মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
374

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 41

🍁🍁🍁

সময় আর স্রোত চির বহমান। এরা নিজের ছন্দে চলতে থাকে। সেই সময়ের ছন্দে চলে মানবজীবনের গতি ধারা। সাজেক থেকে ফেরার আজ দুইমাস । সবাই আবারো নিজেদের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। দিনশেষে কেউ রাতের গভীর আঁধারে নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ছে কেউবা ঘন্টার পর ঘন্টা ভালোবাসার মানুষ টার সাথে ফোনালাপ করছে। কেউবা নিজের নব প্রেমের অনুভূতি কে ভালোবাসায় রূপান্তর করেছে। তবুও দিনের আলোয় আবারো শুরু হয় ব্যস্ততা। তাই বলে কারো ভালোবাসায় কোনোরূপ কমতি আসেনি।

তন্ময় : সিনহা কি করছো। তোমাকে বলেছে কেউ এতো ভারী জিনিস তুলতে।

তন্ময়ের কথায় সিনহা বিরক্তির শ্বাস ছাড়ে। এই ছেলেটার সব কিছু তে বাড়াবাড়ি। প্রেগন্যান্সির কেবল পাঁচ মাস। আর ছেলের ভাব যেনো বিকেলে ডেলিভারি হবে।

সিনহা : তন্ময় তুমি সবসময় এমন খ্যাচখ্যাচ করো কেনো।

সিনহার কথায় তন্ময় রাগী চোখে তাকায়।

তন্ময় : তো কি করবো। সোজা কথার মানুষ তুমি। বার বার নিষেধ করেছি এই সময় বেশী দৌড়ঝাঁপ করো না। সিমথি যদি জানে তার আদরের বোনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি তাও এই অবস্থায় তাহলে নির্ঘাত এই মেয়ে আমার গর্দান নেবে।

তন্ময়ের কথায় সিনহা খিলখিল করে হেসে উঠে।

সিনহা : সিমথি আপু তুমি ভয় পাও অনেক তাই না।

তন্ময় : জ্বি না ম্যাডাম ওকে ভয় পাই না কিন্তু ওর হাতে দাবাং মার্কা থাপ্পড় কে ভয় পায়।

তন্ময়ের কথায় সিনহা আবারো হেসে দেয়।

অনিল : ম্যাম সামনের সপ্তাহে নির্বাচন। এই এমপি এবারো এমপি পদে দাড়াচ্ছে।

অনিলের কথায় সিমথি গভীর চিন্তায় ডুব দেয়। আচমকা ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে।

সিমথি : এই এমপি মহাশয়ের প্রাণভোমরা কোথায়।

সিমথির কথায় অনিল হেঁসে দেয়।

অনিল : ম্যাম এই এমপির প্রাণভোমরা সুরক্ষিত স্থানে আছে।

সিমথি : সময় মতো নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিও। আর শুনলাম এইবার এমনপি পদে মেয়র শাহাদাত আবির দাড়াচ্ছে।

অনিল : হুমমম ম্যাম। অত্যন্ত সত্যবাদী একজন সুন্দর মানসিকতার পুরুষ।

সিমথি : তোমার কি মনে হয় এমন চার্মিং সুদর্শন যুবক কে এমপির পদ ব্যতিত এমন বুড়ো কালো ব্যবসায়ীকে মানাবে। উৎসুক জনগন এটা মানবে। এমপির পদ টা আমার দাদার ছিলো। দাদাজান মা/রা যাবা আগে উনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্লাস সহচরী নিজামুল হক কে স্থান দিয়েছিলো। শা/লা কয়েক বছর ভালোভাবে জনসেবায় নিয়োজিত থাকলে ও টাকার লোভে নিজের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়েছে। আমার দাদাজানের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। এর শাস্তি তো পেতেই হবে আগামী এক্স এমপি মহাশয় কে।

সিমথির কথায় অনিল নিশ্চুপ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা তারপরই দেখা যাবে সিমথির নীরবতার আড়ালে থাকা হিংস্রতা।

________________

_ ম্যাম পার্সেল আছে

মেহের : পার্সেল কিন্তু কার নামে।

_ সিমথি জাহান সিয়া।

মেহের : সিমথির নামে। আচ্ছা আমাকে দিন। আমি দিয়ে দেবো।

অতঃপর মেহের সব ফর্মালিটি পূরণ করে পার্সেল নিয়ে দরজা লাগায়।

শাওনের মা : এটা কি রে।

মেহের : মা পার্সেল।

ইশান : ওমা ভাবীপু তোমার নামেও আজকাল পার্সেল পাঠায় তোমার এক্সরা

মেহের : থা/প্প/ড় দেবো। ফাজিল

আদিবা : ধ্যাত ছোড়দা চুপ কর। ভাবীপু কার নামে গো। খুলে দেখো না কি আছে।

মেহের : সিমথির নামে।

আদির মা : সিমথির। তাহলে আর খুলিস না। হয়তো দরকারী কিছু।

ইশানের মা : রাইট টক। নট খোলাখুলি। ডটার ইন ল ইজ কামিং এংরি।

শাওনের মা : হুমম মেহের ও আসলে দিয়ে দিস।

মেহের সবার কথায় সায় দিয়ে পার্সেল নিয়ে নিজের রুমে যায়। আপাতত সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। সাতটা থেকে বাড়িতে সবাই আসতে শুরু করবে কাজ শেষ করে।

আদিবা : ওই তিন্নি ম্যাথ টা ঠিক করে কর। ভুল হচ্ছে তো।

তিন্নি : ভুল না ধরে একটু বুঝিয়ে দাও পিপি।

ইশান : এদিকে আয় আমি বুঝিয়ে দেয়। ও তো খালি খেতে জানে।

আদিবা : ছোড়দা ভালো হবে না বলে দিলাম।

আদিবার কথায় ইশান ভেংচি কেটে তিন্নিকে নিয়ে ম্যাথ্ করাতে শুরু করে। আদিবা ফোন হাতে নিয়ে এফবিতে যায়। তখনই ম্যাসেন্জারে নোটিফিকেশনের শব্দে আদিবা ম্যাসেজে ক্লিক করে।

