#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-১৭
শিশির পৌঁছানোর সাথে সাথে ভাইয়া ভাবিও এসে পৌঁছুল বাবার ঘরে। ভাইয়া দেখেই বলল, “বাবা স্টোক করেছে৷ এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।” ভাবি ততক্ষণে এম্বুলেন্স আনতে ফোন করে ফেলেছে৷ মা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে, বিলাপ করছে, থেকে থেকে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে, “মানুষটা বলছিল তার চোখে ঝাপসা দেখছে, শরীর ভার ভার লাগছে, আমি তখন শাওনকে কেন ডাক দিলাম না…আমার দোষ, তার কিছু হলে সব আমার দোষ…মানুষটা কত রাত ঘুমায় না… এখন ঘুমিয়ে গেছে, আর কি আর জাগবে না বল…”
শিশির মাকে শক্ত করে ধরে রাখল। অ্যাম্বুলেন্স তাড়াতাড়িই চলে এলো। বাবাকে নিয়ে সবাই চলল হাসপাতালে। ডাক্তার দেখেশুনে তখনই একটা ইনজেকশন দিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখে দিলেন।
কেবিনের বাইরে ভয়ার্ত অবস্থায় জড়সড় হয়ে বসে আছে শিশির আর মা৷ দু’জনেই পরিস্থিতির আকষ্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ ভয়ে বুক শুকিয়ে এতটুকুন হয়ে গেছে। শিশির মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
শাওন এলো বেশ কিছুক্ষণ পর। শিশির চেয়ে দেখল ওকে দেখে তেমন আবেগাক্রান্ত মনে হচ্ছে না৷ আচ্ছা, সে ডাক্তার বলেই কি তার আবেগ থাকবে না? বাবার জন্য অনুভূতি থাকবে না? শিশিরের অদ্ভূত চাউনির অর্থ যেন বুঝে গেল শাওন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলল, “তুই মাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যা। আমি আর তোর ভাবি আছি এখানে।”
শিশির ঘাড় শক্ত করে বলল, “আমরা এখানেই থাকব।”
“বাবার এখন আশঙ্কামুক্ত। রেস্ট নিতে হবে তার। ভেতরে যেতেও দেবে না। তোদের থেকে কোনো লাভ আছে?”
শিশির কোনো জবাব দিল না।
শাওন শিশিরকে ইশারায় ডাকল আলাদা কথা বলতে। শিশির উঠে গেলে শাওন বলল,
“দ্যাখ এখানে থেকে কোনো লাভ নেই৷ এভাবে সারারাত বসে থাকলে মায়ের প্রেশার আরো বেড়ে যাবে৷ এমনিতেই হাই প্রেশারের রোগী। তার ওপর টেনশন করে কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস? এত আবেগী হলে তো হবে না। বাস্তবতা বুঝতে হবে। মাকে বুঝিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যা৷ তাকে প্রেশারের ঔষধের সাথে একটা ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিবি৷ সারারাত ঘুম হলে শরীর ঝরঝরে হয়ে যাবে। সকালবেলা বাবার জ্ঞান ফিরলে কথা বলতে পারবে।”
“ঠিক আছে।” মেনে নিল শিশির। তার হাত তখনো কাঁপছে।
শাওন শিশিরের হাত ধরে বলল, “তুই ভেঙে পড়িস না৷ একটু শক্ত হ৷ এখন অনেক কঠিন সময়। ভেঙে পড়লে খরকুটোর মতো ভেসে যাবি৷ মা বাবা আমার থেকে তোকে বেশি ভরসা করে। তাদের ভরসাটা রাখ।”
শিশির শাওনের চোখের দিকে তাকাল। মা বাবার কিছুটা পক্ষপাতিত্বের শাওনের কি কোনো ক্ষোভ আছে তার প্রতি? কখনো তো বোঝেনি৷ এভাবে বলল কেন তাহলে? কিন্তু এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নয়। সে ভাইয়ের হাত ছেড়ে চলে গেল মায়ের কাছে। মাকে বুঝিয়ে নিয়ে বাড়ি চলল।
মা সমানে কেঁদেই চলেছেন৷ তাকে প্রেশারের ঔষধের সাথে একটা ঘুমের ঔষধ না বলে খাইয়ে দিল শিশির৷ তারপর মায়ের বিছানায় তার পাশে বসে মাথা টিপে দিতে থাকল যতক্ষণ না পর্যন্ত মায়ের চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে।
মায়ের সাথে সাথে শিশিরেরও ঝিমুনি চলে আসছিল, হঠাৎ মনে পড়ে গেল অধরার কথা৷ মায়ের চিৎকার শুনে সে যখন এসেছিল তখন ফোনটা কোথায় যেন ছুঁড়ে ফেলেছিল। অধরা তখনো লাইনে ছিল। ওকে বলা হয়নি কী হয়েছে। টেনশন করছে না তো?
