#মায়াবতীর সংসার
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৬
মিহান মায়াকে বিপ্রতীপের সাথে দেখে কিছুটা হতাশ হলো। সে মনে করলো মায়ার প্রেমিক হয়তো বিপ্রতীপ। তাই মিহান কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে মায়াকে অপমান করে বলল
“আমি চিন্তা করতেছিলাম ৬ টা বছর সিনগেল কী করে তুমি পার করলে? বিয়ে না করে একা জীবন কী করে পার করতেছো? জীবনে তো একা থাকা সহজ না। এ কঠিন কাজটা তুমি কী করে করতেছিলে সেটাই আমার ভাবনা ছিল। তার উপর আংকেল নাই অনেক বছর। শাসন করার মতো কেউ নেই। পুরো বাসায় তো একা রাজত্ব তোমার। রাজা বাদশারা রক্ষিতা রাখত। এখন তো সে আমল নেই। যুগ পাল্টেছে।।যুগের সাথে সাথে মানুষের রঙ ও পাল্টেছে। সে রঙে দেখতে হচ্ছে তুমি এখন ছেলে রক্ষিতা রাখা শুরু করেছো। কেন? তোমাকে বুঝি কেউ বিয়ে করে না? বিয়ে করার মুরোদ কী তোমার নাই? কেই বা করবে এমন নষ্টা মেয়েকে বিয়ে। আমাকে তুমি জিজ্ঞেস করতে না? তোমাকে কেন বিয়ে করিনি? তাহলে শুনো কেন বিয়ে করিনি…
আমার বি সি এস হওয়ার পর আমি রিয়েলাইজ করতে পেরেছিলাম। আমি আরও বেটার ডিজার্ভ করি। এ দেশে বি সি এস ক্যাডার ছেলেরা সোনার হরিণের মতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি চাইলেই বড়োলোক কোনো মেয়ে অথবা কোনো ডাক্তার ইন্জিনিয়ার পড়ুয়া মেয়ে বিয়ে করতে পারব। তোমার মতো আধভাঙ্গা কলেজে পড়ুয়া মেয়ে বিয়ে করার দরকার হবে না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার মতো মেয়ে আমি কোনোভাবেই ডিজার্ভ করিনি। তোমার প্রেমে পড়েছিলাম যখন আমার বিসিএস ছিল না তখন। তখনের জন্য তুমি ঠিক ছিলে। কিন্তু যোগ্যতা হওয়ার পর মনে হলো তোমার মতো মায়া আমার জীবনে হাজারটা পাব। সেজন্য তোমাকে ছেড়েও দিতে চেয়েছিলাম। কম অবহেলা করিনি। কিন্তু নাছোরবান্দা তুমি অবহেলাও বুঝতে না। অনেক বুঝানোর পরও আমি কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না তোমার জীবন থেকে আমাকে সরানোর। আর সে অবস্থায় যদি আমি বিয়ে করতাম তাহলে তুমি সরাসরি বিয়েতে এসে সিনক্রিয়েট করতে। তাই অনেক ভেবে তোমার সাথে এ নাটকটা করে তোমাকে শান্ত করতে হয়েছে। আমার বিয়ে তো তখনই ঠিক ছিল যখন তোমাকে আমি অবহেলা করা শুরু করেছিলাম । কিন্তু তোমার পাগলামির জন্য তোমার সাথে এত বড়ো নাটক করতে বাধ্য হয়েছি।
