসছে,গান গাইছে,নাচছে! অন্য জগতে হারিয়ে গেল ধ্রুব। আনমনা হয়ে কদম ফেলে এগিয়ে যেতেই তাকে দেখতেই চমকে উঠে থেমে গেল দ্যুতি। আচমকা মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করতেই নিশু কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই হঠাৎ দু’হাতে ধাক্কা দিতেই জোরে আর্তনাদ করতে উঠে ধ্রুবর বুকে এসে পড়তেই ধরে ফেললো সে। ব্যালেন্স রাখার জন্য দু-চোখ বোজা অবস্থায় খামছে ধরলো ধ্রুবের বুকের দিকের টি-শার্ট। বিশ্বজয়ের তৃপ্তির হাসি দিয়ে দৌঁড়ে ছাঁদ থেকে নেমে দরজা আঁটকে ভেজা কাপড় সহ সিঁড়িতে বসে পড়লো দ্যুতি। বাঁকা হেসে বলল,”এবার কই যাবি নিশু! আজ তোদের দু’জনকে ছাঁদের উপর বাসর করিয়েই ছাড়ব!”
এরপর লাল লা লা করতে লাগলো। আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব হয়ে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ফেললো নিশু। উপলব্ধি করলো সে নিচে পড়েনি কেউ ধরে রেখেছে। চোখ খুলতেই দেখলো তার দিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। আ! করে চিৎকার করে উঠলো নিশু। নিজেকে ছাড়াতে নিতেই পারলো না শক্ত করে ধরে রেখেছে ধ্রুব। ভয়ে,আতঙ্কে জান বেরিয়ে আসতে চাইছে নিশুর। থরথর করে কাঁপতে লাগলো। বিষয়টি নিতে হজম হলো না নিশুর। আচমকা হাত-পা ছেড়ে দিয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তেই নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো নিশুকে। পুরো শরীরের ভর ধ্রুবর উপর। কিন্তু তাকিয়ে রয়েছে একজন আরেকজনের দিকে। নিভু নিভু ঝাপসা দৃষ্টি নিশুর। ঠান্ডায় লাল টুকটুকে লিপস্টিক দেওয়া এবং বৃষ্টিসিক্ত ঠোঁটজোড়া কেমন কাপছে! দৃশ্যটি দেখতেই অনায্য ইচ্ছেয় শিহরিত হলো ধ্রুব। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলো নিশুর। আঁচ করতে পেরে আচমকা নিজের ঠোঁট দুটো এগিয়ে নিতেই দাঁত-মুখ খিঁচে ফেলতেই দু-চোখ বুজে পুরে নিতেই পড়ে যেতে নেয় নিশু। আচমকা কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো। পাগল উন্মাদের ন্যায় একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরলো। শরীরটা হঠাৎ ঝাড়া দিয়ে উঠলো বিজলির ন্যায়। সমানতালে রেসপন্স করলো নিশুও। দরজার ফাঁক দিয়ে এমন দৃশ্য দেখতেই লাজুক হাসলো দ্যুতি। আস্তে করে দরজা খুলে সামান্য মেলে দিয়ে নেমে গেল। ঠিক তখুনি রুম থেকে বেরুয় ধূসর। দ্যুতিকে একা নামতে দেখে চমকায়। নিশুর কিছু হয়নি তো! ও শিওর ওরা দু’জন ছাঁদে ছিল। দ্যুতি একা হলে নিশু কোথায়? ধ্রুব তো নিশুকে সহ্য করতে পারে না। ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। ঘাবড়ে গেল ধূসর। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। আচমকা পাঁজাকোলে তুলতেই দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো ধ্রুবর গলা। আধমরা অবস্থা নিশুর। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সিঁড়িতে পা ফেলতেই হঠাৎ ধূসর ওদের এমতাবস্থায় দেখতেই চমকে উঠে দ্রুত নেমে আড়াল হয়ে গেল। সাবধানী পা ফেলে নিজের রুমে ঢুকলো ধ্রুব। নিশুকে শুইয়ে দিলো তার বিছানায়।
______
চলবে~