মায়াবতী পর্ব-০৫

0
8

#মায়াবতী
#পর্ব_৫
#SF_Tabassum

ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসে আছে স্নিগ্ধা। গোলাপ এবং রজনীগন্ধার গন্ধে সারা ঘর মৌ মৌ করছে। মনের মধ্যে হাজারও চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন সময় দরজা ঠেলে কেউ ঘরে প্রবেশ করলো। মানুষটা যতই কাছে আসছে স্নেহার বুকের ধুকপুকানি ততই বেড়ে যাচ্ছে। উনি খাটের পাশে এসে দাঁড়ালেন। স্নেহা চোখ খিচে দুই হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে রেখেছে। যখন অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সাড়া শব্দ পেলো না তখন ধিরে ধিরে চোখ খুললো।

‘বেয়াদব মেয়ে, বাসর রাতে স্বামী ঘরে ঢুকলে যে সালাম করতে হয় তাও শেখোনি।’

কণ্ঠ শুনে স্নেহা এক ঝটকায় ঘোমটা তুলে উপরে তাকালো। সামনে মিসবাহকে দেখে ওর বুকে ঝাপ দিলো।

‘আপনি খুব খারাপ। আমাকে ব্লক কেন করেছেন?’

‘যেন ফোন থেকে ব্লক করে নিজের ঘরে লক করতে পারি তাই।’
স্নেহার কানে ফিসফিস করে কথাটা বললাম। ও লজ্জায় আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ওকে লজ্জা পেতে দেখে আমি হাসছি। আমি জানতাম স্নিগ্ধা আমাকে পছন্দ করে। তাই ইচ্ছে করেই ওকে সেদিন ব্লক করেছিলাম। এরপর আমার মা এবং স্নিগ্ধার মায়ের সাথে পরিকল্পনা করে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করি। বেচারি এতটাই অন্যমনস্ক ছিলো যে কবুল বলার সময় বরের নামটাও খেয়াল করে নি।

এরপর স্নিগ্ধাকে নিয়ে বারান্দায় গেলাম। পুরো বারান্দা জুড়ে রয়েছে ওর পছন্দের কাঠগোলাপ, নয়নতারা আর সাদা গোলাপ। ও তো খুশিতে আত্মহারা। আমি নিরবে ওর উৎফুল্লতা দেখছি শুধু।

স্নিগ্ধাকে সাথে নিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করলাম। শুরু হলো আমাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়। প্রতিজ্ঞা করলাম ওর জীবনের সকল অপূর্ণতা আমি দূর করবো।

.

সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নেহাকে পাশে পেলাম না। ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং-এ আসতেই রান্নাঘর থেকে মা এবং স্নেহার হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি চুপ করে পিছন থেকে এক পলক দেখলাম। আমি তো এমনই একজনকে চেয়েছিলাম যে আমার মায়ের খেয়াল রাখবে। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মায়ের একটা মেয়ের কত শখ। কথায় কথায় বলতো, আজকে যদি আমার একটা মেয়ে থাকতো তাহলে এটা হতো ওটা হতো। আমার স্নেহার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস আর ভরসা আছে। আম জানি ও কখনোই আমার মাকে কষ্ট দিবে না।

কিছুক্ষণ পরে টেবিলে নাস্তা আসলো। মা নিজ হাতে আমাদের খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে স্নেহাকে নিয়ে মায়ের ঘরে যায়। আমার দাদির দেয়া বালা জোড়া ওর হাতে পড়ি দিলো। সেই সাথে মায়ের যত গয়না ছিলো তাও। স্নেহা প্রথমে কিছুই নিতে চায়নি। মা জোর করে পারিয়ে দিলো। যেহেতু স্নেহা বাড়ির একমাত্র বউ তাই মায়ের সবকিছুই এখন থেকে ওর। তবে স্নেহা গয়নাগুলো খুলে মায়ের কাছেই আমানত হিসেবে রেখে দিলো। বললো ওর যখন দরকার হবে তখন নিয়ে নিবে।

বিকেলে স্নেহাদের বাসায় গেলাম। ঘরে ঢোকা মাত্রই আমার শাশুড়ী তার মেয়েকে প্রায় পাঁচ মিনিট বুকে জড়িয়ে রাখলেন। পঁচিশ বছরে এই প্রথম মেয়েকে ছাড়া থাকলেন তিনি। কিছু করার নেই এটাই দুনিয়ার নিয়ম। ভেবেছি আমাদের বাসা এখানে শিফট করবো। আমার অফিসও এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। স্নিগ্ধাও যখন তখন নিজের মায়ের কাছে যেতে পারবে। আর মেয়ে কাছাকাছি থাকলে উনিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। পরামর্শটা মা ই আমাকে দিয়েছে। স্নিগ্ধা তো শুনে বেশ খুশি।

পরদিন সকালে আবার বাসায় চলে আসলাম। অফিস থেকে দশ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি আছে। মা জোর করে আমাদের কক্সবাজার পাঠালেন।

স্নিগ্ধা শাড়ি পড়ে সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। খোলা চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধ নয়নে আমার প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে আছি। কাজের সূত্রে এর আগেও অনেকবার কক্সবাজার আসা হয়েছে। কিন্তু স্নিগ্ধা এই প্রথমবার আসলো তাই ও খুবই এক্সাইটেড।

আজ সারাদিন সাগর পাড়েই কাটালাম। বিকেলে হঠাৎ রাহাকে দেখতে পেলাম। সাথে ওর হাসব্যান্ড। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে ও চলে যেতে নিলে যখন আমার বিয়ের কথা শুনলো থেমে গেলো। ও হয়তো ভাবেনি আমি এতো জলদি বিয়ে করে নিবো। ওর হাসব্যান্ড এর সাথেও পরিচয় হলো।

আমরা একসাথে বসে কফি খেলাম। বিয়ের প্রথম রাতেই আমি স্নিগ্ধাকে রাহার ব্যাপারে সব বলে দিয়েছিলাম। কেননা আমি মিথ্যে দিয়ে কোন সম্পর্ক শুরু করতে চাই নি। রাহাও ওর হাসব্যান্ডকে আগেই সব জানিয়েছলো। তাই ওরা দুজনেই সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে। আমরা সেখানে আরও তিনদিন থাকলেও রাহারা তার পরের দিনই ফিরে গিয়েছে। ওরা এক সপ্তাহ আরও এক সপ্তাহ আগেই এখানে এসেছিলো। রাহা বলেছে সারাজীবন বন্ধু হয়ে পাশে থাকবে। আমাদের দুজনের মধ্যেই একটা অপরাধবোধ কাজ করছিলো। এই সাক্ষাৎ তা দূর করে দিলো।

ঢাকায় ফিরে আবারও ব্যস্ত হয়ে গেলাম। এর মাঝে অফিসের কাজের সূত্র ধরে এক লোকের সাথে পরিচয় হলো আমার। এবং তাড়াতাড়ি খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমাদের মাঝে। স্নিগ্ধাকে নিয়ে আমি প্রায়ই গল্প করি তার কাছে। সে স্নিগ্ধার সাথে দেখা করতে খুবই ইচ্ছুক।

চলবে??