আমার হৃদয়ের রাণী হৃদয় হরণী। আপনি ব্যতিত আমার দিনগুলো নিকষ আধারে ঢেকে যাচ্ছে এটা কি আপনি জানেন। আপনার বাচ্চামো আপনার হাসি সবকিছু কে ভয়ানক ভাবে হারাচ্ছি। আপনার মন মাতানো হাসি আমার ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়। আপনি আমার হৃদয় হরণের সাথে আমার ঘুমটা ও কেড়ে নিয়েছেন। এর শাস্তি স্বরূপ আপনাকে ভালোবাসার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ভালোবাসার প্রস্তাব দেবো আর আপনার শাস্তি মঞ্জুর তখনই করবো যখন আপনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরবেন। আর আপনার ওই মিষ্টি গলায় ভালোবাসি বলবেন। খুব শীঘ্রই আমাদের সাক্ষাৎ হচ্ছে। তৈরি থাকুন আমার মনের রাণী থেকে ঘরণী হবার জন্য।

ইতি
আপনার অপেক্ষায়
সাতাশ বছর বয়সী তাগড়া যুবক

ম্যাসেজ টা পড়ে আদিবা কিছু ক্ষণ থম ধরে বসে থাকে৷ এমন বার্তা হুটহাট আসে। কিন্তু বার্তা প্রাপক কে এখনো অবধি আদিবা ধরতে পারছে না। আদিবা নিজে থেকেম্যাসেন্জারে ফোন দিলে ধরে না। ম্যাসেজ দিলে সিন করে না। কিন্তু নিজে ঠিকই ফোন ও দিতে পারবে ম্যাসেজ ও দিতে পারবে। কিন্তু গলার স্বর যেনো উপরওয়ালা উনাকে দেননি। আদিবার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাউকে কল্পনা করলেও সেটা সিউর কিনা আদিবা জানে না। কারণ সেদিনের পর থেকে মানুষটা যে গায়েব হলো কই একবারো তো আসলো না। দেখা ও দিলো না মানুষটা একবার। কেউ কিভাবে রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় এটা বোধহয় এই মানুষটাকে না দেখলে আদিবা জানতো না।

আচমকা মাথায় কারো বারি মারায় আদিবার ধ্যান ভাঙে। আদিবা চোখ মুখ কুচকে পেছনে তাকায়। মাথা পুরো জিম ধরে গেছে। মাথা ঝাকিয়ে আদির গায়ে জোরে কিল বসায়।

আদিবা : হা/রা/মি একটা। মারলি কেনো।

আদি : কোন ধ্যানে থাকি কখন থেকে ডাকছি তোর হুস নেই। ভাবলাম আবার দাতি লেগে গেলি নাকি তাই গাট্টা দিলাম। কিন্তু এখন দেখি হুসেই আছিস।

আদিবা : তাই বলে মারবি। এ্যাহহহহ ভাবীইই

সিমথি : জ্বি কিউটিপাই বলো।

আদিবা : তুমি এর বিচার করো একে আমি ছাঁদের উপর থেকে ধাক্কা মারবো।

সিমথি : সেটা একান্তই তোমার ইচ্ছে। তোমার মন চাইলে ছাঁদ কেনো প্লেন থেকে ধাক্কা মারো। আমার শতভাগ সহমত আছে।

আদির মা : এসেই সবগুলোর বাদরামি শুরু হয়ে গেছে। সবগুলো আজ একসাথে আসলি কিভাবে।

শাওন : জানিনা। বাড়ির সামনে আমাদের সবার দেখা হয়েছে।

আদির বাবা : বুঝলে গিন্নি

আদির মা : থাক তুমি চুপই থাকো। এই সবগুলো ফ্রেশ হয়ে আয়।

সিমথি : বাবা তুমি একটা শান্ত শিষ্ঠ মা আনতে পারলে না এমন খিটখিটে মা কোথায় পেলে।

আদির বাবা : কি আর করবো সবই কপাল। তাহলেই বুঝ বত্রিশ বছর আমি কিভাবে সংসার করলাম।

সিমথি : আই ফিল ইউর পেইন ফাদার ইন ল

সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। আদির মা রাগী চোখে একবার নিজের পতি পরমেশ্বরের দিকে তাকায় আবার নিজের ছেলের বউয়ের দিকে তাকায়।

আদির মা : ওই সবগুলো ফ্রেশ হয়ে আয়। আর সিমথি তুই না ডাক্তার। বাইরে থেকে এসে হাত পা না ধুয়েই আড্ডা দিচ্ছিস।

সিমথি : আমি হলাম ডক্টর। এখন ডক্টর হয়ে যদি প্রেশেন্টের মতো নিয়ম মানি তাহলে তফাৎ কোথায়। আমার কাজ রোগীকে প্রেসক্রাইব করা। কিন্তু সেই প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আমি কেনো খাবো। আমি কি রোগী৷

শাওনের মা : এই মেয়ের যুক্তির শেষ নেই। তোর ওকালতি পড়ার দরকার ছিলো

সিমথি : ওহ বড় মা লাভ ইউ। উম্মাহহহহ। আমার ওকালতি করার দরকার ছিলো এটা সবাই বলতো। এখন তুমি ও বললে।

সিমথির কথায় সবাই আরেক দফা হেসে উঠে।

আদির মা : এই মেয়ে কে দেখতে গম্ভীর হলেও ফাজিলের নানী।

সিমথি : আহা এখনো তো তুমিই নানী হলে না আমি কিভাবে হবো। কিউটিপাই করবে নাকি বিয়ে উহুমম হুমম হুমম ( ভ্রু নাচিয়ে)

আদিবা : কাভি নেহি। এখন ও আমার ক্যারিয়ার গড়তে পারলাম না আর বিয়ে হোপসস।

ইশান : আচ্ছা ভাবীজ্বি আর ভাইজান রা, চাচাজানরা আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসুন সবাই। মহিলা সদস্যরা ক্ষেপে যাচ্ছে।

ইশানের কথায় সিমথিরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবারো নিচে আসে। আদির মা-চাচীরা রান্নাঘরে কাজ করছে দেখে সিমথি ও সেদিকে পা বাড়ায়।

সিমথি : ওহ মা

আদির মা : কি হয়েছে বল।

সিমথি : আজ আমি রাঁধি।

শাওনের মা : পা/গ/ল নাকি মাত্রই তো হসপিটাল থেকে আসলি আর এখন রান্নাঘরে কি করছিস। যা বসার রুমে সবাই আছে ওখানে যা।

সিমথি : কিন্তু

ইশানের মা : আরে ডটার ইন ল ইউর নামে পার্পেল কামিং

ইশানের মায়ের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। এই পার্পেল টা আবার কি।