মায়ের ঘরের আলো নিভিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল সে। নিজের ঘরে ঢুকে মোবাইল খুঁজতে থাকল। সেটা পাওয়া গেল বারান্দার সামনে রাখা পাপোশের ওপর উল্টে পড়ে থাকতে। মোবাইল অনই আছে। এর মধ্যেই একশোর ওপরে কল এসেছে অধরার নাম্বার থেকে। সে কলব্যাক করল।
অধরা তখন চিৎকারর শব্দ শুনে বারবার জিজ্ঞেস করছিল, “কী হয়েছে? বলুন প্লিজ! কী হয়েছে?”
কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছিল না শিশিরের। শুধু দূর থেকে অস্পষ্ট চিৎকার আর হট্টগোলের আওয়াজ আসছিল৷ সে বুঝতে পারছিল ভয়ানক কিছু হয়েছে, কিন্তু কী হয়েছে সেটা বোঝেনি৷ এরপর থেকে সে কাঠ হয়ে বসে আছে বিছানা। শিশিরকে কলের পর কল করে গেছে৷ কোনো জবাব পায়নি। দুই চোখের পাতা একও করতে পারেনি সে। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে।
শিশিরের ফোন পেয়ে সাথে সাথে ধরল অধরা। উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
“কী হয়েছে? আপনারা ঠিক আছেন?”
শিশির বারান্দায় গিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে সবকিছু খুলে বলল অধরাকে। অধরা চুপচাপ শুনল। তার কেমন যেন লাগছে। শিশিরকে কী বলবে বুঝতে পারছে না।
শিশির একসময় বলল, “আমার ভীষণ ভয় করছে অধরা।”
অধরা বলল, “ভাইয়া তো বলেছে আঙ্কেলের আর ভয় নেই। তাহলে কেন ভয় পাচ্ছেন?”
“জানি না। বাবা ছাড়া আমি কী করব অধরা? আমিও মরে যাব। মাও মরে যাবে। আমরা শেষ হয়ে যাব।”
“এরকম কথা বললে কি চলবে? আপনি বাচ্চাদের মতো করবেন না প্লিজ! মনে সাহস রাখুন।”
শিশির ধরা গলায় বলল, “আমার খুব কান্না পাচ্ছে অধরা!”
অধরার হঠাৎ ভীষণ ইচ্ছে করল শিশিরকে জড়িয়ে ধরে রাখতে। পুরুষ মানুষ কি সহজে কাঁদে কিংবা কাঁদতে চায়? চাইলেও কারো কাছে সেটা প্রকাশ করে না৷ তার কাছে করছে মানে কী? তাকে সে ভরসা করছে খুব! কিন্তু অধরা এখন কী বা করতে পারে! তার খুব অসহায় লাগছে৷
দু’জন কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল। অধরা এরপর বলল, “আপনার মন খুব অশান্ত তাই তো?”
“হুম।”
“নামাজ পড়ুন। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আছে কিছুক্ষণ। এখন আল্লাহর কাছে যত দুঃখ আছে বলে ফেলুন। কাঁদুন, বিলাপ করুন, পৃথিবীতে আর কে এভাবে আপনার কথা শুনবে বলুন?”
শিশিরের মনে ধরল কথাটা। বলল, “ভালো বলেছেন।”
“সকালে কথা হবে তাহলে।”
“ধন্যবাদ অধরা।”
অধরা উত্তর দিল না৷ সে নিজেও ওযু করতে গেল।
শিশির বারান্দায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ল। ভোরের ঝিরঝির বাতাসে অনেকক্ষণ মোনাজাতে বসে কাঁদল সে। মনটা আস্তে আস্তে হালকা হয়ে এলো।
সকাল হলে মাকে ডেকে তুলল সে৷ জোর করে মাকে কিছুটা নাস্তা খাইয়ে নিজেও নাকেমুখে গুঁজে নিল খানিকটা খাবার। তারপর মাকে নিয়ে রওনা হলো হাসপাতালে। আজকের দিনটা দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। বাবাকে দেখে অফিসে যেতে হবে। বাবা নেই, তার মানে তাকেই সব সামলাতে হবে। পারবে তো?
