মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-০৮

0
14

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_৮
🦋
ব্রেকফাস্ট করে নিজের গার্ডদের নিয়ে বের হবে রাজ।তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হচ্ছে।ড্রয়িং রুমে এসে হাতা গোটাতে গোটাতে রাজ বলে,”এক সপ্তাহের জন্য আমি টুরে যাচ্ছি।কাজ থেকে আপাতত ছুটিতে আছি।”

মিসেস মালিনী বললেন,”আমাদের তো আগে বলিসনি বাবা।”

“হঠাৎ করেই প্রোগ্রাম মা।”

জারা এসে দাঁড়ায় রাজের পাশে।রাজের ডান হাত ধরে বলে,”কিন্তু বেইবী আমি তো কাল এসেছি।তুমি আজকেই চলে যাবে।আমার খারাপ লাগছে তো।”(মন খারাপ করে)

রাজ জারার হাত ছাড়িয়ে বলে,”ওহহ জারা বেইবী আমিতো তোমার কথা ভুলেই গেছি।চিন্তা করো না বেইবী তোমার জন্য কক্স বাজার থেকে সেরা ফিডার নিয়ে আসবোনি।”

সিয়া হিয়া ও রুদ্র হাহা করে হেসে দেয়।মিলি জারার ভয়তে চুপ থাকে।তবে মিটমিট হাসতে থাকে।ঠিক তখনই সেখানে আসে পিয়াশ ও মৌ। মৌকে দেখে মিসেস সোনালী বলেন,”মৌও কি যাবে তোমাদের সাথে?”

“হ্যা,কেনো?”

“তাহলে জারা কেও নিয়ে যাও। বেচারীর পড়াশোনা মাত্র শেষ হলো।এখন যদি একটু ঘুরতে না পারে তাহলে ভালো লাগবে না তো।”

“ওহ কাম অন। পিয়াশ আর মৌ হানিমুন করবে। জারা কি করবে সেখানে?”

মিসেস মালিনী বলেন,”ওদের হানিমুনে তুমি কেনো যাচ্ছো?”

“আমি ওদের হানিমুনের বেস্ট ব্লগার হব।বাড়তি কথা ভালো লাগছে না।আমি গেলাম।”

বলেই সবাইকে বিদায় দিয়ে চলে যায় রাজ। জারা মন খারাপ করে থাকে।মিসেস সোনালী এসে জারার মাথায় হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলেন,”চিন্তা করিস না।রাজ ঘুরে আসুক তারপর তোর সাথে ধরে বেধে বিয়ে দেওয়ার কাজ করবো।এমন প্লান করবো যে রাজ তোকেই বিয়ে করবে। আর রাজের সম্পত্তিও তুই পাবি।”

জারা খুশি হয়ে যায় খালামণির কথায়।সাথে সাথে জারা জড়িয়ে ধরে মিসেস সোনালীকে।

~~
এয়ারপোর্টে মাত্র এসে পৌঁছেছে মায়া ও তার গার্ড।কাগজপত্র এবং সবকিছু চেকিং কমপ্লিট করিয়ে প্লেনে উঠলো মায়া।প্লেনে জানালার সিট নিয়েছে মায়া।আকাশ ছুঁতে না পারলেও মায়ার মনে হয় সে আকাশের গায়ে লেপ্টে আছে।কিছুক্ষণ বসার পর মায়া অনুভব করল তার সাথে কেউ বসেছে।কিন্তু মায়া তাকায় না।যে কেউই বসতে পারে।এর জন্য তাকানোর কোনো প্রয়োজন বোধ মায়া করেনি।

“দেশের স্বনামধন্য এক মন্ত্রী পাশে বসেছে।রেসপেক্ট বলেও তো কোনো ব্যাপার থাকে।এই জন্যই বুঝি স্টাররা সবসময় জনগণের থেকে দূরে থাকে।কাছে পাওয়ার চেষ্টা করলে পাত্তা দিতে চায় না।”

চেনা পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে মায়া তাকায় রাজের দিকে।রাজকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,”আপনি এখানে কেন?”

