মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৪৯+৫০

0
6

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
মায়ার সাথে করে তারেকের ছোট বাড়িতে গেলো মিলি।গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলো তারেকের ঘরে।মায়া গাড়িতেই আছে।রাজ এসে বসলো মায়ার পাশে।রাজের কাধে মাথা রেখে তারেকের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।কলিং বেলের শব্দ বেড়েই চলেছে।না পেরে ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে দিলো তারেক।দরজার সামনে মিলিকে দেখে চোখ যেনো বড় বড় হয়ে গেলো।তারেককে কিছু বলতে না দিয়ে তারেকের বুকে কিল বসিয়ে দেয় মিলি।মারতে মারতে ভিতরে নিয়ে যায় তারেককে।মায়া ও রাজ এটা দেখে হেসে দেয়।

তারেককে সোফায় শুইয়ে মারতে থাকে মিলি।না পেরে মিলির হাত ধরে বসে তারেক।তারপর বলে,”মারছেন কেনো এভাবে?”

মিলি এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”কে আপনি হ্যা?আমি কি দেখতে বুড়ি নাকি তোমার সিনিয়র যে আমাকে আপনি আপনি করছ।আমাকে তুমি করে বলবে।শুধু তুমি না ‘আমার বাবুর আম্মু’ এভাবে ডাকবে।”

ভেবাচেকা খেয়ে তারেক বলে,”এহ!”

চোখ বড় বড় করে ভয় দেখিয়ে মিলি বলে,”এ না হ্যাঁ।চলো এখন।”

“কোথায়?”

“বিয়ে করব।কাজীকে কল করা হয়েছে।উনি আসছে।”

“এই রাতে কাজী!”

“হ্যাঁ ব্রোকে বলেছি।ব্রো বলেছে কাজী আসবে।”

“এই তোমরা ভাই বোন কি শুরু করেছো বলো তো?বিয়ে করবা দিনের বেলা তা না কাজীকে বউয়ের কাছ থেকে কেড়ে এনে ভোর নাহলে রাতের বেলা বিয়ে করো।সময় সুযোগ বুঝে বিয়ের অফার দিতে পারো না?”

“তুমি বিয়েতে রাজি হতে পারো না?বিয়েতে রাজি হলে তো ঠিক সময় করে ডাকতাম কাজী।”

“তুমি আমাকে বিয়ে করে সুখে থাকবে না।বেটার কাউকে দেখো।”

তারেকের টি শার্ট মুচড়িয়ে মিলি বলে,”ওয় তোমাকে কেউ বলেছে ভাষণ দিতে?আমি এই বাড়ির বউ হয়ে থাকবো।এমনিতেও বাড়িটা খারাপ না।বেশ পরিপাটি আছে।দুজনের জন্য এনাফ।”

“তোমার বাবা মা?”

“তাদের কথা ভাবতে হবে না।ব্রো আর ভাবী রাজী তাহলে টেনশন কিসের?তারা থাকতে কোনো সমস্যা নেই।শুধু তুমি রাজি হও তানাহলে কিন্তু এই রাতে কোনো একটা লাশ বেড় হবে এই বাড়ি থেকে।”
বলেই গুলি বেড় করলো মিলি।গুলিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে মায়ার গুলি এটা।মায়া তার গুলিতে ‘M’ স্টিকার দিয়ে রাখে।যেটা এখন তারেক দেখতে পারছে।শুকনো ঢোক গিলে তারেক বলে,”লাশ বেড় হবার দরকার নেই।আমার ঘরে জলজ্যান্ত মানুষ আসলেই ভালো হবে।”

তারেকের কথার মানে বুঝে হেসে দিলো মিলি।বলে,”তাহলে চলো ডাকি কাজী।”

“চলো।”

মিলি দরজার কাছে যেয়ে ইশারা করে মায়া ও রাজকে।হাতে একটি প্যাকেট নিয়ে আসে মায়া ও রাজ।তারেকের হাতে দিয়ে রাজ বলে,”এটা পরে আসো।”

তারেক গেলো চেঞ্জ করতে।মিলি অলরেডি লেহেঙ্গা পরা আছে।চারজন গার্ড মিলে ধরে বেঁধে নিয়ে আসে কাজীকে।ঘুমন্ত লুংগি পরা খালি গায়ের কাজী হেলতে দুলতে আসে তারেকের বাড়িতে।কাজীর এই অবস্থা দেখে রাজ বলে,”আজকেও কি বলিসনি যে শাহমীর রাজ ডেকেছে?”

একজন গার্ড বলে ওঠে,”বলেছি স্যার।ব্যাটা ঘুমে মন্ত্রীকেই ভুলে গেছে।দেখছেন চারজন ধরে আছি আর ব্যাটা এখনও ঘুমায়।”

খাবার টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে রাজ ছুড়ে মারে কাজীর মুখে।ধড়ফড় করে কাজী বলে ওঠে,”বউ আমার আর যাইও না বাপের বাড়ি তোমার নামে করে দিবো আমার বাকি সম্পত্তি।”

রাজ এবার জোরে হেসে দেয়।তারপর বলে,”ব্যাটা কাজী তুমি আসলেই একটা পাজী।মন্ত্রীর সামনে বউয়ের নাম নেও।”

কাজী এবার তাকালো রাজের দিকে।ভয়তে ঢোক গিলে বলে,”আজকে কার বিয়ে দিতে ডেকেছেন?”