সিমথি : পার্পেল কি গো ছোটমা।

শাওনের মা : আহ ছোটো থাম দিখিনি। তোর নামে কুরিয়ার থেকে পার্সেল এসেছে।

সিমথি : আমার নামে ( অবাক হয়ে)

আদির মা : দেখ কে কি পাঠালো।

সিমথি দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,

সিমথি : বাই এনি চান্স আমার আগের পক্ষের জামাই পাঠায়নি।

আদির মা খুন্তি হাতে নিতেই সিমথি শব্দ করে হেঁসে বসার রুমের দিকে যায়৷ কিন্তু মাথায় এখনো পার্সেলের কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে।

সিমথি : মেহের ভাবী আমার জন্য নাকি কি এসেছে।

মেহের : দেখেছিস আমি একদম ভুলে গেছি। দাঁড়া নিয়ে আসছি।

ইশান : তোমার নামে একটা পার্সেল এসেছে কিন্তু কে পাঠিয়েছে নাম ঠিকানা কিছুই নেই।

আদি : তোমার কোন এক্স তোমার নামে পার্সেল পাঠালো আবার৷

সিমথি : কি জানি। এতোগুলো রিলেশনে ছিলাম প্রথমটার নাম কি এটাই ভুলে গেছি।

সিমথির খোঁচা মারা কথায় আদি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি মাছি তাড়ানোর মতো ভান করে ধপ করে আদিবার পাশে বসে পড়ে। অতঃপর তিন্নিকে কোলে নিয়ে খেলতে শুরু করে।

মেহের : এই যে নে।

সিমথি চোখ তুলে পার্পেল পেপারে মুড়ানো বক্সটার দিকে তাকায়। অতঃপর পার্সেল টা হাতে নিয়ে সবার দিকে তাকায়।

আদি : কি হলো খুলছো না কেনো। চাইলে রুমে গিয়ে খুলতে পারো

সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

সিমথি : এই স্বভাব টা বদলাম আপনার।

সিমথি পার্সেল টা খুলে। পার্সেলের ভেতরের জিনিস টা দেখো কপাল কুঁচকে আসে। এটা আবার কি।

শাওন : কি হলো তোমার হাত থেমে গেলো কেনো।

সিমথি : হ হুমম।

সিমথি জিনিস টা হাতে নেয়৷ জিনিস টা দেখে সবার চোখ ছানাবড়া। একটা পেনড্রাইভ জাতীয় কিছু।

আদিবা : এটা আবার কেমন পার্সেল।

আদিবার কথায় সিমথি নিজেও কিছুটা চিন্তিত হয়। এমন পার্সেল কে করলো। প্যাকেটের কোথাও নাম ঠিকানা নেই। কে হতে পারে এই আগন্তুক।

চলবে,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 42

🍁🍁🍁

_ আমি জানতাম পেনড্রাইভ টা পেয়ে তুমি অবাক হবে। সঙ্গে এটাও জানতাম পেন ড্রাইভারে কি আছে এটা দেখার জন্য তোমার লেট হবে। বলতে হবে তুমি তোমার বাবার সবগুলো গুণ নিখুঁত ভাবে জব্দ করেছো। একজন আর্মি অফিসারের মেয়ে হিসেবে তুমি সত্যিই পারফেক্ট। কিন্তু তোমার আর তোমার বাবার এই পারফেক্ট গুনগুলোই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি ভেবেছো গোপনে তদন্ত করবে আর আমি জানবো না। তোমার মা-বাবার পরিণতি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি। তোমার সেই পরিণতি করতে আমার এক সেকেন্ড ও লাগবে না এটা তুমি জানো। তোমার পরিণতি তোমার বাবার মতোই হবে। যায় হোক কাজের কথায় আসি। শুনলাম তোমার কাছে আমার গোপনীয় পেন ড্রাইভ আছে। কোন পেন ড্রাইভের কথা বলছি নিশ্চয়ই এটা তোমাকে বলে বুঝাতে হবে না। তবুও মনে করিয়ে দিচ্ছি সতেরো বছর আগে তোমার বাবার পেছনে আমার লোকেরা যেই পেন ড্রাইভ পাওয়ার জন্য লেগেছিলো আমি সেই পেন ড্রাইভের কথা বলছি। আশা করি ভুলে যাওনি। সেই পেন ড্রাইভ টা আমার চাই। নয়তো এতোদিনে তুমি হয়তো জেনে গেছো তোমার মা-বাবা বেঁচে আছে। ওরা আমার কাছেই আছে। জানি বিশ্বাস করবে না তার জন্য প্রুভ ও পাঠিয়েছি। এখন চলো ডিল হয়ে যাক আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টা নিচের এড্রেসে চলে আসবে। তোমার মা-বাবাকে জীবিত ফেরত পাবে বিনিময়ে আমার পেন ড্রাইভ টা চাই। আমি জানি মা-বাবার বিষয়ে তুমি অন্যরকম। ওদের বাঁচাতে তুমি পেন ড্রাইভ টা নিয়ে আসবেই। কাল দেখা হচ্ছে। আর হুম ছবিগুলো অবশ্যই দেখবে। আল্লাহ হাফেজ।

টিভির ভেতরে ভিডিওটা বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কালো মানব ছায়া টা ও সরে যায়। সিমথি একদৃষ্টিতে টিভির স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। ড্রয়িংরুমে সবার মাঝে পিনপন নীরবতা দৃষ্টি সিমথির দিকে। সিমথি মুখ ফুলিয়ে একটা শ্বাস নেয়।

সিমথি : আদি পার্সেল টা দাও তো।

আদি : হ হুমম।

আদি পার্সেল টা হাতে নিয়ে সিমথির দিকে দেয়। সিমথি পার্সেলের ভেতর থেকে কয়েকটা ছবি বের করে। ছবিতে একজন অর্ধবয়স্ক সুন্দরী মহিলা এবং পুরুষ। গায়ে নোংরা জামাকাপড়। পুরুষের মুখে লম্বা লম্বা দাঁড়ি হালকা সাদা। আর মহিলার পরণে একটা নোংরা শাড়ি চুলগুলো এলোমেলো। দুজনের শরীরেই শুকিয়ে যাওয়া র/ক্তের চিহ্ন। হাত-পায়ের অনেক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। সিমথি ছবিগুলোর দিকে চোখ বুঁজে সোফায় হেলান দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। তখনই সিমথির ফোন টা বেজে ওঠে। সিমথি চোখ খুলে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে হাসে।

