মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৩০+৩১

0
9

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩০
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বরের জন্য রান্না করতে এসেছে মায়া।রান্নাঘরে অলরেডি মালিনী ও সোনালী আছে।মায়াকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে সবাই।মায়াও ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে রান্না করতে শুরু করে।একজন সার্ভেন্ট এসে মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,”কোনো হেল্প লাগবে ম্যাম?”

“না।আমি ম্যানেজ করতে পারবো।”

“ব্রেকফাস্ট বানানো তো কমপ্লিট ম্যাম।তাহলে এখন রান্না কেনো?”

“তোমাদের স্যারের জন্য। কাল রাতে বলেছিলো আমার হাতের মাংস রান্না খাবে।তাই রান্না করতে এসেছি।”

“ওকে ম্যাম।”

মায়ার শেষের কথাটি কর্ণপাত হয় জারার।সেও তখন রান্নাঘরে আসছিলো।সোনালীর কাছে থাকলে আপাতত তার মনটা একটু ভালো থাকে।ওই যে একটু কুবুদ্ধি পায়।কিভাবে রাজ ও মায়ার বিচ্ছেদ ঘটানো যায় তাই।মায়ার শেষ কথাটি শুনে জারার রাগ উঠেছে।তার রাজ বেইবী এখন তার নেই।যাকে পাওয়ার ইচ্ছা জেগেছিলো মনে সে এখন খেতে চায় রান্না তাও অন্যের হাতে।এটা ভেবে একটু আহত হয় জারা।সোনালীর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।মায়া নিজের মতো মশলা ব্লেন্ড করে রান্না করতে শুরু করে।মায়া রান্নায় পারদর্শী।অনেক সময় সে নিজে রান্না করেছে।হাসি তাকে শিখিয়ে দিয়েছে।মালিনী তাকিয়ে মায়ার রান্না দেখছে।মেয়েটার প্রশংসা না করেও পারা যায় না।মেয়েটা রাজের জন্য পাগলামি করে এই যা।বাকি সব দিক তো পারফেক্ট।কিন্তু জারা আর তার পরিবারের কাছে ওয়াদা করেছিলো মালিনী।যেটা ভঙ্গ হয়েছে আবার মায়ার এই বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে এই বাড়িতে অনেক অশুভ কাজ ঘটেছে।যেটা সহ্য করতে পারছেন না তিনি।রান্না করতে থাকে মায়া।তখনই সার্ভেন্ট এসে সবাইকে বলে,”আপনাদের খাবার সার্ভ করা কমপ্লিট ম্যাম।আপনারা আসুন খেতে।”

সবাই আজ যার যার মতো ব্যাস্ত।মাহমুদ সরদার বাড়িতে নেই।কমিউনিটি সেন্টারে গেছেন ডেকোরেশন দেখতে।মোহন সরদার তার কোম্পানিতে।সিয়া হিয়া ও মিলি মিলে ড্রেস ও অর্নামেন্টস দেখছে।রুদ্র বাইরে গেছে।কেনো গেছে এটা কেউ জানে না।তাই আপাতত মালিনী ও সোনালী খেতে বসেছে।মায়ার রান্না করা শেষ।এখন সে গেছে রাজকে ডাকতে।এই সুযোগ পেয়েছে জারা।মায়ার রান্না করা মাংসে এক কৌটা ঝাল সম্পূর্ণ ঢেলে দিলো।শয়তানি হাসি দিয়ে জারা বলে,”এখন আমার বেইবী এই ঝাল খেয়ে তোমার বদনাম করবে। আর আমি বেইবীকে টেস্টি খাবার এনে দিবো।দেন বেইবী আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবে।ওহ বেইবী!”

মায়া রাজকে নিয়ে এসেছে খাবার টেবিলের সামনে।সার্ভেন্ট থেকে শুনলো বাকি মেয়েরা না খেয়ে আছে।তারা এখন সাজগোজ নিয়ে এক্সাইটেড। মায়া ওদেরকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে।এখন খাবার খেতে হবে। আর না খেয়ে থাকলে তো দুর্বল হয়ে যাবে।তাই মায়া তাদেরকে নিয়ে আসে।সবাই মিলে টেবিলে বসেছে খেতে।জারা সোফায় বসে আছে।টিভি অন করে রিমোট হাতে বসে আছে কিন্তু নজর তার খাবার টেবিলের দিকে।রুদ্র বাসায় এসেছে মাত্র।এসেই খাবার টেবিলে বসেছে।মায়া সবার জন্য রুটি আর মাংস এনে নিজের হাতে সার্ভ করে দিচ্ছে।সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।ভাবীর হাতে রান্না খাবে বলে সবাই খুশি। দূরে সোফায় বসে জারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।সেও খুশিতে আছে।একটু পর রাজ খাবার খেয়ে মাথা গরম করবে।রাজ ঝাল সহ্য করতে পারে না।একবার অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে ঝামেলা করেছিলো বাসায়। সার্ভেন্টকে বকাঝকা করে ।মালিনী তো তাকে বাড়ি থেকেই বিদায় করে দিয়েছে।তাই জারা আজ এমন প্ল্যান করেছে।রুদ্র জারাকে দেখে বলে,”কি রে তুই ওখানে কেনো?আয় আমাদের সাথে খেতে বস।আমাদের ভাবী জি রান্না করেছে।খেতে আসবি না?”