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-১৮
ভোরের প্রকৃতির সাথে অধরার কথা হয় রোজ। কত গল্প হয় নতুন ফোটা ফুল আর কুয়াশা ভেজা পাতাগুলোর সাথে তা অধরা আর ওর বাগানের গাছগুলো বাদে কেউ জানে না। আজ অধরার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না৷ কেবলই কান্না পাচ্ছে। শীত চলে আসছে প্রায়৷ মাঝেমধ্যেই কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অধরা ঘরের পাতলা কাপড় পরেই বেরিয়ে এসেছে। তার কেমন যেন অবসাদ লাগছে সবকিছু। মুখের ভেতরটা তেঁতো লাগছে।
শিশিরের সাথে তার সম্পর্কটা অদ্ভূত। নাম না দেয়া এই সম্পর্ক হয়তো আরও অনেকদূর গড়াবে। অধরা নিজেই সেটা চায়। ধীরে ধীরে সে ছেলেটার ওপর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। শিশিরকে ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে এখন৷ ইচ্ছে করছে ওর হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকতে। অধরা বুঝতে পারে শিশির সবসময় যে আবহে যাদের মধ্যে থেকেছে তাদের মধ্যে সে ভরসা করার মতো সেরকম মানুষ পায়নি। অথচ তাকে ছেলেটা শুরু থেকে ভরসা করে। তার মাঝে নিশ্চয়ই তেমন কিছু আছে।
আচ্ছা, তার কি উচিত না শিশিরের বাবাকে দেখতে যাওয়া? অবশ্যই উচিত। কিন্তু বাড়িতে কি বলে যাবে? অধরা ভাবতে লাগল।
********
গতকালের পর বাবাকে দেখে শিশিরের একটু স্বস্তি লাগল। চেহারা কেমন যেন হয়ে গেছে৷ চার পাঁচ মাস আগের বাবার চেহারা আর এখনকার চেহারা দেখলে যে কেউ চমকে উঠবে৷ এত দ্রুত এত পরিবর্তন কেমন করে সম্ভব! শিশির বাবাকে কিছুই বলল না। বাবা কথা বলছেন মায়ের সাথে। মা বাবার একটা হাত নিজের দুই হাতে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মৃদু স্বরে কী যেন বলছেন। শিশিরের কানে আসছে না কথাগুলো। সে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছে। দৃশ্যটার মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্য আছে, তৃপ্তি আছে। সে সেই ভালোলাগার স্বাদ সবটুকু নিতে চাইছে। আজকাল জীবনে ভালোলাগা কমে যাচ্ছে। সব কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে।
মায়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা হবার পর শিশিরকে ডাকলেন বাবা। বললেন, “অফিসে যাবে না?”
