#মুগ্ধতায়_তুমি_আমি
লেখিকা: #ইয়ানূর_মাশিয়াত
#পর্ব_১৪
রুমা আন্টির মেয়ের বিয়েতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি আমরা। আরশ প্রথমে যেতে চান নি। কিন্তু আমি যেতে চাচ্ছি। সেই মানুষগুলোকে তাদের সমস্ত অপবাদের জবাব দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। তাই আরশকেও রাজি করাতে হবে আমাকে। আমি জোরাজুরি করে ওনাকে রাজি করালাম। আমার সাথে না পেরে শেষে রাজি হলেন উনি। আমি আলমারি থেকে নীল আর সাদার সংমিশ্রণে তৈরি একটা পাঞ্জাবি সাথে সাদা পায়জামা নামিয়ে দিলাম তাকে। নিজের জন্যও একটা সাদা আর নীলের মধ্যে শাড়ি বের করে নিলাম। আরশ আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন, আমরা কি ডেটে যাচ্ছি?
আমি হেসে ফেললাম। আসলে এটা একটা ফ্যামিলি সেট যেটা কয়েকদিন আগেই অনলাইন থেকে অর্ডার করেছিলাম আমি। দুই মেয়ের জামাও একই রঙের। জামাকাপড় দেখেই উনি এ কথা বললেন বুঝতে পারলাম আমি। তখনই জেনিসা দৌড়ে আসলো আরশের কাছে। মা ওকে জামা পড়িয়ে দিয়েছেন। আরশ ওকে দেখে চোখ কপালে উঠিয়ে নিলেন। বললেন, মেয়েকেও ডেটে নিয়ে যাচ্ছি আমরা?
আমি ওনাকে একটা ধাক্কা দিলাম। বললাম, চুপ করেন আপনি। মেয়ে শুনবে। চটজলদি গিয়ে চেঞ্জ করে নিন।
আরশ হেসে ফেললেন। এরপর পাঞ্জাবি পায়জামা নিয়ে
বাথরুমে চলে গেলেন।
জেনিসা আমাকে বললো, জেনিফারকে জামা পড়াবে না?
আমি বললাম, ওকে যাওয়ার সময় পড়াবো নাহলে তোমার বোন জামা নষ্ট করে ফেলবে।
জেনিসা মাথা নাড়ালো। আমি ওকে খাটে বসালাম। এরপর ওর চুল আঁচড়ে দিলাম। হালকা সাজিয়ে দিলাম। জেনিসা একদম তৈরি।
আরশ তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসলেন। আমি ও শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নিলাম। এরপর জেনিফারকেও জামা পড়িয়ে দিতে নিলাম। জেনিসা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আরশ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জেনিফারকে জামা পড়ানো হলে জেনিসা জেনিফারের সাথে ছবি তুলবে। ও ভীষণ খুশি। জেনিফার একটু বড় হওয়ার পর থেকে জেনিফার আর ওর জন্য একই ধরনের, একই কালারের জামা বানাই আমি। এতে ও ভীষণ খুশি হয়। দুজনকে এক জামা পড়ালে জেনিসা তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। জেনিফারকে জামা পড়ানোর পর আরশ ওদের দুজনের ছবি তুলে দিলেন। জেনিসা ভীষণ খুশি হলো। এরপর আমার মায়ের কাছে দৌড়ে গেলো। মাকে গিয়ে বললো জেনিফার আর সে একই জামা পড়েছে। মাকে টেনে নিয়ে আসলো। মা এসে জেনিফারকে কোলে নিলেন। জেনিফার আর জেনিসাকে নিয়ে ও ঘরে চলে গেলেন। আমি পড়নে যেই জামা কাপড় ছিলো সেগুলোকে গুছিয়ে সাজগোজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। জেনিসা আর জেনিফারকে একটু একটু সাজিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর নিজেও চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি। আরশ আমার পিছনে ঘুরঘুর করছেন সেই কখন থেকে। এভাবে ঘুরঘুর করলে কাজ করা যায়? আমি তাকে বললাম, কি হয়েছে আপনার? পিছু নিয়েছেন কেন এভাবে?
আরশ হাসলেন। বললেন, বউয়ের সাথে কাপল পিকচার উঠাবো। আসো।
এরপর উনি আমার সাথে কিছু ছবি তুলে নিলেন। এরপর বললেন, একটা ফ্যামিলি পিকচার তোলাও উচিত। মেয়েদের নিয়ে আসো।
উনি আনতে বলেছেন ঠিকই কিন্তু আমার আর আনা লাগলো না। জেনিসাই দৌড়ে চলে এসেছে। তার পিছন পিছন জেনিফার হামাগুড়ি দিয়ে আসছে। আমি দ্রুত গিয়ে ওকে কোলে নিলাম। এভাবে ঘরে চললে সাদা জামাটার কোন সুরত থাকবে না। এরপর আরশ আমাদের একটা ফ্যামিলি পিকচার তুললো। জেনিসা বললো, আম্মু জেনিফারের চোখে কাজল দিলে না কেন? তুমি পড়েছো আমি পড়েছি কিন্তু জেনিফার পড়ে নি। ও কষ্ট পাবে তো। তুমি ওকেও দিয়ে দাও।
আমি আর আরশ দু’জনেই হেসে ফেললাম। বললাম, ওর চোখে কাজল দিতে পারবো না মা। ওর সেই বয়স হয় নি। চোখে ব্যথা পাবে।
জেনিসা বুঝলো। জেনিফার যতটা অশান্ত ঠিক ততটা শান্ত জেনিসা। একদম আমার মনে মতো। কোন একটা কথা বললেই বুঝে যায়। এরপর আমরা বের হলাম নারায়ণগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে। আমাদের বাসা থেকে যেতে অনেক সময় লাগবে। তাই একটু দ্রুতই বের হলাম।
.
আমরা যখন রুমা আন্টিদের বাসায় পৌঁছালাম তখন সাড়ে বারোটা বাজে। রাস্তায় জ্যাম থাকবে ভেবে আগে বেরিয়েছিলাম কিন্তু রাস্তায় কোন জ্যাম ছিলো না। তাই দ্রুতই এসে পড়েছি আমরা। বরপক্ষের আগেই চলে গিয়েছি। রুমা আন্টি আমাদের দেখে অনেক খুশি হলেন। জেনিফারের গাল টেনে দিলেন। বললেন, নাম কি রেখেছো ওর?
আমি বললাম, জেনিফার চৌধুরী।
উনি বললেন, ওহ্।
এরপর জেনিসাকে দেখে বললেন, ও কে?
আমি বললাম, আমার বড় মেয়ে জেনিসা চৌধুরী।
উনি আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকালেন। ব্যাপারটা হয়তো বুঝলেন। এরপর মিষ্টি হেসে বললেন, ভালোই তো আছো তাহলে। দোয়া করি সুখে থাকো। ওদিকের ব্যাপার জানো?
আমি বুঝলাম না আন্টি কি বলতে চাচ্ছেন। বললাম, কোন দিকের?
আন্টি অবাক হলেন। বললেন, তোমার মা তোমাকে বলে নি? আমি তো অনেক আগেই তোমার মাকে বলেছি!
আমি বললাম, কি বলেছেন মাকে? মা তো আমাকে কিছু বলেন নি।
রুমা আন্টি এবার হেসে ফেললেন। বললেন, থাক তোমার মায়ের বলা লাগবে না। আমিই বলছি তোমাকে শোন।
উনি বলেই আবার হাসিতে ফেটে পড়লেন। এরপর বললেন, অন্তরের বউ চলে গিয়েছে দ্বিতীয়টা। এরপর আবার বিয়ে করেছিল সেটাও চলে গিয়েছে। এরপর ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল ওর মা। তার ছেলের বাবা হওয়ার কোন ক্ষমতা নেই। জানো আমাদের কাউকে জানায় নি এ বিষয়ে। আমাদের কি বলেছে জানো? বলেছে মেয়ে দুটোর চরিত্র ভালো না। পরক্রিয়া করে চলে গিয়েছে। এরপর একদিন ও বাড়ির প্রীতির মা প্রীতিকে নিয়ে গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে। প্রীতি বাচ্চা কনসিভ করতে পারছিলো না। বার বার মিসক্যারিজ হয়ে যাচ্ছিল। ওখানে গিয়ে দেখা হয় অন্তরের সাথে। সে তো কেমন মহিলা জানিসই কোন কিছু একটু জানলে পুরোটা না জানা অবদি রক্ষা নেই। এরপর ব্যাপারটা ঘুটিয়ে সে জানতে পারে অন্তরের বাপ হওয়ার ক্ষমতা নেই। উনি পুরো এলাকায় এই ঢোল পিটিয়ে দিয়েছে। এখন আর মা ছেলে লজ্জায় ঘর থেকে বের হয় না। লোকেরা তখন তোমার জন্য আফসোস করেছিল অনেক। অন্তর আর অন্তরের মা এলাকা ছাড়বে সামনে মাসে। ওদের বাড়িওয়ালাকে বলতে শুনেছি ওরা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। এক মাঘে তো আর শীত যায় না। আল্লাহ ও ওদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। তোমার সাথে যা করেছে ও! ওর বিচার এখনো শেষ হয়নি। দেখবে আরো ভুগবে ও। যাগগে তোমরা কমিউনিটি সেন্টারের দিকে যাও। আমি দেখি ভিতরে। অনেক কাজ বোঝই তো।
আমি মাথা নাড়লাম। উনি চলে গেলেন। একা একাই ভাবতে লাগলাম অন্তরের ব্যাপারে। অন্তর নিজের অক্ষমতাকে স্বীকার না করে আমার উপর সেটা চাপিয়ে দিলো। চাপিয়ে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হলো না সে। আমার সাথে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলো। সে যদি এমনটা না করতো নিজের অক্ষমতাকে স্বীকার করতো তাহলে হয়তো বা তার অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে তার সাথে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম আমি। কিন্তু সে তা করে নি। তাছাড়া তার এমন করাতে ভালোই হয়েছে। আমি আরশের মতো একজন মানুষ পেয়েছি। তার ভালোবাসা পেয়েছি। ভালো আছি আমি। আর সে তার কর্মফল ভোগ করুক।
আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন আরশ এলেন। তার কোলে জেনিফার। আমাকে বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে আছো? মা আর আমি তোমাকে খুঁজছি কখন থেকে! দ্রুত চলো কমিউনিটি সেন্টারে যাবো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হতে হবে। রাস্তায় জ্যামে পড়লে আজ আর বাড়ি যাওয়া লাগবে না। বিয়েই খেতে পারবে।
আমি হেসে ফেললাম তার কথায়। বললাম, চলুন।
আমরা সবাই চললাম কমিউনিটি সেন্টারের দিকে। এ বাড়ি থেকে বেশি দূরে না কমিউনিটি সেন্টারটা। পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা পথ যাওয়ার পরই দেখা হলো কুলসুম ভাবির সাথে। এই এলাকার প্রত্যেকটা মানুষকে আমি চিনি। ভুলি নি আমি তাদের। যারা এতো য’ন্ত্রনা দিয়েছে তাদের কিভাবে ভুলবো আমি? ভাবি আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে নিলেন। আমি হেসে বললাম, কেমন আছেন ভাবি? মনে আছে আমাকে?
ভাবি আমতা আমতা করতে লাগলেন। অন্তর যখন আমাকে ছেড়ে দিলো উনি সেসময় আমাকে কম কথা শোনান নি। বরং পারলে দুজন নিয়ে এসে তিনজনে মিলে শুনিয়েছেন। ভাবি আমতা আমতা করে বললেন, হ্যাঁ চিনেছি তো। চিনবো না কেন?
আমি বললাম, মনে আছে তো তাহলে। এই তো ঢের বেশি। এই যে দেখুন এই হচ্ছে আমার হাসব্যান্ড আরশ চৌধুরী। আমার মেয়ে জেনিসা চৌধুরী আর জেনিফার চৌধুরী। দেখেছেন আপনি?
উনি হাবলার মতো চেয়েই থাকলেন। কিছু বললেন না। এরপর আমি আবার ওনাকে বললাম, ভাবি আপনারা তো আমাকে একটা বাচ্চার জন্য নানান কথা শুনিয়েছেন। এই দেখুন আমার এখন দুটো মেয়ে। আরো আসবে। ভাবছি একটা ক্রিকেট টিম বানাবো। আপনাদের তার কি অবস্থা যার জন্য না ভেবেই এতো গুলো কথা আপনারা আমাকে শুনিয়েছিলেন?
ভাবি চুপ করেই থাকলেন। আমার মা কিছু না বলে মিটিমিটি হাসছেন। মা জেনিসাকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। ভাবি দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আরশকে বললাম, চলুন তো যাওয়া যাক। আর সময় নষ্ট করতে চাই না আমি। জেদের বসে অনেক সময় নষ্ট করেছি এখানে। এবার চলুন।
কুলসুম ভাবি তার অপমানিত মুখটা নিয়ে দাঁড়িয়েই রইলেন। আমি আরশকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আরশ তখন আমাকে বললেন, সত্যিই কি ক্রিকেট টিম বানাতে চাও তুমি? আমি তো দেখছি দুটোকেই সামলাতে ভীষণ বেকায়দায় পড়তে হয় তোমাকে। এতোগুলোকে কিভাবে সামলাবে তুমি? তুমি সামলাতে পারলে আমার আপত্তি নেই ক্রিকেট টিম বানাতে।
ওনার কথায় ভীষণ লজ্জা পেলাম আমি। বললাম, ফালতু কথা রেখে চলুন তো আপনি।
খাওয়া দাওয়া শেষে মা গেলেন রুমা আন্টির কাছে থেকে বিদায় নিতে। আমি আর আরশ গেলাম না। মা জেনিসাকে সাথে নিয়ে গেছেন। আমি আর আরশ ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছি। আরশ বললেন, তোমার ভিসা হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা চলে যাচ্ছি।
আমি বললাম, আচ্ছা।
আরশ বললেন, ধন্যবাদ।
আমি চমকে উঠলাম। বললাম, কেন?
উনি বললেন, আমাকে এতো সুন্দর একটা ফ্যামিলি উপহার দেওয়ার জন্য।
আমি হেসে ফেললাম। উনি প্রায়ই এমন কথা বলেন। আমরা হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর হাঁটার পরেই অন্তরের সম্মুখীন হলাম আমরা। আমার পা থেমে গেলো । সে এদিকেই আসছে। তাকে দেখে আমার ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে। অতীতের তিক্ত স্মৃতিগুলো স্মরণ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওর গালে কষে একটা চ’ড় মা’রি। নিজেকে শক্ত করে নিলাম আমি। এরপর আরশকে বললাম, আমি আমার প্রাক্তনের সম্মুখীন হতে চাই। আপনার কোন সমস্যা নেই তো?
আরশ একবার সামনের দিকে তাকালেন। আমিও তাকালাম। অন্তর তখন আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আরশ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হও আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আমি উপস্থিত থাকবো। তোমাকে একা ছাড়বো না।
আমি কিছু বললাম না। এগিয়ে গেলাম অন্তরের দিকে। কাছে গিয়েই ঠাঁটিয়ে এক চ’ড় মা’রলাম তার ডান গালে। সে গালে হাত দিলো। এরপর বা গালেও দিলাম একটা। হঠাৎ আ’ক্রমণে চমকে উঠলো সে। আরশও চমকে গেলো। অন্তরের চোখে মুখে ক্রো’ধ! আমি অন্তরকে বললাম, আপনার অত্যাচারের জবাব আমার আরো আগেই দেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমি দেই নি। অনেক অন্যায় করেছিলাম নিজের প্রতি তখন। আজ মনে হলো ভুলটা শুধরে নেই। সবগুলো সুদে আসলে না নিতে পারলেও যতটুকু নিয়েছি তাতেই চলবে আমার। আপনার সাথে হিসেব বরাবর হয়ে গেলো। এখন শান্তি লাগছে।
থামলাম আমি। এরপর আরশের কোলে জেনিফারকে দেখিয়ে দিয়ে বললাম, এই দেখুন আমার মেয়ে। আর এই হচ্ছে আমার স্বামী। আমি দুই সন্তানের মা। আপনার সন্তান কোথায়? কয়টা হয়েছে?
অন্তর লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো। পুরুষ মানুষের বুঝি এর থেকে বড় লজ্জা হয় না। আরশ গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি হাসলাম। হেসে বললাম, থাক সমস্যা নেই। ট্রিটমেন্ট করাতে থাকেন। আমি আবার কারো অক্ষমতাকে পুঁজি করে তাকে কথা শোনাতে পারি না। আপনি এক কাজ করবেন যদি ট্রিটমেন্টেও কাজ না হয় তাহলে কোনো এক বাচ্চার মা অথবা দুই বাচ্চার মা দেখে বিয়ে করে নিবেন। এতে করে সওয়াব পাবেন আপনি। আপনার তো সন্তান নেই যার আছে তাকে নিয়েই না হয় চলা শুরু করুন। আল্লাহ সওয়াব দিবে। এখন আসি।
অন্তরকে কথাগুলো বলে আরশের হাত ধরে হাঁটা ধরলাম আমি। আরশ আমাকে বললেন, জীবনে আর কখনো তুমি এই লোকের সাথে কথা বলবে না মৌ। তুমি কি বলবে আমিই তোমাকে বলতে দেবো না। ভালো খারাপ কোন কথাই তার সাথে তুমি কখনো বলবে না।
আমি অবাক হলাম। অন্তরের সাথে তো কেউ আমাকে মে’রে ফেললেও কথা বলার ইচ্ছে নেই আমার। আমি তার সাথে কথা বলতে যাবো কেন? আজ বলেছি কারণ আমি হিসেব বরাবর করতে চেয়েছিলাম। সহজ ভাষায় প্রতিশোধ নিয়েছি যদিও সেটা কম হয়েছে মনে হচ্ছে আমার। তবুও নিয়েছি তো! কিন্তু আরশ এভাবে কেন বললো? খুব জানতে ইচ্ছে হলো আমার। আরশকে আমি বললাম, কেন? এভাবে বলছেন কেন আপনি?
আরশ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, আমার হিংসা হয়। শুধু হিংসা না ভয়ংকর হিংসা হয়। তুমি শুধু আমার মৌ। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যাই হোক তোমার সাথে কাউকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তোমাকে কখনো এই লোকের সম্মুখীন আর হতে দেবো না আমি। কিছুক্ষণ আগে মনে হয়েছে আমার উপর দিয়ে সাইক্লোন যাচ্ছে। ভয়ংকর অনুভূতি হচ্ছিল।
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু মনে প্রশান্তি পাচ্ছিলাম। ভাবতে লাগলাম এমন কাউকে জীবনে পাবো ভেবেছিলাম আমি?
ও বাড়িতে গিয়ে মাকে নিয়ে চলে আসলাম। বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের সন্ধ্যা হলো। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আরশ এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লেন। জেনিসাও শুয়ে পড়লো। বললো, আম্মু আজকের বউটা না ভীষণ সুন্দর ছিলো। খুব মজা হয়েছে আজকে।
আমি হেসে বললাম, আম্মুর থেকেও বেশি সুন্দর ছিলো?
জেনিসা বললো, উঁহু। আমার আম্মু সবার থেকে বেশি সুন্দর।
বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও জরিয়ে ধরলাম। বললাম, আমার মেয়েটাও ভীষণ সুন্দরী আর কিউট। চলো এবার দ্রুত জমাটা বদলে ফেলো।
এরপর ও বললো, আজ আমরা সবাই এক রঙের জামা পড়েছিলাম তো তাই সবাই শুধু আমাদের দেখছিল। আমাদেরকে সুন্দর দেখাচ্ছিল তাই না?
আমি হেসে ফেললাম। বললাম, হ্যাঁ।
আরশ আমাকে বললেন, এক গ্লাস পানি দাও তো। অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে।
আমি জেনিসা আর জেনিফারের জামাকাপড় বদলে ওনার জন্য পানি আনতে গেলাম। পানি এনে দেখলাম উনি ফোনে কথা বলছেন। বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে খাটে এসে বসলেন। আমিও গিয়ে ওনার পাশে বসলাম। বিছানার পাশের টেবিলে পানির গ্লাসটা রেখে চুলগুলোকে ছেড়ে দিলাম। আরশ ফোনে কথা শেষ করলেন। এরপর আমাকে বললেন, দ্রুত ব্যাগ গুছাও। আমাদের যেতে হবে।
এ সময়ে কোথায় যাবো? আমি বললাম, হঠাৎ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
উনি বললেন, পুরান ঢাকায়।
আমি চমকালাম। বললাম, কেন?
উনি শুয়ে পড়লেন। নীরব থাকলেন। আমি উত্তরের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেন উনি। এরপর বললেন, জেনিসার দাদি মা’রা গেছেন। আমাদের যেতে হবে।
চলবে…