মিষ্টির তনুদা পর্ব-০৪

0
4

#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ০৪

তনু সবগুলো কাজিনকে একসাথে ডেকে পাঠাল। ওরা দল বেঁধে তনুর ঘরে আসতেই ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল তনু। একে একে সবাইকে মিষ্টি কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করল। সেতু অনিকরা সত্যিই কিছু জানে না। তবে সেতুর মেজোবোন রিতু মিষ্টির বয়সী। এবং একই ক্লাসে পড়ে। ওকে কথার মারপ্যাঁচে শক্ত করে চেপে ধরতেই ও ভয় পেয়ে গড়গড় করে বলে দিল মিষ্টি কোথায় গেছে। তনু অতিরিক্ত রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠল। বলল,
-‘তোরা এখন যা। মিষ্টি যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। আপাতত এই কথাটা কাউকে বলার দরকার নেই। আর রিতু তুই আমার সাথে চল?
রিতু সেতুর দিকে তাকাল। সেতু চোখ দিয়েই যেন আস্ত গিলে ফেলবে রিতুকে, এমনভাবে তাকাল।
তনু যে অবস্থাতে ছিল। সেই অবস্থাতেই রিতুকে নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় শুধু ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে বাইকের চাবির গোছাটা নিয়ে গেল। তনুর পরনে হাতাকাটা গেঞ্জি আর থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট। ওদের কাজিন গ্রুপের ভেতরে শুধু তনুদাই এত অশ্লীল পোশাক পরে বাইরে ঘোরাফেরা করে। ঘরে পরলে যাও মানা যায়। দেখা যায়, এইসব পোশাক পরেই কোথায় কোথায় চলে যায়। তনুদার মা বলে, ঢাকা গিয়ে তনুটা এতটা লজ্জাহীন হয়েছে।
মিষ্টিদের কলেজ বেশ দূরে। পায়ে হেঁটে যেতে ঘণ্টাখানেক মতো লাগে। যদিও মিষ্টিরা তিন-চার জন বান্ধবী মিলে অটোতে যায়। কলেজের পাশেই মিষ্টির বেস্টফ্রেন্ড শিলাদের বাসা। মিষ্টি শিলার কাছেই গেছে। যদিও শিলাদের বাড়ির কেউ জানে না। মিষ্টি বিয়ের দিন পালিয়েছে৷ শুধু শিলা জানে।
ওদের বাড়ির সামনে গিয়ে বাইক থামাল তনু। রিতুকে বলল,
-‘যা মিষ্টিকে ডেকে নিয়ে আয়। খবরদার আমি এসেছি। এই কথা কিন্তু মিষ্টিকে ভুলেও বলবি না।
রিতু ‘হ্যাঁ সূচক’ মাথা নেড়ে শিলাদের বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
মিনিট দশেক পর এক প্রকার জোর করেই রিতু মিষ্টির একহাত চেপে ধরে রাস্তায় নিয়ে এলো। বাইকে হেলান দিয়ে তনুদাকে সাহেবি স্টাইলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠল মিষ্টি। রিতুর দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাতেই রিতু অসহায় বোধ করল।
মিষ্টি আবারও শুকনো ঢোক চিপে চট করে শিলাদের বাড়ির ভেতরে চলে যেতে নিল! তনুদা পেছন থেকে আচমকা মিষ্টির একহাত চেপে ধরল। রাগী কণ্ঠে বলল,
-‘কী ভাবিস তুই নিজেকে, বিশ্ব সুন্দরী? ওই চিরকুটের মানে কী মিষ্টি?
-‘আমার হাত ছাড়ুন তনুদা। লোকে দেখছে।
-‘দেখুক লোকে। আমি কী ভয় পাই?
মিষ্টি কুণ্ঠিত বোধ করল। মাথা নিচু করে বলল,
-‘আমি লজ্জা পাচ্ছি।
-‘তোর আবার লজ্জাও আছে নাকি? যে মেয়েকে কেউ প্রেম-নিবেদন করলে ছাগলের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে করতে তার মাকে বলে দেয়। তার আবার লজ্জা হুঁহ…
মিষ্টির ভীষণ কান্না পেল। দাঁতে ঠোঁট চেপে কান্না আটকালো৷ এই গণ্ডারটার সামনে কিছুতেই কাঁদবে না মিষ্টি। কিছুতেই না। শেষে গণ্ডারটা ভেংচি কেটে বলবে, মিষ্টি ন্যাকা-ষষ্ঠী। নাটকবাজ। রাস্তাঘাটে আর অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নেই।
