মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-২৮+২৯

0
13

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
ল্যাপটপে বসে কাজ করতে থাকে মায়া।ল্যাপটপে চোখ থাকলেও কি বোর্ডে রাখা আঙ্গুলগুলো তার কাজ করছে না।রাজ রুমে এসে দেখতে থাকে মায়ার মনোভাব।কোনো মেয়েই কি পারবে বাবার থেকে এমন আচরণ সহ্য করতে? কখনই না।মায়া তো সেখানে পুরোটাই আলাদা মস্তিষ্কের।ল্যাপটপ অন করেও চুপচাপ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য কোনো দিকে তার মনোযোগ নেই।রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল গলায় ঝুলিয়ে রেখেই দেখতে থাকে মায়াকে।অবশেষে মায়ার পাশে বসে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।মায়ার ঘোর কাটে।পাশে তাকিয়ে দেখে রাজ ফ্রেশ হয়ে এসেছে মাত্র।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে রাজ।মায়ার গালে হাত রেখে বলে,”দুর্বলতা আমাদের আসল শত্রু।এটাকে মনে বিরাজ করে রাখতে নেই।”

মায়া রাজের চোখে চোখ রেখে বলে,”আমি দুর্বল নই।”

“সময় তোমাকে দুর্বল করে দেয়।সেই সময়টিকে দুর্বলতা নয় মনের জোড় দিয়ে লড়াই করো। একটুতেই মাথা গরম না করে ঠান্ডা মস্তিষ্কে লড়াই করতেও তো পারো।”

“হুম।ঠিক বলেছো তুমি।আমি ঠান্ডা মস্তিষ্কে লড়াই করবো।”

রাজ মায়ার মুখ নিজের কাছে আরো একটু এগিয়ে নিয়ে আসে।তারপর সারা মায়ার মুখ তার চোখ দিয়ে বিচরণ করতে থাকে।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার মায়াবতী তুমি। যার মধ্যে আমি আমার পুরো অস্তিত্বকেই দেখি।”

“যদি এই অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলো?”

“যার রন্ধে রন্ধে আমার অস্তিত্বের বসবাস সে কিভাবে যায় হারিয়ে?হারিয়ে যেতে দিবনা আমি তাকে।”

“এই মায়াকে চিরতরে নিজের কাছে রেখে দিতে পারবে তো?”

“কেনো পারবো না?চিরতরে নিজের করতেই তো মায়াবতী আছে আমার সাথে পবিত্র বন্ধনে।সারাজীবনের জন্য নিজের সাথে পবিত্র করে রেখেছি তোমাকে।কি করে হারিয়ে যেতে দেই সেই সম্পর্ককে?”

কোনো কিছু না বলে এক নিমিষেই রাজের বক্ষে নিজের মাথা এলিয়ে দেয় মায়া।রাজ নিজেও একটু সুখ খুঁজে পেলো।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমার এক টুকরো সুখ তোমার মিষ্টি আলিঙ্গনে,মায়াবতী।”

“আমিও তোমার বক্ষে নিজের সুখ খুঁজে পাই,মন্ত্রী মশাই।”

ঘরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে ফোঁসফোঁস করছেন মোহন সরদার।সোনালী পাশেই বসে আছে।কোনো কথা বলছে না।নিরবতা ঘিরে রেখেছে তাদের মুখপানে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে মোহন সরদার বলেন,”যেই মেয়েটির জন্য আমি জেলে দুই রাত কাটিয়েছি সেই মেয়ে এই বাড়ির বউ।এটা আমাকে মেনে নিতে হবে।”

সোনালী কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,”আচ্ছা তোমার এই জেলে যাওয়ার পরপর ওদের বিয়ে।কোনোভাবে এটা ওই মেয়ের প্ল্যান না তো?”

“কি বোঝাতে চাও?”

“ভালো করে ভেবে দেখো।রাজ ও মায়া চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছে পরশুদিন।ওইদিন রাতেই তোমাকে এরেস্ট করা।তারপরের দিনই ওদের বিয়ে।এটা কেমন যেনো ইচ্ছাকৃত তোমাকে ট্র্যাপে ফেলানো মনে হচ্ছে।”

“তোমার কথাতে তো এমনটাই প্রকাশ পাচ্ছে।যদি এমন কিছু হয়েই থাকে তাহলে ভুগতে হবে ওই মেয়েকে।”

“তোমার ভাইয়ের ছেলে থাকতে কি আর সেই সুযোগ পাবে?তার থেকে তো ভালো হবে এমন কিছু করা যাতে ওই মেয়েকে রাজ নিজে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আর তারপর তুমি ওই মেয়েকে যা খুশি করো।”

“রাজ কি চাইবে ওই মেয়েকে নিজের জীবন থেকে দূরে করতে।এমন কোনো ওয়ে তো দেখছি না।”

