মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১৩

0
674

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_13
.
🍁
মুগ্ধ!!কিন্তু বরের নাম তো “মেহরাব”।তার মানে মেহরাবই মুগ্ধ!উনাকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকাচ্ছি আমি।বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি।তখনই ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলেন উনি……
.
~~~দিস ইজ নট ফেয়ার মুগ্ধতা!!এভাবে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে বরকে এভাবে দেখা উচিৎ হচ্ছে না তোমার।সবাই কি ভাবছে বলো তো!নতুন বউ কেমন হ্যাংলার মতো লোকলজ্জার মাথা খেয়ে বরকে দেখছে।ব্যাপারটা কেমন খারাপ দেখাচ্ছে তসই না বলো!
.
উনার কথায় চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।লোকটা বড় আজব তো।এরইমধ্যে হাসিতে মত্য সবাই।সেটা আমাকে নিয়ে বেশ বুঝতে পারছি আমি।সকলে এটাই ভাবছে উনাকে দেখছিলাম আমি।নিজের কর্মকান্ডে নিজের উপরই রাগ লাগছে।লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি।আজ নিজের দোষেই এমনটা হচ্ছে।যদি আগে আঙ্কেলের দেওয়া ছবিটা দেখে নিতাম তাহলে এসব কিছুই ফেস করতে হতো না।মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে সেটা তিথির অজানা থাকার কথা নয়।তাহলে ও আমায় বললো না কেন…?মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আর আমি জানতেও পারলাম না। কি আজব আমি!!
.
আমাদের বসিয়ে কয়েকটা ফটো তুললো মোহনা।পাশাপাশি কাছাকাছি কয়েক এঙ্গেলে ছবি তুললো।ওর ছবি তোলা শেষ হতেই উপরে চলো গেলো মুগ্ধ।আমাকে সোফায় বসিয়ে পাশে বসলেন মুগ্ধর মা।কপালে চুমো এঁকে বললেন…..
.
_______জানো তো মা এতদিন আমার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিলো কিন্তু আজ থেকে আমার দুইটা মেয়ে।আমি তোমাকে আমার বৌমা নয় আমার মেয়ে মনে করি।আমি সব জানি মা।তোমার মা নেই তুমি কি পারো না আমাকে নিজের মা মনে করতে।কি মা বলে ডাকবে তো আমায়৷
.
উনার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি আমি!মানুষ এতটাও ভালো হয়।মা বলে উনাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলাম আমি।উনিও জড়িয়ে নিলেন আমায়।তখনই মোহনা এসে বললো……
.
~~~এটা কি হলো….আজ তোমার বৌমা পেয়ে আমায় ভুলে গেলে।এটা কিন্তু ঠিক না আম্মু।
.
মোহনার কথায় মুচকি হাসলেন মা।এক হাতে জড়িয়ে নিলের ওকে।দুজন কে দুহাতে জড়িয়ে রেখেছেন উনি।
.
______আমার দুইটা মেয়ে।দুজনেই সমান।তোরা দুজন আমার দুই নয়নের মণি।
.
মায়ের কথা শেষ হতে না হতে সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে বলে উঠলো মুগ্ধ…..
.
~~~এরা দুজন তোমার দুই নয়নের মণি আর আমি!আমি কিছুই না ফেলনা।অভিমানি সুরে এই বাড়িতে একমাত্র অবহেলিত ব্যক্তি আমিই।
.
উনার কথায় হেসে উঠলো মোহনা।মা ও হাসলেন! হাসতে বললো মোহনা…..
.
_____এটা একদম ঠিক বলেছো ভাইয়া।আসলে কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তিদের একটু আধটু অবহেলিত থাকে।তবুও তোমাকে আমরা যথেষ্ট ভালো রেখেছি বলেই হাসতে লাগলো মোহনা।মোহনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মুগ্ধ। মোহনাকে থামিয়ে বললেন মা…..
.
~~~যে যাই বলুক না কেন তুই,মুগ্ধতা,মোহনা সবাই আমার একই রকম আদরের।ওদের যতটা ভালোবাসি তোকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি তাই হিংসে করার কিছু নেই।
.
.
♥️
মুগ্ধতা কে বিদায় জানিয়ে কারো মন ভালো নেই।এরইমধ্যে আটকে পড়েছে মিতুল।সকলকে এই অবস্থায় রেখে যেতেও পারছে না। তাছাড়া যার কল্যাণে এখানে আসা তাকে অনেকক্ষণ হলো খুঁজে পাচ্ছে না মিতুল।তাই তাকে খুঁজতে ব্যস্ত।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তখনই কোথা থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো আফিফ।
.