“আমার বোনের।”

“একটা কথা বলব বাবা?যদি কিছু মনে না করো।”

রাজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।কাজী বলে,”তোমাদের পরিবারে যার বিয়েই দেও না কেনো আমাকে আগে থেকে একটু বলে দিও।কিন্তু বাড়িতে ঢুকে পাঁজাকোলা করে এনো না।তোমাদের জন্য বউ চলে যাবে আমার।”

কাজীর কথা শেষ হতে না হতেই সেখানে হাজির হয় রেজিস্টার। রেজিস্টার এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে,”এবার কি বউ রাজি বাবা?”

রাজ তাকালো রেজিস্টারের দিকে তারপর বলে,”এবার বউ রাজি তবে বর রাজি না।”

“কি বলো বাবা!তাহলে বিয়ে হবে কিভাবে?”

পকেট থেকে গুলি বেড় করে রাজ বলে,”এটা আছে কিসের জন্য?”

রেজিস্টার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে,”বলি কি বাবা যারা রাজি থাকে না বিয়েতে দোষ তো তাদের।তুমি তাদেরকে খুন করো।কিন্তু আমরা তো দোষ করিনি আমাদের কেনো মারবে?”

রাজ এবার চ করে ওঠে।তারপর গার্ডদের বলে,”এদের মুখ বেঁধে রাখো তো।খালি বাজে কথা বলে।বিয়ের সময় শুধু মুখ খুলে দিবে।”

তারেক এলো পাঞ্জাবি পরে।মিলিকে একটু ঠিক করে দিলো মায়া।তারপর মিলিকে নিয়ে হাজির হলো ডাইনিং রুমে।কাজীর কাজ কমপ্লিট করলে রাজ তাকালো রেজিস্টারের দিকে।উনি রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”কাগজপত্র তো রেডি নেই বাবা।”

কঠিন চোখে তাকালো রাজ।রেজিস্টার ভয় পেয়ে বলে,”ইয়ে মানে এগুলো রেডি করতে গেলে তো আগে থেকে জানা লাগে।মন্ত্রীর বাড়ির মেয়ের বিয়ে হবে আগে জানলে নাহয় কাগজ রেডি রাখতাম।কিন্তু আমি তো জানতাম না।”

এবার মায়া তার নিজস্ব উকিলকে কল করে বলে,”রেজিস্ট্রি পেপার রেডি করুন।এক ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রি করা হবে।”

বলেই কল কেটে দিলো মায়া।রাজ এবার সোফায় হেলান দিয়ে বলে,”বেচারা উকিল!নিজের বিবাহিত জীবন না দেখে অন্যের বিয়ের পাঁয়তারা শুরু করবে।ঠিকই আছে এদের জন্য।আমি মন্ত্রী হয়ে বউ নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরতেছি এরা কেনো বউ নিয়ে আরামে থাকবে?”

কাজী এবার সাহস করে রাজকে বলে,”মনে কিছু না করলে গুরুজন হিসেবে একটা কথা বলব বাবা?”

রাজ তাকালো কাজীর দিকে।কাজী বলদের মতো হেসে বলে,”তোমার বউ মনে হয় তোমার দ্বারা সুখী না।তাই তো বিয়ে করতে রাজি ছিলো না এখন আবার বউকে কাছে পাও না বলে আফসোস করো।”

রাজের চোখে মুখে হিংস্রতার ছাপ।দেখে মনে হচ্ছে বাঘের রূপ ধারণ করেছে।কাজী শুকনো ঢোক গিলে বলে,”না মানে নিজে বউকে কাছে পাও না বলে আমাদের মতো অসহায় মানুষদেরকে বউ থেকে দূরে রাখো।কখনও সকালের শীতের ভিতর বউয়ের কাছ থেকে দূরে রাখো তো কখনও রাতের গরমের আভাসে বউয়ের থেকে দূরে রাখো।এভাবে চললে তো আমরা বুড়ো বয়সে বউ হারা হবো বাবা।তার থেকে তোমাকে তোমার বউয়ের মন পেতে আমি উপায় দিতে পারি।”

কাজীর শেষের কথাটি পছন্দ হলো রাজের।হেলান দেয়া থেকে উঠে বসে বলে,”কি উপায় পাজী থুড়ি আমার দুষ্টু কাজী?”

লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা করে হেসে কাজী বলে,”আমার কাছে একজন কবিরাজ আছে।উনি বউকে কাছে পাওয়ার দোয়া দুরুদ জানে।যেটা পানিতে ফু দিয়ে দিবে উনি।তোমার বউকে ওটা খাওয়ালে বউ আর রাতের বেলা পালাই পালাই করবে না।”

হো হো করে হেসে দেয় রাজ।কাজীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার যেনো কয়টা বাচ্ছা?”

“আজ্ঞে দুইটা।”

“দুটোই তো আগের ঘরের?”

