মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-২২+২৩

0
15

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২২
#ইশরাত_জাহান
🦋
মায়া ভ্রু কুচকে বলে,”ফিসফিস করে কি বলছেন?”

রাজ মায়ার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,”তোমার আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছে। চলো লক্ষ্মী মেয়ের মতো করে বিয়ে করে ফেলো।”

“বিয়ে কি হাতের ময়লা?যে ফু দিবো আর হয়ে যাবে।”

“নাহ,বিয়ে ময়লা হবে কেনো?বিয়ে হলো তোমার আমার সংসারের সূচনা।”

“শাট আপ।”

“ওকে অনেক হয়েছে।এই কাজী বিয়ে পড়াও।নাহলে পিছনে আমার লোকেরা তো আছেই।”

“আরে এই কাজী।পিছনে লোক আছে তো কি হয়েছে?সামনে কিন্তু আমিও আছি।”
কাজীর দিকে গুলি তাক করে বলে মায়া।রেজিষ্টার বেচে গেছে।বিয়েতে কবুল না বললে তো আর শুধু শুধু রেজিষ্টার হবে না।তাই কিছু হলে আগে কাজীর উপর দিয়ে যাবে।কাজী হাসফাস করে বলে,”এটা কেমন বিচার?বিয়ে দিলে পাত্রী আমাকে খুন করবে আর বিয়ে না দিলে পাত্র আমাকে খুন করবে।বলি আমি কি অপরাধ করেছি?”

রাজ নিজের থুতনিতে হাত দিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আসলেই তো।তুমি কাজী হলে একটা পাজী।তিনটে বিয়ে করেও বেঁচে থাকার আগ্রহ আছে তোমার।তোমার বউ তো মনে হয় না এখনও তোমার সম্পত্তি তার নামে করেছে।”

“আজ্ঞে না।আমি মৃত্যুর আগে আমার সম্পত্তি আমার সন্তান ও স্ত্রীর নামে করে দিতে চাই।”

“আচ্ছা তাহলে আমার টার্গেট আপনি না।আমার টার্গেট অন্যকেউ।”

রেজিষ্টার ভয় পেয়ে যায়।শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আমার ছেলে বিদেশে পড়তে চায়।তার অনেক স্বপ্ন।বউ আমার এমনি রাগ করে বাপের বাড়ি যাইতে থাকে।এখন যদি মরে যাই ছেলেটা অনাথ হয়ে যাবে।”

রাজ দাবর দিয়ে বলে,”আরে ধুর!আমি কি আপনাদের কথা বলেছি।আমি তো বলছি অন্য কারো কথা। যাকে নিজের কব্জায় রাখলে মায়াবতী আমাকে বিয়ে করবে।”

মায়া তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে। কার কথা বলছে রাজ?রাজ হালকা হেসে তার ফোন বের করে ভিডিও কল দেয়।ওপাশ থেকে ভাল রিসিভ করতেই ভেসে আসে হাসির মুখ।হাসিকে বেধে রাখা হয়েছে।হাসির পাশে দুজন গার্ড গুলি ধরে আছে।হাসির গায়ের দিকে তাকিয়ে আতকে ওঠে মায়া।হাসির গায়ে বোম জড়ানো।মায়া সাথে সাথে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”এটা কি ধরনের কাজ?আপনি আমার মাকে কেনো আটকে রেখেছেন?”

“বেশি কিছু না।বিয়ে করার জন্য।বউ না করছে তো তাই তাকে রাজী করানোর একটা কৌশল।”

“বাড়াবাড়ি করছেন আপনি।মায়ের যদি কিছু হয়ে যায় আমি আপনাকে ছাড়বো না।”

“রিলাক্স মায়াবতী।আমি আমার শাশুড়িকে কিছু করবো না।কিন্তু যে আমার শাশুড়ি হতে পারছে না তাকে বাঁচিয়ে কেনো রাখবো?”

“আমাকে মেরে ফেলুন আপনি।কিন্তু আমার মাকে ছেড়ে দিন।আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।”

“অনুরোধ না বিয়ে।বিয়ে করো আমাকে ছেড়ে দিবো আমার শাশুড়ি মাকে।”

মায়া হাসির শরীরে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে।এটা নকল বোম না।কারণ বোমের গায়ে রেড লাইট স্পষ্ট।যদি রাজ একবার রিমোট ক্লিক করে বোম ব্লাস্ট হবে।বাধ্য হয়ে মায়া বলে,”আমি রাজি বিয়ে করতে।”

রাজ ফিচেল হেসে বলে,”আব্বে কাজী হয়ে গেছে আমার বউ রাজী।”

কাজী মায়া ও রাজ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”কন্যাকে সাজিয়ে আনবেন না!এভাবে গেঞ্জি আর জিন্স পরে বিয়ে করবে?”

“আমার মায়াবতী বলে কথা।একটু ভিন্ন স্টাইলে বিয়েটা তো করবেই।বউ সাজ পরে হবে।কেনো আপনার আপত্তি আছে নাকি আমার বউ বউ সাজেনি বলে।”

“না বাবা।আমার আর কি।আমি শুধু তোমাদের বিয়ে দিয়ে বিদায় নিবো।”

অবশেষে মায়ার সম্মতি পেয়ে ভিডিও কল থাকা অবস্থায় রাজ ও মায়া কবুল বলে বিয়ে করে নেয়।তারপর রেজিষ্টার তার কাগজপত্র নিয়ে বলে,”সই করে দিন।”

মায়া তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।বলে,”এক রাতে কাগজ রেডি কিভাবে?”