আর এখন ভেবেছি কেউ নেই তোমার জীবনে তাই একটু দয়া করতে এসেছিলাম। অনেক বছর একা ছিলে সেজন্য ভেবেছিলাম একটু একাকীত্ব গুচিয়ে দিই। আমার বউ তো বিদেশে। চাহিদা তো ছিলই আমার। ভাবলাম এখানে ঐখানে না গিয়ে তোমার কাছে আসি। অনুভূতিরও তো একটা ব্যাপার আছে তাই না। তোমার মতো মেয়েদের আমার বিছানায় নিতে চেয়েছি এটাই তোমার অনেক বড়ো পাওয়া। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বিছানায় যাওয়ায় গর্বের বিষয়। কিন্তু আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম তুমি তো ফকিন্নি। তোমার রুচিও হবে ফকিন্নির মতো। তাই তো দুই টাকার স্কুলে চাকুরি করে একটা ছেলের সাথে রাত কাটাচ্ছ।
শুনো মায়া…. না, আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম। না, আমি তোমাকে এখন ভালোবাসি। আমি কেবল তোমাকে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। তুমি আমার কাছে কেবল ভোগ্য পণ্যই। প্রেম করার সময় একটা আফসোস ছিল তোমাকে ভোগ করতে পারিনি। তাই এখন সেটা গুচাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো তারও যোগ্য না।”
মিহানের কথা শুনে মায়ার শরীর কাঁপছে। বিপ্রতীপের সামনে এত অপমান সে নিতে পারছে না। এত নোংরা কথার পৃষ্ঠে কোনো কিছু বলারও রুচি হচ্ছে না তার। সে কী বলবে এটাও সে বুঝতে পারছে না। এত নোংরা খেলার গুটি বানিয়ে রেখেছিল তাকে এটা ভাবতেও তার ঘৃনা লাগছে। শরীরটা কাঁপছে তার। সে শুধু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
বিপ্রতীপ বুঝতে পারল মিহানের সাথে মায়ার পরিচয় আরও অনেক বছর আগে থেকে। একটা সময় তাদের সম্পর্কও ছিল। সে সম্পর্কের রেশ ধরেই মায়া একাকীত্বে ভুগছে আর চুপচাপ থাকে সে। যোগ্যতার দাপটো মায়ার ভালোবাসা মিহানের চোখে পড়েনি। মিহান কেবল মায়াকে টিস্যুর মতো ব্যবহার করতে চেয়েছিল। সেটা সে পারেনি বলেই আজকে বিপ্রতীপের সাথে মায়াকে সে মানতে পারছে না। সে হয়তো চেয়েছিল মায়া তার জন্য আজীবন কেঁদে কুটে মরবে। এখন যেহেতু সেটা হচ্ছে না তাই সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। বিপ্রতীপের মনে হলো এ লোকটাকে যদি ছেড়ে দেয় সে তাহলে মায়াকে আরও অপমানের সুযোগ সে পেয়ে যাবে।
এদিকে মায়ার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়তে রাখল। মিহান মায়াকে কাঁদতে দেখে একটু হেসে যেতে নিল। যখনই মিহান যেতে নিয়ে পেছন ঘুরল। ঠিক তখনই বিপ্রতীপ মিহানের মুখ চেপে ধরল এক হাতে অন্য হাতে হাত দুটো চেপে ধরে রাস্তার পাশে রাখা তার গাড়িতে মিহানকে তুলে ড্রাইভার ডেকে বলল
“মফিজ….”