“হ্যাঁ।”

“তিন নম্বর বিয়ে তো দুই বছর ধরে হয়েছে।বাচ্চা নেও না কেনো?”

এবার চুপ হয়ে গেলো কাজী।রাজ বলে ওঠে,”বেশি পক পক করলে আমি নিজ দায়িত্বে তোমার বউকে অন্যের গলায় ঝুলিয়ে দিবো কাজী।আমার এই গুলির পাওয়ারে তোমার কবিরাজের পানি পড়া কাজে লাগে কি না দেখিয়ে দিবো।”

কাজী এবার পুরো চুপ হয়ে গেলো।আসলেই সত্যি কথা।পানি পড়া খেয়ে যা একটু বউ আছে।রাজের গুলি দেখলে বউ ওখান থেকে পালাবে।ওদের কথার মাঝে মায়ার উকিল চলে আসে।রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে এসে সই নিলো মিলি ও তারেকের।সাক্ষী হিসেবে ছিলো মায়া ও রাজ।

গভীর রাতে গান বাজনার সাথে গাড়ি আসছে সরদার বাড়িতে। ঢাক ঢোল বাজতে থাকে জোরে জোরে।সবাই উঠে যায় ঘুম থেকে।মৌয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই এসে যে যার মতো ঘুমিয়ে গেছিলো।এখন উঠে পরে।সোনালী এখন আলাদা ঘরে ঘুমায়।মোহন সরদার তার রুমে আছে। ঢাক ঢোলের শব্দে সবাই বেড় হয়ে এলেও মোহন সরদার এখনও আসেনি। আয়রা নিজেও এসেছে হল রুমে। ঢাক ঢোলের তালে তালে নাচতে থাকে মায়া ও রাজ।গাড়ি থামার সাথে সাথে গাড়ি থেকে বেড় হয় মিলি ও তারেক।এদেরকে একসাথে দেখে হা হয়ে যায় সোনালী।সিয়া দৌড়ে গেলো মিলির কাছে।মিলিকে জড়িয়ে বলে,”ভাইয়া বলল তুমি ভাইয়ের সাথে তাই আমরা রিলাক্স ছিলাম।কিন্তু তুমি গলায় মালা নিয়ে পাশে তোমার ব্ল্যাক ডায়মন্ডকে নিয়ে আছো যে।কাহিনী কি?”

মিলি লাজুক হেসে বলে,”তোদের বোন এখন বিবাহিত। তাই তার স্বামীকে নিয়ে এসেছে।”

সিয়া খুশি হয়।কিন্তু মিলির হাত ধরে এক টান দিলো সোনালী।মিলির গালে চড় মারতে যাবে ওমনি সোনালীর হাত ধরে মায়া।রক্তিম চোখে মায়া বলে,”মেয়ে বিয়ে করে এসেছে সুখে সংসার করবে বলে।আপনার হাতে চড় থাপ্পড় খেতে নয়।”

সোনালী চোখ রাঙিয়ে বলে,”আমার মেয়েকে আমি মারব নাকি কি করব এটা আমার ব্যাপার।তুমি মাথা ঘামানোর কে?”

“ব্যাপারটা একান্ত আপনার হলে আমি ইন্টারফেয়ার করতাম না।কিন্তু এখানে আমার ভাইয়ের ব্যাপার।সেই ভাই যার চারকুলে আমি ছাড়া কেউ নেই।তার মৃত মায়ের কাছে ওয়াদা করে রেখেছি তার সবকিছুর খেয়াল রাখবো আমি।সেই ভাইয়ের বউকে নিজের সামনে মার খেতে দেখি কিভাবে?”
কথাগুলো হলেই হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো মায়া।মাহমুদ সরদার এসে মিলি ও তারেককে ভিতরে নিয়ে আসে।

এখন প্রায় ভোর।রাতে ঘুম হয়নি কারো।সূর্য উঠেছে মাত্র।মাহমুদ সরদারের কথামত কিছু গহনা এনে দিলো মালিনী।দুজনকে বরণ করে মাহমুদ সরদার বলেন,”তোমরা এখন একটু ঘুমিয়ে নেও।মিলি মা এখন সিয়ার ঘরে যাও আর তারেক রুদ্রর ঘরে যাও।আমরা মিলির ঘরটা সাজাবো আজ।আজকে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান সেরে তোমাদের পাবলিকলি গ্রহণ করব।”

মালিনী বলেন,”আজকে তো ভাই ভাবী আসবে। বীরের কবর দেখতে।”

“কিছু করার নেই।বিয়ে যখন হয়েছে অনুষ্ঠান হবে। আর ভাই ভাবী এসে তো বেশ কয়েকদিন থাকবে।তাই প্রথমদিন নাহয় এদের অনুষ্ঠান উপভোগ করুক।”

মামা মামী আসবে বলে একটু চিন্তায় পড়ল রাজ।মাহমুদ সরদার এসে রাজের কাধে হাত রেখে বলেন,”চিন্তা করো না।এবার যা হবে ভালো কিছু হবে।”

রাজ মাথা দুলিয়ে বলে,”ভালো কিছু হতেই হবে।”

বীরের বাবা মা আসবে শুনে সোনালীর মুখে হাসি ঝুলে আছে।যেটা চোখ এড়ায়নি মায়ার।সবার দিকে তাকানোর পর মায়ার চোখ গেলো আয়রার দিকে।আয়রা নিজেও হেসে দেয়।মায়া এবার তারেকের পাশে এসে বলে,”কংগ্রাচুলেশন ভাই।”

“থ্যাংক ইউ।”

“বিয়ে হয়েছে বলে এবার শাশুড়ির দলে চলে যাবে না তো?”

