মায়ার জীবনী পর্ব-১২

0
833

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১২

সারহানকে কল দিতেই রিসিভ করলো নে।
সর্বপ্রথম আমার ব‍্যাক্তিগত কথা বললাম
:,,,,,,গেছো তো বেশ কদিনই হলো।আমার দৈনন্দিন ইউস করা কসমেটিকস অর্থাৎ তেল,শ‍্যাম্পো,লিপ বাম এগুলো তো শেষ হয়ে গেছে।হাজার দুয়েক টাকা পাঠাও সব কিনে নেই”।

আমার কথা শুনে সারহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”মাকে গিয়ে বলো।দেখো মা কী বলে”।

মনে একবার প্রশ্ন জাগলো,বউ তোমার অথচ মাকে বলতে হবে কেন?
পরক্ষণে ভাবলাম,সারহান তো বাড়িতে নেই।তাই আমার বর্তমান গার্জেন্ট হিসেবে এ বাড়িতে তিনিই আছেন।সে তো আমার মায়ের মতোই, তাহলে তাকে বললে সমস্যা কী।

সারহান তাড়া দিলো।সায়মার ব‍্যাপারটি আর বলা হলো না তাকে।
বিছানায় ফোন রেখে বাইরে গেলাম।

শাশুড়ি মাকে বললাম,”সেই বিয়ের সময়কার তেল-সাবান গুলো এখনো ইউজ করলাম।
বিয়ের তো প্রায় আড়াই মাস হলো।
সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।আপনি বাজারে গেলে আমার জন‍্য জিনিস গুলো নিয়ে আসবেন।কাগজে ফর্দি করে দেবো আমি”।

তিনি মাথা নিচু করে রইলেন।তারপর বললেন,”দু-তিন দিন আগেই সায়মা,সাইরার জন‍্য আলাদা আলাদা ব্র‍্যান্ডের জিনিস পত্র কিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
তুমি বরং ওদের টাই মিলেমিশে ব‍্যবহার করো।
ছিন্নিতে ছিন্নিতে আলাদা আলাদা জিনিস কিনে টাকা নষ্ট করার দরকার নেই”।

:,,,,,,,,”এসব আপনি কী বলছেন মা?
ওদের ত্বক আর আমার ত্বক তো এক না।ওরা যেই ফেইসওয়াশ,ক্রিম,তেল ব‍্যবহার করে,সেগুলো কী আমার শরীরে সুট করবে?বলুন”।

:,,,,,,,,”দেখো বউ,এতো কিছু বুঝিনা আমি।
মানুষ কী ননদের তা ব‍্যবহার করেনা নাকি?সবই হলো তোমার বাহানা”।

আমি আর কোনো জবাব দিলাম না।সারহানকে কল দিয়ে বললাম সবকিছু।
উত্তরে ও বললো,”তোমার তো দেখছি সামান্য ধৈর্য্য ও নেই মায়া।
মায়ের কাছে হয়ত টাকা নেই।তাদের দিকটাও তো একটু বুঝবে।এতো অবিবেচক দের মতো কথা বললে হবে?
আর তোমার যেহেতু এতোই আরজেন্ট,তো তুমি তাহলে তোমার বাবার থেকে টাকা চেয়ে কিনে নাও সব”।

আমি অবাক হলাম সারহানের কথা শুনে।

:,,,,,,,”তোমার কী মাথা খারাপ?
বিয়ের পর আমি কেন আমার প্রয়োজনীয় জিনিস বাবার বাড়ি থেকে নেবো?
তুমি এতো কোটিপতি হয়েই বা কী হলো?
সামান্য বউয়ের ভরণপোষণেরই পারছো না”।

:,,,,,,,”মুখ সামলে কথা বলো মায়া।তোমার বাবার তিন মাসের ইনকাম আর আমার একমাসের ইনকাম সমান”।

:,,,,,,,,,”তাহলে এতো কৃপণতা করছো কেন”?

:,,,,,,,”অদ্ভুত মায়া!তোমার প্রচন্ড লোভ”।

আবারো কল কেটে দিলো সারহান।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।’মেয়েদের সত্যিই নিজের পায়ে দাড়ানো খুবই জরুরি।

কিছুক্ষণ পর আমার ফোনের ম‍্যাসেজ টোন বাজলো,বিকাশে ৫০০ টাকা এসেছে।
সারহান দিয়েছে টাকা।
বুঝলাম না,এই ৫০০ টাকা দিয়ে আমি কী কিনবো?
তার তো আর চাকরি না যে,মাস শেষ না হলে বেতন পাবে।
ব‍্যবসায়িদের হাতে সবসময়ই অল্প হলেও টাকা থাকে।
আর সারহানের ব‍্যবসা তো প্রতিষ্ঠিত।
লাখ-লাখ টাকা ইনকাম হয়।