“আছে গো আছে।আমাদের বড় ভাবী।ওই মেয়ের নামে বদনামগুলো এমনভাবে সাজিয়ে বলেছি যে এখন সে ওই মেয়েকে সহ্য করতেই পারবে না। আর যে মেয়ে বাড়িতে আসার পর থেকে এক এক ঝামেলা তৈরি করেছে সে কি করে শাশুড়ির মন পায়। বড় ভাবীর মনে জারা জায়গা করে নিয়েছে।তুমি চিন্তা করোনা।”

“আমাদের রুদ্র কোনো কাজের না।এতবার বলি আমার কোম্পানিতে হাত লাগাতে কিন্তু সে থাকবে তার মতো ফুর্তি নিয়ে।”

“আরে তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা।রুদ্র আর যাই করুক ও ওর দায়িত্ত্ব ঠিকই পালন করছে।আমাদের হিয়াকে যে ও ওর হাতের মুঠোয় রাখছে।একবার হিয়া আর রুদ্রর বিয়ে হোক।হিয়ার দ্বারা এই সম্পত্তি আমাদের হয়ে যাবে।”

“কিন্তু রুদ্রর সাথে কি হিয়া বিয়ে করতে চাইবে?”

“বড় ভাই রুদ্রের প্রতি একটু হলেও দুর্বল।রুদ্র যা চায় ওকে তাই দেয় বড় ভাই।একবার মুখ ফুটে বললে আমাদের রুদ্র ও হিয়ার বিয়েটাও হয়ে যাবে।দেখে নিও।”

মোহন সরদার খুশি হলেন স্ত্রীর কথায়।সোনালী অনেক পাকা খেলোয়াড়।শাহানা পারভীনকে তো এভাবেই এই বাড়ি থেকে বের করে সবার মন জয় করে আছে।

মালিনী ব্যাগ প্যাক করছে।মাহমুদ সরদার সেদিকে তাকিয়ে আছেন।কিন্তু কিছু বলছেন না।মালিনী অভিমানী সুরে বলেন,”আমি কাল এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।ভালো থেকো তুমি আর তোমার সন্তানেরা।”

মাহমুদ সরদার স্মিত হেসে বলেন,”এই বাড়িতে তুমি শুধু সরদার বংশের বউ হওয়ার আশায় এসেছিলে।কিন্তু আমার ছোট রাজের মা হতে পারোনি।এতগুলো বছর পর আমার ছেলেটা কিছু চাইলো আর এতেই তোমার সমস্যা।সৎ মা হলে এমনটাই তো হবে।”

মালিনী ঘুরে তাকালেন মাহমুদ সরদারের দিকে।বলেন,”আমি রাজের সৎ মা।ওর কি কোনো দায়িত্ব পালন করিনি আমি?”

“কখন পালন করেছো?আমি তো দেখিনি।রাজের জ্বর আসলে মাকে খুঁজতো।তুমি তো রাজের জন্য ডাক্তার এনেই দায়িত্ত্ব শেষ করে দিতে।কিন্তু গভির রাতে বাসায় ফিরে দেখতাম শাহানা আমার ছেলের পাশে রাত জেগে সেবা করছে।রাজকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে আমার রোহিণী(রাজের আসল মা) এর কোনো ত্রুটি তুমি রাজের মধ্যে রাখবে না।রাজের মায়ের দায়িত্ত্ব তুমি পালন করবে।কিন্তু আমি কখনও তেমনটি দেখিনি তোমার মাঝে। হ্যাঁ তুমি সবাইকে এই বাড়ির প্রত্যেককে সম্মান দিয়েছো।এই বাড়ির বিপদের সময় আমাদের টাকা ইনভেস্ট করে উপকার করেছিলে।কিন্তু আমার রাজ কি পেয়েছিলো তার মাকে?তোমার বাবার টাকা আমরা বিয়ের একমাস আগেই ফেরত দেই।টাকার বিনিময়ে কিন্তু আমাদের বিয়ে হয়না।বিয়েটা হয় তুমি ডিভোর্সি ছিলে আর আমার রোহিণী মারা যায় তাই।তুমি রোহিণীর রূপটাই পেয়েছো কিন্তু কখনও রোহিণী হয়ে উঠতে পারোনি।আমার ছেলেটা তারপরও তোমার প্রতি কোনো আক্ষেপ রাখেনি।আমিও কোনোদিন মুখ ফুটে বলিনি একটু খাইয়ে দেও রাজকে।একটু খোঁজ নেও রাজের।কারণ আমি আর রাজ কেউই চাইনি তুমি নিজেকে আমার দ্বিতীয় বউ মনে করো।কিন্তু আজ তোমার ব্যাবহারে এটা প্রকাশ পেলো।তুমি আমার রাজকে কখনও ভালোবাসোনি।”