“কাগজ আগেই রেডি ছিলো।শুধু সময়টা এমন হওয়ার কথা ছিলো না।কিন্তু তুমি তো দুষ্টু।কথা শুনতে চাওনা।তাই বাধ্য হয়ে মর্নিং ম্যারেজ করে ফেললাম।”

মায়া সই করে দেয় রেজিস্ট্রি কাগজে।পরিপূর্ণ হয় মায়া ও রাজের বিয়ে। পিয়াশ এসে জড়িয়ে ধরে রাজকে।বলে,”কংগ্রাচুলেশন বস।”
বলেই মিষ্টি খাইয়ে দিতে থাকে সবাইকে।সবাই মিষ্টি মুখ করছে।কাজীর হাতেও মিষ্টি দেওয়া হয়।মিষ্টি হাতে নিয়ে কাজী বলে,”যাক শেষমেশ গোলাগুলির থেকে রক্ষা পেয়ে মিষ্টি পাচ্ছি।”

মায়ার বাড়িতে এসেছে মায়া ও রাজ।মৌকেও নিয়ে এসেছে পিয়াশ।মায়াকে বউ সাজিয়ে দেওয়া হবে।।মায়ার ঘরে বসে মায়াকে তৈরি করে দিচ্ছে হাসি ও মৌ।হাসিকে সাথে সাথেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।বউ সাজাতে সাজাতে হাসি বলে ওঠে,”তো এখন কি করবে?তোমার প্লান তো সাকসেস হলো।”

বউ সাজে লাল লেহেঙ্গা পরা মায়া আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে।সাথে সাথে মুখে ফুটিয়ে ওঠে ডেভিল হাসি।বলে,”সরদার বাড়ির বড় মেয়ে আজ এন্ট্রি নিবে সরদার বাড়ির বড় বউ হয়ে।সরদার বাড়ির বউ হওয়ার নেশা আমার একটা কারণেই লেগে আছে। আর তা হলো আমার মন্ত্রী মশাই।এই মায়া যা চায় তাই পায়।আজ মন্ত্রী মশাইকেও হাসিল করেছি।”

মৌ মায়ার কাধে হাত রেখে বলে,”তোমার ভালোবাসাকে তোমার করেছো।আমি তো আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি রাজ ভাই সরি জিজুকে ভালোবাসো।কিন্তু তুমি যে হার্ড আমি ভাবছিলাম আমি ভুল।এখন দেখি না আমি আমার বোনকে চিনতে পেরেছি।”

মৌকে জড়িয়ে ধরে মায়া বলে,”মন্ত্রীর প্রেমে তো আমি সেই আগেই পড়েছিলাম।যখন সে বাংলাদেশে ব্যাক করে।কিন্তু বোন আমার আমি ওই বাড়ির বউ হয়ে যেতে চাইনি এত তাড়াতাড়ি।আমি ভেবেছিলাম মোহন সরদার আর মালিনী সরদারকে প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে তারপর আমার মন্ত্রী মশাইকে আমার করে নিবো।সে না চাইলেও সে মায়ার সাথে জড়িয়ে যাবে।কিন্তু ভাগ্য আমার যে অন্যকিছু ছিলো।মন্ত্রী মশাই নিজেও আমাতে ফেসে আছে। আর ওদিকে দূরে থেকে আমি ওদের বরবাদ করতে পারছি না।কিছু একটা করতে গেলেই আমার ভালোবাসা আমার পথের কাটা হয়ে আসছিলো।এখন আমি আমার ভালোবাসাকে আমার হাতের মুঠোয় রেখে সরদার বাড়িতে আমার কাজ হাসিল করবো।তাই তো আমি মিহির ভাইকে নিয়ে অভিনয় করেছি। যাতে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়।ওই মোহন সরদার এদিক ওদিক আইয়াশি করবে আর আমি দূরে থেকে দেখবো?এটা তো হতে পারে না।আমি এবার ক্লান্ত।ওদিকে জারা তো আছেই।পথের এই কাটা কিছু করার আগে মন্ত্রীর জীবনে নিজের জায়গা ছলে বলে করে নিলাম।কেউ বুঝতেও পারবে না আমি কে আর কি চাই।সবাই জানবে আমি হাসি মায়ের মেয়ে। আর আমাকে মন্ত্রী মশাই জোর করে বিয়ে করেছে।”

মৌ কিছু একটা ভেবে বলে,”কিন্তু আপু!জিজু যখন জানতে পারবে যে তোমার উদ্দেশ্য তাকে পাওয়া। আর তার সাথে তুমি প্রতিশোধ নিতে এসব নাটক করেছো।এই কক্স বাজার টুর প্লানিং আবার সেখানে যাওয়ার আগে ওই রেপিস্টদের ইনফর্ম করে রাখা।এগুলো জানলে তো জিজু তোমাকে সন্দেহ করবে।”