নামটা ডাকতেই গাড়ির ড্রাইভার বলে উঠল
“জি স্যার।”
বিপ্রতীপ হাসতে হাসতে বলল
“মফিজ থেকে মাফিয়া হয়ে যা তো। গাড়ির পেছন থেকে দঁড়ি নিয়ে শা/লারে বাঁধ। শা/লায় বেশি বেড়ে গেছে। শা/লার ক্যাডার/গিরি চুটিয়ে দিব।”
মফিজ দ্রূত গাড়ির পেছন থেকে দঁড়ি নিয়ে এসে মিহানকে বাঁধল। ঘটনার আকস্মিকতার ভয়ে মিহান শব্দ করারও সুযোগ পেল না।
এদিকে মায়া হা হয়ে ভাবছে বিপ্রতীপ এসব কী করছে। মায়ার হা হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে বিপ্রতীপ গাড়ি থেকে বলে উঠল
“এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে মশা ঢুকে যাবে মুখে। দ্রূত গাড়ির সামনে বসে পড়ুন ম্যাম।”
মায়া কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। সে বিপ্রতীপের কথায় গাড়ির ভেতরে সামনের সিটে বসলো। গাড়িটা চলছে। মায়া পেছনে ফিরে দেখল মিহানকে বেঁধে রেখেছে। বিপ্রতীপ পাশে বসে মিহানের কানের কাছে কোকা কোলা গান ছেড়ে মিহানকে শুনাচ্ছে। আর মিহানকে সেক্সি শিলা বলে সম্বোধন করে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে মারছে। হচ্ছেটা কী মায়ার মাথায় ঢুকছে না। সে নিজেকে সামলে বিপ্রতীপকে জিজ্ঞেস করল
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
বিপ্রতীপ নাচতে নাচতে বলল
“৩০০ ফিটের চিপায়।”
মায়া আর কথা বাড়াল না। চুপ করে বসে রইল। যতক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি চলল ততক্ষণ পর্যন্ত মিহানের কানে জোরে জোরে গান বাজিয়ে মিহানকে উত্যক্ত করছিল।
গাড়ি থামানোর পর বিপ্রতীপ মিহানকে নামিয়ে মুখের বাঁধন খুলে দিল।।তারপর মিহানের মুখটা ধরে গালটা মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“মারুন চড়। শা/লা কত বড়ো ক্যাডার দেখতেছি। এরে উচিত শিক্ষা দিয়ে ,এরপর ওর লুচ্চামির জন্য ওর চাকুরিতে টান দিব। আমাকে বলে কি’না দুই টাকার স্কুল মাস্টার। শালা, জানস আমি কে? আমি হলাম সে যে তোর জন্য মফিজকেও মাফিয়া বানিয়ে দিয়েছি।”
এরপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
“ম্যাম আপনি আবার আমাকে মাফিয়া ভাববেন না। মজা করে বলেছি। এবার ওকে চড়ান। জোরে জোরে চড়ান। যত রাগ আছে মেটান। পারলে জুতা খুলে জুতা পেটা করুন।”
মায়ারও মিহানের প্রতি একটা রাগ ছিল। এতদিনের ভালোবাসা আজ রাগ আর ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। মায়া পা থেকে জুতা নিয়ে মিহানের গাল বরাবর কয়েকটা লাগাল। এরপর থুথু দিয়ে বলল
“তোর মতো খবিশের কোনো যোগ্যতা নেই আমাকে বিয়ে করার। তোর মনেই নোংরা। এজন্য তোকে আল্লাহ আমার থেকে নিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে। তোর নামে আমি কমপ্লেইন করে আসব। তোর দেওয়া মেসেজগুলো তোর বউকে দেখিয়ে আসব। অসভ্য ইতর। নিজের চরিত্র যেমন সবার তেমন মনে করিস?”
এরপর মিহানের গালে থুথু দিয়ে বসে পড়ল সে। বিপ্রতীপ মিহানের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে বলল
“একটা দৌঁড় দিবি পেছন ফিরে তাকাবি না। তাকালেই তুই খতম হয়ে যাবি। মফিজ থেকে হয়ে উঠা মাফিয়া তোকে কামড়ে দিবে। মফিজের কামড়ের এতই পাওয়ার যে ১৪ টা কুত্তার ইনজেকশনও তোকেও বাঁচাতে পারবে না। আর তোর ঐটার পাওয়ার শেষ হয়ে যাবে। তখন হারবাল খেলেও শক্তি পাবি না। ফুট শালা।”
মিহান ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেল। সে এমন দৌঁড় দিল যে পেছন ফিরে আর তাকাল না। এদিকে বিপ্রতীপ মায়ার দিকে তাকাতে নিলেই লক্ষ্য করল মায়া সেখানে নেই। মায়াকে খুঁজতে গিয়ে সে লক্ষ্য করল….
চলবে।