“হ্যাঁ যাব বাবা। তুমি চিন্তা করো না। আমি সামলে নিতে পারব।”
বাবা স্মিত হেসে বললেন, “জ্ঞান ফেরার পর থেকে তোমার কথা ভাবছি। জয়েন করার পর থেকে তোমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় যাচ্ছে বাবা। আমি বুঝতে পারছি তোমাকে অনেক সময় বিনা কারনে আমি বকাঝকা করেছি, রাগ দেখিয়েছি, ফ্রাস্ট্রেশন ঝেড়ে দিয়েছি। সেজন্য মন খারাপ করে থেকো না। গতকালের পর এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাই আসলে অনেক বড় একটা ব্লেসিং। ব্যবসায় ওঠাপড়া তো লেগেই থাকবে। তার থেকে পরিত্রাণও পাওয়া যাবে। কিন্তু সেজন্য বেঁচে থাকাটা জরুরি৷ তুমি বেশি প্রেশার নিও না। আমার অনুপস্থিতিতে যতটুকু পারো করো। কপালে যা আছে তা এমনিতেও হবে।”
শিশির বুঝতে পারল এক রাতে বাবার মনোবল কতটা হারিয়ে গেছে। মানসিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। তার ইচ্ছে করল বাবাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু বয়সের কারনে সেটা আর হলো না৷ বাচ্চা থাকলে কত ভালো হতো, কারনে অকারনে বাবার কোলে চড়ে বসে থাকা যেত! শিশির ঠিক করল সুস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে সে বাবাকে একবার জড়িয়ে ধরবে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও।
অফিসের জন্য বের হতে যাবে, এমন সময় অধরা উপস্থিত হলো হাসপাতালে। অধরা যে আসবে এমনটা ভাবেনি শিশির। সে যথেষ্ট অবাক হলো।
অধরাকে দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখে এক ধরনের মুগ্ধতা ঘিরে ধরল শিশিরকে। লেবু রঙা একটা জামা পরেছে অধরা৷ তার ওপর সাদা রঙের একটা পাতলা চাদর জড়ানো। চোখেমুখে লেপ্টে আছে সতেজতা। ওর ভেতর এক ধরনপর আলো আছে, যেটা আশেপাশের মানুষকে সহজেই স্পর্শ করতে পারে। অধরা কাছাকাছি এসে জিজ্ঞেস করল, “আঙ্কেল কেমন আছেন?”
“এখন অনেকটা ভালো।”
“দেখা যাবে?”
“হ্যাঁ আসুন। মা ভেতরে আছে।”
অধরা কেবিনে ঢুকে সালাম দিল। শিশিরের মা সালামে জবাব দিয়ে ভদ্রতাসূচক সামান্য হাসার চেষ্টা করলেন। বাবা অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। কেক বানানোর দিন অধরার সাথে তার পরিচয় হয়নি। স্বল্প কথায় পরিচয় করিয়ে দিলেন মা। কিন্তু বাবার বিষ্ময় কাটল না। মেয়েটা তাকে দেখতে এসেছে কোন সূত্রে তিনি বুঝতে পারলেন না। তবে সহজ আর স্নিগ্ধ মেয়েটাকে ভালো লেগে গেল তার।
দেখা শেষে শিশির আর অধরা একসাথেই বের হলো। তারা বের হয়ে যাবার পর বাবা মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ঘটনা কী?”
মায়ের চোখে খানিকটা দুষ্টুমির ঝিলিক দেখা গেল। “ছেলের এতদিনে কাউকে মনে ধরেছে।”
“ভালোই।”
“আমার ভালো লেগেছে মেয়েটাকে। যদিও মেয়েটা খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে। ওদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস…”
মাকে থামিয়ে দিয়ে বাবা বললেন, “ওসব আর বলো না৷ আমাদেরই বা কী এমন স্ট্যাটাস রয়ে গেছে শুনি? খুব দ্রুত পতন হচ্ছে। তুমি ভয় পেও না, তোমাকে খুলে বলা হয়নি, এখন বলছি, সময় ভালো যাচ্ছে না। আগামীতেও ভালো যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহ কখন কাকে দেবেন, কার থেকে কেড়ে নেবেন এটা তার ব্যাপার। আমাদের হাতে কিছুই নেই।”
মায়ের চোখ ছলছল হয়ে গেলে বাবা তার এক হাত ধরে বললেন, “আমরা এখনো একসাথে আছি, আলাদা হয়ে যাইনি, এটাই কি বড় কথা নয়?”
“হুম। তোমাকে আমি কোথাও যেতে দিলে তো!”
“এইতো, তাহলে কাঁদবে না। তোমাকে কাঁদতে দেখলে কি আমার ভালো লাগে বলো?”
মা তৎক্ষনাৎ চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করলেন।
*******
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শিশির বলল, “অধরা, চলুন আপনাকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেই।”
“আপনার দ্রুত অফিসে যাওয়াটা বেশি জরুরি না?”
শিশির মাথা চুলতে বলল, “তা জরুরি..কিন্তু আপনি কষ্ট করে এলেন…”
“তাই বলে ফরমালিটি করতে হবে? আমি একাই যেতে পারব। আপনি আমাকে বন্ধু ভাবেন না নাকি?”