“জানতে দিবো না আমি তাকে।যে আসবে আমার পথের কাটা হতে আমি তাকে উপ্রে ফেলে দিবো। রেপিস্টের বাবা আমাকে এমনিতেই খুঁজছিলো আমার ক্ষতি করার জন্য।শুধু আমি টেকনিক্যালি আমার লোকদের দ্বারা ওদের কাছে ইনফর্ম করে দেই।নিজে এমন ভাবে চলি যাতে ওরা জানতে না পারে যে আমি জানি ওরা আমাদের ফলো করে। আর সে ফিরে এসেছে বোন।এবার কোনো অঘটন করার আগে আমি নিজে থেকে প্রস্তুত থাকবো।তাছাড়া আমি তো আমার বরকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছি।এখানে ভুল তো কিছু নেই। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার।”

বলেই হেসে দেয় মায়া মৌ ও হাসি। হ্যা মায়ার সাথে রাজের আগেও একবার বিয়ে হয়।এটা মায়া জানতে পারে তার আঠারো বছর বয়সের দিকে।

এদিকে,
মায়ার বাড়ির বড় হলরুমে বসে আছে পিয়াশ ও রাজ।মাহমুদ সরদারকে কল করছে রাজ।মাহমুদ সরদার রিসিভ করতেই রাজ ডেভিল হেসে বলে,”তোমার বউমা এখন প্রপার আমার হয়েছে বাবা।”

মাহমুদ সরদার গাড়িতে ছিলেন।ঢাকার দিকেই রওনা দিয়েছেন।গাড়িতে থাকতেই খুশির খবর পেয়ে লাফিয়ে উঠে বলেন,”ইয়েস।আমার ঘরের লক্ষ্মী আসতে চলেছে।এটাই তো আমার চাওয়া। এট লাস্ট আমার আর শাহানার সপ্ন পূরণ হবে।সাথে পাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মায়াবতীকে।”

রাজ ফিচেল হেসে বলে,”যদিও বুঝতে পারছি না মায়াবতী তাড়াহুড়া করলো কেনো?তবে ওর পাতানো ফাঁদ বুঝতে পেরেই আমি ওর ইচ্ছাকে পূরণ করলাম।কারণ আমিই তো পুরণ করতে চাই আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।”

মাহমুদ সরদার বলেন,”আমি ঢাকা আসছি।তুমি মোহ মা না না মায়া মাকে নিয়ে আসো।বাকি রহস্যের ভেদ পরে করা যাবে।এখন তোমাদের সুখের দিন আসতে চলেছে।আমার ছোট বোন রুপি মানুষটির পাশে থাকতে পারিনি।কিন্তু আড়ালে তো মায়াকে আগলে রেখেছি।মেয়েটা নাই জানুক যে তার বড় বাবা তার আড়ালে তার খোঁজ রেখেছে।কিন্তু আমি তো জানি আমরা ওদের জন্য পথ চেয়েছিলাম।”

“রাখছি বাবা।তোমার রাগিণী বউমার ওয়েলকাম করে রাখো।”

“বাই।”
বলেই কল কেটে দিলো মাহমুদ সরদার।আজ তার খুব আনন্দ।তার বাবা মানে মায়া ও রাজের দাদা চেয়েছিলো মায়া রাজের বিয়ে দিতে।ওই সময় মায়ার জন্মের পর পরই বিয়ে দিয়ে দেয় মায়া ও রাজকে।রাজ তখন এগারো বছরের আর মায়া কোলের শিশু।শাহানা পারভীন ও মাহমুদ সরদার সাক্ষী থেকে দিয়েছিলেন এই বিয়ে।মাহমুদ সরদারের বাবা তখন বলেছিলেন,”আমার মায়া ও রাজ এই দুজনের জুটি হবে মায়ারাজ।সরদার বংশে পরবর্তী রাজত্ব চালাবে এই মায়ারাজ।”

মাহমুদ সরদার বলতেন,”কিন্তু বাবা ওর নাম তো মোহনা সরদার।মায়া কেনো বলো?”

“কারণ আমার মোহ দিদিভাইয়ের ভিতর মায়া দেখতে পাই।তোমরা ওকে মোহনা বলেই ডেকো আমার আপত্তি নেই।কিন্তু আমার কাছে ও মায়া।”

রাজ নিজেও তখন তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখের দিকে।শাহানা পারভীন একবার মায়াকে কোলে নিয়ে বলছেনিলেন,”আমার মায়াবতী মা।”

রাজের মনে ভালো লাগতে থাকে এই নাম।সেও সাথে সাথে আওড়ায়,”মায়াবতী মায়াবতী মায়াবতী।”

ওদের বাল্যবিবাহের কিছুদিন পরই রাজ চলে যায় বিদেশে।কিন্তু রাজ যাওয়ার আগে মাহমুদ সরদার ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতেন,”তোমার অর্ধাঙ্গিনী কিন্তু এখানে আছে বাবা।জানি ছোট বয়সে বিয়ে দিয়েছি তোমাকে।কিন্তু বাবার মৃত্যুশয্যায় আমি বিয়ে না দিয়ে পারলাম না।তুমি পড়াশোনা করে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে এসো।বাবাকে যদি মন থেকে ভালোবেসে থাকো তো মাথায় রাখবে তোমার জীবনের সাথে একটি সম্পর্ক জড়িত। মোহ মাকে আমরা দেখে রাখবো।কিন্তু তুমি নিজেকে ঠিক রাখবে।”