“আর তুমি!তুমি কি পেরেছো আমাকে ভালোবাসতে?রোহিণীর মতো আমার রূপ বলেই তো আমার সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে।আমরা যদি যমজ বোন না হতাম তাহলে হয়তো আমার আজ তোমার সাথে বিয়েটাও হতো না।বোনের স্বামীকে বিয়ে করেছি এমন ফিল নিয়েই এসেছিলাম এই বাড়িতে।সবাইকে বুঝে উঠতে আমারও তো সময় লাগতো।তারপরও তোমার মা বাবার মন জয় করার চেষ্টা করেছি।আমি যেমন রাজের পারফেক্ট মা হতে পারিনি ঠিক তুমিও আমার পারফেক্ট স্বামী হতে পারোনি।সিয়া ও হিয়াকে আনার আগে একবারও নিজে থেকে আমার কাছে আসোনি তুমি।সোনালীর সাহায্য ছাড়া আমি তোমার দ্বারা একটি সন্তানও পেতাম না।”

“আমি তোমার মতো আমার সন্তানদের আলাদা করেও দেখিনি।তুমি শুধু সোনালীর ইশারায় চলেছো।ওর মাধ্যমে ঔষধ নিয়ে আমার খাবারে মিশিয়ে আমার কাছে এসেছো।কিন্তু স্ত্রী হয়ে স্বামীর মন জয় করতে পারোনি তুমি।”

“রাজ তোমার একার ছেলে কিন্তু সিয়া ও হিয়া আমাদের দুজনের।সেক্ষেত্রে তোমার আর আমার নজরে তো ফারাক থাকবেই।”

“তাহলে আমার ছেলের চাওয়া পাওয়াতে তো তোমার কোনো অভিযোগ থাকার কথা না।আমার ছেলে একজন প্রতিষ্ঠিত মেয়েকে বিয়ে করেছে।তোমার চাওয়াকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমার ছেলে জলে ভেসে যাবে এটা আমি চাইবো না।”

“আচ্ছা।তবে এটাই শ্রেয়।আমি চলে যাচ্ছি তোমাদের মাঝখান থেকে।”

“এটা তোমার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা।এমনিতেও আমার জীবনে দীর্ঘায়ু হয়ে এসেছো তুমি কিন্তু আমার মনের মাঝে নিজের জায়গা গড়ে নিতে পারোনি তুমি।”

শেষের কথাটি কাটার মত মনে গেঁথে গেলো মালিনীর।রোহিণী ও মালিনী দুই যমজ বোন ছিলেন।রোহিণীর সাথে মাহমুদ সরদারের প্রণয়ের বিয়ে হয়।সুখেই ছিলো দুই পরিবার নিয়ে তারা।তাদের সুখের জীবনে চাঁদের আলোর মত চিকচিক করে ওঠে রাজ।তাদের পূর্ণ সংসার।কিন্তু হঠাৎ একদিন রোহিণী মারা যায়। আর সেই থেকেই নিরব হয়ে যায় রাজ।মাহমুদ সরদার ঘর বন্দী থাকতেন। আস্তে আস্তে তার রাজনীতিতে বাধা সৃষ্টি হয়। পরে রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর মৃত্যুকে মনের ভিতর মাটি চাপা দিয়ে পরিবারের জন্য কর্মে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।এদিকে সরদার বংশের ব্যাবসা আস্তে আস্তে নিম্ন স্তরে আসতে থাকে।তখন রাজের নানা ভাই তাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।ওই সময় মালিনীর কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়।ডিভোর্সের কিছুদিন পর সেই বরও গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়।রাজের নানার টাকা পরিশোধ করে দেয় মাহমুদ সরদার।কিন্তু রাজের নানা রাজ,মাহমুদ সরদার ও মালিনী সবার দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলেন মাহমুদ সরদার ও মালিনীর বিয়ে দেওয়া উত্তম।বাবার নজর তখন মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ খুঁজতে থাকে আবার রাজ ছিলো তার কলিজার টুকরো।রাজ একজন মা পাবে আর মালিনী ভালো মনের স্বামী সংসার।হলোও তাই।মাহমুদ সরদারের মত না থাকলেও তার বাবা ও শ্বশুরের অনুরোধে বিয়ে করে নেয় মালিনীকে।বিয়ের আগে মালিনীর সাথে মাহমুদ সরদার আলাদা কথা বলেছিলেন।তিনি মালিনীর থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে তিনি রাজকে আপন সন্তানের মতো মানুষ করবে।কিন্তু না বিয়ের পর থেকে সবার সাথে মিলেমিশে চললেও রাজের মা হয়ে উঠতে পারেনি।মালিনীর সাথে মাহমুদ সরদারের বিয়ের পর আবারও ব্যাবসায় ডাউন শুরু হয়।তখন মায়ার নানাভাই মায়ার দাদুর বন্ধু ছিলেন।তিনি অনেক সাহায্য করেন।শাহানা পারভীন ঢাকাতে পড়াশোনা করতে আসেন।তাই প্রায় সময় দেখা সাক্ষাৎ ছিলো। শাহানা পারভীনের বুদ্ধিমত্তা ও সততা দেখে মায়ার দাদু অনেক খুশি হন।মায়ার নানুকে অনেক অনুনয় করে বিয়ে দেন মোহন সরদার ও শাহানা পারভীনের।তারপর রাজ তার মাকে না পেলেও মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলো শাহানা পারভীন দ্বারা।শাহানা পারভীনের রাজের প্রতি যত্ন কেউ আগে থেকে আন্দাজ করতে না পারলেও পরবর্তীতে রাজকে সুখে দেখতে পেয়ে সবাই শাহানা পারভীনের প্রতি খুশি হয়।

সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ বাড়তে থাকে।মায়া ও রাজ বিরক্ত হয়ে বাইরে বের হয়।কিন্তু বাইরে বের হয়ে অবাক হয়ে যায় রাজ।মালিনী ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে সদর দরজার সামনে।তাকে আটকে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে সোনালী আর সিয়া ও হিয়া।সিয়া ও হিয়া কান্না করে দিয়েছে।তারা বারবার বলে ওঠে,”এভাবে রেগে বাসা থেকে বের হয়ে যেওনা মা।আমরা আছি তো তোমার জন্য।”

মালিনী মন স্থির করেছেন তিনি থাকবেন না এই বাড়িতে।নিজেকে কাঠিন্য রেখে বলেন,”আমাকে যেতে দে।এই বাড়িতে আমার কোনো অধিকার নেই।এই বাড়িতে আসার যে উদ্দেশ্য ছিলো সেটা আমি পূরণ করতে পারিনি।তাই আমি চলে যেতে চাই।”

মায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।ঠিক কোন উদ্দেশ্যের কথা বলছে মালিনী?আসলে মায়া জানে না যে মালিনী রাজের আসল মা নয়।রাজ এসে মালিনীর হাত ধরে আটকিয়ে দেয়।বলে,”এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যেও না মা।তোমার সন্তানেরা তোমার জন্য কষ্ট পায়।আমার কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু সিয়া ও হিয়ার কথা ভেবে তো থেকে যাও।”

“ওদের নিয়ে ভাবার মানুষ আছে।তোমরা আছো।ইনফ্যাক্ট সিয়া আর হিয়া এখন অ্যাডাল্ট। ওরা ওদের দেখে রাখতে পারবে।”

বলেই চলে যেতে নেয় মালিনী।এক পা এগোতে নিবে ওমনি জোরে জোরে হাততালির শব্দ কানে ভেসে আসে সবার।পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়া হাততালি দিচ্ছে আর মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।তালি দেওয়া থামিয়ে মায়া বলে ওঠে,”বাহ শাশুমা।এত তাড়াতাড়ি হার মেনে বিদায় নিচ্ছেন।আচ্ছা যাওয়ার আগে আমার শ্বশুরকে ডিভোর্স দিয়ে তার জীবন থেকে পার্মানেন্ট চলে যাচ্ছেন তো!না মানে এই বয়সে শশুর আমার সেপারেশনে যাচ্ছেন তাকে তো আর একা থাকতে দেওয়া যায় না।আমার আবার শাশুড়ি ছাড়া জমে না।”

তেড়ে এসে মালিনী বলেন,”ঠিক কি বোঝাতে চাও তুমি?”

“বেশি কিছু না শাশুমা।আপনি যাওয়ার পর আমার শ্বশুর একা হয়ে যাবেন।তার জন্য তো আবার একটা পাত্রী দেখতে হবে।তাই আর কি বলছিলাম যে চিরতরে যাচ্ছেন তো?”

“এই বয়সে বাবার আরেক বিয়ে!বাবা আমার এই বয়সে দাদু ডাক শুনবে নাকি বাবা ডাক শুনবে?”

“নতুন শাশুড়ি আসলে হয়তো আমার আবার কচি ননদ বা দেবর আসতে পারে। আর এই শাশুমা থাকলে কেউ আসার পসিবিলিটি আছে কি না আমি জানি না।কি শাশুমা আছে নাকি পসিবিলিটি?”

সবাই হা হয়ে দেখছে এদের তামাশা।মাহমুদ সরদারের বিষম উঠে গেছে।ছেলে একা হলে শাসন করা যেতো।এখানে তো ছেলে বৌমা দুজনেই এক।কেউ কারো চেয়ে কম না।

মোহন সরদার পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,”বাহ!ছেলের বউ আজকাল শশুড়কে বিয়েও দিতে চায়।আবার সেখানে ভবিষ্যৎ বাচ্চার প্লানিং করে।তাও নিজেদের না শ্বশুর শাশুড়ির।”

মায়া মাথা উচু করে তাকায় মোহন সরদারের দিকে।কারণ মায়ার সামনে রাজ দাড়িয়ে ছিলো।মায়া বলে ওঠে,”শাশুড়ি আমার এই বয়সে বাড়িতে নাটক সাজিয়েছে।যেই বয়সে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে সংসারের উপদেশ দিবেন সেই বয়সে নিজে সংসার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।শশুর মশাইকে তো একটু দেখতে হবে।তার দেখভাল করার জন্য নতুন শাশুড়ি আনা তো অপরাধ না।”