______আই’এম সরি মিতুল!!এতক্ষণে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা।আর আমি সেদিকে খেয়াল না করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।আসলে বাবা মুগ্ধতার জন্য মন খারাপ করে বসে আছে।তাই একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম।
.
~~~না না! সরি বলতে হবে না!ঠিক আছে।এটাই স্বাভাবিক।আপনার বোনের বিয়ে হয়েছে এখন কারোরই মন ঠিক থাকার কথা নয়।আমিই চলে যেতাম কিন্তু আপনাকে কোথাও দেখছিলাম না আর না বলে যাওয়াটা কেমন দেখায় তাই আর যাই নি।
.
কথাটা শুনেই আফিফের মনের মধ্যে লাড্ডু ফুলে উঠলো।ওর জন্য মিতুল যায় নি।শুধু ওকে বলতে পারে নি বলে যেতে পারে নি।তবে কি মিতুলের মনে কিছুটা হলেও জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে আফিফ ……
.
____এতটা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।তুমি খুব ভালো মিতুল।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতটা ভাবতো না।কবেই চলে যেতো।
.
কিছুটা মৃদু হাসলো মিতুল।তারপর বললো….
.
~~~ওকে ওকে!!এত প্রশংসা করবেন না।তাহলে ফুলে বোম হয়ে যাবো।আচ্ছা ঠিক আছে অনেক লেইট হয়ে গেছে এখন আসি।
.
মিতুলের যাওয়ার কথা শুনে নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেলো আফিফের।মেয়েটা আশেপাশে থাকলে খুব ভালো লাগে ওর।অলওয়েজ মিতুলেই মত্ত থাকে।কখনও চোখের আড়াল হোক এটা চায় না!কিছুতেই চায় না।সবসময় চায় যেন চোখের সামনে বসে থাকে।কিন্তু কি আর করার বিদায় তো দিতেই হবে।
______আচ্ছা ঠিক আছে!তোমাকে তো আর থাকতে বলতে পারি না।চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দেই।
.
আফিফের কথায় চোখ তুলে তাকালো মিতুল।আর বললো……
.
~~~না না! আমি একাই যেতে পারবো।আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।এখন এখানে আপনাকে সবার প্রয়োজন তাই এখানেই থাকুন।
.
মিতুলের কথার উপর আর কিছু বলতে পারলো না আফিফ।ওকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য গেলো।
.
.
মুগ্ধর রুমে বসে আছে মুগ্ধতা।মূলত মোহনাই ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।পুরো খাট কাঁচা গোলাপ,রজনীগন্ধা আর গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো।রুম টা বেশ বড়।বেডের ঠিক পিছনের দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে মুগ্ধর ফুল ফ্যামিলি মানে মোহনা, মা আর মুগ্ধর ফ্যামিলি ফটো।রুমের সাথে রয়েছে ব্যালকোনি।রাতের খাবার নিজ হাত খাইয়ে দিয়েছেন মুগ্ধতার শাশুড়ী।মুগ্ধ বন্ধুদের সাথে আছে ওকে কিছুতেই ছাড়ছে না ওরা তাই আসতে পারছে না।এদিকে মোহনার মায়ের কড়া হুকুম এই রাতের বেলায় যেন ওকে একা রেখে না যায় মোহনা।কারণ নতুন এসেছে যদি ভয় পায় বা একা থাকলে বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়।তাই মোহনা ওর সাথে আছে।দুজনে মিলে গল্পে বিভোর।।কিন্তু গল্পে মন নেই মুগ্ধতার।এই মূহুর্তে মোহনা নামক মেয়েটাকে খুব বিরক্তিকর প্রাণী মনে হচ্ছে মুগ্ধতার।যেন সহ্য হচ্ছে না ওকে।।মুগ্ধতা কে ইজি করার জন্য হাসির কথা বলছে।কথার মাঝখানে এক সময় দুজনে খিলখিল করে হেসে উঠলো।আড়াল থেকে কেউ একজন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মুগ্ধতাকে।কিন্তু সেটা কেউ জানে না।এই প্রথম মুগ্ধতা কে খিলখিল করে হাসতে দেখলো মুগ্ধ।হাসলে মেয়েটাকে এত সুন্দর দেখায় সেটা জানতো না মুগ্ধ।এই হাসিটা সারাজীবন ওর মুখে দেখতে চায় মুগ্ধ।গোমড়া মুখো হয়ে চুপচাপ বসে থাক এটা চায় না।সবসময় মুগ্ধর মুগ্ধতা কে হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল দেখতে চায়।
.