রাজ আশ্বস্ত করে বলে,”আমি কোনো খারাপ কাজ করবো না বাবা।আমি পড়াশোনা করে অনেক বড় হবো।তারপর আবার মায়াবতীকে আমার করে নিবো।”

মাহমুদ সরদার খুশি হন ছেলের কথায়।মাহমুদ সরদারের বাবা তিনবার স্ট্রোক করেছিলেন।তাই তাকে কষ্ট না দেওয়ার জন্যএই বিয়ে।লাস্ট স্ট্রোক করলে তিনি মারা যাবেন এমনটা ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন।তাছাড়া মাহমুদ সরদার ও শাহানা পারভীন এই বিয়েতে খুশি ছিলেন।দাদা ও বাবার প্রতি অঢেল ভালোবাসা থাকায় রাজ তখন খুশি খুশি মেনে নেয় বিয়ে।রাজ তার দাদা ও বাবার প্রতি আলাদাভাবে দুর্বল।মাহমুদ সরদার যা বলেন তাই করে রাজ আবার রাজ যা চায় মাহমুদ সরদার পূরণ করতেন।এছাড়া রাজের ছোটবেলায় মায়ের কোল কম পেয়েছে বরং শাহানা পারভীনের কোল বেশি পেয়েছে।শাহানা পারভীন রাজের জন্য টিফিন করে দেওয়া রাজকে হোম ওয়ার্ক করে দেওয়া আরো ভিন্ন বিষয়ে যত্ন নিতেন। ছোট মা বলতে অজ্ঞান ছিলো রাজ।

পিয়াশ রাজের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”কিন্তু বস ম্যাম তো আপনাকে বিয়ে করেছে প্রতিশোধ পূরণ করতে।তাহলে আপনি কি পেলেন এই ভালোবাসায়?”

“মায়াবতীর জীবনে ভালোবাসার জায়গা আমি গড়ে নিবো পিয়াশ।আমার মায়াবতীর জীবনে একটাই নাম।সে হলো শাহমীর রাজ।আমার মায়াবতী জানতে পারবে না তার মন্ত্রী মশাই তার সবকিছুই জানে। আর সেই সবকিছু ঠিক করে দিবে।”

“কিন্তু আপনার ছোট মা।উনি কোথায়?”

“এটা একমাত্র মায়াবতী জানে।মৌ নিজেও জানে না কিছু।শুধু সময়ের অপেক্ষা।কি হয়েছিলো সেই রাতে?জানতে হবে আমাদের।”

“কিন্তু বস ম্যাম তো প্রতিশোধ অন্যভাবে নিতে থাকে।ওনার প্ল্যান মোতাবেক আপনি বলেছিলেন আমরা আপাতত বিয়ের বিষয়টা স্কিপ রাখবো।তাহলে ম্যাম এখন কেনোই বা বিয়েটা করতে চাইলো।মোহন সরদারকে বরবাদ করতে তো আপনি নিজেই ম্যামকে হেল্প করতে চান।তাহলে আর কি হতে পারে?”

“জানি না পিয়াশ।কিছু একটা তো গভীরে আছে।যেটা মায়াবতী একা জানে।কেনো এই বিয়ে করার তাড়াহুড়া এটা জানতে চাই আমিও।কিন্তু মায়াবতী কখনই নিজে থেকে আমাকে কিছু বলবে না।সে তো তার মর্জিতে চলে।একা লড়াই করতে চায়।”

বলেই একটু দীর্ঘশ্বাস নিলো রাজ।সাথে সাথে উপর থেকে হাসির আওয়াজ আসতে থাকে।মৌ হাসতে হাসতে নিয়ে আসছে মায়াকে।রাজ সিড়ির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মায়াবতী আজ লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে। গলায় একটি বড় নেকলেস কপালে টিপ হাতে রুলীসহ কিছু চুরি।কোনো মেকআপের চিহ্ন নেই।মায়া নিজেই সাজতে পছন্দ করে না।সে এতটাই ফর্সা যে সে নিজেই কষ্ট পায়।কেনো সে তার মায়ের চামড়ার রং পেলো না।মোহন সরদারের রং পাওয়াতে মায়ার মধ্যে ক্ষোভ কাজ করে।

মায়া নিচে নামতে থাকে।রাজ এসে এক হাত বাড়িয়ে দেয় মায়ার দিকে।মায়া রাজের হাতের উপর হাত রেখে বের হতে থাকে সরদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
সিয়া হিয়া পরীক্ষা দিয়ে এসেছে থেকে সোফায় বসে আছে।বিরক্ত লাগছে আবার চিন্তাও বাড়ছে।রুদ্র আরামের ভঙ্গিতে আছে। জারা ও মিলি বসে বসে দেখতে থাকে।মালিনী সোনালীর কাছে বসে শান্তনা দিচ্ছে।সোনালী হাইপার হয়ে উঠেছে। কাল রাতে মোহন সরদার বাসায় আসেনি।কাল রাতে না আসলেও চিন্তা হয় না কিন্তু সারাদিনে একবারও কল রিসিভ করছে না কেনো?লোকটা কোথায় কি করছে বুঝতে পারছে না সোনালী।ঘণ্টা তিন চার ধরেই এই নাটক দেখছে সিয়া ও হিয়া।পরীক্ষা দিয়ে এসে একটু খেতেও পারেনি।এখন খাবার এনে দিলো সার্ভেন্ট।এর আগেও এনে দিয়েছিলো কিন্তু চিন্তায় খাওয়া দাওয়া হয়নি।এখন সোনালীর নাটকের কান্না শুরু।এদিকে তার ছেলে মেয়েদের বাবা হারানোর শোক নেই।মিলি একটু চিন্তিত থাকলেও রুদ্র ফুল রিলাক্স।তাহলে তারা কেনো না খেয়ে থাকবে?পরীক্ষার সময় এসব ঝামেলা নিয়ে থাকলে নিজেদের সপ্ন পূরণ হবে না।