– বাইকের পেছনে ওঠ মিষ্টি।
– আমি যাব না।
তনু মিষ্টিকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
-‘কথাটা আবার বল?
মিষ্টি তনুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিলল। তনু চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-‘তোর সাহস হয় কীভাবে? তুই আমাকে তেজ দেখাস। বিয়ের কথা কী আমি তোকে বলেছিলাম? নিজেই আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেলি। আবার নিজেই ভাব মেরে বলছিস, আমাকে বিয়ে করবি না। যতসব নাটক। হুহ..
এই মিষ্টি কী হলো কথা বলছিস না কেন? শোন, তোর বোকামির জন্য আমি কারো সামনে অপমানিত হতে পারব না। রিতু তুই একটু ওপাশে যা তো বুনু। আমার মিষ্টির সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।
রিতু চলে যেতেই তনু মিষ্টিকে নরম সুরে বলল,
-মিষ্টি চল, আমরা বিয়েটা করে নেই। বিয়ের পর তো তোকে আর আমার বাড়ি থাকতে হবে না। আমরা আগের মতোই যার যার বাড়ি, থাকব। তাছাড়া এখন আমি যদি তোকে বিয়ে না করি। আমার মা, তোর মা খুব কষ্ট পাবে। তুই তো জানিস, আমি মাকে কত ভালোবাসি। তোর জন্য আমার মা কষ্ট পাক। তুই কী তাই চাস মিষ্টি?
মিষ্টির শরীর জ্বলে গেল। তনুদা কতবড় মিথ্যুক। জীবনেও তো জেঠীর কথা ভাবেনি মানুষটা। সারাজীবন নিজের মর্জি মতো চলেছে। আজ একবারে মায়ের জন্য দরদ উথলে উঠছে। যতসব ঢঙ হুহ..
তনু মিষ্টির একহাত আলতো করে চেপে ধরল। ফিসফিস করে অনুরোধের সুরে বলল,
-‘লক্ষ্মী মেয়ে, চল না বিয়েটা করে নেই?
-‘আমি আপনাকে বিয়ে করব না তনুদা।
তনু রাগে কিড়মিড় করে উঠল৷ অনেকক্ষণ এই বেয়াদব মেয়েটাকে ঠাণ্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে বুঝিয়েছে তনু। আর ধৈর্যে কুলচ্ছে না। মাথা দপদপ করছে। তনুকে রিজেক্ট করা এত সহজ না। ‘ও’ বিয়ে করবে না। ওর ঘাড় বিয়ে করবে।
তনু জোর করে মিষ্টিকে বাইকের পেছনে বসিয়ে দিল। মিষ্টি ছটফট করে নেমে যেতে নিল। তনু রাগে বেসামাল হয়ে গেল। চাপা কণ্ঠে গর্জে উঠে বলল,
-‘আর একবার বাইক থেকে নাম তুই? তোকে আমি বাইক চাপা দিয়ে মেরে রেখে চলে যাব।
ভয়ে মিষ্টির অন্তঃআত্মা কেঁপে উঠল। তনুদাকে দেখে বিশ্বাস নেই। যদি সত্যি সত্যিই মিষ্টিকে মেরে-টেরে রেখে যায়। না..না..এত তাড়াতাড়ি মিষ্টির মরার শখ নেই।
মিষ্টি ভদ্রমেয়ের মতো তনুদার বাইকের পেছনে উঠে বসল। তনু বাইক স্টার্ট দিয়ে রিতুকে ইশারায় মিষ্টির পেছনে উঠে বসতে বলল। তারপর একটানে গন্তব্যে চলে গেল।
মিষ্টিদের বাড়ির সামনে বাইক থামাতেই রিতু আগেই বাড়ির ভেতরে চলে গেল। মিষ্টিও চলে যেতে নিলে তনুদা পিছু ডেকে বলল,
-‘পার্লারের লোকদের কাছে সাজার দরকার নেই। তোকে দেখতে পেত্নীর মতো লাগে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি, নোট আনতে গিয়েছিলি। সামনে তোর পরীক্ষা। কেউ আর সন্দেহ করবে না। এবার বাড়ি যা..

মিষ্টি জেদ করে পার্লারের লোকদের কাছেই বউ সাজলো। এতদিন যে তনুদার জন্য মনে মনে পাগল ছিল মিষ্টি৷ বিয়ের দিন সেই মানুষটাকেই কেন যেন বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না। একটুও না।
তনু শুধু মুখেই বলে মিষ্টিকে বিয়ে করব না..অথচ বিয়ের দিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে, গায়ে সেন্ট মেখে, মাথায় টোপর পরে সবগুলো কাজিন মিলে ব্যানপাটি সাথে নিয়ে গাড়িতে করে সারা এলাকা ঘুরলো। তারপর মিষ্টিকে বিয়ে করতে গেল।

চলবে