আমি সুন্দর করে টাকাটা সেন্ডমানি করে দিলাম সারহানের বিকাশে।
এই টাকা নিয়ে নাম কুড়ানোর দরকার নেই।
টাকা না থাকলে বলতে তো পারতো,যে পরে দেবো।

____

দেখতে দেখতে পার হলো দেড়টি বছর।
এই বাড়ির মানুষ গুলোকে কিছুটা পরিবর্তন করতে পেরেছি আমি।
সারহানকে তার বোনের কথা জানালে,সে আমাকেই উল্টে দোষ দিয়েছিল।তাই আর মেয়েটার ব‍্যাপারে নাক গলাইনি আমি।

ইদানিং আমার বাবার বাড়ির সকলে সহ আশেপাশের মানুষেরা বলে বাচ্চা নিতে।
বিয়ের বয়স তো অনেকই হলো।এখন না নিলে আবার পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু বাচ্চার কথা শুনলেই মুখ ভার হয় শাশুড়িমার।সারহানের সঙ্গেও এ ব‍্যাপারে কথা বললে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।

আমার দুজন ভাবী বেড়াতে এলেন আমার শশুর বাড়ি।
খাওয়া-দাওয়া শেষে এটা-ওটা নিয়ে আমার শাশুড়ির সঙ্গে গল্প করছিলেন তারা।
আমি গিয়ে বসলাম সেখানে।

এক ভাবী আমায় মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো,”বয়স তো কম হলো না মায়া।এবার একটা পিচ্চি-পাচ্চা নিয়ে নে”।

সঙ্গে সঙ্গে শাশুড়ি মা বলে উঠলেন,”না না।এখন এসব ঝামেলা নিতে হবে না।
বাচ্চা-কাচ্চার অনেক খরচ।
আগে সায়মা সাইরার বিয়ে হোক।ওরা শশুর বাড়ি চলে গেলে এদিকে একটু খরচ কমবে।তখন এসব নিতে হবে”।

আমি মনে মনে বললাম,এখন কী আমাদের ফ‍্যামেলি প্ল‍্যান ও সে করে দেবো।

ভাবীরা মুখ কুচকালেন।
:,,,,,,,”এগুলো কী বলেন খালাম্মা?নাতী-নাতনী হওয়া তো আপনারই সুবিধা।
বিয়ের তো বছর দুয়েক হয়েই এলো।আর প্রাপ্তবয়স্ক ও দুজনে।এখন যদি বাচ্চা-কাচ্চা না নেয়,পরে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও আপনার তো একটি মাত্র ছেলে।
সেই ছেলের ঘরে যদি বংশ না আসে,তাহলে কী করবেন”?

:,,,,,,,,”বাচ্চা না হলে না হবে।শুধু ঝামেলা”।

ভাবীরা আমার মুখপানে তাকালো।
আমি শুকনো হাসি হেসে নিজের ঘরে চলে গেলাম।
পিছে পিছে ভাবীরাও এলো।

বললেন,”তোর শাশুড়িকে মনে হচ্ছে,একটু বেশিই ই হিসেবি মানুষ।এই জামানায় এসে এতো হিসেবে করলে চলে”?

আমি জবাব দিলাম না কোনো।জবাব দেওয়ার মুখ ও নেই।

:,,,,,,,,”শোন মায়া,যে যাই বলুক।একটা বাচ্চা নিয়ে নে তুই।বাড়ির যা পরিবেশ দেখছি,বাচ্চা একটা আসলে ঠিক হলেও হতে পারে।
পরবর্তীতে যখন হবে না,তখন সবাই তোরই দোষ ধরবে।
আর বিয়ের পর সন্তান ছাড়া বড্ড বেমানান লাগে।
আমি কিন্তু বিয়ের পাঁচ মাসেই নিয়ে নিয়েছিলাম বাচ্চা।এতে অবশ‍্য তোর ভাই অনেক সাপোর্ট করেছিলো।
তুই বরং একটা পিচ্চি নিয়েই নে বোন”।

ভাবীর কথা আমার যুক্তিগত মনে হলো।

এরপর তারা বিদায় নিলো।

দশদিন পর সারহান এলো বাড়িতে।পনেরোদিন মতো থেকে চলে গেলো সে।
দু-মাস পরেই জানতে পারলাম,আমি কনসিভ করেছি।
খুশির বর্ণা বয়ে গেলো আমার বুকে।
বরাবরই বাচ্চা ভীষণ প্রিয় আমার।

শাশুড়িমাকে এ কথা বলতেই তিনি বললেন,”তুমি আসলেই আমার সংসারের উন্নতি চাও না মায়া”।

সারহানকে কল দিয়ে কী সব বললেন তিনি।
শুনলাম বাড়ি ফিরতে রওনা দিয়েছে সে।

চলবে,,,,,,,,