রুদ্র একটা বড় হামি দিয়ে বলে,”চিন্তা করো না মম। ড্যাড তোমার জন্য সতীন আনতে যায়নি।তুমি যার সতীন হয়ে এসেছিলে সেও নেই। ড্যাড যেখানেই থাকুক তোমাকে ছাড়া একটু রিল্যাক্স আছে।”

ছেলের এমন কথায় ক্ষেপে গেল সোনালী।এই মানুষ করেছে তাকে।একটু ভালোবাসা বা দয়া দেখায় না।সিয়া হিয়া ও মিলি কিছু বুঝে না।মালিনী বলেন,”ছিঃ বাবা।বাবা মাকে নিয়ে এসব বলতে নেই।”

“সেই দুপুরে খেতে এসেছি।এখন সন্ধার আযান দিবে কিন্তু খাবার কি খেতে পেরেছি?বাবার এসিস্ট্যান্টকে কল দিয়ে তো শুনতে পারো।”

“দিয়েছি কল।কেউ ধরছে না।”

“তাহলে এক কাজ করা যাক।মিসিং ডায়েরি করি।মোহন সরদার কাল রাত থেকে হারিয়ে গেছে।মন্ত্রীর বাড়িতে বসবাসরত বুড়ো লোককে কেউ কিডন্যাপ করেছে বলে ধারণা করা হয়।আসামি হতে পারে কোনো বিরোধী দল।”

“শাট আপ,রুদ্র।”
চিল্লিয়ে বলেন সোনালী।হিয়া বিড়বিড় করে সিয়ার কানে কানে বলে,”বাবা যেমন তার ছেলেও তেমন।”

রুদ্র হিয়ার মুখের পাশে ফু দিলো।হিয়ার ছেড়ে দেওয়া চুল উড়ে মুখের সামনে চলে আসে।ফলস্বরূপ হিয়া তাকিয়ে থাকে রুদ্রের দিকে।রুদ্র চোখ টিপ দিয়ে বলে,”ড্যাড এর মতো বউ থুয়ে ফুর্তি করার মতো ভুল করবো না আমি। আর হ্যাঁ আমার সাথে ড্যাডের একটু ফারাক আছে।সময় আসলে জানতে পারবি।”

হিয়া মুখ ভেংচি দেয়।অতঃপর খাওয়ায় মন দিতে থাকে।মাহমুদ সরদার বাড়িতে এসেছেন মাত্র।ঢুকেই দেখলেন বাড়িটি পুরো মরা বাড়ির মত নিরিবিলি।ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে সিয়া হিয়া রুদ্র ও মিলি।সোফায় বসে কান্না করতে থাকে সোনালী।তার দুই পাশে শান্তনা বাণী দিচ্ছে মালিনী ও জারা।ভ্রু কুচকে মাহমুদ সরদার বলেন,”কি হয়েছে?”

মালিনী দৌড়ে এসে দাঁড়ায় মাহমুদ সরদারের পাশে।বলেন,”ছোট ভাইকে কাল থেকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।এদিকে তার এসিস্ট্যান্টকেও কল করে পাচ্ছি না।অফিসে যেয়ে দেখা যায় অফিস বন্ধ। বড় একটা তালা ঝুলিয়ে রাখা।কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো।”

মাহমুদ সরদার অপ্রকাশ্যে হেসে দিলেন।মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ্যে বলেন,”চিন্তা করার কিছু নেই।হয়তো অফিস বন্ধ রেখে বাইরে ঘুরতে গেছে।তোমাদের সাথে কথা বলতে চায় না তাই সবকিছু বন্ধ রেখেছে।”
আসলে মাহমুদ সরদারের কাছে কল এসেছিলো মোহন সরদারকে এরেস্ট করা নিয়ে।কিন্তু সে এবার না জানার ভান করেই থাকছেন।প্রকাশ্যে অনেক সাহায্য করেছেন।কিন্তু অপ্রকাশ্যে সেও চায় মোহন সরদার শাস্তি পাক।বাবা মেয়ের এই লড়াইয়ে এবার তিনি ঢুকতে চান না।তাই কথা ঘুরিয়ে দিলেন।

একজন সার্ভেন্ট ডেকে মাহমুদ সরদার কিছু কথা বলছিলেন।মালিনী একটু তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে বলেন,”কি বলছিলে তুমি ওকে?”