তারেক দেখলো সোনালীকে।বলে,”এই তারেক কখনও বেইমানি করতে শিখেনি ম্যাডাম।এটুকু আপনি বিশ্বাস রাখতেই পারেন।”

“বীরের বাবা মা আসতে চলেছে।আমাদেরকে আরো বেশি সবদিকে নজর রাখতে হবে।বিশেষ করে এই সোনালীকে।অফস তোমার শাশুড়িকে।আমার শাশুমাকে আমি নিজেই দেখে রাখবো।এক কথায় এরা একেকজন কে কোথায় যায় এটা আমাদের জানতে হবে।”

আলতো হেসে তারেক বলে,”এই বাড়ির জামাই হয়েছি তো শাশুড়িকে জ্বালাতে।চিন্তা করবেন না আমি আমার শাশুড়িকে ফলো করব আর আপনি আপনার শাশুড়িকে।”
বলেই মায়া ও তারেক একে অপরকে দেখে ভিলেনি হাসি দেয়।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫০
#ইশরাত_জাহান
🦋
চারিদিকে তাজা ফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।সরদার বাড়ি এখন আনন্দে মেতে উঠেছে।মিলিকে সাজিয়ে দিচ্ছে পার্লারের লোকজন।পাশে বসে আছে মিলির বান্ধবীরা।ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে মিলির মুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট।তারেককে নিয়ে ব্যাস্ত আছে পিয়াশ।মৌ এসেছে আজ।মায়ার সাথে বসে গল্প করছে এখন।ফোলানো পেটের উপর হাত রেখে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে মৌ।মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে সাজাচ্ছে।কিছু একটা ভেবে মৌ বলে,”আচ্ছা আপু বীরের বাবা এতগুলো মাস পরে কেনো আসবে?বীর মারা যাওয়াতে আসেনি এটা সময়ের সাথে টিকিট পাবে না মানলাম।কিন্তু এর পরও তো কয়েকমাস গেলো।তাহলে আসেনি কেনো?”

মুখে ব্লাশ করতে করতে মায়া বলে,”নট শিওর।কিন্তু মিসেস সোনালীর ভাবগতি অন্যরকম।হতেও পারে আমাকে আর মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে বীরের বাবা মায়ের কানে কুপরামর্শ দিলো।ওনার ছেলে যে আমার জন্যই আত্মহত্যা করেছে।”

“এটাই তো চিন্তা আমার।বুঝতে পারছি না ওনারা তোমাকে কোন নজরে দেখবে।”

“যে নজরেই দেখুক না কেনো এই মায়ার সাথে পারবে না।প্রতিটি পদক্ষেপে মায়া তার প্রতিপক্ষকে হার মানিয়ে দিবে।”
বলেই রহস্যের হাসি দিতে থাকে মায়া।মৌ নিজেও সামিল হয় মায়ার এই হাসির সাথে।

আস্তে আস্তে লোকজনের আগমন বৃদ্ধি পেতে থাকে।সরদার বাড়ির বড় হলরুম এখন বিয়ে বাড়ির রূপ নিয়েছে।সবাই এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে।মিলি ও তারেককে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাদের স্টেজে।সবাই এসে কংগ্রেস করতে থাকে।মোহন সরদার বসে আছেন একটি চেয়ারে।তার পা অচল হয়ে আছে।সোনালী যখনই তারেক আর মিলির দিকে তাকায় তখনই ক্ষিপ্ত হয়।এই ছেলে এমনি তার পছন্দ না।এখন আবার তার মেয়ের সাথে জড়িয়েছে।ভাবতেই বিরক্ত লাগছে তার।আয়রা একটি স্লিভলেস হাতার লেহেঙ্গা পরেছে।ঠোঁটে বিয়ের আনন্দের হাসি ফুটিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।উদ্দেশ্য মোহন সরদারের কাছে যাওয়া।নার্স হয়ে তো তার পেশেন্টের কাছেই যাবে।সোনালী সিড়ির দিকে তাকাতেই এই দৃশ্য দেখে আরও তেতে ওঠে।একবার আয়রা তো আরেকবার মোহন সরদারের দিকে তাকালো।মনে মনে বলে,”অচল হয়েও বুড়ো মেয়ে পটানো ছাড়লো না।এখনও যুবতী নার্স পায়।যত্তসব আদিক্ষেতা।”