“নট ইন্টারেস্টেড।তুমি খাও তোমার ভাবী জির রান্না।”

“আরে আয় আয়।খেয়ে দেখ তোর রাজ বেইবীর বউ মানে আমাদের ভাবী জি কেমন রান্না করে।”

জারা মুখ ভেংচি দেয়।মিলি জারাকে টেনে নিয়ে আসে টেবিলের দিকে। জারাকে রুদ্রের পাশে বসিয়ে নিজে একপাশে বসে মিলি।মায়া সবাইকে খাবার সার্ভ করে দেয়।জারার প্লেটে মাংস দিতে গেলে জারা বলে,”আমি ডায়েট করি।এসব ওয়েলি ফুড আমি খাই না।আমার জন্য কিছু সালাদ এনো প্লিজ।”

মায়া সার্ভেন্টদের বলে জারার জন্য সালাদ আনে।সবাই মিলে রুটি ছিঁড়ে মাংসের ঝোলের সাথে মিলিয়ে গালে দেয়।জারা সূক্ষ চোখে সবাইকে দেখতে থাকে।প্রথম গাল খাবার খেয়েই রুদ্র গাল থেকে খাবার ফেলে দিয়ে পানি খেতে শুরু করে।সিয়া হিয়া ও মিলিও একই কাজ করে।কেউ খেতে পারে না খাবার।ঝালের পরিমাণ অতিরিক্ত।প্রথমে গালে নিতেই গুঁড়া মরিচের কাচা স্মেল চলে আসে।রাজ কোনমতে খাবার গিলে পানি খেতে থাকে।তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাল রাতে তো মুখ অপবিত্র করেছিলাম বলে গোসল করিয়েছিলে এখন কেনো ঝাল খাইয়ে মারছো?”

রুদ্র ঝালের তেজ কমিয়ে বলে,”এই খাবার মনে হয় আমাদের জন্য না।তোমার না হওয়া সতিন মানে জারার জন্য।ভুলে আমাদের খাইয়ে দিয়েছো।আমরা এটা খেতে পারবো। সরি ভাবী জি।আমরা তোমার পথের কাঁটা না আমাদের রেহায় দেও।”

মায়া অবাক হয়ে যায়।তবে জারার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে জারা মিটিমিটি হাসছে।সন্দেহের বসে এক টুকরো মাংস নিয়ে টেস্ট করে মায়া।অত্যধিক ঝালের কারণে মায়ার নিজেরও গাল জ্বলে ওঠে।রাজ গ্লাসে পানি ঢেলে মায়াকে খেতে দেয়।জারা সিম্পাথী পাওয়ার জন্য বলে,”আমি একটি ডেজার্ট বানিয়েছি।তোমরা ওটা মজা করে খাও।”

বলেই জারা ডেজার্ট নিয়ে আসে।সবাই খুশি হয়ে নিতে থাকে ডেজার্ট।সবাইকে দিয়ে যখন রাজের প্লেটে ডেজার্ট দিতে যাবে ওমনি জারার হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে মায়া।মায়ার এমন ভাবে হাত ধরা দেখে জারা তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।মায়া জারাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার বর আমার রান্না করা খাবারটিই খাবে।আমি ঝাল দিলে তাকে ঝাল খেতে হবে আমি বিষ মেশালে তাকে সেই বিষটাই খেতে হবে।কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি এসে আমার জীবনে বাধা দিতে পারবে না।এই অধিকার এই মেহেরুন জাহান মায়া কাউকে দেয় না।মাইন্ড ইট।”

বলেই জারার হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দেয়।রাজের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”কি মন্ত্রী মশাই।খাবেনা আপনার বউয়ের হাতের রান্না?”

রাজ মৃদু হেসে বলে,”মায়াবতীর হাতের বিষ আমার জন্য অমৃত।এটাতো সামান্য ঝাল।আমি মিষ্টি মনে করে খেয়ে নিবো।”

বলেই রাজ তার প্লেটের মাংস দিয়ে রুটি খেতে থাকে।রাজ দেখতে শ্যাম বর্ণের।অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ার ফলে রাজের গাল লাল হয়ে গেছে।এক টুকরো মাংস শেষ করতেই রাজের অবস্থা নাজেহাল।কিন্তু তারপরও সে ঝাল দেওয়া মাংস তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে।ঝালের তেজে রাজের মুখ ঘেমে উঠেছে।কপালের শিরা উপশিরা ফুলে উঠেছে।কালো ঠোঁট ফোফাতে থাকে।তারপরও রাজ মুখে হাসি ফুটিয়ে খাবারগুলো খেতে থাকে।জারা অবাক হয়ে দেখছে।তার ভাবনায় এভাবে পানি ঢেলে দেওয়া হলো।ভেবেছিলো মায়াকে আজ ইনসাল্ট করবে।কিন্তু রাজ তো মায়ার প্রেমে মত্ত।তানাহলে কি এই ঝাল দেওয়া মাংস খায়?খাবারগুলো শেষ করে রাজ এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।তারপরও সে ফোফাতে থাকে।চেয়ার থেকে উঠে রাজ দাড়িয়ে পড়ে মায়ার সামনে।মায়া রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ঝালের কড়া তেজ ফুটে উঠেছে রাজের মুখে।মায়ার দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”বরকে ঝাল খাইয়েছো।এই ঝালের তেজ গ্রহণ করবে না,মায়াবতী?”