“আমার কোথায় থাকার কথা ছিলো?”

“পিছু নিচ্ছেন আমার?”

“কই না তো!পাশে বসে পিছু নিবো কিভাবে?”

“আপনি কেনো চট্টগ্রাম যাচ্ছেন?”

“আমি!ওহ হ্যা মনে পড়েছে।ওই যে দেখছো আমার এসিস্ট্যান্ট পিয়ু বেইবী।ওদের আজ থেকে হানিমুন ডে।তাই সবাই মিলে হানিমুন হলিডে পালন করছি।”(পিয়াশ ও মৌদের দিকে আঙুল দেখিয়ে।)

“ইয়ার্কি পেয়েছেন?হানিমুনে বর বউ যায়।সাথে মন্ত্রী মশাই না।”

“কি করবো বলো? পিয়ু বেইবী তো আমি ছাড়া কিছুই বুঝে না।তাই একসাথে আসা।তবে আমি কিন্তু ওদের রোমান্সের স্পেস দিয়েছি।এই যে আমি আমার রোমান্সের পার্টনার নিয়েছি আর পিয়ু বেইবী তার বউয়ের সাথে।”

“আমি আপনার পার্টনার না।”

“আমি কখন বললাম,যে তুমি আমার পার্টনার?আমার পার্টনার তো আমি ঠিক করেছি।”

“কোথায় সে?”

“ঠিক জায়গাতে আছে।”

মায়া আর কথা বাড়ালো না।রাজের উত্তরগুলো ত্যারা ভাবে থাকে।এর সাথে কথা বলা বেকার।কিছুক্ষণ পর একজন বিমান বালা এসে রাজ ও মায়ার সামনে খাবার রাখে।তারপর সে চলে যায়।মায়া একটি সাব সেন্ডুইস নিয়ে এক বাইট নেওয়ার জন্য সেন্ডুইস গালে ঢোকায় ওমনি রাজ মায়ার হাত আটকে ধরে।মায়া সেন্ডুইস গালে অবস্থাতেই রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাজ পিছনে তাকিয়ে সবাইকে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ কর।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন একটু প্রেম করবে।”

সাথে সাথে সবাই চোখ বন্ধ করে নেয়।রাজ সবাইকে চোখ বন্ধ করতে দেখে মায়ার তিন ইঞ্চি লম্বা সেন্ডুইস এর শেষ অংশ থেকে এক বাইট নিয়ে নিজে খায়।সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে যায় মায়ার।রাজের ঠোঁটে কিছুটা মেয়োনিজ লেগে থাকে।টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে রাজ বলে,”জার্নি পথে হবু বউয়ের মুখের খাবার খেলাম।মজাই আলাদা।”

পিয়াশ প্লেনে ঢোকার পর মায়াকে দেখে সে এমনিতেই থ হয়ে গেছে।সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বলাতে পিয়াশের চোখ আরো বড় হয়ে যায়।রাজের এই সেন্ডুইস খাওয়া দেখে পিয়াশ নিজেও হা হয়ে যায়।

মৌ পিয়াশকে খোঁচা মেরে বলে,”এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

মৌয়ের কানে ফিসফিস করে পিয়াশ বলে,”হানিমুন আমরা করছি আর প্রী হানিমুন আমার বস করছে।”

মৌ চোখ গরম করে বলে,”লজ্জা করে না বসের প্রেম দেখতে?নিজে তো প্রেমের প বুঝো না।কিছু তো শিখতে পারো।”

মায়া মুখ থেকে সেন্ডুইস বের করে বলে,”কে হবু বউ?আমি কি একবারও বলেছি আমি আপনার হবু বউ?”

“তারমানে তুমি আমার বর্তমান বউ?”

“কিভাবে?”

