মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১২

0
649

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_12
.
🍁
তড়িঘড়ি করে অফিসের মিটিং কমপ্লিট করে বাসায় যাচ্ছে আফিফ!আজকের রাত টাই মুগ্ধতা তাদের বাসায় আছে।কাল থেকে আর থাকবে না।তাই আজ বিকাল বেলায়ই মুগ্ধতার সাথে সময় কাটানোর জন্য বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে।মিতুল নামের মেয়েটা ঝেঁকে বসেছে আফিফের মাথায়।কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছে না।দিনরাত এই একটা মেয়েকে ভেবেই কাটায় ও।এখন মাঝে মধ্যে এখানে সেখানেও দেখতে পায় আফিফ।কিন্তু পরক্ষণেই আবার উধাও হয়ে যায়।বেশ বুঝতে পারছে আফিফ!মেয়েটা ওকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।বেশ বুঝতে পারছে এই মেয়ে পাগলাগারদে পাঠিয়ে ছাড়বে ওকে।
.
মুগ্ধতার জন্য কিছু জিনিস পএ কিনতে শপে ঢুকলো আফিফ। কেনাকাটা সম্পন্ন করে ফিরছিলো তখনই মিতুলকে রাস্তায় দেখতে পেলো আফিফ কিন্তু পাওা দিলো না।কারণ এ নিয়ে অনেকবার এরকম হয়েছে কিন্তু পরে আর মিতুলকে খুঁজে পায় নি আফিফ।তাই মুচকি হেসে নিজের মনে হাঁটতে লাগলো।পেছন থেকে হঠাৎ খুব পরিচিত কারো গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো আফিফ।সামনের মেয়েটাকে দেখে নিজের অজান্তেই হাসি ফুঁটে উঠলো আফিফের।একগাল হাসি নিয়ে আফিফের দিকে এগিয়ে আসছে মিতুল।তারমানে এটা মিথ্যা নয় সত্যি!সত্যি মিতুল ওর সামনে দাঁড়িয়ে।কাছে এসে বলে উঠলো মিতুল……
.
~~~আপনি আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলেন কেন….?আর এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনেছেনই না।
.
নিজের কর্মকান্ডে নিজেই বোকা বনে গেলো আফিফ।এতদিন ওর সাথে কথা বলে পরে আর খুঁজে পায় না তাই ভেবেছিলো আজকেও মনের ভুল।কিন্তু কখনও ভাবেনি আজ সত্যি সত্যি আফিফের সামনে দাঁড়াবে মেয়েটি।মুখের হাসি ধরে রেখে বললো…..
.
______সরি সরি!!একচুয়েলি আমি খেয়াল করিনি তোমাকে।তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিলাম তাই হয়তো শুনতে পাই নি।আচ্ছা কেমন আছো….?আর তুমি এখানে…?
.
~~~এত তাড়া কিসের…?ভ্রু নাচিয়ে গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করছে বুঝি।
.
মিতুলের কথায় মৃদু হাসলো আফিফ।যাকে বউ বানাতে চাইছি সে কিনা আমার গার্লফ্রেন্ডের খবর নিচ্ছে।স্ট্রেঞ্জ!
.
_____নাহ!গার্লফ্রেন্ড নেই।আসলে আগামীকাল আমার বোনের বিয়ে।ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে আজকেই আমাদের বাসায় শেষ দিন কিনা।ভাবছি দিনটা অন্যভাবে সেলিব্রেইট করবো তাই একটু তাড়ায় আছি।
.
~~~ওহহ আচ্ছা!!তাহলে যান আপনার লেইট হচ্ছে।
.
______আচ্ছা একটা কথা রাখবে….!!
.
আফিফের কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো মিতুল।সন্দিহান চোখে বললো…..
.
~~~~~কি কথা….?
.
______কালকে আমার বোনের বিয়েতে আপনাকে আসতে হবে।না করতে পারবেন না কিন্তু!
.