হঠাৎ দরজায় টোকা পরতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মোহনা।মোহনার ওড়নার মুঠো করে ধরে আছে মুগ্ধত।ওড়না ছাড়িয়ে মুচকি হেসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…..
.
_______বউমণি আমি আসছি।ভয় পেও না।যতটা বদমেজাজি ভাবছো ততটা বদমেজাজি নয় সো বি কুল।নাও এবার আমার বজ্জাত ভাইটাকে তুমি সামলাও।আর শোন একদম উড়তে দিবা না।ডানাগুলো কেটে দিবা বুঝছো।আর শোন আমার সাথে লাগতে আসলে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখবা ঠিক আছে।বলেই চলে গেলো মোহনা।মেয়েটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না আমি।কি বলে গেলো সব মাথার উপর দিয়া গেলো।
.
রুমে পিনপতন নীরবতা।একদম শব্দ শূন্য হয়ে আছে পুরো ঘর।রুমে কেউ ঢুকেছে কি ঢুকেনি সেটাও দেখিনি আমি অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই।হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে কেঁপে উঠলাম আমি।আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মুগ্ধ রুমে ঢুকেছেন।বুকের ভিতর তোলপাড় হতে লাগলো।চোখ দিয়ে আপনাআপনি গঠিয়ে পড়লো দুফোঁটা চোখের জল।কিন্তু কেন সেটাই জানিনা আমি।হয়তো তাঁর একমাএ কারণ আদনান।কিন্তু ওর জন্য চোখের জল ফেলা একদম উচিৎ নয় আমার।আজ থেকে অন্য কারোর জীবন সাথী আমি।সেখানে আদনান নামক কারো কোনো অস্তিত্ব নেই।আমার ভাবনার মাঝেই আমার সামনে এসে বসলো মুগ্ধ।আমাকে অবাক করে বললো…..
.
~~~এই ভারী বেনারসি পরে অনেক্ক্ষণ আছো।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।।আর হ্যাঁ তুমি যেটাতে কমফোর্টেবল ফিল করো সেটাই পরো লাইক শাড়ি,সেলোয়ার-কামিজ।তবে হ্যাঁ শার্ট প্যান্ট টপস এগুলোতে ঘোর আপওি আছে আমার।তুমি পরতে চাইলেও এগুলো কখনও পরতে দেবো না।
.
উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি!!এতটা ইজিলি খোঁচাখোঁচি ছাড়া আমার সাথে কথা বলছেন উনি।ভাবতেই পারছি না।তাছাড়া আজকের দিনে।আমার ভাবনার মাঝেই বলে উঠলেন উনি…..
.
_____যা গরম পড়েছে এত সময় এই ভারী বস্তা পড়ে কীভাবে আছো সেটা ভেবেই অবাক হই আমি।আচ্ছা তুমি এই বস্তার ভিতরে কীভাবে আছো বলো তো….!!
.
চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আর এসব কি ভাষা।বেনারসি কে “বস্তা” বানিয়ে দিলেন।উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।হঠাৎ উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি……
.
~~~মুগ্ধতা!তুমি কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো নাকি।তখন ড্রয়িং রুমেও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে চোখ সরাচ্ছিলেই না এখনও একই কাজ করছো।আচ্ছা এখন থেকে রোজই আমাকে দেখতে পাবে।।আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর না হয় সারারাত দেখো কেমন।
.
_____লোকটার কথায় আরেক দফায় লজ্জা পেলাম আমি।বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে আমার।আপনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।এই বেনারসি কে আপনি বস্তা বানিয়ে ফেললেন।জানেন এটা কত ভালো আর আপনি কিনা বস্তার সাথে তুলনা করলেন।
.
~~~তুমি যাই বলো না কেন…?ওইটা আমার কাছে সবসময় বস্তাই থাকবে।কি ভারী উফ!অসহ্য।
.
উনার সাথে তর্কে জেতা অসম্ভব।তাই উনাকে কিছু না বলে মুখ ভেংচি কেটে সেলোয়ার-কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি…..!!
.
.
#চলবে……