মায়া বুঝে উঠতে পারে না।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।রাজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”

সিয়া হিয়া ও মিলি অবাক হলেও রাজের আদেশ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।রুদ্র প্লে বয়।সে তো আগে থেকেই বুঝতে পারে সব।তাই সে নিজেই চোখ বন্ধ করে।রাজ সাথে সাথে মায়াকে নিজের কাছে এনে তার গালের ঝালগুলো মায়ার গালে মিলিয়ে দেয়।মায়া নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নেয় রাজের থেকে এই ঝালের স্বাদ।জারা চোখ বন্ধ করেনি।সে ছলছল নয়নে দেখছে তার বেইবীর ঝালের আদান প্রদান।মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখেছে জারা।এখনই কান্না করে দিবে সে।রুদ্র তার এক হাত দিয়ে জারার চোখের উপর রেখে বলে,”না হওয়া বর আর সতীনের প্রেমে নজর দিতে নেই।ওটা তোর পাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু হলোনা।”

রাজ তার কাজ কমপ্লিট করে দূরে সরে দাড়িয়ে সবাইকে বলে,”চোখ খুলতে পারো সবাই।”

সবাই চোখ খুলে।রাজের ঝাল অনেকটাই কমেছে।সে এখন মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।রুদ্র দুষ্টুমি করে বলে,”এমন ঝাল খাওয়ার অধিকার প্রত্যেক পুরুষের কপালে লেখা হোক। ঝালে ঝালে প্রেম নিবেদন করে দেওয়া প্রেমিক যুগলের আইনত অধিকার করা হোক।”

সবার কথার মাঝেই হাতে মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে পিয়াশ।খুশিতে খুশিতে রাজের কাছে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে।রাজ অবাক হয়ে যায় তবে দুষ্টুমি করে বলে,”আরে আরে সাবধানে পিয়ু বেবী।আমার আশেপাশে কেউ আসলে আমার মিষ্টি মায়াবতী ট্রান্সফার করে রূপ নেয় হিংস্র মায়াবতীর। যার একটা ডেমো পেয়েছি।”

মৌ নিজেও এসেছে সেখানে।মৌ তার শাড়ির আচল হাতে গোটাতে থাকে।লজ্জা পাচ্ছে খুব সে। পিয়াশ মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটি মিষ্টি নিয়ে রাজের গালে দিয়ে বলে,”গুড নিউজ আছে বস।আমি আমার প্রিয়তমার থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার পাচ্ছি।আমার সংসার পরিপূর্ণ হতে চলেছে।”

রাজ মুখের মিষ্টি শেষ করে বলে,”মানে আমি কাকু হতে যাচ্ছি?”

“একদম ঠিক ধরেছেন।এই খুশির সংবাদ আমি পেয়েই আপনার কাছে ছুটে চলে এসেছি।আমার দুঃখের সময় আপনি আমার পাশে ছিলেন।আজ আমার সুখের দিনেও আমার পাশে আপনি থাকবেন।”

“তোমার সুখে দুঃখে সবসময় আমি আছি।কংগ্রাচুলেশন তোমাদের দুজনকে।বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাবু নিয়ে নিলে।এদিকে আমি থাক বাদ দিলাম।কিছু বললেই তো আমি লু চু লিস্টের কর্মকর্তা হয়ে যাবো।”

মৌয়ের কাছে এসে মৌকে জড়িয়ে ধরে মায়া।মৌকে জড়িয়ে বলে,”কংগ্রাচুলেশন বোন।আমি খালামণি হব।এটা আমার জীবনে আরেক সুখ।”

মৌ খুশি হয়ে বলে,”তুমিও তাড়াতাড়ি বাবু নিয়ে নেও।দেখবে মা হওয়ার মিষ্টি অনুভূতি তুমিও পেয়ে যাবে।”

“আগে আমার উদ্দেশ্য সফল হোক। এই মোহন সরদার ও হিডেন শত্রুদের খুঁজে বের করে বরবাদ করে নেই।তারপর আমিও এই বিষয়ে দেখবো।আমার সুখের পথে কাটা বিছানো।এই কাঁটাগুলো একেক করে উপ্রে ফেলতে হবে আমাকে।”

বিকালে রুদ্র খুশি হয়ে কেক অর্ডার করে।মৌ ও পিয়াশ মিলে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়।কেক খাওয়ার পর সবাই মিলে আনন্দ করতে থাকে।রুদ্রের একটা ইমারজেন্সি কল আসে।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যায় সে।কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে বলে,”আমি আসছি ভাই।”
“কবে?”
“আজকে।”
“কিন্তু তোমার তো কয়েকদিন পর আসার কথা ছিলো।”
“এখানকার কাজ শেষ। নাও আই কান্ট ওয়েট টু সী মাই প্রেয়সী।”
“ওকে ব্রো।তাহলে দেখা হবে শীঘ্রই।”
“ওদিকটায় কাজ কতদূর করেছিস?”
“অলমোস্ট ডান।তুমি আসো দুজনে মিলে খেলা শুরু করবো।”
“ওকে,বাই।”
“বাই।”
রুদ্র একটা রহস্যের হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে মায়া ও রাজের দিকে।সেখানে সিয়া হিয়া ও মিলি আছে। পিয়াশ ও মৌকে নিয়ে আনন্দ করছে সবাই।উপরে দাড়িয়ে ওদেরকে দেখছে সোনালী ও মালিনী।সবাইকে ভালোভাবে পরখ করে রুদ্র বলে ওঠে,”খেলার মোড় পাল্টে যাবে এবার। সরি ভাবী জি আপনি যেটা ভেবে রেখেছেন এবার সেটা হবে না।হবে অন্য কিছু।”

