#মায়াকুমারী ❤️
#মেহেরিন_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(৪৫)
___________________
ঘুম ভাঙ্গলো ধ্রুবর। দেখলো তাকিয়ে রয়েছে দ্যুতি।
“কখন উঠলি?”
“এখন।”
সোজা হয়ে উঠে বসলো দ্যুতি।
“চল।”
উঠে হাঁটতে লাগলো দু’জন। একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট অর্ডার করলো। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এলো ওয়েটার।
“হসপিটালে ফিরবে না?”
“না।”
কিছু বলতে নিয়েও চুপসে গেল দ্যুতি।
“খাবার খা।”
কিন্তু খেতে পারছিল না নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
“কী হয়েছে?”
“নিশু..”
“ওইসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।”
খাবার মুখে দিতে গেলেই নিশু-বুশরার কথা মনে পড়ছে।
“খা।”
“খাচ্ছি।”
বলেই অন্যমনস্ক হয়ে গেল দ্যুতি।
“কী ভাবছিস?”
“কিছু না।”
ধ্রুব নিজেই প্লেট টেনে নিয়ে মুখের ভেতর পুরে দিলো।
“নিশুর জন্য চিন্তা করার কী আছে! ওর দেখাশোনা করার অনেক মানুষ আছে। তোর এত না ভাবলেও চলবে।”
“তোমার অভিমান কমেনি?”
“আমার কোনো রাগ,জিদ,অভিমান নেই।”
“ভাইয়া তুমি ভুল বুঝছো।”
“মোটেও না।”
“বুশরা জানি কেমন আছে?”
আনমনা হয়ে বিড়বিড় করে বলল।
“তাকে নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে।”
হকচকালো।
“ওর আব্বু ওকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে।”
“তুই এমন করলে আব্বা কিংবা আমরাও করতাম।”
“কিন্তু ও তো খারাপ কিছু করেনি।”
“খারাপ হতে কতক্ষণ?”
“আসলেই..”
“তার বাবা-মায়ের ভালোবাসার কাছে তৃতীয় ব্যক্তির ভালোবাসা তুচ্ছ। এইসব টেনশন করবি না। সে তার বাবা-মায়ের কাছে অবশ্যই ভালো থাকবে।”
তবুও মনটা কেমন জানি করছে! বিল পে করে হাঁটতে লাগলো ওরা।
“হসপিটালে চলো।”
নীরব রইলো ধ্রুব। কিছুটা হাঁটতেই একটা শপিংমল চোখে পড়তেই এগিয়ে গেল। থার্ড ফ্লোরে উঠে জুয়েলারি দেখতে লাগলো। চুপচাপ রইলো দ্যুতি। হঠাৎ একটা ব্রেসলেট পছন্দ হলো দ্যুতির। ধ্রুবরও একটা সোনার ব্রেসলেট পছন্দ হতেই দ্যুতির হাতে পরিয়ে দেখলো ঠিকঠাক মতো হয় কিনা। তারপর বিল পে করতেই দ্যুতি বলল,”ভাইয়া ওটা সুন্দর নিশুর জন্য নাও।”
“লাগবে না।”
চুপসে গেল দ্যুতি।
“টাকা নেই?”
নীরব রইলো ধ্রুব। হাত ধরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এলো। দেখলো অনেক রকমের টেডিবিয়ার এবং আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার শোপিচ। এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট একদম পিচ্চু সাইজের একটা টেডিবিয়ার কিনলো। এতটাই ছোট্ট যে সাইড ব্যাগে করে সবসময়ই ক্যারি করা যাবে। বিল পে করতেই দ্যুতি বলল,”ভাইয়া ওটাও সুন্দর নিয়ে নাও।”
“না।”
“কেন?”
“এমনি।”
দ্যুতির মন মানলো না।
“ভাইয়া নিয়ে নাও প্লিজ।”
নিলো না ধ্রুব। হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। সেদিকে তাকিয়ে রইলো দ্যুতি। জীবনে তার দুটি আক্ষেপ থেকে গেল। তার ভাইয়েরা এমন কেন কিছু পছন্দ হলে কিনে দিতে চায় না। মেজভাইটাও এমন। তার পছন্দের জিনিস নিশুকে দিবে। মন খারাপ হলো। সোজা এয়ারপোর্টে এলো।
“কোথায় যাবো আমরা?”
“সিঙ্গাপুর।”
“আমার পাসপোর্ট?”
“নিয়েছি।”
“নিশুদের কাছে যাব না?”
“না।”
“ভাইয়া নিশু একা।”
“তোর মেজভাই আছে না?”
ভাইয়ের মুখের দিকে তাকায়।
“তুমি এখনও রেগে আছো।”
নীরব রইলো ধ্রুব। ওরা সরাসরি ফ্লাইটে দু’ঘন্টা বিশ মিনিটের মধ্যে চলে এলো। মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে ঢুকল দু’জন। বাবার কেবিনে যেতেই মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো দ্যুতি।
__
পরিচিত পুরুষালী বুনো সুবাস পেতেই ঘুম ভেঙে গেল নিশুর। চোখ মেলে চতুর্দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো নার্স ছাড়া কেউ নেই পাশে কিন্তু নিশু শিওর এই ঘ্রাণ ধ্রুবর। সে ভারী শ্বাসের শব্দ টেরও পেয়েছিল। পাশ ফিরতেই হঠাৎ চোখ পড়লো তার বাম হাতে একটি সোনার ব্রেসলেট চকচক করছে। চমকায় নিশু। কে পরিয়ে গেল দিলো তাকে? এটা তো শিওর কেউ একজন এসেছিল। আর পারফিউমের সুবাসটাও বলছে ধ্রুব এসেছে। আসলে না হয় এসেছে এত লুকোচুরির কী আছে কিন্তু এটা কে পরিয়ে দিলো? ডান হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো।
“সিস্টার এখানে কে এসেছিল?”
“কেউ আসেনি ম্যাম।”
“আপনি শিওর?”
“অবশ্যই।”
শুকনো ঢোক গিললো নিশু। রাতে যে গেল আর কারো দেখা পেলো না। তিন ভাইবোনের একজনকেও না। দ্যুতি কোথায় আছে কে জানে! বুশরার চেঁচামেচির স্বর শুনেছিল এরপর থেকে মেয়েটা গায়েব। কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সকালে দ্যুতিকে ছাড়া ব্রেকফাস্ট করেছিল। মেডিসিন নেওয়ার জন্যই বাধ্য হয়ে একটু খেতে হয়েছিল এখন লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে। অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। একটু তো বলে যাবে নাকি! তারও তো ভীষণ টেনশন হয়।
__
পুরোটাদিন অপেক্ষায় পার হয়ে গেল অথচ তিনজনের একজনও এলো না। একটা ফোনকলও না। বোরিং পার হচ্ছে পুরোটা দিন। আর সহ্য হচ্ছে না নিশুর। সারাটা জীবন তার হসপিটালের বেডে শুয়ে কেটেছে আর পারছে না। পুরোটা দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটলো দ্যুতির। নিশুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারলো না। কেবিনের টেলিফোন নাম্বারও নেই। ধূসরের কাছে ফোন দিলেও পারবে না বলে নিষেধ করে দিয়েছে। বুশরার ফোনে কয়েকবার কল দিয়েছিল কিন্তু পিক করেনি নিশু। মোবাইল কোথায় সেটাও জানে না দ্যুতি। নিশু কি দেখেনি ফোনটা! তাদের ফোনটা ভেঙে গিয়েছে দেশেই। সারাদিন ব্যস্ততায় পার হলো ধ্রুবর। তার বাবার অপারেশন করা হয়েছে। কত রকম কতকিছু ম্যানেজ করতে হয়েছে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে রাত ঘনিয়ে এলো।
__
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালো। কেঁদেকেটে খু’ন বুশরা। চোখ-মুখ ফুলিয়ে ঢোল। এয়ারপোর্ট থেকে চলে গেল সোজা সানফ্রান্সিসকো তাদের আলিশান প্রাসাদে। বাসায় ঢুকতেই ডোর খুললেন ফাহমিদা ইনায়াত মির্জা। বুশরাকে দেখতেই খুশি হয়ে গেলেন।
“বুশরা!”