শিশির অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “নাহ, বন্ধু ভাবি না। অন্যকিছু ভাবতে চাই…”
অধরা শুনতে পেয়েও জিজ্ঞেস করল, “কী বললেন?”
“নাহ কিছু না৷ তাহলে বিদায়। রাতে কথা হবে।”
“হ্যাভ আ গুড ডে।”
“থ্যাংস অধরা। আমার পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
অধরা বলল, “বন্ধুদের ধন্যবাদ দিতে নেই।”
“আপনি আমার বন্ধু না ঠিক আছে? আপনাকে হাজারবার ধন্যবাদ দেব। আর এই টপিকে কোনো কথা না। পরে কথা হবে। দেরি হচ্ছে আমার। বাই!”
অধরা আপনমনেই বলল, “পাগল কোথাকার! অন্যকিছু হতে চায় ঠিক আছে, তাতে বন্ধু হতে দোষ কী?”
আজ আর ক্যাম্পাসে গেল না অধরা। সকালে মাকে বলতে চেয়েও সাহস করে কিছু বলা হয়নি। আপার সাথে আলাপ করা যায় পুরো বিষয়টা নিয়ে। শিশিরের ব্যাপারে আপাকে জানিয়ে রাখা ভালো। পরে কোনো ঝামেলা হলে সে ওর পাশে থাকতে পারবে।
অধরার বড় বোন অপর্ণা খুব ভালো ছাত্রী ছিল। বোর্ডে স্ট্যান্ড করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া মেয়ে বিয়ে করে এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী হয়ে গেছে। ছেলে আর স্বামী নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। প্রত্যেকেই তাকে নিয়ে আফসোস করে মরে যায়, “কত কী তুই জীবনে করতে পারতি অপর্ণা। কিচ্ছু করলি না। একেবারে ডালভাত হয়ে গেলি।”
অপর্ণার সহ্যশক্তি অসাধারণ। সে প্রতিবার হাসিমুখে জবাব দেয়, “আমি যে জীবনটা কাটাচ্ছি সেটা আমার বেস্ট জীবন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো চাকরি করেও আমি এর থেকে ভালো থাকতে পারতাম না।”
অপর্নার সাইকোলজি অধরা নিজেও বোঝে না। কী এমন সুখ অপর্ণা পেয়ে গেছে কে জানে! বাকি গৃহিণীদের তুলনায় ওর তেমন কোনো পার্থক্য তো নেই। এমনও না যে প্রেম করে বিয়ে করেছে। নেহায়েতই সম্বন্ধ করে বিয়ে। ভাইয়াও সাদামাটা ভালোমানুষ। তবে অপর্ণার হাতের জাদু দেখবার মতো। ওর বাড়িতে গেলে যে কোনো মানুষের এক ঝটকায় মন ভালো হয়ে যাবে। ঘরের দরজা থেকে শুরু করে বারান্দা পুরোটায় শৈল্পিক ছাপ ছড়িয়ে আছে। এতটুকু বাচ্চা নিয়ে ওর ছোট্ট পাখির বাসাটা এত সুন্দর করে কেমন করে সাজিয়ে রাখে সে এক বিষ্ময়! আর অপর্ণার আরেকটা গুণ হলো সে সবসময় হাসিমুখে কথা বলে। মাথা গরম বলে কোনো বিষয় ওর মধ্যে নেই।
অধরাকে অসময়ে দেখে অপর্ণা বেশ অবাক হলো। তবে সেটা প্রকাশ না করে একগাল হেসে বলল, “ভালো সময়ে এসেছিস রে। আজ ইলিশ পোলাও রান্না করছি। সাথে শুটকির ভর্তা করব। ডেজার্ট আইটেমে থাকবে জর্দা।”
“বাহ দারুণ তো!”
“তুই ব্যাগ রেখে ঘরে গিয়ে তুতুনকে নিয়ে খেলা কর। আমি চটপট রান্নাটা সেরে ফেলি।”
অধরা বলল, “আমি বাড়িতে বলে আসিনি।”
অপর্ণা চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী দরকার আমার কাছে?”
“জটিল কেস।”
“প্রেম ভালোবাসা?”
“তুমি কি অন্তর্যামী নাকি?”
অপর্ণা একগাল হেসে বলল, “অন্ধকরে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। লেগে গেছে। আজ তুই থেকে যা। মাকে বলব আমি তোকে আসতে বলেছি। আজ সারাদিন সারারাত গল্প করা যাবে। সব বলবি কিন্তু!”