রাজ মাহমুদ সরদারের কাছে এসে আফসোসের সুরে বলে,”দাদু ডাক শোনার বয়সে এসে নতুন করে বাবা ডাক শুনবে তুমি!এর থেকে লজ্জাজনক বিষয় দুনিয়াতে আর কি আছে? লোকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলবে ওই দেখো মন্ত্রী শাহমীর রাজের বাবার দাদুর বয়সে এসে ছেলে হয়েছে।মানসম্মান বলতে কিছু থাকলো না।”

মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে তাকালেন ছেলের দিকে।রাজ হাত উচু করে বলে,”দেখো বাবা।আমি কিন্তু তোমার বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।তোমার বৌমা তোমার একাকিত্ব ঘোচাতে আরেক বিয়ে দিবে।সে যেভাবেই হোক।তাই বলো পুরনো বউ নিয়ে থাকবে নাকি এই বউ বিদায় দিয়ে নতুন বউ আনবে?”

মাহমুদ সরদার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”শাট আপ।”

কেউ আর কিছু বলে না।মায়া ও রাজ মিটমিট হাসতে থাকে।সিয়া এসে মালিনীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে,”তুমি কোথাও যাবে না মা।চুপচাপ আসো।”

হিয়া টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে মালিনীকে।সোনালী এক গ্লাস পানি নিয়ে যায় মালিনীর কাছে। মালিনীকে পানি খাইয়ে শান্তনার বাণী দিতে থাকে।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
আজ দুই মাস পর নিজের ছোট লাইব্রেরী ঘরে আসলো হিয়া।আজকে পরীক্ষা শেষ তার।কতদিন সাহিত্যের সাথে সাক্ষাৎ করেনি সে।সবকিছু ছেড়ে থাকতে পারে কিন্তু সাহিত্য ছেড়ে থাকতে পারে না।পরীক্ষা দিয়ে আসার সাথে সাথে তাড়াহুড়া লাগিয়েছে কখন লাইব্রেরীতে যাবে।খাবার খেয়েই চলে যায় লাইব্রেরীতে।দুইমাস পর লাইব্রেরীতে পা দিয়ে যেনো নতুন কোনো রূপ দেখছে হিয়া। লাইব্রেরীর বইগুলো সব নতুন যেগুলো সে কিনবে বলে ভেবে নিয়েছে।কিন্তু এখনই তার লাইব্রেরীতে নতুন বইয়ের সুগন্ধ ছড়িয়েছে।দেখে অবাক হলো।হিয়ার বই হিয়া নিজে কিনে থাকে।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বইগুলো দেখতে থাকে হিয়া।হঠাৎ করেই কাধে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে থাকে হিয়া।পিছনে তাকিয়ে দেখে রুদ্র বুকশেলফে এক হাত ভর দিয়ে দাড়িয়ে তাকে আগলে রেখেছে।হিয়া তার চশমা চোখ দিয়ে দেখতে থাকে রুদ্রকে।লোকটার বয়স বেশি।কিন্তু করেনা কিছু।এভাবে বেকার বসে থাকার মানে বুঝে না হিয়া।সারাদিন বাইরে থাকে।মন চাইলে আসে না চাইলে আসে না।প্রায় রাতে তো বাড়িতেই থাকে না।গা ছাড়া দেওয়া রুদ্র সবার সাথে যেমন থাকুক হিয়ার সাথে যেনো তার ভিন্ন সম্পর্ক।হিয়া রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি হুট হাট করে চলে আসেন কেনো রুদ্র ভাই?”

“আমার খাঁচায় থাকা পাখিকে দেখতে।এই পাখিকে দেখলে যে আমার চোখদুটো জুড়িয়ে যায়।”

“এই পাখি খাঁচায় থাকতে চায় না।সে উড়ন্ত পাখি।আপনার খাঁচা থেকে উড়ে সে পারি জমাবে ভিনদেশে।”

“পাখি যেদিকেই যাক।দিনশেষে সে আমার কাছেই পোষ মেনে আসবে।এটা এই রুদ্রের বিশ্বাস।”

“অন্য মেয়েদের সাথে চলাফেরা করে কি আপনার স্বাদ মিটেনা।আমার কাছে কেনো আসেন ঘুরেফিরে?”

“আমার শখের নারী যে তুই।তাই তো অন্য নারীতে মিলে গেলেও আসক্তি হতে পারিনা।”

“আপনি একজন নষ্ট পুরুষ।আপনাকে সেদিন থেকেই ঘৃণা করি যেদিন নিজের চোখে দেখেছি আপনি অন্য নারীর সাথে মিলে ছিলেন।”

“অতীত কি ভুলতে পারিস না।বাইরের জগতে মিশতে গেলে এরকম একটু আকটু কিছু হয়েই যায়।কিন্তু তাই বলে কি জীবন থমকে যাবে?”