সবাই মিলে এখন রেডি হচ্ছে রিসিভশনের জন্য। মায়া এমনিতেও সাজতে পছন্দ করে না।মায়ার নেচারাল চেহারা বেশি পছন্দ করে রাজ।তাই সবাইকে রাজ বলে দিয়েছে,”মায়াবতীকে একদম হালকাভাবে সাজাবি।ছবিতে কোনরকম ওঠার জন্য সাজাবি।কিন্তু হাই মেকআপ দিয়ে আমার মায়াবতীর মুখের সৌন্দর্য মুছে দিবি না।”

কথাগুলো রাজ তার বোনেদের বলে দেয়।মায়া নিজে পার্লার থেকে সাজতে চায় না।তাই বাড়ির মেয়েরা মিলেই সাজাতে থাকে মায়াকে।

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে নামতে থাকে অগনিত যাত্রী।সেখান থেকে বের হয় এক যুবক।প্লেন থেকে নেমেই চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে পরখ করে দেখে নিলো চারপাশ।বিদেশের পরিবেশ আর বাংলাদেশের পরিবেশ আকাশ পাতাল তফাৎ।বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে একটি ফ্রেশ নিঃশ্বাস নিলো সে।তারপর ডেভিল হাসি মুখে ফুটিয়ে বলে ওঠে,”মায়া মাই জানেমান।তোমার সাইকো লাভার ইজ ব্যাক।এবার তোমাকে আমার করেই ছাড়বো আমার জানেমান।তোমার মন্ত্রীর রাজত্ব থেকে কেড়ে নিয়ে আসবো তোমাকে।দেখি কে কি করে?”

বলেই তুরি বাজিয়ে ইশারা করে পিছনে দাড়িয়ে থাকা গার্ডদের।যুবকটির ইশারা পেয়ে গার্ডগুলো তার পিছনে হাঁটতে শুরু করে।

ঢাকার বিখ্যাত কমিউনিটি সেন্টারে এক এক করে প্রবেশ করছে নামি দামি লোকজন।সাথে আছে মিডিয়ার লোক।সবাই সেন্টারে ঢোকার আগে নিজেদের ইনভিটিশন কার্ড দেখিয়ে নেয়।এটা রুলস করে দিয়েছে মাহমুদ সরদার।সবাইকে কার্ড দেওয়া হয়েছে।দারোয়ানকে বলে দিয়েছে,”সবাইকে ভালো মত চেক করে তারপর কার্ড দেখে ভিতরে ঢুকতে দিবে।”

নিজেকে আয়নায় ভালোভাবে দেখতে থাকে মায়া।গাঢ় নীল রঙের ভারী কাজের লেহেঙ্গা পরেছে মায়া মাথায় গোল্ডের রংয়ের নেটের ঘোমটা চুল ছেড়ে দিয়ে ঘোমটা দিয়ে সেজেছে।ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক মুখে সাজ কম। লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে পরেছে অর্নামেন্ট।রাজ ব্ল্যাক শেরওয়ানি পরেছে।মায়ার পাশে এসে দাড়িয়ে আয়নায় দুজনকে একসাথে দেখতে থাকে রাজ।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”মায়াবতীর মায়ায় পড়ে গেছি আবারও।একেক সময় নীলের একেক আবির্ভাব দেখিয়ে পাগল করে দিচ্ছে আমাকে আমার মায়াবতী।”

মায়া রাজের দিকে ফিরে বলে,”আমার পারফেক্ট মন্ত্রী মশাই।”

বলেই দুজনে একসাথে বেরিয়ে পড়ে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে।গাড়িতে উঠতেই মায়ার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে।ফোন ওপেন করে মায়া দেখে,”মোহন সরদারের কোম্পানিতে আগুন লেগেছে।বেচারা মোহন সরদার এখন জানতে পারবে না তার কোম্পানি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।”

মায়া খুশি হয়ে যায় এমন ম্যাসেজ পেয়ে।আজকের দিনটি সত্যি তার জন্য খুশির দিন।রাজের এক বাহু ধরে মায়া রাজের কাধে মাথা রেখে বলে,”আজকের দিনটা আমার জন্য সুখকর মন্ত্রী মশাই।আমি এমন ভাবেই সুখে দিন কাটাতে চাই।”

