মায়াকুমারী পর্ব-৩৯

0
3

#মায়াকুমারী ❤️
#মেহেরিন_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(৩৯/ক)
___________________

লস অ্যাঞ্জেলেস (LAX) থেকে ব্যাংকক (BKK) স্টপসহ ফ্লাইটে প্রায় দীর্ঘ ২৬-২৭ ঘন্টা জার্নি শেষে থাইল্যান্ড ফিরলো বুশরা। সকল ঝামেলা সামলে হসপিটালে ঢুকলো। চিৎকার দিয়ে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়লো মায়ের বুকে। মেয়ের দিকে তাকান আদনীন ফেরদৌস। কী অবস্থা হয়েছে উনার এইটুকুনি সুন্দরী মেয়েটার। যেন ঝড়-তুফান,সাইক্লোন সবই গিয়েছে তার উপর। মায়ের মুখের দিকে তাকায় বুশরা। কী অবস্থা তার মায়ের,যেন কালবৈশাখী তার তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে। নিজেকে সামলে ভাইকে দেখতে গেল। অবচেতন অবস্থায় রয়েছে এখনও। ডুকরে কেঁদে উঠলো বুশরা।

“ভাইয়া! ও ভাইয়া! ওভাবে চোখ বুজে থেকো না। চোখ খুলে তাকাও।”

বোনের কান্না আদোও তার শ্রবণেন্দ্রিয়তে পৌঁছেছে কিনা কে জানে! আপসেট হয়ে পড়লো বুশরা।

“আমি এখন কার সঙ্গে ঝগড়া করবো ভাইয়া! আমি এখন কার সঙ্গে দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি করবো কেউ আমায় একটু বলো!”

ভীষণ ভীষণ কান্না করতে লাগলো বুশরা। আইসিইউ রুম থেকে বেরিয়ে ফোন করলো দ্যুতিকে কিন্তু সংযোগ পেলো না। দাঁতে দাঁত চাপলো।

“তোকে আমি ক্ষমা করবো না দ্যুতি। তুই আমার ভাইয়ের খু’নি!”

রাগে-জিদে কল দিতে লাগলো কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ধূসরকেও পাওয়া গেল না। মেজাজ খারাপ হলো বুশরার।

“দ্যুতি তোকে আমি ছাড়ব না! তোর ভাই আমাকে পাত্তা দেয়নি আমি কখনো খারাপ কিছু করেছি তাহলে তুই কেন করলি?”

ফোন করলো ধীরাজকে। পিক করতেই জিজ্ঞেস করলো,”দ্যুতি কই?”

“ওদের তিনজনকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না আপু।”

“মানে?”

“আজ তিনদিন থেকে গায়েব ওরা।”

“কী বলছো?”

“সত্যি।”

“কোথায় গেল তাহলে?”

“আব্বুকে নাকি বলেছিল থাইল্যান্ডে।”

“কিন্তু এখানে তো নেই।”

“আমরা সবদিকে খুঁজতেছি কিন্তু কোনো খবর পাচ্ছি না।”

আতঙ্কিত হলো বুশরা।

“এখন কীভাবে কী?”

“তুমি খোঁজ পেলে জানিও। আমরা পেলে জানাবো।”

“আচ্ছা।”

থমকে রইলো বুশরা। কোথায় গেল ওরা? পাগলের মতো হয়ে গেল এবার। চারজন মানুষই চারদিক থেকে তার ভীষণ প্রিয়,আপন। ভাই,প্রেমিক,বান্ধবী। কারো থেকে কেউ কম নয় তার জন্য। আপসেট হয়ে পড়লো বুশরা।
__

আর সহ্য করতে পারলো না ধ্রুব। এবার সত্যিই বাড়াবাড়ি বলে মনে হলো। সবকিছুর একটা লিমিট রয়েছে। লিভিং স্পেসে গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছেন আসাদ সাহেব। এক কাপ মশলার চা এগিয়ে দিলেন দিলরুবা খাতুন। গটগট পায়ে এগিয়ে এসে উনাদের সামনে দাঁড়ালো ধ্রুব। তার উপস্থিতি টের পেতেই পা থেকে উপরে চোখ তুলে তাকান আসাদ সাহেব। গম্ভীর মুখে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে রয়েছে ধ্রুব। থমকালেও নীরব রইলেন। এই তো বছর সাড়ে তিনেক আগেও ছেলেটা কেমন হ্যাংলা-পাতলা ছিল কিন্তু এখন চোখে লাগার মতো বলিষ্ঠ এবং সুঠাহ দেহের অধিকারী হয়েছে। যেন আরেকটু লম্বা,চওড়াও হয়েছে এবং পুরুষালী ভাইব এসেছে পুরো অবয়বজুড়ে। মনে হচ্ছে বয়স ৩৯-৪০ কিংবা তারও বেশি। গায়ের রঙ শ্যামলা হলেও আগের থেকে ফর্সা হয়েছে একটু। অর্থাৎ ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ছেলের মধ্যে তদ্রূপ ব্যক্তিত্বেও। নিজের ছেলেকে নিজেই দেখে মুগ্ধ হলেন এবং গর্বে বুকটা কেমন ফুলেফেঁপে উঠলো।

“কী হয়েছে?”

কপাল কুঁচকালেন।

“ওরা কোথায়?”

“কেন?”

বাবার ত্যাঁড়া প্রশ্নে মেজাজ খারাপ হলো ধ্রুবর।

“বলেছি কোথায়?”

আসাদ সাহেব ইচ্ছে করেই ছেলের মেজাজ বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করছেন।

“তুমি জেনে কী করবে?”

দায়সারা প্রতিত্তোরে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ধ্রুবর।

“ফাজলামো করছেন আমার সাথে?”

চেঁচিয়ে উঠে টি টেবিলের মধ্যে লাথি মা’রলো।

“খবর্দার! তুমি আমার সামনে বেয়াদবি করবে না!”

গর্জে উঠলেন তিনি। হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ধ্রুব।

“ওরা কোথায় গিয়েছে?”

“যেখানে ইচ্ছে সেখানে তোমাকে বলবো কেন?”

আতঙ্কিত হয়ে রইলেন দিলরুবা খাতুন। একের পর এক কী সব হচ্ছে বাসায়। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন।

“অবশ্যই আমাকে বলতে হবে।”

“কে তুমি?”

চোয়াল শক্ত করে জিজ্ঞেস করলেন।

“নাটক করছেন আমার সঙ্গে?”

“আমি না তুমিই করছো আমাদের সঙ্গে।”

একটা ফুলদানিতে লাথি মা’রতেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। তেঁতে উঠলেন আসাদ সাহেব।

“কী হচ্ছে এইসব?”

“ধূসর নিশুকে নিয়ে কোথায় গেল?”

“তা জেনে তোমার কী লাভ?”

“ফাজলামো করছেন?”

“তুমি তো নিশুকে সহ্য করতে পারো না তাই ভাবছি ধূসরের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবো। কারণ নিশুর সুখে-দুঃখে,অসুস্থতায় সবসময়ই ধূসরই ছিল। আর নিশুকে ধূসরই ভালো বুঝে। ওদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো।”

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আগুনে ঘি ঢাললেন আসাদ সাহেব। বলতে দেরি তো কাঠের টুল দিয়ে টিভি ভাঙ্গতে দেরি হলো না।

“কী হচ্ছে এইসব! কত বড় সাহস তোমার!”

“এই নাটকটা আপাতত বন্ধ করুন। আপনার ড্রামাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি আমি। ডিভোর্স লেটার নিয়ে একবার করলেন এক কাহিনী।”

“আমি করেছি মানে তুমিই তো তোমার মাকে বললে ডিভোর্স লেটার রেডি করতে।”

“বলেছিলাম। তখন আপনি চিট করলেন কেন? চিট না করলে আমাদের পথ আলাদা থাকতো।”

“কী চিট করলাম?”

দাঁতে দাঁত চাপলো ধ্রুব।

“না জানার ভান করছেন কেন?”

“বুঝতে পারছি না।”

“নিজেকে খুব চালাক ভাবেন?”

“তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছো আমি চালাক কীভাবে হই?”

“মশকরা করছেন?”

“সোজাসুজি বলো?”

“ওইটা আদেও আসল ডিভোর্স লেটার ছিল?”

“আমি কী জানি?”

চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব।

“নকল ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে মজা নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন কিছু বুঝবো না?”

“আমি ভাবলাম তুমি এখনও ফিডার খাও।”

রাগে কাঁপতে লাগলো ধ্রুব।

“এখন দেখছি তোমার মাথায় বুদ্ধিসু্দ্ধি হয়েছে একটু।”

কপালের শিরাগুলো ফুলে নীল হয়ে উঠলো। গুরুত্ব দিলেন না আসাদ সাহেব।

“নাটকটা কেন করলেন?”

নীরব রইলেন তিনি।

“নাটকটা না সাজালে নিশু অসুস্থ হতো না। নিশুর অসুস্থতার জন্য আপনি দায়ী।”

খেঁকিয়ে উঠলেন আসাদ সাহেব।

“আমি নাটক করেছি বলে আমি দায়ী তুমি দায়ী না?”

“ফেইক পেপার দেখে সাইন করতে নিয়েও তাচ্ছিল্যতা এলো তাই আর করিনি।”

“আচ্ছা করোনি। নিশুর অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী তাহলে সাড়ে এগারো বছরের মধ্যে কয়বার ওর খোঁজখবর নিয়েছো তুমি? এখন তো ইন্টারনেটের যুগ!”

“নিই নাই মানছি আমার অপরাধ। ও যে অসুস্থ আমাকে জানিয়েছেন?”

“আমরা কেন জানাবো? আমাদের ঠেকা পড়েছে?”

টুল দিয়ে এক্যুরিয়ামে আঘাত করতেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

“বেয়াদবির মাত্রা বেড়ে গিয়েছে তোমার।”

“ঠেকা না পড়লে বারবার জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করালেন কেন?”

“সব দোষ আমার এখন তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও। ধূসর নিশুকে বিয়ে করবে সমস্যা কোথাই!”
___

“ছাড়ুন আমাকে!”

শক্ত করে চেপে ধরলো নিশুকে।

“ম্যাম,আপনি অসুস্থ। কেবিনে চলুন।”

“আমি ওই কেবিনে যাব।”

নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত কেবিনে ঢুকতেই দেখলো শুভ্র বেডে ঘুমিয়ে রয়েছে ধূসর। কম্পিত পায়ে এগিয়ে গেল নিশু। ভেজা ঢোক গিলে হাত রাখলো চাদরের উপর দিয়ে পেটের উপর।

“ভাইয়া!”

যেন চুপিসারে ডাকলো নিশু গলার স্বর এতটাই ক্ষীণ। শ্বাস আঁটকে ফের ডাকলো,”ভাইয়া!”

সাড়াশব্দ পেলো না। বুকের উপর হাত রাখলো।

“ভাইয়া!”

নিভু নিভু ঝাপসা চোখে তাকালো ধূসর। নিশুকে দৃশ্যমান হতেই চমকে উঠলো। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে রয়েছে নিশু। অপ্রস্তুতবোধ করলো ধূসর।

“তুই এখানে কী করছিস?”

নার্সকে ইশারা দিলো নিয়ে যেতে। বাহু চেপে ধরতেই সরিয়ে দিলো।

“তোমার কী হয়েছে?”

“কিছু না।”

“এই অবস্থায় কেন?”

“ওকে নিয়ে যান।”

নিশু গেল না। পাতলা চাদরটা তুলতে নিতেই শক্ত করে ধরে রাখলো ধূসর।

“কী হচ্ছে এইসব?”

“তোমার কী হয়েছে?”

“রেস্ট নিচ্ছি।”

“আমি ছোট্ট বাচ্চা?”

“না আপনি আমার ভাবী। সিস্টার আমার ভাবীকে নিয়ে যান।”

কিংকর্তব্যবিমুঢ় নেত্রে তাকায় নিশু। দু’জন নার্স জোর করে নিয়ে গেল নিশুকে।
__

মস্তিষ্ক টগবগ করছে ধ্রুবর। গাড়ি নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে গেল।
___

চলবে~

#মায়াকুমারী ❤️
#মেহেরিন_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(৩৯/খ)
___________________

“এই এদিকে আয়!”

ভীত চোখে তাকায় দ্যুতি।

“তাড়াতাড়ি আয়।”

কম্পিত পায়ে এগিয়ে যেতেই কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় মা’রলো।

“মন কোথায় থাকে?”

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাথা নুয়ে রইলো দ্যুতি। টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

“সামনে থেকে দূর হো!”

ধীর পায়ে কেবিন ত্যাগ করলো দ্যুতি। রাগে ফুঁসতে লাগলো ধূসর। সহ্য হচ্ছে না দুইটার একটাকেও। মেয়েরা এত গাধী হয় তা এই দুই গাধীকে না দেখলে সে জানতোই না! এক গাধী ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে এটা কেউ করে! মাথা জিনিসটা কত সেন্সেটিভ! আরেক রোগী গাধী সিসি ক্যামেরার মতো তাকে খুঁজে বের করেছে আপডেট পাওয়ার জন্য। মস্তিষ্ক টগবগ করছে! চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। করিডোরে দাঁড়িয়ে বুক চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো দ্যুতি। তার দিকে তাকায় নিশু। ধূসর এমনটা কেন করলো তার সঙ্গে আর কী হয়েছিল তাদের দু’জনের? চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না নিশুর। বুকটা কেমন ফুলেফেঁপে উঠে ফেটে যাচ্ছে। চোখ বুজে শুয়ে রইলো বেডে।

“দ্যুতি শোন।”

চোখের জল মুছে এগিয়ে এলো।

“বস।”

নীরবে তাই করলো।

“তোর গালে কী হয়েছে?”

“কিছু না।”

“থাপ্পড় দিয়েছে?”

“না।”

তাকিয়ে রইলো নিশু।

“আমরা জন্য তাই না?”

নিষ্প্রভ কণ্ঠ নিশুর।

“না।”

“মাফ করে দে।”

নীরব রইলো দ্যুতি।

“আমার কী হয়েছিল?”

“এক্সিডেন্ট করেছিস।”

“মানে কখন?”

“তোর মনে নেই?”

“না।”

“আমরা থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় রোড এক্সিডেন্ট করেছি।”

“কখন?”

“বিমান থেকে নামার পর হসপিটালের দিকে রওনা দিতেই।”

অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো নিশু।

“মিথ্যা কথা।”

“তোর কিছু মনে পড়ছে না?”

“না।”

“আমার মনে হচ্ছে আবারও তোর মেমোরিলস হয়েছে নিশু।”

“মিথ্যা কথা আমি সুস্থ।”

নীরব রইলো দ্যুতি।

“মেজ ভাইয়ার কী হয়েছে?”

“তোরা দু’জন আমাকে বাঁচাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিস। আর আমি বেঁচে গিয়েছি।”

“বিশ্বাস করিনি।”

নীরব রইলো দ্যুতি।
__

চিন্তায় জর্জরিত হয়ে গেল বুশরা। একদিকে মা এবং ভাইয়ের অবস্থা অন্যদিকে ওদের তিনজন গায়েব। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না! দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেল। উসকোখুসকো চেহারায় বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখ তুলে তাকান তিনি।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?এনিথিং রং?”

“পাপা,নিশু-দ্যুতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজে বের করে দাও।”

ভীষণ বিরক্ত হলেন তিনি।

“আমি কি গায়েবী জানি?”

“পুলিশের মাধ্যমে ওদের তথ্য পাওয়া তোমার জন্য ইজি।”

“আই ডোন্ট কেয়ার।”

“আমাকে রাগিও না পাপা। আমি খুব রেগে আছি।”

নীরব রইলেন তিনি।

“পুলিশকে ফোন করে জিজ্ঞেস করো ওরা কোথায় আছে?”

“ওই খু’নি মেয়ে দুটোর খবর পুলিশ নিয়ে বসে আছে তো তাদের আর কোনো কাজ নেই।”

“মশকরা করো না।”

“মশকরা বলে মনে হচ্ছে?”

“ওদের নামে মামলা দিয়েছো ওরা পুলিশি পাহারায় রয়েছে অর্থাৎ দেশ থেকে যদি বের হয় অবশ্যই ওরা পারমিশন নিয়েই বের হয়েছে। তাই তুমি পুলিশকে কল করে জিজ্ঞেস করো।”

“পারব না।”

করিডোরের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালো।

“ঠিক আছে লাফ দিচ্ছি!”

“পাগল হয়েছো মাথা খারাপ মেয়ে!”

গর্জে উঠলেন তিনি।

“এক মিনিটে ইনফরমেশন বের করো।”

বিরক্তিকর চোখে তাকালেন। এসিস্ট্যান্ট শাফায়াতকে ইশারা দিতেই পুলিশকে ফোন করে তথ্য জানলো।

“স্যার ব্যাংকক বামরুনগ্রাদ হসপিটালে রয়েছে।”

“হোয়াট!”

চেঁচিয়ে উঠলো বুশরা।

“জ্বী ম্যাম।”

“হসপিটালে কেন?”

“মিসেস মেহের নিগার নিশুতির আর্জেন্ট কোনো অপারেশন ছিল।”

“কী!”

নীরব রইলো শাফায়াত। একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। মন্ত্রী সাহেবের ঢংগী মেয়ে!

“পাপা আমি ব্যাংকক যাব ব্যবস্থা করো।”

“কী দরকার?”

“করবে কিনা বলো নয়তো লাফ দিবো।”

অপ্রসন্ন চোখে তাকালেন। ইশারা দিলেন শাফায়াতকে। শাফায়াতের পিছু পিছু গেল বুশরা। শ্বাস আঁটকে রইলো শাফায়াত। বুশরাকে দেখলেই তার কেমন জানি হৃদপিণ্ড কাঁপে! বাপের অহংকারী মেয়ে। পৃথিবীর কারো কথা না শুনলেও মেয়ের কাছে উনার সকল শক্তি নস্যি!
__

বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ধ্রুব। স্টার্ট দিলো গাড়িতে। গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন আসাদ সাহেব।

“এইসব কী শুরু করলেন আপনি?”

অসন্তুষ্ট দিলরুবা খাতুন।

“কী করলাম?”

“এত নাটকের কী দরকার ছিল?”

“মানছি সব দোষ আমার। ডিভোর্স লেটার ফেইক ছিল। কিন্তু তোমার ছেলের হাত-পা আমি আঁটকে রেখেছিলাম? ওর মুখ চেপে রেখেছিলাম?”

“ওতো এমনই অভিমানী,একগুঁয়ে আবার ঘাড়ত্যাড়াও।”

“নিজের দোষ আমার উপর চাপালেই হলো? আমি যা করেছি তাদের দূরত্ব ঘুচানোর জন্য করেছি। তোমার ছেলেই ইগো নিয়ে রইলো। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত করেনি তো আমি করবো কেন?”

নীরব রইলেন দিলরুবা খাতুন।

“নিশু অসুস্থ হয়েছে তুমি জানিয়েছো ওকে? তুমি তো ওর সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতে।”

“কীভাবে বলবো? ও ঠিক মতো এক মিনিটও কথা বলে না একটু বলেই ফোন রেখে দেয়।”

“তাহলে আমার দোষ দিচ্ছ কেন?”

“এখন ওরা কোথায়?”

“জানি না। ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ লক্ষ টাকা তোলা শেষ। এত টাকা দিয়ে কী করছে তোমার ছেলে?”

“কী বললেন?”

“মিথ্যা বলছি ভাবছো?”
__

ব্যাংকক পৌঁছায় বুশরা। ডিটেইলসের মাধ্যমে খুঁজে বের করলো ওদের। নিশু-দ্যুতিকে দেখতেই চিৎকার করে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়লো একপ্রকার। চমকিত নয়নে তাকায় দু’জন।

“নিশু কী হয়েছে তোর?”

“জানি না।”

“ওর কী হয়েছে দ্যুতি?”

“রোড এক্সিডেন্ট করেছে।”

“কিন্তু পুলিশ তো বলল অন্য কিছু।”

“পুলিশের কথা তুই বিশ্বাস করিস?”

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয় বুশরা।

“কে সঠিক তা তো জানি না। উনি কই?”

“আছে।”

“কোথায়?”

নীরব রইলো দ্যুতি।

“পাশের কেবিনে।”

চমকে তাকায় নিশুর দিকে।

“কী হয়েছে?”

উৎকণ্ঠা হলো বুশরা।

“জানি না।”

কেবিন থেকে বেরিয়ে পাশের কেবিনগুলোয় খুঁজতেই পেয়ে গেল ধূসরকে। ওমন অবস্থায় দেখতেই চমকে উঠে ছুটে গেল।

“কী হয়েছে আপনার?”

চমকে তাকায় ধূসর। আশা করেনি বুশরাকে।

“বলুন কী হয়েছে আপনার?”

“কিছু না। যাও এখান থেকে।”

দুই গাধী যাওয়ার পর আরেক গাধী এসেছে। জাস্ট বিরক্তিকর! অসন্তুষ্ট হলো ধূসর।

“কী হয়েছে বলুন?”

“যেতে বলেছি তোমাকে।”

কেঁদে উঠে সংকোচ নিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে আকস্মিক জড়িয়ে ধরলো ধূসরকে। থমকায় সে।

“পাগল হয়েছো সরো।”

হু হু করে কাঁদে বুশরা। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে নিচুস্বরে বলল,”আমার ভাইয়ের এই অবস্থা,নিশুর অবস্থা,আপনার অবস্থা কীসের মধ্যে আছি আমি বুঝতে পারছেন?”

নীরব হয়ে গেল ধূসর।

“আজীবন শুধু অবহেলাই পেলাম।”

বুশরার অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ধূসরের কাঁধে,পিঠে। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে আস্তে করে বলল,”আই লাভ ইউ!”

চোখ বুজে রইলো ধূসর। ভেসে উঠলো নিশুর মুখটা। দপ করে চোখ খুলে ফেললো।

“সরো।”

হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো।

“কী হয়েছিল আপনার?”

“কিছু না।”

“আপনার বোন আমার ভাইকে আইসিউতে পাঠিয়েছে আমি কিন্তু এখনও কিছু করিনি।”

“ব্ল্যাকমেইল করছো?”

“না বলতে চাচ্ছি ভালোবাসার জন্য মেয়েরা আইসিইউতেও পাঠাতে পারে।”

আগুন চোখে তাকালো ধূসর।

“বেরিয়ে যাও।”

“আমি কতটা দূর থেকে ছুটে এসেছি আর আপনি আমাকে কেয়ার করছেন না?”

নীরব রইলো ধূসর।

“আপনার বোন গিয়েছে আমার ভাইকে দেখতে?”

প্রতিত্তোর করলো না। ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।

“প্লিজ রিয়েক্ট করবেন না। আচ্ছা আমি কি খুব খারাপ?”

নীরব রইলো ধূসর।

“আমি কি দেখতে সুন্দর না?”

প্রতিত্তোর করলো না।

“কী করলে আপনি আমাকে ভালোবাসবেন?”

মৌন রইলো ধূসর। অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ধূসরের হাতে। ধূসর তাকায়। সেদিন তো সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল তাহলে বুশরার সঙ্গে স্বাভাবিক হতে পারছে না কেন?

“যদি কখনো জানতে পারো আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?”

ভেজা ঢোক গিললো বুশরা।

“মিথ্যে বলছেন তাই না?”

বুশরার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকায় ধূসর। সেখানে শুধু একটি কথা ঘুরছে এটা মিথ্যা হোক!

“না।”

টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

“নিজের প্রিয় মানুষ অন্য কাউকে ভালোবেসেছে এটা কতটা জঘন্য আপনি জানেন না!”

তাচ্ছিল্য হাসলো ধূসর। মুখ ফিরিয়ে নিলো।

“দরকার পড়লে আজীবন কুমার থাকবেন তবুও কাউকে বিয়ে করবেন না আমি সহ্য করতে পারব না মরে যাব। আমিও আজীবন আপনার জন্য কুমারী থাকব।”

“আদেশ করছো?”

“ভালোবাসার অধিকার থেকে।”

ধূসরের হাত রাখলো নিজের গালে। সরিয়ে নিলো না। নিশুকে ভুলা দরকার। নিশু তার জন্য নিষিদ্ধ তবুও বেহায়া মনটা কেন যে মেয়েটাকে ভালোবাসলো! সব রাগ ভাইয়ের উপর পড়লো। সাড়ে এগারো বছর অবহেলা করে এখন হুট করে কোথ থেকে এসে দাবী করছে তার বউ! তাহলে কেন এত নাটক করলো? এই নাটকটা না করলে নিশুর প্রতি তার অনুভূতি জন্মাতো না। সবসময়ই মনে মনে ভাবতো,আমি বড় হলে তোর দুঃখ গুছিয়ে দিবো ভালোবেসে। দুঃখ ঘুচাবার আগেই তার ভাই এসে হুট করে দাবী করলো তার বউ! ডিভোর্সের নাটকটা কেন করলো?এইসবের জন্য তার ভাই কি দায়ী নয়?

“কী ভাবছেন?”

সম্বিৎ ফিরলো।

“আমার ভাই সম্ভবত আমাদেরকে খুঁজছে! তুমি কল করে ক্লিয়ার করো বিষয়টি। বলবে আমরা থাইল্যান্ড আছি। আসার প্রয়োজন নেই তার।”

“আচ্ছা।”

ধ্রুবর আইডি নিয়ে কল করতেই ব্রেক কষলো। বুশরার হাসি মাখা মিষ্টি মুখটা স্ক্রীনে ভেসে উঠতেই চমকায়। বুশরাকে ঠিক চিনে না সে। বার কয়েক ফোন করলো। পিক করলো না। টেক্সট পাঠালো,”ভাইয়া আমি অনিকের বোন। কল পিক করুন কথা আছে।”

চমকায় ধ্রুব। বুশরা ফোন করতেই পিক করলো। সে সালাম দিয়ে বলল,”ভাইয়া নিশু-দ্যুতি থাইল্যান্ড আছে। ওদের খুঁজতে হবে না।”

“কেমন আছে ওরা?”

“ভালো আছে। হোটেলে উঠেছি আমরা সবাই।”

“ওদের দেখাও।”

“বিশ্বাস করছেন না?”

“দেখাও।”

ভিডিও কল দিলো। নিশুর মুখের সামনে ধরতেই ভেসে উঠলো তার চেহারা। জীবনে প্রথম ওরা দু’জন দু’জনকে ফোনে দেখল আজ। নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো কেমন রুগ্ন দেখাচ্ছে।

“তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

“আমি টায়ার্ড। আসলেই আমার ফ্লাইট ফোবিয়া আছে।”

“তোকে যেতে বলেছে কে?”

“আসলেই তুমি তো নিয়ে আসোনি।”

“ফাজলামো করছিস সবগুলো?”

“না।”

“ফ্লাইট ফোবিয়া তিনদিন থাকে?”

“আমার অনেকদিন থাকে।”

“দ্যুতি কই?”

“ওই তো আছে।”

“কোন হোটেলে উঠেছিস নাম বল আমি তিনঘন্টার মধ্যে আসছি।”

ভড়কায় বুশরা।

“আসা লাগবো না ভাইয়া। আসলেই আমরা তিনজন একসঙ্গে থাকবো প্লিজ আসবেন না।”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুব। বুশরার চোখগুলো কেমন ঘুরছে। মেয়েটা মিথ্যা বলতে জানে না। জড়তা কণ্ঠে!

“আসছি রাতের ফ্লাইটে।”

“কি শুরু করলে তুমি বললাম তো আমরা ঠিক আছি। আসা লাগবে না।”

“মিথ্যা বলার কোর্স করে নিস।”
______

চলবে~