সিমথি : আসসালামু আলাইকুম। কৌশল সব ভালো তো।

এন.কে : তোমার মনে কি সত্যিই ভয়-ডর নেই।

সিমথি : ভয় আর আমি ধ্যাত মিয়া। আপনি না বললেন আমি আহনাফ খানের মেয়ে হিসেবে পারফেক্ট। তাহলে ভয় কেনো পাবো। আপনি তো চব্বিশ বছর আমার সংস্পর্শে থেকেও আমাকে চিনলেন না। ভেরি ব্যাড।

এন.কে : চব্বিশ বছর মানে।

সিমথি : ওসব বাদ দেন। আপনার থার্ডক্লাশ হুমকি ধামকি দেওয়ার জায়গা কি খুব কম পড়ে গেলো। যার জন্য স্বয়ং আমাকে পাঠাচ্ছেন।

এন.কে : তোমার কি মনে হচ্ছে আমি হুমকি দিচ্ছি।

সিমথি : আরে আরে আরে চাচাজি আপনি রেগে যাচ্ছেন। বাহ আপনার রাগান্বিত গলা তো বেশ লাগে শুনতে।

সিমথির স্বাভাবিক ব্যবহারে ড্রয়িংরুমের সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে কিভাবে এতো স্বাভাবিক থাকে এটাই কেউ বুঝতে পারে না।

সিমথির মুখে চাচাজি ডাকটা শুনে এন.কে কিছু সময়ের জন্য থেমে যায়। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,,,

এন.কে : কে তোমার চাচাজি।

এন.কে এর এমন প্রশ্নে সিমথি শব্দ করে হাসে। যেনো ফোনের ওপাশ থেকে এমন উত্তরই আশা করেছিলো।

সিমথি : আরেহ চাচাজি নলায় ক্ষেপে গেলপন নাকি। আচ্ছা ডাকছি না। তা বলুন আপনার ব্যবসা ঠিকমতো এগুচ্ছে তো।

এন.কে : কাটা গায়ে লবণ ঢালতে খুব ভালো জানো।

সিমথি : ওই যে মেজর আহনাফ খানের মেয়ে না আমি। এতোটুকু গুণ না থাকলে চলে বলুন।

এন.কে : তার মানে তুমি পেনড্রাইভ দেবে না কাল।

সিমথি : কাল তো আমি আপনার এড্রেসে যাচ্ছিই না পেন ড্রাইভ দেওয়া তো পরের কথা।

এন.কে : তোমার মা-বাবার প্রতি না তোমার অঘাত ভালোবাসা। সামান্য একটা পেন ড্রাইভ দিতে পারছো না

সিমথি : প্রসঙ্গ যখন আমার বাবাইয়ের প্রোফেশনাল লাইফ তখন এই সামান্য পেন ড্রাইভ টা কোহিনূরের চেয়ে দামী।

এন.কে : আর তোমার মা-বাবা

সিমথি : সতেরো বছর তো পাড় করলাম মা-বাবা ছাড়া বাকি সতেরোশ বছর পারবো ইনশাআল্লাহ।

এন.কে : তোমার এই এই খাপছাড়া ভাব টা আমার সহ্য হচ্ছে না সিমথি ( রাগে দাত কড়মড়িয়ে)

সিমথি : সহ্যশক্তি বাড়ান। এখনো অনেক কিছু সহ্য করা আপনার বাকি আছে। এতো তাড়াতাড়ি সহ্যশক্তি হারাবেন না। এতোদিন যেটা নীরবে চালিয়েছি এখন সেটা সম্মুখে চলবে। আপনি আগে যেমন কিছু বলতে বা করতে পারেননি এখনো ও কিছুই পারবেন না। আপনার দিন শেষ এবার তো আমার পালা। এতোদিন আপনি চাল চেলেছেন আমি সামলেছি। এবার আমি চালবো কিন্তু আফসোস আপনি সামলাতে পারবেন না।

শেষের কথা তাচ্ছিল্যের সুরে বলায় এন.কে রেহে হুংকার ছুঁড়ে।

এন.কে : ভালোভাবে বুঝাতে চেয়েছিলাম বুঝিস নি। এবার দেখবি আমার আসল রূপ।

সিমথি : আপনার এতো রূপ দেখে এখন আমার মন বিশ্বাস করে নিয়েছে আপনি গিরগিটি। গিরগিটি চিনেন তো ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় লাইক এজ ইউ।

এন.কে : সিমথি ( চেঁচিয়ে)

সিমথি : আরে রাগেন কেনো আপনি এতো চিল্লাপাল্লা করলে তো আমার মেজাজ চটে যাবে। আমি শান্ত গলায় কথা বলছি আপনার ও সেটাই উচিত। আপনার তো জানা দরকার অযাচিত কোনো ব্যক্তির আমার উপর তদারকি আমি সহ্য করিনা। সো টেক ইট ইজি। নয়তো চিনেনই আমাকে আপনার জীবন নরক বানাতে আমার জাস্ট এক মিনিট লাগবে। আমার একটা ক্লিক আপনার জীবন হেল।

এন.কে : তুমি আমাকে ধমকাচ্ছো নাকি মজা করছো।

সিমথি : থুরীই না আপনি আমার বেয়াই লাগেন। আমি কেনো মজা করবো। আমি আপনাকে হাসতে হাসতে শান্ত গলায় হুমকি দিচ্ছি।

সিমথির কথায় ওপাশের লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। যেনো এমন কিছু আশা করেনি। সিমথির সামনের দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। আদি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। সিমথি তো এতো ঠান্ডা গলায় কথা বলার ব্যক্তি না আবার যেখানে প্রসঙ্গ ওর মা-বাবার জীবন।

এন.কে : কি চাও তুমি। যা চাইবে তার বিনিময়ে আমার পেন ড্রাইভ চাই।

সিমথি : আর ইউ শিউর। যা চাইবো তাই পাবো। তাহলে আপনি পেন ড্রাইভ পেয়ে যাবেন।

সিমথির এহেন কথায় সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি চোখ এখনো বুঁজা। এন.কে বিকৃত হেসে শুধায়,,,,

