#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৬৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
খাটের কোনায় হেলান দিয়ে হাটুর মাঝে মুখ গুজে কান্না করছে হিয়া।রুদ্রকে অনেক অপমান করেছে।এখন রুদ্রের বিষয়ে জেনে তার খারাপ লাগছে।ওর সামনে যাওয়ার মত মনোবল শক্তি পাচ্ছে না।হিয়ার ঘরের দরজার কাছে এসে রুদ্র দাড়িয়ে আছে।দেখতে থাকে কান্না করা হিয়াপাখিকে।ধীরে ধীরে এসে হিয়ার পাশে বসে বলে,”হিয়াপাখি।”
কান্নারত লাল মুখটা উচু করে তাকালো হিয়া।রুদ্র তাকিয়ে আছে তার দিকে।মুখে বিজয়ের হাসি।হিয়া কেনো কান্না করছে এটা রুদ্র খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।রুদ্রের মুখে মোলিন হাসি দেখে হিয়া দুই হাত দিয়ে কিল মারতে থাকে রুদ্রকে।রুদ্রকে মারতে মারতে বলে,”আমার কষ্ট লাগলে আপনার ভালো লাগে তাই না রুদ্র ভাই?”
রুদ্র হিয়ার হাতদুটো একসাথে ধরে হিয়ার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে বলে,”যার জবান থেকে আমাকে নিয়ে এমন মিথ্যা কথা বের হবে সত্যি বলছি সে এই দুনিয়ার সবথেকে বড় নিকৃষ্ট ব্যাক্তি।আমি কখনই পারবো না আমার হিয়াপাখিকে কষ্ট দিতে।”
“আমি বিশ্বাস করি না।”
বুকের বাম পাশে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলে,”বিশ্বাস কর হিয়াপাখি।তোকে যতবার কষ্ট দিয়েছি ততবার আমার এই হৃদয়কেও ক্ষত করেছি।”
“কেনো কষ্ট দিলেন তাহলে?বলে দিলেই তো হতো যে আপনি আমার নষ্ট পুরুষ নন আপনি যে আমার শুদ্ধ পুরুষ।”
খাটের উপর শুধু মাথাটা এলিয়ে দিলো রুদ্র।পা দুটো ফ্লোরে মেলে রেখেছে।বুকের ওপর দুটো পাঞ্জাবির বোতাম খোলা।হিয়ার কাছে মোহনীয় লাগছে।উপরের দিকে তাকিয়ে রুদ্র বলে,”আমার হিয়াপাখি যে কোমল হৃদয়ের অংশীদারি।সে পারে না কোনো নিখুঁত অভিনয় করতে।শুধু পারে অভিমান নিয়ে দূরে সরে যেতে।”
“এটার জন্য আপনি দায়ী।একবার বললেই হতো যে এগুলো সব অভিনয়।কিন্তু আপনার ভালোবাসাটা ছিলো একদম মন থেকে।”
“বলতে তো চেয়েছিলাম অনেকবার।কিন্তু থমকে গেছি।আমার জ্বর আসলে তোর আতঙ্ক আমার কোনো ক্ষত হলে তোর এগিয়ে আসা এই সবকিছু দেখে তোকেও আমি সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি কারণ ওই সোনালীর জন্য।তুই যখন আমাকে নিয়ে অধিক চিন্তিত হতে থাকিস তখন ঐ মহিলা তার পাপ কাজগুলোকে বাড়িয়ে দেওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা পেতো।তুই আমাতে মেতে থাকলে ওই মহিলা তার চাবিকাঠি পেয়ে যেতো।রাজ ভাইকে কখনও জারা কাবু করতে পারবে না।এটা আমি একদম শিওর ছিলাম।কারণ ওদের সম্পর্কে আমি সবই জানতে পারি।তবে আস্তে আস্তে।কিন্তু তুই আমার প্রেমে পড়েছিস এটা জানলে শত্রু দমনের আগেই আমাদের বিয়ে হতো।তাই আমি তোকে চাইলেও বলতে পারিনি আসল সত্যিটা।”
“সব বুঝলাম কিন্তু এটা বুঝিনি ওইদিন ওই মেয়েকে নিয়ে বারের রুমটাতে কি করছিলেন?আর আরেকদিন একটা মেয়েকে খুন করেছিলেন কেনো?”
“ওইদিন বারে গিয়েছিলাম একটা ক্রিমিনালকে ধরতে।ও ওর বেড পার্টনারকে নিয়ে ওই রুমটিতে ছিলো।এটার ইনফরমেশন আমরা পেয়ে যাই।তাই আমি আর আমার এসিস্ট্যান্ট জেসি মিলে চলে যাই বারে। ধরেও ফেলেছিলাম ক্রিমিনালদের।কিন্তু ওই বজ্জাত লোকটা জেসিকে ধাক্কা মেরে আমার কাছে ফেলে দেয়।জেসি ব্যালান্স হারিয়ে আমার কাছে ঝুঁকে আসে।কোমড়ে একটু ব্যাথা পায় জেসি।ওকে সোজা করতে গিয়েই তুই হাজির হলি। যা ভাবার তুই তোর মত ভেবে নিলি।”
হিয়ার মনে পড়ল সেদিন ওই রুমটিতে যাওয়ার আগে একজন পুরুষের সাথে ওর ধাক্কা লাগে। দুইয়ে দুইয়ে চার করে হিয়া বলে,”তারমানে যে লোকটার সাথে আমি ধাক্কা খাই সেই ক্রিমিনাল ছিলো?তাকে কি ধরতে পেরেছিলেন?”
“হ্যাঁ।কারণ চারপাশে আমাদের লোক ছিলো। আর আরেকদিন যে মেয়েকে আমি মেরে ফেলি ও ছিলো সোনালীর পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট।যে বাইরের সকল ইনফরমেশন সোনালীকে দিতো।যদিও আমার প্রেমে পড়েছিলো কিন্তু বেচারি আমার আসল সত্যি জেনে সোনালীকে জানাতে চায়।ইনফ্যাক্ট ওই মেয়েই নারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে ওদের সোনালীর লোকের কাছে দিতে সাহায্য করত।ওকে ওইদিন খুন করার পারমিশন আমি পেয়েছিলাম।উপর মহল থেকে আমাকে পারমিশন না দিলে আমি এই কাজ করতে পারতাম না।”
হিয়ার কাছে সবকিছু এখন ক্লিয়ার।মাথা নিচু করে আছে এখন সে।রুদ্র হিয়াকে দেখে বলে,”লজ্জা পাচ্ছিস কেন হিয়াপাখি?”
রুদ্রের মুখের দিকে তাকাতেই হিয়ার চোখ যায় রুদ্রের বুকের দিকে।পাঞ্জাবির বোতাম খোলা তাই উন্মুক্ত বুকটা দেখা যাচ্ছে।সাদা বুকটার উপর কালো কালো কিছু দেখে হিয়া ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে।রুদ্র বুঝতে পারল হিয়ার দৃষ্টি।বোতাম লাগাতে যাবে তখনই হিয়া ধরে ফেলে রুদ্রর হাত।রুদ্র হাত সরিয়ে নেয়।হিয়া ভালোভাবে রুদ্রের বুকটা উন্মুক্ত করতেই দেখতে পেলো সেখানে টেটো করা।গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে “হিয়াপাখী”।হিয়া ওখানে হাত বোলালো।রুদ্র দেখছে তার চশমা পরা হিয়াপাখিকে।ছেড়ে দেওয়া চুলের সাথে চশমাটা হিয়ার মুখে সুন্দরভাবে ফুটিয়েছে।হিয়াকে দেখতে দেখতে রুদ্রের চোখ যায় হিয়ার গোলাপী ওষ্ঠের দিকে।ঠোঁটজোড়া একসাথে লেগে আছে। আর চশমা পরা চোখ জোড়া রুদ্রকে দেখছে।রুদ্র যেনো এবার হিয়ার মাঝে ডুব দিলো।হিয়ার ওষ্ঠের দিকে চোখ দিয়েই মনের আবেগে এগিয়ে আসতে থাকে।রুদ্রের এগিয়ে আসা বুঝতে পারে হিয়া।বুক থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রের মুখের দিকে তাকালো হিয়া।বুঝতে পারলো রুদ্র এখন একটা অঘটন ঘটাতে চায়।হিয়া চায় না এই অঘটন বিয়ের আগে ঘটুক।দুই সেন্টিমিটার দূরত্বে আসতেই হিয়া ওর নাকমুখ চেপে ধরে।ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুদ্র।হিয়া বলে,”আপনার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ রুদ্র ভাই।কি ছাই পাশ খান আপনি!ছিঃ।”
ম্লান হেসে দূরে সরে গেলো রুদ্র।তারপর বলে,”আমার থেকে এই সিগারেটের গন্ধ শোষণ করে নিতে হবে তোকে।”
“ছিঃ!সম্ভব না।”
“একবার তোর ওষ্ঠজোড়া শোষণ করতে দে হিয়াপাখি।দেখবি সিগারেট শোষণ করা ছেড়ে দিবো।”
“আপনি আসলেই একটা নষ্ট পুরুষ।”
বলেই দৌড়ে চলে যায় হিয়া। হো হো করে হেসে দেয় রুদ্র।দেখছে তার হিয়াপাখিকে দৌড়ে যেতে।
বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দাড়ি চুলকাতে থাকে রাজ।মায়ার কানের কাছে এসে বলে,”বোনকে বিয়ের আগেই প্রেম করার সুযোগ করে দিয়ে ভুল করলাম নাকি!ব্যাটা রুদ্র তো বের হবার নামই নিচ্ছে না।”
অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকালো মায়া।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”বোনকে নিয়েও এমন বলতে হবে তোমাকে?মুখে কি লাগাম দিতে জানো না?”