আদ্র এসেছে আজ সরদার বাড়িতে।উদ্দেশ্য ছিলো মোহন সরদারকে দেখতে।সেই সূত্রে মিলির বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকে আদ্র।বাড়ির ভিতরে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে আদ্র।আয়রার দিকে তাকাতেই আয়রা মুচকি হেসে চলে যায় মোহন সরদারের কাছে।নীল রঙের জর্জেট শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে সিয়া।স্লিভলেস হাতা হওয়ায় সিয়ার কাধ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।এদিকে জর্জেট শাড়িতে পেটের কিছু অংশ দেখা যায়।এইসব কিছু চোখ এড়ায় না আদ্রর।আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো দুই এক ছেলে মিলে সিয়াকে দেখছে।নিজের হাত মুঠ করে রাখে আদ্র।এদিক ওদিক দেখে সরে যায় সেখান থেকে।

একটি বাচ্চা এসে সিয়াকে বলে,”আপু তোমাকে একজন ডেকেছে।তোমার রুমে এখন সে।”

ভ্রু কুঁচকে এলো সিয়ার।বাচ্চাটিকে বলে,”আচ্ছা বাবু আমি যাচ্ছি।”
বলেই চলে যায় নিজের ঘরের দিকে।ঘরের ভিতর আসতেই পিছন থেকে খট করে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পায় সিয়া।পিছনে তাকিয়ে দেখে আদ্র দাড়িয়ে।সিয়া বলে ওঠে,”আপনি ডেকেছেন আমাকে?”

আদ্র কোনো কথা না বলে সিয়ার হাত ধরে দেওয়ালে চেপে ধরে।সিয়া ঘাবড়ে যায়।আদ্রর চোখ মুখে হিংস্রতা স্পষ্ট।এটা দেখে সিয়া তোতলাতে থাকে।ভয়তে ভয়তে বলে,”আ আপনি ঠিক আছেন তো?ভুলভাল কিছু খেয়েছেন কি?”

এক আঙ্গুল সিয়ার ঠোঁটের উপর রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে আদ্র বলে,”হুশ।এসব কি ড্রেস পড়েছো তুমি?তোমার গোপনীয়তা বজায় রাখতে শেখো বলে দিলাম।নাহলে কিন্তু অবৈধ নজরে ছারখার হয়ে যাবে।”

“কিন্তু এটা তো ফ্যাশন।সব মেয়েরাই পরেছে আজ।আমি পরলে দোষ কোথায়?”

সিয়ার কথায় রাগ বাড়লো আদ্রর।সিয়ার দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে।হালকা চোখ মুখ কুঁচকে আসে সিয়ার।আদ্র বলে ওঠে,”ফ্যাশন মানে নিজেকে উন্মুক্ত করে পরিবেশন করা না। আর সব মেয়েদের দিকে আমার চোখ যায় না যে আমি তাদেরটা দেখতে যাবো।আমার চোখ যার দিকে আমি তাকেই ঠিক রাখতে চাই।নিজেকে পরিপূর্ণ ঠিক করে তারপর বাইরে আসবে বলে দিলাম।নাহলে তোমার ভাইয়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাবো।ভালোবাসার মূল্য কিন্তু তোমার ভাইও দিতে জানে।আফটার অল সেও তার মায়াবতীকে কিডন্যাপ করেই বিয়ে করেছে।”
বলেই বেড় হয়ে যায় আদ্র।শেষের কথাগুলো শুনে খুশি হয় সিয়া।ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা দেখা দেয় তার।আদ্রর চোখ শুধু তার দিকে।এতেই তো স্পষ্ট যে আদ্র তাকে ভালোবাসে।

একসাথে মিলে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে।সিয়া শাড়ি পাল্টে এসেছে।এখন তাকে দেখে আদ্র আর কোনো রিয়েক্ট করেনি।বরং মিষ্টি এক হাসি উপহার দেয়।বিয়েতে নাচ গানের আয়োজন করা হয়েছে।কিছু কপোত কপোতী মিলে নাচতে থাকে স্টেজে।ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আজ নাচ করছে মায়া ও রাজ।বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলতেই হঠাৎ গান বন্ধ হয়ে যায়।মিউজিক বক্সের দিকে তাকাতেই সবাই দেখে মালিনী সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।গান বন্ধ করে দিয়েছে সে।তারপর খুশি হয়ে ছুটে যায় সদর দরজার দিকে।সবার চোখ এখন সেদিকে।সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে রাজের মামা বিভান ও মামী রাজিয়া।মালিনী এসে জড়িয়ে ধরে তাদের।মিস্টার বিভান এসে হ্যান্ডশেক করে মাহমুদ সরদারের সাথে।রাজ নিজে এসে জড়িয়ে ধরে তার মামাকে।রাজকে ছেড়ে এবার তাদের চোখ যায় মায়ার দিকে।মায়া নিজেও তাকিয়ে আছে মিস্টার বিভানের দিকে।মৌ আতঙ্কে আছে।লোকসুম্মুখে কিছু বলে না বসে।আর মায়া নিজেও তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না।রকচটা হয়ে অঘটন না করলেই হয়।মিস্টার বিভান ও মিসেস রাজিয়া এসে দাড়ালো মায়ার সামনে।হালকা হেসে বিভান বলেন,”তুমি আমাদের রাজের বউ?”