“মনে মনে।আমি তো তোমাকে সেদিনই কবুল করে নিয়েছি মায়াবতী,যেদিন তোমার মায়া মাখা মুখটি আমার হৃদয়ের খাচায় বাঁধিয়ে রেখেছি।”

“আমি তো বলিনি এমন কিছু করুন।আমার কোন কাজে আপনার মনে হয় যে আমি আপনাকে ভালোবাসি?”

“আমার কি মনে হয় না হয় এটা বড় কথা নয় ,বড় কথা এটাই যে তুমি হবে আমার রাজ্যের রানি আমার মায়াবতী।যদি আমার এ যাত্রায় মৃত্যু হয় তবে হবে না আমাদের মিলন।কিন্তু আমি যদি বেচে থাকি এই শাহমীর রাজ তোমাকে হতে দিবে না অন্য কারোর।”

“আপনার দিনে জেগে দেখা সপ্ন কখনও হবে পূরণ মন্ত্রী মশাই।এই মায়া যে অন্যের।”

“যদি বলি মানুষ তুমি চিন্তে পারোনি?”

ভ্রু কুচকে মায়া তাকায় রাজের দিকে।কি বোঝাতে চায় রাজ?

মায়া রাজের দিকে ফিরে রাজকে প্রশ্ন করে,”আপনি এত টক্সিক কেন মন্ত্রী মশাই?”

“কে বলে কার কথা!তুমি নিজেও তো একজন টক্সিক।আমার থেকেও ভয়ংকর আমার মায়াবতী।তবে সে যতই টক্সিক হোক আমার সাথে পেরে উঠবে না।”

কিছুক্ষণ থেমে রাজ পিছনে তাকিয়ে পিয়াশকে বলে,”পিয়ু বেইবী!তুমি কিন্তু চোখ বন্ধ করনি।তোমার শাস্তি আছে।”

পিয়াশ শুকনো ঢোক গিলতে থাকে। মৌ হেসে দেয় রাজের কথা শুনে।মায়া নিজের আনমনেই হেসে দেয় রাজের এই অদ্ভুত শাস্তির কথা শুনে।

মৌ বলে,”একদম ঠিক হয়েছে।মনগড়া কাজ করনা তুমি।আমার বাবা মায়ের কথা তো শুনোনি।এখন বসের কথা মন দিয়ে শুনছো না।”

মায়ার হাসি দেখে রাজ বলে,”এভাবে হাসতে নেই মায়াবতী।সোজা বুকে এসে লাগে আমার অনুভূতিতে।”

~~~
আপাতত কলেজ নেই।শুধু কোচিং করে হিয়া।বিকাল বেলা নিজের কোচিংয়ের জন্য তৈরি হয়ে বের হয়।সিয়ার কোচিং অন্য দিকে।রাস্তায় একা একা হাঁটতে থাকে হিয়া।হাঁটতে তার খুব ভালো লাগে।বই পড়ে পড়ে কিছু প্রাকিতিক বিষয়ের প্রতি তার নেশা মিশ্রিত হয়েছে।বইতে পড়েছে রাস্তায় হাঁটতে থাকলে প্রকৃতির সাথে প্রেম হয়।এই প্রেম দিবে তোমাকে সুখ শান্তি ও আরাম।কিন্তু কোনো মেয়ে যদি ছেলের প্রেমে অথবা ছেলে যদি মেয়ের প্রেমে পড়ে তাহলে তুমি পাবে না সুখ শান্তি আরাম।তোমার ব্রেনে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তারা বিচরণ করবে।প্রিয় মানুষটি চোখের আড়াল হলেই তোমার চোখের নিচে দেখা দিবে একরাশ কালো মেঘ। যার আংশিক চিহ্ন থাকবে তোমার চোখে।এগুলো হিয়ার মনে খুব ভালো মত গেঁথে গেছে।

আনমনে গুনগুন করতে করতে হাটা হিয়ার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে।গাড়িটি থেকে বের হয় এক যুবক।তাকে দেখার সাথে সাথেই হিয়া বলে,”আপনি?”

চলবে…?