“দেখতে পাবে।ধৈর্য ধরো।”
বলতে না বলতেই ঢাক ঢোল বাজার শব্দ আসতে থাকে।সবার খাওয়া দাওয়া শেষ।হাত ধুয়ে উঠেছে মাত্র। ঢাক ঢোলের আওয়াজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।সবাই বুঝতে পারলো তাদের বাড়ির দিকেই কিছু একটা আসছে।রুদ্র ঢাক ঢোলের আওয়াজের তালে তালে হাত উচু করে দুলিয়ে দুলিয়ে নাচতে থাকে।সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মিলি জিজ্ঞাসা করে,”তুই নাচতেছিশ কেনো?”

“কারণ ঢাক ঢোল বাজছে তাই।আরে তোরাও নাচ।কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে না জানলেও আনন্দের বাজনায় আনন্দ কর।”

ঢাক ঢোল পিটিয়ে সাত আটজন লোক সরদার বাড়ির মেইন গেটে হাজির হয়।সাথে সাথে গেট খুলে দেয় দারোয়ান।আশপাশ থেকে প্রতিবেশীরা ভিড় বাড়াতে থাকে।বাড়ির বাইরের বড় উঠানে এসে দাড়ালো সরদার বাড়ির লোকজন। জারা নিজেও আছে সেখানে।সবার দাড়ানোর সাথে সাথে সেখানে ফুল দিয়ে সাজানো একটি গাড়ি এসে থামলো।গাড়ি থেকে নাচতে নাচতে নামলো পিয়াশ ও মৌ।ওরাও হাত উচু করে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে থাকে।গার্ড এসে রাজের গাড়ির দরজা খুলে দিলো।বর বেশে রাজ গাড়ি থেকে নামতেই সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।মায়া এখনও বের হয়নি।রাজ নিজেও গানের তালে নাচতে থাকে।নাচতে নাচতে গৃহে প্রবেশ করে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”জারা বেইবী তোমার জন্য সতীন এনেছি।”

জারা হা হয়ে যায়।সোনালী চেঁচিয়ে বলেন,”হোয়াট?”

“ওহ হো কাকিয়া।তোমাকে বলিনি তো।জারা বেইবীকে বলেছি।অবশ্য তোমার তো ঝটকা লাগবেই।তোমার বোনের মেয়ের সতীন বলে কথা।”

মালিনী রাজের কাছে এসে বলেন,”এসব কি ধরনের তামাশা রাজ।তুমি বিয়ে করলে আমাদের না জানিয়ে।আমরা তো এখানেই আছি।বিয়ে করার যখন এতই ইচ্ছা আমাদের বলতে।জারা তো রেডি ছিলোই।”

“আমি তো বাবাকে বলেই গেছিলাম মা।কারণ বাবার পছন্দেই আমার বিয়েটা হচ্ছে।”

রাজের কথায় মালিনী ফিরে তাকান মাহমুদ সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদার নির্দ্বিধায় বলেন,”হ্যাঁ।আমি রাজের বিয়েটিকে মেনে নিয়েছি।ইনফ্যাক্ট রাজের বউ হিসেবে আমি তাকে গ্রহণ করতেও রাজি।পাত্রী আমার পছন্দের।”

“আর জারা! জারাকে আর ওর মা বাবাকে আমি কথা দিয়েছি যে রাজ আর জারার বিয়ে দিবো।তাহলে এখন কি হবে?”

“আমরা কি জানি?তুমি কি কখনও তোমার ইচ্ছা পূরণের আগে আমাদের থেকে একটু আলাপ করে নেও?তোমার ডিসিশনকে আগে প্রায়োরিটি দিয়েছো।”

“তোমরা বাবা ছেলে মিলে কখনও আমার কথা শুনতে চেয়েছো?আমি যা কিছু করতে চাই আগে তোমাদের থেকে জানতে চাইতাম কিন্তু তোমরা নিজেদের মতো করে এগিয়ে গেছো।”

বলেই কান্না করে দিলেন মালিনী।রাজ মালিনীর কাছে এসে বলে,”আমি তোমার সমস্ত মতামতকে সম্মান করি মা।কিন্তু মায়াবতীকে আমার চাই।তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি।তুমি এই সম্পর্ক মেনে নেও মা।তোমার ছেলে তোমারই থাকবে কিন্তু তার ভালোবাসা তার থেকে হারালে তোমার ছেলের মনকে ভাঙতে দেখবে।তোমার ছেলে সুখে থাকবে না মা।”

মালিনী আর কিছু বললেন না।ছেলের সুখের কথা ভেবে চুপ করে গেলেন।জারা এসে রাজের কাধে হাত রাখলো।রাজ ঘুরে দাড়ালো। জারা রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেইবী!প্লিজ বলে দেও তুমি এসব নাটক করছো।আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি বেইবী।বিলিভ মী তুমি আর আমি এই বাড়িতে অনেক হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে থাকবো।”

গাড়ির ভিতর থেকে রক্তচক্ষু দিয়ে দেখছে মায়া।সবকিছু সহ্য হলেও রাজের কাধে জারার হাত দেওয়াটা সহ্য হলো না।গাড়ির দরজা নিজে খুলে পাশে থাকা গার্ড থেকে গুলি নিয়ে সাথে সাথে শুট করে দিলো জারার হাতে।জারার বাম হাত ছিদ্র হয়ে রক্ত বের হতে থাকে।সাথে সাথে ব্যাথায় চিল্লিয়ে জারা বলে,”আউচ।”

সোনালী এসে জারার হাত ধরে দাড়ায়।মিলি দৌড়ে গেছে মেডিসিন বক্স আনতে।একজন সার্ভেন্ট পানি নিয়ে আসে।গুলি জারার হাতের ভিতর ঢুকতে পারেনি।মায়া টার্গেট করেছিলো জাস্ট একটু সাইড থেকে।তাই জারার হাতের কোনা দিয়ে গুলি চলে যায়।এর ফলে জারার হাত ছিদ্র হয়ে যায়। জারার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে সোনালী আর মালিনী।রাজ স্মিত হেসে বলে,”গৃহ প্রবেশেই রক্তের বন্যা বয়ে দিলে মায়াবতী?”