মায়া আজ খুব খুশি।তার মন্ত্রী মশাইয়ের সাথে তার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে।মৌ আজকে মা হওয়ার খবর পেলো।ওদিকে মোহন সরদারের কোম্পানিকে আগুন লাগানো হয়েছে।কিন্তু বেচারি নিজেও জানে না তার সুখের পথে কাটা হয়ে একজন আসতে চলেছে।তাকে ভালোবেসে উজার করতে এসে তার জীবন ধ্বংস করতে চায় সেই ব্যাক্তি।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩১
#ইশরাত_জাহান
🦋
কমিউনিটি সেন্টারে,
চারপাশের সাজসজ্জা দেখছেন মাহমুদ সরদার।মায়ার প্রিয় রঙ নীল হওয়াতে নীল রঙের কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর মাঝখানে মাঝখানে ফ্রেশ লাল সাদা রঙের গোলাপ।ছোট ছোট সাদা রঙের ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে আশেপাশের জায়গাগুলো।সেন্টারের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘Raj weds Maya’ এটা দেখে মাহমুদ সরদার একটু কষ্ট পেলেন।মায়ার জন্মের সময় ওর নাম দেওয়া হয় মোহনা।যেটা পরিবর্তন করে রাখা হলো মেহেরুন জাহান মায়া।যদিও মায়া নামটি মায়ার দাদুর রাখা ছিলো।কিন্তু সার্টিফিকেট অনুসারে ছিলো না।তাই শাহানা পারভীন ইচ্ছা করে মায়ার এই নামটা ঠিক করেন।আজ মাহমুদ সরদারের বাবা বেঁচে থাকলে দেখতে পারতেন তার দুই রতন আজ এক হয়েছে।বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো মাহমুদ সরদার।ঠিক তেমনটাই হয়েছে রাজ।বাবা যেটা শিখিয়ে দিতেন রাজ সেটাই গ্রহণ করে নিতো।বাবাকে আইডল হিসেবে দেখেছিলো রাজ।আবার রাজের নানুও তেমন ছিলেন।রাজের নানু আর দাদু দুজনেই নরম মনের মানুষ ছিলেন।অন্যায়ের বিচার করতেন সৎ সাহস দিয়ে।যেটা মাহমুদ সরদার ও রাজ করতে পারে।বাবার সাথে কাটানো কথাগুলো মনে পড়ে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি পড়লো মাহমুদ সরদারের।পাশ থেকে একটি হাত মুছে দিলো সেই চোখের পানি।মাহমুদ সরদার তাকালেন সেদিকে।রুদ্রকে দেখে স্মিত হাসলেন মাহমুদ সরদার।রুদ্র তার বড় বাবার চোখের পানি দেখতে পারে না।মোহন সরদারের আচরণ পেলেও মনের ভিতর তার দুর্বলতা মাহমুদ সরদারের জন্য অনেক আগে থেকেই গড়ে উঠেছে।এই বড় বাবা যে তার সবকিছুর যত্ন নিতেন।মাহমুদ সরদারের চোখের পানি মুছে দিয়ে রুদ্র বলে,”আজ তোমার ছেলের বিয়ে।এদিকে তুমি কেনো কান্না করছো?তোমার তো আজ সুখের দিন।”

“এটা দুঃখের কান্না নয়।কিছু চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হওয়ার জন্য যে সুখ সেই সুখের কান্না রে বাবা।”

“তোমাকে কান্না করতে দেখতে আমাদের ভালো লাগে না বড় বাবা।সুখের সময় হোক বা দুঃখের সময় কান্না একদমই করবে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”
বলেই জড়িয়ে ধরেন রুদ্রকে।দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছে হিয়া।হিয়ার নিজের কাছেও ভালো লাগছে এই দৃশ্যটা।হিয়া আজকে নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।চুলগুলো ছেড়ে স্ট্রেট করে রেখেছে আর চোখে চশমা তো তার থাকবেই।হালকা নুড কালারের লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে হিয়া নিজেকে সাজিয়েছে।রুদ্রকে এভাবে বাবার সাথে মিলেমিশে থাকতে দেখে মনে মনে আওড়ায়,”কেনো আপনি আমার জীবনের সাথে মিলে থাকতে পারলেন না রুদ্র ভাই?আপনার ভালো দিকগুলো যে আপনাকে চাওয়ার আকাংক্ষা বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু যখনই আপনার নোংরা কাজগুলো দেখি খুব বেশি ঘৃণা কাজ করে।”

হিয়ার ভাবনার মাঝে তারেক আসে।হিয়ার পাশে দাড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে ওঠে।হিয়া পাশে তাকিয়ে দেখে তারেক।তারেক বলে,”ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস।”

“আপনাকেও আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।”

“কালো চামড়ার মানুষের আবার সৌন্দর্য!”

“কালো বলে নিজেকে ছোট করবেন না।রূপের সৌন্দর্য রং দিয়ে না মন দিয়ে বিচার করতে হয়।যে নিজেকে তার মনের মাধুর্য দিয়ে গড়ে তুলবে সেই আসল সুন্দর পুরুষ।”

তারেক খুশি হয়।আরো কিছু কথা বলতে যাবে ওমনি সিয়া এসে হিয়াকে হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যায় সেখান থেকে।একপাশে আসতেই হিয়া বলে ওঠে,”এভাবে নিয়ে আসলি কেনো?”

হিয়ার মাথায় আলতো মেরে সিয়া বলে,”আরে বুদ্ধু এখন ভাইয়া ভাবীর এন্ট্রি হবে।বর বউকে ওয়েলকাম করতে হবে না?”