“উচিত কথার ভাত নেই।আমার অবস্থাও তাই।আমি মরছি আমার বোনের কথা ভেবে তুমি আসো লাগাম লাগাতে।”
“বোনকে নিয়ে যখন এতই চিন্তা তাহলে পাঠালে কেনো?”
“বোনের দুঃখটা সহ্য হয় না তাই।”
“ওই দেখো তোমার বোন লাফাতে লাফাতে আসছে।”
রাজ তাকালো সিড়ির দিকে।হিয়াকে হাসিখুশি দেখে বলে,”ব্যাপার কি?গেলো কানতে কানতে আসলো হাসতে হাসতে।ব্যাটা রুদ্র আসলেই কিছু করে দিলো নাকি!”
রাজের কথা পাত্তা না দিয়ে মায়া চলে যায় হিয়ার কাছে।হিয়াকে নিয়ে দাদীর সামনে দাড়ালো মায়া। দাদীর উদ্দেশে বলে,”আমাদের রুদ্র আর হিয়া অনেক আগে থেকেই এক অপরকে ভালবাসে।আমি চাই ওদেরও বিয়েটা হয়ে যাক।”
“কিন্তু বড়ভাইকে আগে বিয়ে না দিয়ে ছোটভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে ভাবাটা মানায় না।আপাতত ওরা দূরে থাকুক আগে আদ্র ও সিয়ার বিয়ে হোক।তারপর ওদের বিয়ে নিয়ে কথা হবে।”
“দূরত্ব কখনও ভালোবাসাকে গভীর করে তুলতে পারে না।ভালোবাসায় যত দূরত্ব থাকে ভালোবাসা উপলব্ধি বারে কিন্তু এক সময় এই দূরত্বটাও অভ্যস্ত হয়ে যায়।তখন চাওয়া পাওয়ার আকাংক্ষা কমে আসে।”
কথাগুলো মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে বলে।ফিচেল হাসে রাজ।মনে পড়ে যায় চট্টগ্রামের কথা।যেগুলো রাজ মায়ার উদ্দেশে বলেছিলো।মাহমুদ সরদার ওদের কাছে এসে হিয়ার মাথায় হাত রেখে বলেন,”তোর কি রুদ্রকে বিয়ে করতে আপত্তি আছে মা?”
হিয়া মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দেয়।রুদ্র তখন সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।মাহমুদ সরদার এবার দাদীর দিকে তাকিয়ে বলেন,”আপনি চাইলে আমরা একসাথে এদের ভাই বোনের বিয়েটা দিতে পারি।যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।”
আদ্র সম্মতি দিলো মাহমুদ সরদারের কথাতে।বলে,”আমার কোনো আপত্তি নেই আংকেল।আমার ভাই কম কষ্ট সহ্য করেনি।এখন ওর সুখে থাকার সময় এসেছে।”
দাদার ইশারা পেয়ে দাদী নিজেও এবার শান্ত হলেন।রাজি হলেন এই বিয়েতে।মুখে হাসি ফুটে উঠলো সবার।মিলি তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।এতগুলো বছর যাকে আপন ভাই ভাবতো সে আসলে তার ভাই না।এগুলো ভাবতেই কান্না পায় মিলির।মৌকে দেখেও কান্না পায় তার।সবাইকে দেখে মনে মনে লজ্জা পায় এখনও।এই পরিবার এখন সুখ পেলেও সে এই পরিবারের এমন এক সদস্য যার মা বাবা এই পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছিলো।মোহন সরদার ও সোনালী এতকিছু না ঘটালে আজ এই সরদার বাড়ি আরো বেশি আনন্দে মেতে উঠতো।মিলির চোখ থেকে পানি পড়তেই মিলির দিকে চোখ যায় রুদ্রের।বোন বলে অনেক হাসি মজা করেছে।বিদেশ থেকে এই আনো ওই আনো বলে কত কিছু বলতো রুদ্রকে।ইনফ্যাক্ট তারেকের পিছনে লেগে থাকতে তো রুদ্র নিজেই বলেছিলো।মিলির ভালবাসা উপলব্ধি করে রুদ্র বলেছিলো,”তারেককে পেতে হলে ওর মনের মত হয়ে চল।দেখবি ও তোকে ভালোবাসবে।”
তাই তো মিলি এত চেষ্টা করে যায়।রুদ্র এসে মিলির পাশে দাঁড়ালো।মিলির মাথায় হাত রেখে বলে,”আমার বোনটা দেখি এখন একা একা দুঃখ পেতে শিখেছে।ভাই পর বলে এখন আর ভাইয়ের সুখে সামিল হতে ইচ্ছে করে না?”
অশ্রুকণা যেনো আরো বৃদ্ধি পেলো।পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পর আগে বাবা মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তারপর ভাই বোনের।এই ভালোবাসা কি ভোলা যায়।মিলির আপন ভাই না হলেও জন্মের পর থেকে তো রুদ্রকেই ভাইয়া বলে চিনে এসেছে।রুদ্রকে দেখে মিলি বলে,”আমাকে দেখলে তোমার খারাপ লাগছে না ভাইয়া?আমি যে তোমার বাবা মায়ের খুনীর সন্তান।”
“ধুর বোকা মেয়ে।তোর মা যাই করুক না কেনো তুই তো নিষ্পাপ।তোর মধ্যে ওদের মতো পাপে ভরা ছিল না।তুই আমার বোন ছিলি আছিস আর থাকবি।”
মায়া এসে মিলিকে একপাশ জড়িয়ে বলে,”অন্যায় যে করে শাস্তি সে পায়।যে অন্যায় করে না সে কখনই শাস্তির প্রাপ্য না।আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি মিলি।তোমার বেড়ে ওঠা ছিলো ভিন্ন।যেখানে সুশিক্ষা ছিলো না।কিন্তু তারপরও তুমি কাউকে ভালোবেসে তার জন্য নিজেকে বদলে দিতে পেরেছো।এটাই বা কয়জন পারে?”
শাহানা পারভীন এসে মিলিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আগে আমার এক মেয়ে ছিল।মৌ আসার পর আমার দুই মেয়ে।আর তোমাকে কাছে পাওয়ার পর এখন আমার তিন মেয়ে হলো।এক মাকে হারিয়েছো তো কি হয়েছে আরেক মা আছে তো।”
খুশিতে মাথা নারোলো মিলি।পাশ থেকে কান্নার শব্দ আসলো।মৌয়ের কোলে থাকা প্রলয় কান্না করছে।এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো।এখন জেগে উঠেছে আর কান্না করে দিলো।রাজ এসে প্রলয়কে কোলে নিলো।কান্না করছে প্রলয়।নাক মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে বাচ্চাটার।রাজ তার দিকে তাকিয়ে বলে,”মাশাআল্লাহ।বাচ্চাটা একদম রাজপুত্রের মত দেখতে হয়েছে।”
বলেই মৌয়ের কোলে দিয়ে দিলো প্রলয়কে।বাড়ির সবাই এখন মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত।একসাথে দুইটা আনন্দের মিষ্টি। মায়ারাজের সুখী জীবনে জুনিয়র আসতে চলেছে আর সিয়া হিয়া দুই বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
********
রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মায়া।নাইট ড্রেস পরে এসেছে মাত্র।রাজ সোফায় বসে কিছু ভাবছে।মায়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত পায়ে লোশন লাগিয়ে বলে,”এখন আবার কি হলো তোমার?”
“ভাবছি বাবুটা আরেকটু দেরিতে আসলে ভালো হতো।”
“এই না তুমি বাচ্চা বাচ্চা করছিলে!এখন এসেছে বলে আফসোস কেনো?”
“আরে আমার বাথরুম বিলাস তো হচ্ছে না।”
হুংকার দিয়ে মায়া বলে,”মন্ত্রী মশাই।”
“ধুর বউ আমার কষ্ট বোঝেইনা।এই যে আমি বউয়ের ভালোবাসা না পেয়ে না পেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি।এটা কি একবারও দেখেছো?এতদিন বাইরের শত্রু ছিলো আমাদের মাঝে দেওয়াল হয়ে।তাও একটু চুরি করে কাছে পেয়েছি তোমাকে।কিন্তু এখন শত্রু না হয়েও দেওয়াল হয়ে আছে আমাদের এই চুরির ফল।আমার বংশধর হয়ে এখন আমার থেকেই আমার বউকে পুরোপুরি আলাদা রাখছে।ভাবা যায় এটা!”