“বলার মতো তেমন কিছু নেই।”
“আবার অনেক কিছু আছেও তাই না?”
অধরা উত্তর না দিয়ে রুমে ঢুকে গেল। অপর্ণা বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলল, “আগে বাথরুমে ঢুকে হাত পা ধুয়ে তারপর তুতুনকে ধরবি…”
অধরা এসব নিয়মকানুন জানে। সে আগে বাথরুমে গিয়েই ঢুকল।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-১৯
সোমবার ছুটির পর নিচে নেমে ডেভিডকে দেখতে পেল ইভা। চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সে যে বেরিয়ে এসেছে তাই খেয়াল করেনি। যখন ইভা ওর সামনে গিয়ে “হ্যালো!” বলল তখন চমকে উঠল ডেভিড। মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল, “হাই! ইউ আর লুকিং প্রিটি!”
“থ্যাংস! বাট আই থিংক আই অ্যাম লুকিং ডাল টুডে! অনেক কাজের চাপ ছিল।”
ডেভিড ঠোঁট চেপে হাসল। ওর চোখদুটো ঝলমল করে বলে উঠল, “মোটেও না৷ তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে তুমি জানলে তো!” ইভা এক পলকের জন্য থমকে গেল। ডেভিডকে হঠাৎ এত সুন্দর লাগছে কেন তার কাছে? ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুঁয়ে দিতে। ডেভিড দেখতে বেশ ভালো এটা সে প্রথমদিনই লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কই তার কাছে তো কোনোদিন ওকে ভালো লাগেনি। আজ কেন লাগছে?
মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করার চেষ্টা করে ইভা বলল, “চলো হাঁটতে হাঁটতে যাই সামনে।”
“এখান থেকেই বাসে উঠে যেতে পারি কিন্তু!”
“না৷ কথা আছে।”
ডেভিড বেশ কৌতুহল বোধ করল। কিসের কথা বলবে ইভা?
কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে একসময় ইভা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কী হয়েছে?”
“কী হয়েছে বলতে?”
“ডেভিড! বুঝেও না বোঝার ভান করার কোনো মানে হয় না। তুমি জানো তুমি আগের মতো নেই। কেন নেই সেটাই জানতে চাচ্ছি।”
ডেভিড এবার বুঝিয়ে বলতে চাইল, “দেখো ইভা, আমার কাজটাই এমন যে এ ব্যাপারে আমি খোলাখুলি তোমাকে কিছু বলতে পারব না৷ কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার স্যাপার৷ শুধু এতটুকু বলতে পারি, বেশ ঝামেলায় আছি৷ চেষ্টা করছি ঝামেলা থেকে বের হয়ে যেতে। খুব দ্রুত বের হয়ে যাব আশা রাখি। তখন আবার আগের ডেভিডকে ফিরে পাবে।”
ইভা জোরাজোরি করল না, তবে তার জানার ইচ্ছেটা প্রবল হলো। আজ হয়তো বলবে না, কিন্তু সে আবারও ডেভিডকে প্রশ্নটা করবে।
ওরা বাড়িতে পৌঁছুলে খালা ভীষণ খুশি হলেন ডেভিডকে পেয়ে। ইভার থেকে একেবারে ছিনিয়ে নিয়ে বসে গল্প জুড়ে দিলেন রাজ্যের। ডেভিড আসবে বলে খালা আজ চমৎকার সব রান্নাবান্না করে রেখেছে। সুঘ্রাণে ভরে আছে রান্নাঘর। ওদের ডিনারটা ভালো হলো৷ মনটাও সতেজ হয়ে গেল।
খাওয়া শেষে ইভা তর ডেভিড বসার ঘরে বসে আছে, খালা রান্নাঘর গোছাতে গেছেন। হঠাৎ খালার চিৎকার ভেসে এলো। দু’জন ভয় পেয়ে দৌড়ে গেল সেদিকে। গিয়ে দেখল খালার কিছুই হয়নি, বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে৷ হাতে একটা থালা। খালা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, “এত যত্ন করে স্ট্রবেরি পাই বানিয়েছি, সেটা সার্ভ করতেই ভুলে গেছি।”
ইভা কপট রাগ করে বলল, “খালা তুমিও না! এজন্য এভাবে চিৎকার করতে হবে? আমরা এখন খেয়ে নিচ্ছি।” বলে ডেভিডের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেল সে।
