#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১০
মিষ্টি রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে এলো। দেখল, তনু মিষ্টির খাটে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে।
লুঙ্গি হাঁটুর উপরে উঠে আছে। দেখতে কী যে বিশ্রী লাগছে। ইশ..এই মানুষটার কী কোনো আক্কেল নেই! মা খেতে ডাকতে এসে ওনাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখলে কী ভাববে? মিষ্টি তনুর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বলল,
“মাকে তখন আমার নামে মিথ্যা কথা বললেন কেন?”
তনু মিষ্টিকে একহাত দিয়ে কাছে টেনে নিতে চাইলো। মিষ্টি ছিটকে সরে গেল। কড়া কণ্ঠে বলল,
“আপনি এত বলদ কেন? দেখছেন না দরজা খোলা? হঠাৎ মা চলে আসলে কী হবে।
তনু হাই তুলে বলল,
“যা আমার খাবারটা ঘরে নিয়ে আয়।”
মিষ্টি গাল ফুলিয়ে বলল,
“পারব না৷”
“যা না প্লিজ.. প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। দ্যাখ..দ্যাখ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। নাড়িভুড়ি উল্টে যেতে চাচ্ছে।
মিষ্টি অস্থির হয়ে বলল,
“আচ্ছা যাচ্ছি আমি। এত অভিনয় করার দরকার নেই।”
“আজব তো! অভিনয় করব কেন? সত্যি বলছি।
মিষ্টি মাকে বলতেই মা দুজনের খাবার বেড়ে দিল। যদিও মিষ্টির খুব লজ্জা লাগছিল। মানুষটা কেমন যেন! সবাই একসাথে বসে খেলে কী হতো! মিষ্টি খাবারের থালা দুটো টি-টেবিলের উপরের নামিয়ে রাখল। তনু উঠে বসল। বলল,
“ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে কাছে আয় মিষ্টি।”
মিষ্টির বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। কাঁপা হাতে দরজাটা লাগিয়ে দিল। ধীর পায়ে তনুর কাছে আসতেই তনু মিষ্টিকে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। একহাত দিয়ে মিষ্টির কোমর জড়িয়ে ধরতেই মিষ্টির সর্বাঙ্গ জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল। বুকের ভেতর জোয়ারের উপচে পড়া অশান্ত ঢেউ।
তনু আবদার করে বলল,
“আমাকে খাইয়ে দে মিষ্টি।”
মিষ্টি কাঁপা হাতে তনুর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরল। তনু খাবারটুকু মুখে তুলে নেওয়ার বাহানায় আলতো করে মিষ্টির আঙুলে কামড় বসিয়ে দিল। মিষ্টি চমকে উঠে চোখ গরম করে তনুর দিকে তাকাতেই তনু দুষ্টু হেসে একচোখ টিপল। তনুর চোখ-মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বোধহয় এমন হয়েছে৷ মিষ্টি তনুকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল। এঁটো থালা গুছিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে উঠতেই তনু ঘরের লাইট বন্ধ করে দিল। মিষ্টি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিষ্টিকে শূন্যে তুলে নিল তনু। মিষ্টি পরে যাওয়ার ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে, শক্ত হাতে তনুর গলা জড়িয়ে ধরল। মিষ্টিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীরের সমস্ত ভরটুকু মিষ্টির উপরে ছেড়ে দিল তনু। মিষ্টির দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হলো। তনু মিষ্টির ঠোঁটে গভীর চুমু এঁকে দিতেই মিষ্টি বেসামাল হয়ে তনুর চুলগুলো দুইহাতে টেনে ধরল। তনু মিষ্টির জামার একাংশ খানিক টেনে ধরে, মিষ্টির উন্মুক্ত বুকে মুখ গুঁজতেই ভালোলাগার অসহ্য আবেশে ছটফটিয়ে উঠল মিষ্টি। তনুর অবাধ্য হাতদুটো থেমে নেই। বিছে পোকার মতো কিলবিল করল মিষ্টির নারী শরীরের ভাজে ভাজে।
রাতের তৃতীয় প্রহর পর্যন্ত মিষ্টিতেই ডুবে রইল তনু। তনুর সংস্পর্শে এসে মিষ্টি আবিষ্কার করল নতুন এক ভালোবাসার গোপন অধ্যায়ের। এই অধ্যায়ের শুরু আছে শেষ নেই। সুখের আবেশে দুজনেই বুঁদ হয়ে রইল অনেক… অনেকক্ষণ।