“তুমি তোমার সন্তানের প্রতি জেলাস মন্ত্রী মশাই।”
“বউকে যে বান্দা ঠিক মত কাছে পায় না সে বোঝে এই কষ্ট কাকে বলে।”
মায়া এবার রাজের কাছে আসে।রাজের বুকে হাত রেখে বলে,”আর তো মাত্র কয়েক মাস।এই ধরে নেও আট মাস মত।এরপর তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা এমন কোনো ঔষধ বা প্রযুক্তি নেই জাতে করে বাচ্চা এক দুই মাসেই বেড়ে ডেলিভারি হয়ে আসে।তাহলে তো বাচ্চার মাকে তাড়াতাড়ি ভালোবাসতে পারবো।”
মায়া কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।শুধু দেখে যাচ্ছে রাজের পাগলামি।রাজ কোনো উত্তর না পেয়ে বলে,”কি হলো মায়াবতী?কিছু বলো।”
“এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি মন্ত্রী হয়েছো!জনগণ কি আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কে তোমাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছিলো নাকি মাতাল হয়ে?”
“জনগণ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে।কিন্তু বেচারা আমি আমার বউয়ের ভালোবাসা থেকে দূরে।এখন দিন গুনতে হবে।শুধু কি দিন!এখন থেকে রাতও গুনতে হবে।সাথে করে অপেক্ষায় থাকবে আমার বাথটাব।”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”
“আর কোনো কথা না।এখন আমার বাচ্চাকে প্রপার রেস্ট দিতে হবে।ওকে এখন ঘুমোতে হবে মায়াবতী।তাই তুমিও ঘুমাবে।”
বলেই মায়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো রাজ।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।মনে মনে ভাবছে ভিন্ন কিছু।চোখ বন্ধ করে আছে মায়া।চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”আমি জানি মন্ত্রী মশাই।তুমি অন্যকিছু নিয়ে ভাবছো।তবে তুমি চিন্তা করো না।এই মায়াবতী তার মন্ত্রী মশাই ও নিজেকে সুরক্ষা করবে।এবার যা কিছু হবে তোমার এই মায়াবতীর ইচ্ছাতেই হবে।আমার মন্ত্রী মশাইয়ের মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হবে।”
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৬৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকাল বেলা,
পুরো সরদার পরিবার আজ একসাথে দাড়িয়ে আছে মাহমুদ সরদারের বাবার ঘরের সামনে।সবার সাথে মানিক আদ্র রুদ্র আর জেসিও আছে।উদ্দেশ্য একসাথে সিক্রেট রুমে যাওয়া।ওখান থেকেই লকারের কাছে যাওয়া।মাহমুদ সরদারের বাবার ঘরে ঢুকে সবাই চারপাশ তাকালো।পুরোনো স্মৃতি জমে আছে।মায়া ও রাজ দুজনেই তাদের দাদাজানকে স্মরণ করছে আজ।দাদুর ঘরে এসে ড্রেসিং টেবিল বরাবর সবাই তাকালো।মায়া এগিয়ে গেলো সেদিকে।আয়না হাত দিয়ে সরিয়ে দেখা গেলো সেখানে একটি ছোট চিকন দরজা।ওই দরজার চাবি শাহানা পারভীন মালিনীর হাতে দিয়েছিলেন।কারণ শাহানা পারভীনকে আহত করে তার থেকে যা কিছু পাওয়া যাবে ওরা নিয়ে যেতে পারতো।মালিনী এসে চাবিটি দিলো মায়ার হাতে।মায়া দরজাটি খুলে ভিতরে ঢুকলো।আস্তে আস্তে সবাই একসাথে ভিতরে ঢুকতে থাকে।ধুলাবালিতে ভরা চারপাশ।বছরের পর বছর বন্ধ ছিল এই ঘরটি।উপরের দিকে দেওয়ালের সাথে মিশে আছে ঝুল।দরজা খুলতেই গরমের বাজে গন্ধ ভেসে আসলো সবার নাকে।মায়া খুক খুক করে কাশতে থাকলো।রাজ এসে মায়াকে আগলে রাখলো।মায়ার উদ্দেশ্যে বলে,”আজ তাহলে থাক এই কাজগুলো।আমি আমার মায়াবতী আর বাচ্চার কোনো ক্ষতি সহ্য করতে পারব না।তোমার ডাস্ট এলার্জি আছে।চলো মায়াবতী।”
মায়ার হাত ধরে রাজ বের হতে নিলেও যেতে পারে না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে মায়া।রাজ ঘুরে তাকালো মায়ার দিকে।মায়া বলে,”দেরি জিনিসটা মায়ার সহ্য হয় না মন্ত্রী মশাই।চারপাশে শকুনের কু নজর লেগে থাকে।এসব কাজ যত তাড়াতাড়ি মেটানো যায় তত ভালো।”
মায়ার কথাতে সম্মতি দিয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”মায়া মা ঠিক কথা বলেছে রাজ। এখান থেকে বের হয়ে নাহয় মায়া মা ফ্রেশ হয়ে নিবে।চারপাশে আমাদের শত্রু লেগেই আছে।তোমার বিরোধী দলের কথা ভুলে যেও না।তোমার এত বড় ক্ষমতার কথা তাদের কানে পৌঁছাতে সময় লাগবে না।যেহেতু আজ বড় আয়োজন করে রেখেছো।মিডিয়া সহ দেশের নামকরা কৃষি বৈজ্ঞানিক আর চাষীরাও অপেক্ষায় আছে আমাদের জন্য।”
রাজ আর বাধা দিলো না।মায়া নিজেকে শক্ত রেখেছে।রাজ শুধু তার মায়াবতী আর সন্তানের কথা চিন্তা করছে।কিন্তু এখন মায়ার কথাতে বুঝতে পারলো একবার যখন মায়া জেদ ধরেছে আজ এই কাজের সমাপ্তি হবে।সোনালী ও বিভানের পর্দা ফাঁস করেই এই ফর্মুলা পাবলিক করার কথা ছিলো।কিন্তু মোহন সরদারের মৃত্যুর জন্য সম্ভব হয়নি।সিয়া আর হিয়া নাকে কাপড় দিয়ে কাশতে থাকে।আদ্র আর রুদ্র সাথে জেসি নিজেও এসেছে।কাজের সুত্রে জেসিকে এখানে থাকতে হবে।শাহানা পারভীন আর মালিনী দাদুর রুমে বসে আছে।সিক্রেট রুমের ধুলাবালিতে শাহানা পারভীনকে আসতে দিলো না মায়া।কয়েকদিন হলো তিনি সুস্থ।এখন আবার রোগ বাদালে মায়া টেনশন করবে খুব।তাই শাহানা পারভীনের সাথে মালিনী নিজেও আছে।মৌ এখন প্রলয়কে নিয়ে ব্যস্ত সাথে আছে মিলি।তাই ওরাও আসেনি এখানে।মায়া রাজের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে লকারের কাছে।লকারের কাছে এসে মানিককে ডাকলো রাজ।বলে,”এই ফর্মুলার পিছনে আংকেলের অবদান অনেক।আমার মা আর আংকেল ছিলেন বলেই এই ফর্মুলা তৈরি হয়েছে।তাই আমাদের সাথে তুমিও এই ফর্মুলা বের করবে।”
মানিক এগিয়ে যেতে নেয়।জেসি এসে বাধা দিয়ে বলে,”আপনাকে সেনিটাইজ করতে হবে।ওখানে অতিরিক্ত ময়লা।মনে আছে সেদিন সামান্য ধুলাতে আপনার হাতে এলার্জিতে ভরে গেছিলো।তাই সেনিটাইজ করুন।”
জেসি একটি স্প্রে বোতল বের করে মানিকের হাতে স্প্রে করে।যেটাতে ছিলো সেনিটাইজার।মানিক জেসির দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে সেনিটাইজ করে চলে যায়। মায়ারাজ একে অপরকে দেখে নেয়।দুজনেই দুজনকে দেখে মলিন হাসে।বুঝতে বাকি নেই এই কয়েক দিনে মানিক আর জেসি একজন আরেকজনকে ভালোবেসেছে।মানিক এগিয়ে আসলো মায়ারাজের দিকে।রাজ মানিক একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।ওদের সামনে মায়া।লকারের গায়ে কিছু বোতাম।যেগুলো চাপতে হবে।মায়া একেক করে চাপলো ‘MAYARAZ’।এটা দেখে মাহমুদ সরদার ছাড়া সবাই একসাথে বলে,”দাদাজান তাহলে মায়ারাজ জুটি আগে থেকেই ঠিক করে গেছে?”