আফিফের কথার উওরে কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো মিতুল।মিতুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো আফিফ।এরই মধ্যে অতি কৌশলে মিতুলের ফোন নাম্বারটাও কালেক্ট করে নিয়েছে।
.
.

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য তাড়া দিচ্ছে সবাই।যদিও মুগ্ধতা চায় নি আবার এসব হোক।কিন্তু আফিফের বাবা মানেন নি।তিনি মুগ্ধতার বিয়েতে কোনো ত্রুুটি রাখতে চান না।যাতে কখনও বলতে না পারে নিজের মেয়ে নয় বলে কোনো আয়োজন করেন নি।চারিদিকে আলোক সজ্জার ঘনঘটা।রঙ্গিন আলোগুলো ক্ষণে জ্বলে জ্বলে উঠছে তো নিভছে।।অধরা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে মুগ্ধতা কে।পার্লারের মতো করে সাজাতে পারে অধরা তাই আর পার্লারের লোক ডাকা হয় নি।খুব বড় করে না হলেও ঘরোয়া ভাবে কমপ্লিট হলো মুগ্ধতার হলুদ সন্ধ্যা।
.
মেহেদী পড়ানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়ে আনানো হয়েছে।খুব সুন্দর করে মুগ্ধতার হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে।এক পর্যায়ে বরের নামের প্রয়োজন পড়লো কিন্তু কেউ জানে না বরের নাম কি…?একমাএ আফিফের বাবাই জানেন।তাই নাম জানার জন্য আফিফ ছুটলো তার বাবার কাছে।নাম জেনে তবেই ফিরলো।মেয়েটা সুন্দর করে ডিজাইনের ফাঁকে লিখে দিলো “মেহরাব”!! নামটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো মুগ্ধতা।
.
.
আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।রাতের আকাশের তারাগুলো একটা চাঁদকে কেন্দ্র করে খেোয় মেতে উঠেছে।আজকের রাতটাই এই বাড়িতে শেষ রাত ওর।এই ক’বছরে এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি ভেবে নিয়েছিলো মুগ্ধতা।যখন নিজের বাসা থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তখন থেকেই এখানে আছে।একটা মায়া জমে গেছে বাড়িটা আর বাড়িটার মানুষগুলোর উপরে।ভালো খারাপ মিলিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটছিলো।হঠাৎ আদনান নামক মানুষ নামক অমানুষের সাথে দেখা।তারপর আস্তে আস্তে ভালোলাগা আর সেই থেকে ভালোবাসা।এরপর বিয়ে!!হ্যাঁ বিয়ে যেখানে বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে অপমান করে রিজেক্ট গিয়েছিলো আদনান।শুধু রিজেক্ট করলে হয়তো এতটা ঘৃণা হতো না।যতটা ঘৃণা জন্মেছে ওর কথায়।অপমানিত হওয়ার পর বাঁচার ইচ্ছে টাও ছিলো না।কিন্তু মুগ্ধতা হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়।অনেক ঝড় ঝাপ্টা পেড়িয়ে এই জায়গায় পৌছেছে তাই নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু চাইলেই কি সব হয়!সব কি ভুলা যায়।না যায় না মনের কোণে কোথাও না কোথাও পুরনো স্মৃতি গুলো রয়ে যায়। যা চাইলেও হয়তো মুছে ফেলা সম্ভব হয় না….!!
.
নিজের রুমে বসে আছে মুগ্ধতা।পরনে লাল বেনারসি।সাথে ডায়মন্ড সেট।হাত ভর্তি চুড়ি।চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া।ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক।বর আসার সময় ঘনিয়ে আসছে।একা একা রুমে বসে চোখের পানি ফেলতে ব্যস্ত মুগ্ধতা।আজকে নিজের বাবা মায়ের কথা খুব বেশি মনে পরছে তাঁর।আজ যদি তাঁর বাবা মা থাকতো! আহা!মেয়ের বিয়েতে কতই না খুশি হতো।কিন্তু সেইসব দেখার সৌভাগ্য না আছে মুগ্ধতার আর না আছে ওর বাবা মায়ের…!!
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের কার্য শুরু হয়ে যাবে।এতক্ষণে তিথি চলে এসেছে।সাথে রিদি,স্নেহা আপু এসেছে।বরের পাশের চেয়ারে বসানো হয়েছে আমায়।কিন্তু তাঁকে একবারও দেখতে ইচ্ছে করে নি আমার।একটিবারও তাকাই নি তার দিকে।কিন্তু তিথি অধরা আপু এদের কথায় বেশ বুঝতে পারছি লোকটা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।এই নিয়ে হাসি তামাশার শেষ নেই।কিন্তু তবুও লোকটা থামছে না বেহায়ার মতো অনবরত তাকিয়েই আছে।ছিঃ কিহ নির্লজ্জ!
.
.

অনেক্ক্ষণ ধরে কেউ একজনের জন্য অপেক্ষা করছে আফিফ।বার বার চোখ বুলাচ্ছে মেইন গেইটের দিকে।কিন্তু যার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছে তার দেখা নাই।অথচ আধ ঘন্টা আগেও কথা হয়েছে তার সাথে।সে দশ মিনিটে ঢুকছে বলে আধ ঘন্টা পার হয়ে গেলো কিন্তু তার দশ মিনিট আর শেষ হলো না। তবে কি মিতুল আসছে না মিথ্যা বলেছে আফিফ কে।হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে আফিফ।তখনই গোলাপি লেহেঙ্গা গায়ে জড়ানো অপরূপা গেইট দিয়ে ঢুকলো।লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি হাতে কাঁচের চুড়ি।চোখে কাজল ঠোঁটে লিপস্টিক।চুলগুলো হাত খোঁপা করা কিন্তু তবুও দারুণ লাগছে ওকে।মুগ্ধ হয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি মিতুলের পানে।কখন যে মিতুল ওর সামনে চলে এসেছে টপরই পায় নি আফিফ।মিতুলের থুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো তাঁর।মুচকি হেসে বললো……
.
~~~~কোথায় হারিয়ে গেলেন….?
.
____আনমনে বলে উঠলো আফিফ……তোমার মাঝে।
.
~~~কথাটা শোনে ভ্রু কুঁচকে আফিফের দিকে তাকিয়ে বললো মিতুল……কি বললেন….?
.
_____কিছু না!এই তোমার দশ মিনিট….?
.
~~~~আফিফের কথায় মুচকি হেসে বললো মিতুল……আসলে জ্যামে আটকে গেছিলাম।
.
______ওহহ!!তাই বলো! ঠিক আছে চলো ভিতরে যাই বলে মিতুলকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো আফিফ।মুগ্ধতার সহ সকলের সাথে নিজের ফ্রেন্ডের পরিচয় দিয়ে আলাপ করিয়ে দিলো।
.
বিয়ে পর্ব শুরু হয়ে গেছে।সকল ফর্মালিটি শেষ এবার কবুল বলার পালা।এই তিন অক্ষরের একটা শব্দ মেয়েকে তাঁর বাবার থেকে কেড়ে নেয়।কুড়ি বছর লালনপালন করার পরও এই একটা শব্দের কাছে হেরে যায়।নিজের ঘর থেকে বের করে পাঠাতে হয় অন্যের ঘরে।এটা হার নয় এটাই যে সমাজের নিয়ম নীতি।অনেক্ষণ ধরে বুল বলার জন্য তাড়া দিচ্ছেন সবাই।কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না মুগ্ধতার।কাঁদছে,অঝোরে কাঁদছে মুগ্ধতা।পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে অধরা আপুও।সকলের কথায় ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলেই দিলো সেই তিন অক্ষরের “কবুল” শব্দটা।সাথে সাথে কাজী সাহেব বলে উঠলেন আলহামদুলিল্লাহ।পরে সকলে মিলে নব দম্পতির জন্য দেয়া করলেন।
.
বেজে গেলো মুগ্ধতার বিদায়ের ঘন্টা।সবাইকে জড়িয়ে খুব কাঁদছে।অধরা আফিফ কেউ বাদ নেই।এমনি কি আন্টিও কাঁদছেন আজ।যাওয়ার সময় কান্না জড়িত কন্ঠে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন “খুব সুখী হও মা”! কথাটি বলে আশীর্বাদ করলেন আমায়।উনাকে জড়িয়ে খুব কাঁদলাম আমি।আঙ্কেল অধরা আপু আফিফ ভাইয়া সবাই কাঁদছে।মেহরাবের হাত ধরে আঙ্কেল বললেন……
.
আমার মেয়েটা বড়ই অভাগা ওকে দেখে রেখো বাবা!!কোনো পরিস্থিতিতে ওর হাত ছেড়ো না বিশ্বাস রেখ ওর উপর।তিনিও মাথা নাড়িয়ে আশ্বস্ত করলেন আঙ্কেলকে।তাদের কথা বলতে রেখে অধরা আপুর গলা জড়িয়ে কাঁদছি আমি।পরে আফিফ ভাইয়া গাড়ি অবধি তুলে দিলো আমায়।আঙ্কেল ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।একসময় সকলকে বিদায় দিয়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
.
শ্বশুর বাড়ির মেইন দরজায় দাঁড়িয়ে আছি।মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা বরণ করলেন আমাদের।খুব সম্ভবত উনিই মেহরাবের মা।উনি ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়।আর বলে উঠলো……
.
ফাইনালি!ফাইনালি আমার বউমণিকে পেয়ে গেছি আমি।থ্যাংকস ভাইয়া।মেয়েটির কথার বদলে কিছু বললাম না আমি।মেয়েটি মেহরাবের ছোট বোন মোহনা ।ড্রয়িংরুমে বসে আছি আয়নায় বর কনের মুখ দেখা হবে।একদম আমার ঘা ঘেঁষে বসিয়েছে উনাকে।উনার শরীর আমার শরীর স্পর্শ করতেই নড়েচড়ে উঠলাম আমি।আমাদের বসিয়ে আমার পরণের ওড়নার এক অংশ উনার মাথায় তুলে দিলো মোহনা।সকলে হাসছে মোহনার পাগলামি দেখে।কিন্তু এটা ও করবেই একমাত্র ভাই তাঁর বিয়েতে কোনো আফসোস রাখতে চায় না ও।একটা মাঝারি সাইজের আয়না এনে আমাদের সামনে ধরলো মোহনা।সবাই খুব করে আয়নায় তাকাতে বলছে আমায়।কিন্তু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি আমি।তাছাড়া যা ইচ্ছে করে না তা করার মধ্যে কোনো আনন্দও থাকে না।আজ যদি উনার জায়গায় আমার পছন্দের মানুষটি থাকতো তাহলে কবেই তাকিয়ে দেখতাম তাঁকে।এখন পর্যন্ত উনাকে দেখিনি আমি।মানুষটাও আদৌ কানা না লেংরা সেটাও জানিনা।মনের মধ্যে অন্য কেউ না হলে পারিবারিকভাবে হলেও কবেই এক নজর দেখে নিতাম তাঁকে কিন্তু!মোহনার ধাক্কায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম আমি।এখন নিজের স্বামীকে এক নজর দেখার ইচ্ছা জাগলো মনে।স্বামী হ্যাঁ আজ থেকে এই লোকটিই আমার স্বামী।সারাজীবন যার সাথে কাটাবো আমি।সকলের জোরাজোরি তে আয়নায় চোখ রাখলাম আমি।আয়নায় চোখ রাখতেই হতবাক।একি!তার মানে উনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তবে আজ থেকে উনিই আমার স্বামী…..!!
.
.
#চলবে……