“ওহ,ওকে চল।”

“হুম চল ফুলগুলো এক এক করে আমরা সবাই নিয়ে যাই।”

“ওকে।”
বলেই একটি ফুলের ডালা হাতে নিলো হিয়া।সিয়া নিজেও একটি ফুলের ডালা নিয়ে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।বুঝলো তারেকের আশপাশে আসতে দিবে না হিয়াকে।রুদ্র মৃদু হেসে ইশারা করে বলে,”থ্যাংক ইউ।”

এই সবকিছু নজরের বাইরে যায়নি তারেকের।সবকিছু দেখে সে নিজেও হালকা হেসে দেয়।

মায়া ও রাজের গাড়ি চলে এসেছে।গাড়ি থামতেই প্রথমে দরজা খুলে বের হয় রাজ।মিডিয়ার লোক ও বিয়ের ক্যামেরাম্যান ওদের ছবি তুলতে ব্যাস্ত।আশেপাশে থেকে সবাই হাততালি দিতে থাকে।রাজ সবার দিকে তাকিয়ে তারপর যায় মায়ার দিকে।দরজা খুলে মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই মায়া তার হাত রাজের হাতের উপর দিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে বের হতে থাকে মায়া।সবাই মিলে ওদের এইভাবে কিছু ছবি তুলে নিচ্ছে।ফুল দিয়ে সাজানো রাস্তা।সেই রাস্তা দিয়ে একজন ওপর জনের হাত ধরে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে।মায়া ও রাজের এই হেঁটে চলা দৃশ্য ভিডিও করছে ক্যামেরাম্যান।এক সিড়ি উপরে দাড়িয়ে ওদের দিকে ফুল ছেটাচ্ছে সিয়া হিয়া ও মিলি।জারা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।জারার আর কি।সে কল্পনা করছে এই মায়ার জায়গায় আজ তার থাকার কথা।জারা স্লিভলেস হাতার লেহেঙ্গা পরেছে।তাকে দেখতেও সুন্দর লাগছে।কিন্তু আফসোস এই সাজ তার শখের পুরুষের উপর কোনো ইফেক্ট পরবে না।

রাজ ও মায়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসতেই মাহমুদ সরদার সেখানে হাজির হন।মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরলো রাজ।মাহমুদ সরদারের দুই হাত ধরে আছে দুজন।একপাশে মায়া আরেকপাশে রাজ।দুজনের হাত ধরে কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করেন।তারপর দুজনকে বর বউয়ের স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়।সবাই এসে একেক করে কংগ্রাচুলেট করে যায়।

মাইক হাতে নিয়ে এনাউন্সমেন্ট করতে থাকে রুদ্র।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”সো, মাই ডিয়ার ভাই অ্যান্ড ভাবী জির রিসেপশন পার্টির অনুষ্ঠান আরো জাকজমোক করা যাক। লেটস গো ফর ডিজে পার্টি।”

সবাই হাততালি দিয়ে সায় দেয়।একেক করে সবাই ড্যান্স ফ্লোরে হাজির হয়। ডিজে বাজতে শুরু করে।সব লাইট বন্ধ করে শুধু যারা নাচবে তাদের দিকে ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।হিয়া একপাশে দাড়িয়ে ছিলো।আজকে আর রুদ্র তার থেকে অনুমতি নেয়নি।সোজা হাত ধরে টান মেরে নিয়ে যায় ড্যান্স ফ্লোরে।হিয়া কিছু বলার আগেই হিয়ার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,”হুশ।কোনো কথা নয়।আজকে আমি আমার পার্টনার নিয়ে ড্যান্স করতে চাই।বাধা দিলে মানবো না।”

“আমি চাই না আপনার সাথে ড্যান্স করতে।”

“তোর চাওয়া লাগবে না।আমি যখন চেয়েছি তখন আমিই তোর সাথে ড্যান্স করবো।”
বলেই হিয়ার কোমড়ে হাত রেখে ড্যান্স করতে শুরু করে রুদ্র।কোমড়ে হাত পেতেই মনের ভিতর কাপাকাপি অনুভব করে হিয়ার।ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ কেমন গভীর হতে থাকে।হিয়ার নরম মনে এই স্পর্শ গভীর অনুভূতি পায়।চশমার ভিতর থেকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।চোখের পাতা নড়ছে না।রুদ্র নিজেও তাকিয়ে আছে হিয়ার চোখের দিকে।দেখতে থাকে তার চশমা পড়ুয়া হিয়াপাখিকে।

মালিনী একটি চেয়ারে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।মাহমুদ সরদার তার মতো আলাদা স্থানে দাড়িয়ে আছে।রাজ এসে মাহমুদ সরদারের পাশে দাঁড়ালো।গলা খাকারি দিয়ে বলে,”বউয়ের অভিমান ভাঙাতে ব্যার্থ তুমি বাবা।”

“নিজের বউকে দেখো তুমি।আমার বউকে আমি সামলে নিবো।”

“এই বয়সে এসেও বউকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারলে না।তোমাকে দেখে কি শিখবো বলোতো আমি?আমার বাচ্চারা বলবে তাদের দাদু হোপ ফর নাথিং।”

“তোমার বাচ্চাদের তোমার থেকে দশ হাত দূরে রাখবো।নাহলে অল্প বয়সে আমার নাতি নাতনী পেকে যাবে।”

“এমনি তোমরা বর বউ আমাকে আমার বউয়ের কাছে ঘেঁষতে দেওনা।কোনমতে বাচ্চা হলে তার কাছেও ঘেঁষতে দিবেনা।আসলে আমাকে তুমি জন্ম দিয়েছিলে কেনো বলতো বাবা।তোমার এসব অত্যাচার সহ্য করার জন্য?”