মাহমুদ সরদার বলেন,”হ্যাঁ।মায়া মায়ের জন্মের সময় মোহনের সাথে মিলিয়ে ওর নাম মোহনা সরদার দেওয়া হয়।কিন্তু বাবা ওকে মায়াবতী বলেই বেশি ডাকতো।আর রাজ ওটা শুনেই ওকে মায়াবতী বলতো।সেই থেকে বাবার মনে হয় আমাদের রাজ আর মায়া এক হলে ভালো হবে।বাবা পুরোনো দিনের মানুষ।তিনি আধুনিকতা বুঝতেন না।তাই নিজের আপনমনে মায়ারাজের বিয়ে ছোটবেলায় কাজী ডেকে নিজের মত করে দেয়।আমিও বাবার এই ইচ্ছাকে সমর্থন করেছিলাম।শুধু আমি না শাহানা নিজেও এটাতে রাজি ছিলো।বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস আমাদের নেই।তাছাড়া আমরা নিজেরাও খুশি হই এই সম্পর্কে।এক বাড়িতে ছেলে মেয়ে দুটো থাকবে।এটা তো আমাদের কাছে তখন ঈদের আনন্দের মত ছিলো।”
লকার খুলে একটি বোতল দেখা গেলো।যেটা কিছুটা হলুদ রঙের।তারপাশে কিছু কাগজ।বোতলটি হাতে নিয়ে মায়া আলোর সামনে দাড়াতেই চিকচিক করছে।কাচের বোতলে হলুদ রঙের পানি।কাগজগুলো দেওয়া হলো জেসির হাতে।ওগুলো পড়ে জেসি বলে,”এটা ফর্মুলা তৈরির ডিটেইলস।কিভাবে এই ফর্মুলা বানানো হয়েছে।এছাড়া কিভাবে সংরক্ষণ করা যাবে।আর কি কি উপাদান জোগাড় করে এই ফর্মুলা আরো বানানো যাবে এই সকল বিষয়ে এখানে ডিটেইলস লেখা।এছাড়া এখানে লেখা আছে এক ধরনের সারের বিষয়ে।যেই মাটিতে সার ব্যাবহার করা আছে।”
জেসির কথা শুনে রাজ এগিয়ে গেলো লকারের দিকে।সেখানে কিছু শুকনো সার দেখতে পেলো।সারগুলো হাতে নিয়ে রাজ বলে,”এই যে এই সার।তাহলে এগুলো নিয়েই যাওয়া যাক আমাদের বাবা মায়ের উদ্দেশ্য সফল করতে?”
শেষের কথাটি রাজ মানিকের দিকে তাকিয়ে বলে।মানিক সম্মতি দিলো।বলে,”আপনি আর মায়া মিলে আসুন।আমরা আমাদের মত চলে যাই।ওদিকটায় কি হচ্ছে দেখতে হবে।”
রাজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।ফর্মুলা রাজ নিজের কাছে রাখছে।মায়াকে নিয়ে ফর্মুলা সহ যাবে জনসম্মুখে।গোসল করে এসেছে মায়া।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হতে থাকে।রাজ এখনও চিন্তিত।এবার ফিচেল হাসে মায়া।বলে,”তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো মন্ত্রী মশাই।”
হালকা কেপে উঠলো রাজ।বলে,”কিসের চিন্তা!আমি কোনো চিন্তা করছি না।”
সোফার কাছে এসে রাজের পাশে বসে মায়া।রাজের অতি নিকটে নিজের মুখ রেখে বলে,”এই মায়া তার মন্ত্রী মশাইকে খুব ভালোভাবে চেনে জানে এমনকি ভালোবাসে মন্ত্রী মশাই।মায়ার চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না।”
রাজ তার ডান হাত মায়ার মুখের উপর রাখলো।মায়াকে বলে,”আর কোনো বিপদ আসবে না তো আমাদের জীবনে?আমাদের সন্তান সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীর মুখ দেখবে তো?”
“তোমার মায়াবতীর ইচ্ছা কি কখনও অপূর্ণ থেকেছে যে এটা অপূর্ণ থাকবে?অবশ্যই আমাদের সন্তান আল্লাহ চাইলে পৃথীবির মুখ দেখবে।শুধু তাই না আমাদের জীবনে কোনো বাধা বিপদ আসবে না।আসলেও আমি আর তুমি মিলে একসাথে দমন করে দিবো।যেমনটা এতদিন করেছি।”
মায়ার গলায় নাক ডুবিয়ে দেয় রাজ।চোখ বন্ধ করে আরামের সাথে বলে,”এবার একটু শান্তিতে সংসার করতে চাই মায়াবতী।”
মায়া রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”এবার তাই হবে মন্ত্রী মশাই।”
এবার শুরু হলো রাজের দুষ্টুমি।মায়ার কোমড়ে চিমটি কেটে দিলো রাজ।মায়া চিল্লিয়ে বলে,”আউচ।”
মায়া একটু সরে যেতে নেয়।রাজ দুষ্টু কণ্ঠে বলে,”দুষ্টুমি করতে নেই মায়াবতী।”
মায় হেসে দেয়।বলে,”চলো এবার যেতে হবে।সবাই অপেক্ষা করছে তো আমাদের জন্য।”
মাথা নাড়িয়ে রাজি হয় রাজ।চলে যায় মায়ার সাথে।সামনে আর পিছনে চারটা করে মোট আটটি গাড়িতে গার্ড আর মাঝের গাড়িতে মায়ারাজ।গার্ডগুলো কিছু রাজের আবার কিছু মায়ার।মায়া রাজের হাতের সাথে হাত মুঠ করে বসে আছে গাড়ির পিছন সিটে।দুজনেই বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে।হঠাৎ করেই রাজ সামনে থাকা ড্রাইভারকে বলে,”চোখটা সোজা রেখে ড্রাইভ করবেন।আপনাদের মন্ত্রী মশাই এবার প্রেম করবে।”
বলেই মায়াকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে আনে।ড্রাইভার তার সামনের আয়নায় একটি ছোট্ট রুমাল দিয়ে রেখেছে।রাজ মায়াকে নিজের কাছে এনে তার ওষ্ঠের কাজ সম্পন্ন করতে থাকে।কাজ সম্পন্ন করে রাজ দূরে সরে আসে।মায়া হাঁফাতে থাকে।রাজ ফিচেল হেসে বলে,”আজকের মর্নিং কিস দেওয়াটা মিস করেছিলাম।তাই এখন কমপ্লিট করলাম।কোনো কাজ অসম্পন্ন রাখে না এই শাহমীর রাজ।”
সামনে তাকিয়ে রাজ দেখলো ড্রাইভার মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে।সে খুব ভালো করেই জানে এসবে কান রাখলে ওই কান রাজ কেটে ফেলবে।তাই কিছু শুনেও যেনো শোনেনি সে।রাজ জানালার গ্লাস নামিয়ে ড্রাইভারকে বলে,”এবার রুমাল সরাতে পারেন।”
ড্রাইভার তাই করলো।এই মন্ত্রীর কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।কখন কি বলে কি করে সে একাই জানে।তার কাজ মন্ত্রীর উপদেশ পালন করা।সে তাই করছে।
অবশেষে সবাই এসে পৌঁছালো আশ্রমের সামনে।আশ্রমের বড় মাঠে আজ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।রাজ গাড়ি থেকে নামতেই সাংবাদিক এসে হাজির।কেউ কেউ এসে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছে রাজকে।আবার কেউ কেউ ফুলের তোরা দিচ্ছে।রাজ ওদেরকে সাইড কাটিয়ে সোজা চলে যায় মায়ার দিকে।মায়ার দিকে এসে গাড়ির দরজা খুলে বলে,”মায়াবতী মাই ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফ।আসো এবার।”
বলেই রাজ তার হাত বাড়িয়ে দিলো।রাজের হাতের সাথে হাত মিলিয়ে মায়া বের হয়।মুখে তার মায়াবী হাসি।মিডিয়ার লোক এসে মায়াকে প্রশ্ন করে,”ম্যাম আমরা শুনেছি আপনি আর স্যার আমাদের গুড নিউজ দিতে যাচ্ছেন।এটা কি সত্যি ম্যাম?আমরা সত্যি আপনাদের থেকে গুড নিউজ আশা করছি?”
মায়া শুধু হ্ বলেছিলো আর কিছু বলবেতার আগেই রাজ বলে,”গুড নিউজ অবশ্যই আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে দিবো।তোমার বউয়ের সাথে আমার একত্রে গুড নিউজ আসবে না নিশ্চয়ই!যে তুমি অন্যকিছু আশা করবে।”
রাজের এই ঘাড় ত্যাড়া উত্তর শুনে সাংবাদিক ছেলেটি লজ্জা পেলো।মায়া রক্তচক্ষু করে তাকালো।রাজ এই দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”আরে দেখছো না মায়াবতী।ওরা আমাদের থেকে গুড নিউজ আশা করবে কি না এটা নিয়ে আমাদেরকেই প্রশ্ন করে।আমি কি তুমি ছাড়া গুড নিউজ আনতে পারি বলো?”