ডেভিড একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে খালার হাতে স্ট্রবেরি পাইয়ের দিকে৷ কী যেন হয়েছে তার। দুই পায়ে খুঁটি গেড়ে জমে বরফ হয়ে গেছে যেন একই জায়গায়। ওকে হুশ ফেরনোর জন্য রীতিমতো ধাক্কা দিতে হলো ইভার। যখন ডেভিডের সম্বিত ফিরল তখন সে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। যাবার আগে শুধু বলে গেল, অত্যন্ত জরুরি একটা কাজ মনে পড়ে গেছে।
*******
দুপুরে জমিয়ে আপার হাতে ইলিশ পোলাও খেয়ে অধরা সোফায় গিয়ে বসল গল্প করতে। কিন্তু গতরাত নির্ঘুম কেটেছে, তারপর ভরপেট খেয়ে আর চোখ খোলা রাখতে পারল না সে৷ সোফাতেই এলিয়ে পড়ল ঘুমে।
ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোন শুনে। চট করে উঠে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগল কোথায় আছে এটা বুঝতে। বেকায়দা শুয়ে ঘাড়টা একটু ব্যথা লাগছে। তবুও মোবাইলটা ওর নিচে চাপা পড়ে এখনো আস্ত আছে দেখে ভালো লাগল। যদিও কলটা কেটে গেল সে ধরার আগেই। শিশিরের কল।
কলব্যাক করল অধরা। শিশির এবার আর ধরল না। কয়েকবারের চেষ্টায়ও তাকে পাওয়া গেল না।
সন্ধ্যায় অপর্ণার বাসার ছোট্ট ব্যালকনিতে নকশাকাটা মাদুরের ওপর বসে চা খেতে খেতে অধরা আপাকে শিশিরের ব্যাপারটা মোটামুটি খুলে বলল প্রথম থেকে।
আপা সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। অধরা আপার বারান্দার গ্রীল বেয়ে ওঠা কুঞ্জলতার ফুলগুলো বাতাসে নড়তে দেখছিল। মায়ার আবেশে যেন সেগুলো জড়িয়ে রেখেছে আপার ছোট্ট সুখের বাসাটা। এরকম একটা বাসা তারও থাকতে পারত! সেখানে সুখ বোনা হতো রোজ! কিন্তু কার সাথে? শিশির?
আপার কথায় কল্পনার দৌড় থামিয়ে বাস্তবে ফিরতে হলো অধরাকে। “তুই কী চাইছিস এখন?”
অধরা মাথা নেড়ে বলল, “জানি না।”
“ছেলেটাকে বিয়ে করতে চাইছিস?”
“জানি না।”
“এত কনফিউজড থাকলে তো হবে না। নাভাল রবিকান্তের একটা কথা আছে, ” If you can not decise, the answer is no.” তোর আরেকটু ভাবতে হবে অধরা।”
অধরা বলল, “তুমি কি কোনো সল্যুশন দিতে পারো না?”
“তোর জীবনের সল্যুশন তোকেই বের করতে হবে। আমি বড়জোর এটুকু বলতে পারি সিদ্ধান্ত নেবার সময় হ্যাঁ কি না এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারিস। যেমন, আমি কি শিশিরের সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই? উত্তর হবে হ্যাঁ বা না৷ এভাবে বিয়ে পর্যন্ত ভাববি। আবার উল্টো প্রশ্নও করবি। আমি কি শিশিরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই? উত্তর হবে হ্যাঁ বা না। দেখিস তুই নিজেই বুঝবি।
ওটা তো গেল তোর মনের সিদ্ধান্ত জানার ব্যাপারটা। এবার আসি আরেকটা জরুরি কথায়৷ তোর যদি মনে হয় তুই সিরিয়াস তাহলে সেটা শিশিরকে জানিয়ে দে। সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, তুই ফিরিয়ে দিয়েছিস, সে হয়তো আর বলবে না। এবার তোকে বলতে হবে। হয় তুই ওকে প্রপোজ করবি, নয়তো ওকে বাদ দিবি। এরকম সম্পর্ক রেখে ওর থেকে আবার এগিয়ে আসার অপেক্ষা করতে গেলে দেখবি বুড়ো হয়ে গেছিস৷ ও ইঙ্গিত দিলেও আমার মনে হয় না আর সরাসরি কিছু বলবে।”
“বুঝেছি।”
“ঘোড়ার ডিম বুঝেছিস। অনেক ঝামেলা হতে পারে। ওদের সামাজিক স্ট্যাটাস আলাদা৷ আবার ব্যবসায়ে ঝামেলা যাচ্ছে। এর মধ্যে এসব সম্ভব কি না তাও একটা প্রশ্ন৷ কিন্তু আমি কোনোভাবেই এরকম আজব একটা সম্পর্ক চালিয়ে যাবার পক্ষে না৷ তোরা দুটোই ইম্যাচিউর। কবে কোন ভুল করে বসবি ঠিক আছে?”