মিষ্টি খুব কেঁদেছে। আরেকটু রয়ে-সয়ে মিষ্টির কাছে যাওয়া উচিত ছিল। ভাগ্যিস ঘরে ব্যথার ঔষধ ছিল। ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে আছে মিষ্টি। কী শান্ত, কী স্নিগ্ধ লাগছে ঘুমন্ত মিষ্টিকে দেখতে। মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল তনু। জীবনে কত মেয়ের সাথেই তো শুয়েছে তনু। এই প্রথম আনাড়ি নারী শরীরে বিচরণ করল তনু। যত যাই হয়ে যাক। বাইরে তনুর হাজারটা প্রেমিকা থাকুক। মিষ্টিকে কখনো ছেড়ে দেবে না তনু। মিষ্টির কুমারীত্ব হরণ করার সময় গাঢ় ভাবে অনুভব করেছে শুধু শরীর না মিষ্টির মন-প্রাণ শুধুমাত্র তনুকেই উৎসর্গ করে রেখেছে মিষ্টি। তনু বোকা মিষ্টিকে নিজের বউ করে আজীবন কাছে পেতে চায়। আপাতত বাইরের কাউকে জানতে দেওয়ার ইচ্ছে নেই। যে তনু বিবাহিত। ও আগে যেমন ছিল। তেমনই থাকবে। তনু উঠে বাথরুমে চলে গেল। ভুলবশত ফোনটা বিছানায় ফেলে রেখে গেল। মিষ্টি ঘুম ঘুম চোখে কয়টা বাজে দেখার জন্য হাত বাড়িয়ে তনুর ফোনটা টেনে নিল। সময় দেখার জন্য ফোন অন করতেই একটা মেসেজের নোটিফিকেশন দেখে চমকে উঠল মিষ্টি। মেসেজে লেখা;
“জান রাতে ইমুতে আসলে না কেন? তোমার জন্য সারারাত অপেক্ষায় ছিলাম আমি। মিস ইউ।”
তনু ঘরে এসে মিষ্টির হাতে ওর ফোন দেখে, চমকে উঠল। ফোনটা এক প্রকার ছোঁ মেরে মিষ্টির হাত থেকে নিয়ে নিল তনু। চাপা কণ্ঠে বলল,
“আমার ফোনে কী করছিল মিষ্টি?”
মিষ্টি চোখের জল মুছে নিল। ভেঙে আসা কণ্ঠে বলল,
“মেয়েটা কে? ওই মেয়ের সাথে ইমুতে কী করেন আপনি?”
তনু ঘামছে। বলল,
“দ্যাখ্ মিষ্টি তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।”
কথাটা বলেই মিষ্টির কাঁধ জড়িয়ে ধরতে চাইল তনু। মিষ্টি কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল,
“একদম ছুঁবেন না আপনি আমাকে।”
তনু মিষ্টিকে জোর করে নিজের সাথে চেপে ধরল। মিষ্টি ব্যথায় নীল হয়ে গেল। তবুও মুখ ফুটে টু শব্দটিও করল না। তনু বলল,
“প্লিজ মাথা গরম করিস না। আমি তোকে সবটা বুঝিয়ে বলছি মিষ্টি। তুই যা ভাবছিস বিষয়টা তেমন না। আসলে এই মেয়েটা আমার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড। বন্ধুই বলেছে, মেয়েকে একটু বাজিয়ে দেখতে। ওর কথা রাখতে আমি জাস্ট একটু অভিনয় করেছিলাম। মেয়েটা প্লে গার্ল। অল্পতেই পটে গেছে। বুঝেছিস আমি কী বলছি?
বোকা মিষ্টি তনুর বুকে মুখ গুঁজে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। তনুর একহাত মিষ্টির মাথায় চেপে ধরে বলল,
” আমাকে ছুঁয়ে কথা দিন। আর কখনো এই পচা কাজগুলো করবেন না?”
“কথা দিলাম মিষ্টি। ওয়েট মেয়েটাকে ব্লক করে দিচ্ছি। প্লিজ তুই মন খারাপ করিস না। তুই মন খারাপ করলে আমার ভালো লাগে না। তুই আমাকে ভুল বুঝলে আমি মরেই যাব রে মিষ্টি।”
মিষ্টি তনুর মুখ চেপে ধরল। বলল,
“এমন কথা আর কখনো মুখেও আনবেন না।”
তনু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মিষ্টি ফুলে ফুলে কাঁদছে। আর বিড়বিড় করে আপনমনে কী যেন বলছে। মিষ্টির চোখের পাপড়ি তিরতির করে কাঁপছে। মিষ্টির কণ্ঠনালি থেকে পেটের আগ পর্যন্ত চৎমকার ভাবে ওঠা-নামা করছে। তনু মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বেশি নজর কেড়েছে। মিষ্টির কণ্ঠনালি থেকে বুকের ওঠা-নামার দৃশ্য। একদম বুকের ভেতরে গিয়ে লেগেছে। তনু শুকনো ঢোক চিপল। তর্জনী দিয়ে মিষ্টির এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিল। তনু মিষ্টির মুখের উপরে সামান্য ঝুঁকে, মিষ্টির ভেজা চোখের জল মুছে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে মিষ্টিকে বার কয়েক ডাকল।
“এ্যাঁই..মিষ্টি? কাঁদছিস কেন?
চলবে