বিভানের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”জী আমি শাহমীর রাজের ওয়াইফ মেহেরুন জাহান মায়া।”

রাজিয়া এসে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মায়ার থুতনিতে হাত রেখে বলে,”তোমার রূপে আসলেই মায়া আছে।তাই তো এই মায়াবতী রূপে জ্বলে পুড়ে যায় হাজারো পুরুষ।”

মায়া খোঁচা দেওয়া কথাটি বুঝতে পারে।রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে মায়া নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,”পুরুষদের নজরদোষ থাকলে আমার রূপে আর কি আসে যায় বলুন।আমার রূপ তো আমি বানিয়ে আনিনি।”

কথাটি যে বীরের উদ্দেশে বলা এটা রাজিয়ার মস্তিষ্কে খুব ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।মায়া রাজিয়াকে ভালোভাবে স্ক্রল করতে থাকে।হঠাৎ রাজিয়ার হাতের দিকে এসে চোখ আটকে যায়।রাজিয়ার বাম হাত উচু করে অনামিকা আঙ্গুলে তাকিয়ে বলে,”এই আংটিটা আপনার?”

রাজিয়া হালকা হেসে বলে,”উহু আমার না।তোমার শাশুড়ির।মালিনী আমাকে গিফট করেছে।আমার খুব ভালো লাগে তাই।বলতে পারো তোমার শাশুড়ির শখের আংটি আমি নিয়ে নেই।”

মায়া এবার কঠিন চোখে তাকালো মালিনীর দিকে।এই আংটি সেদিন শাহানা পারভীনের মাথায় আঘাত করার সময় দেখেছিলো মায়া।মায়ার হাত পা কাপছে।এখনই চুরির আঘাতে ভষ্ম করে দিতে মন চাইছে মালিনীকে।এমন এক নজর স্পষ্ট দেখা যায় মায়ার চোখে।রাজিয়া এটা দেখে বলে,”তোমার কি এই আংটি খুব পছন্দ হয়েছে?তোমাদের বিয়ে উপলক্ষে কিছু দিতে পারিনি।এটা নিতে পারো তুমি।”

মায়া এবার রাজিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে বলে,”সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস মায়া নেয় না।”

অপমান বোধ করলো রাজিয়া।মায়ার কথাতে পাত্তা না দিয়ে বিভান টেনে নিয়ে যায় রাজিয়াকে।অনুষ্ঠান শেষ করে মিলিকে নিয়ে বাসরে আনা হয়।তারেক ও মিলিকে রুমে রেখে সবাই চলে যায়।ঘোমটা দিয়ে বসে আছে মিলি।সিনেমায় দেখেছে নায়িকারা এভাবে থাকে নায়ক এসে ঘোমটা উঠিয়ে দিয়ে প্রশংসা করে।মিলিও চায় তারেক ওর সাথে এমনটা করুক।তাই ঘোমটা মুখে দিয়ে মিটমিট হাসতে থাকে সে।প্রিয় পুরুষের সাথে প্রথম প্রণয় হবে তার।কিন্তু মিলির আসাতে পানি ঢেলে তারেক খাটের এক কোনায় বসে পানি খেতে থাকে।মিলি কিছুটা রেগে যায়।নিজে থেকেই ঘোমটা উঠিয়ে তারেকের ঘাড় ধরে মিলির দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,”সারাদিন কি এমন খেটেছো যে এখন পানি গিলতে হচ্ছে?”

মিলির এমন ঘাড় ঘোরানোর জন্য একটু ঘাবড়ে যায় তারেক।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে অ্যাটাক করবে এটা যেনো ভাবনার বাইরে।তারেক বলে ওঠে,”পানিই তো খাচ্ছিলাম অন্য কোনো নারীর কাছে তো যাইনি যে এভাবে রিয়েক্ট করছো?”

“অন্য নারীর কাছে যাওয়া তো দূর অন্য নারীর দিকে তাকিয়ে দেখো চোখদুটো দিয়ে মার্বেল খেলতে থাকব।”

“বাসর রাতে কেউ স্বামীকে এভাবে ভয় দেখায়!”

“এই মিলি দেখায়।”

“জীবনে কোনো কাজ করে পাপ করছি কি না জানি না বিয়ে করে মস্ত বড় পাপ করছি।”
হালকা ঢোক গিলে বলে তারেক।মিলি রেগে বোম হয়ে আছে।তারেকের কলার চেপে ধরে বলে,”তোমার এই পাপকে পূণ্য করব আমি।”

“কিভাবে?”

“তোমার বাবুর আম্মু হয়ে।”

“এত তাড়াতাড়ি বাবু?”

“হ্যাঁ,এত তাড়াতাড়ি বাবু।”

“তোমরা ভাই বোন এত বাবু বাবু করো কেনো বলো তো?একজন জনসম্মুখে বাবু বাবু করে তো আরেকজন বাসরের শুরুতেই বাবু বাবু করে।”

“তোমরা বাবু দিতে দেরি করো কেনো বলো তো?ভাইকে যদি ভাবী একটা বাবু দিতো ভাই কি বাবুর জন্য ভিক্ষা করতো?আমাকে একটা বাবু দেও আমিও ভিক্ষা করব না তোমার কাছে।”

“লুচ্চা ভাইয়ের লুচ্চা বোন যাকে বলে।”

“অদ্ভুত তো বাসর ঘরে বরের কাছে বাবু চেয়েছি এটা নাকি লুচ্চামি।বলি আমি কি পর পুরুষের কাছে বাবুর কথা বলব?”