“না বাবা।আমাকে অত্যাচারে রাখতে জন্ম দিয়েছিলাম।যেটা এখন আমি ভুগছি।”

“সো সেড।এখন ভুগতে থাকো।”

মৌ এসে মায়ার সাথে গল্প করতে থাকে।একটু আগেই মৌ বমি করে এসেছে।এখন তার সময়টাই এমন যাবে। পিয়াশ এখন রাজের এসিস্ট্যান্ট কম মৌয়ের এসিস্ট্যান্ট বেশি।তারেক আশেপাশে তাকিয়ে সবকিছু দেখছে।হঠাৎ ফোনের শব্দ পেয়ে ওপেন করে দেখে।তাতে লেখা আছে,”মাই ডিয়ার ব্ল্যাক ডায়মন্ড। উফস তোমাকে আজকে ব্ল্যাক ড্রেসে হট লাগছে বেবী।একদম ব্ল্যাক চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলতে মন চাইছে।এমন লুকস না নিলেও পারতে আমার হবু বাবুদের আব্বু।”

ম্যাসেজটি দেখে তারেক তাকালো মকটেল কাউন্টারের দিকে।সেখানে তার ম্যাসেজ দেওয়া ব্যাক্তিটি মকটেল হাতে দাড়িয়ে আছে।সেও আজ নীল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।তারেক তাকাতেই সে তারেককে দেখিয়ে দিলো একটি ফ্লাইং কিস।সেই ব্যাক্তি আর কেউ না মিলি।মিলি তারেককে ভালোবেসেছে।ঠিক যেদিন মায়ার কোম্পানির উদ্বোধন হয়েছিলো সেদিনই এই কালো রঙের রূপের ছেলেটিকে নিজের মনে জায়গা করে নেয় মিলি।মিলি যেদিন তারেককে দেখেছে সেদিন থেকেই নিজের মধ্যে আলাদা ভালোলাগার অনুভূতি পেয়েছে। আস্তে আস্তে নিজের বাজে স্বভাব বদলাতে থাকে মিলি।তারেকের কোনো উত্তর সে আজ পর্যন্ত পায়নি।কিন্তু তার ভাবনায় আছে তারেক একদিন না একদিন তার ভালোবাসায় ধরা দিবে।সবসময় ছেলেরা কেনো মেয়েদের পিছনে লেগে থাকবে।মেয়েরা কেনো তার ভালোবাসার পিছনে ছুটবে না?মিলি যখন কাউকে তার মন দিয়েছে তখন তাকে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।মিলির বিশ্বাস সে তার ভালোবাসা অর্জন করবে।তারেককে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে আবার একটি ম্যাসেজ দেয়।সেখানে লেখা থাকে,”একদম নিজেকে কালো বলে অবজ্ঞা করবে না।তোমার রূপের কালো রং আমার কাছে মন ছুঁয়ে নিয়েছে।তোমাকে কালো চেহারায় মানায় বেশি।ওসব ফর্সা ছেলে তো হাজার পাওয়া যায় কিন্তু কালো বর্ণের প্রেমিক পুরুষ খুব কম সংখ্যক মানুষ পায়।আমি সেই কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে লাকি হতে চাই।”

এই ম্যাসেজটি দেখে তারেকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।এক সময় ছিলো তার পরী যে তাকে পাওয়ার জন্য করেছিলো বাবা মায়ের মন জয়। আর এখন এই মিলি যে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে তার মন পাওয়ার।কিন্তু সে তো পরীতেই আটকে আছে।যদিও আর কখনও পাবে না সে তার পরীকে।তার পরী যে হারিয়ে গেছে।ভাবতেই বুক ভার হয়ে আসে তারেকের।

সবার নাচগান শেষ। এখন রুদ্র মাইক হাতে নিয়ে আবার বলে ওঠে,”অনেক তো হলো ড্যান্স পারফরম্যান্স।এবার একটু গান দিয়ে অনুষ্ঠান মেতে উঠুক।আপনাদের সামনে গান গাইতে আসবে আমাদের ফ্যামিলির আরেক ইয়ং ম্যান যাকে আপনারা খুব কম দেখেন।সে তার কাজের আমাদের থেকে দূরেই থাকে।আমাদের মন্ত্রী মশাইয়ের একমাত্র মামাতো ভাই তার নাম। না নামটা আমি বলবো না আপনারা দেখে নিন তাকে।”

বলেই স্টেজ থেকে সরে গেলো রুদ্র।চারদিকে লাইট বন্ধ হয়ে যায়।সেই সাথে বাজতে থাকে গিটারের টুং টুং আওয়াজ।সবাই এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে শব্দের বেগ কোথা থেকে আসছে।হঠাৎ গোল আকারে স্টেজেই লাইট জ্বলে উঠে।একজন যুবক উল্টো ঘুরে আছে।তার হাতে আছে একটি গিটার।গায়ে ব্ল্যাক কালারের ব্লেজার।গিটার বাজাতে বাজাতে যেই সবার দিকে ফিরে তাকায় ওমনি পায়ের নিচে ফাঁকা অনুভব করতে থাকে মায়া। দেড় বছর পর সেই ব্যাক্তিকে দেখে গায়ে কাঁপুনি উঠছে তার। আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে পিছিয়ে যেতে নেয় মায়া।মৌ এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে।যুবকটি ঘুরেই তার চোখ মায়াতে সীমাবদ্ধ রাখে।ভয়ংকর চাহনি তার।গানের মাঝে বুঝিয়ে দেয় না পাওয়ার আকাঙ্খা।
যুবকটির গানের শেষ মাথায় এসে মায়া বিড়বিড় করে বলে,”বী বী বীর।”