“একবার এনেই দেখো মন্ত্রী মশাই।তোমাকে আর তোমার গুড নিউজ আলীকে আমি মাটিতে পুঁতে রেখে দিবো।”
বলেই মায়া চলে গেলো ওখান থেকে।রাজ একা দাঁড়িয়ে আছে মিডিয়ার সামনে।ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিককে বলে,”ব্যাটা বলদ।এমনি উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে নিউজ বানিয়ে কমেন্ট বক্সে আমাকে গালি খাওয়াস।তাতে শান্তি হয় না?এখন আমার সংসার ভাঙতে আসিস?”
অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল বাকি সাংবাদিক।এই সাংবাদিক একটি ফ্যাক নিউজ করেছিলো রাজের সর্ম্পকে।যার প্রতিশোধ নিলো রাজ।এদের কাজ এমন ফ্যাক নিউজ বানানো।যার কারণে আজকাল কমেন্ট বক্স জুড়ে লোকজন দেয় গালাগালি।গলার মালাগুলো খুলে রাজ ওগুলো দিলো পিয়াশের হাতে।তারপর উঠে পড়ল স্টেজে।সবাই হাততালি দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।কেউ কেউ তো চেয়ারের উপরে উঠে রাজকে দেখতে থাকে।রাজের সামনে সাংবাদিক।তাদেরকে যে যে কথার স্ক্রীপ্ট দেওয়া হয় তারা সেই বিষয়ে প্রশ্ন করবে এবার।একজন প্রশ্ন করে,”আপনাদের পরিবারের পুরোনো সদস্য মিসেস রোহিনী ও মিস্টার মিনার আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য একটি ব্যাবস্থা করে গেছে।এই ডিটেইলস সম্পর্কে একটু জানাবেন স্যার?”
মাইকে টোকা দিলো রাজ।হালকা শব্দ হলো।বোঝা গেলো মাইকে কথা বলা যাবে।মাইকের সামনে মুখ নিয়ে বলে,”আমার মা মিসের রোহিনী আর আমার আংকেল মিস্টার মিনার এনারা ছিলেন কৃষি বৈজ্ঞানিক।বাংলাদেশে প্রথম সফল বৈজ্ঞানিক ছিলেন আমার মা। আর আমার আংকেল দ্বিতীয়।তাদের ইচ্ছা ছিলো দেশের মানুষ যতটুকু শস্য উৎপাদন করবে তা যেনো অর্গানিক হয়।এই যেমন আজকাল বিভিন্ন খাদ্যে আমরা ভেজাল পাই। ভেজাল না থাকলে ব্যাবসা উন্নত হবে না।অতিরিক্ত শস্য উৎপাদন হবে না।আমার মা আর আংকেল চেয়েছিলেন এই দেশের মানুষ খেয়ে পরে বাঁচুক।গরিবদের জন্য আমরা হাতে গোনা কিছু মানুষ এগিয়ে আসি।বাকিরা তো নিজেদের মত দিন কাটিয়ে দেই।খাদ্যের দাম তুলনায় আমরা অনেক পরিবার চাহিদা মেটাতে পারি না।এরপর যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করে থাকি সবই অধিক মাত্রায় ফরমালিন।এই ফরমালিনের ব্যাবহার কমাতে একটি নতুন ফর্মুলা তৈরি করা হয়।যেটার মাধ্যমে খাদ্যের ভেজাল কমতে থাকবে।বেশি বেশি শস্য উৎপাদন হবে।দামের সাথে চাহিদার পূরণটাও সুন্দরভাবে হবে।”
সবাই করতালি দিলো।মাঠ জুড়ে আছে অহরহ গরীব লোকজন।সামনের দিকে আছে কৃষকরা।সরদার বাড়ির সবাইসহ বসে আছে রাজের পিছনে।সবার মুখে মুখে ফুটছে,”আমাদের নেতা করেছে জনগণের সেবা।আমাদের নেতা সেরার সেরা।”
সবার থেকে যেনো ভালোবাসা অর্জন করে নিলো রাজ।এর মধ্যেই একজন সাংবাদিক খোচা মেরে বলে মূলত ওটা তার স্ক্রিপ্টে থাকে তাই বলে,”শুনেছি আপনার মা মিসেস রোহিনী আর মিস্টার মিনার একজন আরেকজনের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।যার ফসল মিস্টার মানিক।এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?”
চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে রাজের।রাজ কোনো বাজে পদক্ষেপ নিতে যাবে তার আগে মাহমুদ সরদার এসে হাত ধরে রেখেছেন।রাজ অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকালো মাহমুদ সরদারের দিকে।কেনো রাগ করবে না রাজ।এই দুনিয়ার আলো দেখলো যে মায়ের মাধ্যমে।এত ভালো ভালো শিক্ষা পেলো যে মায়ের থেকে।দেশের উন্নতি করতে পারছে যে মায়ের জন্য।আজ সেই মাকে নিয়ে নোংরা কথা সন্তান হয়ে সহ্য করার ক্ষমতা নেই রাজের।রাজের এভাবে এগিয়ে আসা যে ভয়ানক এটা অনুমান করে নিয়েছে সাংবাদিক।হালকা কুকিয়ে গেছে তারা।মায়া তারেকের দিকে তাকালো।এমন কথা শুনলো কার কাছে এরা।মালিনী মাথা নত করে আছে।কারণ সবাই ভাবছে এই মালিনী আসলে রোহিনী।তারেক মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে কিছু জানে না।মায়া এবার সামনে জনগনদের দেখতে থাকে।কিছু জনগন দেখেই মায়ার চোখে আসে একটি মেয়ে।যাকে দেখে মায়া অবাক হয়ে যায়।তারেককে ইশারা করে ডাকে।তারেক আসতেই মায়া বলে,”এই রুবি এখানে কেনো?”
তারেক কিছুক্ষণ খুঁজলো।পেয়েও গেলো রুবিকে।নিজেও অবাক হয়ে বলে,”জানি না ম্যাম।তবে আমার মনে হয় মিহিরের মৃত্যুর জন্য ও আজ এমন করেছে হয়তো।দেখুন রুবির চোখে মুখে হাসি।”
“এই কাজটি ওই করেছে।নাহলে এমন কেউ নেই যে মিডিয়াকে এসব নোংরা কথা জানাবে।মিহিরের মৃত্যুর বদলা নিতে চায় ও।”
“তাহলে কি করবেন ম্যাম?”
“ওর ব্যাবস্থা পরে করছি।আগে এদিকটা সামলাতে হবে।”
বলেই মায়া উঠে দাড়ালো।রাজের পাশে এসে দাড়িয়ে মাইকটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলে,”আজ আপনাদের সকল সত্যি কথা জানানো হবে।”
রাজ ঘুরে তাকালো মায়ার দিকে।মায়া আশ্বস্ত চোখে তাকিয়ে বলে,”যত লুকিয়ে রাখবে তত লোকজন বাজে মন্তব্য রটাবে মন্ত্রী মশাই।গুজব বৃদ্ধি পাওয়ার থেকে ভালো সত্যিটা জানুক সবাই।এতেই সবার থেকে ভালোবাসা আর দোয়া বাড়বে।”
“মায়া মা ঠিক বলছে রাজ।মাথা গরম করতে নেই।এটা রোহিনী তোমাকে শিখিয়ে গেছে।তুমি তোমার মায়ের শিক্ষা ভুলে গেলে?”
চোখ বন্ধ করে রাজ কল্পনা করে।রোহিনী রাজকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,”জীবনে এগিয়ে যাওয়ার আসল অস্ত্র নিজেকে শান্ত রাখা।লোকে আগে পিছে মন্দ বলে।কিন্তু তাতে কান না দিয়ে সৎ পথে চলতে পারলেই তুমি আসল জয় লাভ করবে।তোমার জীবনের সফলতা আসবে তখন,যখন তুমি নিজের মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে সত্যের মুখোমুখি হবে।”
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ খুললো রাজ।মায়া বলতে শুরু করে,”আমার শাশুড়ি মায়েরা ছিলেন তিন ভাইবোন।বড় ভাই বিভান খান যিনি এখন জেলে আছেন।আসল কুকর্ম তিনিই করেছিলেন। আর তার সহযোগিতা করেছিলো মিসেস সোনালী।যিনি এই সরদার পরিবারের ছোট বউ হিসেবে ছিলেন। আর আমার শ্বাশুড়ি মায়েরা মূলত জমজ বোন ছিলেন।আমার মন্ত্রী মশাইয়ের বায়োলজিকাল মা মিসেস রোহিনী খান তিনি মারা গেছেন।আর যাকে আপনারা দেখছেন তিনি মালিনী খান।যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে ছিলেন মিস্টার মিনার। বিভান খান আর সোনালীর চক্রান্তে মারা যায় রোহিনী খান আর মিস্টার মিনার।এরপর পারিবারিকভাবে আমার শ্বশুর মশাই আর বর্তমান শাশুড়ির বিয়ে হয়।”
সাংবাদিক সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে।শুধু তারাই না পিছনে যত জনগণ আছে সবাই এমন করে।অবাক হয়ে আছে সবাই।রুবির মুখে রাগের আভাস।হেরে গেলো সে।মিহিরের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারছে না।হাত মুঠ করে দেখছে মায়াকে।মায়ার মুখে ভিলেনি হাসি।বোঝা যাচ্ছে এখান থেকে বেড় হবার পর ছার পাবে না রুবি।যার খায় তার বদনাম করার ফল এখন সেও পাবে।একেক করে মায়া সবকিছু খুলে বলল মিডিয়ার সামনে।রাজ মায়া ও আদ্র রুদ্রের অতীত শুনে অনেকেই কান্না করে দেন।দুর্দিন পেরিয়ে আজও তারা দেশের জনগণের সুদিনের চিন্তা করে চুপ ছিলো।সবকিছু একেবারে নিজেদের আয়ত্তে এনেই আজ সুখের মুখ দেখবে তারা।আশেপাশে থেকে সবাই বাহবা দিচ্ছে মায়ারাজ আদ্র রুদ্র জেসি ও মালিনীকে।ধিক্কার জানালো বীভান আর সোনালীর উপর।কিছুটা কষ্ট হলেও মিলি চুপ করে দেখছে সবার আনন্দ।কষ্ট ঠিক তখনই হচ্ছে যখন তারা তার মায়ের সম্পর্কে বলছে।কিন্তু সবার এমন ব্যবহারের কারণ মাথায় আসলে মিলি নিজেও আলাদা শান্তি পায়।মিলির জীবনটা এখন এভাবেই যাবে।মনের মধ্যে দোটানা কাজ করবে।কিছু করার নেই।বাবা মায়ের করা পাপ তাকে সহ্য করতে হবে।
আসল ফর্মুলা আর তার ডোকুমেন্ট জনসম্মুখে প্রমাণ স্বরুপ বৈজ্ঞানিকদের কাছে পৌঁছে দিলো রাজ।এবার এটা দেশের কাজে ব্যবহার করা হবে।যারা এটা নিয়েছে তারা সই করলো কাগজটিতে।সমস্ত কাগজে উল্লেখ আছে এটা বাংলাদেশের কৃষক ব্যাবহার করতে পারবে।বাইরের দেশে এই ফর্মুলার সাপ্লাই হবে না।সরকার পক্ষ থেকে এই ডিলে রাজি হয়েছে বৈজ্ঞানিক সহ কৃষকেরা।সবাই এখন নাচগান শুরু করে দিছে।বৃদ্ধ থেকে কৈশোরের সমস্ত জনগণ এখন নাচগান করতে তাহলে।লাইভে সকল কিছুই এতক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।সবাই এখন মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত।রাজ তাকালো আকাশের দিকে।অনুভব করছে তার মা ওই আকাশ থেকে দেখছে।আদৌ সম্ভব কি না জানে না রাজ।তবে মায়ের ভালোবাসা যেকোনো ভাবেই অনুভব করা যায়।যদি মা কাছে না থাকে।আকাশের দিকে তাকালে এমনিতেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।রাজ সানগ্লাস খুলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাই তার চোখ বেয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে।মাহমুদ সরদার এগিয়ে আসার আগেই আজ মালিনী এসে জড়িয়ে ধরলো রাজকে।আরেক হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকলো মানিককে।মানিক এখন নিজস্ব ব্যাবসা করে।এছাড়া মিনারের যা কিছু গড়া ছিলো সবকিছুতে এখন মানিকের অধিকার।মানিক মিনারের একমাত্র সন্তান।তাই তার সমস্ত সম্পত্তি মানিক পাবে।লন্ডনের আশ্রমে থাকার কারণে পড়াশোনা করতে পেরেছে মানিক।তাই আজ তার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট।সব মিলিয়ে মালিনীর কোনো চিন্তা নেই।দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে মালিনী।মায়া তাকালো সিয়া আর হিয়ার দিকে।ইশারা করতেই ওরাও চলে আসে মায়ার কাছে।পিয়াশ এসে মৌয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”মিলির কাছে যাও।”
মৌ গেলো মিলির কাছে।আপন বোনকে এতদিনে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে মৌ।মিলি নিজেও মৌকে আপন বোনের মতো করে ভালোবাসে।দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।আদ্র আর রুদ্র পাশাপাশি দাড়িয়ে দেখছে।শাহানা পারভীন প্রলয়কে কোলে নিয়ে বসে আছেন।ছেলেটা ছোট ছোট হাত গালে দিয়ে চোখ মেলে দেখছে আর হাসছে।তারেকের দিকে মায়া তাকাতেই তারেক ইশারা করে বুঝিয়ে দিলো,”ডান।”
পুরো মাঠজুড়ে এখন রুবিকে দেখা যাচ্ছে না।মায়ার মুখে দেখা দিলো আবারও সেই ভয়ানক রক্তিম হাসি।
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৬৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
ফর্মুলার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসে সবাই।এখন সবার একটাই কাজ।সিয়া আর হিয়ার বিয়ে।কেনাকাটা সব কমপ্লিট। কাল আশ্রমে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করবে।এটা সিয়া আর হিয়ার একান্ত মতামত।আদ্র ও রুদ্র এই মতামত গ্রহণ করেছে।বিশেষ করে হিয়া চায় এমনটা।ওর অনুষ্ঠান করে বিয়ে করা ভালো লাগে না।এর থেকে ভালো খুশির দিনে বাচ্চাদের কিছু খাওয়ানো।এছাড়া ওখানে কিছু পথশিশু আনা হবে।সবার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ।এখন ঘুমানোর সময়।মায়া ও রাজ ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রাজ।ঠিক তখন মায়া উঠে যায়।এই প্রেগন্যান্সিতে মায়াকে কিছুতেই বাইরে একা যেতে দিবে না রাজ।তাই মায়া অপেক্ষায় ছিলো রাজের ঘুমের।আজকে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো মায়া।কারণ আজকে তার কাছে এই দরজার চাবি আছে।সবথেকে বড় কথা এই বাড়ির শত্রু এখন শেষ।তাই মায়া সদর দরজা দিয়ে বের হতে পারছে।গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকে মায়া।আজকে তারেককেও বলেনি।তারেক এখন মিলিকে সাপোর্ট করতে ব্যাস্ত।বেচারি মা বাবার কর্মের ফল ভোগ করছে।কেউ কিছু না বললেও মা বাবাকে নিয়ে লোকের কটু কথা সন্তান হিসেবে মিলি নিতে পারে না।তাই এখন মিলির সব থেকে আপনজন তারেক তাকে সামলাচ্ছে।ড্রাইভ করে নিজের কোম্পানির সিক্রেট রুমের সামনে আসলো মায়া।মুখে রহস্যের হাসি দিয়ে দরজা খুলছে।দরজা খুললেও ঘরটি সেই আগের মতই অন্ধকার।সুইচ অন করে সামনে তাকালো মায়া।অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে সে।এটা কিভাবে সম্ভব বুঝতে পারছে না সে।পুরো দল কি তাহলে তার সাথে ছলনা করলো?কোথায় গেলো রুবি? আর এখানে এত ফুল দিয়ে সজ্জিত কেনো?ঠিক তখনই মায়ার কর্ণপাত হয়,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম মায়াবতী।”
না তাকিয়ে মায়া বুঝলো এটা তার লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”এগুলোর মানে কি মন্ত্রী মশাই?তুমি জানো ওই রুবি কি করেছে?ও তোমার মৃত মায়ের নামে কলঙ্ক ছড়িয়েছিলো।কোনো আইডিয়া আছে তোমার?কত বড় নিকৃষ্ট মনের মেয়ে হলে এমন মিথ্যা কলঙ্ক দিতে পারে। ও আমাদের নতুন শত্রু হয়ে এসেছে।তুমি তাকে সরিয়ে এখানে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছো? বাহ!”
মায়ার প্রত্যেকটি কথা মায়ার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো রাজ।মায়ার গালে হাত দিতেই মায়া থেমে যায়।মায়া নিজেও ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।রাজ মায়ার ঠোঁটের উপর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইট করতে থাকে আর বলে,”আমার মায়াবতী আমার বক্ষের রানী। আর আমার সন্তান আমার কলিজার টুকরো।এদের দুজনকে এই অবস্থায় কি করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দেই?ইচ্ছা যখন মায়াবতীর পূরণ তখন হবেই।আমি পূরণ করব আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।”
“কিভাবে মন্ত্রী মশাই?তুমি তো ওদের এখান থেকে সরিয়েছো।”
“ওদেরকে আমার আস্তানায় রেখেছি মায়াবতী।ভুলে যেও না তোমার গর্ভে আমাদের সন্তান।তাকে নিয়ে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে।মাথা গরম করে নয় মাথা ঠাণ্ডা করে যুদ্ধে জয় লাভ করতে হয়।”
“আচ্ছা তবে তাই হোক।আমি না করি তুমিই করলে কাজটি সম্পুর্ণ।কিন্তু কোনো বেঈমানকে প্রশ্রয় দিতে পারব না মন্ত্রী মশাই।বেঈমানের জায়গা এই মায়ার কাছে মাটির নিচে।”
“তবে তাই হবে।চলো আমার সাথে।”
বলেই মায়ার হাত ধরে নিয়ে যায় রাজ।মায়াকে গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে।রাজের বাংলোর সামনে এসে থামে গাড়ি।সেখানে রাজের কিছু লোকজন আছে।মায়াকে ইশারা করে তাকাতে বলে রাজ।মায়া সেদিকে তাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়।সবার কাছে এসে মায়া দেখতে পায় সেখানে একটি লাশ।মায়া আবারও ঘুরে তাকালো রাজের দিকে।রাজ ফিচেল হাসে।মায়া বুঝলো এটা রুবি। একটু একটু ঝুঁকে রুবির মুখ থেকে সাদা কাপড় সরাতে যাবে রাজ ওমনি এসে মায়ার হাত ধরে বলে,”এসব অশুভ মানুষের মুখের কাপড় তোমার শুভ সময়ে ধরো না মায়াবতী।”
মায়া উঠে দাড়ালো।রাজের ইশারা পেয়ে একজন লোক কাপড় সরিয়ে রুবির মুখ দেখলো।মৃত রুবির লাশ দেখে কোনো কষ্টের অনুভূতি হলো না মায়ার।রাজকে প্রশ্ন করে,”তুমি কিভাবে জানলে যে রুবি এসব করেছে?”
হালকা হেসে রাজ বলে,”মিহিরের মৃত্যুর পরে সোনালীর রিয়েকশন একদম নরমাল ছিলো।যেখানে মারা যাওয়ার কথা আমার ছিলো সেখানে মিহির মারা গেছে।এই খবর তো এই মেয়েটি দিয়েছিলো।ইনফ্যাক্ট তোমার ফ্যাক্টরির মেয়েদের সরাতে সাহায্য করেছিল রুবি।শুধু একটু আড়ালে।বাকিটা মিহির সোনালীর সাথে কথা বলে করে নিতো।কিন্তু তোমার আর আমার আমাদের ইচ্ছাশক্তির কারণে ও সফল হয়নি।”
“তুমি কি করে জানলে যে রুবি আর মিহির সোনালীর সাথে এক হয়ে ছিলো।রুদ্র তো রুবির কথা বলেনি।শুধু মিহিরের কথা বলেছিলো।”
“মানিককে আমি গোপন রাখার জন্য শিবচরে যাই।যেই সময়টাতে তুমি আর মা নাটক সাজিয়েছিলে মাকে মরার।ওইদিন আমি রুবিকে দেখি গভীর রাতে একা ড্রাইভ করে জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।সন্দেহ ঠিক তখনই হয়।তোমাদের ফ্যাক্টরির সকল কাজ রাত আটটার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।গ্রাম হওয়ায় তুমি মেয়েদের আলাদা সেফটি দিয়েছো।তাহলে রুবি কেনো ওখানে?এটা নিয়ে আমার সন্দেহ থাকে।তোমার থেকে জানতে পারি মিহির ওখানে নেই।সন্দেহ আরো বেশি বেড়ে যায়।রুদ্র জানালো মিহির সোনালীর সাথে মিশে আছে কয়েকমাস ধরে।সন্দেহের পরিমাণ আরো বেশি বাড়ল।লোক লাগালাম রুবির পিছনে।মিহিরের মৃত্যুর কারণেই হয়তো রুবি কিছুদিন চুপ ছিলো।তাই আমিও ওকে ধরতে পারিনি।কিন্তু আমার লোক ওকে ফলো করতো।ফর্মুলা পাবলিকের আগেরদিন আমি জানতে পারি রুবি আসলে তোমার ফ্যাক্টরির মালিক হওয়ার জন্য এসব করেছে।ও নিজেও অনৈতিক কাজে যুক্ত।বীরের মৃত্যুর পর মিহির আর রুবি একসাথে সোনালীর সাথে মিলেছিলো।মিহির চায় ফর্মুলা,রুবি চায় তোমার ফ্যাক্টরির দলিল।যেটা নিজের নামে করার চাবিকাঠি। আর সোনালী মেয়ে পেলে রুবিকে আরো কিছু কমিশন দিবে। লোভ দ্বিগুণ হওয়ায় ওরা রাজি হয়।তাই আমি আমার লোকদের বলি রুবিকে নজরে রাখতে।ওরা রাখে।রুবি এখানে আসার আগে আমার লোক আমাকে জানিয়ে দেয়।কিন্তু ও যে আমার মাকে নিয়ে এত নোংরা কথা সাজাবে বলবে এটা বুঝতে পারিনি।বুঝতে পারলে ওকে আমি অনেক আগেই শেষ করে দিতাম।”
শেষের কথাগুলো চোখমুখ লাল করে বলল রাজ।মায়া রাজের হাতদুটো ধরে বলে,”আমাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে মন্ত্রী মশাই। আর কোনো বাধা নেই।চলো তাহলে বাড়ি ফেরা যাক।আমাদের বাড়িতে। কাল বোনেদের বিয়ে হবে।”
মায়া আর রাজ উঠে বসলো গাড়িতে।জানালাটা একটু খুলে শেষ শত্রুকে দেখে নিলো মায়া।মনে মনে ভাবলো,”আদৌ কি শত্রু দমন হয়েছে?নাকি মা যেটা বলেছিলো ওটাই ঠিক।শত্রুর কোনো শেষ নেই।জীবন যতোদিন আছে শত্রু ততদিন থাকবে।সে যেভাবেই হোক না কেনো?”
*******
আশ্রমে এসে পৌঁছেছে সবাই। কাজী এসেছে মাত্র।সাথে রেজিস্টার নিজেও।আজ কাজী ও রেজিস্টার দুজনেই পরিপাটি হয়ে এসেছে।তাদের মুখেও হাসি। মায়ারাজ আর মিলি তারেকের বিয়ের সময় যেমন পাঁজাকোলা করেছিলো তেমন আর এবার হয়নি। মায়ারাজের বিয়ের সময় তো তাও শীত ছিলো তাই সোয়েটার পরা ছিলো কিন্তু মিলি আর তারেকের বিয়ের সময় গরম থাকায় কাজী লুংগি আর রেজিস্টার হাফ প্যান্ট পরেছিলো। কাজী আর রেজিস্টার দুজনের কাজ করছে।কাগজপত্র দেখছে।রাজ আসতেই ওরা দুজনে দাড়ালো।রাজ ওদেরকে দেখে সাথে সাথে ফ্লাইং কিস দিলো। কাজী হকচকিয়ে গেলো।রেজিস্টার বিষম খেলো।রাজ এবার ওদের কাছে এসে বলে,”ভয় নেই বুইরাগন।তোমরা এবার তোমাদের বউকে বিয়ে সুখে থাকতে পারো।কারণ আমার মায়াবতী আমাকে বাবা বানিয়ে দিয়েছে।”
শান্তির নিশ্বাস নিলো দুজনে।মাঝে মাঝে এরাও মায়ার মতো করে ভাবে,”এই ব্যাটাকে মন্ত্রী বানালো কে?”