“শোনো মেয়ে এভাবে বাবু বাবু করতে নেই।এটা সময় হলে আসবে।মেয়ে হয়ে জন্মেছো একটু লজ্জা পাও। লজ্জাই নারীর ভূষণ।”

মিলি এবার চোখ বড় বড় করে বলে,”গত দশ মিনিট ধরে ঘোমটা দিয়ে লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করেছি।লাভের লাভ কিছুই হয়নি।বাসরে কই ভাবলাম স্বামী এসে আমার ঘোমটা উঠিয়ে আমার রূপ নিয়ে প্রশংসা করবে।কিন্তু না তা আর হলো কোথায়?”

মিলির গালে এক আঙ্গুল ছুঁয়ে ওই আঙুল মিলির মুখের সামনে নিলো তারেক।মিলিকে দেখিয়ে বলে,”এই দেখো মেকআপের কিছু অংশ আমার আঙ্গুলেই আছে।এই আর্টিফিশিয়াল রূপের আবার প্রশংসা চাও তুমি।মুখ ধুয়ে আসো আগে দেখি মেকআপের আড়ালে সুন্দরী আছে নাকি পেত্নী।”

অপমান গায়ে লাগলো মিলির।ঠোঁট উচু করে রাগ দেখালো তারেককে।ড্রেসিং টেবিল থেকে মেকআপ বক্স এনে তারেকের মুখে মাখতে থাকে।একটি লাল টুকটুকে লিপস্টিক দিয়ে তারেকের ঠোঁটের পাশে লাগিয়ে দেয়।কাজল এনে তারেকের কপালে লাগিয়ে দেয়।তারেক হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে।যার কারণে লিপস্টিক কাজল তারেকের মুখের চারপাশে লেগে যায়।সোনালী এসেছে মিলির রুমের সামনে।দরজা ধাক্কাতে থাকে সে।তার উদ্দেশ্য মিলিকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।মিলিকে তারেকের মতো কালো ও গরীব ছেলের সাথে সে মেনে নিতে পারছে না।গরীব তার উপর আবার মায়ার এসিস্ট্যান্ট।মায়াকে অপছন্দ হওয়ায় এখন তারেককে অসহ্য লাগতে শুরু হয়।তারেকের কাছ থেকে দূরে রেখে মিলিকে কিছু কু মন্ত্রণা দিয়ে মিলি ও তারেককে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।এমন চিন্তা ধারা জাগরণ করেছে সোনালীর মনে।দরজা ধাক্কানোর শব্দে মিলি ও তারেক অবাক হয়ে তাকালো দরজার দিকে।তারেক এবার নিজে মুখ ফুটে বলে,”বাসরে কোন বিবেকহীন বান্দা এসে দরজা ধাক্কায়!”

মিলি অবাক হলো তারেকের কথায়।বত্রিশ পাটি বেড় করে তারেককে দেখতে থাকে।মজা করে বলে,”দুষ্টু বর।”
বলেই দরজা খুলে দেয় মিলি।সোনালীকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে মিলি।তারেকের সাথে মেকআপ নিয়ে মারামারি করার ফলে মিলির লেহেঙ্গা একটু এদিক ওদিক হয়ে আছে।চুলগুলো উস্কো খুস্কো দেখা যাচ্ছে।সোনালীর হৃদপিণ্ডে যেনো মোচড় খেলো।দরজা ধাক্কানোর শব্দ সিয়া ও রাজের ঘর অব্দি এসেছে।রুদ্রের ঘরে পিয়াশ ও মৌ ছিলো।সেই ঘরেও শব্দ আসে।মিলি দরজা খুলছিলো না বলেই জোরে দরজা ধাক্কায় সোনালী।মায়া রাজ সিয়া ও পিয়াশ এসে দাড়ালো সেখানে।সবাইকে দেখে মিলি এবার ভিতরে ঢুকে লেহেঙ্গা ঠিক করে। লজ্জা পেয়ে পিয়াশ ভিতরে ঢুকে যায়।মৌ জিজ্ঞাসা করে,”কি হয়েছে?”

পিয়াশ খাটের উপর বসে বলে,”স্যার যে কেনো লাগামহীন এটা আমি এখন বুঝলাম।”

“কেনো কি হয়েছে?”

“এই বাড়ির বয়স্ক লোকেরাই তো বিবেকহীন। বাসর ঘরে কেউ এভাবে দরজা ধাক্কায়?তাও মা হয়ে!”

মৌ হা হয়ে যায়।বলে ওঠে,”কি বলো!মিলি ও তারেকের ঘরে দরজা ধাক্কানো হচ্ছিলো?”

“হ্যাঁ,কোন মা পারে এমন করতে?বাসরে মেয়ের মা এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে।ছিঃ কি লজ্জা।”

হেসে দেয় মৌ।পিয়াশ লাইট অফ করে দেয়।শাশুড়িকে দেখে কিছুক্ষণ হা হয়ে ছিলো তারেক।মায়া হালকা হেসে বলে,”মেয়ের বাসরে শাশুড়ি কি করে?মেয়েকে মিস করছিলেন নাকি জামাইকে নাকি পুরো বাসরের সিনটাকে?”