“কথা বলার ইচ্ছা নেই আপনার সাথে।সরে যান।”

রুদ্র হালকা সরে দাঁড়ায়।তারপর বুকশেলফের দিকে ইশারা করে বলে,”বইগুলো পছন্দ হয়েছে?”

“আপনি কিনেছেন বই?”

“হ্যাঁ।বইমেলায় গিয়েছিলাম।ভিন্ন লেখক লেখিকার বই এসেছে।যাবি নাকি আমার সাথে বইমেলায়?”

“যাওয়া যায়। আর বইগুলো সুন্দর আছে।কভার দেখে ভালোই লাগছে।”

বলেই হিয়া বই নিয়ে বসে পড়ে।নতুন বই পেয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে হিয়া।এটা তার খুবই পছন্দের ঘ্রাণ।রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাবছি এবার থেকে তোর কাছে আসার আগে বইয়ের সাথে আলিঙ্গন করে আসবো।”

“কেনো?”

“যেভাবে বইগুলোকে নিজের করে ঘ্রাণ নিতে থাকিস।আমার গায়ে এমন ঘ্রাণ আসলে তুই হয়তো আমাকেও নিজের করে নিবি।”

হিয়ার হাসি পেলো রুদ্রের কথায়।হো হো করে হেসে দেয়।রুদ্র তাকিয়ে দেখতে থাকে তার হিয়াপাখির হাসি।মনে মনে আওড়ায়,”তুই চিরতরে আমার হয়ে নাই বা থাক কিন্তু তুই আমার হৃদয়ের স্মৃতি হয়ে থাক।”

রাতে,
হলরুমে বসে মিটিং চলছে।সপরিবার মিলে মিটিং করতে থাকে।রাজ ও মায়ার রিসেপশন পার্টি করা হবে।মাহমুদ সরদার ও বাচ্চারা সবাই মিলে আগ্রহী।কিন্তু মালিনী সোনালী ও মোহন সরদার এতে কোনো ইন্টারেস্টেড না।তারপরও এখানে বসে আছে মাহমুদ সরদারের জন্য।সবাই কেনাকাটা করে এনেছে।হাসি এসেছে আজকে।হাসির সাথে বসে মাহমুদ সরদার সহানুভূতির সাথে কথা বলছেন।হাসি ও মাহমুদ সরদার সামনা সামনি বসে আছে।দুজনের মুখেই মিষ্টি হাসি।এই সবকিছু বেয়ান বেয়াই হিসেবে চলছে।কিন্তু মালিনীর চোখে এগুলো বিষের মতো লাগতে থেকে।মালিনী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে।সোনালী সুযোগ বুঝে বলে,”দেখেছো আপা এই মহিলা বাসায় আসা থেকে শুরু করে যে এরা কথা বলছে এই কথার এখনও শেষ নেই।”

মালিনী অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে।হিংসা যেনো বেড়েই যাচ্ছে।মায়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে মালিনীকে।বুঝতে পারছে না মালিনী এমন কেনো করছে।ছোটবেলায় তো মালিনী এমন ছিলো না।তাহলে কি সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেলো।তবে মায়া তাকে সোজা পথে আনবে।
কথা বলার শেষ পর্যায়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”তাহলে ডিসিশন ফাইনাল।মায়া মা যেহেতু নীল রং বেশি পছন্দ করে আর রাজের প্রিয় রং কালো তাই মেয়েরা নীল ড্রেস আর ছেলেরা কালো রঙের পাঞ্জাবি পরবে।”

হাসি সহানুভূতি দেখিয়ে বলে,”আপনারা যেমন বলেন।তাহলে আজ আমি আসি।”

মাহমুদ সরদার হাসিকে আটকিয়ে বলেন,”সে কি! কাল রিসেপশন তারউপর এখন গভীর রাত।আজ রাত আপনি এখানেই থাকেন। কাল অনুষ্ঠান শেষ করে যাবেন।”

“বাড়ি ফাঁকা রেখে এখানে মেয়ের শশুর বাড়িতে থাকাটা মানায় না।”

মায়া হাসির পাশে এসে বলে,”আজকে তুমি এখানে থাকবে।বিয়ের পর তোমাকে অনেক দিন কাছে পাইনি।আজ থাকো। আর তাছাড়া আমার শ্বশুর কিন্তু কাউকে এভাবে থাকতে রিকোয়েস্ট করে না।একমাত্র তোমাকেই করেছে।”

শেষের কথাটি মায়া মালিনীর দিকে তাকিয়ে বলে।ফোঁস করে ওঠে মালিনী ঘরে চলে যায়।রাত গভীর হতে যাচ্ছে তাই যে যার ঘরে চলে আসে।মায়া ঘরে আসতেই রাজের শক্তপোক্ত হাত তাকে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরে।মায়া তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।রাজ দুষ্টু হেসে বলে,”বউ আমার বর ছাড়া সব বোঝে।এত পালাই পালাই করলে হবে?”