“আপা তোমার আমাকে এরকম মনে হয়?”
“স্যরি, বাট হ্যাঁ, মনে হয়৷ ওর সাথে অতদূর চলে গিয়েছিলি মনে আছে? সেদিন অনেক কিছুই হতে পারত৷ আমি তোকে বিশ্বাস করি অধরা। কিন্তু তোর বয়সটাকে কোনোভাবেই না।”
অধরার ইচ্ছে করল আপার সাথে ঝগড়া করতে। আপা তাকে ভাবেটা কী! পরে মনে হলো, আপা খুব একটা ভুল বলছে না। সেদিন তাদের কোনো ভুল হয়েও যেতে পারত!
“এখন কী করব?”
“বললাম তো, সেটা তুই ঠিক কর। তবে বুঝেশুনে। বাবা মাকে আমি ম্যানেজ করতে পারব। তুই আগে নিজের আর শিশিরের ব্যবস্থা কর।”
অধরা আপার কোলে মাথা রেখে বলল, “আমার ভয় লাগে আপা।”
অপর্ণা অধরার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। জীবনটা খুবই অনিশ্চিত। অতি সাবধানে প্রতিটা স্টেপ ফেললেও কখনো কখনো বিরাট গড়বড় হয়ে যায়। আর বিয়ে হলো একটা বাজির মতো। পার্টনারের ব্যাকগ্রাউন্ড যেমনই হোক, আগে থেকে জানার উপায় নেই সে স্বামী হিসেবে কেমন হবে৷ এই বাজিতে তুই জিততেও পারিস, হারতেও পারিস। সেজন্য অংশগ্রহণ না করে পিছিয়ে গেলেও তো চলবে না।”
“তুমি আজকে অনেক ভারী ভারী কথা বলছো।”
অপর্ণা হেসে অধরার মাথায় চাটি মেরে বলল, “মাথা জ্যাম হয়ে গেছে বলে আমার কথা ভারী লাগছে। পরিষ্কার মাথায় ভাব, গাধী।”
******
শিশির সারাটাদিন তুমুল ব্যস্ত ছিল। বাবার হয়ে চারটা মিটিং এটেন্ড করা, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল, পেন্ডিং কাজ গোছানো, টাকাপয়সার হিসাব সব মিলিয়ে মাথা জট পাকিয়ে গেছে তার। বিকেলের দিকে অল্প একটু সময় সে একা বসেছিল কেবিনে। এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল পিওন। কফি কাপে চুমুক দিয়ে মাথাটা খানিকটা হালকা লাগছিল। তখনই অধরাকে কল করেছিল সে, ভেবেছিল ওর সাথে কথা বলে একটু ভালো লাগবে।
কিন্তু অধরা কল ধরেনি। সে দ্বিতীয়বার কল করার সময়ও পায়নি। কয়েকজন এমপ্লয়ি ঢুকে গিয়েছিল কেবিনে। তারা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি তার কর্মচারীদেরও একে একে টেনে নিচ্ছে!
সব সামলে শিশির যখন বাড়ি ফিরল তখন তার মাথাটা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাবাকে দেখতে যাবার মতো মানসিক শক্তি সে পেল না। গতরাতটা ঘুমায়নি বলে আরো খারাপ লাগছে। সে সোজা ঘরে গিয়ে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। জামাকাপড় বদলানো কিংবা খাওয়ার কথা মনে রইল না।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু