মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১৭

0
671

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_17
.
🍁
হঠাৎ মাথায় কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মুগ্ধতা।তাড়াতাড়ি করে হাত সরিয়ে চোখ খুলে তাকালো।সামনে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।চোখে মুখে চিন্তার চাপ।গভীর চাহনী দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে চলেছে মুগ্ধতাকে।মুগ্ধ কে দেখে হকচকিয়ে উঠে বসলো মুগ্ধতা।আমতা আমতা করে বললো…..
.
~~~~কি হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন….?আর আপনাকে এত চিন্তিতই বা দেখাচ্ছে কেন…?কারোর কিছু হয়েছে বুঝি….?
.
মুগ্ধতার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না মুগ্ধর।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতার ঠিক কি হয়েছে সেটা বুঝার চেষ্টায় আছে।কিছুক্ষণ পর বললো মুগ্ধ…..
.
____তোমার মাথা ব্যাথা করছে রাইট!
.
মুগ্ধর কথায় খানিকটা হতবাক হলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ বুঝলো কিভাবে।এ ব্যাপারে তো কাউকে বলে নি তাহলে।আমতা আমতা করে বললো……
.
~~~না আবার হ্যাঁ কিছুটা!ও ঠিক হয়ে যাবে।
.
তার মানে মুগ্ধর অনুমানই ঠিক।সারাদিনের দকলে মুগ্ধর মতো ওর ও মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।মুগ্ধ একটা ছেলে হয়েও সহ্য করতে পারছে না আর মুগ্ধতা তো একটা মেয়ে কি করে পারবে।ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে বললো মুগ্ধ……
.
______জানো মুগ্ধতা আগে যদি জানতাম ঘটা করে বিয়ে করলে এত কষ্ট করতে হয় তাহলে বিশ্বাস করো এই ঝামেলায় কখনও নিজেকে জড়াতাম না আমি।বাবা!কি স্ট্রেস নেওয়া যায় নাকি।তার চেয়ে নরমাল একটা বিয়ে করতাম যেখানে মোট ১০-১২ জন লোক থাকতো আর রিসেপশন সেটা একেবারেই করতাম না।দেখ এই বিয়ের ঝামেলা তোমার শরীর নিতে পারছে না।
.
মুগ্ধর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।লোকে কত শখ করে ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করে সেখানে উনি নিজের কষ্টের কথা ভেবে এভাবে বিয়ে করতে চাইতেন না হাউ ফানি!!ভেবে খিলখিল করে হেসে উঠলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।ও হাসলে গালে কি সুন্দর টোল পড়ে।এতদিন এই জিনিসটা খেয়াল করিনি মুগ্ধ।আজ দূর থেকেও চোখে পড়ছে।হঠাৎ মুগ্ধতা বললো……
.
~~~~কথাগুলো আপনি বলছেন সিরিয়াসলি!!বিশ্বাস হচ্ছে না।সবাই যেখানে লোক দেখিয়ে জাঁকজমকভাবে বিয়ে করে সেখানে আপনি!বলে আবারও হেঁসে উঠলো।

অনেক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর মুগ্ধ পেয়ে গেলো তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা।মুগ্ধতার পাশে বসে আনমনে বললো…….
.
______দেখ সবাই আর আমি এক না!আমি লোক দেখানোর জন্য কিছু করতে রাজি নই।আমার কাছে সবার আগে আমার ভালোবাসা।আমার ভালোবাসা যেভাবে ভালো থাকবে আমি সেভাবেই ভাবতে রাজি।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।উনার ভালোবাসা মানে! মানে কি।মুগ্ধতার ভাবনার মাঝেই এক গ্লাস পানি আর একটা ট্যাবলেট এগিয়ে দিলো ওর দিক।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো…..
.
~~~এটা কিসের ঔষধ….?
.
_____এটা মাথা ব্যাথার ঔষধ।তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

মুগ্ধতা বারবার অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।ঔষধ হাতে নিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।তারপর শুয়ে বললো…..

~~~লাগবে না!আপনি শুয়ে পড়ুন।ঔষধ খেয়েছি এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

চাদরটা টেনে মুগ্ধতার পাশে বসলো মুগ্ধ।কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকালো।চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে ও।আবার কিছুটা কাঁপছেও।

_____ও তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার ঘুম আসলে আমি ঠিক ঘুমিয়ে পরবো।বলেই মুগ্ধতার মাথায় বিলি কাটতে লাগলো মুগ্ধ।সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালো মুগ্ধতা।বললো…..
.
~~~~লাগবে না বললাম তো!আপনিও সারাদিনে কত ক্লান্ত।আপনারও রেস্ট প্রয়োজন।তাই শুয়ে পড়ুন আমি ঠিক হয়ে যাবো।
.
মেয়েটির কথায় চরম বিরক্ত মুগ্ধ।সেটা ওর পেঁচার মতো মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।একটু ধমকের সুরে বললো…..

______তোমাকে ঘুমাতে বলেছি ঘুমাও।এর চেয়ে বেশি কথা বলো না।যখন যেটা বলি শোনে আর হ্যাঁ মনে রেখো আমি কখনও তোমার খারাপ চাইবো না।সো নো টক ওকে!

মুগ্ধর ধমক শুনে কেঁপে উঠলো মুগ্ধতা!আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো।মুগ্ধতা বাধ্য মেয়ের মতো ঘুমাচ্ছে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলো মুগ্ধ।কিছুক্ষণেই ঘুমের দেশের অতলে তলিয়ে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ নিজে ঔষধ খেয়ে মুগ্ধতা কে কিছুক্ষণ দেখে সেও তার প্রিয়তমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
.
.
এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেরে মিতুলের সামনে বসে আছে আফিফ।খুব আর্জেন্ট একটা কথা বলার জন্য মিতুলকে ডেকেছে সে।অনেকদিন হলো মিতুলকে ভালোবাসে কিন্তু বলার মতো সময় সুযোগ কোনোটাই হয় নি।আজ খোলাখুলি মিতুলকে মনের কথা বলতে চায়।তাই আর্জেন্ট বলে ডেকে পাঠিয়েছে এখানে।হতভম্ব চোখে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে মিতুল।আফিফ ঠিক কি করতে চলেছে এতক্ষণে বুঝে গেছে মিতুল।মিতুলের চোখ বরাবর তাকিয়ে বলল আফিফ…….

~~~ভালোবাসা কাকে বলে কি করে হয় জানতাম না আমি।কিন্তু তোমাকে দেখার পর বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি!তোমাকে যেদিন প্রথম হসপিটালে দেখেছিলাম তখনই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমি।তারপর তোমায় একটু দেখার জন্য উতলা হয়ে থাকতাম।তোমার বাসার সামনে রোদের মধ্যে কতদিন যে তোমায় এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে পাগলামি করেছি তাঁর কোনো হিসেব নাই।এখন প্রতি সেকেন্ডে তোমাকে চাই আমি।আমার প্রতিটা নিশ্বাসে মিশে গেছো তুমি।আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।

I Love You MiTul
Will You Merry Me……?

হতবাক নয়নে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে মিতুল।আফিফ ছেলেটা কে কখনও খারাপ লাগে নি ওর।বরাবরই ওর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে।মিতুলের হ্যাঁ সূচক উওরের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছে আফিফ।ফুলগুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল মিতুল……

_____ইয়েস!!

আর কিছু বলতে পারলো না । ইয়েস!শব্দ টা শুনে চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো আফিফের।লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।তবে তার না বলা কথা গুলো বুঝে নিতে সমস্যা হলো না আফিফের।চট করে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।আজ ওর থেকে সুখি আর কেউ হতে পারে না!কেউ না।
.
.
সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলে তাকাতেই মুগ্ধর বুকের উপর নিজেকে আবিষ্কার করলো মুগ্ধতা।এটা আজকে নতুন নয়।এখন প্রতিদিনই এরকমটা হয়।রোজ মুগ্ধর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে মুগ্ধতা আর সকালে নিজেকে মুগ্ধর বাহুডোরে পায়।প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন আর এতটা খারাপ লাগা কাজ করে না।হয়তো ভালোই লাগে যেটা সিওর হয়ে বলতে পারবে না মুগ্ধতা।এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয় না।কারণ কেউ এক চুলও ছাড় দিবে না।মুগ্ধ মুগ্ধতার উপর চাপাবে আর মুগ্ধতা মুগ্ধর উপর তাই এটা নিয়ে তর্কাতর্কি করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করে না মুগ্ধতা।রোজকার নিয়মে ঘুম থেকে উঠে সকলের জন্য কফি বানায় মুগ্ধতা।কারণ সকলেই ওর হাতের কফি খেতে খুব ভালোবাসে।তবুও ওর শাশুড়ী মা মানা করেছিলেন কিন্তু মুগ্ধতা সেটা মানে নি।জেদ করেই ভালোবেসে বানায় তাই উনি না করতে পারেন নি।রান্নাঘরে গিয়েই আমিনার কাছ থেকে জানতে পারলো মা অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছেন।মুগ্ধর বাবা মারা গেছে প্রায় পাঁচ বছর হলো।তারপর থেকে বিজনেস দেখাশোনা করেন উনি।মুগ্ধ মাঝেসাঝে যায় কিন্তু অতটা চাপ দেন নি কখনও।এই বয়সে ছেলেকে এত চাপে রাখতে চান না।মুগ্ধতা এখন ভার্সিটি যায়।ওর শাশুড়ী ওকে বাড়ীর বউ বলে ঘরে বেঁধে রাখতে চান না।লেখাপড়া করে যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই প্রচেষ্টায় আছেন উনি।মেয়েরা যেন কারো মাথার বোঝা না হয় নিজেই নিজের খরচ বহন করতে পারে সেটাই চান উনি।সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো।এখন গাড়ীতে যাতায়াত করে ওরা।মুগ্ধর মায়ের মতে বাইক একদম সেইফ নয় খুবই বিপদজনক তাই এই ব্যবস্থা ।মোহনাকে কলেজ নামিয়ে মুগ্ধ আর মুগ্ধতা চললো নিজেদের ভার্সিটি।রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়েছে অনেক্ক্ষণ হলো।বাহিরে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।।হঠাৎ রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে চোখে পড়লো ওর।এইটুকু একটা ছেলে অনেকগুলো গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।খুব ইচ্ছে করছে ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে কিন্তু না এখন মুগ্ধকে কি করে বলবে!থাক লাগবে না।
.
মুগ্ধতা কে রেখে হঠাৎ গাড়ী থেকে নেমে গেলো মুগ্ধ।ও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলল…..
.
~~~তুমি একটু বসো আমি এক্ষুনি আসছি।আর হ্যাঁ গাড়ী থেকে একদম নামবে না।

মুগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলো।সে গাড়ী থেকে নামবে না।কিছুক্ষণ পরই এক গুচ্ছ ফুল আর কিছু আইসক্রিম হাতে নিয়ে ফিরে এলো মুগ্ধ।মুগ্ধর হাতে ফুল দেখে মুগ্ধতার চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো।মুগ্ধতার দিকে ফুল আর আইসক্রিম গুলো এগিয়ে দিলো।চট করে ফুলগুলো হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।সুভাস নিতে লাগলো ও।মুগ্ধ চুপচাপ ওর কান্ড দেখে চলেছে।মেয়েটা কতটা সাধারণ তা ওর আচরণ দেখলেই বোঝা যায়।এই টুকুতেই এত খুশি হয়।হঠাৎ মুগ্ধর কথা শুনে ওর দিলে তাকালো মুগ্ধতা……
.
____শুধু ফুলগুলো দেখলেই হবে আইসক্রিম কে খাবে হুম…!!
.
ফুলগুলো কোলের উপর রেখে আইসক্রিমের প্যাকেট খুলতে লাগলো।মুগ্ধতার কান্ড গুলো আড়চোখে দেখে হাসছে মুগ্ধ।এগুলো অন্য কোথাও রাখলে বোধহয় কেউ নিয়ে যাবে।আইসক্রিম খুলে একটা এগিয়ে দিলো মুগ্ধর দিকে।মুগ্ধ হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।হঠাৎ মুগ্ধতার মাথায় একটা প্রশ্নের উদ্ভব হলো।
.

~~~আচ্ছা আপনি হঠাৎ এই ফুলগুলো নিয়ে এলেন কেন…?গোলাপ কি আপনার ফেবারিট….?
.
______নাহ! আমার না।তবে একজনের ফেবারিট।সেটা ফুলগুলোর প্রতি তাঁর গভীর চাহনী দেখেই বুঝতে পেরেছি।আর সেজন্যই এগুলো আনা।

তাহলে মুগ্ধ আমার জন্যই ফুল নিয়ে এসেছে।লোকটা কেমন অদ্ভুত টাইপের।কিছু না বলার আগেই কেমন করে যেন আমার সব প্রয়োজন বুঝে যান উনি।আচ্ছা উনি কি কোনো ম্যাজিশিয়ান নাকি….!!
.
.
#চলবে…..