#মায়াকুমারী ❤️
#মেহেরিন_আনজারা
#পর্বসংখ্যা-(৪৬)
___________________
তখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। সূর্যটা ব্রিজের একদিক থেকে সাগরে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। আকাশে কমলা,সোনালি আর হালকা বেগুনি রঙের খেলা। গোল্ডেন গেট ব্রিজের নিচে সমুদ্র তটে দাঁড়িয়ে রয়েছে জ্যাক,অলিভার এবং অ্যারোন। প্রায়ই ঘুরতে আসে তিন বন্ধু তেমনি আজও। মাঝেমধ্যে ধ্রুবও আসতো কিন্তু এখন ও নেই। হালকা কুয়াশা এসে জড়িয়ে ধরেছে চারপাশকে। সমুদ্রের গায়ে রৌদ্রের শেষ আলো চিকচিক করছে। নীরব হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো ওরা। হঠাৎ জ্যাক একটা পাথরের উপর বসলো। কেডস খুলে পা ছুঁইয়ে দিলো ঠান্ডা পানিতে।
“দোস্ত জানিস,আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমি ভাবতাম এই ব্রিজের নিচে স্বপ্ন জমা থাকে।”
অলিভার বলল,”স্বপ্ন?”
“হুম। যারা অনেক দূর যেতে চায় কিন্তু যেতে পারে না তাদের স্বপ্নগুলো নাকি এখানকার স্রোতে মিশে যায়।”
“তাহলে আমারও একটা স্বপ্ন এখানে রেখে যাবো আজ।”
অ্যারোন বলল,”কীসের?”
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ছিঁড়ে ছুঁড়ে দিলো পানির দিকে। ওরা দু’জন চুপ করে তাকিয়ে রইলো। ঢেউ এসে কাগজটা ভিজিয়ে নিয়ে গেল যেন স্বপ্নটা সাগরের গভীরে টেনে নিচ্ছে। হাওয়া বয়ে যায়,সিল্কি চুলগুলো উড়তে লাগলো আর সেই সন্ধ্যার আলোয় তাদের মুখে ফুটে উঠে এক অপূর্ব প্রশান্তি। হঠাৎই সেই শান্ত মুহূর্তের বুক চিরে ভেসে এলো এক বিভীষিকাময় শব্দ!
“ঝুপ!”
চমকে উঠলো ওরা। গোল্ডেন গেট ব্রিজের একদিক থেকে কেউ যেন স্রোতের বুক চিরে নিচে পড়েছে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে এক মুহূর্তের স্তব্ধতা,তারপর জল ছুঁয়ে উঠলো সাড়া জাগানো ঢেউয়ের শব্দ।
“কে! কে ছিল ও?”
একসাথে বলে চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করলো ওরা। ব্রিজের ওপরে একটা সাদা ওড়না বাতাসে উড়ছে,ধীরে ধীরে ভেসে ভেসে নিচে নামছে। ওদের ঠিক সামনে সমুদ্রের জলে।
“একটা মেয়ে ছিলো ঝাঁপ দিলো।”
কণ্ঠ কাঁপছিল অ্যারোনের। জ্যাক বলল,”ওহ নো! কিছু একটা করতে হবে!”
দৌড় দিতে শুরু করলো পানির দিকে। কিন্তু পানির মধ্যে এখন শুধু স্রোত,ঢেউ আর কিছু উড়ে আসা কুয়াশা। বুশরার কোনো চিহ্ন নেই। যেন মুহূর্তের মধ্যেই সাগর গিলে ফেলেছে তাকে। আর তখনই ওরা দেখতে পেলো একটা হাত জল থেকে একটু ওপরে উঠেছে তারপর আবার নিখোঁজ। ওরা জানে না সেই মেয়েটি কে,কী তার গল্প,কী ছিলো তার যন্ত্রণা কিন্তু সেই সাদা ওড়না তখনও বাতাসে উড়ছে,যেন রেখে গিয়েছে এক নিঃশব্দ আর্তনাদ। চোখ রাখলো পানির ঢেউয়ের ফাঁকে। অলিভার ৯১১-এ কল করলো কিন্তু তার চোখ দুটো সমুদ্রের দিকে। হঠাৎই দূরে অল্প দূরত্বে মাথা ভেসে ওঠলো বুশরার!
“ওই তো! ও দেখ!”
চিৎকার করে বলল জ্যাক। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে জলে ঝাঁপ দিলো। ঠান্ডা পানিতে শরীরটা কেঁপে উঠলেও লক্ষ্য রাখলো মেয়েটি এখনও বেঁচে আছে কিনা। অলিভার বলল,”তুই পারবি জ্যাক?”
জ্যাক সাঁতরে গিয়ে বুশরাকে ধরে ফেললো। বুশরা প্রায় নিস্তেজ,ঠোঁট নীল হয়ে আছে কিন্তু তার বুক উঠানামা করছে। সে বাঁচতে চায়,অন্তত শরীরটা তাই বলছে। এক হাতে তাকে ধরে ফিরতে শুরু করলো আরেক হাতে সাঁতরায়। ততক্ষণে ওরা আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা ডাল টেনে বাড়িয়ে দেয় পানির দিকে। দুই হাতে মেয়েটিকে টেনে তোলে তারা। মেয়েটি কাঁপছে,কাশি দিচ্ছে,গলায় জমে থাকা পানি উগড়ে দিচ্ছে। অলিভার তার শরীরের কোট জড়িয়ে দিলো আর জ্যাকের হাত তখনও তার পিঠে। ততক্ষণে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে চলে এলো। বুশরাকে নিয়ে যাওয়া হলো হসপিটালে। জ্ঞান ফিরলো না। ওরা পিক তুলে স্ক্যান করতে লাগলো ওর পরিচয়। হুট করে পিকচারসহ বেরিয়ে এলো নাম-পরিচয় সব। বুঝতে পারলো বাঙালি। হুট করে মনে পড়লো ধ্রুবর কথা। ধ্রুব নিশ্চয়ই মেয়েটিকে চিনবে। কল করলো তাকে। নিশুকে বুকে নিয়ে ধ্রুব তখন ঘুমাচ্ছিলো। বারবার ফোন ভাইব্রেট করতেই পিক করে ঘুমু ঘুমু গলায় বলল,”হ্যালো।”
“ধ্রুব একটা জরুরি সংবাদ আছে।”
“কী?”
“ইলহাম জাফরিন বুশরা নামের কাউকে চেনো?”
“না।”
“মনে করে দেখো।”
চোখ বোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক স্ক্যান করলো কিন্তু তেমন কারো কথা মনে পড়ছে না।
“না।”
একটা পিকচার পাঠালো। দেখলো হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছে বুশরা।
“কী হয়েছে ওর?”
“সু’ইসাইড এটেম্প।”
“ও মাই গড! কেন?”
“জানি না।”
“এখন?”
“সেন্স ফিরেনি।”
ভীষণ চিন্তা হলো ধ্রুবর। কী এমন হয়েছিলো যে বুশরা সু’ইসাইড এটেম্প করলো!
“পরিবারের কারো খোঁজ পেয়েছো?”
“না।”
ভীষণ চিন্তায় পড়লো।
“দোস্ত সম্ভব হলে তুমি তাড়াতাড়ি প্রাইভেট জেটে করে চলে আসো।”
“আচ্ছা বিষয়টি দেখছি।”
______
চলবে~