“বর তো আমাকে ঠিকই খুঁজে নিয়েছে।”

“এভাবে বউ পলাপলি খেলতে থাকলে তো বউয়ের অগোচরে জারা বেইবী এসে ধরা দিবে।আমার বেইবী কিন্তু খুব এক্সসাইটেড আমাকে ধরার জন্য।।”

মাথা গরম হয়ে ওঠে মায়ার।মনে হতে থাকে তার শরীরের রক্তগুলো টগবক করে ফুটছে।রাজের মুখে অন্য নারীর কথা সহ্য করতে পারলো না মায়া।রাজের কলার চেপে ধরে উল্টো দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,”আপনার ওই জারা বেইবীকে যদি না আমি পঁচা ড্রেনের পানি খাইয়েছি তো আমার নাম মেহেরুন জাহান মায়া না।একবার আসুক আপনাকে টাচ করতে পুরো হাত আমি কুচি কুচি করে সুপ বানিয়ে দিবো।”

“সেই সুপ আমাকে খেতে দিও।জারা বেইবীর শরীরের মাংসের সুপ।টেস্ট তো করতেই হবে।”

“দরকার পড়ে দশটা কুকুর পুষে জারার সুপ রান্না করে খাওয়াবো।কিন্তু আপনার আশেপাশে ওকে আসতে দিবো না।মাইন্ড ইট মন্ত্রী মশাই।”

“ভালোবাসো আমাকে?”

“ভালো বাসি আর না বাসি আপনি একান্তই আমার ব্যাক্তিগত পুরুষ।”

“শখের পুরুষ না হয়ে ব্যাক্তিগত পুরুষ হয়ে লাভ কি।এর থেকে ভালো আমার জারা বেইবী।আমি এট লিস্ট ওর শখের পুরুষ।”

“হওয়াচ্ছি ওর শখের পুরুষ।বেশি বাড়াবাড়ি করলে হাঙ্গর মুখে ঢুকিয়ে দিবো আপনার জারা বেইবীকে।”

“ইশ হাঙ্গরটা যদি আমি হতাম।জারা বেইবী পেলো না আমাকে।”

“খুব শখ না বউ থুয়ে অন্য নারীতে আসক্ত হতে?”

“বউ তো আমার কাছেই আসে না।সেই বিয়ের রাতে একটু ভালোবেসেছিলো।এভাবে আমার সাথে সংসার করলে তো আমার ভবিষ্যতে প্রজন্ম আসবে না।জারা বেইবী হলে অন্তত বাবা ডাক শুনতে পারতাম।”

“আপনার মুখে জারা নামটা শুনতেই আমার কাছে বিষ শ্রবণের সমান অনুভূতি পায়।”

“তাহলে একটু বরের অধিকার পালন করতে দেও।ভালোবাসার সুযোগটা দেও বউ।”

“আপনি এখন অপবিত্র পুরুষ।ওই নষ্ট জারার নাম আপনার মুখে ডেকেছেন হাজারবার।এখন গোসল করে আসেন।”

“এই যাহ।এত রাতে বিনা কারণে গোসল করবো কেনো?”

“আপনি কিছু না করলেও জারার নাম তুলে অপবিত্র হয়েছেন।আপনার মুখে আমি যে কয়বার জারার নাম শুনবো সেই কয়বার আপনাকে আমি গোসল করিয়ে আনবো।”

“দেখো বউ।এই রাতে বিনা কারণে গোসল করতে পারবো না।ঠান্ডা লেগে যাবে তো।তার থেকে চলো গোসলের কারণ হয়ে আসি।”

“শাট আপ অ্যান্ড গো টু ওয়াশরুম।”

“ধুর!বিয়ের পর বউ কাছেও আসেনা আবার অন্য কাউকে খুঁজলে বিনা কারণে গোসল করিয়ে আনবে।আমার হিংস্র মায়াবতী।”

বলেই রাজ চলে যায় ওয়াশরুমে।মায়া হেসে দেয়।রাজকে উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছে।ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য নারীর নাম বিষের মতো লাগে।মায়া তো ভালোবাসার কাঙাল।ভালোবাসা পেতে মায়া এতকিছু করেছে। আর সেই ভালোবাসার ব্যাক্তি কি না অন্য নারীর নাম মুখে আনে।শিক্ষা তো তাকে দিতেই হবে।

গোসল করে এসে রাজ দাড়ায় মায়ার সামনে।মাথার চুলগুলো পানিতে ভেজা।গলায় ঝোলানো তোয়ালে।মায়ার সামনে এসে রাজ তার মাথা ঝাকুনি দিলো।মাথায় থাকা সমস্ত পানি ছিটে মায়ার মুখে এসে পড়ে।গলায় থাকা তোয়ালে মায়ার কোমড়ে পেচিয়ে রাজ বলে,”এবার কি বউয়ের ভালোবাসা পেতে পারি?বাবা ডাক শুনতে চাই তো।”

মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ওমনি ওদের কানে ভাঙচুরের শব্দ ভেসে আসে।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে।ভাঙচুরের শব্দ নিচ থেকে আসছে।সেখানে মাহমুদ সরদার ও মালিনী থাকে।সিয়া আর হিয়ার ঘরের দিকে ভালোভাবে পরখ করে দেখলো রাজ।ওরা দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে।তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো শব্দের কারণ খুঁজতে।তানাহলে এসবের ইফেক্ট বোনেদের উপর পড়বে।যেটা রাজ চায় না।মায়াও রাজের পিছনে ছুট লাগলো।রাজ আর মায়া ওদের ঘরের সামনে এসে দাড়াতেই দেখতে পায় দরজা হালকা চাপানো আছে।দরজাটা এক হাত দিয়ে খুলে রাজ দেখলো মালিনী ভাঙচুর শুরু করেছে আর বলে,”কি আছে ঐ মহিলার মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই।কই আমাকে তো এভাবে আটকাও না।ওই মহিলাকে কি সুন্দর আটকালে।”

মায়া ও রাজ অবাক হয়ে দেখছে।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকালেন মাহমুদ সরদার ও মালিনী।রাজ ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,”সারাদিন জনগণের সেবা করার পর র সময়টা বউয়ের সেবা করার সুযোগ পাই।তোমাদের জন্য তো এই সুযোগটাও হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।তোমরা কি চাওনা আমি আমার বউয়ের সাথে সুখে সংসার করি?”

মাহমুদ সরদার ধমকে বলেন,”এটা কি ধরনের ব্যাবহার?এই শিখেছো তুমি?”

“বউকে পাবো পাবো করে যখন হাতছাড়া হয়ে যায় তখন অনুভূতিটা কেমন হয় জানো?অবশ্য জানবে কীভাবে!তোমার বউ তো আর হাতছাড়া হয় না।হচ্ছে তো আমার বউ।”

মালিনী এবার চিল্লিয়ে বলেন,”যা না বাবা।কর না তুই সুখে সংসার।আমাদের স্বামী স্ত্রীর ভিতরে আসছিস কেনো?”

“তোমরা স্বামী স্ত্রী রাতের বেলা বাড়ি ফাটাচ্ছো যে তাই।”

“শাট আপ।ঘরে যাও।স্বামী স্ত্রীর ভিতরে এসো না।”

“তোমরা স্বামী স্ত্রী মিলে আমাদের স্বামী স্ত্রীর শত্রু হয়ে আছো।কোথায় নিজেরাও সুখে সংসার করবে আর আমাদেরও করতে দিবে তা না বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করো।”

মালিনী ক্ষেপে যায়।মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,”এই বানিয়েছো ছেলেকে?”

“ওটা বানাতে হয়নি।ছেলে আমার দীর্ঘ বছর সিঙ্গেল থাকার কারণে বেয়াদপ হয়েছে।”

রাজ ফোড়ন কেটে বলে,”দোষ তো তোমাদের।উপযুক্ত বয়সে ছেলের বিয়ে দিলে আজ দাদা দাদী ডাক শুনতে।”

মাহমুদ সরদার দুই হাত এক করে অনুনয় করে বলেন,”ভুল হয়ে গেছে বাবা আমার।এখন যা আমাদের দাদা দাদী ডাক শোনা।আমরা আর বাধা দিব না।”

রাজ মালিনীর দিকে তাকিয়ে বলে,”শোনো মা আমার বাবা বয়সের তুলনায় অনেক স্ট্রং আর হ্যান্ডসাম।কিন্তু আমার বাবা একজন সৎ পুরুষ।সে কখনও বউ থুয়ে এই বুড়ো বয়সে অন্য নারীতে আসক্ত হবে না।তাই রাত বিরাতে এভাবে আমার বুড়ো বাবার ঘরে ভূমিকম্প লাগিয়ে দিও না।তোমার ছেলের তার বউয়ের সাথে ঘুমোতে অসুবিধা হয়।গুড নাইট।”

বলেই মায়ার হাত ধরে নিয়ে যায় রাজ।মালিনী তব্দা খেয়ে বসে আছেন।মাহমুদ সরদার হা হয়ে আছেন।মনে মনে বলেন,”ছেলে আমার সাথে ফ্রেন্ডলি ছিলো ঠিক আছে।কিন্তু বউ আসার পর তো পুরোটাই বেঁকে গেছে।বউ কি তার লাজ লজ্জাকে মাটি চাপা করে দিলো।এ যে মেয়ে এ তো মানুষ খুন করে মাটি চাপা দেয়।হয়তো রাজের লাজলজ্জাগুলো খুন করে মাটি চাপা দিয়েছে।”

চলবে…?