এন.কে : কত লাগবে বলো। এল লাখ, দশ লাখ।

সিমথি : আপনার জীবনের দাম বুঝি মাত্র দশ লাখ। এতো সস্তা আপনি।

এন.কে : মানে ( হতবিহ্বল হয়ে)

সিমথি : আমার আপনার মৃত্যু চাই। আপনার ওই নোংরা শরীরটাকে নিজের হাতে ঝাজড়া করতে চাই। আই ওয়ান্ট টু কি/ল ইউ। ড্যাম ইট ( চোয়াল শক্ত করে)

আচমকা সিমথির ভরাট গলায় এন. কে ঘাবড়ে যায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে থেমে যায়।

সিমথি : তোকে আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি। আমার ইমোশনে আঘাত আনবি না। আমার মা-বাবা আমার সবচেয়ে বড় ইমোশনাল সাইড। তুই সেইদিকটা হাত বাড়ালে এই সিমথির সবচেয়ে ভয়ানক রূপ টা তোর জন্য বরাদ্দ থাকবে। যদি সুস্থ সমেত মৃত্যু বরণ করতে চাস তাহলে চুপচাপ থাক। তুই আর তোর পেন ড্রাইভ দুইটাই আমার কব্জায়। আমি চাইলে এখনই তোর এতোবছরে কালো ব্যবসা মিডিয়াসহ পুরো দেশের সামনে আনতে পারি। কিন্তু আমি আপাতত নীরব আছি। সেটাকে আমার ভালো মানুষি ভাবিস না। আমি এখনো সেই আগের সিমথিই আছি। খোলস পাল্টেছি কিন্তু স্বভাব বদলায়নি। এখনো গান পয়েন্ট মেইন জায়গায় সেট করলে তোর ওই বুক ঝাজড়া করা আমার জন্য অস্বাভাবিক না। সো যতদিন তোর আয়ু আছে ততদিন দুনিয়াটা উপভোগ কর। সময় আসলে আপনাআপনি তুই আমার হাতেই ম/র/বি। চারজন মানুষের নৃশংস মৃত্যুর দৃশ্যপট তোর উপর দিয়ে যাবে। ম/রা/র জন্য আমার পেছনে লাগিস না। আমি সঠিক সময় তোকে টেনে হিছড়ে বের করবো গর্ত থেকে। এখনো সময় আসেনি।

এন.কে : সেই সময় কখনো আসবে না।

সিসিমথি : মনে পড়ে সতেরো বছর আগে গাড়ি উল্টে সেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ার দিনটি। আশা করি মনে আছে। ওদের মৃত্যুর আঠারো বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র দুইমাস সাতদিন ষোলো ঘন্টা তেরো মিনিট বাইশ সেকেন্ড বাকি। তুই ও নিজের জীবনের কাউন্টিং স্টার্ট কর। আজ থেকে সতেরো বছর আগে পুরো শহর যেমন মেজর আহনাফ খান এবং এডভোকেট তানহা খানের মৃত্যুতে কেঁপে ছিলো। ঠিক দুইমাস সাতদিন ষোলো ঘন্টা তেরো মিনিট বাইশ সেকেন্ড পর আবার পুরো শহর কাঁপবে। পার্থক্য থাকবে টিভি চ্যানেলে মুখ বদলাবে। সেদিন ছিলো মেজর আহনাফ খান এবং তার মিসেসের ছবি আর ওইদিন থাকবে তোর ছবি।

এতোটুকু বলে সিমথি থামে। গলা কাঁপছে। চোখে সামনে রক্তাক্ত তিনটা মুখ ভেসে উঠছে। চোখ মেলে তাকায়৷ ফর্সা মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। ঢোক গিলে কান্না আটকায়। আদি মাথা নুইয়ে নেয়। আদি জানে সিমথির ইমোশনাল সাইড ওর মা-বাবা।

এন.কে : তুই এমন কিছু করবি না আমি জানি। তোর বুদ্ধি এখনো সেখানে পৌঁছায়নি যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি।

সিমথি : আপনি আমাকে জানেন না। ছোট থেকে দেখলেও আপনি আমায় চিনেন না। মেজর আহনাফ খানে মেয়ে আমি আমার মধ্যে সততার পাশাপাশি শত্রুপক্ষের জন্য কঠোরতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। এডভোকেট তানহা খানের মেয়ে আমি আমার মাথায় জটখোলার বুদ্ধি থাকবে না এটা ভাবা আপনার বোকামি। সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদের নাতনী আমি। কুটনৈতিক বুদ্ধি আমার শিরায় শিরায়। আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে ফেরার একটা পথ আপনার জন্য আমি নিজে বরাদ্দ রেখেছি। সেই পথটা সম্মুখীন হলে জানবেন।

এন.কে : সিমথি,,

সিমথি : নো মোর ওয়ার্ড। আপনি এমনিতেই আমার অনেক টা সময় নষ্ট করেছেন। নেক্সট টাইম এসব ফা/ল/তু হুমকি আমায় দেবেন না। ভয় জিনিস টা আমার মধ্যে নেই। এসব মাইন্ড গেইম অন্যজায়গায় ট্রাই করুন গুড বাই। আল্লাহ হাফেজ।

সিমথি ফোন টা ছুঁড়ে নিজের সাইডে রাখে অতঃপর উঠে গিয়ে সিডি থেকে পেন ড্রাইভ টা খুলে সযত্নে গুছিয়ে রাখে। মুখ ভঙ্গি স্বাভাবিক করে তিন্নির দিকে এগিয়ে যায়। বেচারি ভয় পেয়েছে কাকিয়ার এমন কথাবার্তায়। সিমথি হেসে তিন্নিকে কোলে নিয়ে গালে চুমু খায়।

সিমথি : কি হয়েছে সোনামা।

তিন্নি : তুমি ফোনে কাকে বকলে।

সিমথি : বকেছি একটা দুষ্টু লোককে।

তিন্নি : তোমার কিছু নিয়ে চলে গেছে তাই বকেছো।

তিন্নির কথায় সিমথির হাসি মুখটা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। আনমনে বলে উঠে

সিমথি : আমার সবচেয়ে প্রিয় তিনজন মানুষ কেই তো ছিনিয়ে নিলো দুষ্টু লোকটা।

সিমথির কথায় সবার মুখটা ছোট হয়ে যায়। ছোট তিন্নি কথার মানে না বুঝলেও বাকিরা ঠিকই বুঝেছে। তিন্নি অবুঝ গলায় বলে,,,

তিন্নি : আমি ওদের এনে দেবো কাকিয়া।

সিমথি : তুমি পারবে না তো। ( জোরপূর্বক হেসে)

তিন্নি : কেনো পারবো না।

সিমথি : আকাশের তাঁরা কি কখনো ছোঁয়া যায়।

তিন্নি : নাহ ( মাথা নাড়িয়ে)

সিমথি : ওরাও তেমনই। ওই যে আকাশটা দেখছো ওরা ওখানে আছে।

তিন্নি : ওরা ও কি আকাশের তাঁরা

তিন্নির কথায় সিমথি থমকায়। মনে পড়ে নিজের ছোটবেলার কথা। সায়নকে যখন বলতো মা-বাবা যাবো তখন সায়ন আকাশের তারা দেখিয়ে বলতো ওদের ছোঁয়া যায়। তখন সিমথি ও তিন্নিও মতো জিজ্ঞেস করতো ওরা ও কি আকাশের তাঁরা। সায়ন তখন এভাবেই হুম বলে ওকে সান্ত্বনা দিতো। সিমথি তখন খুশিতে নেচে উঠতো আর বলতো আমার মা-বাবা তাঁরা হয়ে গেছে ওদের সাথে আকাশে থাকে কি মজা। কিন্তুযখন বড় হতে শুরু করলো তখন সিমথি বুঝতে পারলো ওর মা-বাবা না ফেরার দেশে ঘুরতে গেছে।

তিন্নি : ও কাকিয়া বলো।

তিন্নির ডাকে সিমথির ধ্যান ভাঙ্গে। চোখ জ্বালাপোড়া করছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতোবছরের জমিয়ে রাখা কান্না উগলে আসতে চাইছে। সিমথি তিন্নিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে দীর্ঘশ্বাস নেয়।

তিন্নি : আমিও কবে তাঁরা হবো।

তিন্নির কথায় সবাই চমকায়।

মেহের : তিন্নি এসব কি কথা। ( ধমকে)

সিমথি : এসব কথা বলেনা। পঁচা মানুষরা ওখানে থাকে।

তিন্নি : তাহলে ওরাও কি পঁচা।

সিমথি : পঁচাই তো। নয়তো সাত বছর বয়সী মেয়ে কে কেউ ফেলে চলে যায়। ওরা ভীষণ পঁচা।

নিস্তব্ধতায় ঘেরা রুম টা যেনো আরো নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। সিমথির কথার ভাঁজে নিজের মা-বাবার প্রতি এক আকাশ অভিযোগ প্রকাশ পায়। এতো বছরের জমিয়ে রাখা কষ্ট সব যেনো ছোট কথাগুলোয় উগলে আসছে। আদি মা ছলছল চোখে সিমথির দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটার মায়ের অভাব বুঝি পূরণ করতে ব্যর্থ হলো। সিমথি মাথায় স্নেহের পরশ বুলায়। সিমথির আদির মায়ের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়।

চলবে,,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 43

🍁🍁🍁

শহর জুড়ে উত্তেজনার ঝড় উঠেছে। দুদিন পর এমপি পদের নির্বাচন। অথচ আজই টিভির প্রতিটি চ্যানেলে উঠেছে ঝড়। বর্তমান এমপি নিজামুল হক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। পার্টি অফিসের সামনে পুলিশের গাড়িসহ আছে জার্নালিস্ট রা। টিভির ভেতর এক মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে নিজামুল হক পুনরায় টিভির দিকে দৃষ্টিপাত করে।

_ দুদিন পরই শুরু হবে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গণনা। অথচ তার আগেই বর্তমান এমপি মিস্টার নিজামুল হকের কালো ব্যবসার প্রতিটা খবর এসে পৌঁছেছে জার্নালিস্ট দের কাছে। একজন জননেতার এহেন ঘৃণ্য রূপ সাধারণ জনগণের মাঝে সৃষ্টি করেছে ক্ষোভের। সাধারণ জনগণের এখন একটায় দাবি এমপি পদে পুনরায় দাঁড়ানোর অধিকার উনার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হোক। সবার এখন একটাই প্রত্যাশা মিস্টার নিজামুল হক তাঁর প্রাপ্য শাস্তিটুকু যেনো পাই। আন্ডারগ্রাউন্ডের বড়ো মাফিয়া এন.কে এর সাথে জড়িত বিষয়ে মিস্টার নিজামুল হকের উপর জনগণের আক্রোশের সীমা আকাশ ছোঁয়া। এদিকে মিস্টার নিজামুল হক পার্টি অফিসে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তাহলে,,,

বাকিটুকু না শুনেই নিজামুল হক রেগে টিভির দিকে ফ্লাওয়ার ভার্স ছুঁড়ে মারে। ফলস্বরূপ টিভি ভেঙ্গে যায়। নিজামুল হক রেগে কিড়মিড় করে ফোন হাতে নেয়। ফোন লাগায় কারোর কাছে।

অনিল : ম্যাম কাজ হয়ে গেছে।

সিমথি : গুড জব অনিল। এবার বাকিটা আমি সামলে নেবো আমার কাকা শ্বশুর কে দিয়ে

অনিল : ওকে ম্যাম।

সিমথি : কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন আসবে। অপেক্ষা করো।

সিমথি হেসে অনিলের দিকে তাকিয়ে পুনরায় টিভির দিকে দৃষ্টিপাত করে। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে পৈশাচিক হাসি। আচমকা সিমথির ফোন বেজে উঠায় অনিল হেঁসে মাথা নাড়িয়ে। সিমথি ঠোঁট চেপে হাসি আটকে ফোন কানে ধরে।

সিমথি : শেইম অন ইউ এমপি আঙ্কেল। আপনার এই নৃশংস রূপ টা আমাকে ভয়ানক ভাবে আঘাত করেছে। কিভাবে পারলেন এটা করতে। ছিহ আঙ্কেল ছিহ।

নিজামুল হক : নাটক করো না সিমথি। আই নো ইট ভেরি ওয়েল। সব কিছু তোমার কারসাজি। নির্বাচনের দুদিন আগে ইচ্ছে করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছো তাই না। ( রেগে চিল্লিয়ে)

সিমথি : হুশশশ। চেঁচাবেন না। আপনি বুদ্ধিমান ব্যক্তি। ঠিক জায়গায় ফোন করেছেন। ইয়েস মিস্টার হক এসব কিছু আমি করেছি। বলেছিলাম না এমন সময় আঘাত করবো ঔষধ লাগানোর সুযোগ পাবেন না।

নিজামুল হক : কাজ টা ঠিক করো নি। পস্তাতে হবে

সিমথি : আরেহ আপনাদের সবার দেখি একই ডায়লগ পস্তাবে হবে। তা কি করবেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে পার্টি অফিসে পুলিশ এসে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাবে। নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করবেন নাকি আমার জীবনের দিকে নজর দেবেন।

সিমথির তাচ্ছিল্য বাণীতে নিজামুল হক রেগে পায়চারি শুরু করে। চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। একটা চার্জ আসেনি ওর উপর। এতোবছরের সব চার্জ এসেছে। এসবই উনার ক্যারিয়ার নষ্টের জন্য যথেষ্ট। তারমধ্যে এন.কে নামক আন্ডারগ্রাউন্ডের বড় কালো ব্যবসায়ীর সাথে হাত রয়েছে। এতে করে ছাড় পাবার কোনো উপায় নেই। সিমথি যখন একবার এই সময় আঘাত করেছে তারমানে সিমথির কানে প্ল্যান বি এবং সি দুটোই রেডি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবে বাঁচার চান্স নেই। নিজামুল হককে চুপচাপ দেখে সিমথি শব্দ করে হাসে। সিটি বাজাতে বাজাতে ফোন কেটে দেয়। আঘাত জায়গা মতো দিয়েছে বাকিটা উপরমহলের দায়িত্ব।

সিমথি : অনিল বাড়ি যাও। আমি ও যায়।

অনিল : চলুন ম্যাম আপনাকে ড্রপ করে দেয়। গাড়ি আনেননি তো

সিমথি : না অনিল। আমি রিকশা করে চলে যাবো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তুমি বাড়ি যাও। আমাকে তোমাদের স্যারের অফিসে যেতে হবে। তোমার স্যার ম্যামের উপর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। এখন আমাকে তো খসরত করতেই হবে। বাই বাই। বাড়ি গিয়ে চিল করো।

অনিল হেসে উঠে। সিমথি ও হেসে বেরিয়ে যায়। মেজাজ ফুড়ফুড়ে হলেও মনটা একটু খারাপ। কারণ টা হচ্ছে আদি। সকালে সামান্য একটা কথা নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায় আদি রেগে মেগে সিমথিকে ধমক মারে। রাগের মাথায় সিমথি আদিকে কিছু না বলেই হসপিটালে চলে আসে সকাল সকাল। অন্যদিন দশটায় আসলেও আজ এসেছে আটটায়। এতে বাড়ির সবাই জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে এসেছে। কিন্তু হসপিটালে এসেই তুহিনদের কাছে ধরা পড়ে গেছে। সারাদিনে আদিও ফোন বা টেক্সট করেনি। রাগে সিমথিও আগ বাড়িয়ে কিছু করেনি। কিন্তু এখন আর মনে রাগ নেই। তাই আগ বাড়িয়ে কিছু করলেও প্রবলেম নেই। মেজাজ ভালো তো দুনিয়ার সব ভালো। সিমথির রিকশা এসে আদিদের অফিসের সামনে থামে। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা লাগায়। ফোর্থ ফ্লোরের লিফটের বাটনে চাপ দিয়ে গুন-গুন করে। লিফট থামতেই সিমথি লিফট থেকে বেরুতেই শাওনের মুখোমুখি হয়। শাওন একজন এমপ্লয়ির ডেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ শাওনের চোখ সিমথির দিকে পড়তেই শাওনের কথা কন্ঠনালিতেই আটকে যায়। ভ্রু কুঁচকে উচ্চস্বরে সিমথিকে ডেকে ওঠে।

শাওন : সিমথি। এদিকে আয়।

শাওনের ডাকে সিমথি আলতো হেসে শাওনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে সবার চোখ সিমথির দিকে পড়তেই টাস্কি খায়। সিমথির কপালের ঘামটুকু এসির হাওয়ায় গায়ের সাথে মিলিয়ে যায়।

শাওন : তুই এখানে কি করছিস। হঠাৎ এনি প্রবলেম।

সিমথি : সমস্যা তো আছেই।

শাওন : কি হয়েছে বল আমায়। কেউ কিছু বলেছে। ( চিন্তিত স্বরে)

শাওনের কথায় সিমথির হাসি পায়। ছোট বাচ্চাকে মানুষ যেমন জিজ্ঞেস করে কেউ কিছু বলেছে কিনা শাওনের প্রশ্ন করা ভঙ্গিমা টা তো তেমনই ছিলো। সিমথি হাসিটা ভেতরে দমিয়ে নিচু স্বরে শাওনের কানের কাছে গিয়ে বলে,,,

সিমথি : সমস্যা তো আপনার ভাই করেছে।

সিমথির কথায় শাওন ভ্রু কুঁচকায়। কথার মানে না বুঝতে পেরে বোকার মতো তাকায়। সিমথি আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিমথি হাল্কা কেশে সবার দিকে দৃষ্টিপাত করে শাওনের কানেকানে বলে,,,

সিমথি : আমি কি এলিয়েন ভাইয়া৷

শাওন : কেনো ( হতভম্ব হয়ে)

সিমথি : সবাই এভাবে দেখছে কেনো।

সিমথির কথায় শাওন হাসে। সবার উদ্দেশ্য সিমথিকে ইঙ্গিত করে বলে,,,,

শাওন : এটেনশন গাইস আপনারা সবাই ওকে চিনেন । তবে কেউ কেউ ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা ও জানেন। যারা জানেনা তাদের উদ্দেশ্য বলছি। ও হচ্ছে আপনাদের আদি স্যারের ওয়াইফ সিমথি জাহান সিয়া। আমার বোন।

শাওনের কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকিয়ে হেসে কৌশল বিনিময় করে। সিমথি মিষ্টি হেসে সবার সাথে কথা বলে। সিমথির এমন মিষ্টি স্বভাবে সবাই হকচকায়। কারণ সিমথির পরিচয় পুরো শহরেই একজন কি/লা/র কুইন।

সিমথি : ভাইয়া আপনার ভাই কোথায়।

শাওন : ও তো মিটিং রুমে।

সিমথি : এ্যাঁ এখন আবার কিসের মিটিং।

শাওন : আর বলিস না ক্লায়েন্ট রা এসেছে। বাবা-চাচা সবাই ওখানে।

সিমথি : তো তুমি এখানে মেয়েদের সাথে কি করো। মেহের আপুকে জানাবো ( ভ্রু উঁচিয়ে)

শাওন হকচকিয়ে সিমথির হাত টেনে আদির কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়।

শাওন : মা/র/তে চাস নাকি। আমি মোটেও মেয়েদের সাথে কথা বলছিলাম না। দরকারি কথা বলছিলাম।

সিমথি : হুম হুম বুঝি আমি।

শাওন : মেঝো মা ঠিকই বলে তুই আসলেই ফা/জি/ল হয়ে গেছিস আদির পাল্লায় পড়ে।

সিমথি : তোমার ভাই কি শুধু আমাকে ফাজিল বানিয়েছে আরো কত কি বানালো ভবিষ্যতে কত কি বানাবে গড নোজ ( মনে মনে)

শাওন : নে তোর বরের কেবিন। তুই বোস আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

সিমথি : না থাক। উনার শেষ হলে নিজেই আসবে তো। তুমি বলো না।

শাওন : ওক্কেহ।

প্রায় আধঘন্টার পর আদি নিজের কেবিনে আসে। মিটিং টা ফাইনালি সাকসেস হয়েছে। আদি কেবিনে এসে নিজের ফোনের দিকে তাকায়। নো ফোন নো ম্যাসেজ। বাহহ।

আদি : একটু ধমকালাম আর ম্যাডামের গাল ভরে গেছে। সারাদিন রাত যখন আদর করি তখন কিছু না। পাষাণ মহিলা একটা।

সিমথি : সারাদিন কি আপনার কাছে থাকি নাকি আদর খাওয়ার জন্য।

আদি : তুই থাকলেই হয়।

সিমথি : যাহ নির্লজ্জ।

আদি : হ্যাঁ আমি নির্লজ্জ আর তুই ভা,,,,

আচমকা আদির হুশ ফিরে একা একা কার সাথে বকবক করছে। কেবিনে তো ও একা। তাহলে। কথাটা মনে মনে আওড়িয়ে পেছনে তাকাতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। সিমথি দুই বাহুতে হাত গুঁজে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি নিজের ভ্রম ভেবে জোরে জোরে মাথা ঝাকায়৷ অতঃপর চোখ খুলে আবারো তাকায়। নাহ এটা তো ভ্রম না তার মানে সত্যি সিমথি এসেছে।

সিমথি : কি ঝটকা খেলেন নাকি।

আদি : তুমি এখানে কেনো।

সিমথি : তো কি আপনার দ্বিতীয় পক্ষের আসার কথা।

সিমথির কথায় আদি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। আদির অবস্থা দেখে সিমথি ঠোঁট চেপে হাসে।

আদি : ওয়াট রা/বি/স

সিমথি : বাহ আজকাল আমি রা/বি/স। তা আমিষ টা কি আপনার দ্বিতীয় পক্ষ।

আদি : কি বাচ্চামো করছিস।

সিমথি : বাচ্চামো কোথায় করছি। আমি কি আপনার গাল টানছি নাকি পাপ্পি দিচ্ছি।

আদি : এটা না চাইলে জীবনেও দিবি না। ( বিড়বিড় করে)

সিমথি চোখ বুঁজে হাসে। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আদির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দূরত্ব টুকু গুছিয়ে পা উঁচু করে আদির গালে হাত রাখে। অতঃপর ডান গালে নিজের অধরজোড়া চেপে ধরে। পর পর বাম গালেও তাই করে। একে একে পুরো মুখে নিজের অধরজোড়া ছুঁইয়ে সরে দাঁড়ায়। আদিকে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমথি হাসে।

সিমথি : আমি কাছে আসলেই তো থমকে যান আর রোমান্টিক থাকলে তো আপনাকে হসপিটালাইজড করতে হবে।

সিমথির কথায় আদির হুশ ফিরে হাত আপনাআপনি গালে চলে যায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথিকে হাসতে দেখে আদি মাথা চুলকে অন্যদিকে তাকায়।

সিমথি : আপনি জিতে গেছেন আমাকে পেয়ে । নিজে রাগ দেখিয়ে নিজেই আমাকে বাধ্য করলেন রাগ ভাঙাতে। হায় রে কপাল আমার। আজকাল রাগ করেও শান্তি নেয়। কেউ কেউ দুর্বলতা বুঝে মুখ বুঁজে থাকে। তারজন্যই বলে কাউকে নিজের দুর্বলতা বুঝতে দিতে নেই। তাহলে,,,,

সিমথি থমকায়। আদির অপ্রত্যাশিত ছোঁয়ায় সারাদেহে কাঁপন ধরে যায়। আবেশে চোখ বুঁজে আদির শার্টের কলার খামছে ধরে। ফলে আদির হাতের বন্ধন চুলের ভাঁজে আরো জোড়ালো হয়।

___________________

ইশানের বাবা : তুই একে একে যেই আগুন চাল চালছিস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে।

ইশানের বাবার কথায় খাওয়ার মাঝেই সিমথি হেসে উঠে। ইশানের বাবা হেসে বলে,,,,

ইশানের বাবা : ওই নিজামুল হক কিন্তু বড় ফাঁসান ফেঁসেছে।

সিমথি : ফাঁসার মতো কাজ করলে ফাঁসবে। শুনলাম তোমাদের থানাতেই নাকি ওনাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইশানের বাবা : হুমম। বেচারা জনগণের হাতে মা/র খেয়েছে দারুণ।

সিমথি : যার যেটা প্রাপ্য।

ইশানের বাবা : তুই ডাক্তার না হয়ে সিআইডি বা আর্মিতে জয়েন করতে পারতি।

সিমথি : ইইই না। চো/র মা/স্তা/নের পেছনে দৌড়ানোর থেকে হার্টের অপারেশন করা ভালো।

ইশানের মা : ইটিং করতে সিটিং করেও ওয়ার্কের টকিংটুকিং। আহ হটিং

ইশানের মায়ের বাংলিশ কথায় সিমথি আর ইশানের বাবা শব্দ করে হেঁসে দেয়। বাকিরা মুচকি হাসে।

ইশানের মা চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

_ ডোন্ট হাসাহাসি মি

চলবে,,,,,,

(