মায়াকুমারী পর্ব-৪৪

0
2

#মায়াকুমারী ❤️
#মেহেরিন_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(৪৪)
___________________

বিষন্ন মুখে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো দু’জন। গন্তব্য ঠিক কোথায় জানে না। চোখে ঝাপসা দেখার কারণে ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলো না দ্যুতি। আকস্মিক মুখ থুবড়ে পড়তেই ধরে ফেললো ধ্রুব। তবুও কপালে ব্যথা পেলো।

“ইশ! সাবধানে হাঁটবি তো।”

উঠিয়ে দাঁড় করায়।

“দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?”

পর্যবেক্ষণ করলো। কপালের এক অংশ ফুলে গিয়েছে। ভীষণ খারাপ লাগলো। ফর্সা গাল দুটোয় তার হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গিয়েছে। গিল্টি ফিল হলো। আসলেই তখন মাথায় কাজ করছিলো না। হঠাৎই হয়ে গেল সব। হাঁটতে নিতেই পারলো না পা মচকে গিয়েছে। পা ধরে কাতরায়। আচমকা পাঁজাকোলে তুলতেই জড়িয়ে ধরলো ভাইয়ের গলা। আহ্লাদে বুক ফেটে কান্না আসে দ্যুতির। ফুলেফুলে কাঁদে। নীরব রইলো ধ্রুব। কাঁদতে দিলো। কাঁদা উচিৎ! হালকা হয়ে মন শক্ত করা উচিৎ! নিরবচ্ছিন্ন পথ ধরে হাঁটতে লাগলো। মৃদু মৃদু হাওয়ায় টুপটুপ করে ম্যাগনোলিয়ার বৃষ্টি বয়। যেন রাতটা আজ ওদের ভাইবোনের জন্যই শুধু। আর তাদের স্বাগত জানাচ্ছে অজস্র ম্যাগনোলিয়ারা। কোথায় যাচ্ছে ঠিক নেই শুধু হাঁটছে। হঠাৎ পায়ের উপর নজর পড়লো। কি সুন্দর তার বোনের পাজোড়া কিন্তু খালি! মনে পড়ে ছোটবেলার দৃশ্য। তার পিঠে উঠে মাড়াতো এই দু’পা দিয়ে। সুন্দরী হওয়ায় ছোট্টবেলায় দেখতেও বার্বিডলের মতো কিউট ছিল। আধো আধো বুলিতে তাকে মিষ্টি স্বরে ডাকতো! আদ্র হলো হৃদকুঠিরের অভ্যন্তর। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। বুক ভেসে গেল তপ্ত জলে। আহ্লাদী দ্যুতির আরও কান্না পায়। দ্যুতির মনে হলো সে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী নারী! যার কোনো হেটার্স নেই। তার বাবা-মা ভালো,ভাই-ভাবী ভালো,বান্ধবী ভালো,সে যাকে ভালোবাসে সেও ভালো,তার চরিত্রও ভালো,সবাই ভালো সবাই। একটি ম্যাগনোলিয়া গাছের নিচে থামলো। দ্যুতিকে দাঁড় করায়। মৃদু মৃদু হাওয়া বইতে লাগলো। মনে হচ্ছে হাওয়ারাও আজ ভীষণ খুশি! গাছের নিচে বসলো দু’জন। মাথা রাখলো কোলে। ঝাপটে ধরে ভাইকে। বুক ঠেলে আরও কান্না আসে। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালাতে লাগলো। আবেশে চোখ মুদে ফেললো দ্যুতি। গালের মধ্যে আদুরে হাত বুলালো।

“সরি।”

মুখ গুঁজল বুকে। ভাইয়ের বুকে আপন আপন গন্ধ!

“আসলেই তখন মাথা ঠিক ছিল না। আর কখনও এমনটা করবি সেদিন আমার থেকেও খারাপ আর কেউ হবে না। এতদিন দূরে ছিলাম বলে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়িয়েছিস এখন আর তা হবে না। আর যদি এমন কিছু করিস তো আমিই তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো!”

ভাইয়ের আদরমাখা কথায় কান্নার গতি ক্রমশই বাড়লো। বলতে ইচ্ছে করলো সব গোপন কথা। তার জন্য কী কী ক্ষতি হয়েছে তার ভাই,ভাবী সবার। নিশুর কী হয়েছিল সেটাও বলতে ইচ্ছে করলো কিন্তু সে তার মেজ ভাইয়ের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভেজা ঢোক গিললো দ্যুতি। আসলেই তারা দু’জন এবং ডক্টর ছাড়া এ গোপন কথা আর কেউ জানে না। দ্যুতি চায় না তাদের ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া হোক। আসলেই সব দোষ তো তার এজন্যই সে বাঁচতে চায় না। তারজন্য তার বড় ভাই সবার সামনে অপমানিত হয়েছে নিশুর হাতে,তার ভাইয়ের ইমেজ নষ্ট হয়েছে ইত্যাদি। কথার জলোচ্ছ্বাসরা লুটোপুটি খেতে লাগলো আর কণ্ঠনালীতে এসে জটলা পাকালো।

“চল কিছু খাবি।”

মাথা নাড়ালো খাবে না।

“কেন?”

নীরব রইলো। সে মিস করতে চায় না এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পবিত্র মুহূর্তটা। আর কখনও এই মুহূর্ত আসবে না কখনও না। বাড়াবাড়ি করলো না ধ্রুব। পকেট হাতড়ে ছোট্ট একটা লাল টুকটুকে রঙের বক্স বের করলো। বক্সটা খুলে দ্যুতির পা কাছে আনলো। টের পেলো ধ্রুব তার পায়ে কিছু করছে।

“দেখ।”

মাথা তুলে দ্যুতি দেখে কি সুন্দর সোনার-হীরের মিশেলে একজোড়া নুপুর!

“নুপুর!”

মৃদু হাসলো। বিস্মিত নয়নে তাকায়।

“কোথায় পেলে?”

“কিনেছিলাম।”

“নিশুর জন্য?”

“না।”

“তাহলে?”

“দু’জনের জন্যই নিয়েছি।”

“নিশুরটা কই?”

“আছে। ওকে পরে দিবো।”

বিশ্বাস করলো না দ্যুতি।

“নিশ্চয়ই ওর জন্য এনে আমাকে দিয়েছো এটা। কাজটা ঠিক করোনি।”

“ওরটা আছে।”

“এটা যদি নিশুর জন্য এনে থাকো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি অনেক আবেগ অনুভূতি মিশিয়ে কিনেছো। কেন দিলে আমাকে?”

আরেকটা বক্স বের করলো।

“এই দেখ এটা ওর।”

চুপসে গেল দ্যুতি। উঠে দাঁড়ায় ধ্রুব। হাত বাড়িয়ে একটা ম্যাগনোলিয়া ছিঁড়ে দ্যুতির কানে গুঁজে দিলো। ফের গাছের গুঁড়ির উপর বসলো। আবেগে ফের কান্না পায় দ্যুতির।

“কাঁদছিস কেন?”

“কিছু না।”

আবারও বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল গুঁজতেই ভেঙেচুরে এলো চোখজোড়া। দু’হাতে ঝাপটে ধরে আদুরে বেড়ালছানার মতো ঘুমিয়ে পড়লো দ্যুতি। ভারী শ্বাস পড়তেই টের পায় ঘুমিয়ে পড়েছে। ধ্রুব তাকায় বোনের দিকে। কি সুন্দর করে সুগন্ধি লেবুফুলের মতো ঘুমিয়ে গেল তার বোনটা। গালে চুমু খেয়ে মাথায় চুমু খেলো অনেকগুলো। চোখ বুজে হেলান দিলো।
__

পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল দ্যুতির। নিভু নিভু চোখে তাকাতেই উপলব্ধি করলো ভাইয়ের বাহুডোরে আবদ্ধ সে। চোখ মেলে তাকায়। বুঝতে পারলো তারা গাছের নিচেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মুখ তুলে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকায়। কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে তার ভাই। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রইলো দ্যুতি। কি সুন্দর তার ভাই! পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন তার ভাই!
___

চলবে~