ফুপির কোলে ঝাঁপ দিলো। একপলক তাকিয়ে রুমে ফিরে গেল ফরহাদ।
“চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন তোর?”
“তোমার ছেলে আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।”
“কেন?”
“জানি না।”
“যা হয়েছে থাক। অনিকের কথা জানিস কিছু?”
“ভাইয়া আইসিইউতে।”
“তোদের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে অনিক।”
“মানে?”
“অবস্থা ভালো নয়।”
হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বুশরা।
“আমি দেখতে যাবো। বলো কোন হসপিটালে এডমিট করেছে?”
“আচ্ছা আমিও যাবো আগে ফ্রেশ হয়ে নে।”
লাগেজ নিয়ে গেল সার্ভেন্ট। তার পিছু পিছু গেল বুশরাও। ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিলেন ফাহমিদা ইনায়াত মির্জা। বেস্ট চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনিককে। দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বেডের উপর বসে হেলান দিতেই চোখ ভেঙেচুরে এলো বুশরার। প্রায় ঘন্টাখানিক পর হঠাৎ কাঁধে স্পর্শ পেতেই নিভু নিভু চোখে তাকাতেই অপরিচিত কয়েকজন মহিলাকে দেখতেই চমকালো। কিছু বলার পূর্বেই ওকে জোর করে আঁটকে ধরে বউয়ের সাজে সাজিয়ে দিলো। পুরো ব্যপারটায় হতভম্ব হলো বুশরা। মানে কী! চেঁচাতে লাগলো সমানে। ওর চেঁচামেচি শুনতেই এগিয়ে এলো মা-ছেলে দু’জন।
“চেচাচ্ছিস কেন?”
“এইসব কী হচ্ছে আমার সঙ্গে?”
নীরব রইলেন তিনি। আকস্মিক হাত ধরে টেনে লিভিং স্পেসে নিয়ে গেল ফরহাদ। দেখলো কাজীসহ বেশ কয়েকজন লোক বসে আছে। বিস্ফোরিত হয়ে আতঙ্কিত হলো বুশরা। মানে কী!
“এইসব কী হচ্ছে?”
“বিয়ে।”
সোফায় বসাতেই উঠে গেল বুশরা।
“ফাজলামো করছো তোমরা?”
চোয়াল শক্ত করলো ফরহাদ। ভিডিও কলে তার বাবা-মাকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাঁরা কিছু বলছেন না। বুশরা বুঝতে পারে তার বাবার সম্মতিতেই হচ্ছে সব। বিয়ে পড়াতে লাগলেন কাজী। মেজাজ খারাপ হলো বুশরার। বেরিয়ে যেতে নিতেই পারলো না হাত চেপে ধরলো। ফণা তোলা সাপের মতো ফুঁসতে লাগলো বুশরা।
“ছাড়ো আমাকে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“কবুল বল।”
“মরে গেলেও বলবো না।”
চোয়াল চেপে ধরলো।
“বল।”
আর্তনাদ করলো বুশরা।
“মরে গেলেও না।”
কষিয়ে একটা থাপ্পড় মা’রতেই স্তব্ধ হয়ে গেল বুশরা। দাঁত-মুখ খিঁচে ফণা তোলা সাপের মতো তাকালো। আকস্মিক কর্ণার থেকে একটি কাঁচের শোপিস নিয়ে ফরহাদের মাথায় আঘাত করতেই কাঁচ ঢুকে গেল। মাথা চেপে ধরতেই ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। ওর পিছু নিলো ফরহাদ। এলোমোলো পায়ে দৌড়াতে লাগলো বুশরা। দৌড়াতে দৌড়াতে গোল্ডেন গেট ব্রিজের সামনে চলে এলো। প্রায় দু-হাত দূরত্ব তাদের মধ্যে। হাত বাড়িয়ে ধরতে নিতেই চেঁচিয়ে বলল,”মরে যাব তবুও অপছন্দের মানুষকে বিয়ে করবো না।”
আকস্মিক ঝাঁপ দিলো ব্রিজ থেকে।
______
চলবে~
রেসপন্স করবেন সবাই। কী হবে বুশরার?