“মেহেরুন জাহান মায়ার জিনিসে কেউ নজর দিবে আর মায়া চেয়ে চেয়ে দেখবে এতটাও খারাপ দিন মায়ার আসেনি।আর সেখানে তো আস্ত আপনিটাই আমার ব্যাক্তিগত পুরুষ।”

মায়ার গর্জে যাওয়া কণ্ঠ শুনে সবাই তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।সিয়া ও হিয়া মায়াকে দেখছে খালি।মিলি বলে ওঠে,”এই মেয়ে তো সেই মেয়েটা যে আমাদের মাজারে ঝামেলা করেছিলো আবার ওর কোম্পানির উদ্বোধনে গিয়েছিলাম।”

রাজ মায়ার রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।রাগে ফোঁসফোঁস করছে মায়া।রাজ তাকিয়ে দেখছে মায়ার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে এসেছে।মিলির কথাগুলো কানে ভেসে আসতেই রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,”এটাই আমার বউ আমার মায়াবতী।”

মাহমুদ সরদার ইশারা করতেই একজন সার্ভেন্ট মিষ্টি ও শরবত নিয়ে আসে। সার্ভেন্টদের হাতে বউ বরণের সামগ্রী দেখে মাহমুদ সরদার বলেন,”বউ বরণ করতে হবে তো। যাও আমাদের বৌমাকে বরণ করে নিয়ে আসো।”

মালিনী মুখ ঘুরিয়ে বলেন,”আমার কোনো ইচ্ছা নেই।পারলে তুমি করো তোমার বৌমাকে বরণ।”

মাহমুদ সরদার পাত্তা দিলেন না।নিজে থেকেই চলে গেলেন মায়াকে বরণ করতে।মিষ্টির থালার পাশ থেকেই একটু উকি দিয়ে মালিনীর দিকে তাকালো মায়া।তারপর মাহমুদ সরদারকে বলে,”বউকে বরণ করার দায়িত্ব তো একমাত্র শাশুড়ির থাকে।শাশুড়ির অবর্তমানে অন্য কেউ।আমার শাশুড়ি কি মারা গেছে?”

সবাই থমকে যায় এমন কথায়।মালিনী নিজেও ক্ষেপে গেছেন এবার।মায়া ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,”না মানে চোখের সামনে জলজ্যান্ত শাশুমাকে দেখছি কিন্তু সে তার ছেলের বউকে বরণ করতে না করছে।বিষয়টা তো এমন হলো যে সে আমার শাশুমা হওয়ার যোগ্য না।অথবা সে দুনিয়া থেকে টা টা বিদায়।”

বলেই মালিনীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় মায়া।মায়ার চোখ টিপ দেওয়া দেখে বিষম খান মালিনী।মাহমুদ সরদার হেসে দেন।বলেন,”ও এখনও তোমাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত না।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”

“উহু,এই আস্তে আস্তে শব্দটা ব্যাবহার করে যে আমার অপেক্ষার মাত্রা বাড়তে থাকবে।শাশুমার ভালোবাসা না পাই তার দায়িত্ব তো দেখতে চাই।তাকেই এখন আমাকে বরণ করতে হবে।এটা যে আমার একমাত্র অধিকার।”

সোনালী এসে মালিনীর পাশে দাড়িয়ে বলেন,”যদি বরণ না করে তাহলে?”

মায়া গুলি উচু করে সেদিকে তাকিয়ে গুলির মাথায় হালকা ফু দেয়।তারপর বলে,”একটু আগে একটা ডেমো দেখালাম।সিচুয়েশন আবারও ঘুরে আসতে পারে।”

ভয়তে ঢোক গিলে সোনালী।প্রতিবেশীরা বিড়বিড় করে বলে,”যেমন মন্ত্রী তার তেমন বউ।মন্ত্রীর মতো করা মস্তিষ্কের।”

মায়া আবার বলে ওঠে,”আমি কিন্তু এমন বৌমা নই যে শাশুড়ির ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।শাশুড়ির ছেলের ভালোবাসা কি কম নাকি যে শাশুড়ির ভালোবাসার কাঙাল হবো?কিন্তু অধিকারবোধ।এই যে উনি চায় ওনার না হওয়া বৌমাকে বরণ করতে এটাই তো আমার হার।এই হার মানতে শিখেনি মায়া।মায়া যা চায় তাই পায়।এখন তার ইচ্ছা সে তার শাশুড়ির থেকে বরণ গ্রহণ করবে।কি মন্ত্রী মশাই?আপনি করবেন না পূরণ?আপনার মায়াবতীর ইচ্ছা।”