অবশেষে দুই জোড়া বিয়ে সম্পন্ন হলো।চারজনের মুখ থেকে কবুল শুনে এখন ওরা রেজিস্ট্রি করে নিলো।এখন সবাই আনন্দে মেতে আছে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাই নাচ করছে।রাজ মানিক রুদ্র যেনো একটু বেশি নাচতে থাকে।একজন নাচতে থাকে বাবা হবে বলে আরেকজন নাচতে থাকে সখের নারীর স্বামী হয়েছে তাই। আর মানিক সে তো খুশিতে সামিল।বাচ্চা সহ আরও অনেকে নাচতে শুরু করেছে।নাচের মধ্যে রুদ্র দেখলো মিলি হাসি মুখে দেখছে সবাইকে।রুদ্র এসে মিলির হাত ধরে বলে,”আয় বোন ভাইয়ের বিয়েতে নাচবি।”
ক্ষণিকের জন্য রুদ্র ভুলে গেছিলো সব।মিলির মুখের রিয়েকশন দেখে মনে পড়ল।কিন্তু কোনো বিপরীত ভঙ্গি না দেখিয়ে হাসি মুখেই মিলিকে নিয়ে নাচতে থাকে রুদ্র।মিলিও এবার বাজনার তালে তালে দুই হাত উচু করে নাচতে থাকে। আদ্রকেও নিয়ে এসেছে রুদ্র।রাজ তার দুই বোনকে নিয়ে এসেছে।তারেক আর পিয়াশকেও টানতে টানতে নিয়ে এসেছে রাজ ও রুদ্র।সবাই একসাথে এখন নাচতে থাকে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।মায়া ওর পেটে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।মৌয়ের কোলে প্রলয়।এখনও অতটা সুস্থ না মৌ।তাই প্রলয়কে নিয়ে বসে আছে একটি চেয়ারে। পিয়াশকে সহ সবাইকে আনন্দ করতে দেখে হেসে দেয় মৌ।কিছুক্ষণ পরপর প্রলয়কে দেখতে থাকে।সবার আনন্দের মাঝে মৌ ডাকে মায়াকে।বলে,”দেখো আপু।বাবুটা কি শুরু করেছে?এখনই বাবা মামাদের নাচ দেখে হাত লাফাচ্ছে।”
“তা হবে না ওদের মতো?বাবা মামা কেউ কি কম।ওদের সন্তান ওদের মতোই হবে।”
“তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের সন্তানও কি তাহলে এমন হবে আপু?যেমনটা তোমার মন্ত্রী মশাই আছে।”
“কানমলা দিয়ে ঠিক করে দিবো।”
হু হু করে হেসে দেয় মৌ।সবার আনন্দের মধ্যে এখন মাহমুদ সরদার যুক্ত।সবার সাথে হাসিমুখে নাচগান করছেন ঠিকই কিন্তু মনে মনে তিনিও মোহন সরদারকে অনুভব করছেন।নাচতে নাচতে তার চোখের কোনা থেকে পানি পড়তে থাকলো।কেউ দেখেনি এই পানি।কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ালেন তিনি।কল্পনা করলেন দূরে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি পরে হাসছেন মোহন সরদার।ভাইকে কল্পনায় দেখলেও নিজের কাছে বাস্তব মনে হতে থাকে।মোহন সরদার হাসছেন আর মাহমুদ সরদারের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।কাধে কারো স্পর্শ পেতেই মাহমুদ সরদার দেখলেন রাজ তার কাধে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।বাবার চোখের পানি মুছে দিলো রাজ।বাবাকে কিছু না বলে শুধু জড়িয়ে ধরে।তারপর বলে,”মেয়েদের বিদায় দিতে হবে তো। চলো এখন।”
মাহমুদ সরদার সবার সামনে আসলেন।সিয়া আর হিয়া এবার তাদের বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।এখন বাইরে থাকা কারো জন্যই ভালো না। আরও কিছু নিয়ম কানুন আছে।যেগুলো শশুর বাড়িতে যেয়ে পূরণ করবে ওরা।তাই এত তাড়াহুড়া।বিদায়ের কথা শুনতেই কান্না শুরু করে দিলো সিয়া আর হিয়া।মাহমুদ সরদারের দুই কাঁধে দুই মেয়ে।হিয়া তো কান্নারত কণ্ঠে বলেই দেয়,”সিয়া গেলে যাবে।কিন্তু আমি যাবো না।রুদ্র ভাই তো এই বাড়িতেও ছিলো এতদিন।এখনও থাকবে।আমি আমার বাবা মায়ের কাছে থাকবো।”
হিয়ার কথা শুনে সিয়া হিংসাতুক কণ্ঠে বলে,”তোর কথায় হবে নাকি।আমি নিজেও বাবাকে ছেড়ে যাব না।”
সবাই হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছে না।সিরিয়াস মোমেন্টেও এদের দুই বোনকে যুদ্ধ করতে হয়।দুই বোন কথা কাটাকাটি করতে শুরু করেছে।শেষ হওয়ার নাম নেই।না পেরে দুঃখী দুঃখী মনের রাজ এবার বলেই দেয়,”ব্যাটা আদ্র আর রুদ্র।এখন চলতেই থাকবে এদের যুদ্ধ।তোমরা থেমে থেকো না।বরেদের এভাবে ভেঙ্গে পড়ল চলবে না।সোজা মিশন শুরু করে দিতে হয়।তোমরাও তাই করো।”
রাজের এহেন কথায় দুই ভাই একে অপরকে দেখে তাদের বউদের পাঁজাকোলা করে নিলো। কাজী বসেই ছিলো চেয়ারে।ভালো সেবাযত্ন পেলে কি আর যেতে চায়?বসে বসে মিষ্টি খাচ্ছিলো সে।আদ্র আর রুদ্রের এমন কাজে কাজী খুকখুক করে কেশে দিলো।মাহমুদ সরদার যেনো পালাতে পারলে বাঁচে।এতদিন ছেলে বউমা ছিলো এখন তার দুই জামাই হাজির।মনে মনে বলেন,”আমার কপালেই এমন কেন জুটলো?ছেলে আর বউমা কি কম নির্লজ্জ ছিলো!এখন জামাই দুটোকেও নির্লজ্জের তালিকায় রাখতে হলো।”
সিয়া আর হিয়া লাফাতে লাফাতে বলে,”ছাড়ো।আমরা বাবার কাছে যাবো।বাবা দেখো তোমাদের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও বাবা বাঁচাও।তোমার থেকে তোমার মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে।”
রাজ এবার ধমক দিয়ে বলে,”দিলমে লাড্ডু ফোটানোর সময় মনে ছিলো না বাবার কথা?আমার মত অকালে আইবুড়ো থাকলে বুঝতে,বিয়ে না করার কি জ্বালা।বিয়ে দিয়েছি এবার সুখে সংসার করো।বাবাকে তো আমি দাদু বানিয়েছি তোমরাও নানু বানিয়ে দিও।”
মাহমুদ সরদার আর দাড়ালেন না ওখানে।ছেলে এখন বাবা হবে।তাকে জনসম্মুখে শাসন করা বেমানান।লাজলজ্জার মাথা খেয়ে তিনি মালিনীর হাত ধরে চলে গেলেন।কাজী এবার মুখে আটকে থাকা মিষ্টি গিলে নিলো।পাশে থাকা রেজিস্ট্রারকে ফিসফিস করে বলে,”বুঝলে ভাই।এই পরিবার পুরাই পাগল।এই পাগলের পাল্লায় যে পড়বে তার জীবন ওখানেই শেষ।”
“তাই আর বলতে!দেখছেন না মাহমুদ সরদারকে?নিরীহ লোকটির কপালে কি না পাগলের ছানা জুটলো।”
সিয়া আর হিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়।গাড়িতে উঠে দুই বোন দুই দিকে মুখ ফুলিয়ে আছে।আদ্র আর রুদ্র কম নাকি।আদ্র ড্রাইভিং সিটে বসে আর তার পাশে রুদ্র।ওরা ওদের মতো গাড়ি চালাচ্ছে আর গল্প করছে এদিকে সিয়া ও হিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর রুদ্রকে ইচ্ছামত মারতে থাকে হিয়া।জোরে জোরে বলে,”এমনিতেই নষ্ট পুরুষ ছিলেন এখন নষ্ট জামাই হলেন।শ্বশুরের সামনে এমন কেউ করে?”
হিয়ার মার খেতে খেতে রুদ্র বলে,”ওরে আমার বউ রে।আমার শ্বশুরকে নিয়ে তো তোদের এত চিন্তা ছিল না।কান্নাকাটি করে সোজা চলে আসলেই হতো।তা না করে দুই বোন ঝগড়া করে আমাদের বাসরের টাইম পিছিয়ে দিচ্ছিলি।”
“তাই বলে বাবার সামনে এভাবে পাঁজাকোলা করবেন?”
“এখন যেয়ে কত কাজ করতে হবে জানিস!তাতেই বারোটা বেজে যাবে।বাসরটা কি ঠিকভাবে পেতাম তোদের জ্বালায়?”
“আপনি কিন্তু ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছেন রুদ্র ভাই।”
“রাখ তোর ঠোঁটকাটা।কত টাকা খরচ করে বিয়ে করলাম।কোথায় বাসর করে টাকা উশুল করবো তা না বউয়ের নেকা কান্না দেখতে হবে।ধুর তাহলে টাকা খরচ করে তোদের পার্লারে সাজিয়েছি কেনো?পার্লারে সাজিয়েছি কারণ ওই রূপের জাদুতে বাসর ইনজয় করবো।উল্টো তোরা আমার শ্বশুরের কাধে কাজল মাখা কালি পানি মাখায় ব্যাস্ত ছিলি।”
হিয়া আড়চোখে দেখলো আদ্রকে।দুলাভাই আবার ভাসুর তার সামনে মান সম্মান রাখলো না রুদ্র।তাই চুপ করে নিজের জায়গায় বসে পড়ল।রুদ্র পাঞ্জাবির গলা ঠিক করে কনফিডেন্ট এর সাথে আদ্রকে বলে,”বুঝলে ভাই!বউয়েদের মুখ ফোটে রকেটের গতিতে।চুপ হয়ে যায় প্রেমের বাণীতে।
চলবে…?