মৌ অবাক হয়ে বলে,”কিন্তু ওকে তুমি মেরে ফেলেছিলে।”

“খুন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওকে শুট করার পরপরই ওখানে ওর দলের লোকজন চলে আসে।তারপর ও সুস্থ হলেও মেন্টালি রিকভার হয় না।তাই ওকে দেশের বাইরে ট্রিটমেন্ট করতে নিয়ে যায়।কিন্তু ও দেশে কবে ব্যাক করলো?আমার কাছে তো কোনো নিউজ আসেনি। আর ও রাজের মামাতো ভাই মানে কি?আমার থেকে মন্ত্রী মশাইকে আলাদা করে দিবে ও।ও যদি এখনই সবাইকে সবকিছু বলে দেয়।মন্ত্রী মশাই তো আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।”

“এমন কিছুই হবে না আপু।সবকিছু ঠিক হবে।ডোন্ট ওরি।”

বীর গান শেষ করে এগিয়ে আসে।মায়ার কাছে মনে হতে থাকে বীর তার কাছেই ছুটে আসছে।কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে দেখা যাবে বীর তার পরিবারের দিকে এগিয়ে আসছে।রুদ্র মাইক হাতে নিয়ে বলে,”তাহলে দেখলেন তো সবাই।আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে দ্যা হ্যান্ডসাম মাফিয়া আরহাম খান বীর।”

সবাই বীরকে দেখে হাততালি দেয়।এমনিতেও সবাই রাজ আর রুদ্রের জন্য ব্যাকুল।কিন্তু আজ তো রাজ মিঙেল হয়েছে।এখন সিঙ্গেল বলতে বীর ও রাজকে দেখে সবাই আবার ক্রাশ খেলো।আজকে মেয়েদের চাহনি শুধু বীর আর রুদ্রের দিকে।জারা এতক্ষণ মকটেল নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।বীরকে দেখার সাথে সাথে জারার হাত থেকে মকটেল পড়ে যায়।বাম হাত দিয়ে নিজের গায়ে বাতাস করতে করতে বলে,”হি ইজ সো হট।”

পার্টিতে থাকা মেয়েরা ত নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে শুরু করেছে।কে কাকে নিবে।একজন বলছে তাদের মনে রুদ্র জায়গা করে নিয়েছে তো আরেকজন বলছে তাদের মনে বীর জায়গা করে নিয়েছে।আবার তারা রাজকে দেখেও ক্রাশ খেয়ে বসেছিলো।

বীর এসেই জড়িয়ে ধরে রাজকে।তারপর বলে,”কংগ্রাচুলেশন ভাই।আমাকে ভুলেই গেছিস।দাওয়াত না দিয়েই বিয়ে করে ফেললি।”

“আরে ভাই হঠাৎ বিয়ে।অনেক কাহিনী। যাই হোক তোর শরীরের অবস্থা কি। তোর তো অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো।”

বীর এক পলক তাকালো মায়ার দিকে।বীরের কণ্ঠ মোটা।ভয়ংকর চাহনি তার।মায়ার দিকে তাকিয়ে বীর বলে,”নিজের জনেমানকে পেতে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি ভাই।এসব ক্ষুদ্র অ্যাকসিডেন্ট আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।”

রুদ্র এগিয়ে আসে বীরের দিকে। বীরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার জানেমানকে পাবে কি না জানি না।তবে তোমাকে সুস্থ দেখে আমরা সবাই খুশি ব্রো।”

বীর ডেভিল হেসে তাকালো মায়ার দিকে।মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”হাই, আই এম বীর। আরহাম খান বীর।”

মায়া ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাপতে থাকে।বীরের হাতে হাত মেলানোর সাহস সে পাচ্ছে না। বীর এখনও হাত বাড়িয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়া ধীরে ধীরে হাত মেলাতে যাবে ওমনি রাজ খোপ করে ধরে নেয় বীরের হাত।বীরের চোখের দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”আমার মায়াবতীর হাত ধরা তো দূরের কথা তার আশেপাশে কাউকে আমি সহ্য করতে পারবো না।দূর থেকে সাক্ষাৎ কর আমার একমাত্র বউয়ের সাথে।”

“আর যদি তোর বউকে নিয়ে উড়াল দেই?”

“তাহলে তোর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে উড়ে যাবে।”

“এতটা ভালোবাসা?”

“গভীর থেকে গভীরতর ভালোবাসা আমার আর আমার মায়াবতীর মাঝে।এই ভালোবাসায় ক্ষুদ্র ধূলিকণা সহ্য করবো না আমি।সেখানে কেউ আমার মায়াবতীকে স্পর্শ করবে এটা কিভাবে মেনে নেই?”

রাজকে রক্তাক্ত চাহনি দিতে দেখে অবাক হলো বীর।তার ভাইও তারমানে এই মেয়ের প্রতি গভীরভাবে ফেসে গেছে।কিন্তু তার তো তার জানেমানকে চাইই চাই।যে করেই হোক সে এবার মায়াকে নিজের করেই ছাড়বে।

চলবে…?