রাজ একটু হেসে এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।বলে,”অবশ্যই মায়াবতী।তবে তোমার মুখে আমি দ্বিতীয়বার আমার মায়ের মৃত্যুর কথা শুনতে চাই না।মাথায় রেখো আমার দুনিয়া আমার মা তুমি ও আমার পরিবার।”

বলেই রাজ তাকায় সিয়া হিয়ার দিকে।তারপর তাকায় মায়ার দিকে।মায়া বলে,”আমার এই জবান থেকে আপনার মায়ের মৃত্যু আসবে না।কিন্তু আমার শাশুমার কথা ঠিকই আসবে।শাশুড়ি বৌমার মাঝে ঢুকবেন না যেনো মন্ত্রী মশাই।আপনাকে আবার এসব জিনিসে মানাবে না। ট্রিপিকাল ভারতীয় সিরিয়াল হয়ে যাবে যে।”

রাজ হালকা হেসে দেয়।মাহমুদ সরদার হো হো করে হেসে বলেন,”তুমি পারও মা।আচ্ছা তোমার শাশুড়ি তোমাকে বরণ করবে।”
বলেই মালিনীর কাছে থালা নিয়ে আসে মাহমুদ সরদার।শাসনের সুরে বলেন,”তাড়াতাড়ি বরণ করে নেও।কোনো প্রকার না আমি শুনবো না।আমার বৌমাকে তোমার পছন্দ না হলেও চলবে কিন্তু তার কোনো কিছুতে আমি যেনো কষ্ট পেতে না দেখি।অবশ্য সে যেমন রণচন্ডি তুমি না চাইলেও জোর করেই ছুরি ঘোরাবে এই বাড়িতে।”

বলেই থালাটা মালিনীর হাতে দিয়ে দেয়।মায়া তার ফোন বের করে মৌয়ের হাতে দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি শাশুড়ি বৌমার কিছু মোমেন্ট ক্যাপচার করে নেও।বলা তো যায় না সম্পর্কগুলোর পরিবর্তন হতে থাকে কোন সময়।আমার শাশুড়ি তো আবার ভালো মানুষের সঙ্গ নিয়ে চলে।তার থেকে আবার সিরিয়ালের শাশুড়ির ডেমোগুলো শিখে আমার উপর অ্যাপ্লাই করতে চাইতে পারে।”

মায়ার তিক্ত কথাগুলো হজম করে মায়ার কাছে আসে মালিনী।মায়াকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়।মায়া সুন্দর একটি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।মালিনীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”ভুলেও সিরিয়ালের শাশুড়ি হতে যাবেন না শাশুমা।আমি আবার সিরিয়ালের বৌমা না।আমি আপনার জীবনের এটম বোম আলা বৌমা।আমার আর আমার স্বামীর মাঝে দেওয়াল হয়ে আসলে আমি এই দেওয়াল গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিবো।”

মালিনী কেপে উঠল মায়ার কথায়।এ মেয়ে তো খুব ডেঞ্জারাস।গৃহ প্রবেশেই শাশুড়িকে হুমকি দিচ্ছে।মায়া ছেড়ে দিলো মালিনীকে।তারপর বলে,”পিকচার তোলা কমপ্লিট মৌ?”

“হ্যাঁ।অনেক সুন্দর লাগছে শাশুড়ি বৌমা জুটি।”

“লাগবেই তো।মন্ত্রী মশাই এর মা বলে কথা।সে তো এখন আমার শাশুমা।”
বলেই অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে মালিনীর দিকে।জারা কান্না করছে। একেতো রাজ বিয়ে করেছে।আবার তার বউ তাকে গুলিও করে হাত ফুটো করে দিয়েছে।নেকা কান্না করে রাজের সামনে এসে হাত দেখিয়ে জারা বলে,”সী বেইবী।তোমার এই নিউ ওয়াইফ আমার হাত ফুটো করে দিয়েছে।she is a criminal.”

“ওহ বেইবী!আরো কি গুলি খেতে চাও তুমি?তোমার সতীন কিন্তু গোলাগুলিতে এক্সপার্ট।”
বলে ওঠে রাজ।সবাই হেসে দেয়।

মাহমুদ সরদার রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”ভাবীকে কোলে নিয়ে গৃহ প্রবেশ করো।ভাই বিয়ে করেছে।বউ নিয়ে দেবর ননদ আনন্দ করবে না?”

রুদ্র কিছু করার আগে রাজ মায়াকে কোলে করে নিয়ে বলে,”আমার বউ আমার পার্সোনাল লকার।তার গায়ে হাত দেওয়া তো দূরের কথা তার দিকে চোখ দেওয়ার অধিকারও আমি কাউকে দিবো না।কেউ আমার বউয়ের আশেপাশে আসলে তার শকুনের নজর এই বাঘের কাছে ফিকে পড়ে যাবে।”

বলেই মায়াকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে থাকে রাজ।রাজের এই কথাটি শুনে মায়া খুব খুশি হয়।রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে।রাজের কানের কাছে ফিসফিস করে মায়া বলে,”জেলাস মন্ত্রী মশাই।”

রাজ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলে,”মায়াবতীর মতো অতি মাত্রার জেলাস না হলেও আংশিক আছি।”

চলবে…?