মায়ার এমন কথা শুনে রেগে গেলো সোনালী।মিলির হাত ধরে বলে,”অনেক হয়েছে আমার আড়ালে প্রেম বিয়ে।এখন আমি যেটা বলব সেটাই করবে।চলো আমার সাথে আমার ঘরে।”

মিলিকে নিয়ে দুই পা এগোতেই মিলির আরেক হাত খোপ করে ধরে তারেক।সোনালী বাধা অনুভব করল।ঘুরে তাকিয়ে দেখলো তারেক মিলির হাত ধরে দাড়িয়ে আছে।সোনালীর দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে তারেক বলে,”একটু ভুল বললেন শাশুড়ি মা।”

তারেকের মুখে শাশুড়ি মা যেনো বিষের মতো লাগলো সোনালীর কাছে।চোখ রাঙিয়ে তাকালো তারেকের দিকে।তারেক আবার বলে,”বিয়ে করলেও প্রেম এখনও হয়নি।আপনার মেয়ে শুরু করেছিলো কিন্তু আমি শেষ করিনি,শাশুড়ি মা।”

মিলি খুশি হয়ে তাকালো তারেকের দিকে।তারেকের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”কিন্তু তোমার মুখের মেকআপ দেখে তো মনে হচ্ছে আমি মন্ত্রী হয়ে যা এতগুলো মাসে সফল করতে পারিনি তুমি তা এক রাতেই সফল করেছো।বাবা না হই মামা হওয়ার মতো নিউজ শীঘ্রই পাবো।”

সিয়া দৌড়ে চলে যায় ঘরে।এদের কান্ড দেখে লজ্জা লাগছে তার।মায়া চোখ গরম করে তাকালো রাজের দিকে।বলে ওঠে,”লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”

তারপর সোনালীর কাছে এসে সোনালীর থেকে মিলির হাত ছাড়িয়ে বলে,”মাঝরাতে স্বামী স্ত্রীর ঘরে এসে বিরক্ত করা আর তার সাথে অন্যদের ঘুমের সমস্যা তৈরি করার জন্য কিন্তু আপনাকে শাস্তি দিতে পারি।ভুলে যাবেন না আমি কিন্তু কথা কম বলি কাজে করিয়ে দেখিয়ে দেই।তাই ভালোয় ভালোয় নিজের বিবেকবোধ ফিরিয়ে আনুন।অন্যের সংসার ভাঙার মতো কাজ করেছেন এখন মেয়ের সংসার ভাঙবেন না।অন্তত এটা মানুন যে এখন যার সংসার ভাঙতে এসেছেন সে আপনার মেয়ে।”

“আমার মেয়ের সাথে আমি কি করব এটা তোমাকে বলব?আমি ওকে নিয়ে এখান থেকে যাবো।তোমাদের আশকারা পেয়ে এই বিয়ে করেছে এখন আমি ওকে নিয়ে যাবো।দেখবে ওর ঘোর কাটলে কালকেই নিজে থেকে ও এই ছেলেকে তালাক দিবে।”

সোনালীর চোখের দিকে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে মায়া বলে,”কি এমন ঘোল খাওয়াবেন মেয়েকে?যেটা অন্যদের খাওয়ান!”

ঘাবড়ে গেলো সোনালী।মায়ার চোখে স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে নিয়ে রহস্য জনক কিছু।মায়া কি তাকে নিয়ে কিছু জানে।ভাবতে থাকে সোনালী।মায়া হালকা হেসে সোনালীর কানের কাছে এসে বলে,”আপনার ওসব দুই নাম্বারী কাজের দিন শেষ এবার এই মায়ার দিন শুরু।আস্তে আস্তে সব হারাবেন।এখন চুপচাপ মেয়েকে জামাইয়ের সাথে থাকতে দিন।নাহলে পুরো পরিবারের সামনে আপনার গোপন ব্যাবসা আমি ফাঁস করে দিবো।যেটা জানলে মন্ত্রী মশাই আপনাকেও..”

আর কিছু বলতে পারলো না মায়া।সোনালী নিজে থেকেই হাঁটতে থাকে।চলে যায় নিজের ঘরের দিকে।মায়া দেখলো সোনালীর যাওয়া তারপর তারেকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে।তারেক চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয় মায়াকে।রাজ এসে মায়াকে বলে,”তাহলে চলো মায়াবতী।নাকি এখন বস হয়ে অ্যাসিসট্যান্ট এর বাসর লাইভ দেখবে?”

ফিক করে হেসে দেয় মিলি।তারেক ভিতরে চলে যায়।মায়া চোখ কটমট করে তাকায় রাজের দিকে তারপর চলে যায় ঘরের ভিতর।রাজ ওদের গুড নাইট জানিয়ে চলে আসে।

নিজের ঘরে এসে হাতে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ নিবারণ করছে সোনালী।মায়ার কথাতে স্পষ্ট যে মায়া তার গোপন ব্যাবসা সম্পর্কে জানে।তারমানে তাকে এখন সবকিছু তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে হবে।

চলবে…?